02-01-2024, 09:36 PM
মাংসটায় মশলা মাখিয়ে ম্যারিনেট করতে রেখে রমা কলতলায় গেল। ওখানে যাতে অন্ধকারে কেউ পা পিছলে না পড়ে তার জন্য একটা বাড়তি লাইন করে বাল্ব দিয়েছে শম্ভু। রমা দেখতে লাগলো কলতলায় বসে সর্বাঙ্গ নগ্ন শম্ভুর স্নান। এমনিতেই এদিকে লোকের যাতায়াত নেই। তার ওপরে রাতে লোকে আসার তো কোনো কারণ নেই। ওর দুই উরুর মাঝে নেতিয়ে থাকা অবস্থাতেও দানবটা যেন বড়সড় হামানদিস্তা। রমা জানে এটাই দৃঢ় হলে পরে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অবশ্য লম্বা-চওড়া শম্ভুর চেহারা র সাথে বেমানান নয়, বরং সঠিক জায়গায় সঠিক বস্তুর মানানসই দিকটি নজরে আসে।
সাবান-তেলে শম্ভুর জীবন অনভ্যস্ত। পরিচ্ছন্ন থাকার প্রয়োজনীয়তা ওর কোনোদিনই ছিল না। তাই গায়ে সাবান দিতে বড্ড সমস্যা হচ্ছে ওর। রমা ওর এই অস্বস্তি টের পেয়ে দ্রুত শাড়িটা খানিকটা দুই পায়ের ভাঁজে আটকে কলতলায় চলে এলো। বললে---দেখি, ওরকম করে কেউ সাবান দেয়!
শম্ভুর হাত থেকে ততক্ষণে সাবান কেড়ে নিয়েছে রমা। উলঙ্গ যুবক স্বামীর পিঠে, গায়ে সাবান দিতে লাগলো ও। তার সাথে নির্দেশ দিতে লাগলো 'হাতটা তোলো দেখি', 'বাঁ দিকটা', 'বগলটা তোলো' ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবেই শম্ভুর দেহকাণ্ডের নীচের দিকে নেমে গেল ও। প্রথমে কোমর এবং ধীরে ধীরে হাঁটু ও উরুসন্ধিতে ঠেকেল তার সাবান ধরা কোমল হাতের স্পর্শ। এখন ঠিক দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুর পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে আছে সে। আস্তে আস্তে, শম্ভুর দিকে ঈষৎ লাজুক হেসে, ভেংচে শম্ভুর লিঙ্গের চারপাশটায় ওর হাত ঘুরতে লাগলো।
শম্ভু আর পারছিল না। তার সারা গায়ে দিদিমণির হাতের স্পর্শে এমনিতেই আগুন। তারওপর এখন রমা তার সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঙ্গের নিকট ঘুরপাক খাচ্ছে। দ্রুত রমার হাতটা টেনে ধরিয়ে দিল পুরুষাঙ্গে। রমাও হাতে নিল ওটা। বেশ মোটা, আস্তে আস্তে দৃঢ় হয়ে যাচ্ছে দানবটা। রমা মুগ্ধ, সাবান স্পর্শে ওটার যত্ন নিচ্ছে। শম্ভু হস্তমৈথুনের কায়দায় রমার হাতটা চেপে ওঠানামা করাতে লাগলো। রমা যেন আনুগত্যশীলা ছাত্রী। শম্ভু হাত সরাতে সে নিজেই ওভাবে ওপর নীচ করতে লাগলো। শম্ভু আদেশের সুরে বললে---ধুয়ে দে ইবার।
রমা বালতি হতে জলপূর্ন মগ নিয়ে ঢেলে দিল ওখানে। শম্ভু এরপর বললে---দিদিমণি, চুইষে দে এখুন।
রমা কখনোই তা পারবে না। পুরুষেরা প্রস্রাব করে ওখান দিয়ে, ওটা ও মুখে নিতে কোনোমতেই পারবে না। ওর রুচিতে বাধে। তাই শম্ভুর ইচ্ছেকে অমান্য করে উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললে---নাও, এবার গায়ে জল ঢেলে স্নান করে নাও।
---তুরে যে চুইষে দিতে বইললি!
---ঐসব নোংরা কাজ আমি পারবো না। যাও লক্ষীটি, বেশ বাতাস দিচ্ছে, সারাদিন তো নদীতে ঘুরে বেড়ালে। ঠান্ডা লেগে যাবে।
শম্ভু রমার হাত চেপে ধরল। আবদার করে বললে--চুইষে দে লা দিদিমণি। ইটা কুনো নুংরা কাম লয়। সব মাগই তার ভাতারের লিগে করে।
---জোর করো না শম্ভু। আমি এসব পারবো না, তোমাকে সেদিনও বলেছি। আমাকে জোর করো না প্লিজ।
শম্ভু অবশ্য আর জোরাজুরির পথে গেল না। রমা বরং নগ্ন ভেজা শম্ভুর গালে একটা হালকা চুমু খেল। তারপর বললে---তাড়াতাড়ি গা হাত মুছে এসো। আমি চা করছি।
শম্ভু চুলে চিরুনী চালাতে চালাতে বললে---দিদিমণি, চুলটা কাইটে ফেললি, শালা! মিঠুনের মত লাইগ তো।
এই চুল কাটা নিয়ে বেশ আফশোস রয়েছে শম্ভুর। গ্যাস স্টোভ থেকে মুখ না সরিয়ে রমা বললে---হ্যা, মিঠুন না ছাই, বর্বরের মত ঘাড় অবধি চুল রেখেছিলে।
পিকলু মা আর শম্ভু আঙ্কেলের কথার ফাঁকে হেসে গড়িয়ে যেতে যেতে বললে--আঙ্কেল তোমার চুলটা দেখে ইশান্ত শর্মার মত লাগতো।
---সিটা আবার কে রে ছিলা? আমি অত হিন্দি ফিলিম দিখিনি।
---আরে ইশান্ত শর্মা কোনো ফিল্মস্টার না। ক্রিকেটার, ফাস্ট বোলিং করে।
---অ... তাই ক। মোর ঘরে টিভি কুথা, যে খেলা বুইঝবো।
রমা সসপ্যান থেকে চা ছেঁকে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললে---ইনভার্টারটা লো ভোল্টেজের তা নাহলে একটা টিভি কেনা যেত।
অমনি পিকলু জেদ করে বললে---বাবাকে বলো না মা, ইনভার্টারটা বদলে দিতে। কতদিন খেলা দেখিনি। সেবার ইউরো কাপ শুরুর সময়ই আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম। ভাল্লাগে না।
রমা চায়ের কাপ শম্ভুর হাতে দিয়ে নিজে চুমুক দিতে দিতে বললে---পরে। সুস্থ হয়ে যা। তারপর না হয়....
---সুস্থ হলে তো বাড়ি চলে যাবো আমরা। শম্ভু আঙ্কেল তো খেলার কিছুই বোঝে না।
রমা হকচকিয়ে গেল। পিকলু সুস্থ হলে তো সত্যিই ওরা এই নকল সংসার ছেড়ে চলে যাবে। শম্ভুর সংসার ঠিক আগের মত হয়ে যাবে, শ্রীহীন, চালচুলোহীন এক বন্য যুবকের দোচালা পড়ে রইবে এই কালনাগিনী তীরে। বুকটা হাহুতাশ করে উঠল রমার। শম্ভুও যেন কেমন অন্যমনস্ক হয়ে উঠল। দিদিমণিকে যতই সে পাবার দাবী করুক, তা যে মাত্র ক'টা দিনের। দিদিমণির মনের মধ্যে এখনো তার জায়গা বড় কম, ততটা নয় যতটা মাস্টারবাবুর আছে।
রমার নজর এড়ালো না আবেগপূর্ন শম্ভুর মুখাবয়বের প্রতি। ও কথা এড়িয়ে বললে---তোর শম্ভু আঙ্কেল একটা গেঁয়ো, যুবক ছেলে অথচ খেলাধুলো জানে না।
শম্ভু তৎক্ষনাৎ বললে---খেলাধুলা জানি লাই মানে? গেরামে কত কাবাডি খেলছি। মণ্ডল পাড়ায় ভলি বল খেলে গেরামের ছিলারা। এক দু'বার খেলছি সিখানটা।
পিকলু কুইজের প্রশ্ন করবার মত বললে---শম্ভু আঙ্কেল, বলো দেখি ভলিবলে কোন দেশ সবচেয়ে ভালো খেলে?
রমা জানে পিকলু আর পীযুষ, বাপ-ছেলের মধ্যে যখন তখন এমন কুইজের প্রতিযোগিতা চলে। সে থেকেই পিকলুর এমন অভ্যেস। বিশেষ করে পীযুষ এভাবেই পিকলুকে সারা বিশ্বের সাথে ছেলেকে পরিচয় করায়। আর বাপ-ছেলের এমন কঠিন প্রশ্নের গুঁতো মাঝে মধ্যে রমার দিকে তেড়ে আসে। রমা না পারলে পিকলু আর পীযুষের ঠাট্টার শিকার হতে হয়। অমনি পিকলু বলে ওঠে 'মা জানে না'।
পিকলুর প্রশ্নে ঘাবড়ে গেল শম্ভু। বললে---দেশ? তালে বিহার হবে। বিহারী ছিলাগুলাকে দেইখছি ভলিবল ভালো খেইলতে।
অমনি পিকলু হো হো করে হেসে উঠল। বললে---বিহার আবার দেশ হল কবে থেকে?
রমা সামলে নিল। শম্ভু অশিক্ষিত। তার পক্ষে দেশ, রাজ্য এসবের নিখুঁত পাঠ নেই। সে বললে---শম্ভু আমাদের দেশ হল গিয়ে ভারত। আর একটা দেশ অনেক রাজ্য নিয়ে গঠিত হয়। যেমন পশ্চিমবঙ্গ একটা রাজ্য, তেমন বিহারও একটা রাজ্য।
---হ জানি ত। দু' কেলাস মা'র কাছটা ধইরলে চার কেলাস পড়ছি। দেশ হল গিয়ে ভারত। স্বাধীন হছে লা, গান্ধীজি নেতাজি সব ফটো দিয়ে সরবেড়িয়া হাটে...
---হ্যা, সবই যদি জানো তবে এমন ভুল বললে কেন? রমা হেসে মুখ বাঁকিয়ে বললে।
---আরে আমি হলি গিয়ে সনাতন জেলের লাতি আর ভীমনাগ বেদের গন্ডমূর্খ ব্যাটা। মাছ ধইরে, সাপ ধইরে জীবন কাটে। জাহাজের খবর আদাব্যাপারি হুয়ে রাইখে লাভ কি!
পিকলু বললে---মা বলতে পারবে উত্তরটা? সেই দেশটা আবার ফুটবলেও সেরা।
রমা কিঞ্চিৎ চিন্তা করে বললে---ফুটবলে যখন ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা হবে হয়ত।
---ঠিক, ব্রাজিল। ব্রাজিলের ক্যাপিটাল রিও ডি জেনিরো তে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ভলিবল।
---থাক থাক। তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। তোর বাবা এলে এসব জ্ঞানচর্চা করিস।
---মা, বাবা কবে ফিরবে গো?
চায়ের কাপ শেষ করে শম্ভু বললে---হ দিদিমণি, মাস্টারবাবুকি বিদেশ গিয়েছে যেন বইলছিলি?
---হ্যা। অনেকগুলো দেশে ওর গবেষণা বিষয়ে সেমিনার আছে।
---সিমিনারটা আবার কি রে দিদিমণি?
পিকলু হাসি হাসি মুখে বললে---সিমিনার, নয় সেমিনার। কোনো একটা বিষয় নিয়ে গবেষণামূলক বক্তৃতা হয়। আমি ফাইভে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে সেমিনারে ফার্স্ট হয়েছিলাম। তাই না মা?
---হুম্ম।
রমা মাথা নাড়লো। ও উঠে গেল রান্না করতে। শম্ভু আর পিকলুর নানাবিধ তালহীন গল্প ওর মাঝে মধ্যে কানে ঠেকছে। শম্ভু মাঝে মধ্যে খুব মোহিত হয়ে পিকলুর কথা শোনে। আর ভাবে 'দিদিমণির ঐটুকু ছিলাটা কত জানে। বাপ-মা পণ্ডিত হলে ছিলা এমন হবে লা তো কি।' তৎক্ষনাৎ সাজ্জাদ চাচার কথা মনে আসে। দিদিমণির গর্ভে যদি তার সন্তান আসে, একদিন দিদিমণির শিক্ষা দীক্ষায় লালিত হয়ে তার সন্তানও এমন বুদ্ধিমান হবে। পড়াশোনা করবে ইকলেজ-কলেজে।
সাবান-তেলে শম্ভুর জীবন অনভ্যস্ত। পরিচ্ছন্ন থাকার প্রয়োজনীয়তা ওর কোনোদিনই ছিল না। তাই গায়ে সাবান দিতে বড্ড সমস্যা হচ্ছে ওর। রমা ওর এই অস্বস্তি টের পেয়ে দ্রুত শাড়িটা খানিকটা দুই পায়ের ভাঁজে আটকে কলতলায় চলে এলো। বললে---দেখি, ওরকম করে কেউ সাবান দেয়!
শম্ভুর হাত থেকে ততক্ষণে সাবান কেড়ে নিয়েছে রমা। উলঙ্গ যুবক স্বামীর পিঠে, গায়ে সাবান দিতে লাগলো ও। তার সাথে নির্দেশ দিতে লাগলো 'হাতটা তোলো দেখি', 'বাঁ দিকটা', 'বগলটা তোলো' ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবেই শম্ভুর দেহকাণ্ডের নীচের দিকে নেমে গেল ও। প্রথমে কোমর এবং ধীরে ধীরে হাঁটু ও উরুসন্ধিতে ঠেকেল তার সাবান ধরা কোমল হাতের স্পর্শ। এখন ঠিক দাঁড়িয়ে থাকা শম্ভুর পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে আছে সে। আস্তে আস্তে, শম্ভুর দিকে ঈষৎ লাজুক হেসে, ভেংচে শম্ভুর লিঙ্গের চারপাশটায় ওর হাত ঘুরতে লাগলো।
শম্ভু আর পারছিল না। তার সারা গায়ে দিদিমণির হাতের স্পর্শে এমনিতেই আগুন। তারওপর এখন রমা তার সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঙ্গের নিকট ঘুরপাক খাচ্ছে। দ্রুত রমার হাতটা টেনে ধরিয়ে দিল পুরুষাঙ্গে। রমাও হাতে নিল ওটা। বেশ মোটা, আস্তে আস্তে দৃঢ় হয়ে যাচ্ছে দানবটা। রমা মুগ্ধ, সাবান স্পর্শে ওটার যত্ন নিচ্ছে। শম্ভু হস্তমৈথুনের কায়দায় রমার হাতটা চেপে ওঠানামা করাতে লাগলো। রমা যেন আনুগত্যশীলা ছাত্রী। শম্ভু হাত সরাতে সে নিজেই ওভাবে ওপর নীচ করতে লাগলো। শম্ভু আদেশের সুরে বললে---ধুয়ে দে ইবার।
রমা বালতি হতে জলপূর্ন মগ নিয়ে ঢেলে দিল ওখানে। শম্ভু এরপর বললে---দিদিমণি, চুইষে দে এখুন।
রমা কখনোই তা পারবে না। পুরুষেরা প্রস্রাব করে ওখান দিয়ে, ওটা ও মুখে নিতে কোনোমতেই পারবে না। ওর রুচিতে বাধে। তাই শম্ভুর ইচ্ছেকে অমান্য করে উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললে---নাও, এবার গায়ে জল ঢেলে স্নান করে নাও।
---তুরে যে চুইষে দিতে বইললি!
---ঐসব নোংরা কাজ আমি পারবো না। যাও লক্ষীটি, বেশ বাতাস দিচ্ছে, সারাদিন তো নদীতে ঘুরে বেড়ালে। ঠান্ডা লেগে যাবে।
শম্ভু রমার হাত চেপে ধরল। আবদার করে বললে--চুইষে দে লা দিদিমণি। ইটা কুনো নুংরা কাম লয়। সব মাগই তার ভাতারের লিগে করে।
---জোর করো না শম্ভু। আমি এসব পারবো না, তোমাকে সেদিনও বলেছি। আমাকে জোর করো না প্লিজ।
শম্ভু অবশ্য আর জোরাজুরির পথে গেল না। রমা বরং নগ্ন ভেজা শম্ভুর গালে একটা হালকা চুমু খেল। তারপর বললে---তাড়াতাড়ি গা হাত মুছে এসো। আমি চা করছি।
শম্ভু চুলে চিরুনী চালাতে চালাতে বললে---দিদিমণি, চুলটা কাইটে ফেললি, শালা! মিঠুনের মত লাইগ তো।
এই চুল কাটা নিয়ে বেশ আফশোস রয়েছে শম্ভুর। গ্যাস স্টোভ থেকে মুখ না সরিয়ে রমা বললে---হ্যা, মিঠুন না ছাই, বর্বরের মত ঘাড় অবধি চুল রেখেছিলে।
পিকলু মা আর শম্ভু আঙ্কেলের কথার ফাঁকে হেসে গড়িয়ে যেতে যেতে বললে--আঙ্কেল তোমার চুলটা দেখে ইশান্ত শর্মার মত লাগতো।
---সিটা আবার কে রে ছিলা? আমি অত হিন্দি ফিলিম দিখিনি।
---আরে ইশান্ত শর্মা কোনো ফিল্মস্টার না। ক্রিকেটার, ফাস্ট বোলিং করে।
---অ... তাই ক। মোর ঘরে টিভি কুথা, যে খেলা বুইঝবো।
রমা সসপ্যান থেকে চা ছেঁকে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললে---ইনভার্টারটা লো ভোল্টেজের তা নাহলে একটা টিভি কেনা যেত।
অমনি পিকলু জেদ করে বললে---বাবাকে বলো না মা, ইনভার্টারটা বদলে দিতে। কতদিন খেলা দেখিনি। সেবার ইউরো কাপ শুরুর সময়ই আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম। ভাল্লাগে না।
রমা চায়ের কাপ শম্ভুর হাতে দিয়ে নিজে চুমুক দিতে দিতে বললে---পরে। সুস্থ হয়ে যা। তারপর না হয়....
---সুস্থ হলে তো বাড়ি চলে যাবো আমরা। শম্ভু আঙ্কেল তো খেলার কিছুই বোঝে না।
রমা হকচকিয়ে গেল। পিকলু সুস্থ হলে তো সত্যিই ওরা এই নকল সংসার ছেড়ে চলে যাবে। শম্ভুর সংসার ঠিক আগের মত হয়ে যাবে, শ্রীহীন, চালচুলোহীন এক বন্য যুবকের দোচালা পড়ে রইবে এই কালনাগিনী তীরে। বুকটা হাহুতাশ করে উঠল রমার। শম্ভুও যেন কেমন অন্যমনস্ক হয়ে উঠল। দিদিমণিকে যতই সে পাবার দাবী করুক, তা যে মাত্র ক'টা দিনের। দিদিমণির মনের মধ্যে এখনো তার জায়গা বড় কম, ততটা নয় যতটা মাস্টারবাবুর আছে।
রমার নজর এড়ালো না আবেগপূর্ন শম্ভুর মুখাবয়বের প্রতি। ও কথা এড়িয়ে বললে---তোর শম্ভু আঙ্কেল একটা গেঁয়ো, যুবক ছেলে অথচ খেলাধুলো জানে না।
শম্ভু তৎক্ষনাৎ বললে---খেলাধুলা জানি লাই মানে? গেরামে কত কাবাডি খেলছি। মণ্ডল পাড়ায় ভলি বল খেলে গেরামের ছিলারা। এক দু'বার খেলছি সিখানটা।
পিকলু কুইজের প্রশ্ন করবার মত বললে---শম্ভু আঙ্কেল, বলো দেখি ভলিবলে কোন দেশ সবচেয়ে ভালো খেলে?
রমা জানে পিকলু আর পীযুষ, বাপ-ছেলের মধ্যে যখন তখন এমন কুইজের প্রতিযোগিতা চলে। সে থেকেই পিকলুর এমন অভ্যেস। বিশেষ করে পীযুষ এভাবেই পিকলুকে সারা বিশ্বের সাথে ছেলেকে পরিচয় করায়। আর বাপ-ছেলের এমন কঠিন প্রশ্নের গুঁতো মাঝে মধ্যে রমার দিকে তেড়ে আসে। রমা না পারলে পিকলু আর পীযুষের ঠাট্টার শিকার হতে হয়। অমনি পিকলু বলে ওঠে 'মা জানে না'।
পিকলুর প্রশ্নে ঘাবড়ে গেল শম্ভু। বললে---দেশ? তালে বিহার হবে। বিহারী ছিলাগুলাকে দেইখছি ভলিবল ভালো খেইলতে।
অমনি পিকলু হো হো করে হেসে উঠল। বললে---বিহার আবার দেশ হল কবে থেকে?
রমা সামলে নিল। শম্ভু অশিক্ষিত। তার পক্ষে দেশ, রাজ্য এসবের নিখুঁত পাঠ নেই। সে বললে---শম্ভু আমাদের দেশ হল গিয়ে ভারত। আর একটা দেশ অনেক রাজ্য নিয়ে গঠিত হয়। যেমন পশ্চিমবঙ্গ একটা রাজ্য, তেমন বিহারও একটা রাজ্য।
---হ জানি ত। দু' কেলাস মা'র কাছটা ধইরলে চার কেলাস পড়ছি। দেশ হল গিয়ে ভারত। স্বাধীন হছে লা, গান্ধীজি নেতাজি সব ফটো দিয়ে সরবেড়িয়া হাটে...
---হ্যা, সবই যদি জানো তবে এমন ভুল বললে কেন? রমা হেসে মুখ বাঁকিয়ে বললে।
---আরে আমি হলি গিয়ে সনাতন জেলের লাতি আর ভীমনাগ বেদের গন্ডমূর্খ ব্যাটা। মাছ ধইরে, সাপ ধইরে জীবন কাটে। জাহাজের খবর আদাব্যাপারি হুয়ে রাইখে লাভ কি!
পিকলু বললে---মা বলতে পারবে উত্তরটা? সেই দেশটা আবার ফুটবলেও সেরা।
রমা কিঞ্চিৎ চিন্তা করে বললে---ফুটবলে যখন ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা হবে হয়ত।
---ঠিক, ব্রাজিল। ব্রাজিলের ক্যাপিটাল রিও ডি জেনিরো তে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ভলিবল।
---থাক থাক। তোকে আর জ্ঞান দিতে হবে না। তোর বাবা এলে এসব জ্ঞানচর্চা করিস।
---মা, বাবা কবে ফিরবে গো?
চায়ের কাপ শেষ করে শম্ভু বললে---হ দিদিমণি, মাস্টারবাবুকি বিদেশ গিয়েছে যেন বইলছিলি?
---হ্যা। অনেকগুলো দেশে ওর গবেষণা বিষয়ে সেমিনার আছে।
---সিমিনারটা আবার কি রে দিদিমণি?
পিকলু হাসি হাসি মুখে বললে---সিমিনার, নয় সেমিনার। কোনো একটা বিষয় নিয়ে গবেষণামূলক বক্তৃতা হয়। আমি ফাইভে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে সেমিনারে ফার্স্ট হয়েছিলাম। তাই না মা?
---হুম্ম।
রমা মাথা নাড়লো। ও উঠে গেল রান্না করতে। শম্ভু আর পিকলুর নানাবিধ তালহীন গল্প ওর মাঝে মধ্যে কানে ঠেকছে। শম্ভু মাঝে মধ্যে খুব মোহিত হয়ে পিকলুর কথা শোনে। আর ভাবে 'দিদিমণির ঐটুকু ছিলাটা কত জানে। বাপ-মা পণ্ডিত হলে ছিলা এমন হবে লা তো কি।' তৎক্ষনাৎ সাজ্জাদ চাচার কথা মনে আসে। দিদিমণির গর্ভে যদি তার সন্তান আসে, একদিন দিদিমণির শিক্ষা দীক্ষায় লালিত হয়ে তার সন্তানও এমন বুদ্ধিমান হবে। পড়াশোনা করবে ইকলেজ-কলেজে।