02-01-2024, 08:17 PM
জয়: তুই একদম কারেক্ট ধরেছিস। আমাদের প্যাচ আপ হয়ে গেছিল। দোলাই নিজে থেকে অ্যাপ্রোচ করেছিল। পরদিন সকাল হতেই আমাকে ফোন করে। আমি এত রেগে ছিলাম যে প্রথমে তুলিনি। বাট কন্টিনিউ ফোন করতে থাকে। আফটার দ্য সেভেনথ কল আই গেভ আপ। ফোনটা রিসিভ করি। আর করতেই ওপাশ থেকে আমার বউ হাঁউমাঁউ করে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতেই বারবার অ্যাপোলোজাইজ করে। নিজের ভুল স্বীকার করে। বলে যে অমন হুট করে একটা প্রায় অচেনা লোকের বার্থডে পার্টিতে যাওয়া নাকি ওর উচিত হয়নি। ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে। আর কোনোদিনও এমন হবে না। এসব আর কি। দোলাকে ওইভাবে বাচ্চাদের মতো ফোনে কাঁদতে শুনে আমার রাগ কিছুটা পরে যায়। তবুও ওকে টন্টিং করে বলি যে ওর পার্টিতে যাওয়াটা না হয় তাও মেনে নেওয়া গেলো। কিন্তু ওর ওমন মদ খেলে লাট হয়ে বাড়ি ফেরা আর তাও আবার ওমন মেসি স্টেটে, এটা তো মেনে নেওয়া পসিবল নয়।
আমি: তোর বউকে একটু কড়া কথা শুনিয়ে দিয়ে তুই একদম ঠিক করেছিলিস। দোলা নিশ্চয়ই ভালো রকম অজুহাত দিয়েছিল।
জয়: একদম। এক্সকিউজ রেডি করেই রেখেছিল। আমি দোলাকে চেপে ধরতেই বললো যে ওকে নাকি পার্টিতে সবাই ফোর্স করে মদ খাইয়ে দিয়েছিল। ও নাকি প্রথমে ড্রিংকই করতে চায়নি। কিন্তু সবাই এতবেশি ইনসিস্ট করছিল বলে নাকি শেষমেষ রাজি হয়ে যায়। তারপর এক পেগ দু পেগ করে কখন যে মাতাল হয়ে পড়েছিল সেটা বুঝতেই পারেনি।
আমি: ওকে। মানতেই হবে তোর বউ বেশ ভালোই ছলাকলা জানে। কিন্তু তুই তো বললি যে দোলার পোশাকআশাকও অবিন্যস্ত ছিল। সেই সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি নিশ্চয়ই, নাকি পেরেছিল?
জয়: সেটাও মোটামুটি রেডি করেই রেখেছিল। নিজে থেকেই বললো যে পার্টিতে জোরে জোরে গান বাজছিল আর সবাই ডান্স করছিল। দোলাও নাকি খুব নেচেছে। কিন্তু এতবেশি মদ খেয়ে ফেলেছিল যে নাচতে নাচতে নিজের টাল সামলাতে পারেনি। দুম করে পরেই যাচ্ছিল। কিন্তু লাস্ট মোমেন্টে বিক্রম ওকে সেভ করে। বিক্রমেরই বার্থডে পার্টিতে দোলা গেছিল আর ওই সময় ওরা দুজন একসাথে ডান্স করছিল। ও নাকি এত বিচ্ছিরিভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল যে ছেলেটা বাঁচাতে গিয়ে ওকে ঠিকমতো ধরতে পারেনি। বিক্রমের হাত দুটো নাকি ওর ব্লাউজ আর হটপ্যান্টে আটকে যায় আর টানাহেঁচড়ায় কমপ্লিটলি ছিঁড়েফেটে যায়। তারপরই নাকি দোলা পার্টি থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি ফেরত চলে আসে। বিক্রমই নাকি ওকে গাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে গেছিল।
আমি: হুম! দোলা দেখছি সব আঁটঘাট বেঁধেই তোর কাছে ক্ষমা চাইতে ফোন করেছিল। হয় তোকে ওর কথাগুলো সব বিশ্বাস করে নিয়ে, ওকে ক্ষমা করে দিতে হয়। নয়ত ওর উপর অনাস্থা প্রকাশ করে, ওকে সরাসরি মিথ্যেবাদী বলে দোষারোপ করতে হয়। যাকে বলে একেবারে শাঁখের কড়াৎ পরিস্থিতি। তা তুই কি করলি? তোর বউকে নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দিলি।
জয়: তুই এবারও কারেক্ট ধরেছিস। আই ওয়াজ সামহাও ফোর্সড টু ফর্গিভ হার। তবে কি জানিস, আমি দোলার সব কথা বিশ্বাস করিনি। কোথায় যেন একটা খটকা লাগছিলো। অত কিছুর জন্য ওর এক্সপ্লেনেশনটা বড্ড বেশি সিম্পল ছিল। সবকিছু মিলেও যেন মিলছিল না।
আমি: দোলার ব্যাখাতে গরমিল তো ছিলই। ভালোরকম ছিল। প্রথমত, পার্টিতে কেউ ওকে একটু জোরাজুরি করলো আর অমনি ও সানন্দে একগাদা মদ গিলে বসলো। এটা বলতে সোজা হলেও মেনে নিতে কঠিন। দোলা কি বাচ্চা মেয়ে? যে যা বলবে, তাই শুনবে। তুই তো কিছুক্ষণ আগেই বললি যে তোর বউ নাকি পার্টি করতে খুব পছন্দ করতো। ও ইচ্ছে করেই আকণ্ঠ মদ্যপান করে বসেছিল। আর দ্বিতীয়ত, সে মদ গিলে টাল সামলাতে না পেরে এমন বিশ্রীভাবে পরে যাচ্ছিল যে তাকে বাঁচাতে গিয়ে কেউ তার গায়ের কাপড়চোপড়ই পুরো ছিঁড়ে ফেললো, এমন আজগুবি কথা তো আমি বাপের জন্মে শুনিনি। এমন অদ্ভুত ঘটনা অত্যন্ত বিরল, অতিরিক্ত অস্বাভাবিক এবং অবশ্যই পুরোপুরি অবিশ্বাসযোগ্য। শুনলেই মনে সন্দেহ জাগতে বাধ্য। তবে ওই যে বললাম, হয় তোকে তোর বউকে ক্ষমা করতে হয়, নয়তো ওকে মিথ্যেবাদী অপবাদ দিতে হয়। যাই হোক, তারপর কি হলো? তুই দোলাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারলি না। তবুও ওকে মার্জনা করে দিলি। আশা করি শেষমেষ তোদের মধ্যে সবকিছু মিটমাটও হয়ে গেছিল আর ও তোর কাছে ফিরেও এসেছিল। দোলা কি তাহলে তোদের বাড়িতে ফিরে আসার পরেও কোনো কুকীর্তি করেছিল?
জয়: না! আমাদের বাড়িতে ফেরত আসার পর দোলা আর কোনো আলতু-ফালতু কাজ করেনি। বেশ শান্তশিষ্ট হয়েই বসেছিল। নিজেও আর কোনো কমপ্লেইন করেনি, আমাকেও করার সুযোগ দেয়নি। সী রিমেন্ড এ গুড ওয়াইফ ফর এ হোয়াইল। অ্যাট লিস্ট ফর দ্য নেক্সট থ্রি মানথস। মাইরি বলছি, ওই টাইমটায় এত প্রিম অ্যান্ড প্রপার থাকতো যে সত্যি বলতে ওর ওই পার্টি থেকে অমন ইন্ডিসেন্ট অবস্থায় বাড়ি ফেরাটাও আমি প্রায় ভুলে গেছিলাম। কিছুদিন পর থেকে আমি আগের মতোই আবার প্রতি শনিবার করে ওকে নিয়ে ক্লাবে যেতে শুরু করলাম। আমরা আবার আগের মতো একসাথে ড্যান্স, ড্রিঙ্কস অ্যান্ড সেক্স করে লাইফটাকে এনজয় করতে চালু করলাম। দোলা তখন আমার দিকে ছাড়া, আর কারুর দিকে ভুল করেও তাকাতো না। ওই যে বললাম না, ও পুরোপুরি আমার গুড ওয়াইফ বনে গেছিল।
আমি: তাহলে আবার নতুন করে কি এমন হলো যে পরিস্থিতি বিগড়ে গেল?
জয়: বউকে নিয়ে আমার সমস্ত টেনশন মন থেকে দূর হয়ে গেছিল। দ্যাটস হোয়াই সপ্তাহ দুয়েক আগে আমি বউকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলাম। দোলাই বলেছিল যে হানিমুনে আমরা পাহাড়ে ঘুরে এসেছি যখন, তখন এবার তাহলে আমাদের সমুদ্রে যাওয়া উচিত। আমার আইডিয়াটা মন্দ লাগলো না। ইচ্ছে ছিলো বিদেশে কোথাও যাবো। ঝাঁ চকচকে বিচে দুজনে মিলে ভরপুর পার্টি করবো। কিন্তু হানিমুনে শিমলায় আমরা প্রায় দুই সপ্তাহ কাটিয়েছিলাম। একটা ভেরি এক্সপেন্সিভ রিসোর্টে উঠে ছিলাম। আমার প্রচুর টাকাপয়সা খরচা হয়ে গেছিল। তাই বিদেশে যাওয়ার বাজেট ছিল না। তখন দোলাই গোয়া ট্রিপের সাজেশনটা দিলো। কিন্তু গোয়াও তো খুব এক্সপেন্সিভ জায়গা। আমি দোনামনা করছিলাম। তখন ও বললো যে আমরা না হয় শর্ট ট্রিপ করবো। ওখানে তিনটে দিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসবো। প্লাস এবার আর কোনো রিসোর্ট-ফিসোর্টের চক্করে পড়বো না। কোনো সস্তার জায়গায় থাকবো। তিনটে দিনের তো ব্যাপার। আরামসে ম্যানেজ হয়ে যাবে। ইজিলি পুরো খরচটা অনেকটাই কার্টেল হয়ে যাবে। বুদ্ধিটা ভালোই ছিল বুঝলি। আমার আগে কখনো গোয়া যাওয়া হয়নি। তাই আর বেশি ভাবলাম না। রাজি হয়ে গেলাম। দোলা বললো যে ট্রিপের প্ল্যানটা ওই করবে। ও তো সারাদিন বাড়িতেই থাকে। তাই ওর হাতে প্রচুর সময়। কোথায় সবথেকে সস্তায় সবচেয়ে ভালো ডিল পাওয়া যাচ্ছে, সেসব দেখে নিতে পারবে। প্লেন-টেন, হোটেল-ফোটেল আর বাদবাকি যা কিছু লাগে সব আগেভাগে বুকিং করে রাখবে। আমরা শুধু যাবো আর এনজয় করবো। তোকে কি বলবো রে ঋষি? এত গুছিয়ে বোঝালো না, যে আমি তখনই ওর উপর ট্রিপ প্ল্যান করার দায়িত্ব ছেড়ে দিলাম। খুব টাইম কনস্যুমিং ব্যাপার-স্যাপার। আমি অফিস করবো নাকি ওসব করবো? অফিসের চাপ সামলে ওই সব ঝুটঝামেলায় যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। তখন তো আর বুঝিনি যে দোলা আসলে ঠিক কি প্ল্যান করে রেখেছে। পরে যখন সব টের পেলাম, তখন আর আমার কিছু করার ছিল না। অনেক দেরি হয়ে গেছিল।
জয়ের বর্ণনায় কোথায় যেন একটা রহস্যের গন্ধ লুকিয়ে ছিল। আমার বন্ধুর মুখে আঘাতের চিহ্নগুলোর সাথে ওর রহস্যময় কথাবার্তাগুলো পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে লাস্যময়ী স্ত্রীকে নিয়ে গোয়া ভ্রমণ করতে গিয়ে, ওর গয়া প্রাপ্তি হয়েছে। কিন্তু জয় এত উৎসাহের সাথে ওর জীবনের অন্ধকারময় বিবরণটিকে উপস্থাপন করছিল, যে ওকে বারবার প্রশ্ন করে প্রহেলিকাটিকে দ্রুত উন্মোচন করার সাধ আমার ছিল না। ছোটবেলায় আমার ঠাকুমা-দিদিমা আমাকে এভাবেই রসিয়ে-কষিয়ে গল্প বলতো আর আমি চুপচাপ বসে সেইসব শুনতাম। রহস্য গল্প শোনার একটা আলাদা রোমাঞ্চ আছে। পরমক্ষণটি আগেভাগে জেনে ফেললে, সেটা কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। আমি জয়কে বিশেষ উত্যক্ত করতে গেলাম না। ওকে ওর আপন ছন্দে বকে যেতে দিলাম।
জয়: গোয়া যাওয়ার ফ্লাইটে আমার আর দোলার আলাদা আলাদা রোতে সিট পড়েছিল। ও বলেছিল যে ওয়েবসাইটে নাকি দুটো সিট পাশাপাশি বুক করার কোনো অপশন পায়নি। সস্তার ফ্লাইট বস। ফুল প্যানকড আপ ছিল। অত প্যাসেঞ্জার দেখে বউয়ের কথা বিশ্বাস করে নিতে আমার কোনো অসুবিধে হয়নি। আমাদের টিকিট ইকোনোমি ক্লাসের ছিল। দোলা মিডল সিটে পেয়েছিল আর ঠিক পাশের কলামে চারটে রো ছেড়ে আমার শেষের সিটটা জুটেছিল। ওর দুপাশে দুজন কালো কুচকুচে গাম্বাট মার্কা লোক বসেছিল। দুটোই প্রায় আমাদের সমবয়েসী। গোটা ফ্লাইটটায় দোলা লোক দুটোর সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছিল। আমি কিছু দেখতে না পেলেও, মাঝেমধ্যেই ওর হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। দুজন অপরিচিত লোকের সাথে আমার বউ এমন খোশগল্পে মেতে উঠেছিল যে খিলখিল করে বাচ্চা মেয়ের মতো হাসছিল। আমি দু-তিনবার ভেবেছিলাম যে একবার উঠে গিয়ে দেখি ওদের ওখানে কি চলছে। কিন্তু কেন জানি না ওই গুন্ডা দুটোর অমন পাথরভাঙ্গা তাগড়াই চেহারা আমার মনে একটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। তাই আর ফালতু ফালতু পাঙ্গা নিতে গেলাম না। ভাবলাম, দুঘন্টার তো ফ্লাইট। দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। অতটুকু সময়ের মধ্যে হারামজাদা দুটো কতটুকু আর আমার সুন্দরী বউয়ের সাথে ফ্লার্ট করবার সুযোগ পাবে? প্লেন গোয়ায় নামবার পর এমনিতেই আপদ বিদেয় হবে।
আমি: তোর বউকে একটু কড়া কথা শুনিয়ে দিয়ে তুই একদম ঠিক করেছিলিস। দোলা নিশ্চয়ই ভালো রকম অজুহাত দিয়েছিল।
জয়: একদম। এক্সকিউজ রেডি করেই রেখেছিল। আমি দোলাকে চেপে ধরতেই বললো যে ওকে নাকি পার্টিতে সবাই ফোর্স করে মদ খাইয়ে দিয়েছিল। ও নাকি প্রথমে ড্রিংকই করতে চায়নি। কিন্তু সবাই এতবেশি ইনসিস্ট করছিল বলে নাকি শেষমেষ রাজি হয়ে যায়। তারপর এক পেগ দু পেগ করে কখন যে মাতাল হয়ে পড়েছিল সেটা বুঝতেই পারেনি।
আমি: ওকে। মানতেই হবে তোর বউ বেশ ভালোই ছলাকলা জানে। কিন্তু তুই তো বললি যে দোলার পোশাকআশাকও অবিন্যস্ত ছিল। সেই সম্পর্কে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি নিশ্চয়ই, নাকি পেরেছিল?
জয়: সেটাও মোটামুটি রেডি করেই রেখেছিল। নিজে থেকেই বললো যে পার্টিতে জোরে জোরে গান বাজছিল আর সবাই ডান্স করছিল। দোলাও নাকি খুব নেচেছে। কিন্তু এতবেশি মদ খেয়ে ফেলেছিল যে নাচতে নাচতে নিজের টাল সামলাতে পারেনি। দুম করে পরেই যাচ্ছিল। কিন্তু লাস্ট মোমেন্টে বিক্রম ওকে সেভ করে। বিক্রমেরই বার্থডে পার্টিতে দোলা গেছিল আর ওই সময় ওরা দুজন একসাথে ডান্স করছিল। ও নাকি এত বিচ্ছিরিভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল যে ছেলেটা বাঁচাতে গিয়ে ওকে ঠিকমতো ধরতে পারেনি। বিক্রমের হাত দুটো নাকি ওর ব্লাউজ আর হটপ্যান্টে আটকে যায় আর টানাহেঁচড়ায় কমপ্লিটলি ছিঁড়েফেটে যায়। তারপরই নাকি দোলা পার্টি থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি ফেরত চলে আসে। বিক্রমই নাকি ওকে গাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে গেছিল।
আমি: হুম! দোলা দেখছি সব আঁটঘাট বেঁধেই তোর কাছে ক্ষমা চাইতে ফোন করেছিল। হয় তোকে ওর কথাগুলো সব বিশ্বাস করে নিয়ে, ওকে ক্ষমা করে দিতে হয়। নয়ত ওর উপর অনাস্থা প্রকাশ করে, ওকে সরাসরি মিথ্যেবাদী বলে দোষারোপ করতে হয়। যাকে বলে একেবারে শাঁখের কড়াৎ পরিস্থিতি। তা তুই কি করলি? তোর বউকে নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দিলি।
জয়: তুই এবারও কারেক্ট ধরেছিস। আই ওয়াজ সামহাও ফোর্সড টু ফর্গিভ হার। তবে কি জানিস, আমি দোলার সব কথা বিশ্বাস করিনি। কোথায় যেন একটা খটকা লাগছিলো। অত কিছুর জন্য ওর এক্সপ্লেনেশনটা বড্ড বেশি সিম্পল ছিল। সবকিছু মিলেও যেন মিলছিল না।
আমি: দোলার ব্যাখাতে গরমিল তো ছিলই। ভালোরকম ছিল। প্রথমত, পার্টিতে কেউ ওকে একটু জোরাজুরি করলো আর অমনি ও সানন্দে একগাদা মদ গিলে বসলো। এটা বলতে সোজা হলেও মেনে নিতে কঠিন। দোলা কি বাচ্চা মেয়ে? যে যা বলবে, তাই শুনবে। তুই তো কিছুক্ষণ আগেই বললি যে তোর বউ নাকি পার্টি করতে খুব পছন্দ করতো। ও ইচ্ছে করেই আকণ্ঠ মদ্যপান করে বসেছিল। আর দ্বিতীয়ত, সে মদ গিলে টাল সামলাতে না পেরে এমন বিশ্রীভাবে পরে যাচ্ছিল যে তাকে বাঁচাতে গিয়ে কেউ তার গায়ের কাপড়চোপড়ই পুরো ছিঁড়ে ফেললো, এমন আজগুবি কথা তো আমি বাপের জন্মে শুনিনি। এমন অদ্ভুত ঘটনা অত্যন্ত বিরল, অতিরিক্ত অস্বাভাবিক এবং অবশ্যই পুরোপুরি অবিশ্বাসযোগ্য। শুনলেই মনে সন্দেহ জাগতে বাধ্য। তবে ওই যে বললাম, হয় তোকে তোর বউকে ক্ষমা করতে হয়, নয়তো ওকে মিথ্যেবাদী অপবাদ দিতে হয়। যাই হোক, তারপর কি হলো? তুই দোলাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারলি না। তবুও ওকে মার্জনা করে দিলি। আশা করি শেষমেষ তোদের মধ্যে সবকিছু মিটমাটও হয়ে গেছিল আর ও তোর কাছে ফিরেও এসেছিল। দোলা কি তাহলে তোদের বাড়িতে ফিরে আসার পরেও কোনো কুকীর্তি করেছিল?
জয়: না! আমাদের বাড়িতে ফেরত আসার পর দোলা আর কোনো আলতু-ফালতু কাজ করেনি। বেশ শান্তশিষ্ট হয়েই বসেছিল। নিজেও আর কোনো কমপ্লেইন করেনি, আমাকেও করার সুযোগ দেয়নি। সী রিমেন্ড এ গুড ওয়াইফ ফর এ হোয়াইল। অ্যাট লিস্ট ফর দ্য নেক্সট থ্রি মানথস। মাইরি বলছি, ওই টাইমটায় এত প্রিম অ্যান্ড প্রপার থাকতো যে সত্যি বলতে ওর ওই পার্টি থেকে অমন ইন্ডিসেন্ট অবস্থায় বাড়ি ফেরাটাও আমি প্রায় ভুলে গেছিলাম। কিছুদিন পর থেকে আমি আগের মতোই আবার প্রতি শনিবার করে ওকে নিয়ে ক্লাবে যেতে শুরু করলাম। আমরা আবার আগের মতো একসাথে ড্যান্স, ড্রিঙ্কস অ্যান্ড সেক্স করে লাইফটাকে এনজয় করতে চালু করলাম। দোলা তখন আমার দিকে ছাড়া, আর কারুর দিকে ভুল করেও তাকাতো না। ওই যে বললাম না, ও পুরোপুরি আমার গুড ওয়াইফ বনে গেছিল।
আমি: তাহলে আবার নতুন করে কি এমন হলো যে পরিস্থিতি বিগড়ে গেল?
জয়: বউকে নিয়ে আমার সমস্ত টেনশন মন থেকে দূর হয়ে গেছিল। দ্যাটস হোয়াই সপ্তাহ দুয়েক আগে আমি বউকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলাম। দোলাই বলেছিল যে হানিমুনে আমরা পাহাড়ে ঘুরে এসেছি যখন, তখন এবার তাহলে আমাদের সমুদ্রে যাওয়া উচিত। আমার আইডিয়াটা মন্দ লাগলো না। ইচ্ছে ছিলো বিদেশে কোথাও যাবো। ঝাঁ চকচকে বিচে দুজনে মিলে ভরপুর পার্টি করবো। কিন্তু হানিমুনে শিমলায় আমরা প্রায় দুই সপ্তাহ কাটিয়েছিলাম। একটা ভেরি এক্সপেন্সিভ রিসোর্টে উঠে ছিলাম। আমার প্রচুর টাকাপয়সা খরচা হয়ে গেছিল। তাই বিদেশে যাওয়ার বাজেট ছিল না। তখন দোলাই গোয়া ট্রিপের সাজেশনটা দিলো। কিন্তু গোয়াও তো খুব এক্সপেন্সিভ জায়গা। আমি দোনামনা করছিলাম। তখন ও বললো যে আমরা না হয় শর্ট ট্রিপ করবো। ওখানে তিনটে দিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে আসবো। প্লাস এবার আর কোনো রিসোর্ট-ফিসোর্টের চক্করে পড়বো না। কোনো সস্তার জায়গায় থাকবো। তিনটে দিনের তো ব্যাপার। আরামসে ম্যানেজ হয়ে যাবে। ইজিলি পুরো খরচটা অনেকটাই কার্টেল হয়ে যাবে। বুদ্ধিটা ভালোই ছিল বুঝলি। আমার আগে কখনো গোয়া যাওয়া হয়নি। তাই আর বেশি ভাবলাম না। রাজি হয়ে গেলাম। দোলা বললো যে ট্রিপের প্ল্যানটা ওই করবে। ও তো সারাদিন বাড়িতেই থাকে। তাই ওর হাতে প্রচুর সময়। কোথায় সবথেকে সস্তায় সবচেয়ে ভালো ডিল পাওয়া যাচ্ছে, সেসব দেখে নিতে পারবে। প্লেন-টেন, হোটেল-ফোটেল আর বাদবাকি যা কিছু লাগে সব আগেভাগে বুকিং করে রাখবে। আমরা শুধু যাবো আর এনজয় করবো। তোকে কি বলবো রে ঋষি? এত গুছিয়ে বোঝালো না, যে আমি তখনই ওর উপর ট্রিপ প্ল্যান করার দায়িত্ব ছেড়ে দিলাম। খুব টাইম কনস্যুমিং ব্যাপার-স্যাপার। আমি অফিস করবো নাকি ওসব করবো? অফিসের চাপ সামলে ওই সব ঝুটঝামেলায় যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। তখন তো আর বুঝিনি যে দোলা আসলে ঠিক কি প্ল্যান করে রেখেছে। পরে যখন সব টের পেলাম, তখন আর আমার কিছু করার ছিল না। অনেক দেরি হয়ে গেছিল।
জয়ের বর্ণনায় কোথায় যেন একটা রহস্যের গন্ধ লুকিয়ে ছিল। আমার বন্ধুর মুখে আঘাতের চিহ্নগুলোর সাথে ওর রহস্যময় কথাবার্তাগুলো পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে লাস্যময়ী স্ত্রীকে নিয়ে গোয়া ভ্রমণ করতে গিয়ে, ওর গয়া প্রাপ্তি হয়েছে। কিন্তু জয় এত উৎসাহের সাথে ওর জীবনের অন্ধকারময় বিবরণটিকে উপস্থাপন করছিল, যে ওকে বারবার প্রশ্ন করে প্রহেলিকাটিকে দ্রুত উন্মোচন করার সাধ আমার ছিল না। ছোটবেলায় আমার ঠাকুমা-দিদিমা আমাকে এভাবেই রসিয়ে-কষিয়ে গল্প বলতো আর আমি চুপচাপ বসে সেইসব শুনতাম। রহস্য গল্প শোনার একটা আলাদা রোমাঞ্চ আছে। পরমক্ষণটি আগেভাগে জেনে ফেললে, সেটা কিন্তু নষ্ট হয়ে যায়। আমি জয়কে বিশেষ উত্যক্ত করতে গেলাম না। ওকে ওর আপন ছন্দে বকে যেতে দিলাম।
জয়: গোয়া যাওয়ার ফ্লাইটে আমার আর দোলার আলাদা আলাদা রোতে সিট পড়েছিল। ও বলেছিল যে ওয়েবসাইটে নাকি দুটো সিট পাশাপাশি বুক করার কোনো অপশন পায়নি। সস্তার ফ্লাইট বস। ফুল প্যানকড আপ ছিল। অত প্যাসেঞ্জার দেখে বউয়ের কথা বিশ্বাস করে নিতে আমার কোনো অসুবিধে হয়নি। আমাদের টিকিট ইকোনোমি ক্লাসের ছিল। দোলা মিডল সিটে পেয়েছিল আর ঠিক পাশের কলামে চারটে রো ছেড়ে আমার শেষের সিটটা জুটেছিল। ওর দুপাশে দুজন কালো কুচকুচে গাম্বাট মার্কা লোক বসেছিল। দুটোই প্রায় আমাদের সমবয়েসী। গোটা ফ্লাইটটায় দোলা লোক দুটোর সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছিল। আমি কিছু দেখতে না পেলেও, মাঝেমধ্যেই ওর হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। দুজন অপরিচিত লোকের সাথে আমার বউ এমন খোশগল্পে মেতে উঠেছিল যে খিলখিল করে বাচ্চা মেয়ের মতো হাসছিল। আমি দু-তিনবার ভেবেছিলাম যে একবার উঠে গিয়ে দেখি ওদের ওখানে কি চলছে। কিন্তু কেন জানি না ওই গুন্ডা দুটোর অমন পাথরভাঙ্গা তাগড়াই চেহারা আমার মনে একটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। তাই আর ফালতু ফালতু পাঙ্গা নিতে গেলাম না। ভাবলাম, দুঘন্টার তো ফ্লাইট। দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। অতটুকু সময়ের মধ্যে হারামজাদা দুটো কতটুকু আর আমার সুন্দরী বউয়ের সাথে ফ্লার্ট করবার সুযোগ পাবে? প্লেন গোয়ায় নামবার পর এমনিতেই আপদ বিদেয় হবে।