Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
রাস্তায় যে কোন লোককে দেখলেই চেনা লাগে। মনে হয় আমার পূর্ব পরিচিত।
কাছে গিয়ে একটু হেসে বলি, "কি, ভালো আছো তো? বহুদিন পর, তা এখন আছো কোথায়?" 
সে আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে, "ঠিক চিনলাম না তো?" 
ভুল হয়েছে বুঝতে পেরে ব্যাপারটাকে ম্যানেজ করার জন্য বলি, "তুমি অশোকদা না?" 
এরকম কতবার হয়েছে।
বছর তিনেক আগে এরকম বেশ কয়েকটা কেস খেয়েছি। মাছের বাজারে কালো ঢ্যাঙামত লোকটাকে দেখে মেজমামা ভেবে হেঁট হয়ে প্রণাম করতেই ভদ্রলোক হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, যেন ব্যপারটা তার কাছে নবম আশ্চর্য। তখনই বুঝলাম রং নাম্বার হয়ে গেছে।
 বললাম, "ভালো আছেন তো মেজোমামা? কতদিন পর দেখা।"
ভদ্রলোক হাঁক মেরে ষন্ডামার্কা হেবোকে ডেকে আমাকে দেখিয়ে বললেন, "মালটাকে চিনে রাখ, বাজারময় লোকের সামনে আমায় মামা বলেছে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছ বলে এ যাত্রায় রক্ষা পেলে, নইলে লকআপে ঢুকিয়ে রুলের গুঁতো দিয়ে মামারবাড়ির ভোগে পাঠিয়ে দিতাম।"
পরে জানলুম উনি থানার মেজোবাবু। ভুল করে পুলিশকে না হয় মায়ের ভাই বলে ডেকেই ফেলেছি এতে এত রেগে যাবার কি আছে? এরপর সত্যিমামার সংগে অনেকবার দেখা হয়েছে, ভয়ে আমি এড়িয়ে গেছি। মাকে দুঃখ করে বলেছেন, "বাপিটা কেমন পাল্টে গেল, এখন আর চিনতেই পারে না।"
কয়েকদিন পর আবার একটা কান্ড ঘটল ঠিক পুজোর আগে আগে। আমার শালির কাছাকাছি বিয়ে হয়েছে, পুজোর বাজার সে এখান থেকেই করে। সন্ধ্যার আবছা আলোয় তাকে শালি বলেই মনে হল। একটু মজা করার জন্যে কাগজের ঠোঙায় দশটাকার বাদামভাজা নিয়ে সারারাস্তাটা বাদাম খেয়ে খোলাগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে ওর পিঠে মারছিলুম। সে দুএকবার পিছন ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলও। ঘরে ফেরার বাঁদিকের গলিতে সম্বন্ধির বাড়ি আর ডানদিকে আমার। সে যখন বাঁদিকে ঢুকল, তখন মনে পড়ল, আরে এ তো বৌদি ! আমি পৌঁছানোর আগেই বৌদি ফোনে বৌকে সব বলে দিয়েছে। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমার বউ এই মারে তো সেই মারে।
চৌমাথার মোড়ে বিকেল বেলায় দুটো ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে নেতাজীর স্ট্যাচুর নিচে বসে ঠোঙায় ঝালমুড়ি খাচ্ছিলুম। একটা বুড়োমতো লোককে দেখে খুব চেনা মনে হল। সামনে আসতে রাস্তা আটকে বললুম, "দাদু, এখন শরীর কেমন? মিশনে গিয়েছিলেন বুঝি?"
উনি আশ্চর্য হয়ে খানিক তাকিয়ে, আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে গম্ভীর মুখে শুধু, "হুঁ" বলে চলে গেলেন। বুঝতে পারলুম আবার মিস ফায়ার। সারারাস্তা ভদ্রলোককে মনে করার চেষ্টা করলুম, কিন্তু কিছুতেই স্মৃতির পুনরুদ্ধার করতে পারলুম না। বাড়ি এসে বউএর কয়েকশো গালাগাল শোনার পর বুঝলুম উনি আমার শ্বশুরমশাই ছিলেন।
হায়দরাবাদ বেড়াতে গিয়ে এশিয়ান ইনস্টিটিউটে বউকে ডাক্তার দেখাচ্ছি। বউ হিন্দি জানে না, তাই সমস্যাগুলো আমি ডাক্তারকে বলার পর ডাক্তার বললেন, " নাম বলুন।" 
বিশ্বাস করুন, বউএর নামটা কিছুতেই মনে পড়ল না। ডাক্তার তিনবার নাম জিজ্ঞেস করার পর হাঁ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। 
আমি বউএর দিকে তাকিয়ে বললাম, "উনি নাম জিজ্ঞেস করছেন, নিজের নামটা অন্তত বলো, ওটাও কি আমায় বোলে দিতে হবে?" 
খুব জোর রক্ষা পেয়েছি সে যাত্রায়। বউ এখনো জানে না যে আমি তার নাম ভুলে গেছিলাম। জানলে, বিয়ের কুড়ি বছর পর যে বউএর নাম ভুলে যায় তাকে নির্ঘাত নিজের নামটা ভুলিয়ে ছাড়ত !
ইদানিং বউকেও ঠিকমতো চিনতে পারি না। ও আর আগের মত নেই। ছেলেমেয়েরাও দেখতে দেখতে কত বদলে গেল, কিন্তু আমার মনের ক্যানভাসে আঁকা তাদের সেই ছোটবেলার ছবি, বড় হল না। ফলে এখন সব অচেনা লাগে। মোবাইলে রাখা অনেক আগের মায়ের সেই সুন্দর মুখটা এখন বড্ড বুড়িয়ে গেছে, চেনা যায় না। আমিও কি আগের মত আছি? কালের তালে সবাই একটু একটু করে পাল্টাতে পাল্টাতে এখন নতুন মানুষ। সবকিছু চেনা অচেনার আবছায়া।
লুকিয়ে তিনখানা ডাক্তার দেখিয়েছি। সবাই একগাদা টেস্ট করিয়েছেন আর ওষুধ খাইয়েছেন। কোন লাভ হয়নি। বউ একটু আধটু ডাক্তারিটা জানে, সে বলল এ রোগের নাম নাকি ভীমরতি এবং এর একমাত্র ওষুধ ক্যালানি।
রোগের নাম আর দাওয়াই শুনেই এখন আমি শুধরে গেছি, চেনাচেনা লাগলেও আমি আর আগ বাড়িয়ে কথা বলি না, এমনকি সত্যি কোনো চেনা লোক আমার সামনাসামনি এলেও এড়িয়ে চলে যাই। 
হঠাৎ করে যদি দেখা হয়ে যায় আর আমি যদি না চিনতে পারি, আপনারা কিছু মনে করবেন না। ক্ষমাঘেন্না করে এই অধমকে একটু মাফ করে দেবেন পিলিজ।

( সংগৃহীত)
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 02-01-2024, 12:21 PM



Users browsing this thread: 18 Guest(s)