18-12-2023, 10:25 PM
রমা অবশ্য লক্ষ করল শম্ভুর ভাবুক চিত্তমদির মুখটাকে। খোদাই করা পাথুরে মুখে একজোড়া ভাসা ভাসা চোখ, ঘাড়ের খানিক পর্যন্ত চুল। সেই চুলে তেল পড়ে না, সাবান শ্যাম্পু পড়ে না। দাড়িটাও আগাছার মত গোটা গাল জুড়ে। বরং গোঁফটা মৃদু। সবমিলিয়ে শম্ভুর চেহারায় একটা বন্য মাদকতা আছে, যা প্রথমদিনই নজরে এসেছিল রমার। তাই তো পরস্ত্রী হয়েও লতা শম্ভুকে পছন্দ করে। শম্ভুর মত এমন টানটান দীর্ঘ পেশীবহুল চেহারা খুব কম পুরুষেরই হয়। ছ' ফিটের সিনেমার নায়করা তাদের দেহসৌষ্ঠব ধরে রাখতে কতইই না জিম, ডায়েট করে এর জন্য। অথচ শম্ভু যেন আজন্ম এই শরীরকে লালিত করছে দৈনন্দিন শ্রমে। হেঁটে হেঁটে ফেরে মাইলের পর মাইল পথ। গা জোয়ারি করে উল্টো স্রোতে দাঁড় টেনে নৌকা চালায়, দাদু সনাতন মাঝির রেখে যাওয়া মস্ত জালটা নদীর বুকে ছুঁড়ে দেয় পঞ্চমুখী সাপের ফনার মত।
গায়ের রঙ ঘন কৃষ্ণবর্ণ। সত্যিই একটা চকচকে ভাব আছে শম্ভুর শরীরে। কালো গা'টা তার ঘামে না ভিজলেও কঠিন কষ্টিপাথরের মত চকচক করে। রমা ভাবে একবার জিজ্ঞেস করবে কিনা। পরে লজ্জায় মনে হয়েছে এভাবে জিজ্ঞেস করা যায় নাকি। আজ চাঁদের আলো পড়ে ওর পেশল বাহুর থেকে সেই ভাবটা নজরে এলো রমার। আলতো করে আঙুল স্পর্শ করল রমা। বললে---তুমি কি কোনো তেল মাখো শম্ভু?
হাসি থামাতে পারলো না শম্ভু। এই প্রশ্ন তাকে বহুজনে করেছে। তার এই প্রস্তর কঠিন গায়ের কষ্টি পাথরের ন্যায় চকচকে ভাব দেখে। শম্ভু বললে---দিদিমণি, শেষে আপনিও আমারে জিগাইছেন? শম্ভু বেদের কালা গায়ে কেনে চকচকায়!
রমা লজ্জা পেল। বললে---না না। আসলে আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি। আসলে মনে হয় যেন তুমি তেল মাখো একটা কিছু।
---লা দিদিমণি। এ রঙটা আমার বাপ মায়ের দিয়া। আমার বাপ যেমুন কালা রংটার ছিল, মা'টাও ছিলা তেমুন কালা গায়ের। তা বইলতে পারেন, ছোটবেলায় মা আমারে বাপের দিয়া তেল মাখাইছে। কিন্তু তার লগে এমন চকচকায় লা। আমার বাপের গা'ও ওমন চকচকাইতো। বাপরে লা কি লোক বইলত, বেদে বইলে লাকি কালাচ সাপের তেল মাইখে অমন হছে।
----সত্যি? তুমি কালাচের তেল...
---হে হে! কি বইলেন দিদিমণি, কালাচ কি সর্ষা বীজটা আছে লা কি! যে তেল বারাইবে? কালাচের গা অমন চকচকায় কি লা। তাই সকুলে ভাবে বুধয়, এ বেদের ব্যাটা কালাচের তেল বাইর কইরে মাখে।
ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর দখিনা বাতাসে নিস্তব্ধ রাত্রি জুড়ে দুই নারী পুরুষ একান্তে বসে জঙ্গলাকীর্ন সুন্দরবনের মাটির ঘরের উঠোনে। তাদের একজন অবিবাহিত বত্রিশ বর্ষীয় অশিক্ষিত যুবক, অপর জন নৃতত্বের স্নাতক ঊনচল্লিশ বর্ষীয় অধ্যাপক স্ত্রী। পুরুষটি বংশজাত বেদে, নারীটি বিজ্ঞানমনস্ক স্বামীর সুশিক্ষিতা স্ত্রী হলেও বংশ পরিচয়ে ',। পুরুষটির বর্ণ কৃষ্ণ কালো, দেহকাণ্ড লৌহের মত শক্ত, নারীটি গৌরবর্ণা, কোমল। তারা সবদিক দিয়েই অসম। তবু এই মুহূর্তের প্রকৃতি সত্বা ভূমিকা নিচ্ছে তাদের নৈকট্য বাড়াতে। নিস্তব্ধ অরণ্য রাত্রির নদী তীরের দোচালা মাটির ঘরের এক গোপন ভালোলাগা প্রেম হোক বা না হোক তাদের মধ্যে খেলা করছে। এখানেও পুরুষটি উদগ্রীব নারীটির চেয়ে। নারীটির সংযম, রক্ষনশীলতা, নীতিবোধ নিশ্চল করে রেখেছে তাকে। পুরুষটির অস্থির, উগ্র যৌনজ্বালার বিষময় শরীর স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে চায়।
তবু নারীটিও গোপনে পুরুষটির দিকে তাকিয়ে আছে। এমন নিঃসঙ্গ বনজ পৌরুষময় আদিম যুবকের দীর্ঘকায় চেহারা তাকে আবেগান্বিত করে তুলছে। অথচ তা তীব্র গোপনে, অবচেতনে, বরং রক্ষণশীলতার শাসনে সীমাবদ্ধ।
দুজনের এঁটো চা কাপ পড়ে আছে দুজনের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। কাপগুলি বরং মিশে গেছে আগেভাগেই। কোনটা কার চেনা যায় না। চিনেমাটির এক জোড়া কাপ পীযুষ গত সপ্তাহে এনেছিল রমার চা খাবার জন্য। যে স্বামীটি তার সুক্ষ সুক্ষ খেয়াল রাখে সেই পীযুষ মৈত্র এখনো রমার জীবনের সর্বাধিনায়ক। রমার চেতন, অবচেতন মনও কোনো ব্যাভিচার চায় না। এই জঙ্গলদিনের সন্তানের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় জীবনযাপনে সে শুধু পুরুষটির সাহচর্য কামনা করে। একজন রক্তমাংসের নারী হয়ে দোষ কি তাতে। মানুষ তো সাহচর্য নিয়ে বেঁচে থাকে।
শম্ভু বিড়ি ধরালো। পীযুষের ঘন ঘন সিগারেট, যা এখন রমার শাসনে খানিক কমেছে সেই একই রকম ছবি শম্ভুর মধ্যে। ঘন ঘন বিড়ি খায় ও। রমা বিরক্তি প্রকাশ করে বললে---একটু স্থির থাকা যায় না। এই মুহূর্তটা কি বড্ড খারাপ, যে বিড়ি ধরিয়ে ফেলতে হল!
দেশলাই কাঠিটা নিভিয়ে জ্বলন্ত বিড়িতে টান মেরে হলদে দাঁতের হাসি মুখে শম্ভু বলল---খারাপ লাইগছে লা। ভাল্লাইগছে বইলেই বিড়ি ধরাইলি।
---ভালোলাগলেও তোমাদের বিড়ি দরকার, খারাপ লাগলেও দরকার পড়ে। পারো বটে তোমরা। পিকলুর বাবার ঠিক একই রকমের বদভ্যাস।
---সারও বিড়ি খায় লা কি?
---বিড়ি নয়। সিগারেট। ঐ হল একই।
---লা একই লয় দিদিমণি। সিগারেট হল গিয়া বড়লোকের ব্যাপার, বিড়ি মোর মত গরীবের পিরিতের নাঙ।
রমা চুপ করে গেল। শম্ভু বুঝতে পারলো মুখ ফস্কে সে আবার একটা কু' কথা বলে ফেলেছে। তৎক্ষনাৎ প্রলেপ দিতে বললে---নাঙ কুথাটা সব সময় বাজে লা গো দিদিমণি। গেরামে পিরিতের লোকটারেও নাঙ বলে।
রমা লাজুক মুখে মিছে রাগ দেখিয়ে বললে---তোমাকে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না।
---আরে আপনি অখুন ভি খারাপ ভাইবতেছেন। মজিদ চাচার গলায় গান শুইনলে কি বইলতেন। সে ইকটা গান গায় 'নাঙরে আমার নিঠুর বড়, মন বুইঝলি লা..."
বেসুরো শম্ভুর উদ্ভট গানে হেসে উঠল রমা, এঁটো কাপ দুটো তুলে নিয়ে উঠে যেতে যেতে বললে---ধ্যাৎ! অসভ্য একটা!
রমা উঠে যাবার পর শম্ভু বুঝতে পারলো কথায় কথায় কখন যেন দমে গেছে লিঙ্গদানব। এখন নেতিয়ে গেছে স্বাভাবিক হয়ে ওর আন্ডারওয়ারের একপাশে। অথচ একটু আগেই কেমন ফুঁসছিল তীব্র একরোখা দাবীতে। অদ্ভুত বোধ হল শম্ভুর, দিদিমণিই তো খান্ত করে দিল তাকে মিষ্টি কথা বলে। খানিক আগে তার দেহের আদিম বর্বর উত্তেজনা, ঔদ্ধত্যবান পুরুষাঙ্গ দিদিমণিকেই কামনা করেছিল।
ভাত হয়ে এসেছে। আনাজগুলো কেটে রেখেছিল রমা। শম্ভু এসে দেখল পিকলু হাতে একটা বই নিয়ে পড়ছে। বাংলা হরফে কঠিন যুক্তাক্ষর না হলে সে পড়তে পারে। বললে---পা-ন-ড-ব গোয়ে-এনদা।
পিকলু বললে---শম্ভু আঙ্কেল, পড়বে বইটা?
---আমি? আমি পড়ালিখা এত বেশি করি লাই রে পিকলু, যে গোটা বইটা পড়ে ফেইলতে পারব। তুরে আমি গল্প শুনাই, পিকলু বাবু। আজ তু মোরে গল্প শুনা। আমি ততুক্ষণ তোর পা'রে বাটনটা লাগাই দিই।
রমা শুনতে পাচ্ছে পিকলু গল্প শোনাচ্ছে শম্ভুকে। শম্ভু তখন পিকলুর পায়ের ক্ষতস্থানের বাঁধা কাপড়টা খুলে ফেলে ওষুধ লাগাচ্ছে। বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছু চরিত্রগুলো মনে রাখতে শম্ভুর সমস্যা হচ্ছে। বারবার গুলিয়ে ফেলছে ও। শম্ভু কখনো কখনো সময় নিতে ইচ্ছে করেই গোলাচ্ছে চরিত্রগুলোকে। পিকলু ভুল ধরিয়ে আবার শোনাচ্ছে গল্প। রমা ওদের গল্প শুনে হাসছে মনে মনে। মাঝে মধ্যে ওরা দুজনেই হাসছে একে অপরের দিকে তাকিয়ে।
+++++++
গায়ের রঙ ঘন কৃষ্ণবর্ণ। সত্যিই একটা চকচকে ভাব আছে শম্ভুর শরীরে। কালো গা'টা তার ঘামে না ভিজলেও কঠিন কষ্টিপাথরের মত চকচক করে। রমা ভাবে একবার জিজ্ঞেস করবে কিনা। পরে লজ্জায় মনে হয়েছে এভাবে জিজ্ঞেস করা যায় নাকি। আজ চাঁদের আলো পড়ে ওর পেশল বাহুর থেকে সেই ভাবটা নজরে এলো রমার। আলতো করে আঙুল স্পর্শ করল রমা। বললে---তুমি কি কোনো তেল মাখো শম্ভু?
হাসি থামাতে পারলো না শম্ভু। এই প্রশ্ন তাকে বহুজনে করেছে। তার এই প্রস্তর কঠিন গায়ের কষ্টি পাথরের ন্যায় চকচকে ভাব দেখে। শম্ভু বললে---দিদিমণি, শেষে আপনিও আমারে জিগাইছেন? শম্ভু বেদের কালা গায়ে কেনে চকচকায়!
রমা লজ্জা পেল। বললে---না না। আসলে আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি। আসলে মনে হয় যেন তুমি তেল মাখো একটা কিছু।
---লা দিদিমণি। এ রঙটা আমার বাপ মায়ের দিয়া। আমার বাপ যেমুন কালা রংটার ছিল, মা'টাও ছিলা তেমুন কালা গায়ের। তা বইলতে পারেন, ছোটবেলায় মা আমারে বাপের দিয়া তেল মাখাইছে। কিন্তু তার লগে এমন চকচকায় লা। আমার বাপের গা'ও ওমন চকচকাইতো। বাপরে লা কি লোক বইলত, বেদে বইলে লাকি কালাচ সাপের তেল মাইখে অমন হছে।
----সত্যি? তুমি কালাচের তেল...
---হে হে! কি বইলেন দিদিমণি, কালাচ কি সর্ষা বীজটা আছে লা কি! যে তেল বারাইবে? কালাচের গা অমন চকচকায় কি লা। তাই সকুলে ভাবে বুধয়, এ বেদের ব্যাটা কালাচের তেল বাইর কইরে মাখে।
ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর দখিনা বাতাসে নিস্তব্ধ রাত্রি জুড়ে দুই নারী পুরুষ একান্তে বসে জঙ্গলাকীর্ন সুন্দরবনের মাটির ঘরের উঠোনে। তাদের একজন অবিবাহিত বত্রিশ বর্ষীয় অশিক্ষিত যুবক, অপর জন নৃতত্বের স্নাতক ঊনচল্লিশ বর্ষীয় অধ্যাপক স্ত্রী। পুরুষটি বংশজাত বেদে, নারীটি বিজ্ঞানমনস্ক স্বামীর সুশিক্ষিতা স্ত্রী হলেও বংশ পরিচয়ে ',। পুরুষটির বর্ণ কৃষ্ণ কালো, দেহকাণ্ড লৌহের মত শক্ত, নারীটি গৌরবর্ণা, কোমল। তারা সবদিক দিয়েই অসম। তবু এই মুহূর্তের প্রকৃতি সত্বা ভূমিকা নিচ্ছে তাদের নৈকট্য বাড়াতে। নিস্তব্ধ অরণ্য রাত্রির নদী তীরের দোচালা মাটির ঘরের এক গোপন ভালোলাগা প্রেম হোক বা না হোক তাদের মধ্যে খেলা করছে। এখানেও পুরুষটি উদগ্রীব নারীটির চেয়ে। নারীটির সংযম, রক্ষনশীলতা, নীতিবোধ নিশ্চল করে রেখেছে তাকে। পুরুষটির অস্থির, উগ্র যৌনজ্বালার বিষময় শরীর স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে চায়।
তবু নারীটিও গোপনে পুরুষটির দিকে তাকিয়ে আছে। এমন নিঃসঙ্গ বনজ পৌরুষময় আদিম যুবকের দীর্ঘকায় চেহারা তাকে আবেগান্বিত করে তুলছে। অথচ তা তীব্র গোপনে, অবচেতনে, বরং রক্ষণশীলতার শাসনে সীমাবদ্ধ।
দুজনের এঁটো চা কাপ পড়ে আছে দুজনের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। কাপগুলি বরং মিশে গেছে আগেভাগেই। কোনটা কার চেনা যায় না। চিনেমাটির এক জোড়া কাপ পীযুষ গত সপ্তাহে এনেছিল রমার চা খাবার জন্য। যে স্বামীটি তার সুক্ষ সুক্ষ খেয়াল রাখে সেই পীযুষ মৈত্র এখনো রমার জীবনের সর্বাধিনায়ক। রমার চেতন, অবচেতন মনও কোনো ব্যাভিচার চায় না। এই জঙ্গলদিনের সন্তানের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় জীবনযাপনে সে শুধু পুরুষটির সাহচর্য কামনা করে। একজন রক্তমাংসের নারী হয়ে দোষ কি তাতে। মানুষ তো সাহচর্য নিয়ে বেঁচে থাকে।
শম্ভু বিড়ি ধরালো। পীযুষের ঘন ঘন সিগারেট, যা এখন রমার শাসনে খানিক কমেছে সেই একই রকম ছবি শম্ভুর মধ্যে। ঘন ঘন বিড়ি খায় ও। রমা বিরক্তি প্রকাশ করে বললে---একটু স্থির থাকা যায় না। এই মুহূর্তটা কি বড্ড খারাপ, যে বিড়ি ধরিয়ে ফেলতে হল!
দেশলাই কাঠিটা নিভিয়ে জ্বলন্ত বিড়িতে টান মেরে হলদে দাঁতের হাসি মুখে শম্ভু বলল---খারাপ লাইগছে লা। ভাল্লাইগছে বইলেই বিড়ি ধরাইলি।
---ভালোলাগলেও তোমাদের বিড়ি দরকার, খারাপ লাগলেও দরকার পড়ে। পারো বটে তোমরা। পিকলুর বাবার ঠিক একই রকমের বদভ্যাস।
---সারও বিড়ি খায় লা কি?
---বিড়ি নয়। সিগারেট। ঐ হল একই।
---লা একই লয় দিদিমণি। সিগারেট হল গিয়া বড়লোকের ব্যাপার, বিড়ি মোর মত গরীবের পিরিতের নাঙ।
রমা চুপ করে গেল। শম্ভু বুঝতে পারলো মুখ ফস্কে সে আবার একটা কু' কথা বলে ফেলেছে। তৎক্ষনাৎ প্রলেপ দিতে বললে---নাঙ কুথাটা সব সময় বাজে লা গো দিদিমণি। গেরামে পিরিতের লোকটারেও নাঙ বলে।
রমা লাজুক মুখে মিছে রাগ দেখিয়ে বললে---তোমাকে আর ব্যাখ্যা করতে হবে না।
---আরে আপনি অখুন ভি খারাপ ভাইবতেছেন। মজিদ চাচার গলায় গান শুইনলে কি বইলতেন। সে ইকটা গান গায় 'নাঙরে আমার নিঠুর বড়, মন বুইঝলি লা..."
বেসুরো শম্ভুর উদ্ভট গানে হেসে উঠল রমা, এঁটো কাপ দুটো তুলে নিয়ে উঠে যেতে যেতে বললে---ধ্যাৎ! অসভ্য একটা!
রমা উঠে যাবার পর শম্ভু বুঝতে পারলো কথায় কথায় কখন যেন দমে গেছে লিঙ্গদানব। এখন নেতিয়ে গেছে স্বাভাবিক হয়ে ওর আন্ডারওয়ারের একপাশে। অথচ একটু আগেই কেমন ফুঁসছিল তীব্র একরোখা দাবীতে। অদ্ভুত বোধ হল শম্ভুর, দিদিমণিই তো খান্ত করে দিল তাকে মিষ্টি কথা বলে। খানিক আগে তার দেহের আদিম বর্বর উত্তেজনা, ঔদ্ধত্যবান পুরুষাঙ্গ দিদিমণিকেই কামনা করেছিল।
ভাত হয়ে এসেছে। আনাজগুলো কেটে রেখেছিল রমা। শম্ভু এসে দেখল পিকলু হাতে একটা বই নিয়ে পড়ছে। বাংলা হরফে কঠিন যুক্তাক্ষর না হলে সে পড়তে পারে। বললে---পা-ন-ড-ব গোয়ে-এনদা।
পিকলু বললে---শম্ভু আঙ্কেল, পড়বে বইটা?
---আমি? আমি পড়ালিখা এত বেশি করি লাই রে পিকলু, যে গোটা বইটা পড়ে ফেইলতে পারব। তুরে আমি গল্প শুনাই, পিকলু বাবু। আজ তু মোরে গল্প শুনা। আমি ততুক্ষণ তোর পা'রে বাটনটা লাগাই দিই।
রমা শুনতে পাচ্ছে পিকলু গল্প শোনাচ্ছে শম্ভুকে। শম্ভু তখন পিকলুর পায়ের ক্ষতস্থানের বাঁধা কাপড়টা খুলে ফেলে ওষুধ লাগাচ্ছে। বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু, বিচ্ছু চরিত্রগুলো মনে রাখতে শম্ভুর সমস্যা হচ্ছে। বারবার গুলিয়ে ফেলছে ও। শম্ভু কখনো কখনো সময় নিতে ইচ্ছে করেই গোলাচ্ছে চরিত্রগুলোকে। পিকলু ভুল ধরিয়ে আবার শোনাচ্ছে গল্প। রমা ওদের গল্প শুনে হাসছে মনে মনে। মাঝে মধ্যে ওরা দুজনেই হাসছে একে অপরের দিকে তাকিয়ে।
+++++++