Thread Rating:
  • 135 Vote(s) - 3.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
পর্ব ৮

নদীর পাড়ে একরত্তি ডিঙি নৌকাটা বাঁধা। তার ওপরে কাঠ আর ত্রিপলের খোল। রাত বিরেতে মাছ ধরতে বেরোলে ওর ভেতরে দুজনের থাকার জায়গা হবে কোনোক্রমে। ষষ্ঠীপদ আর শম্ভু এই খোলেই কত রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইচ্ছে হলে দিশি মদের বোতল এনে নেশা করেছে। শক্ত পাটাতনের ওপর বসে রয়েছে শম্ভু। বিকেল গড়িয়ে পড়ছে খানিক। পিকলুকে ধরে ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করছে ও। পিকলু আগের চেয়ে এখন খানিক সবল। তবে পায়ে পায়ে হাঁটায় এখনো দুর্বল। শম্ভুই ওকে ধরে হাঁটায়, না পারলে পাঁজাকোলা করে বাড়ি আনে।

আজও পাঁজাকোলা করে পিকলুকে নিয়ে এসেছে শম্ভু। রমার খেয়াল হল সেই যে বেরিয়েছে ওরা এখনো ফেরেনি। সন্ধের আবছা অন্ধকারে ও দেখতে পাচ্ছে নৌকায় বসে রয়েছে ওরা দু'জনে। রমা কাছে যেতেই শুনতে পেল পিকলুর অনুসন্ধিৎসু মনের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে শম্ভু। এই নদীর উৎস কোথায়, সুন্দরবনের কোথায় কোথায় নদী আছে, নদীতে কুমির দেখা যায় কিনা, শম্ভু আঙ্কেল দেখেছে কিনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। শম্ভু নিরন্তর সবকটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছে ওর, কোনোরকম বিরক্ত না হয়ে।
রমা হেসে বললে---শেষ হল তোমাদের দুজনের গল্প? এদিকে যে সন্ধে নামছে!

শম্ভু বললে---দিদিমণি যাবেন লা কি নদীরে?

---ওমা! এই সন্ধে বেলা? না না। পরে একদিন।

শম্ভু ঠাট্টা করে বলল---সন্ধ্যা বেলা লা হইলে, চড়া রোদে বাইর হতে হবে। তখুন দিদিমণির রঙটা চইটে যাবে লা কি। সার আইলে কি কৈফিয়ত দিব।

রমা ঈষৎ হেসে বললে---আমি কিন্তু শম্ভু; এমন নয়। স্কুল-কলেজে পড়বার সময় থেকে আমাকে রোদ জলে বেরোতে হয়। আজও কিন্তু ঘর সংসারের কাজে আমাকেই রোদে বের হতে হয়। তোমার স্যারটি মাঝে মধ্যে ফুলবাবু হয়ে যান কিনা।

শম্ভু মুচকি হাসলো। বলল---সে ঠিক কুথা। কিন্তু দিদিমণি আমার ভাল্লাগবে লাই, যদি দিদিমণির ফর্সা রঙটা চইটে যায়। চলেন দিদিমণি, সন্ধ্যা বেলাটা ঘুইরে আসি। পিকলু বাবুরও মনটা ভালো লাইগবে।

---আমার বড্ড ভয় লাগে। কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে দেখো!

হা হা করে হেসে উঠল শম্ভু। বললে---শম্ভু বেদে যতুক্ষণ আছে ভয়টা কইরবেন লাই দিদিমণি। কি পিকলু বাবু যাবে লা কি?

অনিচ্ছাস্বত্বেও কার্যত শম্ভু আর পিকলুর জেদাজেদিতে নৌকায় উঠল রমা। বৈঠা মেরে শম্ভু এগোতে লাগলো নদী বক্ষে। সন্ধে নামছে, নদীর জলে চাঁদের আভা। অসহ্য একটি আবেগ মদির আবহাওয়া। মৃদু বাতাসে নৌকা একাই এগোচ্ছে এখন।
শম্ভু বললে---দিদিমণি ডর লাইগছে লা কি?

---ধ্যাৎ! লাজুক মুখে হেসে ফেলল রমা।

গোটা নদী আর আকাশ যেন মিলেমিশে ঘনায়মান। সেখানে চাঁদ আর শম্ভুর ডিঙ্গির অস্তিত্ব ছাড়া সব কিছু বিলীন। পিকলুর নজর পড়ল আরেকটি নিঃসঙ্গ পাখির দিকে। অমনি বলে উঠল---শম্ভু আঙ্কেল, দেখো রাতের বেলা পাখি। কি নাম ওর?

শম্ভু নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে রইল মুক্ত বাতাসে। বললে---রাতচরাটা আছে। আমার মত একলা।

---তুমি বুঝি এখন একলা? রমা ওর দিকে না তাকিয়ে নদীতে হাত ডুবিয়ে জল নাড়তে নাড়তে বলল কথাটা।

শম্ভু দিদিমণির দিকে আবেশে তাকালো ক্ষণিক। মেরুন শাড়ি, তার সাথে কালো ব্লাউজ, চাঁদের আলোয় ফর্সা গায়ের আভা যেন আরো উজ্জ্বল। জল থেকে হাত তুলে গলার সুক্ষ পাতলা সোনার চেনটা হাতে নিয়ে খুঁটখাঁট করতে করতে রমা পুনরায় বললে---আমরা তো আছি এখন। আমি, পিকলু, ষষ্ঠী, বুলি, বুলির মা। এতজন তোমার চারপাশে। তাহলে কেন তুমি একলা বোধ করছ।

শম্ভুর ইচ্ছে করছিল মজিদ চাচার মত গান ছাড়তে। কিন্তু ও যে গান পারে না। গম্ভীর পুরুষালি গলায় একটা বিরাট বিষণ্নতার ঢেউ ভেঙে বললে---ই এখুনটা লয়। ক'টা দিন পরে যখুন আপনারা চইলে যাবেন, তখুন শম্ভুর কে খেয়াল রাইখে? দিদিমণি রাইখবেন আমার খেয়াল?

হঠাৎ মুখ ফস্কে বলার পর শম্ভু বুঝতে পারলো আলগা একটা কথা বলে ফেলল ও। দ্রুতই কথার বদল আনতে বললে---আজ দ্বাদশী লা দিদিমণি?

----কখন ফিরব আমরা? রমা খুব স্নিগ্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করল।

শম্ভুর মনে হল সে বোধ হয় আঘাত দিয়ে ফেলল দিদিমণিকে। তবু সে চায়, যতক্ষণ বেশি এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে। বলল---ই নদীরে খানিক পরে উজান আইসবে। তখুন ফিইরব আমরা।

খানিক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। পিকলু মায়ের দেখা দেখি জলে হাত ডুবিয়েছে। শম্ভু সাবধান করে বলল---হাত ডুবাও লাই পিকলু বাবু। ঘড়িয়াল থাইকতে পারে।

রমা অবশ্য অনেক আগেই জল থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছে। ভয় পেয়ে ও পিকলুর হাতটা টেনে সরিয়ে নিল। এখন অদূরে সুন্দরবনের অরণ্য দেখা যায়। দুরান্ত একটা ডিঙি নৌকায় আলো জ্বলছে। শম্ভুও খোলের ভিতর লম্ফটি জ্বেলে ফেলতে যেতেই রমা বললে---থাক না। চাঁদের আলোয় তো ভালোই লাগছে।

শম্ভু আলোটা জ্বেলেও নিভিয়ে ফেলল। রমা পুনরায় বলল---শম্ভু তুমি যে সেদিন বলেছিলে, তোমরা নাকি নদীতে গান গেয়ে বেড়াও।

লাজুক হেসে শম্ভু বললে---আমি গান গাতে পাইরি লাই। মজিদ চাচা বইলে রসুলপুর ঘাটের একজন মাঝি আছে, সে গান গায়।

রমা তাকিয়ে রইল নদীর আগত উজানির দিকে। পীযুষ খুব ভালোবাসতো রমার গলায় এই গানটা। মনের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরেই গুনগুন হচ্ছিল তার। এবার ইচ্ছে হল তার দু' কলি গাইবার। আসলে রমা নিজের ইচ্ছায় খুব কমই গান গায়। অনেকটা পীযুষের কিংবা কলেজে বান্ধবীদের জোরাজুরিতে তাকে গাইতে হত। স্কুলে পড়বার সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত আর নজরুল গীতি শিখেছিল তার এক পিসতুতো দিদির কাছে। সেটুকুই যা শেখা। তাতেও রমা গানটা বেশ ভালোই গায়। উরুরু উপর তাল ঠুকতে ঠুকতে গেয়ে উঠল---
''আমাকে যে বাঁধবে ধরে, এই হবে যার সাধন
সে কি অমনি হবে।
আমার কাছে পড়লে বাঁধা সেই হবে মোর বাঁধন..."

গান শেষ হতেই পিকলু বললে---ঐ দেখো মা, জাহাজ বোধ হয়।

শম্ভু বললে---অনেক দূরে আছে। জাহাজ লা বাবু। লঞ্চ আছে। মাছ ধইরবার লিয়ে গাঙে চলে যায়।

---কেন এর আগে তুই লঞ্চ দেখিসনি? ওমা! গঙ্গাতেই তো দেখেছিস।

পিকলু তাৎক্ষণিক স্মৃতিচারণ করে বলল---ও আচ্ছা। বুঝেছি।

শম্ভু নৌকাকে বৈঠা মেরে ঘোরাতে ঘোরাতে বললে---দিদিমণি এত সুন্দর কইরে গান গাতে পাইরেন, ইটা শুনে মনে হয় রবীনন্দরনাথ ঠাকুরের লা?

রমা বিস্মিত হয়ে বললে---তুমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চেনো?

শম্ভু লজ্জা পেল। বলল---তারে কে লা চিনে? ইস্কুলে দু কেলাস পইড়েছি, সহজ পাঠ ছিল। আমার মা চার কেলাস পইড়েছিল তখুন কার দিনে। মা বইলতো রবীন্দরনাথ ঠাকুরের গানে লা কি মা পেরাইমারী ইস্কুলে লেচে ছিল। ইখানে সরবেড়িয়া হাটে দুগ্গা মায়ের পূজায় মাইকে সারাদিন রবীন্দরনাথ ঠাকুরের গান হয়। ই রকমই সুর, আপনি যেমনটা গায়লেন।

হাসল রমা। রবীন্দ্রনাথ যে বিশ্ব কবি। বাংলার ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো না পৌঁছাক, রবীন্দ্রনাথ পৌঁছেছে জেনে ভালো লাগলো রমার। বললে----শম্ভু, তুমি আর পড়াশোনা করলে না কেন?

----কইরতে যে ইকেবারে মন চায় লাই তা লয়। বেদের ব্যাটা ইস্কুলে গেলে, তখুন ছিলাপিলা ডরতো। বইলত বাক্সে সাপ আছে। বেদে বইলে এই ষষ্ঠী ব্যাটা ছাইড়া আর কেউ মোর পাশে বসত লাই। একদিন মণ্ডল পাড়ার ইকটা ছিলের সাথে জাত লয়ে লড়াই লাইগল। মাইরে মুখ ফাইটে দিয়েছিলাম। তাতেও রাগ মিইটে লাই, ঘর থিকা ঢেমন সাপ লয়ে কেলাসে ছেড়ে দিলি। ব্যস, নালিশ আইলো ঘরে। বাপ বইল আর তুরে পড়তে হবে লাই। ছোট বেলাটায় বহুত রাগ ছিল মোর।

রমা শম্ভুর শৈশবের গল্প শুনে হাসি থামিয়ে বলল---রাগ তো তোমার এখনো কম নয়। সেদিন তো ঐ গ্রামের লোকগুলো যখন খারাপ খারাপ কথা বলছিল, তখনও তো দেখলাম, কেমন রাগ; বাব্বা!

----শম্ভু আঙ্কেল তুমি তো এখনো পড়াশোনা করতে পারো। আমাদের কনস্টিটিউশনে রাইটস আছে এডুকেশন ফর অল।

পিকলুর ইংরেজী শুনে ঘাবড়ে গেল শম্ভু। ক্লাস এইটের হিস্ট্রিতে কনস্টিটিউশন একটা অধ্যায় আছে। পিকলু ওটা পড়েছে। তাই ও যা পড়েছে তার ভিত্তিতেই কথাগুলো বলল শম্ভুকে। রমা শম্ভুর অবুঝ মুখটা টের পেয়ে বললে---ও বলছে আমাদের দেশে সকলের পড়ার অধিকার আছে। তাই তুমি আবার পড়াশোনা করতে পারো।

শম্ভু হেসে উঠে পিকলুর পিঠ চাপড়ে বললে---পিকলু বাবু, আমার এখুন বত্রিশ বছর চইলছে। এখুন আমি তুমার মত ইস্কুল যাবো?

পিকলু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, রমা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল---থাক, তোকে আর পাকামি করতে হবে না।

নদীর পাড়ে ডিঙি ভিড়ল যে জায়গাটা; সেটা ঘাট থেকে খানিক দূরে। প্রথমে শম্ভু নেমে গেল। দড়ি দিয়ে গরান গাছটার সাথে শক্ত করে বাঁধলো ডিঙিটাকে। তারপর হাত বাড়িয়ে দিল রমার দিকে। শম্ভুর হাতে প্রথম স্পর্শ রমার। শম্ভু টের পাচ্ছে ভীষন নরম মোলায়েম এই হাত। সারা শরীর ভীষণরকম কেঁপে উঠছে তার। ফর্সা রমণীর কোমল স্পর্শে তার ত্রিশ পেরোনো কঠোর যৌবনে উত্তাপ খেলে গেল এক ঝটকা। তারপর ও পিকলুকে কোলে করে ডিঙি থেকে বার করে এগোতে লাগলো দোচালা ঘরের দিকে।
[+] 10 users Like Henry's post
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 18-12-2023, 10:23 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)