16-12-2023, 08:34 PM
চা শেষ করেআমি উসখুস করছি দেখে তুবড়ি মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো '' কি হয়েছে উসখুস করছিস কেন ?'' '' সিগারেট খাবো এই ঘরে ?'' '' আমার সাথে চল '' বলে এগিয়ে গিয়ে একটা দরজা খুললো দরজার বাইরে বেশ বড়ো ব্যালকনি আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালাম '' জানিস তুবড়ি আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা যে সত্যিই তোকে খুঁজে পেলাম '' '' আমিও এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছি রে '' '' তুবড়ি তুই আমায় ....'' তুবড়ি আমার মুখটা হাত দিয়ে চাপা দিয়ে বললো '' তুই কি জানতে চাইছিস আমি জানি সত্যিই কি তুই জানিস না বুঝিসনা আমার মনের কথা ?'' '' জানি তবু তোর মুখ থেকে শুনতে চাই '' তুবড়ি কিছু বলার আগেই মিসেস ভাদুড়ির গলার শব্দ পেলাম আমি সিগারেটটা লুকোনোর চেষ্টা করতেই উনি খিলখিল করে হেসে উঠলেন হাসি থামিয়ে বললেন '' থাকথাক আর লুকোতে হবে না বলে একটা কাটগ্লাসের এশট্রে এগিয়ে দিয়ে বললেন '' এটা এখন থেকে তুমিই ইউজ করবে আগে সাহেব মানে তিন্নির বাপী ইউজ করতেন '' '' থ্যাঙ্কইউ '' তিন্নির দিকে তাকিয়ে বললেন '' ওরে বাবা তিন্নি তোর বন্ধু তো আমার সাথে ফরম্যালিটি করছে '' তিন্নি মুচকি হেসে বললো '' আহা তোমার সাথে কি ভালো করে পরিচয় হয়েছে ওর ? পরে ঠিক হয়ে যাবে আস্তে আস্তে '' আমি ওদের কথোপকথনের মধ্যে না ঢুকে চুপ করেই রইলাম তিন্নি মিসেস ভাদুড়ির হাতটা ধরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো '' জানিস শুভ যদিও আমার বাপির বৌ কিন্তু আমি ওকে বোনি বলেই ডাকি বোনি আমার সখি বোন বন্ধু সবকিছু তুই আস্তেআস্তে সবকিছুই যখন জানবি তখন বুঝবি আপাতত তুই বোনির কথায় কিছু মনে করিসনা তোর সাথে ইয়ার্কি মারছে '' '' সেটা বুঝেছি কিন্তু বুঝতে পারছিনা আমিও ইয়ার্কির উত্তর দিতে পারি কি'না '' এবার মিসেস ভাদুড়ী আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাতদুটো ধরে চোখে চোখ রেখে বললেন '' আমার নাম লাবনী তুমিও তিন্নির মতোই আমার বোনি বলেই ডাকতে পারো '' '' আর যদি লাবনী বলি ?'' লাবনীর গালটা লাল হলো '' ডাকতে পারো তবে সবার সামনে না প্লিজ কারণ সাহেব শুনলে কি ভাববেন '' '' ঠিক আছে তিন্নির সখি আমারও সখি হলে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো তুমি অপ্রস্তুর হও এমন কিছু করবো না '' তিন্নি বললো '' দেখলে বোনি শুভ কেমন তোমায় সখি বানিয়ে নিলো '' '' হুম দেখলাম তো '' আমার মোবাইলে শ্যামলদা ফোন করেছে , আমি ফোনটা রিসিভ করতেই বললো '' দিপু নিচে যায় কাকু তোর সাথে কথা বলতে চাইছেন '' আমি তিন্নি আর লাবনীর দিকে তাকিয়ে বললাম '' নিচে স্যার ডাকছেন কিছু কথা বলতে চান আমার সাথে '' লাবনী মুচকি হেসে বললো '' চলো গেলেই বুঝতে পারবে কি কথা '' | তিনজনে ড্রইং রুমে ঢুকলাম আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম স্যার বললেন '' অরে দাঁড়িয়ে রইলে কেন এস এখানে বোসো '' বলে নিজের পাশের ফাঁকা চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন ওই চেয়ারটায় একমাত্র খালি ছিল অগত্যা ঐখানেই বসতে হলো আমায় , স্যার ঘরের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন তিন্নির ' বিশেষ বন্ধু ' বলে আমি হাত জোড় করে সবাইকে নমস্কার জানালাম , তিন্নির পিসি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন '' বাঃ তাহলে রাজকন্যা আর রাজত্ব দুইই পেলে বোলো ! '' কথাটা আমার গায়ে বিঁধলো ঘরে সবাই চুপ লাবনী তিন্নি আর স্যারের মুখটা গম্ভীর হয়ে গ্যালো তিন্নি বলেই ফেললো '' কি বলতে চাইছো পিসিমনি ?'' মিলি বৌদি আর শ্যামলদার মুখেও রাগের ছোঁয়া , আমি নিজেকে আর সামলাতে পারলামনা '' দেখুন পিসিমনি আমি যখন থেকে তিলোত্তমাকে চিনি তখন আমরা রাজকন্যা ভেবে বন্ধুত্ব করিনি এমনকি আজ ওকে এইখানে দেখার আগে জানতামও না যে তুবড়ির বাবা এতো সম্পত্তির মালিক স্যারকে চিনতাম স্যার যে অনেক টাকার মালিক এবং আমি যে কোম্পানিতে চাকরি করি তার মালিকও এটা জানতাম কিন্তু তিলোত্তমা ভাদুড়ির বাবা এটা জানতামনা আর রাজত্ব বলছেন ? আমার মা আর বাবা দুজনেই চাকরি থেকে রিটায়ার করার পর যে টাকা রেখে গিয়েছেন এখন তা বেড়ে প্রায় কোটির ওপরে চলে গ্যাছে আরো বাড়বে কারণ আমি শেয়ারে খাটাই টাকা আরো আছে আমার জেঠু ছিলেন ব্যবসায়ী ওপর বাংলা থেকে এক কাপড়ে মা আর ছোট ভাইকে মানে আমার বাবাকে নিয়ে চলে এসেছিলেন জমিজমা সম্পত্তি যেটুকু ছিল সব ছেড়ে , পরে আবার একবার পূর্ব পাকিস্তানে যান বন্ধুবান্ধবদের সাহায্যে যতটা সম্ভব জমিজমা বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে চলে আসেন অবসসই ঘুরপথে তারপর সেই তাকে ব্যবসা শুরু করেন এবং একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন কিন্তু ওনার ছেলে মানে আমার দাদাভাই ব্যবসার দিকে মোটেও উৎসাহী নন বরং আমি এই ব্যাপারে ছোটবেলা থেকেই জেঠুর সাথে থেকে শেখার চেষ্টা করেছি তাই জেঠুর মৃত্যুর পর সেই ব্যবসা সম্পত্তি বিক্রির সব দায়িত্ব জেঠুর ইচ্ছানুযায়ী আমিই নেগশিয়েট করে সঠিক দামে বিক্রির ব্যবস্থা করি তার থেকে পাওয়া টাকা দুইভাগে ভাগ হয় অর্ধেক আমি পেয়েছি অর্ধেক দাদাভাই , সব মিলিয়ে আমার হাতে যা টাকা আছে তাতে আমার চাকরি করার দরকার পড়েনা কিন্তু আমি চাকরিটা করি বসে খাবোনা বলে আর যে চাকরি করি সেটা আমার নিজের বিষয় বলে সেখানেও নতুন ব্যবসা আনার জন্য কমিশন বাবদ ভালোই টাকা পাই কোম্পানি থেকে অতএব পিসিমনি আপনার ভাইজির ভরণপোষণের জন্য স্যারের ওপরে নির্ভর করতে হবে না , আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন আমি নেহাত হাঘরে পরিবারের ছেলে নোই '' পিসিমনির মুখে খুশি ঝলমল করছে আমি অবাক উনি উঠে এলেন আমার কাছে নিজের গলা থেকে একটা সোনার হার খুলে আমায় পরিয়ে দিয়ে আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন '' তিন্নি আমার ভাইজি আমি বুঝে নিতে চাইছিলাম কতটা তেজি তুমি এই হারটা দিয়ে তোমায় আশীর্বাদ করলাম আর দাদামনি এই হলো তিন্নির জন্য সবচেয়ে যোগ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চারহাট এক করে দেওয়ার ব্যবস্থা করো '' ঘরের ভারী আবহাওয়া হালকা হলো স্যার বললেন '' তোমার বাড়িতে কে কে আছেন ? মানে অভিভাবক কে ?'' '' আমার জেঠিমা , জানেন তো আমার বাবা মা দুজনেই করোনাতে মারা গেছেন '' '' হ্যাঁ হ্যাঁ শ্যামলের কাছে শুনেছি , তাহলে তোমার জেঠিমার সাথেই কথা বলবো তুমি আমায় ওনার ফোন নম্বরটা দাও আর তুমি একটু বলে রেখো '' শ্যামলদা বললো আমার কাছেই আছে যদি চান এখনই কথা বলিয়ে দিই '' '' উনি কি জানেন বিষয়টা ?'' আমি বললাম '' হ্যাঁ একটু আগেই আমি তুবড়ির সরি তিন্নির সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছি '' স্যার ফিক করে হেসে বললেন '' তুবড়ি নামটাও ভালোই সরি বলার দরকার নেই তাহলে শ্যামল তুমি ওনার সাথে কথা বলিয়ে দাও এখনই কথাটা হোক আজকের দিনটাও ভালো আর শুভস্য শীঘ্রম '' আমি ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে লনে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম একটু পরেই তুবড়িও এলো দুজনে লনে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে থাকলাম দশ পনেরো মিনিট পরেই বৌদির ফোন এলো আমি জিজ্ঞেস করলাম '' বৌদি স্যার ফোন করেছিলেন জেঠিমাকে ? কি কথা হলো ? '' বৌদি খিলখিল করে হেসে বললো '' বাবা রে বাবা সব কথা হয়েছে মাঘমাসের মাঝামাঝি বিয়ের দিন ঠিক করতে বলেছে মামনি '' '' মাঘমাস মানে কবে সেটা ? '' পাশ থেকে তুবড়ি বললো '' তারমানে জানুয়ারির শেষ দিকে '' বৌদি বললো '' ওহ তিন্নিও তোর সাথেই আছে দে তো ওকে কথা বলি আর তুই যা আমাদের কথার মাঝে তোর থাকার দরকার নেই '' আমি তুবড়ির হাতে ফোনটা দিয়ে ওখান থেকে একটু দূরে গিয়ে সিগারেট টানতে থাকলাম তুবড়িও একটা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে বৌদির সাথে কথা বলতে থাকলো , আমি ইতস্তত ঘোরাফেরা করছি এমনসময় লাবনী এলো '' কি হলো তুমি এক এক ঘুরছো তিন্নি কার সাথে কথা বলছে ?'' '' আমার বৌদির সাথে বৌদি আমায় বললো ওর সাথে আলাদা কথা আছে তাই আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি '' লাবনী খিলখিল করে হেসে উঠলো আমি বললাম '' লাবনী একটু চা পাওয়া যেতে পারে ?'' '' ওমা ঐভাবে বলছো কেন অবশ্যই হবে '' বলে বাড়ির দিকে এগিয়ে গ্যালো প্রায় দশ মিনিট পরে হাতে এক কাপ চা নিয়ে এলো '' মিলি বললো তুমি গ্রিন টি খাও আজ তো নেই পরেরদিন নিশ্চই এনে রাখবো '' '' অরে না না ওটা কোনো ব্যাপার না আমি বাড়িতে গ্রিনটি খাই সারাদিন তো বাইরেই কাটে আমার সবরকমই অভ্যাস আছে '' '' এর পর থেকে এটাও তো তোমার বাড়ি হবে নাকি ? তাই এখানেও তোমার পছন্দের সব কিছুর ব্যবস্থা না হলে চলবে কেন ?'' আমি আর কিছু বললাম না চা'টা শেষ হতেই লাবনী আমার হাত থেকে কাপটা নিয়ে নিলো তিন্নি বৌদির সাথে কথা শেষ করে আমায় এসে ফোনটা ফেরত দিলো আমি কানে লাগিয়ে দেখলাম বৌদি ছেড়ে দিয়েছে ,তিন্নির দিকে তাকিয়ে লাবনী বললো '' তোরা কথা বল আমি যাই '' তিন্নি ফিক করে হেসে বললো '' তুমি থাকলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই বোনি '' '' না না আমি বাবা কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না তুই ব্যস্ত ছিলি ও একা ঘুরে বেড়াচ্ছিল তাই সঙ্গ দিচ্ছিলাম এখন তোর জিনিস তুই বোঝ '' বলে হেসে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো |