14-06-2019, 07:27 PM
এখান থেকে আসল গল্প শুরু।
পাঠকদের জানাই, এই গল্পের সময়কাল সত্তর দশকের। সেই সময় জন সাধারনের হাতে মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট কিছুই ছিল না। ল্যান্ড ফোন দেখা যেত
তাও সেটা মোটামুটি ধনিদের বাড়িতে শোভা পেত। তাই এই গল্পে কোন মোবাইল, কম্পিউটারের কোন ব্যবহার পাওয়া যাবে না।
আরও একটা বিষয়ে পাঠকদের অবগত করাই, গল্পটিতে দুটি ভাগ আছে, প্রথমটিতে কেচ্ছা আর দ্বিতীয়টিতে খুন ও খুনের তদন্ত। কেচ্ছা সংক্রান্ত ঘটনাগুলি অতীতে
ঘটে গেছে আর এগুলি পরিবারের সদস্যদের মুখ থেকে শোনা যাবে। খুন ও খুনের তদন্ত বর্তমান ঘটনা, সেটি সাধারন গল্পের আকারে আসবে। আর একই সাথে দুটি
চলবে।
কেচ্ছা
লাবণ্যর (বড় বৌমার) জবানবন্দি
আমার নাম লাবণ্য। আমার জন্ম ছোট নাগপুরে। আমি আমার মা বাবার বৃদ্ধ বয়সের দ্বিতীয় সন্তান। আমার একমাত্র দাদা বিশ্বজিৎ আমার থেকে প্রায় পনের বছরের
বড়। খুব ছোটবেলাতেই আমি আমার বাবা মাকে হারাই। যখন আমার এক বছর বয়স তখন আমার বাবা হঠাৎ হার্ট এট্যাকে মারা যায় আর আমার যখন পাঁচ বছর
বয়স তখন মা মারা যায়। তাদের কথা আমার ভাল করে মনেও নেই। বাবার মৃত্যুর পর দাদার কাঁধে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে। আমাদের স্টেশনের কাছে একটা
ইলেকট্রিকের দোকান ছিল। দোকানের আয় খারাপ ছিল না, সংসার মোটামুটি চলে যেত। যাইহোক বাবা মারা যাওয়াতে দাদাকে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে দোকানে
বসতে হয়। অল্পবয়সে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় দাদা হয়ে ওঠে ঘোর বাস্তববাদী। মায়ের মৃত্যুর পর দাদাই আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে। দাদা
আমার পড়াশুনা বা সুখ সাচ্ছন্দের কোন ঘাটতি রাখেনি। কোনদিন আমাকে কোন অভাব বুঝতে দেয়নি।
যাইহোক এই ছোট নাগপুর অঞ্চল মুলত কয়লা খনির জন্য বিখ্যাত। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে অনেকগুলো কলিয়ারি আছে। এই সব কলিয়ারিগুলোতে কয়লার
চোরাচালানকে কেন্দ্র করে এক অন্ধকার জগৎ, আছে। অনেক মাফিয়া গ্যাং এই জগতে রাজ করে। আর এই কয়লার চোরাচালান নিয়ে মাফিয়াদের নিজেদের মধ্যে
খুনোখুনি লেগেই থাকত। এখানকার এক মাফিয়া ডন শাবির ভাই একদিন আমাদের ইলেকট্রিকের দোকান থেকে কিছু মাল কিনতে এসে ভুল করে একটা ব্যাগ ফেলে
যায়। দোকান বন্ধ করার সময় দাদার চোখে ব্যাগটা পড়ে। দাদা খুলে দেখে থরে থরে নোট ভর্তি, অনেক টাকা। দাদা সেদিনই শাবির ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে টাকার
ব্যাগটা শাবির ভাইয়ের হাতে ফেরত দিয়ে আসে। দাদার সততা দেখে শাবির ভাই মুগ্ধ হয়। এরপরে শাবির ভাইয়ের সাথে দাদার খুব ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। আমার
দাদাও ছিল ডাকাবুকা ধরণের, ভয়ডরের বালাই ছিল না। এরপরে এই শাবির ভাইয়ের হাত ধরেই আমার দাদার অপরাধ জগতে হাতেখড়ি ঘটে। ধীরে ধীরে শাবির
ভাইয়ের দলে আমার দাদার প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে।
একদিন দাদার মানিব্যাগে একজন খুব সুন্দরি মেয়ের ছবি দেখতে পাই। দাদাকে চেপে ধরতে মেয়েটার নাম জানতে পারি, রেবতি। আরও জানতে পারি মেয়েটা
বাঙালি নয়, তামিল। তবে অনেক পুরুষ ধরে এখানে বাস করায় একপ্রকার বাঙালি হয়ে গেছে। আরও জানতে পারি বসু দাদা নামে এই এলাকার এক ডনের বোন।
শুনে একটু ঘাবড়ে যাই। পরে মনে মনে ভাবি দাদাও তো আমার এই একই কাজ করে। তাহলে আর অসুবিধের কি আছে। আমি রেবতির সাথে আলাপ করতে চাই।
কিন্তু দাদা পরে রেবতিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবে বলে। এরপরে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যে যার ফলে দাদার প্রেমিকার সাথে আমার আর কোনদিন
সাক্ষাত হয় না।
শাবির ভাইয়ের সাথে বসু দাদার ছিল শত্রুতার সম্পর্ক। একটি কলিয়ারির নিয়ন্ত্রন নিয়ে দুজনের গণ্ডগোল লেগেই থাকত। বসু দাদার বোনের সাথে আমার দাদার
সম্পর্কের কথাটা শাবির ভাইয়ের কানে কোন ভাবে পৌঁছে যায়। তাই দাদার অজ্ঞাতে একদিন শাবির ভাই তার দলবল নিয়ে বসুর দাদা ডেরায় অতর্কিত হানা দেয়।
শাবির ভাইয়ের দলবল বসু দাদার সাগরেদদের লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মার মেরে হটিয়ে দেয়। শাবির ভাই শত্রুর শেষ রাখতে নেই এই নিয়মে বিশ্বাস করত। ফলে
বসু দাদাকে ওখানেই গুলি করে মেরে ফেলে। কিন্তু রেবতি কোন না কোন ভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপরে সে একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
দাদা পরে পুরো ঘটনাটা জানতে পারে। কিন্তু দাদা অদ্ভুদ রকমের শান্ত হয়ে থাকে। আমি বুঝতে পারি দাদার ভেতরে কি ঝড় বয়ে চলেছে। দাদা আস্তে আস্তে শাবির
ভাইয়ের আস্থা অর্জন করে। হয়ে ওঠে শাবির ভাইয়ের ডানহাত। বেশ কিছুদিন পরে জানতে পারি শাবির ভাই খুন হয়ে গেছেন। আর খুনটা করেছে বসু দাদার এক
ঘনিষ্ঠ সাগরেদ, স্বামিনাথন। খুনটা করে পালানর সময় স্বামিনাথন আমার দাদার গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। দাদা কিছুদিনের জন্য আত্মগোপন করে। কিন্তু পরের দিন
খবরের কাগজে শাবির ভাই আর যে লোকটা খুন করেছে দুজনের ছবি দেখতে পাই। শাবির ভাইয়ের খুনির ছবি দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। এই স্বামিনাথন দুদিন
আগে গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। দাদার সঙ্গে কিসব কথা বলে চলে যায়। আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না দাদা স্বামিনাথনকে দাবার বড়ে হিসাবে
ব্যবহার করে তার প্রেমিকার হয়ে প্রতিশোধ নিল। শাবির ভাই নিহত হওয়ার কিছুদিন পর আমার দাদা হয়ে ওঠে দলের সর্বেসর্বা।
যে কলিয়ারি নিয়ে বসু দাদার সাথে শাবির ভাইয়ের গণ্ডগোল সেই কলিয়ারির মালিক রায়পুরের জমিদাররা। বসু দাদার পরে এই কলিয়ারির নিয়ন্ত্রন আমার দাদার
হাতে চলে আসে। এখান থেকেই আমার দাদার সাথে বিরেন রায়ের যোগাযোগ এবং ঘনিষ্ঠতা। দাদার আমন্ত্রনে বিরেন রায় একদিন আমাদের বাড়িতে আসেন।
আমাকে দেখে তার ভীষণ পছন্দ হয়ে যায়। সেদিনই তিনি দাদার কাছে তার বড় ছেলে মনোজের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমে দাদা এই প্রস্তাবটা শুনে
ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। এরকম একটা বনেদি পরিবারে তার বোনের বিয়ে হবে এটা দাদার কল্পনারও অতীত ছিল। দাদা এক কথায় রাজি হয়ে যায়। ফলে
কিছুদিনের মধ্যেই আমার বিয়ে হয়ে যায়। এখন এই রায় পরিবারের আমি বড় বৌ।
শ্বশুরবাড়ির বিবরণ সেটা আপনারা আগেই (পূর্বকথায়) জেনেছেন। দোতলা বাড়ির একতলায় তিনটে বেডরুম। একটাতে আমি আর আমার স্বামি থাকি, আর একটাতে
আমার শ্বশুরমশাই। তৃতীয় রুমটি তালা মারা, এটিতে আগে থাকত আমার ছোট দেবর ধিরজ। আর দোতলায় চারটে বেডরুমের একটিতে মেজ ঠাকুরপো সরোজ থাকে,
বাকিগুলি খালি, গেস্ট রুম হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আমার বিয়ের সময় আমি ছোট দেবরকে দেখিনি। পরে স্বামির মুখে জানতে পারি ধিরজ আলীগড়ের একটা
কোম্পানিতে চাকরি করে। আর সেখানেই সে আমার বিয়ের দু মাস আগে একটি তামিল মেয়েকে বিয়ে করে বাড়ি ভাড়া করে থাকে। এই বিয়েতে শ্বশুরমশাইয়ের
ভীষণ আপত্তি ছিল। বাপের অমতে বিয়ে করায় শ্বশুরমশাই ছোট ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে। অভিমানে ধিরজও আর এই বাড়িতে পা রাখে না। শুধুমাত্র তামিল
হওয়ার জন্য আপত্তি এটা শুনে আমার অবাক লাগে। পরে জানতে পারি আসল কারন অন্য, মেয়েটার বাপ নাকি খুনি।
বিয়ের পরে আমি প্রথম হেঁসেলে ঢুকে অবাক হয়ে যাই। যেমন অগোছালো তেমনি নোংরা। রান্না করার জন্য একটা উড়ে ঠাকুর আছে। সে একবারই আসে, সকাল
ছটায় আসে দশটার মধ্যে দু বেলার রান্না করে দিয়ে চলে যায়। উড়ে ঠাকুরের কাছে জানতে পারি এই বাড়িতে রাতের খাবারটা ফেলাই যায়, সবাই রাতের খাবার
বাইরে খেয়ে আসে। আমি অবশ্য ঠাকুরের রান্না খেয়ে বুঝলাম কেন সবাই বাইরে খেয়ে আসে। ঘরদোর পরিস্কার করার জন্য মালতি নামে একটি সোমত্ত কাজের মেয়ে
আছে। সে একবারই সকালে আসে। এত বড় বাড়ি কোন রাতদিনের লোক নেই দেখে অবাক লাগে। পরে জানতে পারি আগে দু দুবার রাতদিনের কাজের লোক রাখা
হয়েছিল। কিন্তু দুটোই জিনিসপত্র চুরি করে পালায়। সেই থেকে শ্বশুরমশাই আর রাতদিনের কাজের লোক রাখতে ভরসা পাননি।
স্বামি, শ্বশুর আর মেজ ঠাকুরপো সকলেই সকাল দশটার মধ্যে খেয়ে বেরিয়ে যায়। ফেরে রাতে একেক জন একেক সময়। আমি প্রথমেই হেঁসেলের দায়িত্ব আমার হাতে
তুলে নিই। আমার হাতের রান্না খেয়ে সকলেই তারিফ করে, বিশেষ করে শ্বশুরমশাই। রাতের রান্না আর ফেলা যায় না আর বাইরেও কেউ খেয়ে আসে না। এক সপ্তাহ
পরে উড়ে ঠাকুরটা কাজ ছেড়ে দেয়। বুঝতে পারি আমার রান্নার প্রশংসা বেটার আঁতে ঘা দিয়েছে।
এখানে আসার পরে একটা জিনিস লক্ষ্য করি বাপ ছেলেদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই। প্রত্যেকের প্রত্যেকের সাথে বিস্তর ব্যবধান। যে যার নিজের তালে রয়েছে।
আমার শাশুড়ি ঋতম্ভরা দেবি ছোট ছেলে ধিরজের জন্মের দুবছর পরে মারা যান। শুনি তিনি নাকি আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই বিষয়ে আমার স্বামি কোন কথাই বলতে
চায় না। আমিও আর পেরাপিরি করিনি। যাইহোক আমার ধারনা ঘরনি না থাকায় এদের মধ্যে সম্পর্কের বাঁধনটাই তৈরি হয়নি।
শ্বশুরমশাই খুব রাশভারি লোক। খুব ভাল করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় ওনার চোখেমুখে একটা ধূর্ততার ছাপ আছে। মেয়েদের একটা সিক্সথ সেন্স আছে, পুরুষদের
চোখ দেখলেই বলে দিতে পারে মানুষটি কেমন ধারার। আমার ধারনা শ্বশুরমশাইয়ের ভালই চরিত্রের দোষ আছে। অল্প বয়সে স্ত্রী হারালে কোন পুরুষের আর চরিত্রের
ঠিক থাকে। যাইহোক শ্বশুরমশাই নিজের হাতে কিছু ব্যবসা রেখে বাকি ব্যবসা দুই ছেলে মনোজ ও সরোজের মধ্যে ভাগ করে দেন।
বিয়ের আগে সব মেয়েদেরই স্বামি নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে আমারও ছিল। কিন্তু বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই সেসব চুরমার হয়ে যায়। বিয়ের প্রথম মাস নিয়মিত স্বামি
সোহাগ পেয়েছি, তারপরে কমতে কমতে এখন তো মাসে একবারে দাঁড়িয়েছে। তাও সেটা আমার জোরাজুরিতে। মনোজের ধ্যানজ্ঞান শুধু ব্যবসা আর ব্যবসা। আমি
একদিন বলেই ফেলি, ‘তুমি পয়সা পয়সা করেই একদিন মরবে।’
স্বামি শুধু ব্যবসা নিয়ে থাকে আর শ্বশুর গম্ভীর প্রকৃতির তাই এই বাড়িতে আমার কথা বলার একমাত্র লোক ছিল মেজ ঠাকুরপো। তার সাথেই একটু আধটু হাসি ঠাট্টা
চলত। একদিন মেজ ঠাকুরপো জানায় তার একটি মেয়েকে পছন্দ হয়েছে আর সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু বাবাকে ম্যানেজ করার দায়িত্বটা সে আমার উপর
ছেড়ে দেয়। বাধ্য হয়ে ঠাকুরপোর কাছ থেকে মেয়েটির ডিটেলস নিই।
নামকরা ব্যারিস্টার সোমনাথের একমাত্র মেয়ে নুপুর। ওনারা রায়পুরেই থাকেন তবে শহরের ভেতরে। মেয়েটির মা অনেকদিন আগে গত হয়েছে। তবে নুপুর নাকি নাচ
গান দুটোতেই পারদর্শী। এরপরে মেজ ঠাকুরপোর মুখে যেটা শুনি সেটা শুনে চমকে উঠি। ব্যারিস্টার সোমনাথ এক বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। আর যাকে
বিয়ে করেছেন সে তার মেয়ের থেকে মাত্র সাত বছরের বড়। এই নিয়ে বাপ মেয়ে ধুন্দুমার। নুপুর তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে ওই বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে
চায়।
পরেরদিন ডিনার টেবিলে শ্বশুর মশাইয়ের কাছে প্রসঙ্গটা উত্থাপন করি। শ্বশুরমশাই চুপ করে আমার কাছ থেকে সবটা শুনে নেন। শেষে বলেন, ‘বৌমা, তুমি আর
মনোজ দুজনে গিয়ে নুপুরকে দেখে আস। তোমাদের সবকিছু ঠিক লাগলে তারপরে নাহয় আমি যাব পাকা কথা বলতে।’
মেজ ঠাকুরপো খুশিতে উচ্ছল হয়ে ওঠে। দুদিন পরেই সে আমার আর আমার স্বামির নুপুরদের বাড়িতে যাবার ব্যবস্থা করে ফেলে। স্বামি, আমি আর মেজ ঠাকুরপো
তিনজনে বিকেল নাগাদ ব্যারিস্টার সোমনাথের বাড়িতে হাজির হই। নুপুর আমাদের আপ্যায়ন করে ভেতরে নিয়ে যায়। নুপুর বেশ সুন্দরি, আমার আর আমার স্বামির
ভালই লাগে। ব্যারিস্টার সাহেব উঠে নমস্কার করে আমাদের বসতে বলেন। নুপুর আর তার বাবা ছাড়া আর কাউকে ঘরে দেখতে পাইনা। আমি আর একজনকে
দেখার প্রত্যাশা করেছিলাম, তাকে দেখতে না পেয়ে এদিক ওদিক চাই। মেজ ঠাকুরপোর সাথে চোখাচোখি হতে ঠাকুরপো চোখ পাকায়। এরপরে নুপুর আর তার
বাবার সাথে আমাদের টুকটাক কথাবার্তা চলতে থাকে। নুপুরের বাবার অমায়িক ব্যবহার আমাদের ভাল লাগে।
এমন সময় একজন দির্ঘাঙ্গী সুন্দরী মহিলা চা জলখাবার নিয়ে প্রবেশ করে। ব্যারিস্টার সাহেব উঠে দাড়িয়ে ওনার স্ত্রী লতিকার সাথে আমাদের আলাপ করিয়ে দেন।
চা জলখাবার খেতে খেতে আমাদের কথাবার্তা চলতে থাকে। আমার চোখ বারেবারে লতিকার দিকে চলে যায়। দেখলাম হাসলে লতিকার গালে টোল পড়ে, ওনার
চোখের দৃষ্টিতে অদ্ভুত মদিরতা। ঠোঁটের উপর কালো তিল প্রমান করে মহিলা খুব সেক্সি। সুডৌল বুক, নধর পাছা যে কোন পুরুষের বুকে হাহাকার মাচিয়ে দেবে। এই
ধরণের একটা মাল কি করে একটা বুড়ো ভামকে বিয়ে করে তা আমার মাথায় ঢোকে না। যাইহোক এরপরে আমরা ওনাদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি।
শ্বশুরমশাইকে আমাদের পছন্দ হয়েছে সেটা জানিয়ে দিই। কিছুদিন পরে শ্বশুরমশাই গিয়ে পাকা কথা বলে এসে বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলেন।
ছোট ঠাকুরপোকে বিয়ের কথা জানানো হয়, কিন্তু সে আসতে পারবে না জানিয়ে দেয়।
পাঠকদের জানাই, এই গল্পের সময়কাল সত্তর দশকের। সেই সময় জন সাধারনের হাতে মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট কিছুই ছিল না। ল্যান্ড ফোন দেখা যেত
তাও সেটা মোটামুটি ধনিদের বাড়িতে শোভা পেত। তাই এই গল্পে কোন মোবাইল, কম্পিউটারের কোন ব্যবহার পাওয়া যাবে না।
আরও একটা বিষয়ে পাঠকদের অবগত করাই, গল্পটিতে দুটি ভাগ আছে, প্রথমটিতে কেচ্ছা আর দ্বিতীয়টিতে খুন ও খুনের তদন্ত। কেচ্ছা সংক্রান্ত ঘটনাগুলি অতীতে
ঘটে গেছে আর এগুলি পরিবারের সদস্যদের মুখ থেকে শোনা যাবে। খুন ও খুনের তদন্ত বর্তমান ঘটনা, সেটি সাধারন গল্পের আকারে আসবে। আর একই সাথে দুটি
চলবে।
কেচ্ছা
লাবণ্যর (বড় বৌমার) জবানবন্দি
আমার নাম লাবণ্য। আমার জন্ম ছোট নাগপুরে। আমি আমার মা বাবার বৃদ্ধ বয়সের দ্বিতীয় সন্তান। আমার একমাত্র দাদা বিশ্বজিৎ আমার থেকে প্রায় পনের বছরের
বড়। খুব ছোটবেলাতেই আমি আমার বাবা মাকে হারাই। যখন আমার এক বছর বয়স তখন আমার বাবা হঠাৎ হার্ট এট্যাকে মারা যায় আর আমার যখন পাঁচ বছর
বয়স তখন মা মারা যায়। তাদের কথা আমার ভাল করে মনেও নেই। বাবার মৃত্যুর পর দাদার কাঁধে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে। আমাদের স্টেশনের কাছে একটা
ইলেকট্রিকের দোকান ছিল। দোকানের আয় খারাপ ছিল না, সংসার মোটামুটি চলে যেত। যাইহোক বাবা মারা যাওয়াতে দাদাকে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে দোকানে
বসতে হয়। অল্পবয়সে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় দাদা হয়ে ওঠে ঘোর বাস্তববাদী। মায়ের মৃত্যুর পর দাদাই আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে। দাদা
আমার পড়াশুনা বা সুখ সাচ্ছন্দের কোন ঘাটতি রাখেনি। কোনদিন আমাকে কোন অভাব বুঝতে দেয়নি।
যাইহোক এই ছোট নাগপুর অঞ্চল মুলত কয়লা খনির জন্য বিখ্যাত। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে অনেকগুলো কলিয়ারি আছে। এই সব কলিয়ারিগুলোতে কয়লার
চোরাচালানকে কেন্দ্র করে এক অন্ধকার জগৎ, আছে। অনেক মাফিয়া গ্যাং এই জগতে রাজ করে। আর এই কয়লার চোরাচালান নিয়ে মাফিয়াদের নিজেদের মধ্যে
খুনোখুনি লেগেই থাকত। এখানকার এক মাফিয়া ডন শাবির ভাই একদিন আমাদের ইলেকট্রিকের দোকান থেকে কিছু মাল কিনতে এসে ভুল করে একটা ব্যাগ ফেলে
যায়। দোকান বন্ধ করার সময় দাদার চোখে ব্যাগটা পড়ে। দাদা খুলে দেখে থরে থরে নোট ভর্তি, অনেক টাকা। দাদা সেদিনই শাবির ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে টাকার
ব্যাগটা শাবির ভাইয়ের হাতে ফেরত দিয়ে আসে। দাদার সততা দেখে শাবির ভাই মুগ্ধ হয়। এরপরে শাবির ভাইয়ের সাথে দাদার খুব ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। আমার
দাদাও ছিল ডাকাবুকা ধরণের, ভয়ডরের বালাই ছিল না। এরপরে এই শাবির ভাইয়ের হাত ধরেই আমার দাদার অপরাধ জগতে হাতেখড়ি ঘটে। ধীরে ধীরে শাবির
ভাইয়ের দলে আমার দাদার প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে।
একদিন দাদার মানিব্যাগে একজন খুব সুন্দরি মেয়ের ছবি দেখতে পাই। দাদাকে চেপে ধরতে মেয়েটার নাম জানতে পারি, রেবতি। আরও জানতে পারি মেয়েটা
বাঙালি নয়, তামিল। তবে অনেক পুরুষ ধরে এখানে বাস করায় একপ্রকার বাঙালি হয়ে গেছে। আরও জানতে পারি বসু দাদা নামে এই এলাকার এক ডনের বোন।
শুনে একটু ঘাবড়ে যাই। পরে মনে মনে ভাবি দাদাও তো আমার এই একই কাজ করে। তাহলে আর অসুবিধের কি আছে। আমি রেবতির সাথে আলাপ করতে চাই।
কিন্তু দাদা পরে রেবতিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবে বলে। এরপরে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যায় যে যার ফলে দাদার প্রেমিকার সাথে আমার আর কোনদিন
সাক্ষাত হয় না।
শাবির ভাইয়ের সাথে বসু দাদার ছিল শত্রুতার সম্পর্ক। একটি কলিয়ারির নিয়ন্ত্রন নিয়ে দুজনের গণ্ডগোল লেগেই থাকত। বসু দাদার বোনের সাথে আমার দাদার
সম্পর্কের কথাটা শাবির ভাইয়ের কানে কোন ভাবে পৌঁছে যায়। তাই দাদার অজ্ঞাতে একদিন শাবির ভাই তার দলবল নিয়ে বসুর দাদা ডেরায় অতর্কিত হানা দেয়।
শাবির ভাইয়ের দলবল বসু দাদার সাগরেদদের লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মার মেরে হটিয়ে দেয়। শাবির ভাই শত্রুর শেষ রাখতে নেই এই নিয়মে বিশ্বাস করত। ফলে
বসু দাদাকে ওখানেই গুলি করে মেরে ফেলে। কিন্তু রেবতি কোন না কোন ভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপরে সে একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
দাদা পরে পুরো ঘটনাটা জানতে পারে। কিন্তু দাদা অদ্ভুদ রকমের শান্ত হয়ে থাকে। আমি বুঝতে পারি দাদার ভেতরে কি ঝড় বয়ে চলেছে। দাদা আস্তে আস্তে শাবির
ভাইয়ের আস্থা অর্জন করে। হয়ে ওঠে শাবির ভাইয়ের ডানহাত। বেশ কিছুদিন পরে জানতে পারি শাবির ভাই খুন হয়ে গেছেন। আর খুনটা করেছে বসু দাদার এক
ঘনিষ্ঠ সাগরেদ, স্বামিনাথন। খুনটা করে পালানর সময় স্বামিনাথন আমার দাদার গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায়। দাদা কিছুদিনের জন্য আত্মগোপন করে। কিন্তু পরের দিন
খবরের কাগজে শাবির ভাই আর যে লোকটা খুন করেছে দুজনের ছবি দেখতে পাই। শাবির ভাইয়ের খুনির ছবি দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। এই স্বামিনাথন দুদিন
আগে গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। দাদার সঙ্গে কিসব কথা বলে চলে যায়। আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না দাদা স্বামিনাথনকে দাবার বড়ে হিসাবে
ব্যবহার করে তার প্রেমিকার হয়ে প্রতিশোধ নিল। শাবির ভাই নিহত হওয়ার কিছুদিন পর আমার দাদা হয়ে ওঠে দলের সর্বেসর্বা।
যে কলিয়ারি নিয়ে বসু দাদার সাথে শাবির ভাইয়ের গণ্ডগোল সেই কলিয়ারির মালিক রায়পুরের জমিদাররা। বসু দাদার পরে এই কলিয়ারির নিয়ন্ত্রন আমার দাদার
হাতে চলে আসে। এখান থেকেই আমার দাদার সাথে বিরেন রায়ের যোগাযোগ এবং ঘনিষ্ঠতা। দাদার আমন্ত্রনে বিরেন রায় একদিন আমাদের বাড়িতে আসেন।
আমাকে দেখে তার ভীষণ পছন্দ হয়ে যায়। সেদিনই তিনি দাদার কাছে তার বড় ছেলে মনোজের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমে দাদা এই প্রস্তাবটা শুনে
ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। এরকম একটা বনেদি পরিবারে তার বোনের বিয়ে হবে এটা দাদার কল্পনারও অতীত ছিল। দাদা এক কথায় রাজি হয়ে যায়। ফলে
কিছুদিনের মধ্যেই আমার বিয়ে হয়ে যায়। এখন এই রায় পরিবারের আমি বড় বৌ।
শ্বশুরবাড়ির বিবরণ সেটা আপনারা আগেই (পূর্বকথায়) জেনেছেন। দোতলা বাড়ির একতলায় তিনটে বেডরুম। একটাতে আমি আর আমার স্বামি থাকি, আর একটাতে
আমার শ্বশুরমশাই। তৃতীয় রুমটি তালা মারা, এটিতে আগে থাকত আমার ছোট দেবর ধিরজ। আর দোতলায় চারটে বেডরুমের একটিতে মেজ ঠাকুরপো সরোজ থাকে,
বাকিগুলি খালি, গেস্ট রুম হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আমার বিয়ের সময় আমি ছোট দেবরকে দেখিনি। পরে স্বামির মুখে জানতে পারি ধিরজ আলীগড়ের একটা
কোম্পানিতে চাকরি করে। আর সেখানেই সে আমার বিয়ের দু মাস আগে একটি তামিল মেয়েকে বিয়ে করে বাড়ি ভাড়া করে থাকে। এই বিয়েতে শ্বশুরমশাইয়ের
ভীষণ আপত্তি ছিল। বাপের অমতে বিয়ে করায় শ্বশুরমশাই ছোট ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে। অভিমানে ধিরজও আর এই বাড়িতে পা রাখে না। শুধুমাত্র তামিল
হওয়ার জন্য আপত্তি এটা শুনে আমার অবাক লাগে। পরে জানতে পারি আসল কারন অন্য, মেয়েটার বাপ নাকি খুনি।
বিয়ের পরে আমি প্রথম হেঁসেলে ঢুকে অবাক হয়ে যাই। যেমন অগোছালো তেমনি নোংরা। রান্না করার জন্য একটা উড়ে ঠাকুর আছে। সে একবারই আসে, সকাল
ছটায় আসে দশটার মধ্যে দু বেলার রান্না করে দিয়ে চলে যায়। উড়ে ঠাকুরের কাছে জানতে পারি এই বাড়িতে রাতের খাবারটা ফেলাই যায়, সবাই রাতের খাবার
বাইরে খেয়ে আসে। আমি অবশ্য ঠাকুরের রান্না খেয়ে বুঝলাম কেন সবাই বাইরে খেয়ে আসে। ঘরদোর পরিস্কার করার জন্য মালতি নামে একটি সোমত্ত কাজের মেয়ে
আছে। সে একবারই সকালে আসে। এত বড় বাড়ি কোন রাতদিনের লোক নেই দেখে অবাক লাগে। পরে জানতে পারি আগে দু দুবার রাতদিনের কাজের লোক রাখা
হয়েছিল। কিন্তু দুটোই জিনিসপত্র চুরি করে পালায়। সেই থেকে শ্বশুরমশাই আর রাতদিনের কাজের লোক রাখতে ভরসা পাননি।
স্বামি, শ্বশুর আর মেজ ঠাকুরপো সকলেই সকাল দশটার মধ্যে খেয়ে বেরিয়ে যায়। ফেরে রাতে একেক জন একেক সময়। আমি প্রথমেই হেঁসেলের দায়িত্ব আমার হাতে
তুলে নিই। আমার হাতের রান্না খেয়ে সকলেই তারিফ করে, বিশেষ করে শ্বশুরমশাই। রাতের রান্না আর ফেলা যায় না আর বাইরেও কেউ খেয়ে আসে না। এক সপ্তাহ
পরে উড়ে ঠাকুরটা কাজ ছেড়ে দেয়। বুঝতে পারি আমার রান্নার প্রশংসা বেটার আঁতে ঘা দিয়েছে।
এখানে আসার পরে একটা জিনিস লক্ষ্য করি বাপ ছেলেদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই। প্রত্যেকের প্রত্যেকের সাথে বিস্তর ব্যবধান। যে যার নিজের তালে রয়েছে।
আমার শাশুড়ি ঋতম্ভরা দেবি ছোট ছেলে ধিরজের জন্মের দুবছর পরে মারা যান। শুনি তিনি নাকি আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই বিষয়ে আমার স্বামি কোন কথাই বলতে
চায় না। আমিও আর পেরাপিরি করিনি। যাইহোক আমার ধারনা ঘরনি না থাকায় এদের মধ্যে সম্পর্কের বাঁধনটাই তৈরি হয়নি।
শ্বশুরমশাই খুব রাশভারি লোক। খুব ভাল করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় ওনার চোখেমুখে একটা ধূর্ততার ছাপ আছে। মেয়েদের একটা সিক্সথ সেন্স আছে, পুরুষদের
চোখ দেখলেই বলে দিতে পারে মানুষটি কেমন ধারার। আমার ধারনা শ্বশুরমশাইয়ের ভালই চরিত্রের দোষ আছে। অল্প বয়সে স্ত্রী হারালে কোন পুরুষের আর চরিত্রের
ঠিক থাকে। যাইহোক শ্বশুরমশাই নিজের হাতে কিছু ব্যবসা রেখে বাকি ব্যবসা দুই ছেলে মনোজ ও সরোজের মধ্যে ভাগ করে দেন।
বিয়ের আগে সব মেয়েদেরই স্বামি নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে আমারও ছিল। কিন্তু বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই সেসব চুরমার হয়ে যায়। বিয়ের প্রথম মাস নিয়মিত স্বামি
সোহাগ পেয়েছি, তারপরে কমতে কমতে এখন তো মাসে একবারে দাঁড়িয়েছে। তাও সেটা আমার জোরাজুরিতে। মনোজের ধ্যানজ্ঞান শুধু ব্যবসা আর ব্যবসা। আমি
একদিন বলেই ফেলি, ‘তুমি পয়সা পয়সা করেই একদিন মরবে।’
স্বামি শুধু ব্যবসা নিয়ে থাকে আর শ্বশুর গম্ভীর প্রকৃতির তাই এই বাড়িতে আমার কথা বলার একমাত্র লোক ছিল মেজ ঠাকুরপো। তার সাথেই একটু আধটু হাসি ঠাট্টা
চলত। একদিন মেজ ঠাকুরপো জানায় তার একটি মেয়েকে পছন্দ হয়েছে আর সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু বাবাকে ম্যানেজ করার দায়িত্বটা সে আমার উপর
ছেড়ে দেয়। বাধ্য হয়ে ঠাকুরপোর কাছ থেকে মেয়েটির ডিটেলস নিই।
নামকরা ব্যারিস্টার সোমনাথের একমাত্র মেয়ে নুপুর। ওনারা রায়পুরেই থাকেন তবে শহরের ভেতরে। মেয়েটির মা অনেকদিন আগে গত হয়েছে। তবে নুপুর নাকি নাচ
গান দুটোতেই পারদর্শী। এরপরে মেজ ঠাকুরপোর মুখে যেটা শুনি সেটা শুনে চমকে উঠি। ব্যারিস্টার সোমনাথ এক বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। আর যাকে
বিয়ে করেছেন সে তার মেয়ের থেকে মাত্র সাত বছরের বড়। এই নিয়ে বাপ মেয়ে ধুন্দুমার। নুপুর তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করে ওই বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে
চায়।
পরেরদিন ডিনার টেবিলে শ্বশুর মশাইয়ের কাছে প্রসঙ্গটা উত্থাপন করি। শ্বশুরমশাই চুপ করে আমার কাছ থেকে সবটা শুনে নেন। শেষে বলেন, ‘বৌমা, তুমি আর
মনোজ দুজনে গিয়ে নুপুরকে দেখে আস। তোমাদের সবকিছু ঠিক লাগলে তারপরে নাহয় আমি যাব পাকা কথা বলতে।’
মেজ ঠাকুরপো খুশিতে উচ্ছল হয়ে ওঠে। দুদিন পরেই সে আমার আর আমার স্বামির নুপুরদের বাড়িতে যাবার ব্যবস্থা করে ফেলে। স্বামি, আমি আর মেজ ঠাকুরপো
তিনজনে বিকেল নাগাদ ব্যারিস্টার সোমনাথের বাড়িতে হাজির হই। নুপুর আমাদের আপ্যায়ন করে ভেতরে নিয়ে যায়। নুপুর বেশ সুন্দরি, আমার আর আমার স্বামির
ভালই লাগে। ব্যারিস্টার সাহেব উঠে নমস্কার করে আমাদের বসতে বলেন। নুপুর আর তার বাবা ছাড়া আর কাউকে ঘরে দেখতে পাইনা। আমি আর একজনকে
দেখার প্রত্যাশা করেছিলাম, তাকে দেখতে না পেয়ে এদিক ওদিক চাই। মেজ ঠাকুরপোর সাথে চোখাচোখি হতে ঠাকুরপো চোখ পাকায়। এরপরে নুপুর আর তার
বাবার সাথে আমাদের টুকটাক কথাবার্তা চলতে থাকে। নুপুরের বাবার অমায়িক ব্যবহার আমাদের ভাল লাগে।
এমন সময় একজন দির্ঘাঙ্গী সুন্দরী মহিলা চা জলখাবার নিয়ে প্রবেশ করে। ব্যারিস্টার সাহেব উঠে দাড়িয়ে ওনার স্ত্রী লতিকার সাথে আমাদের আলাপ করিয়ে দেন।
চা জলখাবার খেতে খেতে আমাদের কথাবার্তা চলতে থাকে। আমার চোখ বারেবারে লতিকার দিকে চলে যায়। দেখলাম হাসলে লতিকার গালে টোল পড়ে, ওনার
চোখের দৃষ্টিতে অদ্ভুত মদিরতা। ঠোঁটের উপর কালো তিল প্রমান করে মহিলা খুব সেক্সি। সুডৌল বুক, নধর পাছা যে কোন পুরুষের বুকে হাহাকার মাচিয়ে দেবে। এই
ধরণের একটা মাল কি করে একটা বুড়ো ভামকে বিয়ে করে তা আমার মাথায় ঢোকে না। যাইহোক এরপরে আমরা ওনাদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি।
শ্বশুরমশাইকে আমাদের পছন্দ হয়েছে সেটা জানিয়ে দিই। কিছুদিন পরে শ্বশুরমশাই গিয়ে পাকা কথা বলে এসে বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলেন।
ছোট ঠাকুরপোকে বিয়ের কথা জানানো হয়, কিন্তু সে আসতে পারবে না জানিয়ে দেয়।