10-12-2023, 11:15 PM
(This post was last modified: 14-12-2023, 07:30 PM by Neellohit. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো মিলিবৌদির ফোনে , উঠে রাকেশ আর চন্দনকেও তুললাম চা বানিয়ে ওদের দিলাম আমিও খেলাম রাকেশ সিগারেট দিলো আমি আর চন্দন ধরালাম , একটু পরে ওরা দুজন চলে গেলে আমি আরো দুকাপ চা খেয়ে বাথরুমে ঢুকলাম একেবারে স্নান সেরেই বেরোলাম , নিজেই একটা ম্যাগি বানিয়ে খেয়ে নিলাম তারপর একটা হোয়াইট লিনেনের ট্রাউসার আর ডেনিমের ফুলস্লিভ শার্ট পরে শ্যামলদাকে ফোন করে বললাম '' আমি রেডি তোমার ওখানে চলে এসব ?'' শ্যামলদা বললো '' চলে আয় তোর বৌদি এখনো রেডি হয়নি '' আমি বাইকটা নিয়ে শ্যামলদার বাড়িতে পৌঁছে দেখলাম বৌদিও রেডি শ্যামলদার গাড়িতে তিনজন রওনা হলাম '' আমি খুব বোর হবো কিন্তু শ্যামলদা জেতামনা শুধু মালিক বলেছে তাই যাচ্ছি '' বৌদি বললো বোর হবি কেন আমরা তো আছিই '' '' তোমার কাকার বাড়ি আর আমি কাউকে চিনিনা জানিনা '' এইসব কথা বলতে বলতে স্যারের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম , বিশাল বাঙলো বাড়ি সামনে সাজানো বাগান মাঝখান দিয়ে রাস্তা গাড়ি বাঙলোর ভিতরেই ঢুকিয়ে দিলো ,গাড়ি থেকে নামতেই বৌদির ফোন আমি বললাম '' তোমরা যায় আমি বৌদির সাথে কথা বলেই আসছি '' বলে লনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালাম আর বৌদির সাথে কথা বলতে থাকলাম বৌদি দেখতে চাইলো আমি ঠিকঠাক জামাকাপড় পড়েছি কিনা ভিডিও কল করে দেখলাম তবে সন্তুষ্ট হলো এমনসময় কেউ একজন মহিলা পিছন থেকে ডাকলো আমি ঘুরে তাকালাম একজন বিবাহিত মহিলা শ্যামলা রং সাধারণ বাঙালি মহিলাদের থেকে হাইটটা একটু বেশিই , চোখ নাক একদম নিখুঁত না হলেও বেশ একটা আলগা শ্রী আছে মোটের ওপরে বেশ আকর্ষনীয়া '' ভিতরে আসুন চা দেওয়া হয়েছে '' আমি মহিলার পিছন পিছন বাড়ির ভিতরে গেলাম , ঘরে অনেক লোক, একটা চেয়ারে স্যার বসে আছেন স্যার বললেন '' এস এস শুভদীপ বোসো সংকোচ কোরোনা আমি তোমার মিলিবৌদির কাকা হই জানো তো ?'' আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম ,এরপর উপস্থিত সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন ওই মহিলার পরিচয় দিয়ে বললেন '' উনি আমার মিসেস '' দুজনের বয়সের ফারাক দেখে একটু অবাক হলেও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম, ওই মহিলা অর্থাৎ মিসেস ভাদুড়ী আমার হাতে চায়ের কাপ দিয়ে সাথে একটা প্লেটে দুটো সিঙ্গারা আর দুটো ফিশফ্রাই এগিয়ে দিলেন আমি একটা ফিশফ্রাই তুলে নিলাম আর বললাম '' আমি এতো খেতে পারবো না '' স্যার বললেন '' সেকি শুভদীপ মাত্র একটা আরেকটা নাও '' '' পারবোনা স্যার সকালে ব্রেকফাস্ট করে এসেছি '' স্যার আর জোরাজুরি করলেননা মিলিবৌদি এসে আমার পাশে বসলো '' চা'টা খেয়ে না তারপর চল থাকাটা দেখে আসি '' চা খাওয়া শেষ হলে আমি আর মিলিবৌদি চললাম মন্দিরের দিকে , মূল বাড়ি থেকে আলাদা মন্দিরটা চারপাশে ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো আমরা মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে প্রণাম করলাম আমি আর বৌদি একটু অন্যদিকে গিয়ে দেখছিলাম ফুলের গাছগুলো আমি একটা সিগারেট ধরালাম এমনসময় একটা মেয়ের গলা শুনতে পেলাম '' ও মিলি'দি কেমন আছো ?'' '' ভালো তুই কোথায় ছিলি সেই কখন এসেছি আমরা '' '' পাশের বাড়িতে গিয়েছিলাম প্রসাদ দিতে ওই বাড়িতে দুজনেই বয়স্ক তো তাই আমিই দিয়ে এলাম '' '' মিলি বৌদি বললো আয় পরিচয় করিয়ে দিই এটা আমার একটা দেওর শুভদীপ আর এটা কাকার মেয়ে তিন্নি ভালো নাম '' বৌদির কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়েছি মেয়েটাও আমার দিকে তাকালো একসাথে দুজনে বলে উঠলাম আমি বললাম '' তুবড়ি তুই ?'' আর তুবড়ি মানে ওই মেয়েটা বললো '' শুভ তুই ?'' মিলিবৌদি জিজ্ঞেস করলো '' তোরা দুজন দুজনকে চিনিস নাকি ? '' '' আমি বললাম '' হ্যাঁ আমরা এক কলেজে এক ক্লাসে পড়তাম কলেজ ছাড়ার পরে এই প্রথম দেখা অনেক খুঁজেছি দেখা পাইনি '' তুবড়ি অর্থাৎ তিন্নি ( ওর পোশাকি নাম তিলোত্তমা ) বললো '' আমিও তো কত খুঁজেছি তোকে কোথায় ছিল এতদিন ?'' বলতে বলতে তিন্নির চোখ ছলছল করে উঠলো মিলিবৌদি কিছু বুঝতে পারছিলো না তবে মেয়েদের মন তো কিছু একটা আন্দাজ করছিলো আমায় জিজ্ঞেস করলো '' দিপু সত্যি কথা বলতো তিন্নিই কি সেই মেয়ে যাকে না পেলে কাউকে বিয়েই করবিনা ঠিক করেছিস ?'' আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম মুখে বললাম '' তবে যদি তিন্নি রাজি থাকে '' তিন্নি দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গ্যালো আমি মিলিবৌদিকে বললাম '' প্লিস বিষয়টা ডিসক্লোজ কোরোনা যতক্ষণ না তিন্নির মতামত জানতে পারছি '' দুজনে আবার বাড়িতে ঢুকলাম আমার বুকের ভিতরে যেন হাতুড়ি পিটছে মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই স্বাভাবিক মিলিবৌদি শ্যামলদাকে ডেকে বাইরে নিয়ে গ্যালো বুঝলাম শ্যামলদাকে বললো বিষয়টা , মিসেস ভাদুড়ীকে দেখলামনা ঘরে টেবিলে রাখা জলের বোতল থেকে গ্লাসে জল ঢেলে ঢকঢক করে জল খেলাম বুকের ভিতরের ঢিপঢিপানিটা যাচ্ছে না আমি উঠে আবার বাইরে গেলাম লনে পায়চারি করতে করতে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে দেখলাম মিলিবৌদি আর শ্যামলদাকে আমায় দেখে ওরা এগিয়ে এলো , দুজনেই মুচকি মুচকি হাসছে আমার মনে হচ্ছে দৌড়ে পালিয়ে যায় আবার পরক্ষনেই মনে হচ্ছে এতদিন পরে তিন্নির দেখা পেলাম খুব জানতে ইচ্ছা করছিলো ও আমার সম্পর্কে কি আমার মতোই ভাবে ? আমার ভালোবাসা একতরফা নয়তো ? এইসব চিন্তায় বুকের ভিতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে এমন সময় মিসেস ভাদুড়ী বাড়ি থেকে বের হয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে মিলিবৌদির দিকে তাকিয়ে বললেন '' শুনেছিস তোর দেওরের কান্ড ?'' মিলিবৌদি হেসে মাথা নাড়লো মিসেস ভাদুড়ী আবার বললেন '' যা তোর বোনকে সামলা কেঁদে ভাসাচ্ছে '' আমার মুখ থেকে প্রশ্ন বেরিয়ে এলো '' কেন ? তুবড়ি কাঁদছে কেন ?'' '' কি নাম বললে ?'' '' সরি ওটা কলেজের বন্ধুদের মধ্যে নামটা প্রচলিত ছিল তাই মুখ থেকে বেরিয়ে গ্যাছে '' হঠাৎ পিছনে স্যারের গলার শব্দ '' কি ব্যাপার লাবনী আমায় বাইরে আলাদা ডাকলে কেন ?'' '' সাহেব এই শুভদীপই হলো সেই ছেলে যার জন্য তিন্নির কাউকে পছন্দ হয়না ওরা দুজন দুজনকে কলেজে পড়ার সময় থেকেই পছন্দ করে বসে আছে এতদিন কোনো যোগাযোগ ছিলোনা আজ দুজনে দুজনকে খুঁজে পেয়েছে তিন্নি নিজের ঘরে কেঁদে ভাসাচ্ছে আর শুভদীপ এখানে মিলির সাথে দাঁড়িয়ে আছে '' স্যার মিলিবৌদির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন '' তোরা যানটি ?'' মিলিবৌদি বললো '' ও একটা মেয়েকে কলেজ থেকেই ভালোবাসে আর তাকে খুঁজছে এটা জানতাম কিন্তু সে যে আমাদের তিন্নি তা তো বলেনি ?'' আমি কোনোরকমে সাহস করে বললাম '' আমি কি করে জন্য যে তুবড়ি সরি তিন্নি স্যারের মেয়ে আর তোমার বোন ?'' এর মধ্যেই মিসেস ভাদুড়ী তুবড়িকে হাত ধরে নিয়ে এসেছে স্যার মুচকি হেসে বললেন '' তুবড়ি ? এটা তো বুঝলামনা '' আমি উত্তর দিলাম কলেজে থাকতে ও খুব তড়বড়করে কথা বোট তাই কেউ একটা ওর নাম দিয়েছিলো তুবড়ি '' '' তুবড়ি প্রতিবাদ করে বললো কে আবার তুইই তো নামটা বানিয়েছিলি '' স্যার উচ্চস্বরে হেসে উঠে বললেন '' নামটা বেশ ভালোই তবে এখন কিন্তু ও আর তড়বড় করে কথা বলেনা '' তারপর তুবড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন '' যাও তিন্নি শুভদীপকে তোমার ঘরে নিয়ে যায় লাবনী শুভদীপের জন্য তিন্নির ঘরে চা দিতে বলো কাউকে '' বলে বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি মিসেস ভাদুড়ী এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে চললেন তুবড়িও আমাদের পিছনপিছন এলো , দোতলায় একটা ঘরের সামনে এসে তুবড়িকে বললেন '' তিন্নি যা তোর ঘরে বসে তোরা গল্প কর আমি চা পাঠাচ্ছি '' আমি ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছি , কি করবো বুঝতে পারছিনা ভীষণ নার্ভাস লাগছে তুবড়ি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো '' শুভ সত্যিই তুই মিলিদিকে বলেছিলি আমায় না পেলে বিয়েই করবিনা ?'' '' ঠিক তা না , আসলে সবাই বিয়ের জন্য বলতো তো আমি ঠিক করেছিলাম যদি তোর দেখা পাই তোর যদি বিয়ে না হয়ে থাকে আর তুই যদি আমায় বিয়ে করতে রাজি থাকিস তাহলে তোকেই বিয়ে করবো নয়তো অন্যকিছু ভাববো '' একটু থেমে তুবড়ি কে জিজ্ঞেস করলাম '' তুবড়ি তুই কি আমায় .......?'' '' তুবড়ি আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার কাঁধে মুখটা গুঁজে দিয়ে কান্নাজড়ানো গলায় বললো এতদিন আমিও তো তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম '' তারপর আমার ঘাড়ে মুখ ঘষতে ঘষতে বলতেই থাকলো '' আই লাভ ইউ শুভ আই লাভ ইউ লাভ ইউ লাভ ইউ '' আমিও আবেগে ভেসে গেলাম তুবড়িকে জড়িয়ে ধরলাম আমিও বলতেই থাকলাম '' লাভ ইউ তুবড়ি লাভিউ লাভিউ '' এইভাবে কতক্ষন দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরেছিলাম জানিনা হুঁশ ফিরলো দরজায় মিসেস ভাদুড়ির গলার শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি উনি আর মিলিবৌদি মুচকি মুচকি হাসছে মিসেস ভাদুড়ির হাতে একটা থালায় লুচি তরকারি সাজানো '' নাও বোসো এগুলো খেয়ে নাও '' '' আমি বললাম না সকালে পেট ভরে ব্রেকফাস্ট করে এসেছি এতো খেতে পারবো না আর আমি এক ? তুবড়ি খাবে না '' মিসেস ভাদুড়ী আমার গালটা টিপে মুচকি হেসে মিলিবৌদিকে বললেন '' ওরে মিলি দেখলি আর কেউ না তুবড়ির জন্য চিন্তা '' দুজনে হো হো করে হেসে উঠলো আর তুবড়ি বললো '' আঃ মনি তুমি ভীষণ ইয়ে '' আমার দিকে তাকিয়ে বললো '' যে'কটা প্যারিস খা শুভ চিন্তা করিসনা আমার জন্যও আসবে '' আমি একটা খালি প্লেট চেয়ে নিলাম আর দুটো লুচি খেয়ে বাকিটা তুলে দিলাম তুবড়ির খাবারও এলো আর আমার জন্য চা এলো , চা খেয়ে আমি বৌদিকে ফোন করলাম ভিডিও কলে ধরে বৌদিকে বললাম সব কথা বৌদি জেঠিমা দাদাভাই সবাই তুবড়ি মানে তিন্নি অর্থাৎ তিলোত্তমার সাথে পরিচিত হলো আমাদের পরিবারে নতুন অতিথিকে স্বাগত জানাতে সবাই উদগ্রীব |