09-12-2023, 11:40 PM
সকালে চাঁপা আসার আগেই ব্যাগ গোছাতে শুরু করেছে রমা। খুব ভোরে উঠে ও স্নান করেছে। পীযুষের বুকটা কেমন দ্বিধায় কাঁপছে তরঙ্গমালার মত। চাঁপা আসতেই ছেলেকে নিয়ে বেরোলো ওরা।
রাস্তাটি দীর্ঘ। সকাল থেকেই তীব্র রোদ। রমা একটি হালকা গোলাপি সাধারণ সিল্কের শাড়ি পরেছে। গোলাপি ব্লাউজ। পিকুলর মাথাটা কোলে রেখে ও পেছনে বসেছে। রোদের জন্য তাকে বড় সানগ্লাসটা জোর করেই বার করে দিয়েছে পীযুষ। ওটা এখনো রমার চোখে। ওর ফর্সা ভরাট মুখের সাথে, কালো রোদ চশমাটা বেশ মানায়।
এগারোটা কুড়িতে ওরা শম্ভুর বাড়ির সামনে পৌঁছল। ষষ্ঠীপদ দাওয়ায় বসে নারকেলের পাতা থেকে পিঁচ খাঁচি আলাদা করছিল। ওর বউ লতা বললে---কই গো বুলির বাপ, নীল গাড়িটা দিদিমণিরটা আছে লা?
সত্যিই তো তার বাড়ির পাশ দিয়ে মেঠো রাস্তায় নীল রঙা গাড়িটা দুলতে দুলতে এগিয়ে গেল। ও কাজ ফেলে চলে এলো শম্ভুর বাড়ির সামনে। শম্ভুর বাড়ির দরজায় শেকল তোলা। ষষ্ঠীপদ এসে বলল---সার, শম্ভু তো নদীতে গিছে। ফিইরতে বিকাল হবে।
এবারও শম্ভুর সাথে পীযুষের দেখা হল না। ও ফিরে গেল তৎক্ষণাৎ। কাল দ্বিতীয়বর্ষের সেমিস্টার আছে। রমা দেখল ঘোরদোর এলোমেলো। তক্তাপোশে শুয়ে দিয়েছে পিকলুকে। শাড়ি না বদলেই টিকটিক করে এলোমেলো জিনিসপত্র সাজিয়ে ফেলল সে। ষষ্ঠীপদ ভয় পাচ্ছে গাঁয়ের লোক জানতে পারলে সাংঘাতিক হবে। রমাকে সে বললে---দিদিমণি ই গাঁ'টায় বড্ড বেয়াদব লোকে ভরে গিছে। আপনি শম্ভুর ঘরে আছেন জাইনলে রক্ষা লাই। ইদিকে জানেন শম্ভুটা মাথা গরম কইরে লেয়। লঙ্কা কাণ্ড বাধাইবে।
রমা চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলো শম্ভুর। মজিদের সাথে শম্ভুর ভাব হয়েছে আজকাল। মজিদ চাচা আজ শম্ভু নিয়ে গেছিল গভীর জঙ্গলে রায়মঙ্গলের খালে বিলে। ফেরার সময় মজিদ গান বাঁধলো। শম্ভু বললে---চাচা তুমার গলাটা কিন্তু ভালো আছে, বাপের রক্তে পায়েছ।
---হঁ রে বেদের পো, তুর বাপ যেমন তুরে বেদে বানাইছে, মোর বাপ চাইছিল আমি গান করি। আমরা জাতে .,, আমার বড় দাদা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সে বইলল এসব গান বাজনা ঘরে চইলবে লাই, গুনাহ হবে। আর আমি এখুন ঘরে লা পাইরলেও ইচ্ছা হলে নদীর পানিরে, তোর চাচীর সাথে রাতে কুথা কওয়ার সময় এই গান গায়ে গুনাহ করে চলি। বড় দাদা জানল লাই, একদিন কবরে চইলে গেল।
ওরা দুজনেই হেসে উঠল। শম্ভুও বললে----বেদে হছি তো আছে, আমি সনাতন মাঝির নাতিটাও আছি লা। সাপ ধইরবার আনন্দ আরেক, মাছ ধইরবার আরেক। এখুন তোমার সাইথে থিকে মাছ ধইরতেই ভালো লাগে।
মজিদ বলল---ধইরতে পারলি ঘরে রাখা মাছটারে?
---কার কথা কও কাকা? বিড়িতে বেশ জোর টান দিয়ে বললে শম্ভু।
---শহর থিকে যে দিদিমণিটা তুর ঘরে আছে।
শম্ভু জিভ কাটলো। বললে---কি কও কাকা। বামুন হয়ে লোকে চাঁদে হাত দিবার কথা বইলে, এ যে বেদে, বেদে হয়ে চাঁদে হাত দিব কেমন কইরে! আর চাচা দিদিমণিটা বড় ভালোমানুষ। পড়ালিখা করা পন্ডিত, তার বরটাও বড় কলেজের মাস্টার আছে। আমি তারে সম্মান করি। ঠিক কুথাটা কও লাই।
---দ্যাখ শম্ভু। মাছ গঙ্গার হউ আর গাঙের, লা কি রায়মঙ্গলের খাল বিলটার, মাছ ধরা দিতে চায় সেই মাঝির জালটারে। তুই সবল জোয়ান মরদ আছিস, তুর জালে মাছ উইঠবে লাই এ কেমুন কথা।
---মজিদ চাচা ঠিক কইছ লা। দিদিমণি বড়টা আছে আমার চেয়ে। তারে সম্মান কইরি।
মজিদ হেসে বলল---সম্মান কি আমি তুর চাচীরে করি লাই? যারে ভালোবাইসবি সে যেমন তুর পোষ্য সাপগুলার মত হবে, তেমুন সম্মানটাও রাইখতে হয়। তুর চাচী আমার পোষ্যটা আছে, আমিও তার পোষ্য আছি। কিন্তু সম্মানটা দুজনের কম লাই। তাই তো পাঁচটা বাচ্চার আব্বা হলেও পিরিত কমে লাই রে।
শম্ভু কিছু বলতে যাচ্ছিল, মজিদ থামিয়ে গান ধরল---
বোশাখ মাইস্যা ভাসা পানি রে বাতাসে/ বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি আমারানি কেউ আসে রে/ যেদিন হইতে নয়া পানি আইলো বাড়ির ঘাটে সখী রে/ অভাগার মনে কত শত কথা উঠে রে।
কালনাগিনীর ঘাটে নেমে শম্ভু নৌকাটাকে বাঁধলো শিরীষ গাছের সাথে। তারপর জালপত্তর নিয়ে ঘরের কাছে এসে দেখল দরজা খোলা। তখনও তার পায়ে কাদা। কলতলায় গিয়ে ধুয়ে এলো সে তার পা। জাল বিছিয়ে দিল শেষবেলার পড়ন্ত রোদে। ঘরে এসে চমকে গেল সে! সব এলোমেলো জিনিসপত্র গোছানো। কোথাও কোনো অগোছালো নেই। বিছানায় শায়িত পিকলু ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ তার কিশোর বয়সের হাসি।
শম্ভুর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। গ্যাস স্টোভের পাশে বসে রুটি করছে রমা। গোলাপি ব্লাউজের অনাবৃত পিঠের কোমল অংশে ঘাম জমে চিকচিক করছে। ফিরে তাকালো রমা। বললে---শম্ভু, এত দেরি করলে, আমার পিকলুকে একটু দেখো ভাইটি।
শম্ভুর বুকের মোচড়টা ভেঙে একটা তীব্র জোয়ার আসতে চাইছে। তবু সে টলোমলো নৌকা নয়, কঠিন হয়ে বললে---দিদিমণি কেন আইলেন? বিপদ আছে! আপনি জানেন লাই?
----জানি শম্ভু, আমি থাকলে তোমার বিপদ। কিন্তু আমার ছেলের কি হবে? ও যে বাড়ি গিয়ে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল।
শম্ভুর এখন যতই বিপদ আসুক, ভাঙুক তার ঘর, না সে মনের গোপনে জ্বলতে থাকা বাসনাবৃত্তের অসম নারী রমাকে ফেরাতে পারবে, না পারবে কিশোর পিকলুর জীবন নিয়ে ছিনিবিনি খেলতে।
শম্ভু একটাও কথা বলেনি আর। বড্ড গম্ভীর হয়ে আছে সে। স্নান করে লুঙ্গি বদল করে বসল পিকলুর মাথার কাছে। ওর সর্বাঙ্গ মালিশ করতে লাগলো ঐ তেলটা দিয়ে। রমা রুটি করতে করতে একবার দেখছে শম্ভুকে, আরেকবার পিকলুকে। শম্ভুর মালিশে পিকলুর শরীরে যে একটা যন্ত্রনা কমে আরাম ভাব আসছে সেটা পিকলুর চোখে মুখে অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যায়।
রাস্তাটি দীর্ঘ। সকাল থেকেই তীব্র রোদ। রমা একটি হালকা গোলাপি সাধারণ সিল্কের শাড়ি পরেছে। গোলাপি ব্লাউজ। পিকুলর মাথাটা কোলে রেখে ও পেছনে বসেছে। রোদের জন্য তাকে বড় সানগ্লাসটা জোর করেই বার করে দিয়েছে পীযুষ। ওটা এখনো রমার চোখে। ওর ফর্সা ভরাট মুখের সাথে, কালো রোদ চশমাটা বেশ মানায়।
এগারোটা কুড়িতে ওরা শম্ভুর বাড়ির সামনে পৌঁছল। ষষ্ঠীপদ দাওয়ায় বসে নারকেলের পাতা থেকে পিঁচ খাঁচি আলাদা করছিল। ওর বউ লতা বললে---কই গো বুলির বাপ, নীল গাড়িটা দিদিমণিরটা আছে লা?
সত্যিই তো তার বাড়ির পাশ দিয়ে মেঠো রাস্তায় নীল রঙা গাড়িটা দুলতে দুলতে এগিয়ে গেল। ও কাজ ফেলে চলে এলো শম্ভুর বাড়ির সামনে। শম্ভুর বাড়ির দরজায় শেকল তোলা। ষষ্ঠীপদ এসে বলল---সার, শম্ভু তো নদীতে গিছে। ফিইরতে বিকাল হবে।
এবারও শম্ভুর সাথে পীযুষের দেখা হল না। ও ফিরে গেল তৎক্ষণাৎ। কাল দ্বিতীয়বর্ষের সেমিস্টার আছে। রমা দেখল ঘোরদোর এলোমেলো। তক্তাপোশে শুয়ে দিয়েছে পিকলুকে। শাড়ি না বদলেই টিকটিক করে এলোমেলো জিনিসপত্র সাজিয়ে ফেলল সে। ষষ্ঠীপদ ভয় পাচ্ছে গাঁয়ের লোক জানতে পারলে সাংঘাতিক হবে। রমাকে সে বললে---দিদিমণি ই গাঁ'টায় বড্ড বেয়াদব লোকে ভরে গিছে। আপনি শম্ভুর ঘরে আছেন জাইনলে রক্ষা লাই। ইদিকে জানেন শম্ভুটা মাথা গরম কইরে লেয়। লঙ্কা কাণ্ড বাধাইবে।
রমা চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলো শম্ভুর। মজিদের সাথে শম্ভুর ভাব হয়েছে আজকাল। মজিদ চাচা আজ শম্ভু নিয়ে গেছিল গভীর জঙ্গলে রায়মঙ্গলের খালে বিলে। ফেরার সময় মজিদ গান বাঁধলো। শম্ভু বললে---চাচা তুমার গলাটা কিন্তু ভালো আছে, বাপের রক্তে পায়েছ।
---হঁ রে বেদের পো, তুর বাপ যেমন তুরে বেদে বানাইছে, মোর বাপ চাইছিল আমি গান করি। আমরা জাতে .,, আমার বড় দাদা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সে বইলল এসব গান বাজনা ঘরে চইলবে লাই, গুনাহ হবে। আর আমি এখুন ঘরে লা পাইরলেও ইচ্ছা হলে নদীর পানিরে, তোর চাচীর সাথে রাতে কুথা কওয়ার সময় এই গান গায়ে গুনাহ করে চলি। বড় দাদা জানল লাই, একদিন কবরে চইলে গেল।
ওরা দুজনেই হেসে উঠল। শম্ভুও বললে----বেদে হছি তো আছে, আমি সনাতন মাঝির নাতিটাও আছি লা। সাপ ধইরবার আনন্দ আরেক, মাছ ধইরবার আরেক। এখুন তোমার সাইথে থিকে মাছ ধইরতেই ভালো লাগে।
মজিদ বলল---ধইরতে পারলি ঘরে রাখা মাছটারে?
---কার কথা কও কাকা? বিড়িতে বেশ জোর টান দিয়ে বললে শম্ভু।
---শহর থিকে যে দিদিমণিটা তুর ঘরে আছে।
শম্ভু জিভ কাটলো। বললে---কি কও কাকা। বামুন হয়ে লোকে চাঁদে হাত দিবার কথা বইলে, এ যে বেদে, বেদে হয়ে চাঁদে হাত দিব কেমন কইরে! আর চাচা দিদিমণিটা বড় ভালোমানুষ। পড়ালিখা করা পন্ডিত, তার বরটাও বড় কলেজের মাস্টার আছে। আমি তারে সম্মান করি। ঠিক কুথাটা কও লাই।
---দ্যাখ শম্ভু। মাছ গঙ্গার হউ আর গাঙের, লা কি রায়মঙ্গলের খাল বিলটার, মাছ ধরা দিতে চায় সেই মাঝির জালটারে। তুই সবল জোয়ান মরদ আছিস, তুর জালে মাছ উইঠবে লাই এ কেমুন কথা।
---মজিদ চাচা ঠিক কইছ লা। দিদিমণি বড়টা আছে আমার চেয়ে। তারে সম্মান কইরি।
মজিদ হেসে বলল---সম্মান কি আমি তুর চাচীরে করি লাই? যারে ভালোবাইসবি সে যেমন তুর পোষ্য সাপগুলার মত হবে, তেমুন সম্মানটাও রাইখতে হয়। তুর চাচী আমার পোষ্যটা আছে, আমিও তার পোষ্য আছি। কিন্তু সম্মানটা দুজনের কম লাই। তাই তো পাঁচটা বাচ্চার আব্বা হলেও পিরিত কমে লাই রে।
শম্ভু কিছু বলতে যাচ্ছিল, মজিদ থামিয়ে গান ধরল---
বোশাখ মাইস্যা ভাসা পানি রে বাতাসে/ বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি আমারানি কেউ আসে রে/ যেদিন হইতে নয়া পানি আইলো বাড়ির ঘাটে সখী রে/ অভাগার মনে কত শত কথা উঠে রে।
কালনাগিনীর ঘাটে নেমে শম্ভু নৌকাটাকে বাঁধলো শিরীষ গাছের সাথে। তারপর জালপত্তর নিয়ে ঘরের কাছে এসে দেখল দরজা খোলা। তখনও তার পায়ে কাদা। কলতলায় গিয়ে ধুয়ে এলো সে তার পা। জাল বিছিয়ে দিল শেষবেলার পড়ন্ত রোদে। ঘরে এসে চমকে গেল সে! সব এলোমেলো জিনিসপত্র গোছানো। কোথাও কোনো অগোছালো নেই। বিছানায় শায়িত পিকলু ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ তার কিশোর বয়সের হাসি।
শম্ভুর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। গ্যাস স্টোভের পাশে বসে রুটি করছে রমা। গোলাপি ব্লাউজের অনাবৃত পিঠের কোমল অংশে ঘাম জমে চিকচিক করছে। ফিরে তাকালো রমা। বললে---শম্ভু, এত দেরি করলে, আমার পিকলুকে একটু দেখো ভাইটি।
শম্ভুর বুকের মোচড়টা ভেঙে একটা তীব্র জোয়ার আসতে চাইছে। তবু সে টলোমলো নৌকা নয়, কঠিন হয়ে বললে---দিদিমণি কেন আইলেন? বিপদ আছে! আপনি জানেন লাই?
----জানি শম্ভু, আমি থাকলে তোমার বিপদ। কিন্তু আমার ছেলের কি হবে? ও যে বাড়ি গিয়ে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল।
শম্ভুর এখন যতই বিপদ আসুক, ভাঙুক তার ঘর, না সে মনের গোপনে জ্বলতে থাকা বাসনাবৃত্তের অসম নারী রমাকে ফেরাতে পারবে, না পারবে কিশোর পিকলুর জীবন নিয়ে ছিনিবিনি খেলতে।
শম্ভু একটাও কথা বলেনি আর। বড্ড গম্ভীর হয়ে আছে সে। স্নান করে লুঙ্গি বদল করে বসল পিকলুর মাথার কাছে। ওর সর্বাঙ্গ মালিশ করতে লাগলো ঐ তেলটা দিয়ে। রমা রুটি করতে করতে একবার দেখছে শম্ভুকে, আরেকবার পিকলুকে। শম্ভুর মালিশে পিকলুর শরীরে যে একটা যন্ত্রনা কমে আরাম ভাব আসছে সেটা পিকলুর চোখে মুখে অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যায়।