03-12-2023, 03:33 PM
(This post was last modified: 03-12-2023, 03:35 PM by evilinvo9. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
প্রথম অধ্যায়
(শমসের মিয়ার দৃষ্টিকোন থেকে)
"ইনি কে?!" সন্দেহঘন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন শমসের মিয়া। বাড়ি ভাড়ার ব্যানার ঝোলানোর পর থেকে রোজই কেউ না কেউ ভাড়া চাইতে আসে। দেখে শুনে নাকচ করে দেন তিনি। ধর্ম কর্ম দুনিয়া থেকে উঠে গেলেও তার বাসা থেকে উঠছে না যতোদিন তিনি জীবিত আছেন! বয়স তো আর কম হল না, কর্ম ফলের কথাও ভাবতে হবে! বছরের পর বছর মাছের আড়তে সকাল সন্ধ্যা খাটতে খাটতে আড়ত মালিক মইদুল ব্যাপারীর চোখে পড়ে যান তিনি। কর্মঠ শমসের মিয়ার আনুগত্যে মুগ্ধ হয়ে তার হাতে একমাত্র মেয়ে এবং যাবতীয় পার্থিব সম্পত্তি দান করেন মইদুল ব্যাপারী। আড়ত মালিকের সুন্দরী কন্যার এই বিয়েতে রাজি না হলেও বাবার মতামতের বিরুদ্ধে কিছু বলার ছিলো না তার। বিয়ের পর শমসের মিয়া যখন দেখলেন সংসারে স্ত্রীর অনীহা; কষ্ট পেলেও নিজের দরিদ্র দিনের কথা ভেবে দিব্যি হজম করে গেলেন সব। ব্যবসাতে সব মনোযোগ ঢেলে দিলেন তিনি।
তারপরে অনেক দূর এসেছেন শমসের মিয়া। মাছের ব্যাবসা বাদ দিয়ে বাড়ীওয়ালার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। পুরান ঢাকার এদিকটাতে নিম্ন আয়ের মানুষ জন থাকে, যারা ঠিক দিন আনি দিন খাই ঘরানার নয় আবার নিম্ন মধ্যবিত্তের চাইতেও নিম্ন মানের। স্থানীয় কতৃপক্ষকে ঘুষ সরবরাহ করে নকল কাগজ বানিয়ে নেবার পর সরকারী জমিতে টিনশেড এই বাড়িগুলো বানানো হয়। শুধু শমসের মিয়া না, অনেকেই এই কাজ করে। বাড়িগুলোর দেওয়াল খুব শক্তপোক্ত না হলেও নেহায়েৎ ফেলে দেবার মতো নয়, টিনের চালে ফুটো নেই, বিদ্যুতের সংযোগ আছে। সব মিলিয়ে এই পাড়াটাকে উন্নত মানের বস্তি বলা যেতে পারে। সাধারনত এই ধরনের বাড়ীর মালিকরা ভাড়াটিয়াদের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে মাথা না ঘামালেও শমসের মিয়া হলেন ব্যতিক্রম। স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে ওসব নষ্টামি করবে আর মাস গেলে চোখ বুজে ভাড়াটা পকেটে ভরবেন এমন চরিত্র উনি নন। আজকাল এসবে দেশ ভরে গেছে! তাছাড়া দেখলেই বোঝা যায় এসব জুটিকে, সমবয়সী; প্রকৃত স্বামী স্ত্রীর চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব, চালচলন ভাসা ভাসা, ঘন ঘন আসা যাওয়া। এসব ঢের দেখা শমসের মিয়ার, তাই সামনে দাঁড়ানো জুটিকে দেখে বিশেষ উৎসাহ বোধ করলেন না তিনি। নিয়মিত করা বদমেজাজী রুটিনটাই চালিয়ে দিলেন।
"আমার বউ", দেঁতো হাসি দিয়ে বলল ছোকরা। "ও তো অনেক পর্দা কইরা চলে তাই মুখ ঢাইকা রাখছে। সমস্যা নাই চাচা, কাগজ পাতি, কাবিন নামা যা যা লাগে সবই আছে। আর আপনি যদি ভোটার আইডির ছবির সাথে মিলায় দেখবার চান তাইলে চাচীরে ডাক দেন। চাচী না থাকলে বাসায় যদি অন্য স্ত্রী লোক থাকে তাইলেও চলবো! মানে বুঝেনই তো আপনি তো বেগানা মানুষ, আপনের সামনে তো মুখ খুলন যায় না! তয় স্ত্রী লোক হইলে তো আর সেই সমস্যাটা নাই হেহে!"
স্ত্রী লোক ছাড়া মুখ না দেখানোর ব্যাপারটা শমসের মিয়াকে নাড়া দিলো। বউটা বুঝি সত্যিই পর্দা-পুশিদা মেনে চলে। তবু সাবধানের মার নেই ভেবে শমসের মিয়া তার রুটিন করা দ্বিতীয় প্রশ্ন ঝাড়লেন, "অইসব হইবো কিন্ত কাবিন নামার কপি সাথে লয়া আইছেন?"। নিমিষেই ব্যাগ খুলে কাবিন নামা হাতে ধরিয়ে দিল ছোকরা।
কাবিন নামায় চোখ বোলালেন শমসের মিয়া। বর- মাশফিক রহমান, কনে-তামান্না রহমান, দেনমোহর- এক লাখ টাকা। নাহ! কিছু একটা মিলছে না, শমসের মিয়ার মনে খটকা। আধুনিক নাম, পোশাক আষাকেও গরিবী ভাব অনুপস্থিত অথচ কথা বার্তায় গ্রাম্য ভাব। "কি করেন আপনে?", তৃতীয় প্রশ্নটা ঝাড়লেন শমসের মিয়া। "আপাতত কিছু করি না চাচা। আমার বাবায় ম্যালা দেনা কইরা ফালাইছিলো! গ্রামে ভিটামাটি যা ছিলো সব বেইচা ধার দেনা শোধ করার পর হাতে তেমন কিছুই ছিলো না। হাতে যা ছিলো তা নিয়া ঢাকা শহরে আইছি কামের খোজে!"
এই ঘটনা পুরনো হলেও অবিশ্বাস্য নয়। এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে। আর নামের ব্যাপারটা ধরতে গেলে স্মার্টফোনের যুগ, নিজেই যেন নিজেকে বুঝ দেন শমসের মিয়া। নাটক সিনেমা দেখে আজকাল সবাই জামাকাপড়ে আধুনিক, নাম হয়তো কোন শিক্ষিত আত্নীয়র দেয়া। তবুও সাবধানের মার নেই ভেবে গলা চড়ালেন তিনি, "বিউটি ও বিউটি!" বিউটি আর কেউ না বরং তার স্ত্রী, মইদুল ব্যাপারীর একমাত্র কন্যা। ডাক শুনে বাইরে বেরিয়ে এলো বিউটি। বিউটি সত্যিই বিউটিফুল; বয়স চল্লিশের কোঠায়, দুধে আলতা গায়ের বরণ, মাঝারি ধাচের টাইট ফিগার। এলাকার অনেকেই কুদৃষ্টিতে তাকায় তার স্ত্রীর দিকে এটা শমসের মিয়া ভালো করেই জানেন অথচ এই মাশফিক ছোকরা একবার মাথা তুলেই চোখ নামিয়ে নিল। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগল শমসের মিয়ার। "ওনারা বাড়ি ভাড়ার লিগা আইছেন, বেগানা পুরুষের সামনে মুখ খুলব না। ঘরের ভিতরে ওনারে নিয়া মুখটা আইডি কার্ডের সাথে মিলায় নেও", বললেন শমসের মিয়া। তাই করলেন বিউটি।
"ঠিক আছে", মিনিটের ব্যাবধানে বললেন বিউটি। পরিচয় পত্রের বাধা কেটে গেছে তাই ভাড়া ঠিক করে ঘরের দরজা খুলে বাসা বুঝিয়ে দিলেন শমসের মিয়া। বাসা বুঝিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলেন তিনি। " বউটা সোন্দর, তয় বয়সটা একটু বেশি মনে হইল" প্লেটে ভাত উঠিয়ে দিতে দিতে বললেন বিউটি। অবাক হলেন শমসের মিয়া, স্ত্রী সাধারনত তেমন কথা-বার্তা বলেন না তার সাথে, গ্রামের এই নব দম্পতিকে দেখে বুঝি বিউটি বেগমের মন কিছুটা নরম হয়েছে। "বয়সে কি আসে যায়! ভালোবাসাটাই আসল", বললেন শমসের মিয়া। তার কথাতে ধপ করে ভাতের গামলা নামিয়ে রেখে বিউটি বেগম হাটা ধরলেন। বোকার মতো একা বসে ভাত মুখে পুরতে লাগলেন শমসের মিয়া।
(শমসের মিয়ার দৃষ্টিকোন থেকে)
"ইনি কে?!" সন্দেহঘন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন শমসের মিয়া। বাড়ি ভাড়ার ব্যানার ঝোলানোর পর থেকে রোজই কেউ না কেউ ভাড়া চাইতে আসে। দেখে শুনে নাকচ করে দেন তিনি। ধর্ম কর্ম দুনিয়া থেকে উঠে গেলেও তার বাসা থেকে উঠছে না যতোদিন তিনি জীবিত আছেন! বয়স তো আর কম হল না, কর্ম ফলের কথাও ভাবতে হবে! বছরের পর বছর মাছের আড়তে সকাল সন্ধ্যা খাটতে খাটতে আড়ত মালিক মইদুল ব্যাপারীর চোখে পড়ে যান তিনি। কর্মঠ শমসের মিয়ার আনুগত্যে মুগ্ধ হয়ে তার হাতে একমাত্র মেয়ে এবং যাবতীয় পার্থিব সম্পত্তি দান করেন মইদুল ব্যাপারী। আড়ত মালিকের সুন্দরী কন্যার এই বিয়েতে রাজি না হলেও বাবার মতামতের বিরুদ্ধে কিছু বলার ছিলো না তার। বিয়ের পর শমসের মিয়া যখন দেখলেন সংসারে স্ত্রীর অনীহা; কষ্ট পেলেও নিজের দরিদ্র দিনের কথা ভেবে দিব্যি হজম করে গেলেন সব। ব্যবসাতে সব মনোযোগ ঢেলে দিলেন তিনি।
তারপরে অনেক দূর এসেছেন শমসের মিয়া। মাছের ব্যাবসা বাদ দিয়ে বাড়ীওয়ালার খাতায় নাম লিখিয়েছেন। পুরান ঢাকার এদিকটাতে নিম্ন আয়ের মানুষ জন থাকে, যারা ঠিক দিন আনি দিন খাই ঘরানার নয় আবার নিম্ন মধ্যবিত্তের চাইতেও নিম্ন মানের। স্থানীয় কতৃপক্ষকে ঘুষ সরবরাহ করে নকল কাগজ বানিয়ে নেবার পর সরকারী জমিতে টিনশেড এই বাড়িগুলো বানানো হয়। শুধু শমসের মিয়া না, অনেকেই এই কাজ করে। বাড়িগুলোর দেওয়াল খুব শক্তপোক্ত না হলেও নেহায়েৎ ফেলে দেবার মতো নয়, টিনের চালে ফুটো নেই, বিদ্যুতের সংযোগ আছে। সব মিলিয়ে এই পাড়াটাকে উন্নত মানের বস্তি বলা যেতে পারে। সাধারনত এই ধরনের বাড়ীর মালিকরা ভাড়াটিয়াদের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে মাথা না ঘামালেও শমসের মিয়া হলেন ব্যতিক্রম। স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে ওসব নষ্টামি করবে আর মাস গেলে চোখ বুজে ভাড়াটা পকেটে ভরবেন এমন চরিত্র উনি নন। আজকাল এসবে দেশ ভরে গেছে! তাছাড়া দেখলেই বোঝা যায় এসব জুটিকে, সমবয়সী; প্রকৃত স্বামী স্ত্রীর চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব, চালচলন ভাসা ভাসা, ঘন ঘন আসা যাওয়া। এসব ঢের দেখা শমসের মিয়ার, তাই সামনে দাঁড়ানো জুটিকে দেখে বিশেষ উৎসাহ বোধ করলেন না তিনি। নিয়মিত করা বদমেজাজী রুটিনটাই চালিয়ে দিলেন।
"আমার বউ", দেঁতো হাসি দিয়ে বলল ছোকরা। "ও তো অনেক পর্দা কইরা চলে তাই মুখ ঢাইকা রাখছে। সমস্যা নাই চাচা, কাগজ পাতি, কাবিন নামা যা যা লাগে সবই আছে। আর আপনি যদি ভোটার আইডির ছবির সাথে মিলায় দেখবার চান তাইলে চাচীরে ডাক দেন। চাচী না থাকলে বাসায় যদি অন্য স্ত্রী লোক থাকে তাইলেও চলবো! মানে বুঝেনই তো আপনি তো বেগানা মানুষ, আপনের সামনে তো মুখ খুলন যায় না! তয় স্ত্রী লোক হইলে তো আর সেই সমস্যাটা নাই হেহে!"
স্ত্রী লোক ছাড়া মুখ না দেখানোর ব্যাপারটা শমসের মিয়াকে নাড়া দিলো। বউটা বুঝি সত্যিই পর্দা-পুশিদা মেনে চলে। তবু সাবধানের মার নেই ভেবে শমসের মিয়া তার রুটিন করা দ্বিতীয় প্রশ্ন ঝাড়লেন, "অইসব হইবো কিন্ত কাবিন নামার কপি সাথে লয়া আইছেন?"। নিমিষেই ব্যাগ খুলে কাবিন নামা হাতে ধরিয়ে দিল ছোকরা।
কাবিন নামায় চোখ বোলালেন শমসের মিয়া। বর- মাশফিক রহমান, কনে-তামান্না রহমান, দেনমোহর- এক লাখ টাকা। নাহ! কিছু একটা মিলছে না, শমসের মিয়ার মনে খটকা। আধুনিক নাম, পোশাক আষাকেও গরিবী ভাব অনুপস্থিত অথচ কথা বার্তায় গ্রাম্য ভাব। "কি করেন আপনে?", তৃতীয় প্রশ্নটা ঝাড়লেন শমসের মিয়া। "আপাতত কিছু করি না চাচা। আমার বাবায় ম্যালা দেনা কইরা ফালাইছিলো! গ্রামে ভিটামাটি যা ছিলো সব বেইচা ধার দেনা শোধ করার পর হাতে তেমন কিছুই ছিলো না। হাতে যা ছিলো তা নিয়া ঢাকা শহরে আইছি কামের খোজে!"
এই ঘটনা পুরনো হলেও অবিশ্বাস্য নয়। এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে। আর নামের ব্যাপারটা ধরতে গেলে স্মার্টফোনের যুগ, নিজেই যেন নিজেকে বুঝ দেন শমসের মিয়া। নাটক সিনেমা দেখে আজকাল সবাই জামাকাপড়ে আধুনিক, নাম হয়তো কোন শিক্ষিত আত্নীয়র দেয়া। তবুও সাবধানের মার নেই ভেবে গলা চড়ালেন তিনি, "বিউটি ও বিউটি!" বিউটি আর কেউ না বরং তার স্ত্রী, মইদুল ব্যাপারীর একমাত্র কন্যা। ডাক শুনে বাইরে বেরিয়ে এলো বিউটি। বিউটি সত্যিই বিউটিফুল; বয়স চল্লিশের কোঠায়, দুধে আলতা গায়ের বরণ, মাঝারি ধাচের টাইট ফিগার। এলাকার অনেকেই কুদৃষ্টিতে তাকায় তার স্ত্রীর দিকে এটা শমসের মিয়া ভালো করেই জানেন অথচ এই মাশফিক ছোকরা একবার মাথা তুলেই চোখ নামিয়ে নিল। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগল শমসের মিয়ার। "ওনারা বাড়ি ভাড়ার লিগা আইছেন, বেগানা পুরুষের সামনে মুখ খুলব না। ঘরের ভিতরে ওনারে নিয়া মুখটা আইডি কার্ডের সাথে মিলায় নেও", বললেন শমসের মিয়া। তাই করলেন বিউটি।
"ঠিক আছে", মিনিটের ব্যাবধানে বললেন বিউটি। পরিচয় পত্রের বাধা কেটে গেছে তাই ভাড়া ঠিক করে ঘরের দরজা খুলে বাসা বুঝিয়ে দিলেন শমসের মিয়া। বাসা বুঝিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলেন তিনি। " বউটা সোন্দর, তয় বয়সটা একটু বেশি মনে হইল" প্লেটে ভাত উঠিয়ে দিতে দিতে বললেন বিউটি। অবাক হলেন শমসের মিয়া, স্ত্রী সাধারনত তেমন কথা-বার্তা বলেন না তার সাথে, গ্রামের এই নব দম্পতিকে দেখে বুঝি বিউটি বেগমের মন কিছুটা নরম হয়েছে। "বয়সে কি আসে যায়! ভালোবাসাটাই আসল", বললেন শমসের মিয়া। তার কথাতে ধপ করে ভাতের গামলা নামিয়ে রেখে বিউটি বেগম হাটা ধরলেন। বোকার মতো একা বসে ভাত মুখে পুরতে লাগলেন শমসের মিয়া।