Thread Rating:
  • 135 Vote(s) - 3.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
রাত থেকে পিকলুর গা গরম। জ্বর জ্বর ভাব। রমা মাথায় জল পট্টি দিচ্ছে অনবরত। আঙুলগুলো আবার শিথিল হয়ে যাচ্ছে। মাথার মধ্যে কিছু ঢুকছে না পীযুষের। ডাক্তার বাবু আবার একবার এসে দেখে গেছেন। বলে গেছেন প্রয়োজন হলে হাসপাতালে আবার ভর্তি করতে হতে পারে।

খাওয়া দাওয়ায় করেনি তখনও রমা। পীযুষ রাতের খাবার সেরে ছেলের পাশে এসে বসল। বলল---রমা তুমি এবার যাও। খেয়ে এসো।

রমার মুখটা শুকিয়ে গেছে। খুব চিন্তিত মুখে বলল---ডক্টরের মেডিসিন কি আদৌ কাজ করছে? নাকি হিতে বিপরীত হচ্ছে!

---তুমি আগে খেয়ে এসো তো। তারপর ভাবা যাবে। পীযুষ রমাকে বাধ্য করল।

রমা খাবার টেবিলে বসে কোনরকমে রুটি ছিঁড়ে ঝোলের বাটিতে ডুবিয়ে খেতে লাগলো। মুখে অরুচি তারও। ছেলেটাকে চোখের সামনে আবার অসুস্থ হতে দেখতে পারছে না ও।

পীযুষও খেয়াল করল অঘোরে ঘুমোচ্ছে পিকলু। থার্মোমিটার দিয়ে দেখল একশো তিন জ্বর। ডক্টরের প্রেসস্ক্রিবশনে কোনো জ্বরের মেডিসিন লেখা নেই। কিন্তু এখন জ্বরের ওষুধ না দিলে যে জ্বর নামবে না।

স্বামী-স্ত্রী মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে রইল ছেলের পাশে। পীযুষ এর মাঝে বারবার পায়চারি করেছে ব্যালকনিতে। একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়েছে। রাত্রি দু'টা নাগাদ খেয়াল করলো ছেলের পাশেই রমা ঘুমিয়ে পড়েছে। থার্মোমিটার দিল পিকলুর বগলে আবার। এবার জ্বরটা খানিক নেমেছে। পীযুষ রমাকে ডাকলে রমা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল, দেখল স্বামীর হাতে থার্মোমিটার ধরা। বললে---কত দেখাচ্ছে?

---নিরানব্বই।

ভোর রাত থেকে পিকলুর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে রমাই প্রথম খেয়াল করল, ঘুম ভাঙার পর থেকে পিকলু আর স্বাভাবিক কথা বলতে পারছে না। যেটুকু মাত্র জড়তা ছিল, সেটা এখন আরও বেড়ে ঠিক অসংলগ্ন ধরণের হয়ে উঠেছে। পীযুষকে ডেকে বিষয়টা রমা দেখালো। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে ছেলেটা। কথা বলতে গেলে কষ্ট হচ্ছে। সকালে ব্লাড স্যাম্পল নিয়ে গেছে প্যাথলজির ছেলেটা। ব্লাড রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে।

আজ পীযুষ কলেজে যায়নি। দুজনেই পালা করে ছেলের কাছে রইল। এর মাঝে স্নান খাওয়াটা কোনরকমে সেরে নিয়েছে ওরা। ব্লাড রিপোর্ট পৌঁছল দুপুর দুটো নাগাদ। পীযুষ চোখ বুললো একবার রিপোর্টে। ভালো ঠেকলো না তার। রমাও খানিকটা এই ব্লাড রিপোর্ট বিষয়টা বোঝে। অত্যধিক প্রোটিন মাত্রা রয়েছে রক্তে। যেটা মূলত নিউরোটক্সিন যে সেটা রমাও বুঝতে পারছে। বললে---তার মানে এখনো ভেনম রয়েছে। শম্ভু ঠিক এটাই বলছিল। এত সহজে এই বিষ শরীর থেকে মুক্ত হবে না। ডক্টর বিশেষ কিছু করতে পারবেন বলে মনে হয় না।

এমনি সময় হলে এই কথার কোনো গুরুত্ব পীযুষের কাছেও থাকতো না। গত দু-আড়াই সপ্তাহ ধরে ঘটনাপ্রবাহ পীযুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে।

ডক্টর এলেন সাড়ে চারটে নাগাদ। রিপোর্ট দেখলেন, রুগীকেও দেখলেন। খুব একটা আশাবাদী দেখা গেল না তাঁকে। রমা এমনিতেই আর ডক্টরের ওপর একেইবারেই আশা রাখছে না। তাকে যে করেই হোক পিকলুকে শম্ভুর কাছে নিয়ে যেতে হবে। যে কোনো মূল্যে সে ছেলেকে সুস্থ করতে চায়।

গাঢ় বেগুনি নাইটিটা পরে এলোমেলো খোঁপায় রমা দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যালকনিতে। ওর চোখ নিবদ্ধ উল্টো দিকের লাল হয়ে আসা সূর্যাস্তের দিকে। পীযুষ গম্ভীর ভাবে রমার পাশে এসে দাঁড়ালো। স্পষ্টতই ও রমার চোখে দেখতে পাচ্ছে এক দৃঢ়চেতা মনোভাব।

পীযুষ ডাক্তারের নির্দেশ মত বললে---পিকলুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। খুব একটা দেরী করে লাভ নেই।

রমা ঝাঁঝিয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ---লাভ কিচ্ছু হবে না। ছেলেটাকে চোখের সামনে এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখতে থাকবো, আর কিচ্ছু নয়।

---রমা, আর তো কোনো বিকল্প পথ নেই। তুমি চাইলেই তো এখন ওই বেদেকে দেখাতে পারবে না। ওর ওখানকার গ্রাম্য সমস্যা তো তুমি দেখে এসেছো। কোনো সুরাহা আছে কি? ঐ বেদেকে যে বাড়ি এনে রাখা যাবে তার উপায় নেই। ওর নাকি ঐ সুন্দরবনে ওষুধ মেলে! তাজ্জব!

পীযুষের বক্তব্যে রুমা তীক্ষ্ণ ভাবে বললে---কেন তোমার ছেলে অসুস্থ হলে কি হাসপাতাল বাড়ি পৌঁছে যায়? মেডিসিনের দোকান বাড়িতে এসে হাজির হয়? তাহলে শুধু শম্ভুর বেলায় এমন কেন ভাবছ? ও না থাকলে কবেই...

রমা ফুঁপিয়ে উঠল। পীযুষ রমাকে বুকে চেপে শান্ত করে বললে---কিছু তো একটা উপায় বার করতে হবে।

রমা কান্না থামিয়ে বললে---ওরা চায় শম্ভু যদি বিয়ে করে আমাকে রাখে তাহলে আপত্তি নেই। সেরকম হলে...

পীযুষ বিস্মিত হল। এই চরম মুহূর্তেও হেসে ফেলল ও। বললে---পাগল হয়ে গেলে নাকি রমা!

রমা বলল---যা ভাবতে পারো। ছেলেটাকে বাঁচাতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। ষষ্ঠীকে ফোন করেছিলাম। বললাম ওর বাড়িতে যদি আশ্রয় পাওয়া যায়। ও বলল দিদিমনি এই এলাকায় আপনি থাকলেই ওরা শম্ভুকে সন্দেহ করবে, বড্ড বদ লোক ওরা। শম্ভুর ওপর আক্রমণ করবে। কাজেই আমার মনে হয় একটাই পথ, ওখানে কিছুদিন শম্ভুর স্ত্রী হিসেবে মিথ্যে পরিচয়ে থাকা।

রমার এবারের কথাগুলো শুনে পীযুষ বুঝতে পারছে রমা আবেগতাড়িত হলেও সে খুব সিরিয়াসভাবেই বলছে। ছেলেকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় বলে তার এই মনে হওয়াটা যদিও বড্ড অযৌক্তিক। তাই পীযুষ বললে---রমা পিকলুর এই অবস্থা দেখে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই অমন আবোল তাবোল বলছ। এটা কোনো যৌক্তিক কথা নয়।

রমা রাগত স্বরে বললে---তোমার এই যৌক্তিক, অযৌক্তিকতার বেড়াজালে পড়ে থাকলে আজ পিকলুকে আমরা দেখতে পেতাম না।
তারপর সুর নরম করে রমা পুনরায় বললে---তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না? শুধু ছেলের জন্য একটা নকল পরিচয় সামনে এনে যদি ছ'টা মাস ওখানে থাকি, কি ক্ষতি হয়ে যাবে? আমাদের ছেলের জীবনের চেয়ে বড় ক্ষতি আর কি আছে? আর শম্ভু? শম্ভু ছেলেটা মোটেই অসভ্য নয়। তুমি ওকে দেখনি হয়ত, ও বড্ড শ্রদ্ধা করে আমাকে। একটা নিতান্তই নাটক করতে পারি না, শুধু ঐ গ্রামে থেকে আমাদের ছেলেকে ভালো করে তুলতে?

পীযুষ বুঝতে পারছে না এখন, কোনটা যৌক্তিক আর কোনটা অযৌক্তিক! রমা এখন পিকলুকে বাঁচাতে মরিয়া। তাই ভালো-মন্দ বিচার করবার ক্ষমতা সে হারিয়েছে। পীযুষও তো ছেলের জীবন ফিরে পেতে চায়। তাদের ছেলেটা স্কুলে যাবে, আবার খেলবে, দৌড়বে, সুইমিং ক্লাবে সাঁতার কাটবে, এ তো তারও ইচ্ছে। কিন্তু এর জন্য রমাকে একটা নাটকীয় সম্পর্কে জড়াতে হবে একটা নিম্ন জনজাতির গ্রাম্য বেদের সাথে; এটা ভীষণই অসঙ্গতিপূর্ন। সঙ্গতিটা যে কি পীযুষও বুঝে উঠতে পারছে না।

সন্ধের দিকে রমাকে পিকুলর পাশে ঠায় বসে থাকতে দেখল পীযুষ। মাঝে মধ্যে এক দৃষ্টে জানলার দিকে বাইরে চেয়ে আছে। রমা জানে নিজের স্বামী পীযুষকে এমন একটা অদ্ভুত প্রস্তাব দেওয়া তার নৈতিকতাকে হানা দিচ্ছে বারবার। কিন্তু সত্যিই এখন এসব ভাববার মত তার পরিস্থিতি নেই। সে শুধু পিকলুকে সুস্থ দেখতে চায়।

আবার রমার মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব উদ্ভূত হচ্ছে না চেয়েও আচমকা, এমন প্রস্তাব সে শম্ভুকে দিলে শম্ভুই বা মানবে কেন! রমা দেখেছে শম্ভু যতই অশিক্ষিত রূঢ় ধরনের একটা মানুষ হোক, তার মধ্যে একটা অদ্ভুত দৃঢ়তা আছে, জেদ বা গোঁড়ামিও প্রচন্ড। রমা পরস্ত্রী, শম্ভু এমন মিথ্যে পরিচয় দিতে চাইবেই বা কেন! যদিও শম্ভুর মধ্যে একটি সুলক্ষণ সে দেখেছে। সেটি হল মানবিকতা। যদি এই মানবিকতার সৌজন্যেই শম্ভুকে রাজি করানো যায়। যত্ন নিয়ে সে পিকলুকে সুস্থ করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছে। নিশ্চই রমার মত সেও পিকলুকে বাঁচাতে নিছক একটা মিথ্যে পরিচয় দিয়ে গ্রামের ঐ বর্বর লোকগুলোকে খান্ত করে রাখতে রাজি হবে!

রমার হঠাৎ করে শম্ভুর ওপর একটা আস্থা তৈরী হল। এই আস্থাটি অনেক আগেই জন্ম হয়েছিল তার মধ্যে। কিন্তু আজ তার নিজের অন্তরস্থল থেকে বাহির হল ঐ বেদে যুবকের প্রতি একটা বিশ্বাস।

রাত বাড়ছে। পিকলু খানিক সুস্থ হয়েছে বটে, কিন্তু কথা বলা কার্যত অবরুদ্ধ হচ্ছে যত সময় যাচ্ছে। পীযুষও আর পিকলুকে হাসপাতালে ভর্তি করবার প্রস্তাব দেয়নি। রমা অপেক্ষা করছে ভোরের আলো ফোটার। পীযুষের একটা অস্বস্তি হচ্ছে, সেও এখন বিশ্বাসী শম্ভুই তার ছেলেকে আবার সুস্থ করে তুলবে। কিন্তু রমা তার প্রেমিকা, স্ত্রী কিংবা সন্তানের মা, সে নামমাত্র হলেও ক'দিনের জন্য পর পুরুষের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত হবে, হতে পারে তা কলকাতা থেকে সাড়ে তিনঘন্টা পথের দূরবর্তী একটি অখ্যাত গ্রামে। তবু যে রমা মৈত্র তার অর্ধাঙ্গিনী।
চলবে।
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 02-12-2023, 11:27 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)