29-11-2023, 08:15 PM
(This post was last modified: 02-12-2023, 06:58 PM by Neellohit. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দাদাভাইকে নিয়ে আসতে আসতে গাড়িতে সব শুনলাম , দাদাভাই কলকাতায় বিশ্ববিখ্যাত এক কেন্দ্রীয় সংস্থায় ডাক পেয়েছে ওদের সাথে ডিস্কাশনের ( আমাদের জন্য যেটা ইন্টারভিউ ) জন্য দাদাভাই এসেছে , যদি হয়ে যায় তাহলে দাদাভাই কলকাতায় চলে আসবে , বাড়িতে ঢুকে আমি অনলাইনে চাইনিজ খাবার অর্ডার করে দিলাম দাদাভাই ফ্রেস হয়ে নিলো আমিও ফ্রেস হয়ে দুই ভাই স্কচ নিয়ে বসলাম , তার আগে বৌদি আর জেঠিমার সাথে কথা হলো , জেঠিমা তো ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করেছে যাতে দাদাভাইয়ের কলকাতায় কাজটা হয়ে যায় , সত্যি বলতে কি আমি বৌদি আমরা সবাই চাই দাদাভাই সফল হোক , এই চাকরিতে এখনকার চাকরির থেকে রোজগার খুব বেশি বাড়বে না কিন্তু প্রেস্টিজ অনেক বেশি ড্রিংক করতে করতে দাদাভাইয়ের কথায় বুঝলাম এই চাকরিটা পাওয়া দাদাভাইয়ের কাছেও স্বপ্নপূরণ | খাবার এসে গ্যালো বেশি ড্রিংক করলামনা আমরা কারণ দাদাভাইকে সাক্ষ্যে উঠে রেডি হয়ে ন'টার মধ্যে পৌঁছতে হবে | পরেরদিন সকালে উঠে দাদাভাইকে সাত'টার মধ্যে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দিলাম ফ্রেঞ্চ টোস্ট আর কফি খেয়ে দাদাভাই আমাদের একটা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো একটা কপি চাবি দিয়ে দিলাম , আমি আবার একবার বিছানায় গিয়ে শুলাম ফোনটা বেজে উঠলো দেখলাম বৌদি ফোন করেছে '' কি'রে দিপু দাদাভাইকে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে খাইয়েছিস শুনলাম '' '' হ্যাঁ ঐখানে কি পাবে কতক্ষন লাগবে কিছুই তো জানিনা তাই খাইয়ে দিলাম '' '' বাব্বা তোর দাদাভাই তো তোর প্রসংশায় পঞ্চমুখ '' '' ধুস এতে প্রসংশার কি আছে ! '' '' আমায় তো কোনোদিন বানিয়ে খাওয়াসনি ?'' '' কলকাতায় চলে আসছো তো খাওয়াবো '' '' তোর মুখে ফুলচন্দন পড়ুক রে দিপু ভগবান করুক যেন ওর এই চাকরিটা হয়ে যায় '' '' আমার মন বলছে হয়ে যাবে , ইস আবার সবাই একসাথে থাকবো বলো '' বৌদি গলার স্বরটা নামিয়ে প্রায় ফিসফিস করে বললো বাচ্চাদুটো ওদের আসল বাবার আদর পাবে '' আমিচুপ করে রইলাম '' কিরে কিছু বলছিসনা যে '' '' হ্যাঁ ওদের নিয়ে খেলা করবো আরো অনেক কিছু করবো '' বৌদি আমার কথার ইঙ্গিত বুঝে বললো '' অসভ্য '' '' অনেক কিছু দিয়া আছে কিন্তু সব আদায় করে ছাড়বো কিন্তু '' '' আচ্ছা বাবা আচ্ছা '' | বৌদি ফোন ছাড়লো আর শুতে ইচ্ছা হলোনা উঠে পড়লাম হালকা ব্যায়াম করে নিজের জন্য কালো কফি বানিয়ে খেতে খেতে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম বাতাসে একটু ঠান্ডার আভাস ঘরে ঢুকে একটা টিশার্ট গলিয়ে নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পরপর দুকাপ কফি খেলাম একটা সিগারেট ধরিয়ে টানছি ফোনটা বেজে উঠলো , তুতুর ফোন '' কি'রে এতো সকালে ফোন করলি ?'' '' কি করছো ?'' '' দাদাভাই বেরিয়ে গ্যালো আমি কফি খেয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি , তুই কি করছিস ?'' '' গাঁড়ের যন্ত্রনা নিয়ে ছটফট করছি হাঁটে কষ্ট হচ্ছে মা জিজ্ঞেস করেছিল বললাম কোমরে হ্যাঁচকা লেগেছে আজ কলেজ যাবো না সবাই বেরিয়ে গেলে ঐখানে আইস প্যাক দিয়ে শুয়ে থাকবো '' '' খুব কষ্ট হচ্ছে রে সরি কাল কি'যে হলো তুইও বাধা দিলিনা '' ''সরি বলার কি আছে আমিও তো চেয়েছিলাম তুমি চিন্তা কোরোনা বিকেলের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে ... তুমি অফিস যাবে না ?'' '' হ্যাঁ দেরি আছে সবে তো ন'টা বাজে '' '' রাখলাম দীপুদা আমি হোমটাস্ক গুলো সেরে রাখবো '' বুঝলাম ঘরে কেউ এসেছে '' আচ্ছা রাখছি রে তুতু '' ফোন রেখে বাথরুমে ঢুকলাম সব সেরে একেবারে স্নান করে বেরোলাম , সুন্দরীমাসি এসে গ্যাছে বললাম দাদাভাই এসেছে ভালো করে মাটন সাথে পোলাও রাঁধতে , সুন্দরীমাসি আমাকেও ফ্রেঞ্চ টোস্ট করে দিলো খেয়ে চা খেয়ে আমি অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লাম , অফিসে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া এখন সেরকম কাজ নেই পুরোনো কিছু বকেয়া পাওনার ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকলাম কয়েকটা চিঠি করলাম বেলা বারোটা নাগাদ শ্যামল'দার সাথে কথা বলছি এমন সময় দাদাভাইয়ের ফোন এলো '' কি হলো দাদাভাই ? অল ওকে ?'' '' ইএসসস হয়ে গ্যাছে সামনের মাসেই জয়েনিং '' '' বৌদিকে জেঠিমাকে বলেছো ?'' '' তোকে আগে বললাম এবার ওদের বলবো '' আনন্দে আমার চোখে জল এসে গ্যালো , শ্যামল'দা দেখে জিজ্ঞেস করলো '' কি হয়েছে রে ?'' শ্যামল'দাকে সব বললাম '' বাহ্ খুব ভালো খবর তো রে '' '' হ্যাঁ গো আবার সবাই একসাথে থাকবো '' | শ্যামলদাকে বলে বেরিয়ে পড়লাম বাড়িতে ঢোকার আগে কয়েকটা বিয়ারের বোতল নিয়ে নিলাম , বাড়িতে ঢুকে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিলাম , দাদাভাইয়ের আসতে একটু দেরি হলো , এসে বললো '' বুঝলি ভাই কিছু ফর্মালিটি সেরেই এলাম যাতে ঐখান থেকে রিলিজ পেতে অসুবিধা না হয় '' '' ভালো করেছো জেঠিমার সাথে কথা হলো বৌদির সাথেও খুব খুশি ওরা '' ওখানকার পাট চুকিয়ে এবার এখানেই পাকাপাকি থাকবো , জানিস ভাই আমি নিজেই এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না '' '' পাট চোকাবে মানে ?'' '' বাড়িটা বেঁচে দেব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব '' '' এতো তাড়াহুড়ো কিছু নেই তো তাড়াহুড়ো করলে ঠকতে হবে , এখানে এসে ধীরে সুস্থে যা করার কোরো '' '' বুঝেছি তুই যা করার করিস তোর দায়িত্ব রইলো '' | দুপুরে দাদাভাই ফিরে আমায় বললো '' দিপু চলতো মায়ের ঘরে কিছু কাজ আছে '' , দুজনে ঘরে ঢুকলাম দাদাভাই জেঠিমার ড্রয়ার থেকে আলমারির চাবি বার করে আলমারি খুললো লকার খুলে হাত বাড়িয়ে খুঁজলো যা খুঁজছিলো না পেয়ে জেঠিমাকে ফোন করলো '' মা কৈ কিছু তো দেখছিনা '' জেঠিমা কি বললো বুঝলামনা দাদাভাই ভিডিও কল করে ফোনটা আমায় দিলো জেঠিমা আমায় বললো আলমারিতে লকারের ভিতরে একটা গোপন কুঠুরি আছে সেটা খোলার জন্য একটা ছিটকিনি আছে , জেঠিমার নির্দেশ অনুযায়ী সেই গোপন কুঠুরি খোলা হলো দাদাভাই তখন হাত ঢুকিয়ে একটা খাম বার করে তার ভিতরের কাগজপত্র বার করলো , আমি দেখে যা বুঝলাম দুটো দলিল , জেঠিমাকে দেখতে জেঠিমার মুখে হাসি ফুটলো বললো '' হ্যাঁ এইটাই , আলমারি বন্ধ করে দিপুকে সব বুঝিয়ে দে '' ফোন কেটে আমি আর দাদাভাই আবার আমার ঘরে ফিরে এলাম , বিয়ার খেতে খেতে দাদাভাই যা বললো তা হলো , জেঠুমনি বাবাকে একটা জমি কিনে দিয়েছিলো , নিউটাউনে মেইন রোডের পাশে দেড় বিঘার কমার্শিয়াল প্লট ' বাবা সেই জমি উইল করে গ্যাছে বাড়ির দুই বৌয়ের নামে অর্থাৎ ওই জমির মালিকানা হবে বৌদি এবং আমার বৌ ( যে হবে ) এই দুজনের নামে , এখন আমার আর দাদাভাইয়ের দায়িত্ব হলো ওই জমি সরকারের থেকে দখল নেওয়া রেজিস্ট্রি করা ইত্যাদি , দাদাভাই বললো '' চিন্তা করিসনা আমি কলকাতায় ফিরি তারপর দুজনে মিলে কাজটা করবো আমার বন্ধু আছে ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি ওকে বলে দিচ্ছি তুই গিয়ে দেখা করে কাজটা এগিয়ে রাখ '' দাদাভাই কাউকে একটা ফোন করে বিষয়টা বললো শেষে বললো আমার যাওয়ার কথা , যা বুঝলাম ফোনের ঐপাড়ের মানুষটি দাদাভাইকে আস্বস্ত করেছে সাহায্যের ব্যাপারে | আমায় ওনার সব ডিটেইল দিয়ে দিলো দাদাভাই আমিও কথা বললাম বলে আমিও আস্বস্ত হলাম |রাতে দুই ভাই খুব মজা করলাম শ্যামলদাকেও ডেকে নিয়েছিলাম , মিলিবৌদি রান্না করে এনেছিল বাটার চিকেন আর রুটি অনেক রাত অব্দি আড্ডা হলো আমি ওদের অত রাতে আর যেতে দিলামনা আমার বাড়িতেই থেকে গ্যালো | সকালে ঘুম ভাঙলো বেলা করে মিলিবৌদি চা করে সবাইকে ডাকলো চা খেয়ে পাড়ার মিষ্টির দোকানে বললাম কচুরি আর জিলিপি দিয়ে গ্যালো খেয়ে স্নান করে দাদাভাই রেডি হতে শুরু করলো আমি বললাম দুপুরের লাঞ্চ করতে কিন্তু রাজি হলোনা বললো '' এতগুলো কচুরি খেয়ে আর কিছু খাওয়া যায় ? দরকার হলে ফ্লাইটে কিছু খেয়ে নেবো '' , পরেরদিন দাদাভাইকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে এলাম আর অফিসে গেলামনা বাড়িতে চলে এলাম |