28-11-2023, 01:43 AM
(This post was last modified: 28-11-2023, 01:47 AM by Topuu. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
পর্বঃ ৭
ডেভলপার কোম্পানির যে প্রজেক্ট নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটা সেলিম চৌধুরীর ওয়ার্ডে পড়েছে। তার মানে ওখানকার রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে সেলিম চৌধুরীর একটা সম্মান আছে। এটা একটা গুড সাইন। সেলিম চৌধুরীর একটা কাজে সহযোগিতা করেছিলেন ফিরোজ। একটা রাজনৈতিক ঝামেলায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে ফেবার দিয়েছিলেন। তারপরই ওই অঞ্চলে সেলিম চৌধুরীর অবস্থান সুসংহত হয়েছে। বর্তমানে ওই ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি তিনি। ফিরোজ ঠিক করলেন এই বিষয়ে কথা বলতে সেলিম চৌধুরীর সাথে দেখা করবেন।
সেলিম চৌধুরীর বাসায় পৌঁছে দেখতে পেলেন তিনি এখনো ঘুম থেকে ওঠেননি। বেলা তখন এগারোটা বাজে। দশতলা আলিশান বাড়ি সেলিম চৌধুরীর। দোতলায় থাকেন তিনি পরিবারসহ। আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর গ্রাউন্ড ফ্লোর ব্যবহার করেন রাজনৈতিক কাজে৷ বাকি ফ্লোরগুলো ভাড়া দেওয়া।
ফিরোজ ড্রইং রুমে বসে পত্রিকা পড়তে শুরু করলেন। সেলিম চৌধুরীকে খবর দেওয়া হলো। একটু পরই একটা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে তিনি ড্রইং রুমে উপস্থিত হলেন। ফিরোজকে সালাম দিলেন তিনি। তারপর বললেন- 'কি খবর ফিরোজ সাহেব। কেমন আছেন?' ফিরোজ সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- 'ভালো আছি ভাই। অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ নাই। তাই ভাবলাম একটু দেখা করে আসি।'
'আপনাদের যে কাজ তাতে অহেতুক কোথাও যাওয়াও তো মুশকিল। তা আমার কাছে কি দরকার এখন? চা খেতে যে আসেন নাই, তা তো নিশ্চিত।'
'আসলে ভাই, আপনি হয়তো জানেন, ফোরকান বিল্ডার্স আপনার এলাকাতে একটা শপিং মল তৈরি করছে। এখন এলাকার পলিটিক্যাল ছেলেপেলেরা নাস্তার টাকা চায়। কিন্তু ওদের যে ডিমান্ড তা তো দেওয়া সম্ভব না। কোম্পানির এমডি কাল অফিসে আসছিলো অভিযোগ করতে। তাই ভাবলাম এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আপনার সাথে পরামর্শ করি।'
'আচ্ছা। বিষয়টা আমিও শুনেছি। পাঁচ কোটি না দিক, দুই কোটি দিক। তাহলেই তো হয়। ওদের টাকা দেওয়া ছাড়া তো কাজ করতে পারবে না।' সেলিম চৌধুরী বললেন।
'কিন্তু এমডি বলছে এতো টাকা দিলে তাদের প্রজেক্ট লসের খাতায় চলে যাবে। ন্যুনতম প্রফিট না হলে কাজ তো করা যায় না'
'তা উনি কতো দিতে চায়?'
'ত্রিশ লাখ।'
'মাত্র? এই টাকায় তো একদিনের পিকনিকের খরচই হবে না পোলাপানের।' পোলাপানের কথা বললেও আসলে টাকা যে কার কাছে আসবে বুঝে ফেলেছেন ফিরোজ। তাই কথাবার্তায় সতর্ক হয়ে গেলেন। বললেন- 'সেলিম ভাই, সামনে নির্বাচন। এই সময় এমন কাজ করা ঠিক হবে না যাতে দলের বদনাম হয়। এই খবর মিডিয়ার কানে গেলে নির্বাচনের আগে ইমেজ ঠিক রাখার জন্য দল যে কাউকে বলি দিয়ে দিতে পারে। সেখানে আপনি তো একটা ওয়ার্ডের নেতা মাত্র। এসপি স্যারও বিষয়টা জানেন। এবং আমাকে তিনি পাঠিয়েছেন আপনার সাথে ডিল করতে। তিনি চান আপনি ওদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।' সত্য মিথ্যা মিশ্রিত করে নিজের মনমতো গল্প সাজালেন ফিরোজ। সেলিম চৌধুরী একটু ভাবলেন। তারপর বললেন- 'ঠিক আছে। আপনারা যখন বলছেন, আমি আর কথা বাড়াবো না৷ আর এইসব টাকা পয়সা তো আমি খাইনা। ছেলেপেলে ক্লাব, পার্টি চালানোর জন্য নেয় আরকি। বোঝেনই তো, রাজনীতি করতে গেলে কতকিছু পুষতে হয়।'
'সেতো বুঝিই। পুলিশ আর রাজনীতিবিদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। আপনাকে আমার ভালো লাগে এইজন্য যে আপনি বিষয়টা বোঝেন।'
সেলিম চৌধুরীর সাথে কথা শেষ করে অফিসে যান ফিরোজ। ফোরকান বিল্ডার্সের এমডিকে ফোন দিয়ে বলেন কাজ হয়ে গেছে। ছেলেদের ত্রিশ লাখ দিলেই হবে৷ আর তার ত্রিশ লাখ যেন আজ রাতে ক্যাশে দেওয়া হয়।
অনেকদিন পর ফিরোজ সাহেবের মন আজ ফুরফুরে। মোটা অংকের একটা ডিল সম্পন্ন করা গেছে। তাও আবার নিজের একক প্রচেষ্টায়। লাস্ট এরকম একটা ডিল করেছিলেন বীরেন বাবুর খুনের পর। কিন্তু সেই টাকার ভাগ তাকে উপর মহলের অনেককেই দিতে হয়েছিলো। সেই ডিলে অবশ্য টাকার পরিমাণও বেশি ছিলো। বাসায় ফিরে বউকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গেলেন তিনি। মন মেজাজ ভালো থাকলে আফরিনকে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে যান। স্বামী হিসেবে বেশ রোমান্টিক বলা যায় তাকে। সন্ধ্যার শো। রাত ১০ টার মধ্যেই শো শেষ হয়ে গেলো। এরপর একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করলেন দুজন। খাওয়া শেষ করে গাড়িতে ওঠার সময় একটা ফোন আসলো তার। ফোন রিসিভ করে তিনি শুধু বললেন, আসছি। আফরিনকে একটা সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়ে বললেন- 'তুমি বাসায় চলে যাও। অফিস থেকে জরুরি কল এসেছে। যেতে হবে এখনই।' আফরিনের কাছে বিষয়টা নতুন না। পুলিশের চাকরি। যখন তখন তলব পড়ে। তার বাবাকেও দেখেছে এভাবে যখন তখন অফিসে যেতে। তাই কোনো প্রশ্ন না করে সিএনজিতে করে বাসায় চলে গেলো সে।
ফিরোজ সাহেব গাড়ি নিয়ে অফিসের দিকে যাওয়া শুরু করলেন। একটু পরই তার গাড়ির মুখ ঘুরে গেলো। সাত মসজিদ রোডের জ্যাম ঠেলে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় পার হয়ে তার গাড়ি ছুটলো বসিলার দিকে। বসিলা ব্রিজের ঠিক মাঝখানে পৌঁছে তিনি দেখতে পেলেন একটা কালো মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। ফিরোজের গাড়িটা ওই গাড়ির পিছনে গিয়ে থেমে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়ালেন তিনি। মাইক্রোবাস থেকে একটা তিরিশ বত্রিশ বছরের যুবক নামলো। তার হাতে একটা ব্রিফকেস। ফিরোজের হাতে ব্রিফকেসটা দিতে দিতে যুবক বললো- 'আমি এমডি স্যারের পিএস। এখানে তিরিশ লাখ আছে। চলি।' আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো ছেলেটা। সোজা বসিলার দিকে চলে গেলো। ফিরোজ ব্রিফকেস নিয়ে গাড়িতে বসলেন। টাকাগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে না দেখতে পারলে ভালো লাগছে না তার। ব্রিফকেস খুলতেই কড়কড়ে এক হাজার টাকার নোটগুলো তাকে সাদর সম্ভাষণ জানালো। পৃথিবীতে দুটো জিনিসের ঘ্রাণ হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর। একটা হচ্ছে গরম ভাত, আরেকটা টাকা। ফিরোজ দুই হাতে টাকাগুলো নিয়ে ঘ্রাণ নিলেন। আনন্দে বুকটা ভরে উঠলো তার।
ফিরোজের গাড়ি ছুটছে ব্রিজের উপর দিয়ে বসিলার দিকে। বসিলার পার হয়ে ইউটার্ন নিতে দেখা গেলো না গাড়িটাকে। বরং সেটা এগিয়েই যাচ্ছে। যেতে যেতে কলাতিয়া, হযরতপুর পার হয়ে হেমায়েতপুর দিয়ে উঠলো। তারপর ঢাকা আরিচা হাইওয়ে ধরে এগিয়ে চললো সাভারের দিকে। সাভারের উলাইল এলাকায় পৌঁছে বামে মোড় নিলো গাড়িটা। কিছুদূর গিয়ে দেখা গেলো একটা আন্ডার কনস্ট্রাকশন বাড়ি। চারপাশে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রায় পনেরো কাঠা জায়গা নিয়ে বাড়িটার সীমানা। তিনতলা কমপ্লিট হয়েছে। চতুর্থতলার কাজ চলছে। গাড়ি গেটে দাঁড়াতেই দারোয়ান স্যালুট দিয়ে গেট খুলে দিলো। ভেতরে ঢুকলো ফিরোজের গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে সোজা দোতলায় চলে গেলেন তিনি। একটা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন। পঁচিশশো স্কয়ার ফিটের বড়সড় ফ্ল্যাট। টাকাগুলো গোপন জায়গায় রেখে আবার বের হয়ে গেলেন। তার গাড়ি এবার ছুটলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। ড্রাইভ করতে করতে গুণগুণ করে গান গাইছেন তিনি। রাস্তায় পাবলিক পরিবহনের সংখ্যা কমে এসেছে। এখন বেশিরভাগ ট্রাকই চলছে। সালেহপুর সেতু পার হয়ে রিয়ারভিউ মিররে চোখ পড়তেই আতঙ্কে জমে গেলো ফিরোজের শরীর। ইমার্জেন্সি ব্রেক করে গাড়ি থামিয়ে ফেললেন তিনি। আরেকটু হলেই রোড ডিভাইডারে লেগে উলটে যেতো গাড়ি। গাড়ি থামতেই পিছনের সিটে তাকালেন তিনি। একি, কিছুই তো নেই সেখানে। অথচ মাত্রই তিনি কুকুটাকে দেখেছেন পিছনের সিটে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে। সেই কালো কুকুরটা। মাথার উপর সাদা ছোপ। দরদর করে ঘামতে শুরু করলেন ফিরোজ। একি উৎপাত শুরু হলো তার জীবনে? এর থেকে মুক্তির উপায় কি? ফিরোজের সব আনন্দ উবে গেলো। সেখানে স্থান করে নিলো ভয় আর অনিশ্চয়তা। এবার ধীরে ধীরে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন ফিরোজ। তার হাত কাঁপছে। জোরে চালালে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷
অফিসে বসে ডিএমপির একটা প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও দেখছিলো রবিন। তার যাওয়ার কথা ছিলো কনফারেন্সে। কিন্তু অন্য একটা কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় যেতে পারেনি। তাই ক্রাইম বিট কাভার করা সাংবাদিকদের টেলিগ্রাম গ্রুপে আপলোড দেওয়া ভিডিওটা দেখছিলো সে। এটা নিয়ে একটা নিউজ লিখতে হবে। তিনজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে অনলাইনে মানুষের ব্যক্তিগত ছবি ভিডিও বিক্রি করে টাকা আয়ের অপরাধে। সম্প্রতি বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে কিছু লম্পট আর বাটপার মানুষের কাছে টাকার বিনিময়ে ন্যুড ছবি ভিডিও বিক্রি শুরু করেছে। যেগুলো অনলাইনে আগে থেকেই ভাইরাল এমন নয়৷ বরং সম্পূর্ণ নতুন এবং ভালো ঘরের ছেলে মেয়েদের ভিডিও। ভিডিওগুলো ওরা সংগ্রহ করে মানুষের সোশ্যাল হ্যান্ডেল হ্যাক করে বা প্রেমের অভিনয় করে ভিডিও করে নিয়ে অথবা ব্রেকআপ হওয়া বয়ফ্রেন্ডকে টাকা দিয়ে৷ ভিডিওগুলো অনেক তরুণীর জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। ডিবির বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে তিন যুবক। ডিবির তৎপরতায় খুশি হলো রবিন। এই ধরনের কাজগুলোর জন্যই মানুষ এখনো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারে। পুলিশের অনেক অনিয়মের ভেতরে ভালো কাজগুলো চোখে পড়তে চায় না৷ ভালো কাজগুলো নিয়ে মানুষ কথা বলে না। কিন্তু রবিন মনে করে স্পেডকে স্পেড, সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলাই হচ্ছে ইনসাফের দাবি। মানুষ নিজের কনসেন্টে নিজেদের মধ্যে যাই করুক, সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। প্রাইভেসি ভায়োলেশন মারাত্মক ধরনের অপরাধ। এর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। রবিন মূল বিষয়গুলো নোট করতে শুরু করে।
হঠাৎ একটা ফোন কলে মনোযোগ নষ্ট হয় রবিনের৷ আননোন নাম্বার। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারীকণ্ঠ ভেসে আসে।
'কেমন আছেন ভাই? চিনতে পারছেন?' আঞ্চলিক উচ্চারণে সম্ভাষণ জানায় নারীকণ্ঠ। রবিনের অপরিচিত লাগে।
'ভালো আছি। কিন্তু আপনি কে? চিনতে পারছি না?'
'চিনবেন কেমনে? আমরা তো ভালো মানুষ না। ভালো মানুষ হলে ঠিকই চিনতেন।'
'আসলে নাম না বললে চেনার সুযোগ নেই। অনেকের সাথেই কথা বলতে হয়। এতো মানুষের কণ্ঠ চিনে রাখাটা কষ্টকর।'
'আমি গীতা।'
'কোন গীতা?' কথাটা বলেই একটু মনে করার চেষ্টা করে রবিন।
'আপনি কি গীতা মাসী?'
'জি ভাই। আমি গীতা, গীতা মাসী।'
'কেমন আছেন আপনি। হঠাৎ ফোন দিলেন, মাথায় ছিলো না আপনি ফোন দিবেন। তাই চিনতে পারিনি। সরি।'
'সরি টরি বলা লাগবে না। আমি ঢাকা আসছি। তাই ভাবলাম ভাইজানের সাথে একটু কথা কই।'
'ও আচ্ছা। আদাবর আছেন?'
'জি। আসবেন নাকি এদিকে? আসেন না। গল্প করলে আমার ভালো লাগবে। একা একা বোরিং লাগতেছে।'
রবিন একটু থতমত খায়। গীতা মাসী একজন যৌন ব্যবসায়ী। তার সাথে দেখা করাটা কেমন হবে? কেউ জানলে মান সম্মান থাকবে না। আদাবরের লোকজন তার আসল পরিচয় জানে বলে মনে হয় না৷ সুতরাং গেলে খুব একটা ক্ষতি নেই। এছাড়া গীতা মাসীর মধ্যে একটা সেক্সি ভাব আছে, যার আকর্ষণ অনুভব করবে না এমন পুরুষ পয়দা হয়নি।
'আমি গেলে আপনার ভালো লাগবে? আমি তো আপনার চেয়ে অনেক ছোট। ছোট একটা মানুষের সাথে কথা বলতে আনইজি লাগবে না?'
'নাহ, কি যে বলেন। আপনার বয়স যাই হোক, আপনার মধ্যে অনেক জ্ঞান। আপনি আসলে সত্যি ভালো লাগবে আমার।'
রবিন একটু ভাবে। তারপর বলে- 'আমি তো এখন অফিসে আছি। কাজ শেষ করতে রাত আটটা বেজে যাবে? এরপর আসি?'
'আচ্ছা আসেন। ওই সময় অবশ্য ছেলেমেয়ে থাকে বাসায়। আসেন সমস্যা নাই।'
'ঠিক আছে।'
রবিন নিউজ রেডি করে চিফ রিপোর্টারকে ফরওয়ার্ড করে। তারপর অফিসের নিচে গিয়ে চা সিগারেটের দোকানে বসে সিগারেট জ্বালায়। এই দোকানটা ওদের একটা আড্ডার জায়গা। স্মোকার সহকর্মী যারা আছে তারা সবাই এখানে এসে চা সিগারেট খায় আর তুমুল আড্ডা দেয়। আজ রবিনের আড্ডা দেওয়ার সময় নেই। সিগারেট শেষ করে উঠে দাঁড়ায় সে। বাইকের স্টিয়ারিং ঘুরে যায় আদাবরের দিকে।
কৃষি মার্কেট গিয়ে গীতা মাসীকে কল দেয় রবিন। তারপর বাসার ঠিকানা জানতে চায়। বাসাটা মূলত শেখের টেকে পড়েছে৷ এই এলাকায় বর্তমানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। তেমনই একটা বাড়ি গীতা মাসীর। গীতা মাসী নিচে এসে রবিনকে নিয়ে গেলো। পিংক কালারের একটা ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি পরেছে সে৷ শাড়ির ভেতর দিয়ে সেম কালারের ব্লাউজে ঢাকা স্তন দুটো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে৷ ঝুলে যাওয়া স্তন ব্রা দিয়ে খাড়া করে রেখেছে৷ মাথায় বড় একটা লাল টিপ। কপালে হালকা করে লাগানো সিঁদুর। দেখতে বাংলা সিরিয়ালের বৌদিদের মতো লাগছে।
দোতলায় গীতা মাসীর ঘরটা বেশ বড়। ড্রইংরুমে গিয়ে বসলো রবিন। সোফায় বসে এক গ্লাস পানি চাইলো সে। স্মার্ট টিভিতে স্টার জলসার সিরিয়াল চলছে। একটু পর পর বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ আসছে টিভি থেকে। একটা ছেলে, একটা মেয়ে আরেকটা মহিলা বসে টিভি দেখছে। ছেলেটার বয়স সতেরো আঠারোর মতো। মেয়ের বয়স বারো কি তেরো আর মহিলার বয়স সাইত্রিশ আটত্রিশ।
পানি এনে রবিনকে দিয়ে আরেকটা সোফায় বসলো গীতা মাসী।
'আপনি যে কার্ড দিয়ে আসছিলেন আমাকে, আমার নাম্বার তো নিয়ে আসেননি। তাইলে আজকে চিনতেন।' হাসতে হাসতে বললো গীতা মাসী।
'আসলে তখন বিষয়টা মাথায় ছিলো না। থাকলে অবশ্যই নিয়ে আসতাম।'
'এটা হচ্ছে আমার ছেলে। নাম শান্তনু। ও এখানে একটা কলেজে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। আগে বাসাতেই থাকতো। কিন্তু বাবা মার শাসনে না থাকলে যা হয় আরকি। প্রচুর দুষ্টুমি করতো পড়াশোনা না করে। তারপর শিক্ষকদের পরামর্শে হোস্টেলে দিয়ে দিছি। হোস্টেলে নাকি শিক্ষকদের তত্বাবধানে থাকলে পড়াশোনা ভালো হয়। আমি তো পড়ালেখা করি নাই। উনারা যা বলে তাই শুনি।'
'উনারা ঠিকই বলেছেন। দুষ্টু বাচ্চারা হোস্টেলে থাকলে পড়াশোনা ভালো হয়।'
'এটা হচ্ছে মেয়ে, নাম তমালিকা। আমরা ডাকি তমা। আর ও হচ্ছে আমার ছোটবোন রিতা। রিতা আর তমা বাসায় থাকে। আমি আর ওদের বাবা প্রতি সপ্তায় আসি।' বলে থামলো গীতা মাসী। তারপর রবিনের দিকে ইঙ্গিত করে বললো- 'উনার নাম রবিন। তোমাদের মামা হয়। উনি ঢাকার বড় একজন সাংবাদিক।'
রবিনকে নমস্কার জানালো গীতার ছেলেমেয়ে। গীতা যৌনপল্লীর মেয়ে হলেও ছেলেমেয়েকে ভালোই আদব কায়দা শিক্ষা দিয়েছে। ওদের উপর তার পেশার ছায়া পড়তে দেয়নি। পৃথিবীর সব বাবা মাই চায় তার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। এর অর্থ শুধু পেট ভরে খাওয়াই না, নিজের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সন্তানের ভালো করা৷ বিধাতার এক অবাক করা সৃষ্টি পিতামাতা। নিজেরা যাই করুক, তারা চায় তার সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। তবুও কেনো কিছু সন্তান অমানুষ হয়?
রবিন বাচ্চাদের পড়াশোনার খোঁজ খবর নেয়। দুজনই পড়াশোনায় ভালো, তবে ছেলেটা ফাকিবাজ। কিন্তু মেয়েটা খুব লক্ষ্মী, জানায় রিতা। গল্প করতে করতে রাত ১১ টা বেজে যায়। ডিনারের আয়োজন করে গীতা মাসী।
খেতে খেতে রবিন জানতে চায়- 'রিতা দিদি কি বিয়ে করেননি?'
'করেছিলাম। টিকেনি। আমাদের সংসার টেকা ভাগ্যের ব্যাপার। সবার সেই ভাগ্য হয় না।' রিতা বলে।
'আসলে যৌনপল্লীর অনেক মেয়েরই বিয়ে হয়। কিন্তু সেই সংসারগুলোর খুব কমই টিকে থাকে। কারণ যারা যৌনকর্মীদের বিয়ে করে, তারা আসলে এক নারীতে আসক্ত না। তারা নানা নারীদেহ ঘুরেই কাউকে বিয়ে করে। ফলে কিছুদিন পর মোহ কেটে গেলে নতুন নারীর সন্ধানে যায় তারা। এভাবে তো আসলে সংসার গড়ে ওঠে না।' গীতা মাসী বলে।
খাওয়া শেষে শান্তনু আর তমা শুতে চলে যায় নিজ নিজ রুমে। বাকি তিনজন সোফায় গিয়ে বসে।
'শিলা ফোন দিছিলো সেদিন। অনেক কান্নাকাটি করলো মেয়েটা। আমার জন্য ওর পরান পোড়ে। আমারও খারাপ লাগে ওর জন্য। মা না হলেও আমি ছিলাম ওর মায়ের মতোই।'
'হুম। আপনি আপনার সাধ্য অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন সেকথা মানতেই হবে।'
'শুনেছি রঞ্জিতের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছেন। আপনি এতো ভালো কেনো?'
'একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার পরে একটা মানুষের আর টাকা লাগে না। তারপর বাকি টাকাগুলো অলস পড়ে থাকে। আমারও অতো টাকার প্রয়োজন হয় না যতটা আমার আছে। তাই প্রয়োজনে অন্যকে দিয়ে সহযোগিতা করতে ভালো লাগে।'
'তবুও তো মানুষ চায় তার আরো টাকা হোক।'
'যারা চায় তারা উচ্চাভিলাষী। যারা আরো টাকা চায় তাদের মধ্যে দুইটা শ্রেণী আছে। এক. যারা নিজের টাকা নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না। খাই খাই স্বভাব। পুরো পৃথিবী দিয়ে দিলেও যাদের ক্ষুধা মিটবে না। দুই. সৃজনশীল ব্যক্তি। যারা আরো টাকা চায় নতুন নতুন উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। মানবতার কল্যাণে কাজে লাগাতে। যেমন ইলন মাস্ক। তার এতো টাকা আছে। তবুও তার আরো টাকা চাই কেনো? কারণ সে স্বাপ্নিক মানুষ। তার সৃজনশীল কাজের সফলতার জন্য তার টাকা প্রয়োজন। আমি আসলে অতো উচ্চাভিলাষী না।'
'আপনি বিয়ে করছেন না কেনো?' জানতে চায় রিতা।
'বিয়ে তো আমি করতেই চাই। কিন্তু কোনো মেয়ে তো আমাকে পটিয়ে রাজি করায় না।' মুচকি হেসে উত্তর দেয় রবিন।
'এতোদিন জানতাম ছেলেরা মেয়েদের পটায়। এখন তো উল্টোটা শুনছি।' গীতা বলে।
'আসলে যার সাথে সারাজীবন থাকা যায়, মন থেকে কারো বিষয়ে এমন সাড়া পাইনি।'
'আসলে আপনি মন থেকে চাননি সেটা বলেন। আপনার আহবান অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কোনো নারীর আছে বলে মনে হয় না।' গীতা বলে।
কিছুক্ষণ নীরবতা। যেন কথার টপিক শেষ হয়ে গেছে। রবিন বলে- 'আজ তাহলে উঠি। রাত তো অনেক হল।'
'বাসায় তো বৌ নাই। যাওয়ার এতো তাড়া কেনো?' বলে গীতা মাসী।
'আমি আবার ভদ্র ছেলে কিনা। রাত করে বাসায় ফিরি না।' হেসে জবাব দেয় রবিন।
'আজ না হয় এখানে থেকে যান। থাকলে সমস্যা হবে? নাকি আমাদের সাথে থাকতে ঘেন্না হবে?'
'এভাবে বলেন কেনো? ঘেন্না হলে তো আসতামই না।' গীতার কথায় মাঝেমধ্যে অস্বস্তিতে পড়ে যায় রবিন। এমনভাবে দাবি নিয়ে আর অসহায়ের মতো কথা বলে যে কথা না শুনে পারা যায় না। এটা অবশ্য কথা মানানোর একটা টেকনিকও বটে।
'থাকা যায়। বাসায় একটা ফোন করে দিলেই হবে।' রবিন বলে।
'তাহলে থেকেই যান। বাসায় বলে দেন আজ ফিরবেন না। রিতা অনেক সুন্দর গান গায়। আপনাকে গান গেয়ে শোনাবে ও।'
রবিন মাকে ফোন দিয়ে জানায় আজ বাসায় ফিরবে না। অরিত্রের সাথে থাকবে। অরিত্রের কথা বললে মা আর টেনশন করবে না। কারণ দুই বন্ধুর রাতে একসাথে থাকার অনেক রেকর্ড আছে।
'চলেন ছাদে যাই। ছাদে আমার ফুলের বাগান আছে। আপনার ভালো লাগবে।'
'তাই। চলেন তাহলে।'
রবিন, গীতা আর রিতা ছাদে যায়। ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ দিয়ে ভরা। হাস্নাহেনার গন্ধ মাতাল করে দিতে চায়। ঈষৎ শীত শীত ভাব। শিশিরে গাছের পাতাগুলো ভিজে গেছে। ছাদে বসার জন্য সিমেন্ট বালু দিয়ে বেঞ্চ বানানো আছে। তাতে তিনজন বসে। প্রথমে রবিন। মঝখানে গীতা, তারপর রিতা। গীতা বলে- 'রিতা পুরনো দিনের গানগুলো অনেক ভালো গায়। আপনার ভালো লাগবে। রিতা গান শুরু কর।'
রিতা শুরু করে- 'জ্বলে পুড়ে মরার মাঝে, যদি কোনো সুখ থাকে, তার নাম ভালোবাসা, তার নাম প্রেম...।' রিতা আসলেই ভালো গায়। উচ্চারণে যদিও কিছু সমস্যা আছে। আঞ্চলিলতার টান আছে। তবে কণ্ঠটা মিষ্টি। নীরব নির্জনে রিতার গান শুনতে খারাপ লাগে না। হঠাৎ রবিন টের পায় গীতা তার হাত রবিনের হাতের উপর রেখেছে। আঙুলগুলো দিয়ে ধীরে হাতে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। রবিনের রক্তচাপ বেড়ে যায়। হচ্ছে কি। গীতা মাসীকে আবার ভীমরতিতে ধরলো নাকি। রবিন হাত সরায় না। গীতা মাসী যেন গ্রিন সিগনাল পায়। সে রবিনের একটা হাত ধরে নিজের কোলের উপরে নিয়ে নেয়। রবিনের হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। রিতা একমনে গান গেয়ে চলেছে। হঠাৎ গীতা রবিনের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে একটা চুমু খায়। রবিন হকচকিয়ে যায় ঘটনার আকস্মিকতায়। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারে না। চুপচাপ দেখে যেতে থাকে গীতার কর্মকাণ্ড।
রিতার একটা গান শেষ হয়। রবিন হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেয়। জানায় খুবই ভালো লেগেছে তার। গীতা বলে- 'আরেকটা গা। এই সুন্দর পরিবেশে গান শুনতে অনেক ভালো লাগছে। আমার মনটা আজ খুবই ভালো। এতো ভালো সময় আমি অনেকদিন ধরে কাটাই না।'
রিতা আবার গাইতে শুরু করে- ' অশ্রু দিয়ে লেখা এ নাম যেন ভুলে যেও না...।'
গানের তালে তালে গীতা আর রবিনের গোপন অভিসার চলতে থাকে। গীতা রবিনের বাম হাত নিয়ে শাড়ির আঁচলের নিচ দিয়ে একটা স্তনে রাখে। রবিনের খারাপ লাগে না গীতার স্তন টিপতে। সে মনের সুখে টিপতে থাকে। ভরাট স্তন যাকে বলে। মাংসের তাল। রবিনের বড় হাতের থাবাতেও পুরোটা আটে না। রবিন টিপে টিপে ভর্তা করতে থাকে একটা স্তন। তার লিঙ্গ প্যান্টের ভেতর বিদ্রোহ করছে। ওই বিদ্রোহ দমন করতে হলে অবশ্যই তার ভেতরের আগুন নিভাতে হবে। গীতা মাসীর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেছে। একটা হাত দিয়ে সে রবিনের লিঙ্গ প্যান্টের উপর দিয়ে চেপে ধরে। কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর গীতা ব্লাউজের বোতাম খুলে স্তন উন্মুক্ত করে দেয়। তারপর ব্রার ভেতর থেকে স্তন বের করে রবিনের হাতে ধরিয়ে দেয়৷ উন্মুক্ত ত্বকের স্পর্শ পেয়ে রবিন আরো উত্তেজিত হয়ে যায়। পুরোটা মুঠিতে নিয়ে টিপতে চেষ্টা করে সে। গীতা মুখ এগিয়ে রবিনের ঠোঁট চুষতে শুরু করে। রিতা তখন মাঝপথে গান থামিয়ে দেয়। বলে- 'এখানে কিছু করে ধরা পারলে এলাকায় থাকতে দিবে না। যা করার ঘরে যেয়ে করো।'
'চলেন তাইলে ঘরে যাই।' গীতা বলে। রবিন কোনো কথা বলে না। তার কথা বলার শক্তি নেই। সে শুধু গীতার নির্দেশ ফলো করছে।
রুমের সামনে গিয়ে গীতা বলে- 'রবিন আজকে শুধু আমার। তোর যদি কিছু করতে ইচ্ছা হয় তাইলে পরে কোনো একদিন চান্স নিস। আজ শুধু আমি ওকে ভালোবাসবো।' রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে গীতা।
'আচ্ছা। কিন্তু রবিন ভাইয়ের আমাকে ভালো লাগছে বলে মনে হয় না। আমার দিকে তাকায়ই না।'
'কে বললো তোমাকে ভালো লাগে নাই। তুমি অনেক সুন্দর।' বলেই রিতাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খায় রবিন। তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দুই স্তন টিপে দেয়। রিতার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।
রিতাকে বেশিক্ষণ আদর করার সময় দেয় না গীতা। টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায়। দরজা বন্ধ করতেই রবিনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে সে। চুমুতে চুমুতে পুরো মুখ ভরিয়ে দেয়। রবিনও সমানতালে রেসপন্স করতে থাকে। গীতার শরীর থেকে সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে। নেশা ধরানো ঘ্রাণ। শাড়ি খুলে দিয়ে নিরাভরণ করে ফেলে গীতাকে। ব্লাউজ ব্রা আগে থেকেই খোলা ছিলো। ওগুলো আর লাগায়নি গীতা। লাইটের সাদা আলোতে গীতাকে দেবীর মতো লাগে। পুরু দুটো ঠোঁট। ডাবের মতো বড় দুটো স্তন। তলপেটে হালকা মেদ। পেটিকোটে ঢাকা বিরাট নিতম্ব। নগ্ন নিতম্ব দেখার জন্য তর সয় না রবিনের। পেটিকোটের দরি খুলে নামিয়ে দেয় সে। ধামার মতো গুরু নিতম্ব উন্মুক্ত হয়ে যায়। আজকালকার ছেলেরা মিলফ বলতে যা বোঝে ঠিক তাই যেন। রবিন ততক্ষণে নিজের জামা কাপড় খুলে নগ্ন হয়ে গেছে। তার লিঙ্গ মাথা উঁচু করে স্যালুট দিচ্ছে। গীতাকে জড়িয়ে ধরে আবার ঠোঁট চোষা শুরু করে রবিন। কিস থামিয়ে গীতা বলে- 'আপনাকে তুমি করে বলতে মন চায়, কিন্তু ভয় লাগে। যদি আপনি কিছু মনে করেন। আর আপনি আমাকে তুমি করে বললেই আমি খুশি হবো।'
'আরে ভয়ের কি আছে। আমি কি পুলিশ নাকি। তুমি করেই বইলো। আমি তো তোমার চেয়ে বয়সে ছোটই।'
'আই লাভ ইউ।' গীতা বলে। তার চোখে তন্ময়তা। রবিনকে দেখছে সে নির্নিমেষ নয়নে।
'আই লাভ ইউ টু।' রবিন হেসে বলে।
'আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি রবিন। আমি জানি আমার এই আশা কখনো পূর্ণ হবে না। তুমি আমাকে ভালোবাসবে না। তবুও আমি নিজেকে মানাতে পারি নাই। তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি, সেদিনই তোমার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে গেছিলাম। তোমার মুখটা আমার মনে গাঁথা হয়ে গেছিলো। তারপর যতই তোমাকে নিয়ে ভাবছি ততই তোমার প্রতি দুর্বল হইছি। আমি তোমাকে ভালোবাসার যোগ্য না। আমি একটা পতিতা। আমাকে মাফ করে দিও পিলিজ।' অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে গীতা বলে। কথাগুলো বলে রবিনের বুকের মধ্যে মুখ গোঁজে সে।
'ভালোবাসা এমন এক জিনিস, যদি তুমি প্রতিদানের আশা ছাড়া বিলিয়ে যাও, তাহলে তোমার কোনো কষ্ট থাকবে না। যদি প্রতিদান আশা করো, তাহলে সেখান থেকেই তোমার কষ্টের শুরু হবে। আমিও তোমাকে ভালোবাসি গীতা। আমি জানি তোমার মধ্যে একটা সৎ মানুষ লুকিয়ে আছে। যে নিয়তির কষাঘাতে জর্জরিত। যে অসহায় মানুষের সেবা করে। আমি ওই মানুষটাকে ভালোবাসি গীতা।'
'জানো, এই জীবনে আমি কখনো কারো ভালোবাসা পাইনি। মানুষ পতিতাদের ভালোবাসে না। তাদের টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে। দিনশেষে তারা বড্ড একা৷ তাদের বেদনাগুলো শোনার কেউ নেই। মন খারাপ হলে বুকে মথা রেখে কাঁদার কেউ নেই।'
'তোমার তো স্বামী আছে। সে তোমাকে ভালোবাসে না?'
'আমার স্বামী আছে এটা সত্য। কিন্তু যে স্বামী বছরে ভুল করেও একবার বউকে শারীরিক সুখ দিতে আসে না, প্রতি রাতে নতুন নতুন মেয়ের সাথে রাত কাটায়, তাকে স্বামী তো মুখে বলা যায়, সে কি হৃদয়ে জায়গা নিতে পারে? আমার স্বামী আরেক পতিতার সন্তান। সমাজে যার কোনো মূল্য নাই। যার নিজের এক পয়সা ইনকাম নাই। ফলে বাধ্য হয়ে আমার সাথে থাকা লাগে। আমার সাথে থাকলে তিনবেলা ফ্রিতে খাওয়া যায়। প্রতি রাতে মেয়ে বদল করে সুখ নেওয়া যায়। যখন যা ইচ্ছা খরচ করা যায়। তাই আমার সাথে থাকে। নাহলে কবেই আমাকে ছেড়ে চলে যেতো।'
'খুবই খারাপ লাগলো শুনে। তবুও তোমাকে উপরওয়ালা অনেক সুখ দিয়েছেন। অনেকের কাছে এগুলোও স্বপ্নের মতো। তোমার উচিত এজন্য উপরওয়ালার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।'
'আমি সেটা স্বীকার করি। কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া জীবনে সব সুখ অর্থহীন। ভালোবাসার জন্য মানুষ রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে। সেখানে আমার কি এতটুকু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নাই?'
'অধিকার সবারই থাকে। তবে কিছু জিনিস আমাদের হাতে থাকে না৷ সেগুলো মেনে নিয়েই জীবন কাটাতে হয়। জীবনে খুব বেশি আশা রাখবা না। তাহলে সুখী হবা৷ গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, জীবনে কামনা বা আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে সকল দুঃখের মূল। তোমার যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো। দেখবা তোমার কোনো দুঃখ নেই।'
ডেভলপার কোম্পানির যে প্রজেক্ট নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটা সেলিম চৌধুরীর ওয়ার্ডে পড়েছে। তার মানে ওখানকার রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে সেলিম চৌধুরীর একটা সম্মান আছে। এটা একটা গুড সাইন। সেলিম চৌধুরীর একটা কাজে সহযোগিতা করেছিলেন ফিরোজ। একটা রাজনৈতিক ঝামেলায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে ফেবার দিয়েছিলেন। তারপরই ওই অঞ্চলে সেলিম চৌধুরীর অবস্থান সুসংহত হয়েছে। বর্তমানে ওই ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি তিনি। ফিরোজ ঠিক করলেন এই বিষয়ে কথা বলতে সেলিম চৌধুরীর সাথে দেখা করবেন।
সেলিম চৌধুরীর বাসায় পৌঁছে দেখতে পেলেন তিনি এখনো ঘুম থেকে ওঠেননি। বেলা তখন এগারোটা বাজে। দশতলা আলিশান বাড়ি সেলিম চৌধুরীর। দোতলায় থাকেন তিনি পরিবারসহ। আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর গ্রাউন্ড ফ্লোর ব্যবহার করেন রাজনৈতিক কাজে৷ বাকি ফ্লোরগুলো ভাড়া দেওয়া।
ফিরোজ ড্রইং রুমে বসে পত্রিকা পড়তে শুরু করলেন। সেলিম চৌধুরীকে খবর দেওয়া হলো। একটু পরই একটা পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে তিনি ড্রইং রুমে উপস্থিত হলেন। ফিরোজকে সালাম দিলেন তিনি। তারপর বললেন- 'কি খবর ফিরোজ সাহেব। কেমন আছেন?' ফিরোজ সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- 'ভালো আছি ভাই। অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ নাই। তাই ভাবলাম একটু দেখা করে আসি।'
'আপনাদের যে কাজ তাতে অহেতুক কোথাও যাওয়াও তো মুশকিল। তা আমার কাছে কি দরকার এখন? চা খেতে যে আসেন নাই, তা তো নিশ্চিত।'
'আসলে ভাই, আপনি হয়তো জানেন, ফোরকান বিল্ডার্স আপনার এলাকাতে একটা শপিং মল তৈরি করছে। এখন এলাকার পলিটিক্যাল ছেলেপেলেরা নাস্তার টাকা চায়। কিন্তু ওদের যে ডিমান্ড তা তো দেওয়া সম্ভব না। কোম্পানির এমডি কাল অফিসে আসছিলো অভিযোগ করতে। তাই ভাবলাম এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আপনার সাথে পরামর্শ করি।'
'আচ্ছা। বিষয়টা আমিও শুনেছি। পাঁচ কোটি না দিক, দুই কোটি দিক। তাহলেই তো হয়। ওদের টাকা দেওয়া ছাড়া তো কাজ করতে পারবে না।' সেলিম চৌধুরী বললেন।
'কিন্তু এমডি বলছে এতো টাকা দিলে তাদের প্রজেক্ট লসের খাতায় চলে যাবে। ন্যুনতম প্রফিট না হলে কাজ তো করা যায় না'
'তা উনি কতো দিতে চায়?'
'ত্রিশ লাখ।'
'মাত্র? এই টাকায় তো একদিনের পিকনিকের খরচই হবে না পোলাপানের।' পোলাপানের কথা বললেও আসলে টাকা যে কার কাছে আসবে বুঝে ফেলেছেন ফিরোজ। তাই কথাবার্তায় সতর্ক হয়ে গেলেন। বললেন- 'সেলিম ভাই, সামনে নির্বাচন। এই সময় এমন কাজ করা ঠিক হবে না যাতে দলের বদনাম হয়। এই খবর মিডিয়ার কানে গেলে নির্বাচনের আগে ইমেজ ঠিক রাখার জন্য দল যে কাউকে বলি দিয়ে দিতে পারে। সেখানে আপনি তো একটা ওয়ার্ডের নেতা মাত্র। এসপি স্যারও বিষয়টা জানেন। এবং আমাকে তিনি পাঠিয়েছেন আপনার সাথে ডিল করতে। তিনি চান আপনি ওদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।' সত্য মিথ্যা মিশ্রিত করে নিজের মনমতো গল্প সাজালেন ফিরোজ। সেলিম চৌধুরী একটু ভাবলেন। তারপর বললেন- 'ঠিক আছে। আপনারা যখন বলছেন, আমি আর কথা বাড়াবো না৷ আর এইসব টাকা পয়সা তো আমি খাইনা। ছেলেপেলে ক্লাব, পার্টি চালানোর জন্য নেয় আরকি। বোঝেনই তো, রাজনীতি করতে গেলে কতকিছু পুষতে হয়।'
'সেতো বুঝিই। পুলিশ আর রাজনীতিবিদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। আপনাকে আমার ভালো লাগে এইজন্য যে আপনি বিষয়টা বোঝেন।'
সেলিম চৌধুরীর সাথে কথা শেষ করে অফিসে যান ফিরোজ। ফোরকান বিল্ডার্সের এমডিকে ফোন দিয়ে বলেন কাজ হয়ে গেছে। ছেলেদের ত্রিশ লাখ দিলেই হবে৷ আর তার ত্রিশ লাখ যেন আজ রাতে ক্যাশে দেওয়া হয়।
অনেকদিন পর ফিরোজ সাহেবের মন আজ ফুরফুরে। মোটা অংকের একটা ডিল সম্পন্ন করা গেছে। তাও আবার নিজের একক প্রচেষ্টায়। লাস্ট এরকম একটা ডিল করেছিলেন বীরেন বাবুর খুনের পর। কিন্তু সেই টাকার ভাগ তাকে উপর মহলের অনেককেই দিতে হয়েছিলো। সেই ডিলে অবশ্য টাকার পরিমাণও বেশি ছিলো। বাসায় ফিরে বউকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গেলেন তিনি। মন মেজাজ ভালো থাকলে আফরিনকে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে যান। স্বামী হিসেবে বেশ রোমান্টিক বলা যায় তাকে। সন্ধ্যার শো। রাত ১০ টার মধ্যেই শো শেষ হয়ে গেলো। এরপর একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করলেন দুজন। খাওয়া শেষ করে গাড়িতে ওঠার সময় একটা ফোন আসলো তার। ফোন রিসিভ করে তিনি শুধু বললেন, আসছি। আফরিনকে একটা সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়ে বললেন- 'তুমি বাসায় চলে যাও। অফিস থেকে জরুরি কল এসেছে। যেতে হবে এখনই।' আফরিনের কাছে বিষয়টা নতুন না। পুলিশের চাকরি। যখন তখন তলব পড়ে। তার বাবাকেও দেখেছে এভাবে যখন তখন অফিসে যেতে। তাই কোনো প্রশ্ন না করে সিএনজিতে করে বাসায় চলে গেলো সে।
ফিরোজ সাহেব গাড়ি নিয়ে অফিসের দিকে যাওয়া শুরু করলেন। একটু পরই তার গাড়ির মুখ ঘুরে গেলো। সাত মসজিদ রোডের জ্যাম ঠেলে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় পার হয়ে তার গাড়ি ছুটলো বসিলার দিকে। বসিলা ব্রিজের ঠিক মাঝখানে পৌঁছে তিনি দেখতে পেলেন একটা কালো মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। ফিরোজের গাড়িটা ওই গাড়ির পিছনে গিয়ে থেমে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়ালেন তিনি। মাইক্রোবাস থেকে একটা তিরিশ বত্রিশ বছরের যুবক নামলো। তার হাতে একটা ব্রিফকেস। ফিরোজের হাতে ব্রিফকেসটা দিতে দিতে যুবক বললো- 'আমি এমডি স্যারের পিএস। এখানে তিরিশ লাখ আছে। চলি।' আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলো ছেলেটা। সোজা বসিলার দিকে চলে গেলো। ফিরোজ ব্রিফকেস নিয়ে গাড়িতে বসলেন। টাকাগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে না দেখতে পারলে ভালো লাগছে না তার। ব্রিফকেস খুলতেই কড়কড়ে এক হাজার টাকার নোটগুলো তাকে সাদর সম্ভাষণ জানালো। পৃথিবীতে দুটো জিনিসের ঘ্রাণ হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর। একটা হচ্ছে গরম ভাত, আরেকটা টাকা। ফিরোজ দুই হাতে টাকাগুলো নিয়ে ঘ্রাণ নিলেন। আনন্দে বুকটা ভরে উঠলো তার।
ফিরোজের গাড়ি ছুটছে ব্রিজের উপর দিয়ে বসিলার দিকে। বসিলার পার হয়ে ইউটার্ন নিতে দেখা গেলো না গাড়িটাকে। বরং সেটা এগিয়েই যাচ্ছে। যেতে যেতে কলাতিয়া, হযরতপুর পার হয়ে হেমায়েতপুর দিয়ে উঠলো। তারপর ঢাকা আরিচা হাইওয়ে ধরে এগিয়ে চললো সাভারের দিকে। সাভারের উলাইল এলাকায় পৌঁছে বামে মোড় নিলো গাড়িটা। কিছুদূর গিয়ে দেখা গেলো একটা আন্ডার কনস্ট্রাকশন বাড়ি। চারপাশে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রায় পনেরো কাঠা জায়গা নিয়ে বাড়িটার সীমানা। তিনতলা কমপ্লিট হয়েছে। চতুর্থতলার কাজ চলছে। গাড়ি গেটে দাঁড়াতেই দারোয়ান স্যালুট দিয়ে গেট খুলে দিলো। ভেতরে ঢুকলো ফিরোজের গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে সোজা দোতলায় চলে গেলেন তিনি। একটা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন। পঁচিশশো স্কয়ার ফিটের বড়সড় ফ্ল্যাট। টাকাগুলো গোপন জায়গায় রেখে আবার বের হয়ে গেলেন। তার গাড়ি এবার ছুটলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। ড্রাইভ করতে করতে গুণগুণ করে গান গাইছেন তিনি। রাস্তায় পাবলিক পরিবহনের সংখ্যা কমে এসেছে। এখন বেশিরভাগ ট্রাকই চলছে। সালেহপুর সেতু পার হয়ে রিয়ারভিউ মিররে চোখ পড়তেই আতঙ্কে জমে গেলো ফিরোজের শরীর। ইমার্জেন্সি ব্রেক করে গাড়ি থামিয়ে ফেললেন তিনি। আরেকটু হলেই রোড ডিভাইডারে লেগে উলটে যেতো গাড়ি। গাড়ি থামতেই পিছনের সিটে তাকালেন তিনি। একি, কিছুই তো নেই সেখানে। অথচ মাত্রই তিনি কুকুটাকে দেখেছেন পিছনের সিটে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে আছে। সেই কালো কুকুরটা। মাথার উপর সাদা ছোপ। দরদর করে ঘামতে শুরু করলেন ফিরোজ। একি উৎপাত শুরু হলো তার জীবনে? এর থেকে মুক্তির উপায় কি? ফিরোজের সব আনন্দ উবে গেলো। সেখানে স্থান করে নিলো ভয় আর অনিশ্চয়তা। এবার ধীরে ধীরে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন ফিরোজ। তার হাত কাঁপছে। জোরে চালালে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷
অফিসে বসে ডিএমপির একটা প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও দেখছিলো রবিন। তার যাওয়ার কথা ছিলো কনফারেন্সে। কিন্তু অন্য একটা কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় যেতে পারেনি। তাই ক্রাইম বিট কাভার করা সাংবাদিকদের টেলিগ্রাম গ্রুপে আপলোড দেওয়া ভিডিওটা দেখছিলো সে। এটা নিয়ে একটা নিউজ লিখতে হবে। তিনজন যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে অনলাইনে মানুষের ব্যক্তিগত ছবি ভিডিও বিক্রি করে টাকা আয়ের অপরাধে। সম্প্রতি বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে কিছু লম্পট আর বাটপার মানুষের কাছে টাকার বিনিময়ে ন্যুড ছবি ভিডিও বিক্রি শুরু করেছে। যেগুলো অনলাইনে আগে থেকেই ভাইরাল এমন নয়৷ বরং সম্পূর্ণ নতুন এবং ভালো ঘরের ছেলে মেয়েদের ভিডিও। ভিডিওগুলো ওরা সংগ্রহ করে মানুষের সোশ্যাল হ্যান্ডেল হ্যাক করে বা প্রেমের অভিনয় করে ভিডিও করে নিয়ে অথবা ব্রেকআপ হওয়া বয়ফ্রেন্ডকে টাকা দিয়ে৷ ভিডিওগুলো অনেক তরুণীর জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। ডিবির বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে তিন যুবক। ডিবির তৎপরতায় খুশি হলো রবিন। এই ধরনের কাজগুলোর জন্যই মানুষ এখনো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারে। পুলিশের অনেক অনিয়মের ভেতরে ভালো কাজগুলো চোখে পড়তে চায় না৷ ভালো কাজগুলো নিয়ে মানুষ কথা বলে না। কিন্তু রবিন মনে করে স্পেডকে স্পেড, সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলাই হচ্ছে ইনসাফের দাবি। মানুষ নিজের কনসেন্টে নিজেদের মধ্যে যাই করুক, সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। প্রাইভেসি ভায়োলেশন মারাত্মক ধরনের অপরাধ। এর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। রবিন মূল বিষয়গুলো নোট করতে শুরু করে।
হঠাৎ একটা ফোন কলে মনোযোগ নষ্ট হয় রবিনের৷ আননোন নাম্বার। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারীকণ্ঠ ভেসে আসে।
'কেমন আছেন ভাই? চিনতে পারছেন?' আঞ্চলিক উচ্চারণে সম্ভাষণ জানায় নারীকণ্ঠ। রবিনের অপরিচিত লাগে।
'ভালো আছি। কিন্তু আপনি কে? চিনতে পারছি না?'
'চিনবেন কেমনে? আমরা তো ভালো মানুষ না। ভালো মানুষ হলে ঠিকই চিনতেন।'
'আসলে নাম না বললে চেনার সুযোগ নেই। অনেকের সাথেই কথা বলতে হয়। এতো মানুষের কণ্ঠ চিনে রাখাটা কষ্টকর।'
'আমি গীতা।'
'কোন গীতা?' কথাটা বলেই একটু মনে করার চেষ্টা করে রবিন।
'আপনি কি গীতা মাসী?'
'জি ভাই। আমি গীতা, গীতা মাসী।'
'কেমন আছেন আপনি। হঠাৎ ফোন দিলেন, মাথায় ছিলো না আপনি ফোন দিবেন। তাই চিনতে পারিনি। সরি।'
'সরি টরি বলা লাগবে না। আমি ঢাকা আসছি। তাই ভাবলাম ভাইজানের সাথে একটু কথা কই।'
'ও আচ্ছা। আদাবর আছেন?'
'জি। আসবেন নাকি এদিকে? আসেন না। গল্প করলে আমার ভালো লাগবে। একা একা বোরিং লাগতেছে।'
রবিন একটু থতমত খায়। গীতা মাসী একজন যৌন ব্যবসায়ী। তার সাথে দেখা করাটা কেমন হবে? কেউ জানলে মান সম্মান থাকবে না। আদাবরের লোকজন তার আসল পরিচয় জানে বলে মনে হয় না৷ সুতরাং গেলে খুব একটা ক্ষতি নেই। এছাড়া গীতা মাসীর মধ্যে একটা সেক্সি ভাব আছে, যার আকর্ষণ অনুভব করবে না এমন পুরুষ পয়দা হয়নি।
'আমি গেলে আপনার ভালো লাগবে? আমি তো আপনার চেয়ে অনেক ছোট। ছোট একটা মানুষের সাথে কথা বলতে আনইজি লাগবে না?'
'নাহ, কি যে বলেন। আপনার বয়স যাই হোক, আপনার মধ্যে অনেক জ্ঞান। আপনি আসলে সত্যি ভালো লাগবে আমার।'
রবিন একটু ভাবে। তারপর বলে- 'আমি তো এখন অফিসে আছি। কাজ শেষ করতে রাত আটটা বেজে যাবে? এরপর আসি?'
'আচ্ছা আসেন। ওই সময় অবশ্য ছেলেমেয়ে থাকে বাসায়। আসেন সমস্যা নাই।'
'ঠিক আছে।'
রবিন নিউজ রেডি করে চিফ রিপোর্টারকে ফরওয়ার্ড করে। তারপর অফিসের নিচে গিয়ে চা সিগারেটের দোকানে বসে সিগারেট জ্বালায়। এই দোকানটা ওদের একটা আড্ডার জায়গা। স্মোকার সহকর্মী যারা আছে তারা সবাই এখানে এসে চা সিগারেট খায় আর তুমুল আড্ডা দেয়। আজ রবিনের আড্ডা দেওয়ার সময় নেই। সিগারেট শেষ করে উঠে দাঁড়ায় সে। বাইকের স্টিয়ারিং ঘুরে যায় আদাবরের দিকে।
কৃষি মার্কেট গিয়ে গীতা মাসীকে কল দেয় রবিন। তারপর বাসার ঠিকানা জানতে চায়। বাসাটা মূলত শেখের টেকে পড়েছে৷ এই এলাকায় বর্তমানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে। তেমনই একটা বাড়ি গীতা মাসীর। গীতা মাসী নিচে এসে রবিনকে নিয়ে গেলো। পিংক কালারের একটা ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি পরেছে সে৷ শাড়ির ভেতর দিয়ে সেম কালারের ব্লাউজে ঢাকা স্তন দুটো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে৷ ঝুলে যাওয়া স্তন ব্রা দিয়ে খাড়া করে রেখেছে৷ মাথায় বড় একটা লাল টিপ। কপালে হালকা করে লাগানো সিঁদুর। দেখতে বাংলা সিরিয়ালের বৌদিদের মতো লাগছে।
দোতলায় গীতা মাসীর ঘরটা বেশ বড়। ড্রইংরুমে গিয়ে বসলো রবিন। সোফায় বসে এক গ্লাস পানি চাইলো সে। স্মার্ট টিভিতে স্টার জলসার সিরিয়াল চলছে। একটু পর পর বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ আসছে টিভি থেকে। একটা ছেলে, একটা মেয়ে আরেকটা মহিলা বসে টিভি দেখছে। ছেলেটার বয়স সতেরো আঠারোর মতো। মেয়ের বয়স বারো কি তেরো আর মহিলার বয়স সাইত্রিশ আটত্রিশ।
পানি এনে রবিনকে দিয়ে আরেকটা সোফায় বসলো গীতা মাসী।
'আপনি যে কার্ড দিয়ে আসছিলেন আমাকে, আমার নাম্বার তো নিয়ে আসেননি। তাইলে আজকে চিনতেন।' হাসতে হাসতে বললো গীতা মাসী।
'আসলে তখন বিষয়টা মাথায় ছিলো না। থাকলে অবশ্যই নিয়ে আসতাম।'
'এটা হচ্ছে আমার ছেলে। নাম শান্তনু। ও এখানে একটা কলেজে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। আগে বাসাতেই থাকতো। কিন্তু বাবা মার শাসনে না থাকলে যা হয় আরকি। প্রচুর দুষ্টুমি করতো পড়াশোনা না করে। তারপর শিক্ষকদের পরামর্শে হোস্টেলে দিয়ে দিছি। হোস্টেলে নাকি শিক্ষকদের তত্বাবধানে থাকলে পড়াশোনা ভালো হয়। আমি তো পড়ালেখা করি নাই। উনারা যা বলে তাই শুনি।'
'উনারা ঠিকই বলেছেন। দুষ্টু বাচ্চারা হোস্টেলে থাকলে পড়াশোনা ভালো হয়।'
'এটা হচ্ছে মেয়ে, নাম তমালিকা। আমরা ডাকি তমা। আর ও হচ্ছে আমার ছোটবোন রিতা। রিতা আর তমা বাসায় থাকে। আমি আর ওদের বাবা প্রতি সপ্তায় আসি।' বলে থামলো গীতা মাসী। তারপর রবিনের দিকে ইঙ্গিত করে বললো- 'উনার নাম রবিন। তোমাদের মামা হয়। উনি ঢাকার বড় একজন সাংবাদিক।'
রবিনকে নমস্কার জানালো গীতার ছেলেমেয়ে। গীতা যৌনপল্লীর মেয়ে হলেও ছেলেমেয়েকে ভালোই আদব কায়দা শিক্ষা দিয়েছে। ওদের উপর তার পেশার ছায়া পড়তে দেয়নি। পৃথিবীর সব বাবা মাই চায় তার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। এর অর্থ শুধু পেট ভরে খাওয়াই না, নিজের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সন্তানের ভালো করা৷ বিধাতার এক অবাক করা সৃষ্টি পিতামাতা। নিজেরা যাই করুক, তারা চায় তার সন্তান যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। তবুও কেনো কিছু সন্তান অমানুষ হয়?
রবিন বাচ্চাদের পড়াশোনার খোঁজ খবর নেয়। দুজনই পড়াশোনায় ভালো, তবে ছেলেটা ফাকিবাজ। কিন্তু মেয়েটা খুব লক্ষ্মী, জানায় রিতা। গল্প করতে করতে রাত ১১ টা বেজে যায়। ডিনারের আয়োজন করে গীতা মাসী।
খেতে খেতে রবিন জানতে চায়- 'রিতা দিদি কি বিয়ে করেননি?'
'করেছিলাম। টিকেনি। আমাদের সংসার টেকা ভাগ্যের ব্যাপার। সবার সেই ভাগ্য হয় না।' রিতা বলে।
'আসলে যৌনপল্লীর অনেক মেয়েরই বিয়ে হয়। কিন্তু সেই সংসারগুলোর খুব কমই টিকে থাকে। কারণ যারা যৌনকর্মীদের বিয়ে করে, তারা আসলে এক নারীতে আসক্ত না। তারা নানা নারীদেহ ঘুরেই কাউকে বিয়ে করে। ফলে কিছুদিন পর মোহ কেটে গেলে নতুন নারীর সন্ধানে যায় তারা। এভাবে তো আসলে সংসার গড়ে ওঠে না।' গীতা মাসী বলে।
খাওয়া শেষে শান্তনু আর তমা শুতে চলে যায় নিজ নিজ রুমে। বাকি তিনজন সোফায় গিয়ে বসে।
'শিলা ফোন দিছিলো সেদিন। অনেক কান্নাকাটি করলো মেয়েটা। আমার জন্য ওর পরান পোড়ে। আমারও খারাপ লাগে ওর জন্য। মা না হলেও আমি ছিলাম ওর মায়ের মতোই।'
'হুম। আপনি আপনার সাধ্য অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন সেকথা মানতেই হবে।'
'শুনেছি রঞ্জিতের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছেন। আপনি এতো ভালো কেনো?'
'একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার পরে একটা মানুষের আর টাকা লাগে না। তারপর বাকি টাকাগুলো অলস পড়ে থাকে। আমারও অতো টাকার প্রয়োজন হয় না যতটা আমার আছে। তাই প্রয়োজনে অন্যকে দিয়ে সহযোগিতা করতে ভালো লাগে।'
'তবুও তো মানুষ চায় তার আরো টাকা হোক।'
'যারা চায় তারা উচ্চাভিলাষী। যারা আরো টাকা চায় তাদের মধ্যে দুইটা শ্রেণী আছে। এক. যারা নিজের টাকা নিয়ে সন্তুষ্ট হয় না। খাই খাই স্বভাব। পুরো পৃথিবী দিয়ে দিলেও যাদের ক্ষুধা মিটবে না। দুই. সৃজনশীল ব্যক্তি। যারা আরো টাকা চায় নতুন নতুন উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করতে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। মানবতার কল্যাণে কাজে লাগাতে। যেমন ইলন মাস্ক। তার এতো টাকা আছে। তবুও তার আরো টাকা চাই কেনো? কারণ সে স্বাপ্নিক মানুষ। তার সৃজনশীল কাজের সফলতার জন্য তার টাকা প্রয়োজন। আমি আসলে অতো উচ্চাভিলাষী না।'
'আপনি বিয়ে করছেন না কেনো?' জানতে চায় রিতা।
'বিয়ে তো আমি করতেই চাই। কিন্তু কোনো মেয়ে তো আমাকে পটিয়ে রাজি করায় না।' মুচকি হেসে উত্তর দেয় রবিন।
'এতোদিন জানতাম ছেলেরা মেয়েদের পটায়। এখন তো উল্টোটা শুনছি।' গীতা বলে।
'আসলে যার সাথে সারাজীবন থাকা যায়, মন থেকে কারো বিষয়ে এমন সাড়া পাইনি।'
'আসলে আপনি মন থেকে চাননি সেটা বলেন। আপনার আহবান অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কোনো নারীর আছে বলে মনে হয় না।' গীতা বলে।
কিছুক্ষণ নীরবতা। যেন কথার টপিক শেষ হয়ে গেছে। রবিন বলে- 'আজ তাহলে উঠি। রাত তো অনেক হল।'
'বাসায় তো বৌ নাই। যাওয়ার এতো তাড়া কেনো?' বলে গীতা মাসী।
'আমি আবার ভদ্র ছেলে কিনা। রাত করে বাসায় ফিরি না।' হেসে জবাব দেয় রবিন।
'আজ না হয় এখানে থেকে যান। থাকলে সমস্যা হবে? নাকি আমাদের সাথে থাকতে ঘেন্না হবে?'
'এভাবে বলেন কেনো? ঘেন্না হলে তো আসতামই না।' গীতার কথায় মাঝেমধ্যে অস্বস্তিতে পড়ে যায় রবিন। এমনভাবে দাবি নিয়ে আর অসহায়ের মতো কথা বলে যে কথা না শুনে পারা যায় না। এটা অবশ্য কথা মানানোর একটা টেকনিকও বটে।
'থাকা যায়। বাসায় একটা ফোন করে দিলেই হবে।' রবিন বলে।
'তাহলে থেকেই যান। বাসায় বলে দেন আজ ফিরবেন না। রিতা অনেক সুন্দর গান গায়। আপনাকে গান গেয়ে শোনাবে ও।'
রবিন মাকে ফোন দিয়ে জানায় আজ বাসায় ফিরবে না। অরিত্রের সাথে থাকবে। অরিত্রের কথা বললে মা আর টেনশন করবে না। কারণ দুই বন্ধুর রাতে একসাথে থাকার অনেক রেকর্ড আছে।
'চলেন ছাদে যাই। ছাদে আমার ফুলের বাগান আছে। আপনার ভালো লাগবে।'
'তাই। চলেন তাহলে।'
রবিন, গীতা আর রিতা ছাদে যায়। ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ দিয়ে ভরা। হাস্নাহেনার গন্ধ মাতাল করে দিতে চায়। ঈষৎ শীত শীত ভাব। শিশিরে গাছের পাতাগুলো ভিজে গেছে। ছাদে বসার জন্য সিমেন্ট বালু দিয়ে বেঞ্চ বানানো আছে। তাতে তিনজন বসে। প্রথমে রবিন। মঝখানে গীতা, তারপর রিতা। গীতা বলে- 'রিতা পুরনো দিনের গানগুলো অনেক ভালো গায়। আপনার ভালো লাগবে। রিতা গান শুরু কর।'
রিতা শুরু করে- 'জ্বলে পুড়ে মরার মাঝে, যদি কোনো সুখ থাকে, তার নাম ভালোবাসা, তার নাম প্রেম...।' রিতা আসলেই ভালো গায়। উচ্চারণে যদিও কিছু সমস্যা আছে। আঞ্চলিলতার টান আছে। তবে কণ্ঠটা মিষ্টি। নীরব নির্জনে রিতার গান শুনতে খারাপ লাগে না। হঠাৎ রবিন টের পায় গীতা তার হাত রবিনের হাতের উপর রেখেছে। আঙুলগুলো দিয়ে ধীরে হাতে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। রবিনের রক্তচাপ বেড়ে যায়। হচ্ছে কি। গীতা মাসীকে আবার ভীমরতিতে ধরলো নাকি। রবিন হাত সরায় না। গীতা মাসী যেন গ্রিন সিগনাল পায়। সে রবিনের একটা হাত ধরে নিজের কোলের উপরে নিয়ে নেয়। রবিনের হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। রিতা একমনে গান গেয়ে চলেছে। হঠাৎ গীতা রবিনের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে একটা চুমু খায়। রবিন হকচকিয়ে যায় ঘটনার আকস্মিকতায়। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারে না। চুপচাপ দেখে যেতে থাকে গীতার কর্মকাণ্ড।
রিতার একটা গান শেষ হয়। রবিন হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেয়। জানায় খুবই ভালো লেগেছে তার। গীতা বলে- 'আরেকটা গা। এই সুন্দর পরিবেশে গান শুনতে অনেক ভালো লাগছে। আমার মনটা আজ খুবই ভালো। এতো ভালো সময় আমি অনেকদিন ধরে কাটাই না।'
রিতা আবার গাইতে শুরু করে- ' অশ্রু দিয়ে লেখা এ নাম যেন ভুলে যেও না...।'
গানের তালে তালে গীতা আর রবিনের গোপন অভিসার চলতে থাকে। গীতা রবিনের বাম হাত নিয়ে শাড়ির আঁচলের নিচ দিয়ে একটা স্তনে রাখে। রবিনের খারাপ লাগে না গীতার স্তন টিপতে। সে মনের সুখে টিপতে থাকে। ভরাট স্তন যাকে বলে। মাংসের তাল। রবিনের বড় হাতের থাবাতেও পুরোটা আটে না। রবিন টিপে টিপে ভর্তা করতে থাকে একটা স্তন। তার লিঙ্গ প্যান্টের ভেতর বিদ্রোহ করছে। ওই বিদ্রোহ দমন করতে হলে অবশ্যই তার ভেতরের আগুন নিভাতে হবে। গীতা মাসীর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে গেছে। একটা হাত দিয়ে সে রবিনের লিঙ্গ প্যান্টের উপর দিয়ে চেপে ধরে। কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর গীতা ব্লাউজের বোতাম খুলে স্তন উন্মুক্ত করে দেয়। তারপর ব্রার ভেতর থেকে স্তন বের করে রবিনের হাতে ধরিয়ে দেয়৷ উন্মুক্ত ত্বকের স্পর্শ পেয়ে রবিন আরো উত্তেজিত হয়ে যায়। পুরোটা মুঠিতে নিয়ে টিপতে চেষ্টা করে সে। গীতা মুখ এগিয়ে রবিনের ঠোঁট চুষতে শুরু করে। রিতা তখন মাঝপথে গান থামিয়ে দেয়। বলে- 'এখানে কিছু করে ধরা পারলে এলাকায় থাকতে দিবে না। যা করার ঘরে যেয়ে করো।'
'চলেন তাইলে ঘরে যাই।' গীতা বলে। রবিন কোনো কথা বলে না। তার কথা বলার শক্তি নেই। সে শুধু গীতার নির্দেশ ফলো করছে।
রুমের সামনে গিয়ে গীতা বলে- 'রবিন আজকে শুধু আমার। তোর যদি কিছু করতে ইচ্ছা হয় তাইলে পরে কোনো একদিন চান্স নিস। আজ শুধু আমি ওকে ভালোবাসবো।' রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে গীতা।
'আচ্ছা। কিন্তু রবিন ভাইয়ের আমাকে ভালো লাগছে বলে মনে হয় না। আমার দিকে তাকায়ই না।'
'কে বললো তোমাকে ভালো লাগে নাই। তুমি অনেক সুন্দর।' বলেই রিতাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খায় রবিন। তারপর পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দুই স্তন টিপে দেয়। রিতার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে।
রিতাকে বেশিক্ষণ আদর করার সময় দেয় না গীতা। টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায়। দরজা বন্ধ করতেই রবিনের উপর ঝাপিয়ে পড়ে সে। চুমুতে চুমুতে পুরো মুখ ভরিয়ে দেয়। রবিনও সমানতালে রেসপন্স করতে থাকে। গীতার শরীর থেকে সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসছে। নেশা ধরানো ঘ্রাণ। শাড়ি খুলে দিয়ে নিরাভরণ করে ফেলে গীতাকে। ব্লাউজ ব্রা আগে থেকেই খোলা ছিলো। ওগুলো আর লাগায়নি গীতা। লাইটের সাদা আলোতে গীতাকে দেবীর মতো লাগে। পুরু দুটো ঠোঁট। ডাবের মতো বড় দুটো স্তন। তলপেটে হালকা মেদ। পেটিকোটে ঢাকা বিরাট নিতম্ব। নগ্ন নিতম্ব দেখার জন্য তর সয় না রবিনের। পেটিকোটের দরি খুলে নামিয়ে দেয় সে। ধামার মতো গুরু নিতম্ব উন্মুক্ত হয়ে যায়। আজকালকার ছেলেরা মিলফ বলতে যা বোঝে ঠিক তাই যেন। রবিন ততক্ষণে নিজের জামা কাপড় খুলে নগ্ন হয়ে গেছে। তার লিঙ্গ মাথা উঁচু করে স্যালুট দিচ্ছে। গীতাকে জড়িয়ে ধরে আবার ঠোঁট চোষা শুরু করে রবিন। কিস থামিয়ে গীতা বলে- 'আপনাকে তুমি করে বলতে মন চায়, কিন্তু ভয় লাগে। যদি আপনি কিছু মনে করেন। আর আপনি আমাকে তুমি করে বললেই আমি খুশি হবো।'
'আরে ভয়ের কি আছে। আমি কি পুলিশ নাকি। তুমি করেই বইলো। আমি তো তোমার চেয়ে বয়সে ছোটই।'
'আই লাভ ইউ।' গীতা বলে। তার চোখে তন্ময়তা। রবিনকে দেখছে সে নির্নিমেষ নয়নে।
'আই লাভ ইউ টু।' রবিন হেসে বলে।
'আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি রবিন। আমি জানি আমার এই আশা কখনো পূর্ণ হবে না। তুমি আমাকে ভালোবাসবে না। তবুও আমি নিজেকে মানাতে পারি নাই। তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি, সেদিনই তোমার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়ে গেছিলাম। তোমার মুখটা আমার মনে গাঁথা হয়ে গেছিলো। তারপর যতই তোমাকে নিয়ে ভাবছি ততই তোমার প্রতি দুর্বল হইছি। আমি তোমাকে ভালোবাসার যোগ্য না। আমি একটা পতিতা। আমাকে মাফ করে দিও পিলিজ।' অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে গীতা বলে। কথাগুলো বলে রবিনের বুকের মধ্যে মুখ গোঁজে সে।
'ভালোবাসা এমন এক জিনিস, যদি তুমি প্রতিদানের আশা ছাড়া বিলিয়ে যাও, তাহলে তোমার কোনো কষ্ট থাকবে না। যদি প্রতিদান আশা করো, তাহলে সেখান থেকেই তোমার কষ্টের শুরু হবে। আমিও তোমাকে ভালোবাসি গীতা। আমি জানি তোমার মধ্যে একটা সৎ মানুষ লুকিয়ে আছে। যে নিয়তির কষাঘাতে জর্জরিত। যে অসহায় মানুষের সেবা করে। আমি ওই মানুষটাকে ভালোবাসি গীতা।'
'জানো, এই জীবনে আমি কখনো কারো ভালোবাসা পাইনি। মানুষ পতিতাদের ভালোবাসে না। তাদের টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে। দিনশেষে তারা বড্ড একা৷ তাদের বেদনাগুলো শোনার কেউ নেই। মন খারাপ হলে বুকে মথা রেখে কাঁদার কেউ নেই।'
'তোমার তো স্বামী আছে। সে তোমাকে ভালোবাসে না?'
'আমার স্বামী আছে এটা সত্য। কিন্তু যে স্বামী বছরে ভুল করেও একবার বউকে শারীরিক সুখ দিতে আসে না, প্রতি রাতে নতুন নতুন মেয়ের সাথে রাত কাটায়, তাকে স্বামী তো মুখে বলা যায়, সে কি হৃদয়ে জায়গা নিতে পারে? আমার স্বামী আরেক পতিতার সন্তান। সমাজে যার কোনো মূল্য নাই। যার নিজের এক পয়সা ইনকাম নাই। ফলে বাধ্য হয়ে আমার সাথে থাকা লাগে। আমার সাথে থাকলে তিনবেলা ফ্রিতে খাওয়া যায়। প্রতি রাতে মেয়ে বদল করে সুখ নেওয়া যায়। যখন যা ইচ্ছা খরচ করা যায়। তাই আমার সাথে থাকে। নাহলে কবেই আমাকে ছেড়ে চলে যেতো।'
'খুবই খারাপ লাগলো শুনে। তবুও তোমাকে উপরওয়ালা অনেক সুখ দিয়েছেন। অনেকের কাছে এগুলোও স্বপ্নের মতো। তোমার উচিত এজন্য উপরওয়ালার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা।'
'আমি সেটা স্বীকার করি। কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া জীবনে সব সুখ অর্থহীন। ভালোবাসার জন্য মানুষ রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে। সেখানে আমার কি এতটুকু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নাই?'
'অধিকার সবারই থাকে। তবে কিছু জিনিস আমাদের হাতে থাকে না৷ সেগুলো মেনে নিয়েই জীবন কাটাতে হয়। জীবনে খুব বেশি আশা রাখবা না। তাহলে সুখী হবা৷ গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, জীবনে কামনা বা আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে সকল দুঃখের মূল। তোমার যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো। দেখবা তোমার কোনো দুঃখ নেই।'