27-11-2023, 02:23 AM
(This post was last modified: 28-11-2023, 12:22 AM by Rupuk 8. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব -২৯
কিরে অভি তোদের আসতে এতো সময় লাগলো । সেই কখন ফোন করে বললি আসছি, ভিতরে আয়। মাহীন আর অভি আবিরের বাসার ভিতরে ঢুকলো। রনি কি এসেছে রে আবির? হ্যা তোদের আগেই রনি চলে এসেছে। তোদের আসতে এতো দেরি হলো কেন? একটু মার্কেটে গিয়েছিলাম রে আবির ওখানে একটু দেরি হয়ে গেছে। মার্কেটে আবার কিসের জন্য গিয়েছিলি রে অভি? গ্রিফট কিনতে। ধুর তোরাও না এসবের কোনো দরকার ছিলো। রনি অনেকক্ষণ ধরে আমার রুমে একা বসে আছে। তোরা দুজন আমার রুমে গিয়ে বস, আমার একটু কাজ আছে শেষ করে আসছি। আচ্ছা ঠিক আছে তুই তোর কাজ শেষ করে আয়। মাহীন আর অভি আবিরের রুমের ভিতরে ঢুকলো। কিরে রনি একা একা বসে কি করসিস। কি আর করবো তোদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শালা তোদের আসতে দেরি হবে আগে বলবি না, তাহলে আমিও দেরি করে বাসা থেকে বের হতাম। একটু মার্কেটে গিয়েছিলাম রে, গ্রিফট কিনতে তাই আসতে একটু দেরি হলো নাহলে অনেক আগেই চলে আসতাম। ওহ্ অনুষ্ঠানের দিন তাড়াহুড়ো হবে সময় পাবো না দেখে আমি কালকে সন্ধ্যার দিকে মার্কেটে গিয়ে একটা কালার পেন্সিল বক্স কিনে নিয়ে এসেছিলাম গ্রিফট দেওয়ার জন্য। বাহ্ তুই দেখছি অনেক ফাস্ট আমাদের থেকে হাহাহা। মানুষের জন্মগ্রহণের দিনটি একটি বিশেষ দিন। সচরাচর কেক কেটে, বেলুন দিয়ে ঘর সাজিয়ে, বন্ধুবান্ধব , আত্মীয়, স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে ইনভাইট করে সবার সাথে আনন্দে প্রিয় মানুষটির জন্মদিন পালন করতে চায় সবাই, সেটা যে বয়সী মানুষের জন্মদিন হোক না কেন। তবে সবাই কিন্তু উদযাপনটা একইভাবে করে না। কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও অনেক ভিন্নতাও আছে জন্মদিন উদযাপনের ক্ষেত্রে। নানা রকমের খাবারের আইটেম বাড়িতে তৈরি করেছেন আবিরের মা বিরিয়ানি , মিষ্টি, পিঠা আর কিছু খাবার বাহিরে থেকে কিনে নিয়ে এসেছেন। সব কিছু আয়োজন করা সহজ মনে হলেও সব মিলিয়ে এতোকিছু আয়োজন করা বেশ কষ্টসাধ্য। আবিরের মা রিচি মিত্র সকাল থেকে খুব ব্যস্ত কিভাবে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। একা হাতে তাকে সব কিছু দেখাশোনা করা লাগছে। আবিরের বাবা বীরন্দ্র নাথ বাবু আর্মির সৈনিক খুব একটা ছুটি পান না বছরের বেশিভাগ সময় পরিবার ছেড়ে বর্ডারে থাকতে হয়। আবিরের দাদুও আর্মির সৈনিক ছিলেন, অবসরে যাওয়ার পর শান্তিনগরের এই জমিটা কিনে বাড়িটি বেঁচে থাকতে বানিয়েছিল তিনি। রিচি মিত্রর ছোট মেয়ে রিতু ক্লাস ফোরে পড়ে আর বড় ছেলে আবির কলেজে পড়ে, আবিরের বাবা খুব একটা ছুটি পান না। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এই বাড়িতে থাকেন রিচি মিত্র। রিচি মিত্র ছোট মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে মেয়ের কলেজের বান্ধবীদের এবং বান্ধবীর মায়েদেরও ইনভাইট করছেন অনুষ্ঠানে আসার জন্য। একটু পর আবির তার রুমে আসলো সবাই চলে এসেছে, তোরা সব ডইং রুমে আয় কেক কাটা হবে এখন। আবির সাথে ওরা তিনজন আবিরের রুম থেকে বের হয়ে ডইং রুমে আসলো। মোমবাতিতে শিখা প্রজ্জ্বলনের পর ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে কেক কাঁটার সময় সবাই হাততালির সাথে বলে উঠলো জনপ্রিয় সেই লাইনটি “হ্যাপী বার্থ ডে টু ইউ রিতু” ছুড়ি দিয়ে কেক কেটে আবিরের ছোট বোন রিতুর মুখে কেক দেয়ার মাধ্যমে জন্মদিনের অনুষ্ঠান শুরু হলো। পরবর্তীতে কেকের বাকী অংশ টুকরো টুকরো করে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে দেওয়া হলো। উপস্থিত অতিথিরা রিতুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসা গ্রিফট রিতুর হাতে দেয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করছে। রিচি দেবী সবাইকে খাওয়া দাওয়া করে নেওয়ার জন্য আহবান জানানো। মাহীনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবিরের মা মাহীনের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো কি গো সবাই খাচ্ছে, তুমি দাঁড়িয়ে আসো কিসের জন্য। আন্টি আমি পরে খাচ্ছি এতো মানুষের মধ্যে আমার খেতে অস্বস্তি লাগছে। আচ্ছা ঠিক আছে। অতিথিদের প্রায় সবার খাওয়া দাওয়া শেষের দিকে। রাত ভালোই হতে চলছে একে একে অতিথিরা সবাই বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরতে লাগলো। অভি আর রনি খাবার খাওয়া শেষ হয়ে গেছে মাহীনের সামনে এসে ওরা দুজন দাড়ালো। কিরে শালা মাহীন একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস তোকে বললাম আমাদের সাথে খেয়ে নে। এতো মানুষের মধ্যে কি শান্তি মতো খাওয়া যায় বল। এমন সময় আবির এসে হাজির হলো। সবাই ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করেছিস তো? আমি আর রনির খাওয়া শেষ ভাই। মাহীনের এখনও বাকী আছে। মাহীন তুই এখনও খায় নাই। নারে আবির এই বোকাচণ্ডীর নাকি সবার মাঝে খেতে অস্বস্তি লাগে। আচ্ছা সমস্যা নাই এখন আর কেউ নেই সবাই চলে গেছে। মাহীন তুই ডাইনিং টেবিলে বস আমি মাকে খাবার দিতে বলছি। অভি আর রনি তোরা দুজন আমার রুমে গিয়ে বস আমি আসছি। মাহীন ডাইনিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো, একটু পর প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে আসলো রিচি দেবী কি বেপার তুমি দাঁড়িয়ে আসো কেনো বসো। মাহীন ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলো। খাবার ভর্তি প্লেট টা মাহীনের সামনে রেখে পাশের চেয়ারে বসলো রিচি দেবী। নাও খাওয়া শুরু কর একদম লজ্জা পাবে না। আমার সামনে খেতে বোধহয় লজ্জা পাচ্ছো আমি তাহলে উঠি। না আন্টি আপনি বসুন আমার জন্য উল্টো আপনার কষ্ট হয়ে গেলো আমি খাচ্ছি। না কিসের কষ্ট তুমি শান্তি মতো খাও কিছু লাগলে আমাকে বলবে আমি কিচেনে আসি। ঠিক আছে আন্টি। রিচি মিত্র চেহারা বেশ মিষ্টি হাসলে তাকে আরও সুন্দর দেখায়। খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে আবিরের রুমে ঢুকলো মাহীন। অভি চল আমরা বের হই রাত তো অনেক হলো বাসায় যাওয়া যাক। মাহীন ঠিকই বলেছে আবির আমরা তাহলে বের হই এখন। আচ্ছা যা রাত হচ্ছে তোদের আর আটকাবো না। রনি তুই একটু পর বের হো ওরা যাক তোর বাসা তো আর আমার বাড়ি থেকে বেশি দূরে না। আচ্ছা ঠিক আছে। রুম থেকে বের হয়ে আবিরের মায়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আবিরের বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। মাহীন আর অভি।
বাইক উঠে বস মাহীন। অভি
তাড়াতাড়ি
চল এমনিতেই
অনেক রাত হয়ে গেছে। প্যারা নিস না কিছুক্ষণের মধ্যে, তুই তোর বাসার নিচে থাকবি
খানিকক্ষণ পর মাহীন তার বিল্ডিংয়ের নিচে এসে পৌঁছালো। বাসায় যা তাহলে ভাই
কালকে আবার
দেখ হবে।
সাবধানে যাস অভি। আচ্ছা
ঠিক আছে ভাই বিল্ডিংয়ে ঢুকে
মাহীন দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে
তিন তলায় উঠে
বাসার
কলিংবেলে টিপ দিলো । কিছুক্ষণ পর ছায়া দরজা খুলে দিলো । মাহীন বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো ছায়া কিছুই বললো না। মাহীন তার রুমে ঢুকে পড়লো।