Thread Rating:
  • 56 Vote(s) - 2.68 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Erotic Thriller মেগাসিটির নির্জনতা
#21
পর্বঃ৩

শ্রাবন্তীর গানের গলা খুবই ভালো। মেয়েটা শুধু দেখতেই সুন্দর না, গুণবতীও বলা যায়। শ্রাবন্তীর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে ঘুম এসে যায় রবিনের।

পরদিন সকাল হতেই রঞ্জিত এসে হাজির হয় শ্রাবন্তীর ঘরে। শ্রাবন্তী ততক্ষণে গোসল সেরে চা বানানো শুরু করেছে। রঞ্জিত এসে রবিনকে ডেকে তোলে। শ্রাবন্তী ওকে জাগায়নি কারণ ঘুমন্ত রবিনকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিলো তার। মনে হচ্ছিলো জাগিয়ে দিলে এই সুন্দর মুখখানা সে আর দেখতে পাবে না৷ চলে যাবে তাকে ছেড়ে আজীবনের জন্য।

রবিন বিছানা ছেড়ে গোসল সেরে ফেলে। তারপর চায়ের কাপে মুখ লাগায়। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে- 'অনেকদিন পর শান্তির একটা ঘুম দিলাম। অনেক দিন এতো ভালো ঘুম হয় না।'
'তাই বুঝি। যখনই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে, চলে আসবে এখানে। এই ঘরের দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা থাকবে।' শ্রাবন্তী বলে।
'ভাই কি আরেকটা রাত থাইকা যাবেন তাইলে?' জানতে চায় রঞ্জিত।
'নারে ভাই, আজ আর থাকা যাবে না। অফিসে কিছু কাজ জমে আছে। ওগুলো শেষ না করলেই নয়।'

শ্রাবন্তীর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে মেয়েটা। অশ্রুটলমল চোখে বলে- 'আবার কবে আসবে, আসবে তো?'
'আসব।'
'আমি প্রতীক্ষায় থাকব তোমার।'

যাওয়ার আগে শ্রাবন্তী একবার জড়িয়ে ধরে। তারপর কপালে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে বলে- 'চলো শিলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি।'
'চলেন।' বলে রঞ্জিত।

শিলার ঘরে ঢুকতেই পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে লাগে। এরা এতো উগ্র পারফিউম ব্যবহার করে কেন কে জানে। অনেকে আসলে ভালো পারফিউমের খোঁজই জানে না৷ লোকাল মার্কেটে যা পায় তাই ব্যবহার করে। পারফিউম যৌন উত্তেজনা বাড়ানোতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে মেয়েদের শরীর থেকে পারফিউমের সুবাস নেওয়া সব সময় অপার্থিব অনুভূতি।

শিলা গোসল করে কোনো মেকআপ লাগায়নি। ফলে ওর শ্যামলা মিষ্টি মুখটা আরো সুন্দর লাগছে। মেয়েরা ভাবে মেকআপে তাদের অনেক সুন্দর লাগে। আসলে মেকআপ দিয়ে মুখের উজ্জ্বলতা খানিকটা বাড়ানো ছাড়া কিছু হয় না৷ এতে উলটো মেয়েদের ন্যাচারাল সৌন্দর্যটা ঢাকা পড়ে যায়।

'তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে শিলা।' রবিন বলে।
'ভাইজান যে কি বলেন।' লজ্জামাখা কণ্ঠে বলে শিলা। মানুষ মনে করে বারো বণিতাদের লজ্জা নেই। আসলে তাদেরও লজ্জা থাকে। সুপ্ত অবস্থায়। উপযুক্ত সময়ে সেই লজ্জা আড়মোড়া ভাঙ্গে।
'তুমি কি জানো রঞ্জিত তোমাকে অনেক পছন্দ করে?'
'হুম।' ছোট করে জবাব দেয় শিলা।
'তুমিও ওকে পছন্দ করো?'
'আমগো পছন্দ অপছন্দের কোনো দাম নাই ভাইজান। পছন্দ করলেই কি।'
'তোমরা যদি একে অপরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চাও, তাহলে আমি তার ব্যবস্থা করব।'
'সত্যি কইতাছেন ভাই?' রঞ্জিতের চোখে বিস্ময়।
'হুম সত্যি। শিলাকে এখান থেকে সরাতে কতো টাকা লাগবে?'
'এক লাখ টাকা দিলে মাসী ওরে ছাড়বে।'
'এক লাখ টাকা কোনো টাকা না৷ আমি ঢাকা গিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই টাকা নিয়ে চলে আসবো। তারপর তোমাদের দুজনের বিয়ে দেবো।'

কথাটা শুনে শিলার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ রবিনের পায়ে হাত দিয়ে কদমবুসি করে বলে- 'ভাইজান, আপনি মানুষ না। আপনি ফেরেশতা।'
'আরে না না। আজ থেকে তুমি আমার ছোটবোন। বোনের জন্য ভাইকে তো কিছু করাই লাগবে তাই না।'

রবিনের কথা শুনে কৃতজ্ঞতায় চোখ নত হয়ে যায় রঞ্জিতের। এমনটা কেউ করবে তার জন্য সে কখনোই আশা করেনি। তার যা আয় তা দিয়ে এই দুর্মূল্যের বাজারে কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে। এক লাখ টাকা যোগাড় করা তার জন্য সহজ কাজ নয়। হঠাৎ রবিনের এই কথা তাই তার কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ মনে হয়।

শিলার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটে ফিরে আসে তারা। তারপর একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে সকালের নাস্তা সারে৷ কাল দুপুর থেকে এ পর্যন্ত সব খরচ রবিনই বহন করছে। নাস্তা সেরে নদীর পাড়ের একটা নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে বসে রবিন আর রঞ্জিত। একটা টং দোকানের বেঞ্চ। দোকান এখনো খোলা হয়নি। বেঞ্চে ধুলা জমে আছে। কতদিন দোকান খোলা হয় না কে জানে। পদ্মাসেতু হওয়ার পর এই ঘাটের অনেকেই কর্ম হারিয়েছে। কেউ কেউ ব্যবসা না চলায় অন্য পেশা গ্রহণে বা জায়গা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। এ যেন নদীর মতোই নিয়তির খেলা। এক পাড় গড়ে, আরেক পার ভাঙে।

'আচ্ছা বীরেন রায়ের কেসটা নিয়ে তুমি বলছিলা ফিরোজ স্যার তোমাকে যা বলতে বলছে তুমি তাই বলছো। তার মানে তুমি মিডিয়ায় সত্য বলো নাই তাইনা' সিগারেট থেকে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বলে রবিন।

হঠাৎ এই প্রশ্নে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রঞ্জিত। সে ভেবেছিলো রবিন ওই কেসের প্রসঙ্গটা আর তুলবে না৷ কিন্তু উনি তো দেখা যায় ঠিকই মনে রেখেছে৷ আবার এমন একটা প্রশ্ন করেছে যার উত্তর দেওয়া সহজ নয়।
'না মানে, ওই ফিরোজ স্যার যেভাবে বলতে বলছে মানে, আমি তো মিডিয়ায় ঠিকঠাক কথা বলতে পারি না৷ তাই কিভাবে বলতে হবে তাই শিখায় দিছে উনি। কিন্তু যা বলছি তা সব সত্য।' রঞ্জিত যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করে।
'তার মানে তুমি বলতে চাইছো বীরেন রায় সত্যিই সুইসাইড করেছে?'
'জি ভাই।'
'সুইসাইড করার আগের রাতে কেউ ছেলের সাথে কথা বলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে? কারো মধ্যে কোনো দুঃখ কষ্ট না থাকলে সে সুইসাইড করে?'
'উনার মধ্যে দুঃখ ছিলো তো। ছেলে উনার কাছে থাকে না এইটা উনার অনেক বড় দুঃখের কারণ ছিলো।' কণ্ঠে জোর আনার চেষ্টা করে বলে রঞ্জিত।
'শোনো রঞ্জিত, আমি অরিত্রের ছোটবেলার বন্ধু। আমরা একই কলেজ, কলেজে পড়েছি। আমেরিকা যাওয়ার জন্য অরিত্র কখনোই রাজি ছিলো না। ও বলতো, মা মারা যাওয়ার পর বাবাই আমার মা বাবা। বাবাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। কিন্তু ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বীরেন বাবু নিজেই জোর করে ওকে আমেরিকা পাঠান। তাই তুমি যেটা বলছো সেটা সত্য নয়।'
'না মানে, আমি তো এটাই জানি।'
'না রঞ্জিত। তুমি আরো অনেক কিছু জানো। বলো আমাকে সবকিছু। ভয় নেই, আমি সাংবাদিক মানুষ। সাংবাদিকরা জীবন চলে গেলেও সোর্সের নাম বলে না। আর তোমার আর শিলার জন্য আমি যা করব, তার জন্য কি আমি একটু হেল্প পেতে পারি না?'

রঞ্জিত শুধু ইতস্তত করে। কিছু বলে না। এদিক ওদিক তাকায়। মনের মধ্যে ঝড় চলছে ওর। যদি সে কিছু না বলে তাহলে রবিন তাকে কোনো টাকা দিবে না। আর তার ভালোবাসার মানুষটাকেও পাওয়া হবে না৷ শিলার মুখটা এক মুহূর্তের জন্য ভেসে ওঠে রঞ্জিতের মনের পর্দায়। ওদিকে যদি সে রবিনকে কোনো তথ্য দেয়, তাহলে তার প্রাণ চলে যাওয়ার ভয় রয়েছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না রঞ্জিত।

রঞ্জিতের অবস্থা দেখে রবিন বুঝতে পারে ওর মধ্যে সংশয় কাজ করছে। মানে প্রতিরোধের দেয়ালটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। আরেকটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে।
'বীরেন বাবু যে সুইসাইড করেনি তা আমি নিশ্চিত। কিন্তু কে তাকে খুন করেছে এটা একমাত্র তুমিই জানো। কারণ তার মৃত্যুর সময়ে ওই বাড়িতে কেবল তুমিই ছিলা।'
'আমি ছিলাম। কিন্তু আমি দেখি নাই। উনি কিভাবে মারা গেলো। রুমে গিয়া দেখি ফ্যানের লগে ঝুলতেছে। তারপর পুলিশরে খবর দিছি'
'মিথ্যা বইলো না রঞ্জিত। দেখো তোমার উপর বীরেন বাবুর অনেক দয়া আছে। তার তো প্রতিদান দাও। ভয় নাই, তুমি কিছু বলছো আমাকে এই কথা জীবনেও কেউ জানবে না। আর এই টাকাটা রাখো। বিয়ের জন্য কেনাকাটা কইরো। আমি ঢাকা গিয়ে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই এক লাখ টাকা নিয়ে চলে আসব।' কথাটা বলে রঞ্জিতের হাতে পনেরো হাজার টাকা দিলো রবিন। টাকা আর নাম প্রকাশিত না হওয়ার আশ্বাস পেয়ে প্রতিরোধের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো রঞ্জিতের৷ সে বললো- 'ভাই আমি যে আপনারে কিছু বলছি এইটা যদি ফিরোজ স্যার জানে তাইলে আমারে খুন কইরা ফেলাইবো ডাইরেক্ট।'
'আমি তো বলছি সে কিছু জানবে না। আর তোমার উদ্ধৃতি দিয়া আমি কাগজে কিছু লেখব না।'
'শোনেন তাইলে। সেদিন রাত বাজে তখন একটা। বাসায় খালি আমি আর বীরেন দাদু ছিলাম। কাজের মহিলাটা ছুটি নিয়া গ্রামের বাড়ি গেছিলো। আর কেয়ারটেকারের ডেঙ্গু হওয়ায় সে ছিলো হাসপাতালে ভর্তি। আমি থাকতাম কেয়ারটেকারের সাথে নিচ তলার একটা রুমে। তিনতলা বাড়ি। দোতলায় বীরেন দাদু থাকতেন। বাকি রুমগুলা ফাকাই পইড়া থাকতো। মাঝেমধ্যে অতিথি আইলে তাগো জন্য দুই একটা রুম খুলে দেওয়া হইতো। ওই রাতে হঠাৎ কুত্তার ডাকাডাকিতে আমার ঘুম ভাইঙ্গা গেলো। শুনলাম কুত্তা ঘেউ ঘেউ করতে করতে হঠাৎ থাইমা গেলো। হালকা পায়ের আওয়াজও পাইলাম দুই একটা। ভাবলাম কি হইছে দেইখা আসি। আমি বাইর হইতেই কে জানি আমার মুখ চাইপা ধরলো। কানের কাছে মুখ নিয়া কইলো কোনো রকম চেচামেচি করলে জানে মাইরা ফালাইবো। আমি ভয়ে কিছু কইলাম না। কিছুক্ষণ পর দেহি পাঁচজন লোক দোতলা থিকা নামতেছে। সবাই কালা মুখোশ পরা। আমারে আটকানোর জন্য দুইটা লোক ছিলো। ওরাও চইলা গেলো। যাওয়ার আগে কইলো, এখান ভাগ এখনই। নইলে জানে মারা পড়বি। আমি ভীষণ ভয় পাইছিলাম। ওরা চইলা যাইতেই দৌড়ায়া দাদুর রুমে ঢুকলাম। গিয়া দেহি দাদু ফ্যানের সাথে ঝুলতেছে। আমি যে চিৎকার দিয়া লোক জড়ো করবো সেই সাহস আমার ছিলো না। কেচি দিয়া দড়ি কাইটা দাদুরে নামাইলাম। দেখলাম দাদু আর নাই। আমি কি করব দিশা পাইতেছিলাম না। যদি পলায়ে যাই তাইলে এই খুনের দায়ভার আমার উপর পড়বে। আর যদি পুলিশরে খবর দেই তাতেও যে আমি নিস্তার পাবো তার কোনো গ্যারান্টি ছিলো না। অনেক ভাইবা চিন্তা আমি পুলিশরে খবর দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম।'

একটু থামলো রঞ্জিত। মুখ থেকে একদলা থুতু ফেললো। ওর এদিকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো রবিন। রঞ্জিতের মধ্যে সিগারেট খাওয়ার তাড়া নাই। উত্তেজনায় ওর হাত পা কাঁপছে। তবুও লাইটার নিয়ে সিগারেট জ্বালালো। ধোঁয়া ছাড়তে গিয়ে কাশতে শুরু করলো সে। একটু ধাতস্থ হয়ে আবার বলতে শুরু করলো- 'ওই রাতে ধানমণ্ডি থানায় গিয়া পুলিশরে জানাইলাম। পুলিশ আইসা সবকিছু সিলগালা করলো। পোস্ট মর্টেমের জন্য লাশ মর্গে পাঠাইলো। সারারাত বাড়ি পুলিশ পাহারায় থাকলো। আমারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়া রাখা হইলো।'
'আপনি হয়তো জানেন দাদু লোকাল পলিটিক্সের সাথে যুক্ত ছিলো। উনি বাম দল করতেন। সেবার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচনে উনি প্রার্থী হইতে চাইছিলেন। তাই দিনের বেলা বাড়িতে নেতাকর্মীরা আসতো। দাদুর মৃত্যুর খবর ছড়াইতে দেরি হইলো না৷ পত্রিকায় নিউজ হইলো। পত্রিকাগুলা লেখলো 'সম্ভাব্য কমিশনার পদপ্রার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু'। একদিন আমি থানায় বন্দী থাকলাম। ওসি আমারে টুকটাক জিজ্ঞাসাবাদ করলো। আমি যা দেখছি সব সত্য বললাম। পরদিন দুপুরে আসলো ফিরোজ স্যার। উনি সার্কেল এসপি। উনি আইসা আমারে একটা ছোট রুমে নিয়া গেলো। শুরতেই আমারে বললো- বীরেন রায়রে খুন কইরা কতো টাকা চুরি করছিস বল। আমি তো প্রশ্ন শুইনা আকাশ থিকা পড়লাম। কইলাম- আমি খুন করব কেন স্যার। আমিই তো পুলিশরে খবর দিছি। উনি কইলো- বেশি চালাক খুনি যারা তারা নিজেরা খুন কইরা আবার নিজেই পুলিশরে খবর দেয়। তুই হইলি চালাক খুনি। আমি কান্দাকাটি শুরু করলাম। কইলাম স্যার আমি খুন করি নাই। অনেক অনুনয় বিনয় কইরা কইলাম। কিন্তু খানকির পোলায় আমার কথায় কানই দিলো না। ওসিরে ডাইকা কইলো- ওর নামে মামলা দেন। এজাহারে লেখেন 'টাকার লোভে গৃহকর্তাকে খুন করেছে তারই কাজের ছেলে রঞ্জিত। বাসা থেকে বিশ লাখ টাকা গায়েব। নির্বাচনের জন্য তিনি এই টাকা বাসায় রেখেছিলেন।' আমি এই কথা শুইনা ঈশ্বরের দোহায় দিয়া কইলাম আমি খুন করি নাই। কিন্তু ওসি ওইডা লেইখা আমার কাছ থিকা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পাওয়া গেছে এইটা লেখলো।

'বাইরে কি হইতেছে আমি তখন কিছু জানি না। পরে শুনছি দাদুর দলের কর্মীরা এইটাকে খুন দাবি কইরা তদন্ত দাবি করছিলো। আর পুলিশ বলছিলো এইটা প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার কেস বইলা মনে হইতেছে। ওরা মামলা লেখছিলো অপমৃত্যুর। তৃতীয় দিন মা আসছিলো আমারে দেখতে। কিন্তু ওরা আমার সাথে দেখা করতে দেয় নাই। আমি হাজতে থাকলাম পাঁচদিন। মনে মনে ভাবতেছিলাম খুনের দায়ে আমার হয়তো ফাঁসি হইবো। এইটা হবে নিরপরাধ একটা মাইনষের ফাঁসি।'

'পঞ্চম দিনে ফিরোজ মাদারচোদ আবার আসলো। আইসা কয়, তোরে ছাইড়া দিতে পারি একটা শর্তে। আমি যেন আশার আলো দেখতে পাইলাম। সে কইলো তুই মিডিয়ায় বলবি- বীরেন বাবু কিছুদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। একাকিত্ব তাকে ডিপ্রেশনে ফেলে দিছিলো। তার একমাত্র ছেলে আমেরিকা থাকে। বউ মারা গেছে দশ বছর আগে। এইটা পাবলিকরে খাওয়াইতে সমস্যা হইবো না। তুই যদি আমার কথা শুনিস, তাইলে ছাড়া পাবি। আর যদি না শুনিস তাইলে খুনের দায়ে তোর ফাঁসি হবে। এবার বল কি করবি। আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম। এরপর ফিরোজের শিখানো কথামতো সবকিছু মিডিয়ায় বললাম। পাবলিক বীরেন বাবুর জন্য আহা উঁহু করলো। আর উনার ছেলেরে গালি দিলো এই বইলা যে, আহা কত বড় পাষাণ। বুড়া বাপরে একা ফেইলা আমেরিকা থাকে। এভাবেই বীরেন বাবুর মৃত্যু আত্মহত্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো। ফিরোজ আমারে কইলো তুই ঢাকা ছাইড়া চইলা যাবি। জীবনে যেন তোরে ঢাকা না দেখি। তাইলে কিন্তু ক্রসফায়ারে মইরা যাবি। আর পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলো।'

'ছাড়া পায়া মার কাছে গেলাম। গিয়া দেখি সে আমার চিন্তায় শয্যাশায়ী। এমনিতে হাঁপানির সমস্যা আছে তার। আমার চিন্তায় গত চারদিনে তার অবস্থা পুরা কাহিল। তারে ঢাকা থিকা নিয়া আইসা ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করাইলাম। মা সুস্থ হইতে প্রায় এক মাস লাইগা গেলো। মার চিকিৎসা আর ওষুধ বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা শেষ হয়ে গেলো। আমরা মা ছেলে পথের ফকির হয়ে গেলাম। ভাগ্য ভালো যে মায়ের বাপের বাড়ি থাকার মতো একটা ভিটা ছিলো। মারে নিয়া উঠলাম সেখানে। এখন মা ওইখানেই থাকে। আর আমারে ফেরির এই দোকান নিয়া দিছে আমার এক দূরসম্পর্কের কাকা। দোকান থিকা যা আয় হয় তা দিয়া মার ওষুধ আর খাওয়ার টাকা মোটামুটি হয়ে যায়।'

'তুমি কি জানতা খুন আসলে কারা করছে? মিথ্যা বইলো না কিন্তু।'
'না ভাই। মিথ্যা বলবো না আর। আমি সত্যিই জানি না খুন কারা করছে। তবে উনি যেহেতু নির্বাচনে প্রার্থী হইতে চাইছিলেন, তাই উনার কিছু শত্রু তৈরি হইছিলো। বীরেন বাবু ভালো লোক ছিলেন। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা ছিলো। নির্বাচনে উনি জিততে পারতেন। উনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ছাড়া এই খুন কেউ করবে বইলা আমার মনে হয় না।'

'হুম, তোমার অনুমান হয়তো সঠিক। তবে আমাকে আরো অনুসন্ধান করতে হবে এ বিষয়ে। তুমি যে তথ্য দিছো তা আমাকে যথেষ্ট হেল্প করবে।' রবিন বললো।
'ভাই দয়া কইরা আমারে আর এর মধ্যে টাইনেন না। আমি যা জানি সব বললাম। এবার আপনি আপনার ওয়াদা পূরণ করেন।'
'করবো রঞ্জিত। আমি কাউকে মিথ্যা আশ্বাস দেই না। তোমাদের দুজনের বিয়ে আমি নিজে উপস্থিত থেকে দেব।'

রবিনের কথায় আবার কৃতজ্ঞতা ফুটে ওঠে রঞ্জিতের চোখেমুখে। সে কি বলবে ভেবে পায় না। রবিন তখন ভাবছে ঢাকা গিয়ে এই তথ্য কিভাবে কাজে লাগানো যায়। অরিত্রের কথাই সত্য। ওর বাবা খুন হয়েছে। এখন এই খুনের রিপোর্ট করতে হলে দরকার সলিড প্রমাণ। প্রমাণ ওর হাতে নেই। প্রমাণ ছাড়া এমন একটা হট নিউজ করা যায় না৷ এই কেসে পুলিশের অনেক রাঘব বোয়াল জড়িয়ে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের চোখ এড়িয়ে প্রমাণ যোগাড় করা কি রকম কঠিন কাজ হবে ভাবতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছে রবিনের। তবে আশার কথা হলো সবখানেই কোনো না কোনো ক্লু বের করার একটা ক্ষমতা ওর মধ্যে আছে। এর আগে এ ধরনের বেশকিছু কেস সলভ করে পত্রিকার লিড নিউজ হিসেবে ওর রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। ক্রাইম বিটের সাংবাদিকদের কাছে সাজ্জাদ রবিন একটা জনপ্রিয় নাম। মাত্র পাঁচ বছরে সে যা করে দেখিয়েছে তা অনেক ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট বিশ বছরেও পারে না৷ রবিনের মাথায় এখন কেবল একটা নামই ঘুরপাক খাচ্ছে, হিমেল মাজহার।
[+] 13 users Like Topuu's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: মেগাসিটির নির্জনতা - by Topuu - 22-11-2023, 03:55 PM



Users browsing this thread: 27 Guest(s)