21-11-2023, 09:39 AM
পর্ব ৬
মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে
আমি আর বাইতে পারলাম না
সারা জনম উজান বাইলাম
ভাটির নাগাল পাইলাম না।
মজিদ আলি কাঁপা গলায় গানটা গাইছে আর জাল থেকে মাছগুলো ছাড়িয়ে ডিঙিতে ছুঁড়ে ফেলছে। একটু ছোট মাছ হলেই ছুঁড়ে দিচ্ছে নদীর বুকে।
শম্ভুর জাল তখনও নদীতে। গোটানো হতে বাকি। ও শুনছিল মজিদের কাঁপা গলার গান। মজিদ বললে--কি গো ভীমনাগের পো, জাল কি আজ তুইলিবি লাই লা কি?
---তোমার গান শুইনে তো চাচা, জাল ফেইলে রেখে শুধু শুনতে মন চায়।
মজিদ হেসে বলল---দে দিখি, বিড়ি দে।
শম্ভু মজিদের ডিঙ্গিতে একটা বিড়ি ছুঁড়ে দিল। মজিদ বিড়িটা ধরিয়ে বললে---জানিস আমার আব্বা কি কইতো, বিড়ির আগুন মনের আগুন নিভায়। আব্বা যেত গেরামে গেরামে গান করতে। বোষ্টমদের সাথে তাল মিলাইতো। তারা গায় ঠাকুর দেবতার গান, আমার আব্বা জাইনতো মাঝি জেবনের গান। শুইনবি লা কি আরেকটা?
---শুনাও। জালটা ততখুনে আরেকটু রসু।
মজিদ বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে চোখ বুজে গাইতে লাগলো, ওর হাতের জ্বলন্ত বিড়িটাকে অবহেলা করে। বিড়ি পুড়তে পুড়তে ওর মনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো ভাটিয়ালি সুরের গান---
সদ্য ফুটা কুঁড়ির ভিতর ভ্রমর গান তুইলে
কামে ভরা দেহের ভিতর পাঁজরটা যায় ফুইলে
হাজা মজা এক পুকুর ভিতর সাঁতারায় শিং মাছে
নদীর ভিতর আসমান ডুইবে জেবন সংসার মাঝে
নির্বিবাদী নর সাইথে মিলল যখুন নারী
কাল নাগিনী বুকে তখুন নাইমছে লোনা বারি...
জালটা গোছাতে লাগলো শম্ভু। পড়ন্ত বেলা। খুব করে তিনটা তো বাজবেই। ফিরে মাছ ভাত রাঁধবে সে। ষষ্ঠীটাকে আসতে বলেছিল। তার নাকি সকাল থেকে জ্বর। শম্ভু দেখল আজ জালে উঠেছে পার্শে, খয়রা, বড় সাইজের তেলাপিয়াও। সরবেড়িয়া হাটে যদি ষষ্ঠী সন্ধেবেলা বেচে আসতে পারে ভালো দাম পাবে।
নৌকা নিয়ে ও যখন ফিরল ঘাটে, তখন দ্বিপ্রহর তিনটে। ঘাট বলতে ওর নিজস্ব। দাদু সনাতন মাঝির বাপ ঠাকুর্দা বানিয়েছিল বসত লাগোয়া নদীর এক অংশে বড় শিরীষ গাছের কাছটা, বড় বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে। সে গুঁড়ি অনেক ক্ষয়ে গেছে। কয়েকটা বন্যার সময় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঐ ঘাটেই সে তার নৌকা ভেড়ালো। কাদা মাখা গায়ে ঠোঁটে জ্বলন্ত বিড়িটা চেপে মাছের বালতি হাতে, কাঁধে জাল ফেলে নিজের ঘরের দিকে ফিরতেই চমকে উঠল শম্ভু। কালনাগিনীর ঘাট থেকেই ওর দু' চালা ঘর দেখা যায়। বেশী তো দূর নয়, পঞ্চাশ গজেরও কম হবে।
একটা সাদা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে চালার সামনে। কয়েকজনের জটলাও রয়েছে তার পাশে। মাঝে মধ্যমনি ষষ্ঠীপদটিকেও দেখতে পাচ্ছে শম্ভু। কাছে আসতেই ষষ্ঠী বলল---এই যে শম্ভু আইসছে দিদিমণি, ভীমনাগ বেদের পো।
শম্ভু লক্ষ্য করল ফর্সা উজ্জ্বল রঙের এক শাড়ী পরিহিতা শহুরে দিদিমণি। সঙ্গে একটা আটপৌরে শাড়িতে বয়স্কা মহিলা। দেউলবাড়ির মণ্ডল পাড়ার একটা ছেলেও সঙ্গে আছে। শম্ভু খানিকটা বিব্রত হয়ে বলল---কি হছে এখুন?
ষষ্ঠী বললে---শহুর থিকা দিদিমণি আসছে। তার ফুলের মত বাচ্চাটারে সাপে কাইটছে রে শম্ভু।
শম্ভু বিরক্ত হল। এখন সে আয়েশ করে রাঁধবে। কোনো কাজে তার মন নেই। সাপে কাটা রুগীতো দেখবারই ইচ্ছে নেই তার। সে তো ঠিকই করে নিয়েছে; দাদুর মত ডিঙি বেয়ে মাছ ধরবে। ইচ্ছে হলে সরবেড়িয়া হাটে বেচে আসবে। তাই বললে---আমি এখুন চিকিচ্ছা কইরি লা। বলে দে ষষ্ঠী। হাসপাতালের ডাক্তারটার লিগে দেখাইতে।
---ডাক্তার পাইরবে লাই রে শম্ভু। সে জন্য তো তোর কাছটা আইসছে। তু লা দেইখলে কি হবে বাচ্চাটার!
দেউলবাড়ির মন্ডল পাড়ার ছেলে বলতে সরলার ভাসুরের ছেলে ভগীরথ। সে কাকুতি করে বলল---শম্ভু একটু দিখতে তো পারিস রুগীটারে। শহর থিকে এদ্দুর আসসে, শুধু তোরে দেখাইবে বইলে।
রমা লক্ষ্য করল সুঠাম কৃষ্ণবর্ণের এই দীর্ঘদেহী যুবকের উস্ক খুস্ক চুল আর দাড়িতে ঢাকা মুখমন্ডল সহ সর্বাঙ্গে একটা বন্য ভাব আছে। কিন্তু চোখের মধ্যে একটা মাদকতা মেশানো, যেখানে মনে হয় এই একাকী বেদে যুবকেরও একটা লুক্কায়িত মানবতা রয়েছে গোপনে। আসলে রমা প্রায়শই মানুষের চোখ দেখে তাকে বোঝার চেষ্টা করে, এটা রমার নিছকই অভ্যাস। পীযুষের চোখে যেমন সে বুদ্ধিদীপ্ততা, নীতিবাগ্মীতা খুঁজে পায়, তেমন অনিমেষের অসভ্য চোখকেও সে চিনে ফেলেছিল অবলীলায়। কিন্তু এই যুবকটি একেবারে নতুন, চেহারা যেন লৌহমানব। অথচ চোখ দুটি ভাসা ভাসা, একটা সরলতা মেশানো প্রগাঢ় মানবিক অনুভূতি নীরবে খেলা করে। সে অনুরোধ করে বললে---দেখুন ভাই, আমার একমাত্র ছেলে। আমি এতদূর থেকে এসেছি বিশেষ কোনো আশা নিয়ে নয়। কিন্তু ছেলের জন্য শেষ চেষ্টাটুকু করে যেতে চাই। আপনি একটিবার আমার ছেলেটিকে দেখে মতামত দিলে আমরা চলে যাবো।
শম্ভু রমার মুখের দিকে না তাকিয়ে বললে---রুগী কোথা দেখতেছি লা তো। রুগীরে উঠানে শুয়াও। আমি গা ধুয়ে আসতেছি।
সরলা কপালে হাত ছুঁয়ে প্রণাম করল। বললে---দিদিমণি, ভীমনাগ বেদের ব্যাটা যখুন, ক্ষমতা আছে কিন্তু তার।
যদিও রমার বিশেষ কোনো আস্থা নেই। ড্রাইভার গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিল। ভগীরথ আর ষষ্ঠীপদ পিকলুর জ্ঞানহীন দেহটা নামিয়ে শম্ভুর হোগলা জঙ্গলে গ্রাস হতে চলা মাটির উঠোনে শুইয়ে দিল। ড্রাইভার বললে---দিদিমণি, আমাকে পয়সা মিটিয়ে দেন। আমার তো আর কোনো কাজ নেই।
রমা বুঝতে পারছিল না ড্রাইভারকে ছেড়ে দেবে কিনা। সত্যিই এই বেদেটা কিছু করতে পারবে নাকি? তেমন অত্যাশ্চর্য কিছু না ঘটলে তো তাদের কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে।
ষষ্ঠী অভয় দিয়ে বললে---দিদিমণি শম্ভু যখন রাজি হছে, তখুন ডাইভার ভাইরে ছাইড়ে দেন। কম করে কাইল সকালের আগে কিছু হবে লাই।
ড্রাইভার চলে গেল। সেই সাথে ভগীরথও চলে গেল তার গ্রামে। তার গ্রামটা যে এখান থেকে প্রায় তিন-চার কিমি দূরে। যাবার সময় রমা ওকে ধন্যবাদ জানালো। ভগীরথ সরলাকে বললে---কাকী একবার ঘরটায় ঘুইরে যাবে গো।
শম্ভু স্নান করল কলতলায়। মাত্র দুটো লুঙ্গি তার। একটা ভিজলে আরেকটা বদলে নেয়। গা'টা মুছে, মাটির দেয়ালে আটকে রাখা আয়নাটায় তাকিয়ে চিরুনি দিল সে। মনে মনে গুনগুন করে গাইতে লাগলো মজিদের গাওয়া গানের শেষ দু' কলি---
নির্বিবাদী নরের সাইথে মিলল যখুন নারী
কাল নাগিনী বুকে তখুন নাইমছে লোনা বারি...
মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে
আমি আর বাইতে পারলাম না
সারা জনম উজান বাইলাম
ভাটির নাগাল পাইলাম না।
মজিদ আলি কাঁপা গলায় গানটা গাইছে আর জাল থেকে মাছগুলো ছাড়িয়ে ডিঙিতে ছুঁড়ে ফেলছে। একটু ছোট মাছ হলেই ছুঁড়ে দিচ্ছে নদীর বুকে।
শম্ভুর জাল তখনও নদীতে। গোটানো হতে বাকি। ও শুনছিল মজিদের কাঁপা গলার গান। মজিদ বললে--কি গো ভীমনাগের পো, জাল কি আজ তুইলিবি লাই লা কি?
---তোমার গান শুইনে তো চাচা, জাল ফেইলে রেখে শুধু শুনতে মন চায়।
মজিদ হেসে বলল---দে দিখি, বিড়ি দে।
শম্ভু মজিদের ডিঙ্গিতে একটা বিড়ি ছুঁড়ে দিল। মজিদ বিড়িটা ধরিয়ে বললে---জানিস আমার আব্বা কি কইতো, বিড়ির আগুন মনের আগুন নিভায়। আব্বা যেত গেরামে গেরামে গান করতে। বোষ্টমদের সাথে তাল মিলাইতো। তারা গায় ঠাকুর দেবতার গান, আমার আব্বা জাইনতো মাঝি জেবনের গান। শুইনবি লা কি আরেকটা?
---শুনাও। জালটা ততখুনে আরেকটু রসু।
মজিদ বিড়ির ধোঁয়া ছেড়ে চোখ বুজে গাইতে লাগলো, ওর হাতের জ্বলন্ত বিড়িটাকে অবহেলা করে। বিড়ি পুড়তে পুড়তে ওর মনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো ভাটিয়ালি সুরের গান---
সদ্য ফুটা কুঁড়ির ভিতর ভ্রমর গান তুইলে
কামে ভরা দেহের ভিতর পাঁজরটা যায় ফুইলে
হাজা মজা এক পুকুর ভিতর সাঁতারায় শিং মাছে
নদীর ভিতর আসমান ডুইবে জেবন সংসার মাঝে
নির্বিবাদী নর সাইথে মিলল যখুন নারী
কাল নাগিনী বুকে তখুন নাইমছে লোনা বারি...
জালটা গোছাতে লাগলো শম্ভু। পড়ন্ত বেলা। খুব করে তিনটা তো বাজবেই। ফিরে মাছ ভাত রাঁধবে সে। ষষ্ঠীটাকে আসতে বলেছিল। তার নাকি সকাল থেকে জ্বর। শম্ভু দেখল আজ জালে উঠেছে পার্শে, খয়রা, বড় সাইজের তেলাপিয়াও। সরবেড়িয়া হাটে যদি ষষ্ঠী সন্ধেবেলা বেচে আসতে পারে ভালো দাম পাবে।
নৌকা নিয়ে ও যখন ফিরল ঘাটে, তখন দ্বিপ্রহর তিনটে। ঘাট বলতে ওর নিজস্ব। দাদু সনাতন মাঝির বাপ ঠাকুর্দা বানিয়েছিল বসত লাগোয়া নদীর এক অংশে বড় শিরীষ গাছের কাছটা, বড় বড় গাছের গুঁড়ি ফেলে। সে গুঁড়ি অনেক ক্ষয়ে গেছে। কয়েকটা বন্যার সময় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঐ ঘাটেই সে তার নৌকা ভেড়ালো। কাদা মাখা গায়ে ঠোঁটে জ্বলন্ত বিড়িটা চেপে মাছের বালতি হাতে, কাঁধে জাল ফেলে নিজের ঘরের দিকে ফিরতেই চমকে উঠল শম্ভু। কালনাগিনীর ঘাট থেকেই ওর দু' চালা ঘর দেখা যায়। বেশী তো দূর নয়, পঞ্চাশ গজেরও কম হবে।
একটা সাদা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে চালার সামনে। কয়েকজনের জটলাও রয়েছে তার পাশে। মাঝে মধ্যমনি ষষ্ঠীপদটিকেও দেখতে পাচ্ছে শম্ভু। কাছে আসতেই ষষ্ঠী বলল---এই যে শম্ভু আইসছে দিদিমণি, ভীমনাগ বেদের পো।
শম্ভু লক্ষ্য করল ফর্সা উজ্জ্বল রঙের এক শাড়ী পরিহিতা শহুরে দিদিমণি। সঙ্গে একটা আটপৌরে শাড়িতে বয়স্কা মহিলা। দেউলবাড়ির মণ্ডল পাড়ার একটা ছেলেও সঙ্গে আছে। শম্ভু খানিকটা বিব্রত হয়ে বলল---কি হছে এখুন?
ষষ্ঠী বললে---শহুর থিকা দিদিমণি আসছে। তার ফুলের মত বাচ্চাটারে সাপে কাইটছে রে শম্ভু।
শম্ভু বিরক্ত হল। এখন সে আয়েশ করে রাঁধবে। কোনো কাজে তার মন নেই। সাপে কাটা রুগীতো দেখবারই ইচ্ছে নেই তার। সে তো ঠিকই করে নিয়েছে; দাদুর মত ডিঙি বেয়ে মাছ ধরবে। ইচ্ছে হলে সরবেড়িয়া হাটে বেচে আসবে। তাই বললে---আমি এখুন চিকিচ্ছা কইরি লা। বলে দে ষষ্ঠী। হাসপাতালের ডাক্তারটার লিগে দেখাইতে।
---ডাক্তার পাইরবে লাই রে শম্ভু। সে জন্য তো তোর কাছটা আইসছে। তু লা দেইখলে কি হবে বাচ্চাটার!
দেউলবাড়ির মন্ডল পাড়ার ছেলে বলতে সরলার ভাসুরের ছেলে ভগীরথ। সে কাকুতি করে বলল---শম্ভু একটু দিখতে তো পারিস রুগীটারে। শহর থিকে এদ্দুর আসসে, শুধু তোরে দেখাইবে বইলে।
রমা লক্ষ্য করল সুঠাম কৃষ্ণবর্ণের এই দীর্ঘদেহী যুবকের উস্ক খুস্ক চুল আর দাড়িতে ঢাকা মুখমন্ডল সহ সর্বাঙ্গে একটা বন্য ভাব আছে। কিন্তু চোখের মধ্যে একটা মাদকতা মেশানো, যেখানে মনে হয় এই একাকী বেদে যুবকেরও একটা লুক্কায়িত মানবতা রয়েছে গোপনে। আসলে রমা প্রায়শই মানুষের চোখ দেখে তাকে বোঝার চেষ্টা করে, এটা রমার নিছকই অভ্যাস। পীযুষের চোখে যেমন সে বুদ্ধিদীপ্ততা, নীতিবাগ্মীতা খুঁজে পায়, তেমন অনিমেষের অসভ্য চোখকেও সে চিনে ফেলেছিল অবলীলায়। কিন্তু এই যুবকটি একেবারে নতুন, চেহারা যেন লৌহমানব। অথচ চোখ দুটি ভাসা ভাসা, একটা সরলতা মেশানো প্রগাঢ় মানবিক অনুভূতি নীরবে খেলা করে। সে অনুরোধ করে বললে---দেখুন ভাই, আমার একমাত্র ছেলে। আমি এতদূর থেকে এসেছি বিশেষ কোনো আশা নিয়ে নয়। কিন্তু ছেলের জন্য শেষ চেষ্টাটুকু করে যেতে চাই। আপনি একটিবার আমার ছেলেটিকে দেখে মতামত দিলে আমরা চলে যাবো।
শম্ভু রমার মুখের দিকে না তাকিয়ে বললে---রুগী কোথা দেখতেছি লা তো। রুগীরে উঠানে শুয়াও। আমি গা ধুয়ে আসতেছি।
সরলা কপালে হাত ছুঁয়ে প্রণাম করল। বললে---দিদিমণি, ভীমনাগ বেদের ব্যাটা যখুন, ক্ষমতা আছে কিন্তু তার।
যদিও রমার বিশেষ কোনো আস্থা নেই। ড্রাইভার গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দিল। ভগীরথ আর ষষ্ঠীপদ পিকলুর জ্ঞানহীন দেহটা নামিয়ে শম্ভুর হোগলা জঙ্গলে গ্রাস হতে চলা মাটির উঠোনে শুইয়ে দিল। ড্রাইভার বললে---দিদিমণি, আমাকে পয়সা মিটিয়ে দেন। আমার তো আর কোনো কাজ নেই।
রমা বুঝতে পারছিল না ড্রাইভারকে ছেড়ে দেবে কিনা। সত্যিই এই বেদেটা কিছু করতে পারবে নাকি? তেমন অত্যাশ্চর্য কিছু না ঘটলে তো তাদের কিছুক্ষনের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে।
ষষ্ঠী অভয় দিয়ে বললে---দিদিমণি শম্ভু যখন রাজি হছে, তখুন ডাইভার ভাইরে ছাইড়ে দেন। কম করে কাইল সকালের আগে কিছু হবে লাই।
ড্রাইভার চলে গেল। সেই সাথে ভগীরথও চলে গেল তার গ্রামে। তার গ্রামটা যে এখান থেকে প্রায় তিন-চার কিমি দূরে। যাবার সময় রমা ওকে ধন্যবাদ জানালো। ভগীরথ সরলাকে বললে---কাকী একবার ঘরটায় ঘুইরে যাবে গো।
শম্ভু স্নান করল কলতলায়। মাত্র দুটো লুঙ্গি তার। একটা ভিজলে আরেকটা বদলে নেয়। গা'টা মুছে, মাটির দেয়ালে আটকে রাখা আয়নাটায় তাকিয়ে চিরুনি দিল সে। মনে মনে গুনগুন করে গাইতে লাগলো মজিদের গাওয়া গানের শেষ দু' কলি---
নির্বিবাদী নরের সাইথে মিলল যখুন নারী
কাল নাগিনী বুকে তখুন নাইমছে লোনা বারি...