17-11-2023, 06:49 AM
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
শুভাগমন
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
রক্তিম কাকু আমাদের পাড়ার ছেলেদের হার্টথ্রব। বছর পঁয়তাল্লিশের কাকুর চেহারা, তার ড্রেস সেন্স, তার হিউমার, তার মার্জিত ব্যবহার; পাড়ার তাবৎ সাত থেকে সত্তর মহিলার দলকে যেমন মুগ্ধ করে; তেমনই মুগ্ধ করে আট থেকে আশি পুরুষদেরও। বছর পঁচিশ চাকরি করে, টাকা-পয়সা বুঝে নিয়ে, চাকতে রিজাইন করে চলে এলো নিজের পাড়ায়, পৈত্রিক বাড়িতে।
এখন, নিজস্ব সিকিউরিটি এজেন্সি খুলবে। রক্তিম কাকু ডিফেন্স সার্ভিসে কাজ করত। সুতরাং, সিকিউরিটির ব্যাপার-স্যাপার কাকু ভালোই বুঝতো। এছাড়াও, পাড়ার কিছু বেকার ছেলে, কাকুর এজেন্সিতে চাকরি পাচ্ছে, সেটাও আমাদের পাড়ার বড়দের আনন্দের বিষয়। রক্তিম কাকু, আমাদের পাড়ার গর্ব।
এহেন মানুষের বউকে, আমরা কিন্তু রিয়াদি বা রিয়া বৌদি বলতাম। অদ্ভুত ব্যাপার, কাকুর বিয়ে করা বউ; তাকে কাকিমা না বলে, পাড়ার ছোটরা তাকে; দিদি বা বৌদি বলে ডাকছে।
অবশ্য তার কারণও আছে। রক্তিমদা একটু বেশি বয়সে বিয়ে করে আমাদের রিয়াদিকে। রিয়াদি তখন সদ্য কলেজ আউট। চব্বিশ-পঁচিশের ডবগা যুবতী। চোখা মাই, সরু কোমর, সুডৌল নিতম্ব। শালা; মার মার, কাটকাট চেহারা। কলেজের অনেক রোমিও ঘুরঘুর করতো, পাত্তা পায়নি।
এক বিয়ে বাড়িতে, বর-কনের বদলে শুভদৃষ্টি হয়ে গেল, রক্তিম কাকু আর রিয়াদির।
এত পছন্দ হয়ে যায়; সরাসরি বলে,
- ফোন নম্বরটা দাও! … ভুরু কুঁচকে তাকায় রিয়াদি!
- মানে?
- আঃ! তোমার না, তোমার বাবার। কাল যাবো তোমাদের বাড়িতে। তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলতে।
একটা সুবিধা ছিল, রিয়াদির বাবাও ডিফেন্স সার্ভিসে ছিলেন। চট মাঙ্গনি পট বিয়া। সাত দিনের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেল সদ্য পঁচিশের রিয়াদির সঙ্গে বছর পঁয়ত্রিশের রক্তিম কাকুর। আমি, রতন, আরও কয়েকজন তখন সদ্য নাবালকত্বের গণ্ডি পেরিয়েছি। হৈ হৈ করে বিয়ে বাড়ি উতরে দিলাম। দ্বিরাগমনের পরেই উড়ে গেল রক্তিম কাকু আর রিয়াদি। আমাদের পাড়া পুরো অন্ধকার।
বছরে একবার আসতো। একমাসের ছুটিতে। পাড়ায় রোজ মচ্ছব। সকালে রিয়াদির দরবারে সদ্য কিশোরী, তরুণী, যুবতীদের ভিড় তো দুপুরে; মা, মাসীমা, কাকীমাদের। প্রত্যেকেই হাতে করে কিছু না কিছু নিয়ে আসতো। আহা রে! মেয়েটা কোন দূর দেশে পড়ে থাকে। কি-ই বা খায়; কে-ই বা রেঁধে দেয়, কে জানে? অবশ্য, এ সব খাবারের সদগতি আমরাই করি সন্ধেবেলায়।
সন্ধ্যেবেলা আমাদের নিয়ে বসে রক্তিম কাকু। গল্প গুজব, আড্ডা, মুখরোচক সুখাদ্যের পাশাপাশি দুপুরে আনা খাবারের গতি আমরাই করতাম। আমাদের মধ্যে যারা জলবিহারি; তারা মাঝে মাঝেই ভেতরের ঘরে ঘুরতে যেত। অবশ্য, দু-পাঁচ মিনিটেই ফিরে আসতো মুখে এক কুঁচি ফল চিবোতে চিবোতে। তবে এই সুযোগ, মাত্র কয়েকজনই পেত। আমাদের মেয়াদ রাত আটটা অবধি। তারপর, আমাদের খেদিয়ে দিতো। এবার আসর বড়দের।
আগের বছর যখন এসেছিল তখন বলে গিয়েছিল এটাই শেষ বছর। এবার চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে এখানে এসে বসব।
এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুকে ভার দিয়ে গিয়েছিল বাড়িটা রিকনস্ট্রাকট করার। রক্তিম কাকুরা চলে যাওয়ার পরে, সেই বন্ধু এসে বাড়িটা ভেঙে মাঠ করে দিয়ে; সুন্দর একটা দু'হাজার স্কোয়ার ফিটের দোতলা বাড়ি তৈরি করল। একতলায় তিনটে গ্যারাজ আর অফিস। দোতলাটা থাকবার জন্য। একদম টিপটপ করে তৈরি করে ফার্নিচার ঢুকিয়ে একদম ঝকঝকে করে সাজিয়ে রেখে দিল রক্তিম কাকুদের আসার অপেক্ষায়।
সকালবেলা বাজারে যাচ্ছি, দেখি রক্তিম কাকু। বাড়ির সামনে একটা কন্টেইনার ট্রাক দাঁড়িয়ে। জিনিসপত্র নামাচ্ছে। আমাকে দেখেই বলল,
সোমনাথ, তোর জন্য একটা কাজ আছে !