14-11-2023, 10:22 AM
(This post was last modified: 14-11-2023, 10:23 AM by Henry. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
রাত্রি আটটা নাগাদ রাউন্ডে এলেন ডঃ ভট্টাচার্য। সবকিছু দেখে বিশেষ কিছু বললেন না। পীযুষ বা রমাও কোনো কিছু আশা করছে না। তবুও রমা বসে রয়েছে ছেলের পাশে। শ্বাস-প্রশ্বাসটুকু এখনো চলছে। ভেন্টিলেশনে দিতে হয়নি। এটাই এখনো অবধি একমাত্র পজিটিভ। তবে ডঃ ভট্টাচার্যের মতে টেনেটুনে আরো আটচল্লিশ ঘন্টা রোগীকে ভেন্টিলেশন ছাড়াই তারা রাখবেন, যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে।
দশটা নাগাদ পীযুষ আর রমা বাড়ি ফিরল। সন্তানের মুমূর্ষু অবস্থায় কাতর পিতামাতার দুটি অবসন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে কান্নায় চোখ ভিজে আসছিল চাঁপার। কি সুন্দর পরিবারটি ছিল দাদা আর বৌদির। দুজনের মুখে এ ক'দিনে রুক্ষতার ছাপ স্পষ্ট। পীযুষের দাড়ি বেড়ে গেছে এলোমেলো ভাবে। রমার চুলটা সেই একইভাবে খোঁপা করা। ইতিউতি বেরিয়ে আছে চুল। যেন দুজনেই প্রবল ঝড়ের মধ্য হতে বাড়ি ফিরেছে।
টাকা পয়সার অভাব নেই মৈত্র পরিবারের। অথচ সেই তাদের ছেলেকে আজকে তারা বাঁচাতে পারছে না। রাতের খাওয়াটা নেহাতই দৈহিক প্রয়োজনে খেল মৈত্র দম্পতি। পীযুষের সিগারেট খাওয়াটা এ ক'দিনে বেশ বেড়ে গেছে। রমাও আপত্তি করবার মত অবস্থায় নেই। দোতলার ব্যালকনিতে পায়চারি করতে করতে একটার পর একটা সিগারেট টানছে পীযুষ। পিকলুর জন্ম হওয়া, ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে হাঁটতে শেখা, প্রথম 'বাবা' বলতে শেখা সবকিছুই এলোমেলো ভাবে মনে আসছে তার।
পুরুষ মানুষের চোখে জল আসে না। পীযুষের পিতৃহৃদয়ে কম্পন হচ্ছে বারবার, অথচ চশমার আড়ালে চোখের গভীরতায় জমাট বেঁধে রয়েছে জলের কনাগুলি।
ঘরের বিছানাটা এলোমেলো হয়ে পড়েছে। রমার সামনে এমন এলোমেলো থাকাটা অস্বাভাবিক। এখন মন আর দেহের অবসন্নতায় রমার কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করছে না। তবু একটু টানটান করে নিল বিছানা চাদরটা।
চাঁপা বাসন কোচন ধুয়ে ঘুমোতে যাবার আগে একবার উঁকি দিল রমাদের বেডরুমে। রমার পরনে হালকা গোলাপি সুতির নাইটি। বেশ ঢিলেঢালা লাগছে যেন। বৌদি কি একদিনে রোগ হয়ে গেল! নাকি চোখের ভুল চাঁপার। বৌদি এখনো ঘুমোয়নি, বলবে নাকি মায়ের মুখে শোনা ঐ বেদের কথাটা।
পীযুষের কানে পৌছচ্ছে রমাকে বলতে থাকা চাঁপার কথাগুলো। পীযুষ তার পিতার আদর্শে বেড়ে ওঠা একজন বিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক। সে প্রবল রকম নাস্তিক। পীযুষের মত রমা নাস্তিক না হলেও, সাধারণ ঈশ্বর বিশ্বাসটুকু ছাড়া কোনো অন্ধকারচ্ছন্ন সংস্কারমুখীতা রমার মধ্যেও নেই। ওদের বাড়িতে কয়েকটা চিনেমাটি, প্লাস্টার অব প্যারিস কিংবা কাঠের গণেশ, শিব ও বুদ্ধ মূর্তি আছে, একটা যীশুরও মূর্তি আছে। সেগুলিতে ফুল, বেলা পাতা চড়িয়ে পুজো হয় না। বরং শো কেসে সাজানো আছে থরে থরে। রমা মন্দির কিংবা প্রতিমা দর্শন করলে কপালে হাত ছোঁয়ায়, এটুকু পর্যন্ত যা তার বিশ্বাস।
পীযুষ চশমাটা যথাস্থানে রেখে, চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে বিছানায় এলো। চাঁপা শুয়েছে পিকলুর ঘরটাতে। পীযুষ দেখলে ঘরের মধ্যে তখনও আলো জ্বলছে, রমা বিছানার একপাশে পা মুড়ে শুয়ে আছে পীযুষের দিকে পিঠ করে। নিশ্চই ঘুমোয়নি ও। টানটান করে শুয়ে আলোটা নিভিয়ে দিল পীযুষ।
রমা আচমকা পীযুষের দিকে মুখ ফিরিয়ে সেঁধিয়ে গেল স্বামীর বুকে। আলতো করে পিঠে হাত রাখলো পীযুষ। রমা বললে---চাঁপা বলছিল এক বেদের কথা। আমরা কি একবার নিয়ে যাবো পিকলুকে!
পীযুষ রমাকে খান্ত করে বললে---রমা বেদে, ওঝা, গুনীন এরা কি কেউ সাপে কাটা রোগীকে বাঁচাতে পারে? সবই বুজরুকী। তুমি জানো, প্রত্যেক বছর কত সাপে কাটা মানুষ এই সমস্ত ওঝা, গুনীনদের হাতে পড়ে মারা যায়? কিছু নির্বিষ সাপের কামড় খাওয়া রোগীদের বাঁচিয়ে এসব লোকেদের গ্রামে গঞ্জে নামডাক হয়। স্রেফ বুজরুকী ছাড়া আর কিছু নয়।
রমা মৃদু প্রতিবাদ করে উঠল। বললে---চিকিৎসা বিজ্ঞানও তো ব্যর্থ আমাদের ছেলেকে বাঁচাতে!
---রমা। তুমি নিশ্চই শুনেছ পিকলুর গায়ে যে পরিমান নিউরোটক্সিন পাওয়া গেছে, সেটা স্বাভাবিক সাপের কামড়ের চেয়ে বেশি।
রমা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল---তবে কি এই মাত্রাতিরিক্ত বিষটা আশ্চর্য নয়!
---আশ্চর্য বলেই তো আমাদের ছেলের প্রাণ সংশয় তৈরি হয়েছে। আসলে রমা এই সময় যখন আমাদের কিছু করার নেই, তখন লোকে যা বলছে তা মনে হচ্ছে তোমার।
রাগত অথচ কান্না মিশ্রিত গলায় রমা বলে উঠল---এদিকে ডক্টর বললেন কোনো মিরাকল ছাড়া আমাদের পিকলু...এদিকে তোমাদের বিজ্ঞান কোনো মিরাকলে বিশ্বাস করে না! তবে কি আমরা দিন গুনব আমাদের ছেলের মৃত্যু....
কথাটা অসমাপ্ত রেখেই ফুঁপিয়ে উঠল রমা। পীযুষ ওকে শান্ত করবার চেষ্টা করতে লাগলো। পীযুষ নিজেই জানে তার কাছে আর কোনো উত্তর নেই যা দিয়ে এখন রমাকে শান্ত করা যায়।
দশটা নাগাদ পীযুষ আর রমা বাড়ি ফিরল। সন্তানের মুমূর্ষু অবস্থায় কাতর পিতামাতার দুটি অবসন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে কান্নায় চোখ ভিজে আসছিল চাঁপার। কি সুন্দর পরিবারটি ছিল দাদা আর বৌদির। দুজনের মুখে এ ক'দিনে রুক্ষতার ছাপ স্পষ্ট। পীযুষের দাড়ি বেড়ে গেছে এলোমেলো ভাবে। রমার চুলটা সেই একইভাবে খোঁপা করা। ইতিউতি বেরিয়ে আছে চুল। যেন দুজনেই প্রবল ঝড়ের মধ্য হতে বাড়ি ফিরেছে।
টাকা পয়সার অভাব নেই মৈত্র পরিবারের। অথচ সেই তাদের ছেলেকে আজকে তারা বাঁচাতে পারছে না। রাতের খাওয়াটা নেহাতই দৈহিক প্রয়োজনে খেল মৈত্র দম্পতি। পীযুষের সিগারেট খাওয়াটা এ ক'দিনে বেশ বেড়ে গেছে। রমাও আপত্তি করবার মত অবস্থায় নেই। দোতলার ব্যালকনিতে পায়চারি করতে করতে একটার পর একটা সিগারেট টানছে পীযুষ। পিকলুর জন্ম হওয়া, ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে হাঁটতে শেখা, প্রথম 'বাবা' বলতে শেখা সবকিছুই এলোমেলো ভাবে মনে আসছে তার।
পুরুষ মানুষের চোখে জল আসে না। পীযুষের পিতৃহৃদয়ে কম্পন হচ্ছে বারবার, অথচ চশমার আড়ালে চোখের গভীরতায় জমাট বেঁধে রয়েছে জলের কনাগুলি।
ঘরের বিছানাটা এলোমেলো হয়ে পড়েছে। রমার সামনে এমন এলোমেলো থাকাটা অস্বাভাবিক। এখন মন আর দেহের অবসন্নতায় রমার কিচ্ছু করতে ইচ্ছে করছে না। তবু একটু টানটান করে নিল বিছানা চাদরটা।
চাঁপা বাসন কোচন ধুয়ে ঘুমোতে যাবার আগে একবার উঁকি দিল রমাদের বেডরুমে। রমার পরনে হালকা গোলাপি সুতির নাইটি। বেশ ঢিলেঢালা লাগছে যেন। বৌদি কি একদিনে রোগ হয়ে গেল! নাকি চোখের ভুল চাঁপার। বৌদি এখনো ঘুমোয়নি, বলবে নাকি মায়ের মুখে শোনা ঐ বেদের কথাটা।
পীযুষের কানে পৌছচ্ছে রমাকে বলতে থাকা চাঁপার কথাগুলো। পীযুষ তার পিতার আদর্শে বেড়ে ওঠা একজন বিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক। সে প্রবল রকম নাস্তিক। পীযুষের মত রমা নাস্তিক না হলেও, সাধারণ ঈশ্বর বিশ্বাসটুকু ছাড়া কোনো অন্ধকারচ্ছন্ন সংস্কারমুখীতা রমার মধ্যেও নেই। ওদের বাড়িতে কয়েকটা চিনেমাটি, প্লাস্টার অব প্যারিস কিংবা কাঠের গণেশ, শিব ও বুদ্ধ মূর্তি আছে, একটা যীশুরও মূর্তি আছে। সেগুলিতে ফুল, বেলা পাতা চড়িয়ে পুজো হয় না। বরং শো কেসে সাজানো আছে থরে থরে। রমা মন্দির কিংবা প্রতিমা দর্শন করলে কপালে হাত ছোঁয়ায়, এটুকু পর্যন্ত যা তার বিশ্বাস।
পীযুষ চশমাটা যথাস্থানে রেখে, চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে বিছানায় এলো। চাঁপা শুয়েছে পিকলুর ঘরটাতে। পীযুষ দেখলে ঘরের মধ্যে তখনও আলো জ্বলছে, রমা বিছানার একপাশে পা মুড়ে শুয়ে আছে পীযুষের দিকে পিঠ করে। নিশ্চই ঘুমোয়নি ও। টানটান করে শুয়ে আলোটা নিভিয়ে দিল পীযুষ।
রমা আচমকা পীযুষের দিকে মুখ ফিরিয়ে সেঁধিয়ে গেল স্বামীর বুকে। আলতো করে পিঠে হাত রাখলো পীযুষ। রমা বললে---চাঁপা বলছিল এক বেদের কথা। আমরা কি একবার নিয়ে যাবো পিকলুকে!
পীযুষ রমাকে খান্ত করে বললে---রমা বেদে, ওঝা, গুনীন এরা কি কেউ সাপে কাটা রোগীকে বাঁচাতে পারে? সবই বুজরুকী। তুমি জানো, প্রত্যেক বছর কত সাপে কাটা মানুষ এই সমস্ত ওঝা, গুনীনদের হাতে পড়ে মারা যায়? কিছু নির্বিষ সাপের কামড় খাওয়া রোগীদের বাঁচিয়ে এসব লোকেদের গ্রামে গঞ্জে নামডাক হয়। স্রেফ বুজরুকী ছাড়া আর কিছু নয়।
রমা মৃদু প্রতিবাদ করে উঠল। বললে---চিকিৎসা বিজ্ঞানও তো ব্যর্থ আমাদের ছেলেকে বাঁচাতে!
---রমা। তুমি নিশ্চই শুনেছ পিকলুর গায়ে যে পরিমান নিউরোটক্সিন পাওয়া গেছে, সেটা স্বাভাবিক সাপের কামড়ের চেয়ে বেশি।
রমা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল---তবে কি এই মাত্রাতিরিক্ত বিষটা আশ্চর্য নয়!
---আশ্চর্য বলেই তো আমাদের ছেলের প্রাণ সংশয় তৈরি হয়েছে। আসলে রমা এই সময় যখন আমাদের কিছু করার নেই, তখন লোকে যা বলছে তা মনে হচ্ছে তোমার।
রাগত অথচ কান্না মিশ্রিত গলায় রমা বলে উঠল---এদিকে ডক্টর বললেন কোনো মিরাকল ছাড়া আমাদের পিকলু...এদিকে তোমাদের বিজ্ঞান কোনো মিরাকলে বিশ্বাস করে না! তবে কি আমরা দিন গুনব আমাদের ছেলের মৃত্যু....
কথাটা অসমাপ্ত রেখেই ফুঁপিয়ে উঠল রমা। পীযুষ ওকে শান্ত করবার চেষ্টা করতে লাগলো। পীযুষ নিজেই জানে তার কাছে আর কোনো উত্তর নেই যা দিয়ে এখন রমাকে শান্ত করা যায়।