14-11-2023, 10:22 AM
পীযুষের এক পরিচিত বন্ধু ডঃ পার্থপ্রতীম মাহাতো উঃ বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের চকিৎসক ও অধ্যাপক। তিনি আগামীকাল আসবেন নিজে পিকলুকে একবার দেখতে। পীযুষ নিজে হারপেটোলজিস্ট, সাপ বিষয়ে তার খুঁটিনাটি জানা। সে নিজেই বুঝতে পারছে পিকলুকে বাঁচানো মুশকিল। কার্যত অসম্ভব। শিকারের গায়ে যে পরিমান বিষ দেয়, তিনটে বাইটে ক্রমাগত সাপটি পর পর বিষ ঢেলেছে তার সমপরিমাণ করে। অর্থাৎ প্রায় তিরিশ-পঁয়ত্রিশ মিলিগ্রাম বিষ ঢেলেছে এই গোখরোটি, যা অস্বাভাবিকই। সেই সাথে সময়মত এভিএস না দেওয়াতেও গোলযোগ হয়েছে।
ডঃ ভট্টাচার্য আবার আটটার দিকে রাউন্ডে আসবেন। তখন দেখে যাবেন রুগীকে। এতক্ষন রমার এমন নীরবে ছেলের কাছে বসে থাকাটা যে ঠিক হবে না পীযুষ সেটা বুঝতে পারছে। কিন্তু উপায় বলেও কিছু নেই।
ইতিমধ্যে কত জায়গা থেকে ফোন এসে পৌঁছেছে পীযুষের কাছে। ফোনটা আর ধরতে ইচ্ছে করছে না বলেই ও ওটা এখন বিপ্লবের কাছে রেখেছে। বিপ্লবই যা বলার বলছে।
হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে এলো পীযুষ। সিগারেট ধরিয়ে দেখল অদূরে বিপ্লব পায়চারি করছে। পীযুষকে দেখে ও এগিয়ে এসে বললে---সাউথ থেকে ডঃ রামারাও বলে একজন আসতে চান। তোর সাথে নাকি পরিচয় হয়েছিল তিরুবন্তপুরমের কোনো একটি সেমিনারে।
পীযুষ ধোঁয়া ছেড়ে বলল---এসে বিশেষ কিছু লাভ হবে না। কাল ডঃ মাহাতো এসে পৌঁছবেন। তাতেও যে কিছু হবে তা নয়।
বিপ্লব জানে সাপ বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য থাকা পীযুষই যখন নিরাশাগ্রস্ত, তাহলে কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই সে বলল---তবে কি ডঃ রামারাওকে না বলে দেব।
পীযুষ হ্যা সূচক মাথা নাড়লো। সিগারেটটা সম্পূর্ন শেষ না করে ফেলে দিল ও। বিপ্লব ডঃ রামরাওয়ের সাথে ফোনে কথা শেষ করে এগিয়ে এসে বললে---কাল তোর কলেজে যাবার দরকার নেই। আমি ডিপার্টমেন্টকে জানিয়ে দিয়েছি। প্রিন্সিপ্যাল স্যারও জানেন।
পীযুষ বললে---না যাওয়ার কিছু নেই। এখানে থেকেও তো কিছু করতে পারবো না। ঐ যা রমার পাশে থাকা। তার চেয়ে সাইনটা করে আসবো।
সন্ধে নাগাদ চাঁপার মা সরলা এসেছিল পীযূষদের বাড়িতে। পীযুষ-রমা তখন হাসপাতালে। সরলা নাতিকে নিয়ে যেতে এসেছে। চাঁপার ছেলেটা চাঁপার সাথেই পীযুষদের বাড়িতে আছে এই ক'দিন। সাত বছরের অবুঝ ছেলে; এ বাড়ির এ জিনিস ও জিনিসে হাত দিচ্ছে। এরমধ্যেই একটা চিনেমাটির পুতুল ভেঙে ফেলেছে। চাঁপা তাই অতিষ্ঠ হয়ে মাকে ফোন করেছিল ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
এদিকে ছেলেটি আবার রাতে চাঁপাকে ছাড়া ঘুমোতে চায় না। যাইহোক করে আজ নাতিকে ঘুম পাড়াতে হবে সরলাকে।
সরলা নাতিকে আনতে এসে জিজ্ঞেস করলে---কি রে? বাবুর ছেলেটার জ্ঞানটা ফিইরল?
----না গো মা। পিকলু বাবুর বাঁইচবার আশাটা বুধয় নাই।
সরলা বললে---শহুরের তুরা বিশ্বাস কইরবিনি। তোর বাপের গেরামে দাস পাড়ার বউটাকে গোখরা কামড়িছিল। কেউ কয়ছিল না বাঁচবে বইলে। সরবেড়িয়ার ভীমনাগ বেদে আইসে এমন জাদু কইরলো, সেই বউ কিনা বাঁইচে গেল।
খটকা লাগলো চাঁপার, বলল----কি নাম বইলে মা, ভীমনাগ?
---হুম্ম ভীমনাগ বেদে। গুনীন বইলে ভুল হবে রে। মন্ত্র-টন্ত্র কিছু পইড়ে না। শুধু জড়ি বুটি দিয়া চিকিচ্ছা কইরেছে।
চাঁপার তখন মনে পড়ল, একই নাম তো ঐ সাপুড়েটাও বলেছিল তাকে। সে তৎক্ষনাৎ বললে---সত্যিই কি মা, বেদেরা ভালো কইরতে পারে?
----পারে না বইলতে! আমি তখুন নতুন বউ হয়ে গেছি তোর বাপের ঘরটায়। আমি লিজে দেখছি, ভীমনাগ বেদে সারাইছে বউটারে। গোটা গা বউটার নীল পইড়ে গেছিল।
---মা গো, দাদারে যে সাপ দেয় সাপুড়েটা, সেও বইল ছিল ভীমনাগ বেদের কুথা। তার ব্যাটা শম্ভু না কি যেন নাম কইল, সে এখন বেদে। তুমি কি সত্যি তারে চিনো?
---তার ব্যাটারে আমি চিনব কেমন কইরে? তবে ভীমনাগরে চিনি। তোর বাপের গেরাম দেউলবাড়ি থিকে তিন কিমি দূরে সরবেড়িয়া গেরাম। কালনাগিনী নদী ধারে জেলের ঘরে মেয়েকে বেয়ে কইরে থাইকতো। সে আজ বিশ-পঁচিশ বছর আগেকার কুথা। ভীমনাগ বেদে কি একটারে? তোর বাপের মুখে, জেঠার মুখে শুইনেছি শ' শ' সাপকাটা রুগীকে বাঁচাইছে। তখুন তো অত হাসপাতাল ছিল না। গেরামের লোকের রাতে ভিতে সাপ কাইটলে ভরসা ভীমনাগ বেদে।
----সত্যি মা, পিকলু বাবুরে লিয়ে গেলে ভালো হই যাবে?
---তুরা বিশ্বাস কইরবিনি, এখনকার ছিলেমেয়ে কিনা। আমি নিজে দেইখছি। ভীমনাগ বেদের ক্ষমতা ছিল। কত লোককে বাঁচাইল। তুর জেঠারে ফোনটা কইরলে বলে দিবে সে বেঁচে আছেটা নাকি।
চাঁপা বলল---মা তুমি কথা কও না এখুনি জেঠার সাথে।
সরলা ইতস্তত করল। চাঁপার জেঠা ওদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। তাই খুব একটা ওরা যোগাযোগ রাখে না। তাই সে বললে---তুর কাছে ভগীরথের নম্বরটা আছে না? তারে ফোন দে না!
ভগীরথ চাঁপার জেঠার ছেলে। ঐ যা চাঁপাদের সাথে ভালোমন্দ যোগাযোগ রাখে। চাঁপা ভগীরথের নম্বরে ফোন লাগিয়ে সরলাকে ফোনটা দিল।
সরলা ভগীরথের সাথে খানিক্ষণ কথা সেরে, বললে---চাঁপা তোরে সেই সাপুড়েটা ঠিক কয়েছে। ভীমনাগ বেদে আর বাঁইচে নাই। তার ব্যাটা শম্ভু বেদে চিকিচ্ছা করে। তবে সে নাকি বড় মেজাজী। শখ হলে দেখে না হলে দিখবে নাই। তবে সেও নাকি বাপের মত ক্ষমতা রাখে।
++++++
ডঃ ভট্টাচার্য আবার আটটার দিকে রাউন্ডে আসবেন। তখন দেখে যাবেন রুগীকে। এতক্ষন রমার এমন নীরবে ছেলের কাছে বসে থাকাটা যে ঠিক হবে না পীযুষ সেটা বুঝতে পারছে। কিন্তু উপায় বলেও কিছু নেই।
ইতিমধ্যে কত জায়গা থেকে ফোন এসে পৌঁছেছে পীযুষের কাছে। ফোনটা আর ধরতে ইচ্ছে করছে না বলেই ও ওটা এখন বিপ্লবের কাছে রেখেছে। বিপ্লবই যা বলার বলছে।
হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে এলো পীযুষ। সিগারেট ধরিয়ে দেখল অদূরে বিপ্লব পায়চারি করছে। পীযুষকে দেখে ও এগিয়ে এসে বললে---সাউথ থেকে ডঃ রামারাও বলে একজন আসতে চান। তোর সাথে নাকি পরিচয় হয়েছিল তিরুবন্তপুরমের কোনো একটি সেমিনারে।
পীযুষ ধোঁয়া ছেড়ে বলল---এসে বিশেষ কিছু লাভ হবে না। কাল ডঃ মাহাতো এসে পৌঁছবেন। তাতেও যে কিছু হবে তা নয়।
বিপ্লব জানে সাপ বিষয়ে অগাধ পান্ডিত্য থাকা পীযুষই যখন নিরাশাগ্রস্ত, তাহলে কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই সে বলল---তবে কি ডঃ রামারাওকে না বলে দেব।
পীযুষ হ্যা সূচক মাথা নাড়লো। সিগারেটটা সম্পূর্ন শেষ না করে ফেলে দিল ও। বিপ্লব ডঃ রামরাওয়ের সাথে ফোনে কথা শেষ করে এগিয়ে এসে বললে---কাল তোর কলেজে যাবার দরকার নেই। আমি ডিপার্টমেন্টকে জানিয়ে দিয়েছি। প্রিন্সিপ্যাল স্যারও জানেন।
পীযুষ বললে---না যাওয়ার কিছু নেই। এখানে থেকেও তো কিছু করতে পারবো না। ঐ যা রমার পাশে থাকা। তার চেয়ে সাইনটা করে আসবো।
সন্ধে নাগাদ চাঁপার মা সরলা এসেছিল পীযূষদের বাড়িতে। পীযুষ-রমা তখন হাসপাতালে। সরলা নাতিকে নিয়ে যেতে এসেছে। চাঁপার ছেলেটা চাঁপার সাথেই পীযুষদের বাড়িতে আছে এই ক'দিন। সাত বছরের অবুঝ ছেলে; এ বাড়ির এ জিনিস ও জিনিসে হাত দিচ্ছে। এরমধ্যেই একটা চিনেমাটির পুতুল ভেঙে ফেলেছে। চাঁপা তাই অতিষ্ঠ হয়ে মাকে ফোন করেছিল ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
এদিকে ছেলেটি আবার রাতে চাঁপাকে ছাড়া ঘুমোতে চায় না। যাইহোক করে আজ নাতিকে ঘুম পাড়াতে হবে সরলাকে।
সরলা নাতিকে আনতে এসে জিজ্ঞেস করলে---কি রে? বাবুর ছেলেটার জ্ঞানটা ফিইরল?
----না গো মা। পিকলু বাবুর বাঁইচবার আশাটা বুধয় নাই।
সরলা বললে---শহুরের তুরা বিশ্বাস কইরবিনি। তোর বাপের গেরামে দাস পাড়ার বউটাকে গোখরা কামড়িছিল। কেউ কয়ছিল না বাঁচবে বইলে। সরবেড়িয়ার ভীমনাগ বেদে আইসে এমন জাদু কইরলো, সেই বউ কিনা বাঁইচে গেল।
খটকা লাগলো চাঁপার, বলল----কি নাম বইলে মা, ভীমনাগ?
---হুম্ম ভীমনাগ বেদে। গুনীন বইলে ভুল হবে রে। মন্ত্র-টন্ত্র কিছু পইড়ে না। শুধু জড়ি বুটি দিয়া চিকিচ্ছা কইরেছে।
চাঁপার তখন মনে পড়ল, একই নাম তো ঐ সাপুড়েটাও বলেছিল তাকে। সে তৎক্ষনাৎ বললে---সত্যিই কি মা, বেদেরা ভালো কইরতে পারে?
----পারে না বইলতে! আমি তখুন নতুন বউ হয়ে গেছি তোর বাপের ঘরটায়। আমি লিজে দেখছি, ভীমনাগ বেদে সারাইছে বউটারে। গোটা গা বউটার নীল পইড়ে গেছিল।
---মা গো, দাদারে যে সাপ দেয় সাপুড়েটা, সেও বইল ছিল ভীমনাগ বেদের কুথা। তার ব্যাটা শম্ভু না কি যেন নাম কইল, সে এখন বেদে। তুমি কি সত্যি তারে চিনো?
---তার ব্যাটারে আমি চিনব কেমন কইরে? তবে ভীমনাগরে চিনি। তোর বাপের গেরাম দেউলবাড়ি থিকে তিন কিমি দূরে সরবেড়িয়া গেরাম। কালনাগিনী নদী ধারে জেলের ঘরে মেয়েকে বেয়ে কইরে থাইকতো। সে আজ বিশ-পঁচিশ বছর আগেকার কুথা। ভীমনাগ বেদে কি একটারে? তোর বাপের মুখে, জেঠার মুখে শুইনেছি শ' শ' সাপকাটা রুগীকে বাঁচাইছে। তখুন তো অত হাসপাতাল ছিল না। গেরামের লোকের রাতে ভিতে সাপ কাইটলে ভরসা ভীমনাগ বেদে।
----সত্যি মা, পিকলু বাবুরে লিয়ে গেলে ভালো হই যাবে?
---তুরা বিশ্বাস কইরবিনি, এখনকার ছিলেমেয়ে কিনা। আমি নিজে দেইখছি। ভীমনাগ বেদের ক্ষমতা ছিল। কত লোককে বাঁচাইল। তুর জেঠারে ফোনটা কইরলে বলে দিবে সে বেঁচে আছেটা নাকি।
চাঁপা বলল---মা তুমি কথা কও না এখুনি জেঠার সাথে।
সরলা ইতস্তত করল। চাঁপার জেঠা ওদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে। তাই খুব একটা ওরা যোগাযোগ রাখে না। তাই সে বললে---তুর কাছে ভগীরথের নম্বরটা আছে না? তারে ফোন দে না!
ভগীরথ চাঁপার জেঠার ছেলে। ঐ যা চাঁপাদের সাথে ভালোমন্দ যোগাযোগ রাখে। চাঁপা ভগীরথের নম্বরে ফোন লাগিয়ে সরলাকে ফোনটা দিল।
সরলা ভগীরথের সাথে খানিক্ষণ কথা সেরে, বললে---চাঁপা তোরে সেই সাপুড়েটা ঠিক কয়েছে। ভীমনাগ বেদে আর বাঁইচে নাই। তার ব্যাটা শম্ভু বেদে চিকিচ্ছা করে। তবে সে নাকি বড় মেজাজী। শখ হলে দেখে না হলে দিখবে নাই। তবে সেও নাকি বাপের মত ক্ষমতা রাখে।
++++++