Thread Rating:
  • 138 Vote(s) - 3.72 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
পীযুষ আসার আগে রমা নিজেই ভর্তি করেছিল পিকলুকে কলকাতার নামী বেসরকারি নার্সিংহোমে। পরে পর্যাপ্ত এন্টি ভেনম না পাওয়ায় স্থানান্তরিত করতে হয়েছে এসএসকেএমে। ডঃ ভট্টাচার্য, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য খুব সুপরিচিত এবং সুদক্ষ। তিনি স্পষ্টতই বললেন সাপে কাটা রোগীকে সবসময়ের জন্য সরকারী হাসপাতালে আনা উচিত। কারণ একমাত্র সরকারী হাসপাতালে পর্যাপ্ত এন্টিভেনম থাকে। বেসরকারি হাসপাতালকে এন্টি ভেনম কিনে আনতে হয় অন্যত্র থেকে।
সচরাচর গ্রামের ক্ষেতে খামারের লোকেদেরই সাপে কাটে। যারা মূলত সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি হন। ফলে ওখানেই এভিএস পর্যাপ্ত রাখা হয়। নামী বেসরকারি হাসপাতালে গ্রামের সাধারণ চাষীরা ভর্তি হন না। ফলে সাপে কাটা রোগী খুবই কম দেখা যায় এই বেসরকারি নার্সিংহোমগুলোতে। এখানে পর্যাপ্ত এভিএসও তাই রাখা হয় না।

পিকলুর ক্ষেত্রে শুধু দেরী নয়, ডঃ ভট্টাচার্য পীযুষকে ডেকে বললেন---মিঃ মৈত্র, প্রথমত আমরা বলি স্নেক বাইট থেকে হান্ড্রেড মিনিটস এর কথা। যার মধ্যে পেশেন্টকে এভিএস দেওয়া জরুরী। কিন্তু আপনার ছেলের ক্ষেত্রে প্রায় ফার্স্ট এন্টি ভেনম দেওয়া হয়েছে বাইট থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা পর। তারপরে নার্সিং হোম এন্টিভেনামের অভাবে রেফার করেছে। কাজেই সেকেন্ড ডোজ দেওয়া হয়েছে তার থেকে থ্রী আওয়ার, যেটাও বেশ দেরিতে। আর সবচেয়ে স্ট্রেঞ্জ, আপনি হারপেটোলজিস্ট, আপনি ভালো বুঝবেন সাপেদের এমন প্রবল পরিমান ভেনম কখনো কোনো মানুষের দেহে ঢালতে দেখা যায় না। সাপেরা সাধারণত মানুষকে ভয় পেয়ে কামড় দেয়। মানুষ তাদের শিকার নয়। তাই সাপেরা মানুষের দেহে অতটা বিষ প্রয়োগ করে না। কিন্তু এক্ষেত্রে খুব ব্যতিক্রমী হয়েছে। তিনবার বাইট শুধু নয়, মারাত্বক পরিমাণে বিষ প্রয়োগ করেছে। খুব স্ট্রেঞ্জ স্নেক বিহেভিয়ার!

রমা অদূরেই দাঁড়িয়ে চিকিৎসকের কথা শুনতে পাচ্ছিল। ওর মাথা ঘুরোচ্ছে। দু'দিন হল এক শাড়িতে ই নাওয়া-খাওয়া ভুলে ছেলের পাশে। বিপ্লবের স্ত্রী ওর পিঠে হাত রেখে সামলে রেখেছে।

পীযুষের মুখটিও তখন ফ্যাকাশে রক্তশূন্য অবস্থা। বিষন্ন মুখে ও স্ত্রীর দিকে তাকালো একবার। পিকলুর এখনো জ্ঞান ফেরেনি। শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে অথচ এখনো নিস্তেজ। বিপ্লবের স্ত্রী রমাকে বললে---রমা দি, কিছুই তো খেলে না। বাড়ি গিয়ে একটু রেস্ট নাও।

রমা নিরুত্তর হয়ে বসে রইল। পীযুষ ওর পাশে বসে আলতো করে কাঁধে রাখলো, বলল---রমা, বিপ্লব তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে, একটু রেস্ট নাও লক্ষ্মীটি। আমি গিয়ে বিকেলে তোমাকে নিয়ে আসবো।

ইচ্ছে ছিল না রমার। শেষ পর্যন্ত সকলের একযোগে বোঝানোতে ও গিয়ে উঠল বিপ্লবের গাড়িতে। চাঁপা ওর ছেলেকে নিয়ে পীযুষের বাড়িতেই রয়েছে গতরাত থেকে। দাদা-বৌদির জন্য ও খাবার পাঠিয়েছে গতরাতে। রমা ঢুকতেই চাঁপা বললে---বৌদি, পিকলুর জ্ঞানটা ফিইরছে গো?

রমার নিরুত্তর পাংশু মুখটি দেখে চাঁপা বুঝতে পারলো পিকলুর জীবিত ফেরার আশা কার্যত শূন্য। হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল রমা। চাঁপা রমাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালো। বিপ্লব বলল---বৌদিকে একটু জল খেতে দাও তো চাঁপা।

বিপ্লব বেরিয়ে যাবার পর একটু ধাতস্থ হতে রমা স্নানে গেলে। স্নান সেরে বেরোতে দেখলো খাবার টেবিলে ভাত বেড়ে রেখেছে চাঁপা। মুখটা বিস্বাদ লাগছে তার। তবু এনার্জি জোগানোর জন্য যতটুকু খেতে পারা যায় খেল।

সাড়ে তিনটা নাগাদ কলিং বেলটা আচমকা বেজে উঠল। চাঁপা ছেলেকে খাইয়াচ্ছিল। ও বেডরুমে দেখলে শরীরে অজস্র ক্লান্তি আর বিষাদ নিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে বৌদি। রমাকে না ডেকে নীচে নেমে গেল। কোলাপ্সিবল গেটটা খুলতেই দেখল ও সাপুড়ে লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। একগাল হেসে ষষ্ঠীপদ বললে---সার বাড়িতে লাই?

সাপুড়ে লোকটাকে দেখে বড্ড রাগ হচ্ছিল চাঁপার। বিরক্ত হয়ে বললে---কুনো দরকার নাই। আপনি যান ইখান থিকে।

ষষ্ঠীপদ চাঁপার আচরণে ভিমরি খেয়ে বললে---সারের জন্য শঙ্খিনীটা লিয়ে আসছি।

---আবার সাপ! ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল চাঁপা। বললে---দূরে দাঁড়িয়ে থাকুন। একদম কাছে আইসবেন না। আপনার দিয়া সাপটার লিয়েই আজ পেরানটা যেতে বসছে পিকলু বাবুর।

চমকে উঠল ষষ্ঠী! বললে---কি কন মা! সাপে কাটছে লা কি? কারে কাটছে?

---পিকলু। স্যারের ছেলেকে সাপে কাটছে। এখুন জমে-মানুষে টানাটানিটা চইলছে।

ষষ্ঠী বললে---কুন সাপটা?

---ঐ বড় খরিশ সাপটা। যেটা সিদিন দিয়ে গেলে দাদারে।

---কি কন মা! পদ্ম! কাইটলো কি কইরে? সে সাপ তো সার কাচের বাক্সটার ভিতর রাইখে।

---বাক্স থেকে বার হইছিল শয়তানটা। ইস্কুল থিকে ফিরবার সময় পিকলুরে কাইটছে।

ষষ্ঠীপদ একবার মনে মনে মা মনসাকে ডেকে কপালে হাত ছোঁয়ালো। বললে---সাপটা কুথায় আছে তারে আমার সারকে দিয়াটা ঠিক হয়নি বুধয়।

----সাপটারে বৌদি মাইরে ফেলছে।

ভয় পেয়ে গেল ষষ্ঠী। এ যে শম্ভুর নাগর। প্রিয়তমা পোষ্য। শম্ভুটা জানতে পারলে যে তাকে আর আস্ত রাখবে না। সেসব না হয় পরে ভাবা যাবে। এখন স্যারের ছেলেটার জীবনটা বাঁচুক এই ইচ্ছে নিয়ে ষষ্ঠীপদ পুনরায় বললে---একটা কুথা বলব মা?

চাঁপা গেটটা বন্ধ করতে যাচ্ছিল। থেমে গিয়ে বলল---বলেন?

---সারের ছিলে টাকে একবার যদি শম্ভু বেদেটারে দিখান। আমার গ্রামে একঘরই বেদে আইছে। তার বাপ ভীমনাগ বেদে সাপের জম ছিল। শম্ভুটা বড় খামখেয়ালিটা আইছে যদিও, তবু যদি একবার তারে দিখান, ছিলাটা ভালো হয়ে যাবে।

চাঁপা আর কোনো কথা বলল না। কোলাপ্সিবল গেটটা এঁটে দিল ও। দোতলায় এসে দেখলে বৌদি ঘুম থেকে উঠে চোখে মুখে জল দিচ্ছে। চাঁপাকে দেখে জিজ্ঞেস করল---কে এসেছিল রে রমা।

চাঁপা বললে---সেই সাপুড়েটা এসেছিল গো বৌদি। আমি তারে দূর করে দিছি। বিষধর সাপ আইনে ঘরে ছাইড়লো, এখুন বলে কিনা তার গেরামে কে বেদেটা আছে তারে পিকলুকে দেখাইতে!


পীযুষ নিজে এসে রমাকে নিয়ে গেল হাসপাতালে। হাসপাতাল বেডে জ্ঞানহীন পিকলুর শায়িত দেহের মাথার কাছে বসে রইল রমা। খানিক আগে ডাক্তার দেখে গেছেন। কোনো পজেটিভ সাইন দেখছেন না চিকিৎসক নির্মল ভট্টাচার্য।
কালো হয়ে গেছে সাপের কামড় দেওয়া পিকলুর বাম পা'টা। বেশ ফুলে উঠেছে ওখানে। বাবা-মায়ের মত পিকলুর গায়ের রঙটাও টকটকে উজ্জ্বল ফর্সা। সেই ছেলেরই সর্বাঙ্গ এখন যেন কেমন কালচে হয়ে উঠেছে। রমা তাকাতে পারছে না ছেলের মুখের দিকে। মনের মধ্যে অস্থির চিন্তাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে অবিরত।
[+] 7 users Like Henry's post
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 14-11-2023, 10:21 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)