14-11-2023, 10:20 AM
সাড়ে তিনটা নাগাদ চাঁপা হাজির হল। রমা ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে ছাদে মেলে দেওয়া কাপড়গুলো তুলে এনেছে। রৌদ্রে শুকে যাওয়া গরম জামাকাপড়গুলো বিছানাতে মেলিয়ে দিয়েছে ও। মৃদু শব্দে টিভিটা চালিয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছে রমা। চাঁপা এসে কিচেনের সিঙ্কে পড়ে থাকা বাসনগুলো ধুয়ে ফেলতে ফেলতে গুনগুন করে গান করছে আপন মনে।
মোবাইল ফোনটা অনবরত বাজছে বেডরুমে। রমা ঘুমিয়েছিল, মাথার কাছে রয়েছিল ফোনটা। এখন আর সোফা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না রমার। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে আজ কেমন যেন একটা অবসন্ন লাগছে। ফোনটা দ্বিতীয়বার রিং হয়ে ভাবলো চাঁপাকে বলবে ফোনটা দিয়ে যাবার জন্য। চাঁপা তখন বাসনগুলো ধুয়ে থাকে সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত। কাজেই ফোনটা নিজেই নিয়ে এসে ধরতে হল রমাকে।
পীযুষের ফোন। ওর ফিরতে দেরি হবে। কলেজের অধ্যাপকদের জেনারেল মিটিং আছে। পীযুষ অবশ্য বেরোবার সময় বলেছিল 'আজ যত ঝামেলা, আজ আবার মিটিংও আছে'।
চাঁপা বললে---বৌদি, কেষ্টপুরে একটা মিছিল বার হইছে। কত লোক!
রমা টিভি থেকে চোখ না সরিয়ে বললে---ভোটের মিছিল?
---হুম্ম। এবার কাকে ভোট দিবে গো বৌদি?
---তুই কাকে দিবি?
---আগে তো আমাদের কাউন্সিলর রতন দা সিপেম ছিল। এখন সে তেনমূল হছে। শুনছি রতন দা এবার বিজিপি হতেও পাইরে। কি জানি বাবা আর কি কি হবে!
কথাটা বলে চাঁপা খানিক মুখ বেঁকিয়ে কাজ করতে লাগলো। চাঁপার এই মুখ ভঙ্গি দেখে রমারও বড্ড হাসি পেল। সত্যি আজকাল নেতারা যে কখন কোন দলে যাচ্ছে আর কত মিনিট থাকছে সাধারণ মানুষ তো দূর অস্ত, ওদের স্ত্রীরাও জানে না স্বামী আজ কোন দলে। হয়ত স্ত্রীদের স্বামীরা বেরোনোর আগে জেনে নেওয়া উচিত রান্না কি হবের মত, আজ তুমি কোন দলের। বিষয়টা ভাবতেই রমার আবার হাসি পেল।
অথচ পুরোনো দিনের মানুষেরা রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি কত কমিটেড ছিল। সাধারণ মানুষও ছিলেন রাজনীতি বিষয়ে এমন দোদুল্যমান নয়। দিন বদলের সন্ধিক্ষণ এখন। রাজনৈতিক মতাদর্শ বিষয়টিই উঠে যাবে এরপর।
চা শেষ করে রমা ঘড়ি দেখলো। আজ কেমন কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর। ঘড়িতে তখন চারটে। পিকলুর আসার সময় হল। ওর জন্য টিফিন তৈরি করতে হবে। বিছানার উপর মেলে দেওয়া শাড়িগুলো একটা একটা করে ভাঁজ করতে লাগলো রমা।
কলেজবাস থেকে নেমে পিকলু বন্ধুদের উদ্দেশ্যে টাটা করে চৌহদ্দির গেটটা পেরিয়ে বাড়ির মূল ফটক কোলাপ্সিবল গেটটা ঠেলে ধরল দুই পাশে। ভেতরে ঢুকেই ছেলেটার অভ্যাস তাড়াহুড়ো করা। জুতো মজা না খুলে সিঁড়ির তলায় ছুঁড়ে ফেলেই তরতরিয়ে উঠে যায় ও। পরে ওগুলো মা না হয় চাঁপা মাসি তুলে নিয়ে যায়। আজও অভ্যাস মত জুতো মজা খুলে, ওগুলো ছুঁড়ে ফেলে ও প্রথম সিঁড়িটায় উঠতে যাবে; খেয়াল হল কিছু একটা অদ্ভুত মত মাড়িয়ে ফেলেছে। বুঝে ওঠার আগেই ব্লেড চালানোর মত তীব্র আঘাত করল কেউ ওর পায়। চমকে উঠল পিকলু! পায়ের একবারে কাছেই বড় গোখরো সাপটা। পিকলু ভয়ার্ত হয়ে নড়ে চড়ে যেতেই আবার একটা তীব্র আঘাত ওর পায়ে। পরপর দু'বার দংশন করল পদ্ম। কি তেজ তার। চিৎকার করে উঠল পিকলু।
পিকলুর ভয়ার্ত স্বর দোতলা অবধি পৌঁছনোর আগে তৃতীয়বার দংশন করে ফেলেছে গোখরোটা। এখন সাপটা নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। রমা বললে---দেখ দেখি চাঁপা, পিকলুটা কেন চিৎকার করছে।
চাঁপা সিঁড়ির কাছে এসে থমকে গেছে। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে গোখরো সাপটা সিঁড়ির তলার দিকে ধীর গতিতে হারিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। পিকলু কেঁদে উঠতেই ওর নজর পড়ল পিকলুর দিকে। পিকলুর পায়ে রক্ত ঝরছে! চাঁপা আর্তনাদ করে উঠল---বৌদিইইইইইই!
রমা গোছানো শাড়িগুলো ফেলে দৌড়ে এলো সিঁড়ির মুখে। পিকলু কাঁদছে অবিশ্রান্ত। চাঁপার মুখ পাংশু। রমা ছেলেকে জিজ্ঞেস করল---কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন?
চাঁপা অস্পষ্ট ভাবে বলল---পিকলুকে সাপে কাটছে!
---সাপ! কোথায়? চমকে উঠল রমা।
চাঁপা ভয়ে ভয়ে বললে---সিঁড়ির তলায়।
রমা দৌড়ে এলো পিকলুর কাছে। মাথায় কিছুই কাজ করছে না এখন ওর। পিকলুর পা তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সিঁড়ির তলায় চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে সোনালী গোখরোটাকে। হঠাৎ মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল রমার। পাশেই ছিল কাঠের শক্ত বাটামটা। গায়ে যতটা শক্তি কুলোয়, বাটামের ঘা দিল পদ্মের গায়ের ওপর। তীব্র রাগে চক্রাকারে আহত পদ্ম ঘুরে দাঁড়ালো। বিশাল ফনা তুলে তেড়ে এলো রমার দিকে। রমা তখন ছেলের অবস্থা দেখে আহত বাঘিনীর মত। কাঠের বাটামটার দ্বিতীয় আঘাতে একেবারে সাপটার ফনার তলায় ঘাড়ের অংশ ভেঙে দিল সে। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি রমা। পদ্মের মৃত দেহটার উপর বারবার আঘাত হানতে লাগলো সে। নিশ্চিত করতে লাগলো পদ্মের মৃত্যুকে।
ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে পিকলু। ছেলেকে বুকে চেপে ধরেছে রমা। চিৎকার করে বললে---চাঁপা, তোর দাদাকে ফোন কর।
++++++
মোবাইল ফোনটা অনবরত বাজছে বেডরুমে। রমা ঘুমিয়েছিল, মাথার কাছে রয়েছিল ফোনটা। এখন আর সোফা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না রমার। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে আজ কেমন যেন একটা অবসন্ন লাগছে। ফোনটা দ্বিতীয়বার রিং হয়ে ভাবলো চাঁপাকে বলবে ফোনটা দিয়ে যাবার জন্য। চাঁপা তখন বাসনগুলো ধুয়ে থাকে সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত। কাজেই ফোনটা নিজেই নিয়ে এসে ধরতে হল রমাকে।
পীযুষের ফোন। ওর ফিরতে দেরি হবে। কলেজের অধ্যাপকদের জেনারেল মিটিং আছে। পীযুষ অবশ্য বেরোবার সময় বলেছিল 'আজ যত ঝামেলা, আজ আবার মিটিংও আছে'।
চাঁপা বললে---বৌদি, কেষ্টপুরে একটা মিছিল বার হইছে। কত লোক!
রমা টিভি থেকে চোখ না সরিয়ে বললে---ভোটের মিছিল?
---হুম্ম। এবার কাকে ভোট দিবে গো বৌদি?
---তুই কাকে দিবি?
---আগে তো আমাদের কাউন্সিলর রতন দা সিপেম ছিল। এখন সে তেনমূল হছে। শুনছি রতন দা এবার বিজিপি হতেও পাইরে। কি জানি বাবা আর কি কি হবে!
কথাটা বলে চাঁপা খানিক মুখ বেঁকিয়ে কাজ করতে লাগলো। চাঁপার এই মুখ ভঙ্গি দেখে রমারও বড্ড হাসি পেল। সত্যি আজকাল নেতারা যে কখন কোন দলে যাচ্ছে আর কত মিনিট থাকছে সাধারণ মানুষ তো দূর অস্ত, ওদের স্ত্রীরাও জানে না স্বামী আজ কোন দলে। হয়ত স্ত্রীদের স্বামীরা বেরোনোর আগে জেনে নেওয়া উচিত রান্না কি হবের মত, আজ তুমি কোন দলের। বিষয়টা ভাবতেই রমার আবার হাসি পেল।
অথচ পুরোনো দিনের মানুষেরা রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি কত কমিটেড ছিল। সাধারণ মানুষও ছিলেন রাজনীতি বিষয়ে এমন দোদুল্যমান নয়। দিন বদলের সন্ধিক্ষণ এখন। রাজনৈতিক মতাদর্শ বিষয়টিই উঠে যাবে এরপর।
চা শেষ করে রমা ঘড়ি দেখলো। আজ কেমন কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর। ঘড়িতে তখন চারটে। পিকলুর আসার সময় হল। ওর জন্য টিফিন তৈরি করতে হবে। বিছানার উপর মেলে দেওয়া শাড়িগুলো একটা একটা করে ভাঁজ করতে লাগলো রমা।
কলেজবাস থেকে নেমে পিকলু বন্ধুদের উদ্দেশ্যে টাটা করে চৌহদ্দির গেটটা পেরিয়ে বাড়ির মূল ফটক কোলাপ্সিবল গেটটা ঠেলে ধরল দুই পাশে। ভেতরে ঢুকেই ছেলেটার অভ্যাস তাড়াহুড়ো করা। জুতো মজা না খুলে সিঁড়ির তলায় ছুঁড়ে ফেলেই তরতরিয়ে উঠে যায় ও। পরে ওগুলো মা না হয় চাঁপা মাসি তুলে নিয়ে যায়। আজও অভ্যাস মত জুতো মজা খুলে, ওগুলো ছুঁড়ে ফেলে ও প্রথম সিঁড়িটায় উঠতে যাবে; খেয়াল হল কিছু একটা অদ্ভুত মত মাড়িয়ে ফেলেছে। বুঝে ওঠার আগেই ব্লেড চালানোর মত তীব্র আঘাত করল কেউ ওর পায়। চমকে উঠল পিকলু! পায়ের একবারে কাছেই বড় গোখরো সাপটা। পিকলু ভয়ার্ত হয়ে নড়ে চড়ে যেতেই আবার একটা তীব্র আঘাত ওর পায়ে। পরপর দু'বার দংশন করল পদ্ম। কি তেজ তার। চিৎকার করে উঠল পিকলু।
পিকলুর ভয়ার্ত স্বর দোতলা অবধি পৌঁছনোর আগে তৃতীয়বার দংশন করে ফেলেছে গোখরোটা। এখন সাপটা নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। রমা বললে---দেখ দেখি চাঁপা, পিকলুটা কেন চিৎকার করছে।
চাঁপা সিঁড়ির কাছে এসে থমকে গেছে। সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে গোখরো সাপটা সিঁড়ির তলার দিকে ধীর গতিতে হারিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। পিকলু কেঁদে উঠতেই ওর নজর পড়ল পিকলুর দিকে। পিকলুর পায়ে রক্ত ঝরছে! চাঁপা আর্তনাদ করে উঠল---বৌদিইইইইইই!
রমা গোছানো শাড়িগুলো ফেলে দৌড়ে এলো সিঁড়ির মুখে। পিকলু কাঁদছে অবিশ্রান্ত। চাঁপার মুখ পাংশু। রমা ছেলেকে জিজ্ঞেস করল---কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন?
চাঁপা অস্পষ্ট ভাবে বলল---পিকলুকে সাপে কাটছে!
---সাপ! কোথায়? চমকে উঠল রমা।
চাঁপা ভয়ে ভয়ে বললে---সিঁড়ির তলায়।
রমা দৌড়ে এলো পিকলুর কাছে। মাথায় কিছুই কাজ করছে না এখন ওর। পিকলুর পা তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সিঁড়ির তলায় চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে সোনালী গোখরোটাকে। হঠাৎ মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল রমার। পাশেই ছিল কাঠের শক্ত বাটামটা। গায়ে যতটা শক্তি কুলোয়, বাটামের ঘা দিল পদ্মের গায়ের ওপর। তীব্র রাগে চক্রাকারে আহত পদ্ম ঘুরে দাঁড়ালো। বিশাল ফনা তুলে তেড়ে এলো রমার দিকে। রমা তখন ছেলের অবস্থা দেখে আহত বাঘিনীর মত। কাঠের বাটামটার দ্বিতীয় আঘাতে একেবারে সাপটার ফনার তলায় ঘাড়ের অংশ ভেঙে দিল সে। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি রমা। পদ্মের মৃত দেহটার উপর বারবার আঘাত হানতে লাগলো সে। নিশ্চিত করতে লাগলো পদ্মের মৃত্যুকে।
ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছে পিকলু। ছেলেকে বুকে চেপে ধরেছে রমা। চিৎকার করে বললে---চাঁপা, তোর দাদাকে ফোন কর।
++++++