Thread Rating:
  • 138 Vote(s) - 3.72 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
পর্ব ৫

সাত সকালে একদল ছাত্র পীযুষের বাড়িতে। মূলত ওরা মাস্টার্স করছে জুওলজিতে। অধ্যাপকরা অনেক সময় লম্বা ব্যাচ করে টিউশন দেন কলেজ ছাত্রদের। পীযুষের তা নাপসন্দ। বরং ও মাঝে মধ্যে কলেজের ল্যাবের চেয়ে নিজের বাড়িতেই ডেকে নেয়। এর একটা বড় কারণ ছাত্ররা জানে সরীসৃপ বিষয়ে পীযুষের গবেষণার কথা। তারা প্রায়শই তাদের স্যারের কাছে আবদার করে স্যারের নিজস্ব ল্যাবের গবেষণার জন্য রাখা সাপগুলি দেখবার জন্য। শুধু তাই নয়, এবারের ছাত্র-ছাত্রীরা সামার ক্যাম্পে নর্থ বেঙ্গল যাবে সাপের বিষয়ে একটি সেমিনারে যোগ দিতে।


কাচের বাক্সগুলোকে বাইর থেকে পর্যবেক্ষণ করে বিষধর সাপেদের এমন নিরীহ ভাবে বিস্ময়ের অন্ত নেই ছাত্র-ছাত্রীদের। তবে ঐ সোনালী রঙা গোখরোটা বেশ ফোঁসফাঁস করছে। ওটা বন্দী হলেও দুজন ছাত্রী কার্যত ভয়ে ওর দিকে যাচ্ছেই না। পীযুষ হেসে বললে---কি রে রুষা, এত ভয় পেলি যখন, তাহলে ওটা হাতে নিয়ে দেখতে পারিস।

রুষা বলে মেয়েটা এমনিতেই সাহসী প্রকৃতির। কিন্তু আজ এতগুলো বিষধর জীবের মুখোমুখি হয়ে ও ভয় পেয়ে আঁতকে উঠে বললে---ও মা গো! স্যার একদম না। ওগুলো ওরকম কাচের বাক্সেই থাক।

ছেলেদের মধ্যে অভিজিৎ ছেলেটা একটু ডানপিটে ধরনের। পড়াশোনায় প্রথম সারির না হলেও ওর এই ডানপিটে ভাবটা পীযুষও খানিক পছন্দ করে। ও বলল---স্যার একবার বের করুন না একটাকে।

সঙ্গে সঙ্গে সকলে বলে উঠল---না না। স্যার, থাক থাক।

পীযুষ হাসলো। বললে---প্রাণীবিদ্যা শাখাটাই পশু, পাখি, সরীসৃপ নিয়ে বেঁচে থাকার বিষয়। এতে ভয় পেলে কি করে হবে। তাছাড়া সামার ক্যাম্পে সাপ নিয়ে তোরা কি বলবি!

ভয়টা কাটিয়ে তোলার জন্য কাচের বাক্সের ঢাকনা খুলে পদ্মকে বার করে আনলো পীযুষ। আর তৎক্ষনাৎ তার বিশাল ফনা তুলে সে তাকিয়ে রইল নিশ্চল হয়ে। যেন কয়েক মুহূর্ত থেমে গেছে পদ্ম ও সকলের মাঝে। মনীষা বলে মেয়েটির দিকেই যেন ওর তাক।
মনীষা বললে---স্যার, বড্ড ভয় করছে! কেমন যেন আমার দিকেই....

পীযুষ হেসে বললে---স্নেক ক্যান নট সি ভেরি ওয়েল। দে সি অ্যা শ্যাডো শেপ। ভাইব্রেশন ইজ দেয়ার পাওয়ার টু আইডেন্টিফাই হান্ট এন্ড এনিমিজ। সো দেয়ার ইজ নাথিং টু ফিয়ার। ইট ইজ মোর এফ্রেইড দ্যান ইউ।

পদ্মকে যথাস্থানে রেখে ঢাকনাটা চাপিয়ে দিল পীযুষ। একজন ছাত্র প্রশ্ন করল--স্যার সাপের ভেনম আপনি দেখাবেন বলেছিলেন।

পীযুষ বলল---দেখাবো। তবে তার আগে বলতে হবে তোমাদের; এখানে যতগুলি সাপ আছে, কার বিষ একমাত্র হেমাটোটক্সিন?

অমনি সবচেয়ে ভীতু মনীষাই উত্তর দিল---চন্দ্রবোড়া।

---ঠিক। ইংরেজীতে বলে রাসেল ভাইপার। এমন একটি সাপ যা আন্টারটিকা ও কিছু শীতপ্রধান অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়।

পীযুষ কাচের ঢাকনা খুলে মোটা সোটা রাসেল ভাইপারকে বার করে আনলো। বেশ অলসভাবে একবার চোয়াল খুলল বটে সাপটা, তারপর পালাতে চেষ্টা করতে লাগলো বিরক্ত হয়ে। পীযুষ পুনরায় বললে---আমাদের গ্রাম বাংলায় তুতুর বলে একটা সাপ দেখা যায়। যাকে দেখে অনেকেই চন্দ্রবোড়া বলে ভুল করে। তুতুরের রঙ কালচে চন্দ্রবোড়া ধূসর। আসলে তুতুর নির্বিষ ও নিরীহ প্রাণী। চন্দ্রবোড়া কিন্তু ঠিক বিপরীত।

এরপর পীযুষ কেউটের ঢাকনা খুলে বললে---এটিও আগেরটির মত ফনা তুলেছে। কিন্তু কেউ বলতে পারে এদের ফারাক কোথায়?

ডানপিটে ছেলেটা বললে---আগেরটা গোখরো। এটা কেউটে। বাবুরাম সাপুড়ের প্ৰিয় সাপ।

সকলে হেসে উঠল। পীযুষ বললে---মোটেই বাবুরাম সাপুড়ের ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দেওয়ার মত সাপ নয়। নিউরোটক্সিন অর্থাৎ স্নায়তন্ত্রকে ক্ষতি করতে এর দশ মিলিগ্রাম বিষ যথেস্ট। এর নাম হল মনোক্লেড কোবরা।
তারপর পীযুষ কেউটেটার মুখ কায়দা করে চেপে ধরল। ছাত্র ছাত্রীরা তাদের স্যারের এই দুঃসাহসী কায়দা দেখে মোহিত হয়ে উঠেছে। পীযুষ একটা ছোট্ট ডিবের মুখে পাতলা প্লাস্টিক আবরণে মুখটা চেপে ধরতেই সাপটা দাঁত বসালো শত্রু প্রতিপন্ন করে। কয়েক ফোঁটা বিষ ওতে ঢুকে গেল চুঁইয়ে।

পীযুষ সাপটাকে যথাস্থানে রেখে দুই হাতে গ্লাভস পরে নিয়ে ঐ বিষটুকু কাচের স্লাইডে দেয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই চিনির দানার মত শক্ত হয়ে উঠল। অভিজিৎ বলে ছেলেটা বললে---স্যার এমন কেন হল? ঠিক যেন জল জমে বরফ হবার মত।

---বাতাসের সংস্পর্শে সাপের বিষ এমনই হয়।

একটা বোতল থেকে জমানো সামান্য রক্ত দিল স্লাইডের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে রক্তটুকুও জমে যেতে লাগলো। এই মারাত্বক দৃশ্য দেখে মোহিত হয়েছে ছাত্ররা। সাপ সম্পর্কে আরো কিছু কথা বলবার পর এই ক্লাস শেষ হতে হতে দশটা বেজে গেছে। পীযুষের কলেজ এগারোটায়। ছাত্ররা চলে যেতেই কোনোরকমে গোছগাছ করে ও তার ল্যাবের দরজা আটকে বেরোলো।

রমা ওর তোয়ালে রেডি করে রেখেছিল। বলল---ভাত বেড়ে ফেলেছি। জলদি স্নান করে এসো।

পীযুষ পরনের হালকা পাঞ্জাবিটা খুলতে খুলতে বললে---পিকলু স্কুল চলে গেছে?

---ঐ তো চাঁপা তুলে দিয়ে এলো বাসে।

স্নান করে খেয়েদেয়ে কলেজ চলে গেল পীযুষ। চাঁপাও বেরিয়ে গেছে খানিক আগে। রমা স্নান করে ভাতঘুম দিতে গেল। এসময় বাড়িটা নিস্তব্ধ থাকে। পিকলুর ফিরতে সেই সাড়ে চারটে। চাঁপা অবশ্য তার আগে এসে পড়বে। এই দুপুরটা বড্ড একঘেয়েমি লাগে রমার। আগে বই পড়ত, কিংবা টিভি চালিয়ে আগের রাতে হয়ে যাওয়া এক দু'টো সিরিয়ালের রিক্যাপ দেখত। এখন অবশ্য সেসব ভালো লাগে না। এসিটা চালিয়ে ও ঘুমোচ্ছে।

নির্জন শুধু বাড়ি নয়। এই পাড়াটায় একের পর এক দো তলা, তিনতলা বাড়ি। দু একটি ছাড়া সবকটিই বাঙালি পরিবারের। উচ্চ মধ্যবিত্ত এই পাড়ায় কেউ চাকুরিজীবি, কেউ ব্যবসাদার, কেউ উকিল, কোনো কোনো দম্পতির উভয়েই চাকুরিজীবি। শহুরে পাড়ায় যা হয়, এখানে সব কিছু তেমনই সৌজন্যতার। প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশীর বিরোধ নেই, আবার হৃদ্যতাও নেই। কেউ কারুর বাড়ির ড্রয়িংরুমে ঢোকে না। তবুও কখনো কখনো কিছু গসিপ শোনা যায়। কমন কাজের মেয়েরা এই কাজটা খুব দক্ষতার সাথে তাদের এক মালকিন থেকে অন্য মালকিনের কানে পৌঁছে দেয়।

দুপুরের নির্জনতা রমার জীবনে অদ্ভুত এক একাকীত্বের মত। অনেক সময় মনে হয়েছে এভাবে দুপুরের এই অলস কর্মহীনতার চেয়ে পীযুষের কথা মত তার কোনো একটা কাজে যোগ দেওয়া উচিত। পীযুষ একবার বলেছিল ওর কোনো এক বন্ধু একটি বেসরকারি স্কুলের ডিরেক্টর। ওখানে শিক্ষিকার কাজে রমা চাইলে যোগ দিতে পারে। ইচ্ছে যে রমার ছিল না তা নয়। কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে এসমস্ত কিছু ইচ্ছের মধ্যেই আবব্ধ থেকে যায়। পীযুষও নিজের অভ্যস্ত জীবনে রমাকে দেওয়া সেই প্রস্তাবের কোনো মূল্য দেয়নি।
পীযুষকে বিয়ের পর থেকে রমা কোনোদিন চাকরীর চেষ্টা করেনি। করলে হয়ত নিশ্চই পেত। ওরই বান্ধবী তুলিকা, রমার চেয়ে পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে থাকা সত্বেও এখন নদিয়ার একটা স্কুলে শিক্ষকতা করে। সুজাতাও একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরী করে। ওর বর ব্যাংকে আছে। কিছুদিন আগে পর্যন্ত লেকটাউনেই ন্যাশনাল ব্যাংকে ছিল সুজাতার বর বিনয়।

রমার চোখ জুড়িয়ে গেল ঘুমে। পীযুষের ল্যাবে কাচের বাক্সে বন্দী পদ্মর ফোঁস ফাঁস বাড়ছে অবিরত। পীযুষ যে ভুলটা কোনোদিন করে না, সেই ভুল করে ফেলেছে আজ। কাচের বাক্সগুলো যতই ও বন্ধ করুক, ল্যাবের দরজা বন্ধ করবার আগে ভালো করে দেখে নেয়। সাধারণ গোখরোদের চেয়ে পদ্মর চেহারাটা বিশাল। ঔদ্ধত্যও বেশি। কাচের বাক্সের কাচটা সামান্য আলগা হয়ে রয়েছে, পীযুষের নজর এড়িয়ে গেছে এই মারাত্বক ভুলটা। সাপেরা মৃদু ফাঁক ফোকর পেলেই গলিয়ে নিতে পারে তাদের দেহ। ইলাস্টিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা তাদের অন্যান্য জীবেদের চেয়ে বেশি। পদ্ম বার হয়ে পড়েছে কাচের বাক্স থেকে। পীযুষের দুটো মাইক্রোস্কোপের মধ্য দিয়ে দেহটাকে বেঁকিয়ে নিয়ে ও নেমে গেল পাশের টেবিলে। আস্তে আস্তে মেঝেতে। সমান্তরাল মেঝেতে সাপেদের চলাফেরায় সমস্যা হয়। তাই এ ও কোন দিয়ে গোটা ঘরময় ঘোরাঘুরি করতে লাগলো নির্ভয়ে। যেহেতু ওর ইন্দ্রিয় সামনে কোনো বিপদ দেখছে না। বরং ঘরের দেয়ালের ওয়াটার হোলে দেখতে পেয়েছে ব্যাংটাকে। খুব তীক্ষ্ণ শিকারি চোখে ও ব্যাংটার দিকে এগিয়ে গেল। গ্রাস করল ব্যাংটাকে। প্রায় দেড় বছর পর ও নিজে শিকার করল। শম্ভু কিংবা পীযুষ ওকে পোষ্যর মত খাইয়েছে। বন্য জীবেদের সেটা মোটেই পছন্দ নয়।
দেয়ালের হোল দিয়ে বেরিয়ে এলো পদ্ম। পীযুষদের বাড়িটায় কোলাপ্সিবল গেট। বাইরে পালানোর পথ নেই। সিঁড়ির একটা ধাপের ওপর দিয়ে শীতল শরীরটা নিয়ে গিয়ে ও ঢুকে পড়ল পাশের গুদাম ঘরে। কাচের বাক্স নয়, পরিত্যাক্ত জিনিসে ঠাসা এমন ঘরই আশ্রয়ের জন্য পদ্মের পছন্দ। সিমেন্টের বস্তাগুলির পাশ দিয়ে ও ওর দেহটা ঢুকিয়ে নিল কাঠের টুকরোগুলোর আড়ালে।

চলবে
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 10-11-2023, 11:44 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)