10-11-2023, 12:23 PM
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
নতুন পথের দিশা
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
সেদিন রাতে বৌদি উঠে এলো। আমি চুপ করে নিজের ঘরে শুয়ে আছি। বৌদির ঘরে আজ ছিটকিনি লাগানোর আওয়াজ পাইনি। তবুও, আমি যাইনি বৌদির ঘরে। নিজের বিছানায়, শুয়ে আছি চিৎ হয়ে, মাথার তলায় দুটো হাত দিয়ে। টের পেলাম বৌদি এসে দাঁড়াল দরজায়। দৃঢ়, অনুচ্চ স্বরে শুনতে পেলাম, "ঠাকুরপো, একবার আমাদের ঘরে এসো।" …
মিনিট খানেক অপেক্ষা করে উঠে বসলাম। ধীর ছন্দে পা ফেলে গিয়ে দাঁড়ালাম দাদার ঘরের দরজায়। দরজা হাট করে খোলা। আলো জ্বলছে। চৌকাঠে দাঁড়িয়ে ভেতরে তাকালাম। উমা ঘুমোচ্ছে দেওয়ালের ধারে।
মাথার নিচে হাত দিয়ে টানটান হয়ে বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছে বৌদি। আমি এসেছি টের পেয়ে, একবার তাকিয়ে দেখল আমার দিকে। তারপর, উমার দিকে ঘুরে শুয়ে রইলো। আমি চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসতে যেতেই; ইশারা করে বিছানায় বসতে বললো। আমি বসলাম। বৌদি নিশ্চুপ। কোন কথা বলছো না। শরীরটা একটু একটু কাঁপছে, কাঁদছে মনে হয়। আমি বসে রইলাম চুপচাপ।
মিনিট কুড়ি পরে কান্নার দমকটা বন্ধ হতে, উঠে বসলো আমার দিকে ঘুরে।
ঠাকুরপো, কিছুতেই পারব না !
তোমার দাদাকে ছেড়ে কখনো থাকতে পারবো না। তুমি আমায় ক্ষমা কর। ভুলে যাও আমার কথা। চাকরি পেলে একটা সুন্দর মেয়ে দেখে বিয়ে করে নাও। আমার ভবিতব্য আমাকে যেখানে পৌঁছে দেবে; আমি সেখানেই মরবো। আমার যা হয় হোক, দাদাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না। আমার কুমারী জীবনের প্রথম ভালবাসা; তোমার দাদা। আমি মাথায় সিঁদুর পরি তোমার দাদার নামে। তাকে ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি যদি চলে যেতে চাও, যাও। আমি কোন বাধা হয়ে দাঁড়াব না। আমার যাই হোক, তোমার উন্নতির অন্তরায় আমি হবো না।
আমি কাঁধে হাত দিয়ে বৌদিকে নিজের দিকে একটু টেনে নিলাম। পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বললাম, দাদাকে ছেড়ে দেবার কথা আসছে কেন? আমি তো দাদার কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে চাইছি না! তোমার সংসারেই তুমি আমাকে ঠাঁই দাও। তবে হ্যাঁ, আমি ঠাকুরপো হয়েই থাকতে চাই। দাদার সামনে, আমি কোনদিন; তোমার উপরে দখলদারি করার চেষ্টা করব না। আমি চাই দাদা সামনে না থাকলে, তুমি আমাকে নিজের করে নেবে। আর বাকি সময়; তুমি আমার বৌদি হয়েই থাকবে। বৌদি আমার বুকের ওপর পড়ে সজোরে কেঁদে উঠলো। আলতো করে জড়িয়ে বসে রইলাম। কাঁদছে, কাঁদুক। কান্না সর্বরোগহর। মনের গ্লানি কেটে যাবে কান্নায়। আশার আলো দেখতে পাবে।
বৌদি সেদিন আর কথাই বলতে পারেনি। আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে। কখন যে, আমারও চোখে ঘুম নেমে এসেছে, জানি না। ঘুম যখন ভাঙলো; তখন সকাল। বৌদি নিচে যাবার তোড়জোড় করছে। আমি উমাকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
সপ্তাহটা এভাবেই কেটে যেতে লাগলো। বৌদির সঙ্গে মায়ের যে কথা হয়েছে সেটা বৌদির কাছ থেকে আমি জেনেছি। যে ক'দিন দাদা বাড়ি থাকবে না, আমরা দুজন স্বামী স্ত্রীর মতো সংসার করবো। দাদা যখন বাড়ি থাকবে; তখন আমার কোন ভূমিকা থাকবে না। রোজ রাতে বৌদির ঘরে গিয়ে শুয়েছি, কিন্তু অন্য কিছু আমাদের মধ্যে হয়নি।
দাদা এলে, দাদার সাথে কথা বলে সমস্ত জিনিসটার নিষ্পত্তি হবে। তারপর, আমাদের নতুন জীবন শুরু হবে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে। শনিবার রাতে, অনেকদিন বাদে আবার বৌদির ঘরের দরজায় খিল পড়ার শব্দ শুনলাম। ভেতরে কি আলোচনা হয়েছে আমি জানি না। পরের দিন সকালে দাদা নিচে নেবে মায়ের ঘরে। বৌদির বক্তব্যটা মা দাদাকে বুঝিয়ে দিল।
নিজের জন্ম বৃত্তান্ত মায়ের মুখে শোনার পর; দাদা মোটামুটি রাজি। দাদার একটাই শর্ত, রমা আর সুরেশের প্রথম বাসরে উপস্থিত থাকতে চায় দাদা। স্বচক্ষে দেখতে চায়, বৌদির কামনা তৃপ্ত মুখের হাসি।
মা এই ব্যাপারে বৌদির সাথে আলোচনা করে অনুমতি দিয়েছেন।
দাদার অভিপ্রায় জেনে; মা পূর্বের আদেশ তুলে নিয়েছে এখন এক বিছানায় দুই ভাইকে নিয়ে শোয়ার অনুমতি মা দিয়েছে। দাদা চাইলে, আমাদের বাসরে; আমাদের সঙ্গে যোগদান করতে পারে। রমা অথবা আমার এ ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই; সেটাও আমরা মাকে জানিয়ে দিয়েছি।
দাদা চলে যাবার পরে; সপ্তাহটা গতানুগতিকভাবেই কেটে গেল। আমি বৌদির ঘরে রাত্তিরে শুতে গেলেও, আমাদের মধ্যে নতুন করে কিছু হয়নি। বৌদি এটা তুলে রেখেছে; দাদার উপস্থিতিতে এই ব্যাপারটা দাদাকে সাক্ষী রেখেই শুরু করবে বলে। অবশেষে কাঙ্খিত দিন এসে গেল। রবিবার সকালে, দাদা নিজে বেরিয়ে বাজার থেকে মালা আর ফুল কিনে এনেছে।
রমা, সারাদিন উপোস করেই ছিল। সন্ধ্যাবেলা ঠাকুর ঘরে, মায়ের উপস্থিতিতে; আমাদের মালা বদল হলো দাদার সামনে। দাদা নিজের হাতে, সিঁদুর কৌটো তুলে দিল আমার হাতে। আমি সেই কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে বৌদির সিঁথি রাঙিয়ে দিলাম। রমা প্রথমে আমাকে প্রণাম করে, মা এবং দাদাকে প্রণাম করলো। দাদা নিজে আমাদের পথ দেখিয়ে দোতলার শোবার ঘরে নিয়ে গেল। আমাদের হাত ধরে খাটের উপর বসিয়ে; নিজে পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসলো।
আমরা দুজনেই দাদাকে বললাম, আমাদের পাশে এসে বসার জন্য। দাদার বক্তব্য, আমাদের প্রথম মিলন সুখ, দর্শক হিসাবে দেখতে চায় দাদা। পরে যদি মনে হয়, দাদা যোগদান করবে।