Thread Rating:
  • 151 Vote(s) - 3.68 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery পদ্ম নাগের বিষ
পর্ব ৪

বউটা গিয়েছিল কলতলায়। অন্ধকারে পা দিয়েছিল কেউটেটার ওপর। কামড় খেয়ে দু'দিন জ্ঞান ফেরেনি। শম্ভু গিয়ে দাগ দুটো দেখতে পেয়ে জড়ি বুটি বেটে লাগিয়েছে। বাসন্তী থেকে সাপে কাটা হাসপাতালে নিয়ে যেতে সময় লাগবে অনেক। খোল করতাল বাজিয়ে চন্ডীমঙ্গলা গান গাইতে বজবজ গিয়েছে বউটার স্বামী চরণ গোঁসাই। ঘরে আছে কেবল শ্বশুর ভব গোঁসাই, শাশুড়ি আর ননদ।

ভব গোঁসাই পুকুর ধারে ছাওয়া বেঁধে দিয়েছে শম্ভুর থাকবার জন্য। শম্ভু প্রথম দেখেই বলে দিয়েছে---দেখে লাও ভব গোঁসাই, যদি জেবন বাঁচাতে চাও, চিকিচ্ছা করতে চার-পাঁচ দিন লাইগবে।

ভব গোঁসাইরা ধর্মপ্রাণ বৈষ্ণব। পরিবারের সকলের গলায় তুলসী মালা। এমনকি ছোট্ট নাতিটার গলাতেও। বেদে ঘরের ছেলে এই নিচু জাতের শম্ভুকে থাকতে দেওয়া নিয়ে তাদের কার্পণ্য আছে। তবু তারা এখন বাধ্য। স্নান, খাবারের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। শম্ভু বলে রেখেছে---তেল সাবান না দিলেও চইলবে। গতরের জন্য খাবারটা আমার ভালো মন্দ লাইগবে দু'বেলা।

পুঁটলি খুলে পাতা বেটে প্রলেপ দিতে লাগলো শম্ভু। কেউটেটা বিষ ঢালেনি তেমন। বাপ ভীমনাগ তাকে চিনিয়েছিল কতটা বিষ ঢাললে রোগীর বিপদটা আছে। বউটার পায়ে একটা সূঁচের মত পিন ঢুকিয়ে রেখেছে সে। পা জুড়ে সবুজ কিসব পাতা আর শিকড়ের প্রলেপ দেওয়া। আঙুলগুলো টেনে টেনে দেখে নিয়ে শম্ভু বলতে লাগলো---ঠিক সময়টা হলে এ রুগী চার-পাঁচ দিনে বাঁচে, দের কইরে দিছ সময়টা লাইগবে।

ভব গোঁসাইয়ের বউ বললে---বিষটা ঢালছে রে?

ঠোঁটের ফাঁকে বিড়ি চেপে রেখে চিকিৎসা করতে করতে শম্ভু হেসে বললে---ঢাইললে কি ভালো হত গো কাকী?

ভব গোঁসাইয়ের বউ ঝামটা দিয়ে বলল---বেদের ব্যাটা হয়ে তুই কেমন কথা বলিস! পরের ঘরের মেয়ে বলে মোর কি দয়া মায়াটুকু লাই?

শম্ভু সূঁচটা বার করে রুগীর পায়ে জড়িয়ে বাঁধলো কাপড়টা। বললে---আজকে সকালের মত কাম খতম। মুড়ি বাতাসার ব্যাবস্থাটা করো গো কাকী। জোয়ান মরদের যে ভুখটা বেশি আছে।

খানিকপরেই ভব গোঁসাইয়ের মেয়ে দিয়ে গেল এক গামলা মুড়ি, শসা আর পেঁয়াজ। ভব গোঁসাইর মেয়েটার বিয়ে হয়েছে। কিন্তু বরটাকে দেখতে পাচ্ছে না শম্ভু। ভারী বুক দুটো ওঠানামা করে মেয়েটার। ওকে দেখলেই শম্ভুর টাটায়। মনে মনে ভাবে তার আর কি, খালি খালি মেয়েছেলের বুক দেখে শরীর টাটিয়ে। তার তো বিষ আছে। পদ্মের বিষই তো তার বে করা বউয়ের পিরিত, বিষে বিষে বিষক্ষয়।

ভব গোঁসাই লোকটা কথায় কথায় বড্ড জাত পাতের কথা বলে। বললে---কি রে বেদের পো, বে থা করছিস লা করিসনি?

----কেন গো ভব গোঁসাই মেয়ে দিবে নাকি।

রাগ চটে যায় ভব। এই যুবক বেদের চড়া অশ্লীল চাহুনিটা একটু আগে তার মেয়ের উপর ছিল, দেখেছিল সে। শুধু শুধু দায় আছে বলে সে কিচ্ছুটি বলেনি। তা নাহলে এ বেদেকে চৌহদ্দির মধ্যে রাখতো না।

----জোয়ান মরদ তুই বে লা করলে চইলবে?

---বে তো হছে গো, আমার গোখরোটার সাথে। শম্ভু মুড়ি খাওয়া শেষ করে, জলের ঢোক গিলে বলল।

ভব গোঁসাই চারপাশে মেয়ে, বউ নেই দেখে বললে--সে লা হয় বুঝলি। কিন্তু লুঙ্গির ভিতর তোর গোখরোটা খাড়াইলে কি করবি রে বেদের ব্যাটা।

আবার বিডি ধরালো শম্ভু। ধোঁয়া ছেড়ে বলল---গোখরো লা গো গোঁসাই। কাল কেউটেটা আছে। বিষ ঢাইললে কি হবে জানো?

---কি হবে? মজা পেয়ে জিজ্ঞেস করল ভব গোঁসাইর পাশে দাঁড়ানো সুখদেব মন্ডল। এই সুখদেবই শম্ভুর খোঁজ করে ডেকে এনেছে।

---গোঁসাইয়ের বৌমাটারে আর কতটুকু ঢাইলছে। আমার কেউটের বিষ ঢাইললে গোঁসাইর উঠান জুইড়ে কিলবিল কইরবে কেউটের বাচ্চা সব।

হেসে উঠল সুখদেব মন্ডল। সুখদেব; ভব গোঁসাইর চেয়ে বয়সে সামান্য কম। ঠাট্টা মস্করা সে করে থাকে। কিন্তু ভবর রাগ হল। বললে---নাইতে তো দেখি না। শালা পাষন্ডর মত শরীলটা করেছিস বেদের পো। এখন দেখতেছি মনটারেও তোর ঘিন আছে।

শম্ভু বলল---মনে ঘিন হইলে কত মেয়েছেলে লিয়ে এদ্দিন ঘরে উঠতি। আকাম কাজ আমি কইরি লা। চলো দিখি কেউটেটাকে ধইরতে পারি কিনা।

বাড়ির পেছনে কলতলা লাগোয়া শুকনো কাঠ পাতার ঝোপের দিকে শম্ভু চলে যেতেই ভব গোঁসাই সুখদেব মন্ডলকে বললে---বেদের ছেলে, এ কদিনে একবারই গামছা পইরে পুকুরে নেমে নাইতে দেখেছি। কি একটা তেল মাখে বোধয়, তা নালে কালো ছেলার গা অমন চকচক করে কেন?

সুখদেব মন্ডল বলল---তুই উর বাপ ভীমনাগটাকে দেখিসনি ভব। উর বাপের চেহারাটাও অমন ছিল। গতরটা বাপের চেয়েও তাগড়া আছে। বয়সটা তো দ্যাখে এমন কিছু লাইগে না। পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ হবে বোধয়।

ভব গোঁসাই খুশি হল না, বললে--সোমত্ত মেয়েছেলে ঘরে। জোয়ান বেদেটা কেমন ফ্যালফ্যালায় দেখে। বেদেরা জড়ি বুটি জানে, ভয় হয় রে।

---ডরিস না। জোয়ান বইলে একটু আধটু তাকায়। বেদেরা অমনটা লয়। সুখদেব অভয় দিল।

ওপাশ থেকে হাঁক দিল---ও গোঁসাই, জলদি আসো, মাল্টারে দিখতে পেছি।

দুজনেই দৌড়ে গেল। ততক্ষনে লেজ ধরে টেনে রেখেছে শম্ভু। সমস্যা একটা মোটা গাছের গুঁড়ি। ওর তলা দিয়ে এমন সেঁধিয়েছে যে সাপটা যদি ইচ্ছে করে বেরিয়ে না আসে, তবে বার করা শক্ত।

ভব গোঁসাই বললে---গুড়িটা সরাইতে পারলে হত।

সুখদেব বাধা দিয়ে বললে---এত ভারী গুড়ি কে সরাইবে এখন।

শম্ভুর গায়ের জোর দেখে ওরা অবাক হল। এমনিতেই শম্ভুর চেহারা লম্বা চওড়া, গায়েও যে এত জোর কল্পনায় ছিল না ওদের। গুড়িটা তুলে সরিয়ে দিল ও। সাপ বাবাজি আর পালানোর রাস্তা পেল না। অমনি বন্দী হয়ে গেল শম্ভুর হাতে।

সুখদেব আর ভব গোঁসাই দুজনেই মোহিত হল ব্যাপারটা দেখে। গোঁসাই বললে---তুদের কি ভয় ডর লাগে না।

শম্ভু কোনো কথা বলছে না তখন। কেউটের গলাটা চেপে ওর মাথায় আঙুল বুলিয়ে আদর করছে। সুখদেব বা ভবর গা'টা শিরশির করে উঠল। বেদেদের দুঃসাহস বটে, তারিফ করতে বাধ্য হল ভব গোঁসাই। হাতের শক্তপোক্ত পেশিতে কঠোর শিরা-উপশিরায় জড়িয়ে আছে সাপটার বাকি অংশ। কোমরে বাঁধা গামছাটা খুলে বেঁধে নিল তাকে।

ভব গোঁসাই বললে---- মন্ত্র দিয়ে বেঁইধে রাইখলি নাকি রে বেদের পো?

শম্ভু কোনো উত্তর না দিয়ে সুখদেবকে বললে---কাকা একটা বিড়ি হবে গা?

সুখদেব বিড়ি বার করে দিল বটে, তবে কর্কশ সুরে বললে---বয়স কত রে তুর, বাপের বয়সী লোককে বিড়ি চাইস?

শম্ভু কোনো উত্তর না দিয়ে বিড়ি ধরালো। তারপর ধোঁয়া টেনে বলল---আমরা বাপটাই হাতে ধইরে সব শিখাইছে, বিড়িটাও টানতে শিখাইছে বাপ।

গোঁসাই বলল---আর কি কি ন্যাশা আছে তোর?

শম্ভু কেউটেটাকে বাঁধা গামছাটা দিখিয়ে বলল---ছোঁবলটা লিবে লাকি? ঝিম ধরা ন্যাশা হবে গো ভব গোঁসাই।

---সত্যিরে বেদের পো, তুই বে-শাদী করিসনি? সুখদেব প্রশ্ন করল শম্ভুকে।

শম্ভু হলদে দাঁত বের করে হাসে। পিচ করে থুথু ছুঁড়ে বলে---ইদিকে বেদের পো করে হাঁকো, সিদিকে বুঝ লাই বেদের ব্যাটার লিয়ে মেয়েটা পাওয়া কুত কঠিন।

সুখদেব বলল---সত্যি বে করবি? আছে রে। লগেনটা গান গেয়ে ভিখ মাগে। ঘরে সোমত্ত মেয়ে রাখছে, বে করবি। বেদে হলেও মেয়ের বিয়া দিবে।

গোঁসাই তৎক্ষনাৎ আপত্তি করে বলল---বোস্টম ঘরের মেয়ে, যতই ভিখ মাগুক তার বাপ। বিয়ে দিবে লা।

----লা দিয়ে যাবে কুথা। আইবুড়ো মেয়েছেলে বাপের ঘাড়ে বসে আছে। বাপটা মরলে কি হবে? কি রে বেদের পো, তোর কি আয় ইনকাম কম নাকি? গোঁসাইয়ের কথার বিরোধ করে বলল সুখদেব।

শম্ভু বলল---আমার তো ঘরে বে করা বউ আছে গো কাকা। তুমি কি কখুনো জিবে পদ্মগোখরোর কামড় খাছো।

সুখদেব আমল না দিয়ে বললে---রাখ সে সব ফালতু কথা। বল দিখি তোর বয়সটা কুতো?

---বোশাখ চলছে নাকি গো গোঁসাই বুড়ো? যদি বোশাখ হয়, তবে বত্রিশ পড়ব গো কাকা।

গোঁসাই বিস্মিত হয়ে বলল---কি কস, তোর মজবুত গতর দিখে তো মনে হয় এত কম বয়স লা রে!

---আমি কি মিথ্যা কছি নাকি?

সুখদেব বললে---ঠিকই বলছে। ওর বাপ ভীমনাগ মোর চেয়ে ছোট ছিল। সড়বেড়িয়ার সনাতন মাঝির মেয়েটাকে বিয়ে করছিল। সনাতন মাঝি তো উর দাদু।

---সরবেড়িয়াটা কুন দিকে রে সুখদেব? শুধোলো গোঁসাই।

শম্ভু বললে---দেউলবাড়ি গেছো কখুনো? দেউল বাড়ি থিকা চার কিলোমিটার গেলে সরবেড়িয়া। কালনাগিনী নদীর ধারে আমার গেরাম। শেষ ঘর আমার।

---সে তো অনেক দূর রে। সুখদেব তু তো আগে বলিসনি?

---বলব কি? এর বাপকে তো আমি চিনি। রাসের মেলায় গান গাইতে যেতামটা সিদিকে। তখন নাম শুনছি, সরবেড়িয়ায় লা কি একঘর বেদে আছে। ভীমনাগ বেদে লা কি সাপের যম। তু যখন বললি চরনের বউটাকে সাপে কাটছে মনে হয়, আমার ভীমনাগের কথা মনে পইড়ে গেল।

দাওয়ায় এসে বসল ওরা। ভব বলল---বৌমার জ্ঞান ফিরবে রে বেদের পো? ব্যাটা কীর্তন করতে গেছে শহুরে। জানতে পায়েনি এখুনো। বৌমার বাপের বাড়িটাতেও খবরটা দিইনি। ছোট বাচ্চাটা আছে বাপ। দিখিস বাঁচেটা যেন।

শম্ভু ঝাঁপির ভেতর সাপটাকে রেখে বললে---যে কামড়ায়ছে সে এখন আমার বশে। যারে কামড়েছে তারে বাঁচানোর দায়িত্বটা মোর উপর ছেড়ে দেও গোঁসাই।

সুখদেব বলল---কত বছর থিকা এসব করতেছিস রে?

---বাপটা হাতে করে শিখাইছে। দশ বছর হতে না হতে বাপের হাতটা ধইরে গেরামের পর গেরাম গেছি।

---লেখাপড়া কইরেছিস কিছু?

----দু কেলাস পর আর ইকলেজ যাইনি কুনোদিন। বেদের ব্যাটা ইকলেজে গেলে সকলে ডরতো। কেউ কয় বেদের গায়ে গন্ধ, নাহায় না। কেউ কয় সাপটা ছেইড়ে দিবে পায়ে। মা লিখা পড়া জানতো চার কেলাস। দু কলম লিখতে, পড়তে শিখাই দিয়েছিল।
তারপর গোঁসাইর দিকে চোখ মেরে বললে---টাকা পয়সাটা গুনতে জানি গো গোঁসাই।

বুড়ো গোঁসাইকে যে খেপিয়ে মজা পাচ্ছে শম্ভু সেটা সুখদেব বুঝতে পারছে। সে গোঁসাইয়ের গোমড়া মুখের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বলল---তুর বাপটাও ছিল সেরকম। কি সাহস! তুর মত চেহারা। তাগড়াই গোঁফ। সাপের ফনাকে মুঠাই ধরত। তোরে দিখে তুর বাপের কুথা মনে আসতেছে। সেই গতর পাইছিস তুই। শুধু লম্বাটা বেশি আছিস। কুতো হাইট হবে রে তুর? সুখদেব তারিফ করে জিজ্ঞেস করলো।

---আমি কি দড়া দিয়ে মাপছি লাকি? ষষ্ঠীপদ কে চিনো কাকা, মদ খেয়ে ডুবে গিছিল নদীতে যে কানু মাঝি, তার ছোট ছেলে, সে আমার বন্ধু। বলে পড়ালেখা কইরলে আমি লাকি মেলেটারিতে যেতে পারতি।

---ঠিকই কছে তোর বন্ধু। মেলেটারির মত তোর চেহারাটা।
সহমত হল সুখদেব। তারপর ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বলল---ছয় ফুট হবে লা কো গোঁসাই?

গোঁসাই পান সাজতে সাজতে বিরক্ত প্রকাশ করে বলল---তু কি লগেনের মেয়েটার জন্য ভাবতেছিস? লগেন কখুনো বেদের ঘরের ছেলার সাথে বে দিবে লা। তু দেখে লিস সুখদেব।


চলবে
Like Reply


Messages In This Thread
পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 21-10-2023, 11:21 PM
RE: পদ্ম নাগের বিষ - by Henry - 09-11-2023, 12:17 AM



Users browsing this thread: 47 Guest(s)