08-11-2023, 12:33 PM
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
গোপন কথাটি, রবে না গোপনে
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
এই কথাটা শুনেই আমার মাথার মধ্যে বিদ্যুৎ ঝলসে উঠলো। পুরো তার কেটে গেল আমার। আমি উঠে দাঁড়িয়ে, কোমরে হাত দিয়ে, মায়ের চোখে চোখ রেখে বললাম, বিয়ের পর থেকে বৌদি বিবাহিত জীবনের সুখ একদিনের জন্যও পায়নি! কোনরকমে একটা মেয়ের জন্ম দিয়ে বসে আছে। বৌদিকে সন্তুষ্ট করার কোন ক্ষমতাই, দাদার নেই, তাহলে, স্বামীত্বের অধিকারের কথা বলে কি করে?
একটা মেয়ে তার স্বামীর সংসারে গতর খাটায়, রাতে বিছানায় গতরের সুখ পাবে বলে। বিয়ের পর থেকেই বৌদি এই সংসারের উনকোটি-চৌষট্টি; সমস্ত কাজই করে যাচ্ছে নিঃস্বার্থ ভাবে, কিন্তু তার পাওনা সুখটা, সে দাদার কাছ থেকে কোনদিনই পায়নি। মেয়েটা যে কিভাবে হয়েছে, আমরা কেউ জানিনা।
মা; কাটা কাটা স্বরে বলতে লাগলো; বৌমার সন্তান যে তোমার দাদার নয়; সে ব্যাপারে আমার চেয়ে ভালো করে, কেউ জানে না। এই সন্তান; একজনের কাছ থেকে ভিক্ষা করে এনেছি তোমার বৌদির জন্য। আমার মাথায় একটা জিনিস ছিল; কেন, পরের ঘরের মেয়ে এত কষ্ট পাবে? অন্তত একটা সন্তান বুকে আঁকড়ে ধরে বাঁচুক মেয়েটা। কিন্তু, এর জন্য, আমাকে যে কি দাম দিতে হয়েছে তোমরা জানো না।
আমার নারীত্বের অহংকার সিঁথির সিঁদুর, শাঁখা-নোয়া সব খুইয়ে এই সন্তান চেয়ে নিয়েছি রমার জন্য।
বৌদির অনুচ্চ গলা পেলাম, "মা!"
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, দরজার ফ্রেমে বৌদি দাঁড়িয়ে আছে ছবির মতো। মা আবার বলতে শুরু করলো, আরও একটা কথা; বৌমাকে কালকেই বলেছি, আজ তোমাকে বলছি,
মা, কয়েক মুহূর্ত চুপ করে, আবার শুরু করলো, বড় খোকা আমার গর্ভের সন্তান হলেও এ বাড়ির বংশধর নয়। তার জন্ম বৃত্তান্ত আমি নিজের মুখে তোমাকে বলতে পারবো না। নিজের কলঙ্কের কথা, নিজের গর্ভজাত সন্তানের কাছে, স্বীকার করার সাহস আমার নেই। বৌমা জানে। আমি-ই বলেছি তাকে। এখন সে যদি তোমার কাছে প্রকাশ করে, সেটা অন্য কথা। তবে আমার সম্মানের কথা ভেবে, আমি চাইবো, আমার জীবদ্দশায় মাতৃকলঙ্ক তোমার কাছে গোপন থাকুক।
এ বাড়ির একমাত্র বংশধর তুমি। তবে হ্যাঁ, তোমার পিতার ঔরসজাত আরেকটি সন্তান আছে এ বাড়িতে। হ্যাঁ, উমা তোমার পিতৃ ঔরসজাত।
তোমার দাদার সন্তান সে নয়। তোমার দাদা একথা জানে না। আমি আশা করবো, এর গোপনীয়তা তুমি ভাঙবে না। তোমার দাদা এ কথা জানতে পারলে পাগল হয়ে যাবে। তার অক্ষম জীবনের সান্ত্বনা উমা। আশা করি, তোমরা দুজন, তাকে এই মিথ্যা সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত করবে না।
তুমি আমার গর্ভজ হলেও, এ বাড়ির বংশধর হিসাবে, তোমার কাছে আমার প্রার্থনা, - হ্যাঁ প্রার্থনাই; উমা লোক সমাজে তোমার ভ্রাতুষ্পুত্রী বলে পরিচিত হলেও সম্পর্কে সে তোমার ভগিনী, কন্যাসমা ভগিনী। তোমার ঔরসজাত সন্তানের সমতুল্য, তাকেও মানুষ করবে তুমি। এটা এই পরিবারের কাছে, তোমার দায়।
এবার; এই উমার জন্য, যে মূল্য আমাকে দিতে হয়েছে, তার কথা বলি। চার বছর আগে, তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে; তোমার কলেজে ওঠার আগে, তোমার দাদা আমাদের কলকাতায় তোমার বাবার এক শিষ্যের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল। তোমার বাবাই ব্যবস্থা করে করে দিয়েছিলেন। সেখানে থেকে, আমরা কলকাতার সমস্ত দর্শনীয় জায়গা ঘুরে দেখি। তোমার বৌদি আমাদের সঙ্গে যায়নি। তোমার বাবার সেবা করার জন্য রয়ে গিয়েছিল।
এই সেবা শুধু খাবার ব্যবস্থা করা না। তার আগেই, আমি তোমার বাবার কাছে, রমার জন্য একটি সন্তান ভিক্ষা চেয়েছিলাম। আমার নাছোড়বান্দা প্রার্থনায় তোমার বাবা রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু, আমাকে সাবধান করে, বলেছিলেন; এর জন্য তোমাকে যে মূল্য চোকাতে হবে; সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারছ না। আমি রমার সন্তান সুখের জন্য সাতপাঁচ কিছু না ভেবে, রাজি হয়ে যাই। তারপরেই কলকাতায় যাবার ব্যবস্থা হয়। তোমার বৌদি তোমার বাবার সেবা করার জন্য এখানে রয়ে যায়।
কিভাবে, কোন সেবায়, রমার সন্তান প্রাপ্তি ঘটেছিল; রমাই সময় মতো জানিয়ে দেবে তোমাকে। তোমার বাবা আমাকেও বলেননি। কিন্তু, আমি জানতাম। কারণ, আমাকেও সে অগ্নিপরীক্ষা পার করে তোমাকে পেতে হয়েছিল।
সপ্তম দিনে আমরা ফিরে আসি কলকাতা থেকে। এরপরেই রমা সন্তানসম্ভবা হয় এবং এক বছরের মধ্যে, কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। সেই সন্তানই,
উমা
মায়ের কথা শুনতে শুনতে সমস্ত ইন্দ্রিয় যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। চক্ষু, কর্ণ, শরীর, মন সব শূন্য। শুধু অন্তরীক্ষ থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে। আমি শুনে যাচ্ছি, শুনে যাচ্ছি, শুনে যাচ্ছি। শরীরে কোন ক্ষমতাই আমার নেই।