07-11-2023, 12:12 AM
(06-11-2023, 11:21 PM)Henry Wrote: কেষ্টপুর খালের কাছে সারিবব্ধ বাড়িরগুলির কয়েকটি রায়তি, কয়েকটি জবরদখল, আবার অজস্র ঝুপড়ি বাড়ি, যাদের কোনো চাল চুলো নেই। পরিবারগুলোর কয়েকটি ওপার বাংলা থেকে আগত বাঙাল। তার সাথে জুড়েছে উঃ ও দঃ ২৪ পরগণার ক্যানিং, কুলতলী, সাগর, নামখানা, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালী, গোসাবা, বাসন্তী এলাকার লোক। চাঁপার বাপের বাড়ি গোসাবার দিকে কোথাও। ওর বাপ ফলের দোকান দিয়েছিল বিধাননগর রেল স্টেশনে। তবে থেকেই ওদের বাস এখানে।
একদিন লাইন পারাপার করতে গিয়ে দুরন্ত গতিতে আসা ট্রেন চাঁপার বাপকে পিষে দিয়ে চলে গেল। তখন চাঁপার বয়স ছয়, তার দিদি চামেলী তখন আট বছরের। দুই মেয়েকে নিয়ে লোকের বাড়ি ঝি গিরি করে সংসার চালাতে লাগলো চাঁপার মা সরলা। গোসাবায় যে জমি ছিল, সে জমিও মেরে দিল চাঁপার কাকা, জ্যাঠারা। বললে 'ছেলে থাইকলে ভাগটা দেওয়া যেত, মেয়েদের বে হই গেলে পরের ঘর যাবে, কেন দিব জমি।'
চাঁপার বাপ ট্রেনে কাটা পড়ায় সরলা শুনেছিল সরকার থেকে টাকা পাবে। অনেক ছোটাছুটি করেছিল সরলা। সে টাকার এক অংশও মেলেনি।
চাঁপার বড় দিদি চামেলী বিয়ে করে এখন থাকে মহারাষ্ট্রে। ওখানে স্যাকরার কাজ করে ওর বর। ওর ছেলে মেয়ে হিন্দি বলে। মাঝে মধ্যে এলেও মায়ের প্রতি কোনো দায়িত্ব রাখে না। চাঁপা বিয়ে করেছিল ভালোবেসে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিলেও ঝিয়ের কাজ করে চাঁপাকে পড়াচ্ছিল সরলা। সরকারী ইকলেজে নাইনে পড়বার সময় পরিচয় হয় রঞ্জিতের সাথে। রঞ্জিত ঘুরঘুর করত ইকলেজের সামনে মেয়েদের ছুটি হবার সময়। ও একটা ঘড়ির দোকানে কাজ করত। পালিয়ে গেল চাঁপা ওর সাথে। অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে ওকে নিয়ে গেছিল গুজরাট। সেখানে নাকি রঞ্জিতের কে একজন দাদা থাকে, তার সুপারিশে কারখানায় কাজ পাবে। চাঁপা যখন গর্ভবতী তখন রঞ্জিতের দাঁত নখ বার হল। মদ খেয়ে শুরু হল দৈনন্দিন অত্যাচার। তারপর খবর পেল চাঁপা; রঞ্জিত নাকি গুজরাতি একটা বেশ্যাকে নিয়ে মেতে উঠেছে। ঝগড়া বাধলো স্বামীর সাথে। তখন চাঁপার ছেলে সজল মাত্র দেড় বছরের। ঐ দেড় বছরের ছেলের সাথেই তাকে ঘর থেকে বার করে দিল দুশ্চরিত্র স্বামী।
সরলার ঘাড়ে এসে পড়ল আবার চাঁপা। সরলার তখন বয়স বাড়ছে, একার সংসার চলে যেত কোনক্রমে তার, পড়ল এসে বাচ্চা সহ মেয়ের বোঝা। তারপর সরলাই ধরিয়ে দিল ওকে বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ। বেশ কয়েক বছর ধরে ও রমাদের বাড়িতে কাজ করছে। এখন যেন ভরসা পায় ও। কিছু বিপদ আপদ হলে দাদা-বৌদি তো আছেই।
ছোট্ট ঘরটাতে সাত বছরের ছেলে আর বয়স্কা মাকে নিয়ে থাকে সে। চাঁপার বয়স এখন কম। মাত্র সাতাশ বছরের যুবতী মেয়ে সে। ছিপছিপে চেহারাটা হলেও শ্যামলা মুখে একটা শ্রী আছে। অনেকেরই নজর ওর দিকে। রাত বিরেতে কাজ করে ফিরতে দেরী হয়। দুশ্চিন্তা হয় সরলার।
বছর খানেক আগে চাঁপাদের বাড়ির চারপাশে মাঝে মধ্যে উত্তম নামে একটা ছোকরাকে ঘুরতে দেখা গেল। রাস্তা ঘাটে দেখা হলে চাঁপার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকত। ছেলেটার নজর দেখে চাঁপা বুঝতে পারে, এ চোখে অসভ্যতামি নেই। খানিক ভালোবাসা আছে। তবু তার ভয় হয়, পোড়া গরুর যে সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় হয়।
যেদিন চাঁপার ছেলে সজল অসুস্থ হয়েছিল ডেঙ্গুতে, সেদিন উত্তমও জেগেছিল হাসপাতালে চাঁপার সাথে। আগে সরলার সাথে উত্তমের কথা হলেও, কখনো চাঁপার সাথে হয়নি। সেদিনই প্রথম চাঁপার সাথে ওর কথা হয়। সেদিন চাঁপার বড্ড দরকার ছিল একজন পুরুষ মানুষের সাহায্য। উত্তম যতবার ওষুধ পত্তর লেগেছিল কিনে এনে দিয়েছিল।
রমারও নজরে পড়েছিল বিষয়টা। চাঁপার অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার সব খরচ বহন করেছিল পীযুষ। রমা গেছিল সজলকে দেখতে হাসপাতালে, সেই সঙ্গে সব খরচগুলো মিটিয়ে এসেছিল। তখনই দেখেছিল ছেলেটাকে। ওয়েটিং রুমে তৎপর হতে দেখেছিল বছর ত্রিশের ছেলেটাকে। কম বয়স, রোগা পাতলা ক্লিন সেভ ছেলেটাকে বেশ মানাবে চাঁপার সাথে। পরে ছেলেটার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল চাঁপাকে। চাঁপা এড়িয়ে গিয়ে বলেছিল গ্রাম থেকে আসা ওর দূর সম্পর্কের দাদা।
আজ যখন চাঁপা বাড়ি ঢুকল নাতিকে নিয়ে বসেছিল সরলা। বললে----এ বিষ্টিতে কাজে যাবার কি দরকারটা ছিলো, বাবু ঘরে তো ফোনটা কইরে দিতে পারতিস।
আসলে চাঁপা পীযুষ-রমাদের বাড়ির সঙ্গে নিজেকে এত বেশি সম্পৃক্ত মনে করে যে সে কামাই করতে চায় না। তবুও তো ইচ্ছে হলেই যেমন খুশি কতবার ছুটি নিয়েছে।
চাঁপা খেয়াল করলো শাড়ির আঁচলে মুড়ে থাকা তার ফোনটা ভিজে গিয়েছে। দেড় হাজার টাকা দিয়ে গতবছর কিনেছে সে। আঁচলে মুছতে গিয়ে দেখল সুইচ অফ হয়ে আছে। সুইচ অন করতে দেখল কতগুলো মিসড কল উত্তমের।
মায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল---উত্তম এইসেছিল?
---হাঁ ঝড় বিষ্টির রাতে দের কইরছিস দ্যাখে ফোনটা কইরে ছিল ছেলাটা।
তার প্রতি উত্তমের এই যত্ন নেওয়াটা ভালো লাগে চাঁপার। শাড়িটা খুলে ফেলে দড়িতে মেলে দিল সে। সাদা ঘামের ছোপ পড়া ব্রেসিয়ারটাও মেলে দিল দড়িতে। ছেলেটা খাতা পেন নিয়ে আঁকিবুকি কাটছে। স্টোভ জ্বালিয়ে পাম্প দিচ্ছিল চাঁপা। সরলা বলে উঠল---ইবারটা তো মত দে, ছেলাটা খারাপ লয় রে। কাজও একটা করে।
পেট্রোল পাম্পে কাজ করে উত্তম। উত্তম চাইলে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে পারতো, কিন্তু কেন তার মত এক বাচ্চার মাকে বিয়ে করতে যাবে! এই বিষয়টা যেমন চাঁপার দুশ্চিন্তা বাড়ায়, তেমনই আনন্দও দেয় কেউ তো তার কথা ভাবে। এখনো রঞ্জিতের নামে সিঁদুর দেয় সে, শাঁখা পোলা তার হাতে। অথচ রঞ্জিতের কোনো ভালো স্মৃতি আর তার মনে নেই। খারাপ লোকটার বীভৎস চরিত্রই মনে পড়ে তার। তবু এই বস্তি এলাকায় থাকতে গেলে শাঁখা-পোলা একটা বড় বর্মের মত কাজ করে। রাতে ছেলের পাশে এক বিছানায় যখন শুয়ে শুয়ে ঘুম আসে না, তখন তার যুবতী শরীর উত্তাল হয়ে ওঠে। বুকের মধ্যে তোলপাড় করে হাহাকার। অনেক সময় উরুসন্ধির মাঝে নারী অঙ্গে যুবতী পোকার কামড় ওঠে বিশ্রীভাবে। তখন প্রথম উত্তমকেই মনে আসে তার। এখনো ছুঁতে দেয়নি সে উত্তমকে। ঘরের মধ্যে যখন একা বসে গল্প করে তারা, চাইলে জোর খাটাতে পারতো উত্তম, হয়তো সেও বাধা দিতে পারতো না। গলে যেত বরফের মত। কিন্তু উত্তম যে তেমন নয় তা চাঁপা বোঝে। তবুও ভয় হয়, পুরুষ মানুষগুলো অনেক সময় ভ্রমরের মত আসে, শুধু মধু খাবার লোভে। তারপর ফুলের কথা তারা ভাবে না।
চাঁপা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। মনে মনে সে ঠিক করে নেয় কাল একবার বৌদির কাছে মনের কথা খুলে বলবে। বৌদি তার গাইড, অনেক সমস্যায় সে বৌদির দ্বারস্থ হয়। টাকা পয়সা থেকে শুরু করে শারীরিক সমস্যা কিংবা বিপদ আপদ তার ভরসা রমা মৈত্র।
চলবে
লেখা খুবই সুন্দর হচ্ছে। আপনি এই সাইটের ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট লেখক। আর এই গল্পটা আপনার সকল লেখার মধ্যে বেস্ট হতে চলেছে। চালিয়ে যান। শুধু একটা রিকুয়েষ্ট আপডেট তাড়াতাড়ি দিবেন আর প্রয়োজন অনুযায়ী সেক্স ব্যাবহার করে গল্পটাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।