Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
[Image: FB-IMG-1698904055114.jpg]

|| প্র্যাঙ্ক ||

লেখা :- স্বর্ণদীপ রায়

সূর্য অস্ত গিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই।
আকাশ জুড়ে লালচে আলোর আভা অবশ্য এখনও রয়েছে।
অল্প অল্প ঠান্ডা হাওয়া বইছে। আবহাওয়া বেশ মনোরম। 

স্যান্ডি তার বাইকের স্পিডটা বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দিল।
সন্ধ্যার সময় এই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বিশেষ থাকে না। তাই বেশ আরামে বাইক চালানো যায়।
এখন কুয়াশা তেমন নেই, তবে রাত যত বাড়বে এই পাহাড়ি পথ ক্রমশ কুয়াশায় ঢেকে যাবে। তখন অবশ্য এই পথ বাইক কিংবা গাড়ি চালানোর পক্ষে খুব একটা নিরাপদ হবে না ।
তবে সেটাই সূর্যাস্তের পরে এই পথে গাড়ি না চলার একমাত্র কারণ নয়।
এর আরো একটা কারণ আছে, আর সেটাই প্রধান।
ব্যাপারটা আর কিছুই না, স্রেফ কুসংস্কার, অন্তত স্যান্ডির তেমনটাই ধারণা।
আসলে, তাদের গ্রামে ঢোকার একটু আগে, এই পথের এক পাশে রয়েছে লম্বার্ডি সিমেট্রি, এই পাহাড়ি অঞ্চলের সবচেয়ে বড়ো গোরস্থান।
এরকম নিরিবিলি জায়গায় কবরখানা থাকলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঘিরে গড়ে ওঠে ভূতের গল্প।
লম্বার্ডি সিমেট্রি-কে নিয়েও এই ধরনের অনেক গল্প চালু রয়েছে।
আর তাই সাধারণ মানুষ সূর্যাস্তের পরে এই পথটা পারতপক্ষে এড়িয়ে চলে।
অবশ্য স্যান্ডি কোনোকালেই এসবের তোয়াক্কা করেনি।
কলেজে ডাকাবুকো ও সাহসী বলে তার যথেষ্ট সুনাম আছে।
সে গুনগুন করে একটা গান গাইতে গাইতে বাইক নিয়ে নিরুদ্বিগ্নভাবে এগিয়ে চলেছিল।

হঠাৎ…

বাইকের হেডলাইটের আলোয় স্যান্ডি লক্ষ্য করল একটু এগিয়ে পথের ধারে কেউ একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একটি তরুণী!
স্যান্ডি বাইকের গতি কমালো।
তারপর মেয়েটির সামনে এসে বাইক থামিয়ে দিল।
-"হাই, এনি প্রব্লেম ?"
স্যান্ডির কথা শুনে মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো।
তার চেহারাটা ভারী মিষ্টি, কিন্তু দৃষ্টিটা যেন  একটু উদাস।
মনে হয় সেও স্যান্ডির মতোই একজন কলেজ স্টুডেন্ট।
-"আই….আই ওয়ান্ট টু গো হোম" মেয়েটি বলে উঠলো।
-"কোথায় তোমার বাড়ি ?"
মেয়েটি সামনের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো।
-"ও, আমিও তো ওদিকেই যাচ্ছি।  ?" স্যান্ডি বলে উঠলো " চলো, তোমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দেবো।"
মেয়েটির মুখে একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
"থ্যাংকস" সে অস্ফুট স্বরে বলল।
তারপর বাইকের পিছনের সিটে উঠে বসলো।
-" আমার কাছে কিন্তু কোনো এক্সট্রা হেলমেট নেই" স্যান্ডি বলল।
-"doesn't matter" মেয়েটি সংক্ষেপে জানালো।
-"ওকে ফাইন"
স্যান্ডি বাইক স্টার্ট দিলো।
দেখতে দেখতে আকাশ থেকে সূর্যের শেষ রক্তিম আভাটুকুও মুছে গেল। অন্ধকার  ক্রমশ গাঢ় হয়ে উঠতে লাগল।
হেডলাইটের আলোয় অন্ধকার ভেদ করে স্যান্ডির বাইক এগিয়ে চলল।
-"তুমি ওই নির্জন জায়গায় একা একা কি করছিলে ? ইটস্ নট সেফ, ইউ সি ?"
মেয়েটি স্যান্ডির কথার কোনো উত্তর দিল না।
স্যান্ডি মেয়েটিকে আর কিছু বলল না।
কিছুক্ষণ চলার পরে একটা মোর ঘুরতেই পথের ধারে  একটা বিশাল লোহার গেট আর উঁচু পাঁচিল দেখা গেল ।

লম্বার্ডি সিমেট্রি !

-"স্টপ দ্য বাইক " মেয়েটি তীক্ষ্ণস্বরে বলে উঠলো।

স্যান্ডি বাইক থামালো।

-"কী ব্যাপার ?"

মেয়েটি বাইক থেকে নেমে স্যান্ডির দিকে জ্বলজ্বলে  চোখে  তাকাল।
তারপর ফিসফিস করে বলল….
-"দিস ইজ মাই হোম !"

স্যান্ডি তার হেলমেটের কাঁচের মধ্যে দিয়ে মেয়েটির দিকে কয়েক মুহূর্ত নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

তারপর সেও বাইক থেকে নেমে স্ট্যান্ডের সাহায্যে বাইকটাকে দাঁড় করালো।

তারপর মেয়েটির দিকে ফিরে বলল " ওঃ রিয়েলি ? তাহলে চলো, তোমার বাড়িতে গিয়ে এক কাপ কফি খেয়ে আসা যাক।"

মেয়েটি যেন একটু থমকাল।
তারপর খুব আস্তে আস্তে কেটে কেটে বলল "আমার বাড়িতে জীবিত মানুষের প্রবেশ নিষেধ"

তারপর সে ধীরে ধীরে গোরস্থানের লোহার গেটটার দিকে এগিয়ে গেল।

স্যান্ডি ওকে অনুসরণ করল।

মেয়েটি গেট-এর কাছে পৌঁছোতেই, সেটা কর্কশ শব্দ করে আপনা আপনি খুলে গেল !
পরমুহূর্তেই একঝাঁক কালো বাদুড় শনশন করে স্যান্ডির মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল !

স্যান্ডি কিন্তু এসব দেখেও বিন্দুমাত্র ভয় পেয়েছে বলে মনে হল না। তার স্নায়ু বোধহয় ইস্পাতের তৈরি।

মেয়েটি এবার স্যান্ডির দিকে ফিরলো ।

-"চলে যাও" ফিসফিস করে সে বলল।

স্যান্ডি একটু হাসল ।
তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই।

-"নাঃ, তোমার বাড়িটা না দেখে ফিরছি না।"

-"আমার সাথে এই গেট পেরিয়ে একবার যদি সিমেট্রি-তে ঢোকো, তাহলে আর জীবিতদের জগতে ফিরে যেতে পারবে না" মেয়েটি চাপা স্বরে বলে উঠলো।

-"doesn't matter" স্যান্ডি বলল।

কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। তারপর….

হঠাৎ কিছু একটা ঘটলো।

কতগুলো উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠলো ।

-"ব্রাভো ব্রাভো" বলতে বলতে গোরস্থানের মধ্যে থেকে একটা লোক বেড়িয়ে এলো।
আর তার পিছন পিছন আরো একজন লোক, যার হাতে রয়েছে একটা অত্যাধুনিক মুভি ক্যামেরা।

-"আপনি সত্যিই খুব সাহসী" প্রথম লোকটি স্যান্ডির পিঠ চাপড়ে বলল "আসলে এটা একটা প্র্যাঙ্ক শো, মিউ টিভির 'Foolstop' ! আর আমি হচ্ছি এই শোয়ের অ্যাঙ্কর, আমন আহুজা।"

-"জানি" স্যান্ডি বলল "আমি টিভিতে আপনাদের শো দেখেছি। আপনারা মানুষকে বিভিন্নভাবে বোকা বানান, আর ক্যামেরায় সেগুলো রেকর্ড করেন। তারপর ওই ফুটেজগুলোই আপনাদের শো-তে টেলিকাস্ট করা হয়।"

-"ওয়েল ওয়েল, তার জন্য ওই মানুষগুলোকে আমরা মোটা টাকা কম্পেনসেশন দিয়ে থাকি" মিঃ আহুজা বললেন "ওদের কোনোরকম ক্ষতি করা হয় না।"

-"তাই বুঝি ?" স্যান্ডি ঠান্ডা গলায় বলল "কিন্তু আমি যেন শুনেছিলাম কয়েকদিন আগে এরকম একটা ঘোস্টলি প্র্যাঙ্ক করার সময় একটি ছেলের মৃত্যু হয়েছিল।"

কথাটা শুনে আমন আহুজা স্পষ্টত‌ই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। তিনি ইশারায় পিছনের লোকটিকে ক্যামেরা বন্ধ করতে বললেন।

তারপর স্যান্ডির দিকে একটা কঠিন দৃষ্টি হেনে বললেন "দেখুন মিস্টার, পুরোটা না জেনে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। নেহাত আপনি আমাদের আজকের শোয়ের উইনার, তাই আপনার এসব কথাবার্তা টলারেট করছি।"

-"শোয়ের উইনার !" স্যান্ডি হাসল "সেই ছেলেটির সাথেও আপনারা আজকের মতই প্র্যাঙ্ক করেছিলেন, তাই না ?"

-"ইয়েস" আমন আহুজা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন "সো হোয়াট ? সে তো আমরা অনেকের সাথেই করে থাকি, যেমন আজ করলাম আপনার সাথে। আপনি তো ভয় পেলেন না। যদিও এসবক্ষেত্রে ৯৯ শতাংশ লোক‌ই ভয় পায় আর বোকা বনে যায়।"

-"আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাণ‌ও হারায়।" স্যান্ডি বলল।

-"দেখুন" আমন আহুজা বললেন "ইট ওয়াজ অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট। ছেলেটির হার্টে সমস্যা ছিল। তাই সে উত্তেজনাটা নিতে পারেনি। এতে আমাদের দোষ কোথায় ?"

-"তাহলে প্র্যাঙ্ক-এর কারণে কারোর প্রাণ চলে গেলে যে প্র্যাঙ্ক করছে তার কোনো দোষ নেই বলছেন ?"

-"সার্টেনলি নট, এরকম সামান্য কারণে যদি কারোর হার্ট ফেল করে তাহলে দোষ তার হার্টের অন্য কারো নয়।"

-"আই সি" স্যান্ডি বলল "আপনি ছেলেটাকে দেখেছিলেন নিশ্চয়ই।"

-"হ্যাঁ দেখেছিলাম, সো হোয়াট ?" আমন আহুজা উদ্ধতভাবে বলে উঠলেন।
তারপর একটু নরম স্বরে বললেন "দেখুন ভাই, অবান্তর কথায় শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আপনি আমাদের আজকের শোয়ের উইনার। আপনাকে অন ক্যামেরা প্রাইজ দেওয়া হবে, তারপর একটা বাইট দিয়েই আপনার ছুটি।"

-"ওকে ফাইন" স্যান্ডি বলল।

পিছনের লোকটিকে ইশারায় ক্যামেরা অন করতে বলে আমন আহুজা স্যান্ডিকে বললেন "ভাই হেলমেটটা খুলুন দয়া করে, ওটা পরে নিশ্চয়ই ক্যামেরায় বাইট দেওয়ার কথা ভাবছেন না।"

স্যান্ডি হেলমেটটা খুলে ফেলল, তারপর আমন আহুজার দিকে তাকালো।

স্যান্ডির অনাবৃত চেহারায় চোখ পড়তেই আমন আহুজা বিদ্যুৎপৃষ্টের মতো ছিটকে গেলেন।

-"তু…তু…তুমি ?"

-"ইয়েস, আমি" স্যান্ডি শীতল স্বরে বলল "চিনতে পারছেন আমায়? আমিই আপনাদের প্র্যাঙ্কের সেই ভিকটিম !"

-"নোওওওওও……ইটস্…..ইটস্ ইম্পসিবল্ !"

আমন আহুজা সহসা বুকের বাঁদিকে একটা তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলেন। তারপর  তাঁর চোখের ওপর ধীরে ধীরে একটা অন্ধকার পর্দা নেমে এল …
                     
টিভিতে নিউজ চলছে।
একটি অল্পবয়সী ছেলে খুব মন দিয়ে সেটা দেখছে।
একটা ব্রেকিং নিউজ দেখানো হচ্ছিল।
বিখ্যাত টেলিভিশন অ্যাঙ্কর আমন আহুজা আজ তাঁর প্র্যাঙ্ক শোয়ের শুট্যিং চলাকালীন হঠাৎ হার্টফেল করে মারা গিয়েছেন।

ছেলেটির মুখে একটা ক্ষীণ হাসির রেখা ফুটে উঠল।
সে দেয়ালে টাঙানো একটি ছবির দিকে তাকালো।
ছবিটি তার মৃত জমজ ভাইয়ের, যার চেহারা ছিল হুবহু তার নিজের মতো।

-"আমি পেরেছি অ্যান্ডি" ছবিটির দেখে তাকিয়ে ছেলেটি বলে উঠলো "তোর ভাই আজ তোর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পেরেছে।"

এই ছেলেটি‌র নাম স্যান্ডি ডিমেলো।

আমন আহুজার প্র্যাঙ্ক শোয়ের কারণে যার প্রাণ গিয়েছিল, সেই অ্যান্ডি ডিমেলো ছিল স্যান্ডির জমজ ভাই। দেওয়ালের ছবিটা তারই।

একটা প্র্যাঙ্ক-এর কারণে স্যান্ডি তার  ভাইকে হারিয়েছিল।
আর আজ সেই প্র্যাঙ্ক-এর মাধ্যমেই সে তার ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিল !

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 4 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক গল্প সংকলন (চলছে) - by Sanjay Sen - 06-11-2023, 09:59 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)