03-11-2023, 12:28 PM
(This post was last modified: 03-11-2023, 12:40 PM by Nirjon_ahmed. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
[b]একজন সার্জিও রামোসের ডিফেন্সিভ মিস্টেক[/b]
৪
শুরুতেই মার্ক টোয়েনের একটা উক্তি দিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম। "বাস্তবতা গল্প কিংবা কল্পনার চেয়েও বিস্ময়কর"। গুগোল করে দেখলাম, তিনি বলেছেন, কল্পনা বা গল্প বাস্তবের চেয়ে আশ্চর্যজনক বা চমকপ্রদ কারণ গল্পে বা কল্পনায় বাস্তবতার ছিটেফোঁটা হলেও থাকতে হয়; নইলে শ্রোতা বা পাঠক সেটা বিশ্বাস করতে চায় না। পাঠক বা শ্রোতার কাছে গল্পকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্যেই লেখক বা গল্পবলিয়েকে কল্পনায় লাগাম টানতে হয়। কিন্তু বাস্তব ঘটনা নিজেকে সত্য বলে প্রমাণের কোন চেষ্টা করে না।
কেউ যদি গল্পে লেখে একটা মানুষের উপর যে মানুষ বিদ্যুৎ স্পর্শ করে কিন্তু কারেন্ট বা বিদ্যুৎ তার শরীরে প্রবাহিত হয় না বা কোন ক্ষতি করতে পারে না, তবে পাঠক সেটাকে গুল হিসেবে নেবে। কিন্তু বাস্তবে এমন মানুষ আছে। ডিস্কাভারি "সুপারহিউমান" নামের একটা সিরিজ করেছিলো, তাতে দেখেছিলাম।
সেরাতে ভেবেছিলাম, সত্যিই আর ফাতেমা রেজিনা যোগাযোগ করবেন না আমার সাথে। তারপর আর কথাও হয়নি আমাদের। কিন্তু কয়েকদিন পর এক সকালে ফোন দিয়ে তিনি বললেন, "কাকরাইলের এদিকে আসতে পারবে? আমি এদিকে আছি!"
উপরের কথাগুলা বললাম, আমার এই কাহিনীর জন্যেই। যারা প্রশ্ন তুলবেন, একটা মধ্যবয়সী মহিলা, সফল মানুষের স্ত্রী, সুখী যে নিজের পরিবার নিয়ে, কীসের আশায় আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, তাদের বলি, এর চেয়েও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে পৃথিবীতে। যারা বলবেন, এ কাহিনী পুরা গুল, তাদের বলব, "এটা কাহিনী না। ঘটনা। সত্যতা তাই প্রমাণের গরজ নাই!"
তবে আমিও রিক্সায় যাওয়ার সময় ফাতেমা রেজিনার এই অকস্মাৎ আমাকে ডাকা নিয়ে কম ভাবিনি। নিজেকেই জিজ্ঞেস করেছি, "তার আমার সাথে, যে কিনা তারই ভাষায় একজন পার্ভাট, দেখা করার কোন কারণ নেই। তবে কেন ডাকলেন?"
নিজেকেই বললাম, "মানুষের মন! যে মনকে ফ্রোয়েডের মতো লোকেরাও বুঝতে পারেনি, আমি নাদান বুঝবো কী করে? আর মানুষের সব কাজের মানে থাকতেই হবে, এর কোন মানেও নাই!"
কাকরাইলে না, শেষমেশ গেলাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে। কাছেই এক বিখ্যাত কলেজে তার ছোট ছানাটি পড়ে। রিক্সা থেকে নামতেই দেখতে পেলাম তাকে।
ছবিতে যেমন দেখায়, তেমনই। তবে বাস্তবে তিনি আরেকটু বেটে। পাঁচ ফুট তিন সাড়ে তিন সর্বোচ্চ। পরনে থ্রিপিস।
আমাকে দেখেই বললেন, "আমি সেদিন কেটে দিলাম আর তোমার কোন খোঁজ নাই! অন্তত সরি বলার জন্য তো আমাকে ফোন দিতে পারতা!"
আমি ভাড়া মিটিয়ে বললাম, "সরি কেন বলব? আমি সেদিন সব কথাই মিন করে বলেছি। ভেবেচিন্তে। আমি আপনাকে যদি হার্ট করে থাকি, তাহলে সরি। তবে যা বলছি সেসবের জন্যে আমি লজ্জিত না!"
উনি হাসলেন। মিষ্টি চাহারা তার। হাসলে আরও বেড়ে যায় সৌন্দর্য। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তার দাঁত। আমি এতো চকচকে দাঁত দেখিনি কারও। যেন মুক্তো চকচক করছে রোদে।
বললাম, "হঠাৎ আজ ডাকলেন যে?"
আমার দিকে সলজ্জ তাকালেন তিনি। বললেন, "এমনিই। ছোটটাকে প্রায়ই রাখতে আসি। যদি ওর বাবা কোন কারণে ঢাকায় না থাকে আরকি। রেখে ফিরে যাই। আবার দুপুরে নিতে আসি। আজ ভাবলাম, তোমার সাথে দেখাই করি। বাসা গিয়ে আর করবোই বা কী? ফেসবুকে কাউকে খুঁজে কল দিব! তারচেয়ে সামনাসামনি কারও সাথে কথা বলা ভালো!"
বললাম, "তা বটে। আপনি নিশ্চয়ই অনেককে পাইছেন এর মধ্যে কথা বলার মতো। মেয়েদের তো কথা বলার লোকের অভাব হয় না। ওরা নিশ্চয়ই ওমন পার্ভাট না!"
"হ্যাঁ। অনেকেই তো আছে। ওদের আমি তোমার কথা আজেবাজে কথা বলার সুযোগ দেই না। তোমাকে আমি একটু বেশিই প্রশ্রয় দিছিলাম!"
বেশ রোদ। ক'দিন ধরে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে বলে আবহাওয়া কিছুটা ঠাণ্ডাই। আমরা গিয়ে দাঁড়ালাম একটা গাছের ছায়ায়।
বললাম, "পার্কের ভেতরে যাই চলুন। আপনার তাড়া নাই তো?"
"না নাই। বরং দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ নাই কোন!"
"আপনার গাড়ি কোথায়?"
"ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের ভেতরে। সমস্যা নাই, কেউ নেবে না!"
এমনভাবে ভরসা দিলেন যেন গাড়িটা আমার।
রমনার গেট পেরিয়ে হাঁটতে লাগলাম আমরা। কথা হচ্ছে টুকটাক। লেকের পাড়ে এসে বসলাম একটা বেঞ্চে।
"রমনার বটমূলটা কোথায় যেন? ৩/৪ বছর আগে আসছিলাম একবার!"
"বলেন কী? পাশেই তো আপনার ছেলের কলেজ। পার্কে আর ঢোকেন নাই?"
বললেন, "সুযোগই হয় নাই। এদিকে এলে তো ওকে রেখেই চলে যাই।"
সকালটা ঝিম ধরে আছে যেন পুকুরের কঞ্চিতে মাছের খোঁজে একমনে বসে থাকা বকের মতো। শরতের ছাড়া ছাড়া তুলো মেঘ এবারে ঢাকার আকাশ থেকে উধাও। তার বদলে সমস্ত আকাশ জুড়ে বিষাদগ্রস্ত অখণ্ড সাদা মেঘের বিস্তার।
রাতেমা রেজিনা মাঝে সামান্য ব্যবধানে রেখে বসেছেন।
বললাম, "তো বলুন, কেমন লাগছে অভিসার?"
"অভিসার? এটা অভিসার নাকি?"
বললাম, "না তো কী? আমার কাছে অভিসারই। আমরা তো আর দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা বা ধরুন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এখানে আসি নাই!"
"তুমি চাইলে আমি অবশ্য এইসব নিয়া কথা বলতে পারি। আমি নিজে রাজনীতি করি না, কিন্তু আমার হাজবেন্ডের সাথে ঐ লেখক রাজনীতিবিদ সাধারণ সম্পাদকটার বেশ ভালো সম্পর্ক। অনেক গোপন খবরও আমি জানি!"
হেসে বললাম, "থাক! সেসব নিয়ে গুলতানি মারার লোকের অভাব নাই আমার। আমার অভাব আপনার মতো লোকের!"
উনি কিছু জবাব দিলেন না। তাকিয়ে রইলেন লেকের জলের দিকে।
আমার এসব লেকফেক দেখার ইচ্ছা আজ নাই। যখন পাশে ফাতেমা রেজিনা থাকবেন না, তখনও লেকটা থাকবে, কেউ এসে ভরাট করে যাবে না।
বললেন, "ফোন একটা মারাত্মক জিনিস, তাই না?"
বললাম, "কেন?"
"এই যে আজ প্রথম দেখা। অথচ মনে হচ্ছে কতোদিন ধরে তোমাকে চিনি! তোমাকে কতোবার দেখছি!"
"সেটাই। ছবি তো দেখছেনই। দেখা হওয়ার আগেই এতো কথা হইছে যে প্রথমবার দেখা হওয়ার রেশটাই নাই! এমনকি ইন্টিমেট ব্যাপারেও কথা হইছে, না?"
শেষ কথাটা ইচ্ছে করেই বললাম। উনি জবাব দিলেন না।
তারপর বললেন, "ক্লিন শেভড ছবি সেদিন ফেসবুকে দিছিলা। ভালোই লাগছিলো দেখতে। আবার দাড়ি রাখতে গেলা কেন?"
"আপনি তো দেখি আমার ভালোই খোঁজ রাখেন!"
মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, "আমার ফ্রেন্ডলিস্টে মানুষই বা কয়টা? সবার পোস্ট, ছবি আসে। তোমারটাও দেখি!"
আমি তাকালাম তার ওড়নাঢাকা স্তনের দিকে। কিশোরীর স্তনের মতো উদ্ধত নয়। চর্বির ভারে নিম্নমুখী। ওড়না সামনের অংশ ঢেকেছে বটে, কিন্তু পাশ থেকে বিশাল অংশ দৃশ্যমান। অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছি বলে, বগলের অংশ ভিজে গিয়েছে ঘামে।
পেটে যথেষ্ট চর্বি রয়েছে। জামার উপর দিয়েই বোঝা যাচ্ছে পেটের চর্বির ভাঁজ। এবয়সের নারীর যেমন হয়, বেশ মোটা পা আর ভারি পাছা, তারও তেমন।
আমার দিকে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে বললেন, "কী দেখতেছো?"
"আপনাকে! আপনি বাস্তবে ছবির চেয়ে বেশি সেক্সি!"
"আবার শুরু করলে?"
হেসে বললাম, "আজ তো আর কল কেটে দিতে পারবেন না। সামনে বসে আছেন!"
"তাই বলে যা তা বলবে?"
"যা তা বলছি না। যেটা সত্যি, সেটা বলছি।"
ছুটির দিন নয়, তাই লোক সমাগম কম। আর এসময়টায়, পিক অফিস টাইমে, কেউ থাকে না বললেই চলে। দূরে, একটা বড় অশ্বত্থ গাছের নিচের বাঁধানো বেঞ্চে বসে একটা কাপল চুম্মাচাটি করছে। কয়েকজন দূরে বসে বসে বাদাম খাচ্ছে বোধহয়।
উনি বললেন, "এটা সত্য? নাকি তুমি মেয়ে দেখলেই তাদের সেক্সি বলো?"
হাসলাম আবার। বললাম, "ঠিক বলেছেন। সবাইকে সেক্সি বলি। কিন্তু মিথ্যা বলি না জানেন? পৃথিবীর কোন প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে আছে যে সেক্সি না বলুন তো?"
"আমি জানি না!"
বললাম, "জেনে কাজ নেই আপনার। আপনি শুধু জেনে রাখুন যে আপনি অনেক রমণীয় একজন নারী। রমণীয় শব্দটার আক্ষরিক মানে জানেন তো? রমণের যোগ্য যে!"
"ছিঃ, নির্জন। কেউ শুনবে তো!"
বললাম, "আমাদের আশেপাশে আছে শুধু কয়েকটা কাঠবিড়ালি। তারা তো আর বাংলা বোঝেনা!"
তিনি নিজেও আশেপাশে তাকিয়ে নিলেন।
"তোমার গার্লফ্রেন্ড টালফ্রেন্ড নাই নাকি?"
বললাম, "থাকবে না কেন? আমি কি দেখতে এতোটা খারাপ নাকি?"
তিনি দ্রুত বলে উঠলেন, "আরে না না। এটা বললাম নাকি?"
"তাহলে?"
"এসব কথা গার্লফ্রেন্ডকে বলতে পারো না?"
"ওকেও বলি তো। ওকে সেক্সি লাগে বলে আপনাকে সেক্সি লাগবে না? প্রেম করছি বলে তো চোখ দুইটা ওকে লিজ দিয়ে দেই নাই!"
"হুম।"
কিছুদিন পর একটা বড়সড় পরীক্ষা আছে চাকরির। হাজারের উপরে পোস্ট। বেকারত্ব ঘোচানোর এরচেয়ে বড় সুযোগ হয়তো পাবো না আর। বাকি সবাই পড়ছে নাওয়াখাওয়া ভুলে। আর আমি এসে বসে আছি পার্কে! সুতরাং আজ আমি পেছপা হবো না আক্রমণে। কিছু করতে পারি না না পারি, বলে মুখের সুখ আর দেখে চোখের সুখটা মিটিয়ে নেবো পুরাপুরি।
তার ঠোঁটের ঠিক উপরের তিলটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ঈংগিত করে বললাম, "আপনার ঠোঁটের তিলটা একদম পারফেক্ট জায়গায় আছে!"
শুনে, জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটলেন তিনি। বললেন, "এটা তো দেখাই যায় না একদম। আর তোমার চোখ ওখানেই গিয়ে পড়লো!"
হাসলাম একটু। বললাম,, "আপনার স্বামীকে এজন্যে একটু হিংসা হইতেছে আমার। এমন ঠোঁটে তিনওয়ালা ঝাক্কাস একটা বৌ পাইছে!"
তিনি আমার দিকে খর নয়নে তাকিয়ে বললেন, "আচ্ছা, তুমি তো শুরুর দিকে বেশ ভদ্র হয়ে কথা বলতা। এখন সব কথায় এসব টানো কেন?"
"আচ্ছা, একটা কথা বলি, শুনুন।!"
"কী?"
"আপনি তো জানতেন, আমি এসব সেক্স টেক্স নিয়েই আলোচনা করবো। তাও আমাকে ডাকলেন কেন?"
উনি অবলীলায় বললেন, "আশেপাশে তুমিই আছো। তাছাড়া বাকিরা সব দূরের!"
"ভাগ্য আমার ভালো বলতে হবে! যাক সে কথা। কিন্তু আপনি জানতেন আমি এসব বলব। না?"
এ কথারও উত্তর নেই। বুঝলাম, মনে মনে অনেক সমীকরণ সমাধান করেন তিনি আজ আমার ডেকেছেন।
৪
শুরুতেই মার্ক টোয়েনের একটা উক্তি দিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম। "বাস্তবতা গল্প কিংবা কল্পনার চেয়েও বিস্ময়কর"। গুগোল করে দেখলাম, তিনি বলেছেন, কল্পনা বা গল্প বাস্তবের চেয়ে আশ্চর্যজনক বা চমকপ্রদ কারণ গল্পে বা কল্পনায় বাস্তবতার ছিটেফোঁটা হলেও থাকতে হয়; নইলে শ্রোতা বা পাঠক সেটা বিশ্বাস করতে চায় না। পাঠক বা শ্রোতার কাছে গল্পকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্যেই লেখক বা গল্পবলিয়েকে কল্পনায় লাগাম টানতে হয়। কিন্তু বাস্তব ঘটনা নিজেকে সত্য বলে প্রমাণের কোন চেষ্টা করে না।
কেউ যদি গল্পে লেখে একটা মানুষের উপর যে মানুষ বিদ্যুৎ স্পর্শ করে কিন্তু কারেন্ট বা বিদ্যুৎ তার শরীরে প্রবাহিত হয় না বা কোন ক্ষতি করতে পারে না, তবে পাঠক সেটাকে গুল হিসেবে নেবে। কিন্তু বাস্তবে এমন মানুষ আছে। ডিস্কাভারি "সুপারহিউমান" নামের একটা সিরিজ করেছিলো, তাতে দেখেছিলাম।
সেরাতে ভেবেছিলাম, সত্যিই আর ফাতেমা রেজিনা যোগাযোগ করবেন না আমার সাথে। তারপর আর কথাও হয়নি আমাদের। কিন্তু কয়েকদিন পর এক সকালে ফোন দিয়ে তিনি বললেন, "কাকরাইলের এদিকে আসতে পারবে? আমি এদিকে আছি!"
উপরের কথাগুলা বললাম, আমার এই কাহিনীর জন্যেই। যারা প্রশ্ন তুলবেন, একটা মধ্যবয়সী মহিলা, সফল মানুষের স্ত্রী, সুখী যে নিজের পরিবার নিয়ে, কীসের আশায় আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, তাদের বলি, এর চেয়েও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে পৃথিবীতে। যারা বলবেন, এ কাহিনী পুরা গুল, তাদের বলব, "এটা কাহিনী না। ঘটনা। সত্যতা তাই প্রমাণের গরজ নাই!"
তবে আমিও রিক্সায় যাওয়ার সময় ফাতেমা রেজিনার এই অকস্মাৎ আমাকে ডাকা নিয়ে কম ভাবিনি। নিজেকেই জিজ্ঞেস করেছি, "তার আমার সাথে, যে কিনা তারই ভাষায় একজন পার্ভাট, দেখা করার কোন কারণ নেই। তবে কেন ডাকলেন?"
নিজেকেই বললাম, "মানুষের মন! যে মনকে ফ্রোয়েডের মতো লোকেরাও বুঝতে পারেনি, আমি নাদান বুঝবো কী করে? আর মানুষের সব কাজের মানে থাকতেই হবে, এর কোন মানেও নাই!"
কাকরাইলে না, শেষমেশ গেলাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে। কাছেই এক বিখ্যাত কলেজে তার ছোট ছানাটি পড়ে। রিক্সা থেকে নামতেই দেখতে পেলাম তাকে।
ছবিতে যেমন দেখায়, তেমনই। তবে বাস্তবে তিনি আরেকটু বেটে। পাঁচ ফুট তিন সাড়ে তিন সর্বোচ্চ। পরনে থ্রিপিস।
আমাকে দেখেই বললেন, "আমি সেদিন কেটে দিলাম আর তোমার কোন খোঁজ নাই! অন্তত সরি বলার জন্য তো আমাকে ফোন দিতে পারতা!"
আমি ভাড়া মিটিয়ে বললাম, "সরি কেন বলব? আমি সেদিন সব কথাই মিন করে বলেছি। ভেবেচিন্তে। আমি আপনাকে যদি হার্ট করে থাকি, তাহলে সরি। তবে যা বলছি সেসবের জন্যে আমি লজ্জিত না!"
উনি হাসলেন। মিষ্টি চাহারা তার। হাসলে আরও বেড়ে যায় সৌন্দর্য। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তার দাঁত। আমি এতো চকচকে দাঁত দেখিনি কারও। যেন মুক্তো চকচক করছে রোদে।
বললাম, "হঠাৎ আজ ডাকলেন যে?"
আমার দিকে সলজ্জ তাকালেন তিনি। বললেন, "এমনিই। ছোটটাকে প্রায়ই রাখতে আসি। যদি ওর বাবা কোন কারণে ঢাকায় না থাকে আরকি। রেখে ফিরে যাই। আবার দুপুরে নিতে আসি। আজ ভাবলাম, তোমার সাথে দেখাই করি। বাসা গিয়ে আর করবোই বা কী? ফেসবুকে কাউকে খুঁজে কল দিব! তারচেয়ে সামনাসামনি কারও সাথে কথা বলা ভালো!"
বললাম, "তা বটে। আপনি নিশ্চয়ই অনেককে পাইছেন এর মধ্যে কথা বলার মতো। মেয়েদের তো কথা বলার লোকের অভাব হয় না। ওরা নিশ্চয়ই ওমন পার্ভাট না!"
"হ্যাঁ। অনেকেই তো আছে। ওদের আমি তোমার কথা আজেবাজে কথা বলার সুযোগ দেই না। তোমাকে আমি একটু বেশিই প্রশ্রয় দিছিলাম!"
বেশ রোদ। ক'দিন ধরে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে বলে আবহাওয়া কিছুটা ঠাণ্ডাই। আমরা গিয়ে দাঁড়ালাম একটা গাছের ছায়ায়।
বললাম, "পার্কের ভেতরে যাই চলুন। আপনার তাড়া নাই তো?"
"না নাই। বরং দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ নাই কোন!"
"আপনার গাড়ি কোথায়?"
"ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের ভেতরে। সমস্যা নাই, কেউ নেবে না!"
এমনভাবে ভরসা দিলেন যেন গাড়িটা আমার।
রমনার গেট পেরিয়ে হাঁটতে লাগলাম আমরা। কথা হচ্ছে টুকটাক। লেকের পাড়ে এসে বসলাম একটা বেঞ্চে।
"রমনার বটমূলটা কোথায় যেন? ৩/৪ বছর আগে আসছিলাম একবার!"
"বলেন কী? পাশেই তো আপনার ছেলের কলেজ। পার্কে আর ঢোকেন নাই?"
বললেন, "সুযোগই হয় নাই। এদিকে এলে তো ওকে রেখেই চলে যাই।"
সকালটা ঝিম ধরে আছে যেন পুকুরের কঞ্চিতে মাছের খোঁজে একমনে বসে থাকা বকের মতো। শরতের ছাড়া ছাড়া তুলো মেঘ এবারে ঢাকার আকাশ থেকে উধাও। তার বদলে সমস্ত আকাশ জুড়ে বিষাদগ্রস্ত অখণ্ড সাদা মেঘের বিস্তার।
রাতেমা রেজিনা মাঝে সামান্য ব্যবধানে রেখে বসেছেন।
বললাম, "তো বলুন, কেমন লাগছে অভিসার?"
"অভিসার? এটা অভিসার নাকি?"
বললাম, "না তো কী? আমার কাছে অভিসারই। আমরা তো আর দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা বা ধরুন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এখানে আসি নাই!"
"তুমি চাইলে আমি অবশ্য এইসব নিয়া কথা বলতে পারি। আমি নিজে রাজনীতি করি না, কিন্তু আমার হাজবেন্ডের সাথে ঐ লেখক রাজনীতিবিদ সাধারণ সম্পাদকটার বেশ ভালো সম্পর্ক। অনেক গোপন খবরও আমি জানি!"
হেসে বললাম, "থাক! সেসব নিয়ে গুলতানি মারার লোকের অভাব নাই আমার। আমার অভাব আপনার মতো লোকের!"
উনি কিছু জবাব দিলেন না। তাকিয়ে রইলেন লেকের জলের দিকে।
আমার এসব লেকফেক দেখার ইচ্ছা আজ নাই। যখন পাশে ফাতেমা রেজিনা থাকবেন না, তখনও লেকটা থাকবে, কেউ এসে ভরাট করে যাবে না।
বললেন, "ফোন একটা মারাত্মক জিনিস, তাই না?"
বললাম, "কেন?"
"এই যে আজ প্রথম দেখা। অথচ মনে হচ্ছে কতোদিন ধরে তোমাকে চিনি! তোমাকে কতোবার দেখছি!"
"সেটাই। ছবি তো দেখছেনই। দেখা হওয়ার আগেই এতো কথা হইছে যে প্রথমবার দেখা হওয়ার রেশটাই নাই! এমনকি ইন্টিমেট ব্যাপারেও কথা হইছে, না?"
শেষ কথাটা ইচ্ছে করেই বললাম। উনি জবাব দিলেন না।
তারপর বললেন, "ক্লিন শেভড ছবি সেদিন ফেসবুকে দিছিলা। ভালোই লাগছিলো দেখতে। আবার দাড়ি রাখতে গেলা কেন?"
"আপনি তো দেখি আমার ভালোই খোঁজ রাখেন!"
মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, "আমার ফ্রেন্ডলিস্টে মানুষই বা কয়টা? সবার পোস্ট, ছবি আসে। তোমারটাও দেখি!"
আমি তাকালাম তার ওড়নাঢাকা স্তনের দিকে। কিশোরীর স্তনের মতো উদ্ধত নয়। চর্বির ভারে নিম্নমুখী। ওড়না সামনের অংশ ঢেকেছে বটে, কিন্তু পাশ থেকে বিশাল অংশ দৃশ্যমান। অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছি বলে, বগলের অংশ ভিজে গিয়েছে ঘামে।
পেটে যথেষ্ট চর্বি রয়েছে। জামার উপর দিয়েই বোঝা যাচ্ছে পেটের চর্বির ভাঁজ। এবয়সের নারীর যেমন হয়, বেশ মোটা পা আর ভারি পাছা, তারও তেমন।
আমার দিকে উৎসুক নয়নে তাকিয়ে বললেন, "কী দেখতেছো?"
"আপনাকে! আপনি বাস্তবে ছবির চেয়ে বেশি সেক্সি!"
"আবার শুরু করলে?"
হেসে বললাম, "আজ তো আর কল কেটে দিতে পারবেন না। সামনে বসে আছেন!"
"তাই বলে যা তা বলবে?"
"যা তা বলছি না। যেটা সত্যি, সেটা বলছি।"
ছুটির দিন নয়, তাই লোক সমাগম কম। আর এসময়টায়, পিক অফিস টাইমে, কেউ থাকে না বললেই চলে। দূরে, একটা বড় অশ্বত্থ গাছের নিচের বাঁধানো বেঞ্চে বসে একটা কাপল চুম্মাচাটি করছে। কয়েকজন দূরে বসে বসে বাদাম খাচ্ছে বোধহয়।
উনি বললেন, "এটা সত্য? নাকি তুমি মেয়ে দেখলেই তাদের সেক্সি বলো?"
হাসলাম আবার। বললাম, "ঠিক বলেছেন। সবাইকে সেক্সি বলি। কিন্তু মিথ্যা বলি না জানেন? পৃথিবীর কোন প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে আছে যে সেক্সি না বলুন তো?"
"আমি জানি না!"
বললাম, "জেনে কাজ নেই আপনার। আপনি শুধু জেনে রাখুন যে আপনি অনেক রমণীয় একজন নারী। রমণীয় শব্দটার আক্ষরিক মানে জানেন তো? রমণের যোগ্য যে!"
"ছিঃ, নির্জন। কেউ শুনবে তো!"
বললাম, "আমাদের আশেপাশে আছে শুধু কয়েকটা কাঠবিড়ালি। তারা তো আর বাংলা বোঝেনা!"
তিনি নিজেও আশেপাশে তাকিয়ে নিলেন।
"তোমার গার্লফ্রেন্ড টালফ্রেন্ড নাই নাকি?"
বললাম, "থাকবে না কেন? আমি কি দেখতে এতোটা খারাপ নাকি?"
তিনি দ্রুত বলে উঠলেন, "আরে না না। এটা বললাম নাকি?"
"তাহলে?"
"এসব কথা গার্লফ্রেন্ডকে বলতে পারো না?"
"ওকেও বলি তো। ওকে সেক্সি লাগে বলে আপনাকে সেক্সি লাগবে না? প্রেম করছি বলে তো চোখ দুইটা ওকে লিজ দিয়ে দেই নাই!"
"হুম।"
কিছুদিন পর একটা বড়সড় পরীক্ষা আছে চাকরির। হাজারের উপরে পোস্ট। বেকারত্ব ঘোচানোর এরচেয়ে বড় সুযোগ হয়তো পাবো না আর। বাকি সবাই পড়ছে নাওয়াখাওয়া ভুলে। আর আমি এসে বসে আছি পার্কে! সুতরাং আজ আমি পেছপা হবো না আক্রমণে। কিছু করতে পারি না না পারি, বলে মুখের সুখ আর দেখে চোখের সুখটা মিটিয়ে নেবো পুরাপুরি।
তার ঠোঁটের ঠিক উপরের তিলটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ঈংগিত করে বললাম, "আপনার ঠোঁটের তিলটা একদম পারফেক্ট জায়গায় আছে!"
শুনে, জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটলেন তিনি। বললেন, "এটা তো দেখাই যায় না একদম। আর তোমার চোখ ওখানেই গিয়ে পড়লো!"
হাসলাম একটু। বললাম,, "আপনার স্বামীকে এজন্যে একটু হিংসা হইতেছে আমার। এমন ঠোঁটে তিনওয়ালা ঝাক্কাস একটা বৌ পাইছে!"
তিনি আমার দিকে খর নয়নে তাকিয়ে বললেন, "আচ্ছা, তুমি তো শুরুর দিকে বেশ ভদ্র হয়ে কথা বলতা। এখন সব কথায় এসব টানো কেন?"
"আচ্ছা, একটা কথা বলি, শুনুন।!"
"কী?"
"আপনি তো জানতেন, আমি এসব সেক্স টেক্স নিয়েই আলোচনা করবো। তাও আমাকে ডাকলেন কেন?"
উনি অবলীলায় বললেন, "আশেপাশে তুমিই আছো। তাছাড়া বাকিরা সব দূরের!"
"ভাগ্য আমার ভালো বলতে হবে! যাক সে কথা। কিন্তু আপনি জানতেন আমি এসব বলব। না?"
এ কথারও উত্তর নেই। বুঝলাম, মনে মনে অনেক সমীকরণ সমাধান করেন তিনি আজ আমার ডেকেছেন।