03-11-2023, 12:25 PM
(This post was last modified: 03-11-2023, 12:39 PM by Nirjon_ahmed. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
[b]একজন সার্জিও রামোসের ডিফেন্সিভ মিস্টেক[/b]
৩
জলধারা প্রবাহিত হওয়ার পর, আগামীদিন সকালে রিডিং এ বসতে হবে বলে, শুয়ে পড়লাম লাইট নিভিয়ে। জীবনানন্দ যে ঘুমের কথা কল্পনা করতেন- নির্ভার, নিশ্চিন্ত, সে ঘুম শুধু পাওয়া যায় এভাবে শারীরিকভাবে ক্লান্ত হলেই। বাপধন ৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর ট্রামলাইন দেখতে যাওয়ার আগে হাত মারলেই বোধহয় বেঁচে যেতেন!
ভেবেছিলাম তার সাথে, ফাতেমা রেজিনার সাথে, যোগাযোগের এখানেই ইতি। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে, চোখে নেমে আসা ঘুমের বারোটা বাজিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন করলেন তিনি।
এবারে হোয়াটসঅ্যাপে।
রিসিভ করতেই বললেন, “তোমরা ছেলেরা সব এক রকম কেন?”
বললাম, “কী রকম?”
“ঐ যে মেয়েদের সাথে কথায় কথায় সেক্স টেনে আনো!”
“অন্যান্যরাও আনে নাকি?”
“আনে তো। অনেকে তো ভাবে আমি ওদের সাথে মজা নেয়ার জন্য কথা বলি!”
বললাম, “ঠিকই তো ভাবে!"
একটু রূঢ় স্বরেই যোগ করলাম আরও, "আর শুনুন, সব ছেলেই একরকম কারণ প্রকৃতিই ছেলেদের এমনে বানিয়েছে। ছেলে ও মেয়ে, আমরা ন্যাচারালিই মেট খুঁজি। রিপ্রোডাকশান শুধু মানুষ না, গোটা প্রাণীজগতের মৌলিক একটা কাজ। যারা এইটা অস্বীকার করে, তারা হয় বোকাচোদা, নয় মূর্খ, অথবা মস্তিষ্কহীন মৌলবাদী। আপনি কোনটা, জানি না। তবে ওরা স্বাভাবিকভাবেই, ন্যাচারালিই আপনার দিকে সেক্সুয়ালি এপ্রোচ করছে!”
“কিন্তু আমি তো করি নাই, না?”
“তাতে কী? কাউকে না কাউকে তো এপ্রোচ করতেই হবে!”
উঠে আলো জ্বাললাম আবার। অন্ধকারে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে।
বললাম, খোঁচা দিয়ে, “আবার ফোন দিলেন যে? মত বদলে গেলো?”
তার লজ্জামাখা মুখটা কল্পনায় দেখতে পেলাম যেন। বললেন, “না। আসলে আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো তোমার সাথে। বাড়ি থেকে এসে ঘুমাইছিলাম সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এখন তো মনে হয় না রাত ১-২টার আগে ঘুম ধরবে। কী করবো ততোক্ষণ, বলো?”
বললাম, “অন্যান্য দিন তো রাতে আমি থাকি না। সেদিন কী করেন?”
বললেন, “অন্যান্যদিন তো আর অসময়ে দিনের বেলা আমি ঘুমাই না। আর কোনদিন এমন হলে তো হাসবেন্ড থাকেই!”
আমার জিজ্ঞাসা, “রাত জেগে ওনার সাথে কথা বলেন?”
“তা না। তবে টুকটাক কথা হয়। এটা ওটা করতে হয়! সময় চলে যায়!”
“এটা ওটা? সেক্স করেন না?”
ঘুরে ফিরে চলে গেলাম সে প্রসঙ্গেই।
তবে এবারে আর ক্ষেপে গেলেন না। খানিক ভেবে বললেন, “কেন করবো না? করি!”
“সপ্তাহে কতবার করেন?”
“গুণিনি। কোন সপ্তাহে একবার, কোন সপ্তাহে দুই তিন বার!”
জানি এটা নরলাম। ১৫ বছর ধরে একজনকেই লাগাচ্ছে, ভালো আর কতোদিন লাগবে? এখনও যে সপ্তাহে দুই তিনবার লাগাচ্ছে এরা, এটাও কম বিস্ময়ের না। আমার তো এক মেয়েকে ৩ মাসের বেশি সহ্য হয় না। মনে হয় তাকে এফোঁড় ওফোঁড় দেখতে পাচ্ছি। অবশ্য আমি বলছি শারীরিক ভালোবাসার কথা। শুধু শরীর, সে যদি পৃথিবীর সুন্দরীতমারও হয়, কোন ছেলেকে বেঁধে রাখতে পারবে না। শরীরে নতুন কিছু নেই। আর শারীরিক কার্যকলাপ? একঘেয়েমি!
তবু বললাম, তাকে একটু ধন্দে ফেলতেই, “মাত্র ২/৩ বার? আপনার মতো সুন্দরী এর চেয়ে বেশি ডিজার্ভ করে!”
একথা অবশ্য মিথ্যে না যে তিনি সুন্দরী। ছবিতে যেমন দেখেছি, তাতে তাকে বাংলা সিরিয়ালে, নাটকে অভিনয় করা মধ্যবয়সী নারীদের চেয়ে কোন অংশেই কম মনে হয়নি। পরিমিত দেহ। আবহমান বাঙালি নারীর মতোই মেদযুক্ত সুখী শরীরে ঢলঢলে ভাব। তৃপ্ত সন্তুষ্ট মুখে আবেশের ছায়া। কাঁধ পর্যন্ত চুল।
বললেন, “তা কয়বার করে? তোমার কাছে স্ট্যাটিসটিকস আছে নাকি?”
বললাম, “আছে তো। ফরাসিরা ৫০ পর্যন্ত মাসে অন্তত ছাব্বিশবার আর সপ্তাহে গড়ে সর্বনিম্ন ৬ বার সেক্স করে রিসেন্ট এটা সার্ভে মতে।“
“তাই নাকি? জানতাম না তো!”
জানার কথাও না। যে সার্ভে আমার মনগড়া, সে সার্ভের কথা তার কানে যাবে কী করে? আর কে যেন বলেছিলো, পৃথিবীতে তিন ধরণের মিথ্যা আছে। অর্ধসত্য, মিথ্যা আর পরিসংখ্যান। অর্থাৎ পরিসংখ্যান মিথ্যার সর্বোচ্চ পর্যায়।
“একটু খোঁজ নিলেই জানবেন!”
আরও যোগ করলাম, “আচ্ছা, আমি মাস্টারবেট করেন?”
এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য আমি আশা করিনি।
“কী যা তা বলছো? মাস্টারবেট কেন করবো? আমি কি তোমার মতো নাকি যে কেউ থাকে না পাশে ঘুমানোর সময়?”
বললাম, “সে আলাদা কথা। আচ্ছা ধরুন, আপনার মুড উঠলো আজ সেক্স করার, কিন্তু আপনার হাজবেন্ড রাজী না, তার মুড নেই। সেক্ষেত্রে?”
“না এমন হয় না। ওরই বরং মুড বেশি ওঠে। আমার ওঠে না!”
বললাম, “বুঝেছি। আপনার আর্জ কমে গেছে। আর কমবে নাই বা কেন, একজনকে আর কতোদিন ভালো লাগে?”
জবাব দিলেন না কোন।
বললাম, “আপনার বোরডেম আপনার সেক্স লাইফকেও এনগাল্ফ করছে। আপনার লাইফে একটু মশলা দরকার!”
উনি কৌতুহলী হয়ে বললেন, “কী সেই মশলা?”
বললাম, “দিনের বেলা বিরক্ত হয়ে যেটা করেন, সেটাই। অনেক লোকের সাথে কথা বলেন। সেক্সটাকেও কথা বলার মতো করে ভাবুন না!”
“কী কইতে চাইতেছো? যেভাবে কথা বলি সবার সাথে, সেভাবে শুয়ে পড়বো!”
“সেটা বলছি না। শুয়ে না পড়লেও একটু রোম্যান্স তো করতেই পারেন, না? একটু বৈচিত্র আসবে লাইফে!"
“শোন, আমি বিবাহিতা। আমার স্বামী আছে। অন্যের সাথে রোম্যান্স করার দরকার নাই আমার!"
বললাম, "আচ্ছা। সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু আপনার স্বামী যে আপনার মতো ভাবে, তার কী গ্যারান্টি?"
"কী বলতে চাচ্ছো?"
"আপনি না হয় ঘরে বন্দী থাকে। ক্যাপ্টিভ লেডি। আপনার হাজবেন্ড তো আর থাকে না। সে হয়তো বাইরে ঠিকই মজা নেয়!"
উনি বললেন, "এসব তোমার কল্পনা। ঐরকম করলে বুঝতাম!"
বললাম, "আপনার স্বামীভক্তি অক্ষয় হোক!"
কিছুক্ষণ কিছু না বলে আবার শুরু করলাম, “তারমানে মাস্টারবেট করেন না?”
“না। করিনা!”
কাটকাট জবাব। বাইরে জোছনা ফুটফুটে। জানলা দিয়ে চাঁদের আলো বিছানায় আসবে শেষ রাতে। জানলার সামনের লম্বা রেইনট্রির পাতায় যে জোছনা লুটোপুটি খাচ্ছে, তা দেখবো বলে ঘরে আলো নিভিয়ে দিলাম আবার।
বললাম, “মিথ্যা কথা। হস্তমৈথুন জীবনে করে নাই এমন কোন মানুষই নাই পৃথিবীতে!”
“জানোই তো। তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো যে?”
হেসে বললাম, “আপনার মুখ থেকে শুনতে চাইলাম। করেন তারমানে?”
“করতাম। বিয়ের আগে। এখন করি না। দরকারও নাই!”
তার কথার সুর ধরে জোর দিয়ে বললাম, “দরকার আছে। আপনি মানসিকভাবে একা। এটা তো আর লুকাতে পারবেন না আমার কাছে। তাই না?”!
উনি সামান্য রুষ্ঠ হয়ে বললেন, “লুকাতে তো চাই নাই, নির্জন। প্রথম দিনই বলেছি তোমাকে!”
বললাম, “তারমানে শারীরিকভাবেও আপনি একা। শরীর আর মন সমান্তরালে চলে, বুঝলেন? আপনি লাইফে ডাইভার্সিটি খুঁজছেন। জানেন যে সেটা বাস্তবে সম্ভব না, তাই অনলাইনে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন!”
“তুমি সাইকোলোজিস্টদের মতো কথা বলছো!”
বললাম, “চেষ্টা করছি আপনার সাইকোলজি বোঝার। আপনি আপনার বাস্তবতা জাস্ট অস্বীকার করছেন। আপনি আমাকে বোঝাতে চাইছেন, এবং হয়তো নিজেকেও বোঝাতে চাইছেন যে আমি ফিজিকালি হ্যাপি। বাট ইউ আর নট। যদি হতেন তাহলে আমাকে আবার কল দিতেন না!”
উনি এবারে একটু ক্ষেপে গিয়ে বললেন, “তুমি চাইলে আবার কেটে দিতে পারি। আর কল দিব না!”
আমি দ্রুত বলে উঠলাম, “আরে না না। সেকাজ করবেন না। আমি আসলে ব্যাপারটাকে ইন্টারপ্রেট করছি!”
“আচ্ছা করো। শুনি!”
“আপনি জানতেন যে আমি আজেবাজে কথা বলবো৷ তাও কল দিয়েছেন। কারণ আমার কথা আপনাকে ইন্ট্রিগ করছে। আপনি কৌতুহলী হইছেন। আপনার যদি ফিজিকাল নিড না থাকতো, you would have severed contact...”
“তুমি এখন জোর করে আমাকে সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড বানাবে? তুমি বলবে, আমি শারীরিকভাবে অসুখী আর আমি সেটা বিশ্বাস করবো!”
কাজটা কঠিন হবে, জানতাম। তবে এতো কঠিন হবে, ভাবিনি। অভিজ্ঞতা বলে, বিবাহিতরা নিজেরা না চাইলে কখনোই তাদের থেকে কিছু পাওয়া সম্ভব না। চিট কেউ হুট করে, দুম করে, আকৎস্মিকভাবে করে না। পরকীয়ার দিকে যারা পা বাড়ায়, তারা একটা ক্যালকুলেটেড রিস্ক নেয়। আর তখনই কাজটা করে যখন ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি আর প্রলোভনটাও অপ্রতিরোধ্য। যারা তাই এই হিসেব কষে চিটিং এর দিকে পা দেয়, তাদের সাথে শুতে সময় লাগে না। যারা হিসেবটা করতেই শুরু করেনি, যারা এখনও জানেই না যে তারা পরকীয়া করতে চায়, তাদের বেলা একটু অতিরিক্ত পরিশ্রম দরকার বৈকি!
তাছাড়া আমি কি সেরকম কিছু করেছি? আমার প্রলোভন কি সবকিছু ভুলিয়ে দেয়ার মতো? হাসলাম নিজের কথা ভেবেই। যাকে সাধারণ মেয়েরাই গোণে না, তাকে সরকারী ইঞ্জিনিয়ারের বৌ গোণায় ধরবে কেন?
বললাম, আগের প্রসঙ্গই টেনে এনে, “আপনি আমার কথায় তাহলে একটুও আগ্রহ পাননি?”
উত্তর এলো সামান্য দেড়িতে। বললেন, “কৌতুহল ঠিক না। তবে অন্যরকম মনে হইছে। মনে হইলো, কথাই তো। কথা বললে তো ক্ষতি নাই!”
“বুঝলাম। আপনার সাথে কতোদিন ধরে কথা বলি, বলুন! এই এতোদিন ধরে কথা বলি কেন? কারণ আপনার প্রতি আমার সেক্সুয়াল আকর্ষণ আছে। এইটা যে কেন আপনি বুঝবেন না!”
“আজ বুঝলাম তো!”
“বুঝেই বা লাভ কী? সাহায্য করছেন না তো!”
উনি হেসে বললেন, “কী করতে বলো আমাকে তা? তোমার কাছে চলে যাবো? আমাকে কী খাওয়াবা তুমি?”
আমি হেসে হা হা করে এবারে। বললাম, “আপনি আসলেই গান্ডু। আপনাকে বিয়ে করবো কেন বলেন? বিয়ে করলে তো আপনার বড় বাচ্চাটা আমাকে আব্বা না ডেকে ভাইয়া বলে ডাকবে!”
হাসলেন উনিও। বললেন, “সেটা তো স্বপ্ন!”
“না। স্বপ্ন না। স্বপ্ন আমি অনেক বড় কিছুর দেখি। বিয়াটিয়া নিয়ে স্বপ্ন দেখে স্বপ্নহীনেরা। আপনাকে বিয়া করার বা আপনার সাথে প্রেম করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নাই, ইভেন দো ইউ আর এস্টোনিশিংলি বিউটিফুল। আমি জাস্ট আপনার সাথে সেক্সুয়ালি ইন্টিমেট হইতে চাই!”
“আচ্ছা বুঝলাম। তোমাকে আর সাফাই গাইতে হবে না! যাক গে, ধন্যবাদ তোমার কম্পলিমেন্টের জন্য! মাঝেমাঝে আমি যে সুন্দরী, এইটা কেউ মনে করায় দিলে ভালোই লাগে! হাহা।”
আমি হেসে বললাম, "বলছিলাম না যে আপনি বিবাহুত জীবিনে অখুশী?"
"বলছো। কিন্তু ভুল বলছো!"
"আপনিই আমাকে সঠিক প্রমাণ করলেন!"
"কীভাবে?"
"এই যে বললেন, আপনার মনে থাকে না আপনি সুন্দরী। কেউ মনে করায় দিলে আপনার ভালোই লাগে। আপনার স্বামী যদি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসতো, কেয়ার করতো আপনার, এইটা কোনদিন ভুলতেন না আপনি। সে আপনাকে ভুলতে দিতো না!"
"হুম! বুঝলাম!"
বাইরে কে যেন গান গাইছে। গলার সুর জোরালো। জোছনায় তার গান মিশে হলুদ আলোর সমান্তরালে দুলছে যেন।
বললাম, “আপনি লাস্ট কবে স্বামীর সাথে করছেন?”
“এইটা শুনে কী করবা তুমি?”
“বলেন না।“
“তোমার লাভ কী?”
“আছে। প্রতিদিন তো আর কোন সম্ভ্রান্ত ঘরের গৃহবধূ তার বেডরুমের গোপনীয় কথা আমাকে বলে না!”
“আমি ভাই সম্ভ্রান্ত ঘরের কেউ না। আমার বাপদাদা স্যার সলিমুল্লাহ ছিলো না, আমার বংশে কেউ জমিদার-টমিদারও না!”
বললাম, “ঐ হলো! আরেকজনের বৌ তো না? আরেকজনের স্ত্রী তার গোপনতম কথাটা আমাকে বলতেছে, আমার ভালো লাগবেনা? আমি তো আপনার সাথে কথা বলছি, এটা ভেবেই হর্নি হয়ে যাচ্ছি!”
“তাই নাকি? এতোদিনও হতে?”
বললাম, “অবশ্যই। পরকীয়ার আনন্দ পেতাম!”
উনি হতচকিয়ে গিয়ে জবাব দিলেন, “পরকীয়া? হোয়াট দ্যা ফাক! উই আর নট ইন আ এক্সট্রাম্যারিটাল রিলেশনশিপ, উই আর নট ইভেন ক্লোজ টু ইট!”
৩
জলধারা প্রবাহিত হওয়ার পর, আগামীদিন সকালে রিডিং এ বসতে হবে বলে, শুয়ে পড়লাম লাইট নিভিয়ে। জীবনানন্দ যে ঘুমের কথা কল্পনা করতেন- নির্ভার, নিশ্চিন্ত, সে ঘুম শুধু পাওয়া যায় এভাবে শারীরিকভাবে ক্লান্ত হলেই। বাপধন ৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর ট্রামলাইন দেখতে যাওয়ার আগে হাত মারলেই বোধহয় বেঁচে যেতেন!
ভেবেছিলাম তার সাথে, ফাতেমা রেজিনার সাথে, যোগাযোগের এখানেই ইতি। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে, চোখে নেমে আসা ঘুমের বারোটা বাজিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন করলেন তিনি।
এবারে হোয়াটসঅ্যাপে।
রিসিভ করতেই বললেন, “তোমরা ছেলেরা সব এক রকম কেন?”
বললাম, “কী রকম?”
“ঐ যে মেয়েদের সাথে কথায় কথায় সেক্স টেনে আনো!”
“অন্যান্যরাও আনে নাকি?”
“আনে তো। অনেকে তো ভাবে আমি ওদের সাথে মজা নেয়ার জন্য কথা বলি!”
বললাম, “ঠিকই তো ভাবে!"
একটু রূঢ় স্বরেই যোগ করলাম আরও, "আর শুনুন, সব ছেলেই একরকম কারণ প্রকৃতিই ছেলেদের এমনে বানিয়েছে। ছেলে ও মেয়ে, আমরা ন্যাচারালিই মেট খুঁজি। রিপ্রোডাকশান শুধু মানুষ না, গোটা প্রাণীজগতের মৌলিক একটা কাজ। যারা এইটা অস্বীকার করে, তারা হয় বোকাচোদা, নয় মূর্খ, অথবা মস্তিষ্কহীন মৌলবাদী। আপনি কোনটা, জানি না। তবে ওরা স্বাভাবিকভাবেই, ন্যাচারালিই আপনার দিকে সেক্সুয়ালি এপ্রোচ করছে!”
“কিন্তু আমি তো করি নাই, না?”
“তাতে কী? কাউকে না কাউকে তো এপ্রোচ করতেই হবে!”
উঠে আলো জ্বাললাম আবার। অন্ধকারে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে।
বললাম, খোঁচা দিয়ে, “আবার ফোন দিলেন যে? মত বদলে গেলো?”
তার লজ্জামাখা মুখটা কল্পনায় দেখতে পেলাম যেন। বললেন, “না। আসলে আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো তোমার সাথে। বাড়ি থেকে এসে ঘুমাইছিলাম সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এখন তো মনে হয় না রাত ১-২টার আগে ঘুম ধরবে। কী করবো ততোক্ষণ, বলো?”
বললাম, “অন্যান্য দিন তো রাতে আমি থাকি না। সেদিন কী করেন?”
বললেন, “অন্যান্যদিন তো আর অসময়ে দিনের বেলা আমি ঘুমাই না। আর কোনদিন এমন হলে তো হাসবেন্ড থাকেই!”
আমার জিজ্ঞাসা, “রাত জেগে ওনার সাথে কথা বলেন?”
“তা না। তবে টুকটাক কথা হয়। এটা ওটা করতে হয়! সময় চলে যায়!”
“এটা ওটা? সেক্স করেন না?”
ঘুরে ফিরে চলে গেলাম সে প্রসঙ্গেই।
তবে এবারে আর ক্ষেপে গেলেন না। খানিক ভেবে বললেন, “কেন করবো না? করি!”
“সপ্তাহে কতবার করেন?”
“গুণিনি। কোন সপ্তাহে একবার, কোন সপ্তাহে দুই তিন বার!”
জানি এটা নরলাম। ১৫ বছর ধরে একজনকেই লাগাচ্ছে, ভালো আর কতোদিন লাগবে? এখনও যে সপ্তাহে দুই তিনবার লাগাচ্ছে এরা, এটাও কম বিস্ময়ের না। আমার তো এক মেয়েকে ৩ মাসের বেশি সহ্য হয় না। মনে হয় তাকে এফোঁড় ওফোঁড় দেখতে পাচ্ছি। অবশ্য আমি বলছি শারীরিক ভালোবাসার কথা। শুধু শরীর, সে যদি পৃথিবীর সুন্দরীতমারও হয়, কোন ছেলেকে বেঁধে রাখতে পারবে না। শরীরে নতুন কিছু নেই। আর শারীরিক কার্যকলাপ? একঘেয়েমি!
তবু বললাম, তাকে একটু ধন্দে ফেলতেই, “মাত্র ২/৩ বার? আপনার মতো সুন্দরী এর চেয়ে বেশি ডিজার্ভ করে!”
একথা অবশ্য মিথ্যে না যে তিনি সুন্দরী। ছবিতে যেমন দেখেছি, তাতে তাকে বাংলা সিরিয়ালে, নাটকে অভিনয় করা মধ্যবয়সী নারীদের চেয়ে কোন অংশেই কম মনে হয়নি। পরিমিত দেহ। আবহমান বাঙালি নারীর মতোই মেদযুক্ত সুখী শরীরে ঢলঢলে ভাব। তৃপ্ত সন্তুষ্ট মুখে আবেশের ছায়া। কাঁধ পর্যন্ত চুল।
বললেন, “তা কয়বার করে? তোমার কাছে স্ট্যাটিসটিকস আছে নাকি?”
বললাম, “আছে তো। ফরাসিরা ৫০ পর্যন্ত মাসে অন্তত ছাব্বিশবার আর সপ্তাহে গড়ে সর্বনিম্ন ৬ বার সেক্স করে রিসেন্ট এটা সার্ভে মতে।“
“তাই নাকি? জানতাম না তো!”
জানার কথাও না। যে সার্ভে আমার মনগড়া, সে সার্ভের কথা তার কানে যাবে কী করে? আর কে যেন বলেছিলো, পৃথিবীতে তিন ধরণের মিথ্যা আছে। অর্ধসত্য, মিথ্যা আর পরিসংখ্যান। অর্থাৎ পরিসংখ্যান মিথ্যার সর্বোচ্চ পর্যায়।
“একটু খোঁজ নিলেই জানবেন!”
আরও যোগ করলাম, “আচ্ছা, আমি মাস্টারবেট করেন?”
এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য আমি আশা করিনি।
“কী যা তা বলছো? মাস্টারবেট কেন করবো? আমি কি তোমার মতো নাকি যে কেউ থাকে না পাশে ঘুমানোর সময়?”
বললাম, “সে আলাদা কথা। আচ্ছা ধরুন, আপনার মুড উঠলো আজ সেক্স করার, কিন্তু আপনার হাজবেন্ড রাজী না, তার মুড নেই। সেক্ষেত্রে?”
“না এমন হয় না। ওরই বরং মুড বেশি ওঠে। আমার ওঠে না!”
বললাম, “বুঝেছি। আপনার আর্জ কমে গেছে। আর কমবে নাই বা কেন, একজনকে আর কতোদিন ভালো লাগে?”
জবাব দিলেন না কোন।
বললাম, “আপনার বোরডেম আপনার সেক্স লাইফকেও এনগাল্ফ করছে। আপনার লাইফে একটু মশলা দরকার!”
উনি কৌতুহলী হয়ে বললেন, “কী সেই মশলা?”
বললাম, “দিনের বেলা বিরক্ত হয়ে যেটা করেন, সেটাই। অনেক লোকের সাথে কথা বলেন। সেক্সটাকেও কথা বলার মতো করে ভাবুন না!”
“কী কইতে চাইতেছো? যেভাবে কথা বলি সবার সাথে, সেভাবে শুয়ে পড়বো!”
“সেটা বলছি না। শুয়ে না পড়লেও একটু রোম্যান্স তো করতেই পারেন, না? একটু বৈচিত্র আসবে লাইফে!"
“শোন, আমি বিবাহিতা। আমার স্বামী আছে। অন্যের সাথে রোম্যান্স করার দরকার নাই আমার!"
বললাম, "আচ্ছা। সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু আপনার স্বামী যে আপনার মতো ভাবে, তার কী গ্যারান্টি?"
"কী বলতে চাচ্ছো?"
"আপনি না হয় ঘরে বন্দী থাকে। ক্যাপ্টিভ লেডি। আপনার হাজবেন্ড তো আর থাকে না। সে হয়তো বাইরে ঠিকই মজা নেয়!"
উনি বললেন, "এসব তোমার কল্পনা। ঐরকম করলে বুঝতাম!"
বললাম, "আপনার স্বামীভক্তি অক্ষয় হোক!"
কিছুক্ষণ কিছু না বলে আবার শুরু করলাম, “তারমানে মাস্টারবেট করেন না?”
“না। করিনা!”
কাটকাট জবাব। বাইরে জোছনা ফুটফুটে। জানলা দিয়ে চাঁদের আলো বিছানায় আসবে শেষ রাতে। জানলার সামনের লম্বা রেইনট্রির পাতায় যে জোছনা লুটোপুটি খাচ্ছে, তা দেখবো বলে ঘরে আলো নিভিয়ে দিলাম আবার।
বললাম, “মিথ্যা কথা। হস্তমৈথুন জীবনে করে নাই এমন কোন মানুষই নাই পৃথিবীতে!”
“জানোই তো। তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো যে?”
হেসে বললাম, “আপনার মুখ থেকে শুনতে চাইলাম। করেন তারমানে?”
“করতাম। বিয়ের আগে। এখন করি না। দরকারও নাই!”
তার কথার সুর ধরে জোর দিয়ে বললাম, “দরকার আছে। আপনি মানসিকভাবে একা। এটা তো আর লুকাতে পারবেন না আমার কাছে। তাই না?”!
উনি সামান্য রুষ্ঠ হয়ে বললেন, “লুকাতে তো চাই নাই, নির্জন। প্রথম দিনই বলেছি তোমাকে!”
বললাম, “তারমানে শারীরিকভাবেও আপনি একা। শরীর আর মন সমান্তরালে চলে, বুঝলেন? আপনি লাইফে ডাইভার্সিটি খুঁজছেন। জানেন যে সেটা বাস্তবে সম্ভব না, তাই অনলাইনে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন!”
“তুমি সাইকোলোজিস্টদের মতো কথা বলছো!”
বললাম, “চেষ্টা করছি আপনার সাইকোলজি বোঝার। আপনি আপনার বাস্তবতা জাস্ট অস্বীকার করছেন। আপনি আমাকে বোঝাতে চাইছেন, এবং হয়তো নিজেকেও বোঝাতে চাইছেন যে আমি ফিজিকালি হ্যাপি। বাট ইউ আর নট। যদি হতেন তাহলে আমাকে আবার কল দিতেন না!”
উনি এবারে একটু ক্ষেপে গিয়ে বললেন, “তুমি চাইলে আবার কেটে দিতে পারি। আর কল দিব না!”
আমি দ্রুত বলে উঠলাম, “আরে না না। সেকাজ করবেন না। আমি আসলে ব্যাপারটাকে ইন্টারপ্রেট করছি!”
“আচ্ছা করো। শুনি!”
“আপনি জানতেন যে আমি আজেবাজে কথা বলবো৷ তাও কল দিয়েছেন। কারণ আমার কথা আপনাকে ইন্ট্রিগ করছে। আপনি কৌতুহলী হইছেন। আপনার যদি ফিজিকাল নিড না থাকতো, you would have severed contact...”
“তুমি এখন জোর করে আমাকে সেক্সুয়ালি ফ্রাস্ট্রেটেড বানাবে? তুমি বলবে, আমি শারীরিকভাবে অসুখী আর আমি সেটা বিশ্বাস করবো!”
কাজটা কঠিন হবে, জানতাম। তবে এতো কঠিন হবে, ভাবিনি। অভিজ্ঞতা বলে, বিবাহিতরা নিজেরা না চাইলে কখনোই তাদের থেকে কিছু পাওয়া সম্ভব না। চিট কেউ হুট করে, দুম করে, আকৎস্মিকভাবে করে না। পরকীয়ার দিকে যারা পা বাড়ায়, তারা একটা ক্যালকুলেটেড রিস্ক নেয়। আর তখনই কাজটা করে যখন ধরা পড়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি আর প্রলোভনটাও অপ্রতিরোধ্য। যারা তাই এই হিসেব কষে চিটিং এর দিকে পা দেয়, তাদের সাথে শুতে সময় লাগে না। যারা হিসেবটা করতেই শুরু করেনি, যারা এখনও জানেই না যে তারা পরকীয়া করতে চায়, তাদের বেলা একটু অতিরিক্ত পরিশ্রম দরকার বৈকি!
তাছাড়া আমি কি সেরকম কিছু করেছি? আমার প্রলোভন কি সবকিছু ভুলিয়ে দেয়ার মতো? হাসলাম নিজের কথা ভেবেই। যাকে সাধারণ মেয়েরাই গোণে না, তাকে সরকারী ইঞ্জিনিয়ারের বৌ গোণায় ধরবে কেন?
বললাম, আগের প্রসঙ্গই টেনে এনে, “আপনি আমার কথায় তাহলে একটুও আগ্রহ পাননি?”
উত্তর এলো সামান্য দেড়িতে। বললেন, “কৌতুহল ঠিক না। তবে অন্যরকম মনে হইছে। মনে হইলো, কথাই তো। কথা বললে তো ক্ষতি নাই!”
“বুঝলাম। আপনার সাথে কতোদিন ধরে কথা বলি, বলুন! এই এতোদিন ধরে কথা বলি কেন? কারণ আপনার প্রতি আমার সেক্সুয়াল আকর্ষণ আছে। এইটা যে কেন আপনি বুঝবেন না!”
“আজ বুঝলাম তো!”
“বুঝেই বা লাভ কী? সাহায্য করছেন না তো!”
উনি হেসে বললেন, “কী করতে বলো আমাকে তা? তোমার কাছে চলে যাবো? আমাকে কী খাওয়াবা তুমি?”
আমি হেসে হা হা করে এবারে। বললাম, “আপনি আসলেই গান্ডু। আপনাকে বিয়ে করবো কেন বলেন? বিয়ে করলে তো আপনার বড় বাচ্চাটা আমাকে আব্বা না ডেকে ভাইয়া বলে ডাকবে!”
হাসলেন উনিও। বললেন, “সেটা তো স্বপ্ন!”
“না। স্বপ্ন না। স্বপ্ন আমি অনেক বড় কিছুর দেখি। বিয়াটিয়া নিয়ে স্বপ্ন দেখে স্বপ্নহীনেরা। আপনাকে বিয়া করার বা আপনার সাথে প্রেম করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নাই, ইভেন দো ইউ আর এস্টোনিশিংলি বিউটিফুল। আমি জাস্ট আপনার সাথে সেক্সুয়ালি ইন্টিমেট হইতে চাই!”
“আচ্ছা বুঝলাম। তোমাকে আর সাফাই গাইতে হবে না! যাক গে, ধন্যবাদ তোমার কম্পলিমেন্টের জন্য! মাঝেমাঝে আমি যে সুন্দরী, এইটা কেউ মনে করায় দিলে ভালোই লাগে! হাহা।”
আমি হেসে বললাম, "বলছিলাম না যে আপনি বিবাহুত জীবিনে অখুশী?"
"বলছো। কিন্তু ভুল বলছো!"
"আপনিই আমাকে সঠিক প্রমাণ করলেন!"
"কীভাবে?"
"এই যে বললেন, আপনার মনে থাকে না আপনি সুন্দরী। কেউ মনে করায় দিলে আপনার ভালোই লাগে। আপনার স্বামী যদি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসতো, কেয়ার করতো আপনার, এইটা কোনদিন ভুলতেন না আপনি। সে আপনাকে ভুলতে দিতো না!"
"হুম! বুঝলাম!"
বাইরে কে যেন গান গাইছে। গলার সুর জোরালো। জোছনায় তার গান মিশে হলুদ আলোর সমান্তরালে দুলছে যেন।
বললাম, “আপনি লাস্ট কবে স্বামীর সাথে করছেন?”
“এইটা শুনে কী করবা তুমি?”
“বলেন না।“
“তোমার লাভ কী?”
“আছে। প্রতিদিন তো আর কোন সম্ভ্রান্ত ঘরের গৃহবধূ তার বেডরুমের গোপনীয় কথা আমাকে বলে না!”
“আমি ভাই সম্ভ্রান্ত ঘরের কেউ না। আমার বাপদাদা স্যার সলিমুল্লাহ ছিলো না, আমার বংশে কেউ জমিদার-টমিদারও না!”
বললাম, “ঐ হলো! আরেকজনের বৌ তো না? আরেকজনের স্ত্রী তার গোপনতম কথাটা আমাকে বলতেছে, আমার ভালো লাগবেনা? আমি তো আপনার সাথে কথা বলছি, এটা ভেবেই হর্নি হয়ে যাচ্ছি!”
“তাই নাকি? এতোদিনও হতে?”
বললাম, “অবশ্যই। পরকীয়ার আনন্দ পেতাম!”
উনি হতচকিয়ে গিয়ে জবাব দিলেন, “পরকীয়া? হোয়াট দ্যা ফাক! উই আর নট ইন আ এক্সট্রাম্যারিটাল রিলেশনশিপ, উই আর নট ইভেন ক্লোজ টু ইট!”