Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
[Image: FB-IMG-1698336496981-1.jpg]

|| সেই ঘড়িটা ||

লেখা :- সুষমা ভট্টাচার্য

বসের সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিদ্ধার্থ। তার বস মিস্টার দত্ত তার ওপর চিৎকার করে বলছেন-

" তোমার কোন আক্কেল নেই? তুমি তো জানতে আজ একটা মিটিং আছে তাহলে এতো দেরী করে এলে কেন? তোমার কাছেই তো মূল প্রেজেন্টেশন আছে। তুমিই দেরী করে ঢুকলে? কি ভেবেছো কি তোমার নাম প্রমোশনের জন্য রেকমেন্ড করেছি বলে তোমার যা ইচ্ছা হবে তুমি তাই করবে?এইরকম করলে কিন্তু তোমার প্রমোশন আটকে যাবে সিদ্ধার্থ।  "

একটানা কথা বলে একটু দম নিলেন মিস্টার দত্ত। এই সুযোগে রাহুল তার নিজের কথাটা বলল। তবে তার গলার স্বর ক্ষীণ।

" না স্যার মানে আজ সাড়ে আটটার বাসটা পাইনি তাই আসতে......... " সিদ্ধার্থর কথা শেষ হল না তার আগেই তার বস আবার বলে উঠলেন।

" এই শুরু হল। অজুহাত, বাস চলছিল না, মাথাব্যাথা বাড়িতে কেউ অসুস্থ এই অজুহাতগুলো তোমাদের তৈরী থাকে। আচ্ছা তোমরা এই বস্তাপচা অজুহাত তৈরী করতে যা মাথা ঘামাও তার অর্ধেক মাথা যদি কাজে ঘামাতে তাহলে কতো উন্নতি করতে ভেবে দেখেছো কখনও? "

সিদ্ধার্থ এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল শুধু তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিস্টার দত্ত বললেন -

" আবার হাঁ করে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও নিজের কাজে মন দাও। এমনিতেই দেরী করে ঢুকেছো অফিসে।

-----------------------------------------

বসের ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে সিদ্ধার্থ মনে মনে তার বাড়ির বারান্দায় টাঙানো ওই পুরোন ঘড়িটার। সিদ্ধার্থ কোনদিনই নিজে থেকে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। আগে থেকে অ্যালার্ম দেওয়া থাকলেও না। তাই রোজ তার মা তাকে সকালবেলা ঘুম থেকে ডেকে তোলে। আর এই কাজটা তিনি করেন বারান্দার ওই ঘড়িটা দেখে। যেটা কোন অদ্ভুত কারণবশত  ঠিক আটটা বাজতে দশে বন্ধ হয়ে যায়।

নানান কাজকর্মের মধ্যে থাকার জন্য সিদ্ধার্থর মা ব্যাপারটা খেয়াল করেননি। একটা হিসাব করে রান্নার মাঝখানে তিনি যখন  বারান্দায় এসে ঘড়ির দিকে তাকান, তখন সময়টা দেখে তার সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘরে গিয়ে নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলেন তখন প্রায় আটটা বাজে।

আর একটুও সময় নষ্ট না করে তিনি সিদ্ধার্থর ঘরে গিয়ে তাকে প্রায় ঘুম থেকে টেনে তুললেন। আর বললেন -

" ওরে সর্বনাশ হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি ওঠ এরপর আর বাস পাবি না। " সিদ্ধার্থ মায়ের কথা শুনে আধ বোজা চোখে মোবাইলটা হাতে নিতেই লাফিয়ে উঠে বসল তারপর সোজা ছুটল বাথরুমের দিকে।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে কোনরকমে জামাকাপড় পড়ে অফিসের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সিদ্ধার্থ যখন নিজের ফ্ল্যাটের দরজার দিকে ছুট লাগল তখন তার মা বলল -

" সকালবেলা মুখে কিছু না দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিস সিধু একটু কিছু খেয়ে যা। "

" আমার সময় নেই মা। আজ খেতে বসলে আর সারা মাস মুখে অন্ন জুটবে না। " সিদ্ধার্থর কথার উত্তরে তার মা আরও কিছু বলেছিল হয়তো কিন্তু সেকথা সিদ্ধার্থর কানে যায়নি।

বাইরে বেরিয়ে আরও এক হয়রানি। প্রথম বাসটা মিস হলই পরের বাসেরও দেখা নেই। সিদ্ধার্থ কোন উপায় না দেখে ক্যাব বুক করল।  অফিস টাইম তাই ক্যাব আসতে দেরী হল। ক্যাব এলেও সে অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে আনল। তাকে জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল অন্য রাস্তায় কিসব গন্ডগোল তাই এই রাস্তা ধরেছে। সব মিলিয়ে অফিস আসতে দেরী হয়ে গেল সিদ্ধার্থর।

আজ সারাদিন সিদ্ধার্থর মন ভালো রইল না। সকাল সকাল বসের বকা খেলে কারই বা মন ভালো থাকে। সারাদিন অফিসে কাজ করে সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে ফেরার জন্য যখন সিদ্ধার্থ বাস ধরল তখন মনে মনে সে ঠিক করল আজ সে বাড়িতে বলবেই -

" অনেক হয়েছে আর ওই ঘড়ির মায়া করে লাভ নেই। যেই মানুষটা নেই তার ঘড়ি আঁকড়ে ধরে লাভ কি? আজ ওই ঘড়ির জন্য তার চাকরি যেতে বসেছিল ওই ঘড়িকে সে আজই বাড়ি থেকে বিদায় করবে।

এইসব নানান কথা ভাবছিল সিদ্ধার্থ। উল্টোদিকের বাস তাই এইসময় ফাঁকাই থাকে। নিজের সিটে বসে জালনার থেকে বাইরে তাকিয়ে সিদ্ধার্থ দেখল বাস অন্য রুট দিয়ে যাচ্ছে। কনডাক্টারকে ডেকে জিজ্ঞাসা করাতে সে যা বলল সেটা শুনে সিদ্ধার্থর শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল।

ব্যাপারটা হল এইরকম -" যেই রুট দিয়ে এই বাসটা যায় সেই রুটে আজ সকাল পৌনে নটা নাগাদ দুটো বাসের মধ্যে অফিস টাইমের প্যাসেঞ্জার তোলার জন্য রেষারেষি হচ্ছিল। এই রেষারেষির ফলে একটা বাস সিগন্যাল ভেঙে এগিয়ে যায় একটু আগে আর সোজা গিয়ে পড়ে একটা লরির মুখে। "

" সেকি কান্ড। কি বলব আপনাকে। পচুর লোক এনজিওর আর দু চারজন তো মারাও গেছে। রুটে পুলিশ, মিডিয়া নিয়ে হেব্বি ক্যাচাল তাই আমরা রুট ঘুরিয়ে দিয়েছি। " সিদ্ধার্থকে কথাটা বলে এগিয়ে গেল কনডাক্টার।

সিদ্ধার্থ সারা রাস্তা আর একটিও কথা বলল না। সে শুধু ভাবতে থাকল ওই বাসে থাকলে আজ তার কি অবস্থা হতো।

------------------------------------------

নানান চিন্তা নিয়ে সিদ্ধার্থ বাড়িতে ঢুকল তার সমস্ত হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে ঢুকে অফিসের জামা খুলতে খুলতে সিদ্ধার্থ তার মাকে এক গ্লাস জল দিতে বলল -

" মা জলের গ্লাস টেবিলে রেখে বললেন। এই কিছুক্ষন আগে আমি তোর জ্যাঠার বাড়ি থেকে ফিরলাম। ওরা তোর খাবার সঙ্গে দিয়েছে আজ ওটাই ডিনার রাত্রে আর আমি রান্না করিনি। "

মায়ের কথা শুনে সিদ্ধার্থ অবাক হয়ে বলল - " জ্যাঠার বাড়ি থেকে খাবার পাঠাল কেন? আজ কোন অনুষ্ঠান ছিল নাকি?'

সিদ্ধার্থর প্রশ্ন শুনে তার মা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন -

" বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় আমাকে যখন কোন উত্তর দিসনি। তখনই আমার বোঝা উচিত ছিল আমার কোন কথা তোর কানে যায়নি।  আজ তোর দাদুর বাৎসরিক কাজ ছিল তোর জ্যাঠার বাড়িতে । তোকে অফিসেও ফোন করেছিলাম যদি ম্যানেজ করে তাড়াতাড়ি আসতে পারিস সেইকথা বলার জন্য। কিন্তু তুই ফোন তুললি না। "

মায়ের কথা শুনে নিজে থেকেই সিদ্ধার্থর চোখ বারান্দায় টাঙানো পুরানো আমলের দম দেওয়া ঘড়িটার দিকে চলে গেল।  ঘড়িটা একদম ঠিক সময় দেখাচ্ছে।

তাকে ওইদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিদ্ধার্থর মা বলল-

" ও তোকে তো বলা হয়নি ভারী অদ্ভুত ব্যাপার জানিস। তুই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলি এদিকে আমারও বেরোনোর তাড়া ছিল তাই আমিও রেডি হতে চলে গেলাম। বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি তখন ঘড়ির দিকে নিজে থেকেই চোখটা চলে গেল। কি দেখি জানিস! ঘড়িটা আবার নিজে থেকে চলতে শুরু করেছে। কি অদ্ভুত কান্ড ভেবে দেখ। আমি কাউকে বললে সে ভাববে আমার বাড়িতে বোধহয় ভুতুড়ে কান্ড হয়।

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 4 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক গল্প সংকলন (চলছে) - by Sanjay Sen - 02-11-2023, 09:19 AM



Users browsing this thread: