Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
[Image: FB-IMG-1697436881995.jpg]

|| গল্প, তবু গল্প নয় ||

লেখা :- অলোকানন্দা চ্যাটার্জী


সময়টা ১৮৯৭।প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল চারপাশ।মাত্র কয়েক মূহুর্ত্তের কম্পন,তবে তীব্রতা যথেষ্ট।প্রবল শব্দে ভেঙে পড়ল মসজিদের অনেকখানি অংশ।ক্ষতিগ্ৰস্ত প্রায় পুরো নির্মানটাই।
ধাতস্থ হতে দেখা গেল,আশ্চর্যজনক ভাবে একেবারে অক্ষত রয়েছে কেবল একটি দেওয়াল আর সিঁড়ি সহ সেই কবরটি।এতটুকু আঁচড়ও পড়েনি।


যুবকটির চোখদুটো নীল।সুঠাম শরীরের প্রতিটা খাঁজ।তীব্র পুরুষালী গন্ধ এসে ঝাপটা মারছে ওই পুরুষের শরীর থেকে।একদৃষ্টে ওর দিকে চেয়ে আছেন বেগম।কিন্তু যুবকটি আড়ষ্ঠ।দৃষ্টি মাটির দিকে।কি এক মায়া জড়ানো যেন নীল চোখদুটোয়।মায়া হল বেগমের,খুব মায়া।
নিজের পালঙ্ক ছেড়ে উঠে এলেন উনি।যুবকের ডানহাতের একটা আঙুল স্পর্শ করলেন।একটু যেন কেঁপে উঠল যুবকটি।আঙুল ধরে টেনে আনলেন সামনের আরাম কেদারায়।
- বোসো এখানে।ক্ষুধার্ত তুমি?কিছু খাবে?

আচমকা বসিয়ে দেওয়ার ফলেই হয়তো তখনও থতমত ভাব কাটেনি যুবকের।কোনওরকমে ঘাড় নেড়ে না বোঝাল সে।

- লজ্জা করছে?লজ্জা কিসের?

আর সম্মতির অপেক্ষা করলেন না বেগম।পাশে রাখা রেকাবি থেকে কিছু ফল দিলেন যুবককে।ভয়েই হোক,খিদেতেই হোক,সেও খেতে শুরু করল।ওর খাওয়ার দিকে ঠায় তাকিয়ে রইলেন বেগম।
যুবকটি আলো আঁধারিতে মিশে যাচ্ছে।ক্রমশই আবছা হয়ে যাচ্ছে।নিজের কক্ষের জানলা দিয়ে দেখছেন বেগম এবং যতক্ষণ দেখতে পেলেন তাকিয়ে রইলেন ওর চলে যাওয়ার দিকে।আগামীকাল ঠিক এই সময়ের চিন্তাটা মাথায় খেলে গেল তাঁর।মৃদু হেসে চলে গেলেন ভেতরে।


বহুদিন হল নবাবের কোনও সংবাদ নেই।উতলা হলেও কিছু করারও তো নেই।অনেক চেষ্টা করেও কোনও খবর জানতে পারেননি বেগম।একটু অন্যমনস্ক ছিলেন উনি।
- বেগম!শুনলেন?
নূরীর ডাকে সম্বিত ফিরল।
- কি হয়েছে?
- গজরা বেঁধে দিই?
- হুম।
- আর সুর্মা?ঘন করে আঁকি?
- হুম।প্রতিবার এক কথা বলতে হবে কেন?
- গুস্তাখি মাপ করবেন বেগম।

নূরী যত্ন করে গজরা বাঁধতে লাগল বেগমের লম্বা বেণীতে।পরণের সবুজ রঙের পোশাকে সোনালী জরির কাজ।তাতে সুগন্ধি ঢেলে তারপর তা দিল ঘাড়ে,গলায়,স্তন বিভাজিকায়।ঘন কালো সুর্মা এঁকে দিল এমনভাবে,মনে হল এখুনি কথা বলে উঠবে চোখদুটো।
- দেখুন।পছন্দ হয়?

আরশিতে নিজেকে দেখে মুগ্ধ বেগম।সেই গ্ৰীক দেবতার মতো যুবককে কল্পনা করে একটু যেন লজ্জাও পেলেন।

- পছন্দ হবে?

পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লেন নূরীকে।নূরী,বেগমের খাস বাঁদী।তাকে অমন অনেককিছু বলা যায় বৈকি!

- জন্নত থেকে এসেছেন ভেবে না বসে!

হালকা হেসে উঠলেন দুজনেই।


টিমটিমে একটা বাতি জ্বলছে কক্ষে।ওইটুকু বাতি আলোকিত করতে পারেনি কক্ষ।যথেষ্ট ছায়া ছায়া অন্ধকার চারপাশে।বেগমের পছন্দ না এরকমটা।উনি ভালোবাসেন আলো।উজ্জ্বল আলোয় ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পুরো কক্ষটাই।প্রাণভরে ওই মায়াভরা নীলচোখ না দেখলে শান্তি হয়?কিন্তু ওর কথা ভেবেই সব বাতি নিভিয়েছেন।

- কতদিন সংবাদ পাওনি?

যুবকটি এখন অনেক সহজ।পালঙ্কে বসেছেন দুজন,মুখোমুখি।

- সে বহুদিন।
- উনি আসেননা?
- সেই ওড়িশায় থাকেন তো কর্মসূত্রে,তাই অতদূর থেকে খুব বেশি আসতে পারেননা।
- ও।

মাথা নামিয়ে নিল যুবক।বোধহয় বেগমের দুঃখের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করল।বেগম ওকে দেখছেন আবার,একভাবে।কি মায়া মাখানো চোখদুটোয়!

- কিছু পান করবে তুমি?
- নাহ্।থাক।
- এখনও এত লজ্জা কিসের?
- আচ্ছা দাও তবে।

বেগম রুপোর গ্লাসে সোনালী পানীয় ঢেলে আনলেন।এগিয়ে দিলেন যুবকের দিকে।

পুরো প্রাসাদ গভীর নিদ্রায়।কক্ষের বাইরেই নূরী আছে,জানেন বেগম।কিন্তু ভুলে গেছেন হয়তো।যুবকটির ঠোঁট যখন স্পর্শ করছে বেগমের ঠোঁট,মুখবন্ধ থাকা স্বত্তেও মৃদু শব্দ আসছে গলা ঠেলে।যুবকের আঙুল যখন খেলছে বেগমের শরীর জুড়ে,অস্ফুটে আসছে কিছু গোঙানির মতো শব্দ।ইচ্ছেমতো খেলছে যুবক।বেগম দিচ্ছেন খেলতে।উনি চাইছেন ও খেলুক,ওর মতো করে শুষে নিক সমস্তটা।আহা!বড্ড মায়া।সব দাবদাহ জুড়িয়ে নিক ও এই একরাতে।দুটো শরীরে যখন শঙ্খ লেগেছে শেষমেশ,শিৎকারের শব্দ যখন কক্ষের এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরছে,বাইরে তখন রাত শেষের দিকে প্রায়।
ক্লান্ত,ঘর্মাক্ত যুবকটির কপালে ঠোঁট ছোঁওয়ালেন বেগম।পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।বড্ড মায়া!


- ভালো করে সাফাই কর নূরী।মাছি হচ্ছে ভীষণ।
- করছি বেগম।চিন্তা করবেন না।
- ওই পোশাকটাও ফেলে দিস।

নূরী তাকালো ওই সবুজ সোনালী পোশাকের দিকে।নাহ্!ফেলে দেওয়া ছাড়া গতি নেই।

- জি বেগম।
- জল ঢাল,আরও জল ঢাল।প্রয়োজনে ওই আতরের শিশি উপুর করে দে।

মেঝে ঘষতে ব্যস্ত তখন নূরী।প্রাণপণে ন্যাতা ঘষছে মেঝেয়।

- আগামীকাল আনব ওকে বেগম?
- কেন?কাল কেন?আজই আনবি।
- মানে আজ...
- আজ মানে আজ।আর হ্যাঁ,এরকমটাই দেখেশুনে আনবি।
- ভিন্ন জায়গায় খোঁজ করতে হবে এবার বেগম।খবরটা ছড়িয়েছে কিনা!চট করে কাউকে সন্ধের পর দেখা যায়না।
- প্রয়োজনে তাই করবি।
- জি বেগম।
- উফ্!এত মাছি কেন বলতো?কেমন ভনভন করে উড়ছে দেখ আমার চারপাশে।
- ঘুরবেনা?রক্তের গন্ধ পেয়েছে যে!একটু অপেক্ষা করুন,আপনাকে পরিষ্কার করিয়ে দিচ্ছি।

নাহ্ এত মাছির মধ্যে শোওয়া যায়না।নূরী ততক্ষণ সাফাই করুক।পালঙ্ক থেকে উঠলেন বেগম।গুনগুন করতে করতে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলেন জানলার সামনে।বাইরে আলো ফুটেছে সদ্য।নরম আলো মোড়ানো চারপাশে।ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে একটা।কিন্তু এখানেও ভনভন করছে মাছিগুলো‌।উফ্!ওরা কি শান্তি দেবেনা?এরকম করছে কেন ওরা?ঘুরে গিয়ে চোখ রাখলেন বেগম,উল্টোদিকের প্রকান্ড আরশিতে....
ঠোঁট জোড়া,থুতনি,গলার কিছুটা অংশ,বুকের কাছের পুরো কাপড়টাই লাল।কোথাও শুকিয়ে যাওয়া রক্তে কালচে লাল,কোথাও থেকে তখনও টপটপিয়ে পড়ছে লাল তরল তখনও। ভিজে আঁশটে গন্ধ আসছে টের পেলেন একটা।আরেকবার তাড়া দিলেন নূরীকে।

- তাড়াতাড়ি কর নূরী।স্নান সেরে ঘুমোবো।এখন ঘুম দরকার।

এখন

- মুর্শিদাবাদ ছিল তখন বাংলা,বিহার,উড়িষ্যার রাজধানী।এ সমস্ত ইমারত তৈরি সে আমলেই।এই যে কাটরা মসজিদ দেখছেন...

গাইড লোকটাকে থামিয়ে দিল মেয়েদের দলটা।ওদের এসব ইতিহাসে একেবারেই উৎসাহ নেই।ওদের চোখ ওই কবরের দিকেই।

- বলুন না দাদা,ওই কবরের ঘটনাটা ঠিক কি?

গাইড ভদ্রলোক জানেন,এতবছরে উনি বুঝে গেছেন ট্যুরিস্টদের এই মসজিদ সম্পর্কে কম,ওই কবর নিয়ে আগ্ৰহ বেশি।উনি শুরু করলেন,

- এটি নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ র আদরের কন্যার
কবর।যিনি ছিলেন নবাব সুজাউদ্দিনের বেগম।নাম ছিল আজিম উন্নিসা বেগুম।কবরটি এনারই।প্রচলিত আছে,নবাব কর্মসূত্রে উড়িষ্যায় থাকতেন।আসতেন না বড় একটা।বেগম নিজের যৌনসুখ চরিতার্থ করার জন্য প্রতিদিন একজন করে যুবককে আনাতেন।ভোগ করা হয়ে গেলে ওই যুবককে মেরে তার কলিজা খেতেন।একসময় সবটাই জেনে ফেলেন মুর্শিদকুলী খাঁ।মেয়ের এহেন জঘন্য অপরাধের দন্ড ঘোষণা করেন এবং সেই অনুযায়ী বেগমকে জ‍্যান্ত কবর দেওয়া হয়।

- যৌন ইচ্ছা চরিতার্থ বোঝা গেল।কিন্তু কলিজা খেত কেন?

- সম্ভবত যৌবন রক্ষার্থে। যৌবন যাতে অটুট থাকে সেজন্যই... তেমনটাই কথিত আছে।

ইস কি জঘন্য! বাবা গো! মহিলা না রাক্ষসী...
মেয়েদের দল নিজেরাই আলোচনায় মত্ত।

চুপ করলেন গাইড ভদ্রলোক। দেখলেন অবাক চোখে তাকিয়ে মেয়েগুলো কবরটার দিকে,মুখময় ঘেন্না।
মনে মনে ভাবলেন, আচ্ছা, এই কলঙ্কের ইতিহাস আরও কতজনের মধ্যে ছড়াতে হবে? ভেবে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাসও বোধহয় পড়ল তাঁর।

|| সমাপ্ত ||

তথ্য ও চিত্র - লোককথা, মুর্শিদাবাদ ট্যুরিস্ট গাইডকুল

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 4 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক গল্প সংকলন (চলছে) - by Sanjay Sen - 31-10-2023, 11:25 AM



Users browsing this thread: