Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
[Image: images.jpg]

|| রক্তচোষা ||

লেখা :- শ্রীতমা সেনগুপ্ত

     অস্ট্রিয়া আর জার্মানির সীমানার কাছাকাছি একটি শহর সলসবার্গ,তার কিছু দূরে একটি গ্রামে এই কাহিনী শুরু। গ্রামটি অস্ট্রিয়ার দিকে, পশ্চিমদিকে আল্পস পর্বত পূর্বদিকে ঢালু হয়ে গিয়ে এক উপত্যকা সৃষ্টি করেছে যার অন্যধারে একটি ছোট্ট নদী বয়ে যাচ্ছে, ঘন সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠ, বসতি খুব বেশী না।একটু দূরে উত্তর দিকে এক কাস্ল যার মালিক ব্যারন হেইনৎজ যিনি গ্রামের কোন বিষয়েই থাকেন না, সাদাটে ফর্সা, লম্বা, চোখা চোখা নাকমুখ, এবং অত্যন্ত উন্নাসিক। একটি ক্রাইসলার গাড়িতে  মাঝেমাঝে ভিয়েনা যান।  গ্রামের বুড়োবুড়িরা জানেন, এই ব্যারন, যুবক বয়স কালে একবার রোমানিয়া গেছিলেন। সেখান থেকে অসম্ভব রূপসী   একটি মেয়েকে নিয়ে আসেন,অজ্ঞাত কূলশীল  মেয়েটি বুখারেস্টের রাস্তাঘাটে নাচ দেখাত , জিপসি টাইপ, ধরে নিয়ে আসেন বললেই হয়, ভিয়েনায়  নিয়ে এসে সমাজের চাপে বিয়ে করেন।কিন্তু ওই মেয়েকে  অস্ট্রিয়া র অভিজাত সমাজ কিছুতে মানতে রাজি হয়না-তাই সপরিবারে  এই পৈতৃক বাড়ী তে এসে ওঠেন, সঙ্গে ছিল মা আর ভাই ফ্রানৎজ, সে বোধহয় এখন ইতালি তে থাকে।

 অলস নিস্তরঙ্গ গ্রামে হঠাৎ একদিন দুপুরে হাজির হল ব্যারনের মেয়ে, ক্লারা, সঙ্গে একটি ঘোড়া ও দুটি কুকুর নিয়ে,সে ভিয়েনায় থেকে বড় হয়েছে। আশ্চর্যকথা হল এই যে ব্যারনের যে মেয়ে জন্মেছিল সে কথা কারোর মনেও নেই। বাপের মত সাদাটে, রোগা, উন্নাসিক, কিন্ত মুখশ্রী  অন্যপ্রকার। যেমন সুন্দরী তেমনি তার শহুরে সাজপোশাক তেমনি তার হাবভাব।তাকে দুএকদিন এদিকওদিক ঘুরতে দেখে তরুণ রা অতিমাত্রায় উৎসুক এবং তরুণী রা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ল।

ছোট শান্ত গ্রামে একমাত্র বিনোদন পালে-পার্বনে নাচের আসর।এহেন এক নাচের আসরের আগে পানশালা য় ছেলেমেয়ে দের জমায়েত সবে শুরু হয়েছে, এমন সময় ক্লারা এসে হাজির, মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করল,এই গন্ডগ্রামে ভাল নাচের পার্টনার পাওয়া যায় না,সে ভিয়েনার সব শিক্ষা ভুলে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করল,তারপর উঠে ছেলেদের টেবিলে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করল-

"কে ভালো নাচে এই গ্রামে?"

শহুরে মেয়ের এহেন সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ছেলেরা বোকা বনে গেল,কলেজে যেটুকু নাচ শিখেছে তা সাধারণ ওয়াল্টজ, ভিয়েনায় বড় হওয়া মেয়ে কত উচ্চ স্তরের ওয়াল্টজ শিখেছে কে জানে!! উত্তরে সবাই কার্ল কে দেখিয়ে দিল।
ক্লারা ঝটপট প্রস্তাব করল কার্লকে, তাদের কাসল এ গিয়ে তার সঙ্গে প্র‍্যাক্টিস করার জন্য।

--"তা হলে কাল বিকেলবেলা তিনটে নাগাদ চলে এস।"  উত্তরের অপেক্ষা না করেই সোজা পিছন ফিরে নিজের ঘোড়ায় উঠে চলে গেল।

এতক্ষণ সবাই রুদ্ধশ্বাস হয়ে দেখছিল এখন ফেটে পড়ল উত্তেজনায়।

পরদিন বিকেল তিনটের আগেই কার্ল পৌঁছে গেল ব্যারনের কাসলে।  কুয়াশা জমছে মনে হয়,বেশ ঠাণ্ডা ঘরগুলো, একজন বাটলার তাকে একটা বড় ঘরে বসতে দিল,এটা বলরুম নয়,  আগে  খাওয়ার ঘর ছিল হয়ত, ঘরের একদিকে টেবিল চেয়ার আছে,বাকী টা ফাঁকা, খোলা দরজা দিয়ে পিছনের বাগান-টাগান দেখা যাচ্ছে,।ভৃত্য টি বলে গেল

"--ফ্রলাইন ক্লারা এখন ঘোড়া আর কুকুর দের দেখাশুনা করতে গেছেন, বসতে হবে।"

  দু'চার মিনিট বসার পর এক দারুণ সুন্দরী মেয়ে ঘরে ঢুকল,কার্ল উঠে দাঁড়াতেই তার কাছে এসে খুব ফিসফিস করে যতক্ষণ না ক্লারা আসে তার সঙ্গে নাচার ইচ্ছে প্রকাশ করল।মেয়েটি দেখতে অনেকটা ক্লারার মতই,কিন্তু নরম সরম,সাজপোশাকও অতটা উগ্র নয়।

কার্ল হড়বড় করে ভুল বাও করল,তারপর নাচতে শুরু করল,কোথাও ধীর আওয়াজে সুর বাজছে।তিরিশ বিট এর স্লো ওয়াল্টজ, কার্ল ভালো চালাচ্ছিল, মেয়েটির পায়ের কাজ নিখুঁত, নাচতে নাচতে সে কার্লের খুব কাছে এসে পড়েছে, কাঁধের উপর মাথা রেখে গলায় মুখ রেখে ফিসফিসিয়ে কি যেন বলছে।কার্লের শরীর যেন অবশ হয়ে এল, কিন্তু নাচের ব্যাঘাত হয়ে যাওয়ার ভয়ে সে চালিয়ে যেতে থাকল।

হঠাৎ ঘরটির সামনের দিকে অনেকগুলো কুকুরের ডাক শোনা গেল, আর মেয়েটি তার গলা ছেড়ে দিয়ে পিছনদিকের বাগানের দরজা দিয়ে পালাল।
ক্লারা ঘরে ঢুকে প্রথমেই বাজনার আওয়াজ আর সুর পাল্টে দিয়ে ষাট বিটের ওয়াল্টজ চালিয়ে দিল আর সটান কার্লের হাত ধরে নাচতে শুরু করে দিলো।  কার্ল গ্রামে মানুষ হলেও কলেজে পড়েছে সলসবার্গে, সে ভালো নাচতে গাইতে জানে,তবুও এ  মেয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে তার কষ্ট হচ্ছিল।এদিকে ক্লারা খুব কাছে এসে গেছে,কার্ল বেশ অবাক হল,তাদের গ্রামের মেয়েরা,নাচের সময় একটু দূরত্ব বজায় রাখে,এরা দুই বোন- আগের মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেছে-শুরুতেই একেবারে গায়ের উপর এসে যাচ্ছে।  তার গলার উপর ক্লারার মুখ,ছোঁয়া লাগতেই নার্ভাস হয়ে গেল কার্ল আর স্টেপ ভুল করে বসল!!  ছিটকে সরে গেল ক্লারা আর মুখে তুবড়ি ছুটল

 --"কোথাকার গ্রাম্য অশিক্ষিত ছেলেরা সব,সুন্দরী মেয়ে দেখলে জিভে জল আসে, "এই জাতীয় কথা।
 কার্ল দৌড়ে পালায়,--সে নিজে তো আসতে চায়নি,জমিদারের মেয়ে যদি নিজে থেকে ডাকে তারপর দুর্ব্যবহার  করে--  অপমানে তার মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। হাতে পায়ে জোর পায়না সে! কি হয়ে গেল!!
 সেই রাতে কার্ল কে মাঠের ধারে পাওয়া গেল,অজ্ঞান অবস্থায়, পুরো শরীর সাদা হয়ে গেছে। নরমসরম কার্ল ছিলই,কিন্তু এই ধাক্কা তার বেশ জোরেই লাগল,কদিন  শুয়ে থাকার পর সে সুস্থ হল কিন্তু তার ফ্যাকাসে ভাব কাটল না আর মস্তিষ্কের কিছু রোগ দাঁড়াল।

এই ঘটনায় গ্রামের তরুনকূল অবাক হল,সবাই নানারকম ফিসফাস শুরু করে দিলো।
অস্কার মাঝেমধ্যে অসুস্থ কার্লের সঙ্গে দেখা করতে আসতো, ধীরে ধীরে সে কার্লের কাছ থেকে পুরো ঘটনা জেনে নিল।  অস্কার শক্তপোক্ত মানুষ।  কার্লের ঘটনায় সে কিছু গন্ডগোল আঁচ করেছিল, কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিল না যে কি করে সে ব্যারন কাসলে ঢুকবে,দিন দশেক পরে হটাৎ সুযোগ এসে গেল। ব্যারন কাস্ল থেকে যখন আবার ডাক এল নিজে থেকে নাচের পার্টনার হবার জন্য এগিয়ে এল অস্কার।

 সে শক্তপোক্ত ছেলে,তবুও কার্লের অবস্থা দেখে মনে মনে সতর্ক হয়ে রইল।
বিকেলবেলা যখন অস্কার ব্যারন কাসলে এল ভিতরে যাওয়ার সময়ে উঁকি মেরে ড্রয়িং রুম,বলরুম দেখেটেখে নিলো।  ভৃত্যের সঙ্গে যে ঘরে কার্ল বসেছিল সেই ঘরেই এল আর চেয়ারে না বসে দেওয়ালে ঝুলন্ত ছবিগুলো দেখতে থাকল

।হঠাৎ পিঠের দিকে কি যেন শিরশিরানি  অনুভব করে পিছনে তাকাল, পুরোপুরি নিঃশব্দে এক্কেবারে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে   সেই মোহময়ী সুন্দরী, রূপ দেখলে সত্যি ই মাথা ঘুরে যাওয়ারই কথা!!
 মেয়েটি এসে দাঁড়াল আর ফিসফিস করে তার সঙ্গে নাচার প্রস্তাব দিলো। অস্কার মেয়েটির সঙ্গে বাও করে  প্রথামত পরিচয় করতে চাইল --তার নাম গ্রেটা, এইটুকু বলেই অস্কারের হাত ধরে গ্রেটা নাচ শুরু করে দিল। অস্কারের ধারনা হল যে মেয়েটি ক্লারার কাকার মেয়ে ,নাচতে ভালোবাসে কিন্তু বোনকে ভয় পায়।

নাচ শুরু হওয়ার পরপরই গ্রেটা খুব কাছে চলে এল আর অস্কার এর কাঁধে মাথা রাখল,একটু অবাক হলেও সে ভেবে নিল বড় শহরে হয়ত এইরকম ই নিয়ম,এ তো গ্রামের মেয়ে না! গ্রেটা তার মুখ অস্কারের গলার উপর রেখে কিছু বলছিল মনে হয়,কতক্ষণ যে কেটে গেল এইভাবে, ঠিক বোঝা গেল না,অস্কার যেন ঘোরের মধ্যে ছিল হঠাৎ ক্লারার চেঁচানি কানে এল

 "কাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছ,আমি তোমাকে আমার সঙ্গে নাচতে ডেকেছি আর তুমি কোন সাহসে নিজের বান্ধবী নিয়ে এসেছ!!  এই পিছনের দরজা খুলল কে?" আরও অনেক কিছু বলে চলল সে,কিচ্ছু কানে গেলনা,  গলায় একটা তীক্ষ্ণ ব্যাথা নিয়ে জ্ঞান হারাল অস্কার।

জ্ঞান ফেরার পর অস্কার হতবাক!

"গ্রেটা মেয়েটি কোথায় গেল!"সে জিজ্ঞাসা করল। ইতিমধ্যে  ব্যারন এসে উপস্থিত হয়েছেন আর দুজন বাটলার দাঁড়িয়ে আছে,  একজনের হাতে স্মেলিং সল্ট। এরাই অস্কারকে তুলে সোফায় শুইয়ে দিয়েছে মনে হয়। ক্লারা জানাল ওর গ্রেটা নামে কোন বোনই নেই!  আর ফ্রানৎজ কাকা! তিনি তো ইতালি তে থাকেন না, তিনি বহুদিন হল মৃত। গ্রেটা নামটি শোনার পর ব্যারন কোনো কথা না বলে সটান ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।ক্লারাও ঘটনাপরম্পরায় অবাক হয়ে গেছে, সে আসলে বুঝতেই পারেনি মেয়েটি কোথায় গেল। খোলা দরজা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখে এসে জানালো পিছনের  যে দরজাটি খোলা ছিল সেটা  ওদের পারিবারিক কবরস্থান এর দিকের, ওটা বন্ধই থাকে।

 অস্কারের বারবার বারন না শুনে  ব্যারন নিজে গাড়ি করে দুর্বল  অস্কারকে বাড়ি দিয়ে এলেন। কার্লের ঘটনায় তার খুব শিক্ষা হয়েছে, তাছাড়া তাকে একবার গ্রামের যাজকের বাড়িও যেতে হবে।  তাকে পৌঁছে  তখনি  ব্যারন হেইনৎজকে অ্যাবের (abbey) দিকে যেতে দেখা গেল।

অস্কার বুদ্ধিমান, ধরে নিলো স্থানীয়
গীর্জার বৃদ্ধ  যাজক নিশ্চয় কিছু জানবেন,  পরদিন সকালেই অস্কার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা গীর্জার দিকে চলল,আকাশের মুখ গোমড়া, বেশ শীত,  গিয়ে বৃদ্ধ যাজক কে ধরে পড়ল,তিনি প্রথমেই অস্কারের মুখ,ঘাড়, গলা ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরীক্ষা করে দেখেশুনে একটা রূপোর  ক্রস পরিয়ে দিয়ে দিলেন।

  "ফাদার,সত্যি কথাটা বলে দিন,কি হচ্ছে এসব?"
  "না, বাবা,কিছুনা, তুমি ভেবো না।ঈশ্বর করুণাময়, তার দয়ায় এই গ্রামের কারো কিচ্ছু হবেনা।"
 " তার মানে ক্ষতি হওয়ার মত কিছু আছে?
বলুন ফাদার, বলুন, কি! কে ঐ গ্রেটা!!

    নিরুপায় হয়ে যাজক এক কাহিনী শোনাতে শুরু করলেন ।
হেইনৎজ এর স্ত্রী ছিল গ্রেটা,-রুমানিয়া থেকে আসার পর তার এই নামই রাখা হয়,-আকর্ষণীয়া এবং অদ্ভুত। সে ছিল অত্যন্ত গায়ে পড়া,বিশেষত সুন্দর পুরুষ দেখলে তার মাথার ঠিক থাকতো না। কিছু একটা সামাজিক কেলেঙ্কারির জন্য ওরা ভিয়েনা থেকে গ্রামে চলে আসে।

এই গ্রামে এসেও সে যখন তখন বাইরে বেরিয়ে যেত, বিশেষত রাতে! এক কন্যা সন্তান জন্মের পরও তার কুস্বভাব ঠিক হলনা। এদিকে তাদের বাড়িতে নানারকম কু-লক্ষন দেখা যেতে শুরু করে,  বাড়ি র গরু, ঘোড়া একটি দু'টি করে মরে যায়। তিনটে কুকুর,তারাও যেন চুপচাপ, কুঁকড়ে থাকে।এদিকে ব্যারন এসব ঘটনাকে বেশী পাত্তা দিতে চাননি।কিন্তু একটি বিষয় তার মাথা খারাপ করে দিচ্ছিল, তা হল ভাই   ফ্রানৎজ এর সঙ্গে গ্রেটার ঘনিষ্ঠতা,মাঝে মাঝে রাতে গ্রেটা চুপিসারে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত, তিনি নিজে ওদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছেন।

 পুরো গ্রাম জুড়ে অদ্ভুত সব কান্ড ঘটছিলো। মাঝেমধ্যে রাতের আকাশে বড় ডানাওয়ালা বাদুড় উড়তে দেখা যেত, কাসলের উপর গোল গোল ঘুরছে। গ্রামের গরু আর ঘোড়াগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে, কয়েকটি মারাও যায়। এজন্য যাজক গ্রামে ঘুরে ঘুরে মন্ত্রপূত জলও ছড়াতেন। একবার ব্যারন কয়েকদিনের জন্য বার্লিন যান,ফিরে এসে দেখেন মা রক্তাল্পতা রোগে মৃত্যুশয্যায়, ভাইয়ের মুখ শুকনো, ফ্যাকাসে, শুধু গ্রেটা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি স্ত্রীর চরিত্র বিষয়ে যাজকের সঙ্গে পরামর্শ করতে আসেন। এইসময় কোন এক দিন হেইনৎসের মার মৃত্যু হয়।ব্যারন ঠিক করেন ভাই ফ্রানৎজকে ইতালি পাঠিয়ে দেবেন কিন্তু যাওয়ার আগের দিন হঠাৎই সে মারা যায়। প্রথমে আত্মহত্যা  মনে হয়েছিল, কিন্তু সৎকার এর সময় যাজক সত্যিটা বুঝতে পারেন- তার শরীরে একটুও রক্ত ছিলোনা,  ফাদারের বুঝতে বাকি রইলো না যে গ্রেটা যে স্বাভাবিক মানুষ না, ওর মধ্যে ভ্যাম্পায়ার বাস করে।  প্রথমে স্বীকার না করলেও এই কথা ব্যারনও পরে  মেনে নিতে বাধ্য হন।
 পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার দিকে যাওয়ার আশংকা হতে থাকে। গ্রেটা প্রায়শই চুপিচুপি রাতে বাড়ির বাইরে বেরোত,  এমনইএকদিন রাতে সে  গ্রামের দিকে যাচ্ছিল  তখন যাজকের দেওয়া রূপোর গুলি দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন ব্যারন, আর গ্রেটার সমাধির উপরে রূপোর ক্রস লাগানো হয়,-যাতে সে কবর থেকে বেরোতে না পারে। আর এসব কথাই  খুব গোপনে রাখা হয়। এখন ওই অভিশপ্ত আত্মা কি করে কবর থেকে বাইরে এল সেটাই দেখার।

এরিমধ্যে কখন ব্যারন ঘরে এসেছেন অস্কার টের পায়নি।  যাজক কে সঙ্গে নিয়ে তিনি রওনা দিলেন  কাসলের পারিবারিক সমাধিভূমি তে।

 ব্যারনের প্রাসাদের পিছন দিকে সেই সমাধিভূমি।  ওরা যখন সেখানে পৌঁছল তখন চারধার কুয়াশায় ভরে গেছে, নদীর দিক থেকে কেমন একটা অস্বস্তিকর প্রবল ঠাণ্ডা হাওয়া উঠে আসছে।  অস্কার কেঁপে উঠল, ব্যারন আর যাজকের পিছন পিছন গিয়ে দেখতে পেল গ্রেটার কবরের উপর লাগান রূপোর ক্রস জলে -হাওয়ায় ক্ষয়ে পড়ে গেছে। যাজক সঙ্গে করে নিয়ে আসা  নতুন ক্রস টি মন্ত্র পড়ে লাগিয়ে দিলেন।

নীচে শুয়ে থাকল এক সুন্দরী রোমানীয় নারী আবারো ক্রস টি নষ্ট হওয়ার অপেক্ষায়।

ব্যারন যখন  গাড়ী নিয়ে  প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে ফাদারকে নিয়ে চার্চে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন তখন প্রাসাদের তিনতলার একটা ঘর থেকে দেখছিল ক্লারা, বারবার দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াচ্ছিল সে।

গ্রেটা তার মা হোক আর যে-ই হোক, দু - দুটো শিকার  মুখের সামনে থেকে কেড়ে নিয়েছে। থাক কবরে শুয়ে।

আজকাল তার শ্বদন্ত বড় সুড়সুড় করে। হাত দুটো দুপাশে ছড়িয়ে  খুব সহজে বাতাসে ভেসে যেতে পারে আজকাল।

   || সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 6 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভৌতিক গল্প সংকলন (চলছে) - by Sanjay Sen - 26-10-2023, 09:30 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)