22-10-2023, 05:28 PM
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
দ্য নিউ ক্যাপ্টেন হ্যাজ অ্যারাইভড
<×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×><×>
কান্নায় ভেঙে পড়লো কল্পনা। দুর্ঘটনার পর থেকে বুকের অতলান্ত কান্না চেপে; দাঁতে দাঁত দিয়ে, সমস্তটা সামলেছে। কারণ ভির বা বড়দা-বড়দি না পৌঁছনো অবধি পরিবারের মাথায় ছাতা ধরার মতো কেউ নেই। মুখ টিপে, ভেতরের কান্না ভেতরেই চেপে রেখে, এতক্ষণ সামলে গেছে সবকিছু। এখন বড়দির বুকে মাথা রেখে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো। বড়দি ওকে ধরে ধরে এগিয়ে নিয়ে গেল শবদেহের পায়ের কাছে। পায়ের ওপর মাথা রেখে পড়ে রইলো মিনিটখানেক। মাথা তুলে, বড়দির কোল থেকে ছেলেকে নিয়ে, মাথাটা একবার ছুঁইয়ে নিলো পায়ের পাতায়। কেউ জানলো না; এ এক অবুঝ সন্তানের, পিতাকে প্রথম এবং শেষ প্রণাম।
এরপর, নিপুণ যান্ত্রিকতায় সব কিছু সুষ্ঠ ভাবে শেষ হলো। সন্ধ্যে নাগাদ সবাই ফ্ল্যাটের নিরাপদ আঙিনায়। অনিকেতের দাদা প্রণয়, এখন মূল দায়িত্বে। অবশ্য পুরুষ বলতে এই দু'জনই। মাধুর্য্য বিদেশে। এখনো চার মাস বাকি ফিরে আসতে। অবশ্য পুরো সময়টাই ও পরিবারের সঙ্গেই ছিলো। ঠিক হলো বাকি কাজ কনখলের আশ্রমে হবে।
ফ্লাইটে দেরাদুন; সেখান থেকে বাই কার সবাই আশ্রমে। গুরুদেবের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে সবকিছু সমাধা হলো। ফিরে এসে ফিরে এসে কমপ্লেক্সের কমিউনিটি হলে একটা স্মৃতি চারণ অনুষ্ঠান। সামান্য জলযোগের ব্যবস্থা। পনেরো দিন আগে যে ঝড় উঠেছিলো; অবশেষে তার সমাপ্তি।
দিন যাপনের ছন্দে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। কল্পনা এখন এখানেই থাকে। শুক্রবার রাতে ভদ্রা এলে; শনিবার দিনটা কল্পনা নিজের কোয়ার্টারে যায়। আবার রবিবার সকালে চলে আসে।
কলকাতায় ভদ্রার ব্যবহারের জন্য একটা ছোট গাড়ী কেনা হয়েছে। ড্রাইভার সেই ভদ্রলোক, যিনি ভদ্রাকে কলকাতা থেকে হলদিয়া নিয়ে এসেছিলেন। প্রতি শুক্রবার, হাফডে ছুটি নিয়ে; ভদ্রাকে হলদিয়ায় পৌঁছে দিয়ে, ট্রেন ধরে কলকাতায় ফিরে যান। আবার রবিবার এসে রাত কাটিয়ে, আর্লি মর্নিংয়ে ভদ্রাকে নিয়ে ফিরে যান। অন্যান্য দিন ভদ্রার প্রয়োজন হলে, নিজে সময় না পেলে; বিশ্বস্ত ড্রাইভার ঠিক করে দেন।
অনিকেত চলে যাওয়ার পরে, 15 দিন কেটে গেছে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম ইত্যাদিতে। পরবর্তী 15 দিন গেছে; অফিশিয়াল ক্লেইম, অ্যাকসিডেন্টাল, ইনসিয়োরেন্স ক্লেইম সেটেলমেন্ট ইত্যাদিতে। এরপর সমস্যাটা প্রথম নজরে এলো ভদ্রার।
কল্পনা আগেই লক্ষ্য করেছে, ম্যাডাম রাতে বিছানায় ছটফট করেন। নেবো না, নেবো না করেও স্লিপিং পিল নিতে হয় ঘুমের জন্য। ভদ্রার সঙ্গে এটা নিয়ে কথাও বলেছে কল্পনা। ভদ্রার বক্তব্য, হয়তো বাবিকে ভুলতে পারছে না। এটা সময়ের প্রলেপে কমে যাবে।
দিনে তো কল্পনা থাকে না; কিছু বুঝতে পারে না। সেটা ধরলো ভদ্রা। শনি রবি দু'দিন মাকে নজরে রাখলো ভদ্রা। অবজার্ভ করলো, একটা মৃদু অস্বাভাবিকতা তৈরি হচ্ছে ধীরে ধীরে। নিজস্ব স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রচণ্ড অনীহা সুতনুকার।
পোষাক-আশাক, প্রসাধন, পরিচ্ছন্নতা সবেতেই অনীহা। খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো করে না। কোন জিনিস, কোথায় রাখছে ভুলে যাচ্ছে। তারপর খুঁজে না পেয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে চেঁচামেচি করছে। দু'সপ্তাহ ধরে অবজার্ভ করে, -দির কথা মতো জেম্মা আর ভিরকে জানালো বিষয়টা।
ও! এর মধ্যে আরেকটা ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। কল্পনার ইতিহাস জেম্মার কাছ থেকে শুনে, ছোটুর ব্যাপারে, ওর মেন্টাল অ্যাটাচমেন্ট অনেকটাই বেড়ে গেছে। এবং কল্পনা আন্টি থেকে দিদিতে উত্তরিত।
ভির আর ওদের জেম্মা মানু দিনের বিভিন্ন সময়ে ভিডিও কলে কথা বলে ব্যাপারটা অনুধাবন করলেন। পারিবারিক যে কোন সমস্যার একমাত্র পরিত্রাতা, গুরুদেবকে জানাতে, উনি বললেন, ভদ্রা মাকে বলো, ও যেন মাকে নিয়ে দু'দিনের জন্য আশ্রমে আসে।
গুরুদেবের আদেশ মতো; বাই রোড মা-বেটি দুজনে, কনখলের গুরুকুল আশ্রমে পৌঁছে গেলেন। সেখানে কনিষ্ঠাতমা, মাতা রুপকলার সঙ্গে দেখা হলো। বিগত পাঁচ বছর ধরে; এই রুপকলা মাতাই এই পরিবারের তত্বাবধায়িকা। নিদ্রাহীন সেই রাতটা, মাতার সঙ্গে আলোচনা করেই কাটালো সুতনুকা।
পরদিন সকালে, প্রার্থনার পরে, গুরুদেবের সাক্ষাৎ পেলেন সুতনুকা। আলাদা আলাদা ভাবে, ভদ্রা এবং সুতনুকার সঙ্গে কথা বলার পর; দু'জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বললেন গুরুদেব। মধ্যাহ্ন ভোজনান্তে, ফিরে এলেন হলদিয়ায়।
গুরুদেবের হাত সারা বিশ্বে প্রসারিত। সাত দিনের দিনের মধ্যে; মাধূর্য্যের অফিস সংক্রান্ত একটি বিশেষ খবর গোটা পরিবারকে আনন্দিত করে তুললো। ম্যাডের কোর্স শর্ট টার্মিনেটেড। এবং, জুনিয়র ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে হলদিয়া প্ল্যান্টে যোগদান করবে।
অনিকেতের মৃত্যুর ঠিক চার মাসের মাথায়, মাধূর্য্য হলদিয়া প্ল্যান্টের কর্মী হিসাবে যোগদান করলো। ভদ্রার উনবিংশতিতম জন্মদিন আর ঠিক দু'মাসের মাথায়।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)