20-10-2023, 06:31 PM
সোহিনীর সংসার
এক বছরও হয়নি সোহিনীর বিয়ে হয়েছে। আর এই এক বছরের মধ্যেই হাঁপিয়ে উঠেছে ও।
এক বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে থাকা সহজ নয়। সোহিনী খুব চেষ্টা করছে মানিয়ে নিতে, সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে। কিন্তু ওর শ্বশুর বাড়ির আদব কায়দা ওর বাড়ির থেকে একদম আলাদা। খুবই রক্ষণশীল পরিবার।
ওর শ্বশুরের ফটোগ্রাফির দোকান ছিল , বেশ চালু দোকান। যদিও এই ব্যবসায় এখন আর খুব বেশি রোজগার নেই। তবুও দোকান চালু রাখতে হবে, শ্বশুরের কড়া নির্দেশ।
সোহিনীর স্বামী দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট, তার উপরেই দোকান চালু রাখার দায়িত্ব। সে সারাদিন দোকানেই থাকে, লোক আসুক বা নাই আসুক।
শ্বাশুড়ি সারাদিন পুজো-আর্চা নিয়েই ব্যস্ত। আর সময় পেলে নিজের স্বামী আর ছেলেদের গুনকীর্তন করেন। সোনার টুকরো দুটি ছেলে ওনার। ছেলেদের উনি বাড়িতে কোনো কিছু করতে দেননা, আর ছেলের বৌদের বাড়ির বাইরে। ফলে সোহিনীকেও ওর চাকরি ছাড়তে হয়েছে।
সোহিনীর ভাশুর ছোট ভাইয়ের থেকে ৩ বছরের বড়, উনি একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করেন। খুব মিশুকে লোক, ওনার সোর্সে কিছু বিয়ে, অন্নপ্রাশনের কাজ পাওয়া যায়। ওগুলো না পেলে দোকান বন্ধ করে দিতে হত। ফলে বাড়িতে ওনার কথার আলাদা গুরুত্ব আছে।
জা মহিলা হয়তো খারাপ না, কিন্তু অসহ্য। দুর থেকে দেখলে মনে হয়, সর্বজ্ঞানী, আর কথা বললে বোঝা যায় উনি বাঙলা সিরিয়াল আর সাজগোজ ছাড়া অন্য কিছুতেই উৎসাহী নন। প্রত্যেক দিন সন্ধ্যায় উনি ১ ঘন্টা ধরে সাজুগুজু করে ১০ মিনিট তানপুরা নিয়ে অ্যা অ্যা করেন। তারপরে ওনার তানপুরার মতো নিতম্ব নিয়ে ধপাস করে সোফায় বসে সিরিয়াস মুখে সিরিয়াল দেখেন।
সোহিনীর বর বরং ভালোমানুষ, কোনো সাথে পাছে নেই। দোকানে বসে পাড়ার বয়স্কদের সাথে গল্পগুজব করে। বাড়ি ফিরে কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। একটু ভালো হুইস্কি আর সাথে কাৎলা মাছের পেটি ভাজা হলে আর জীবনে কিছু চাই না। এদিকে বৌয়ের পেটিতে যে মেদ জমেছে, সেই দিকে খেয়ালই নেই। ওদিকে আবার বাড়ির বউদের জিম করার অনুমতি নেই।
শ্বশুর মশাই রাসভারী মানুষ। কম কথা বলেন। সোহিনী একবার ওনাকে বড় বৌয়ের নিতম্বের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলেছিল, দিদি কে খুব সুন্দর দেখতে, তাই না বাবা? সেই থেকে উনি আর ছোট বৌয়ের সাথে পারতপক্ষে কথা বলেন না। বললেও ভাববাচ্যে।
সোহিনীর বড্ড নিজেকে একা লাগে। শুধু ফোনে ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম দেখে কতই বা সময় কাটানো যায়! একা বেরিয়ে য়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করবে, তার উপায় নেই। বিয়ের পরে একবার শ্বশুর বাড়িতে বন্ধুদের ডাকবে ভেবেছিল, কিন্তু শ্বাশুড়িকে কাকে কাকে বলবে, কতদিনের চেনাজানা, ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে বলতে বন্ধুদের ডাকার ইচ্ছেটাই চলে গেছে।
দুপুর বেলা একাএকা বিছানায় শুয়ে সোহিনী ভাবছে, এভাবে আর কতদিন! দোকানে থেকে আয় বাড়ছে না, ওদিকে খরচ বেড়েই চলেছে। দুপুরে AC না চালালে ইলেক্ট্রিসিটি বিল কমে, বর্ষায় বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছ না কিনে পার্শে মাছ কিনলে খরচ কমে, মটন খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, মুখে বেসন লাগালে ফেসিয়াল করার দরকার হয় না, এইসব জানার ও মেনে চলার থেকে তো একটা চাকরি করা ভালো। কিন্তু বাড়ির বউ রোজগার করলে উনাদের আত্মাভিমানে লাগবে। এই বাড়িতে সবাই বোঝে যে টাকা দরকার, কিন্তু কেউ নতুন কাজের চেষ্টা করে না।
এদিকে আবার মেঘ করেছে, ছাদে কাপড় জামা শুকোতে দেওয়া আছে। সোহিনী বিষাদ বদনে ছাদে যায়।
এক বছরও হয়নি সোহিনীর বিয়ে হয়েছে। আর এই এক বছরের মধ্যেই হাঁপিয়ে উঠেছে ও।
এক বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে থাকা সহজ নয়। সোহিনী খুব চেষ্টা করছে মানিয়ে নিতে, সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে। কিন্তু ওর শ্বশুর বাড়ির আদব কায়দা ওর বাড়ির থেকে একদম আলাদা। খুবই রক্ষণশীল পরিবার।
ওর শ্বশুরের ফটোগ্রাফির দোকান ছিল , বেশ চালু দোকান। যদিও এই ব্যবসায় এখন আর খুব বেশি রোজগার নেই। তবুও দোকান চালু রাখতে হবে, শ্বশুরের কড়া নির্দেশ।
সোহিনীর স্বামী দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট, তার উপরেই দোকান চালু রাখার দায়িত্ব। সে সারাদিন দোকানেই থাকে, লোক আসুক বা নাই আসুক।
শ্বাশুড়ি সারাদিন পুজো-আর্চা নিয়েই ব্যস্ত। আর সময় পেলে নিজের স্বামী আর ছেলেদের গুনকীর্তন করেন। সোনার টুকরো দুটি ছেলে ওনার। ছেলেদের উনি বাড়িতে কোনো কিছু করতে দেননা, আর ছেলের বৌদের বাড়ির বাইরে। ফলে সোহিনীকেও ওর চাকরি ছাড়তে হয়েছে।
সোহিনীর ভাশুর ছোট ভাইয়ের থেকে ৩ বছরের বড়, উনি একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করেন। খুব মিশুকে লোক, ওনার সোর্সে কিছু বিয়ে, অন্নপ্রাশনের কাজ পাওয়া যায়। ওগুলো না পেলে দোকান বন্ধ করে দিতে হত। ফলে বাড়িতে ওনার কথার আলাদা গুরুত্ব আছে।
জা মহিলা হয়তো খারাপ না, কিন্তু অসহ্য। দুর থেকে দেখলে মনে হয়, সর্বজ্ঞানী, আর কথা বললে বোঝা যায় উনি বাঙলা সিরিয়াল আর সাজগোজ ছাড়া অন্য কিছুতেই উৎসাহী নন। প্রত্যেক দিন সন্ধ্যায় উনি ১ ঘন্টা ধরে সাজুগুজু করে ১০ মিনিট তানপুরা নিয়ে অ্যা অ্যা করেন। তারপরে ওনার তানপুরার মতো নিতম্ব নিয়ে ধপাস করে সোফায় বসে সিরিয়াস মুখে সিরিয়াল দেখেন।
সোহিনীর বর বরং ভালোমানুষ, কোনো সাথে পাছে নেই। দোকানে বসে পাড়ার বয়স্কদের সাথে গল্পগুজব করে। বাড়ি ফিরে কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। একটু ভালো হুইস্কি আর সাথে কাৎলা মাছের পেটি ভাজা হলে আর জীবনে কিছু চাই না। এদিকে বৌয়ের পেটিতে যে মেদ জমেছে, সেই দিকে খেয়ালই নেই। ওদিকে আবার বাড়ির বউদের জিম করার অনুমতি নেই।
শ্বশুর মশাই রাসভারী মানুষ। কম কথা বলেন। সোহিনী একবার ওনাকে বড় বৌয়ের নিতম্বের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলেছিল, দিদি কে খুব সুন্দর দেখতে, তাই না বাবা? সেই থেকে উনি আর ছোট বৌয়ের সাথে পারতপক্ষে কথা বলেন না। বললেও ভাববাচ্যে।
সোহিনীর বড্ড নিজেকে একা লাগে। শুধু ফোনে ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম দেখে কতই বা সময় কাটানো যায়! একা বেরিয়ে য়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করবে, তার উপায় নেই। বিয়ের পরে একবার শ্বশুর বাড়িতে বন্ধুদের ডাকবে ভেবেছিল, কিন্তু শ্বাশুড়িকে কাকে কাকে বলবে, কতদিনের চেনাজানা, ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে বলতে বন্ধুদের ডাকার ইচ্ছেটাই চলে গেছে।
দুপুর বেলা একাএকা বিছানায় শুয়ে সোহিনী ভাবছে, এভাবে আর কতদিন! দোকানে থেকে আয় বাড়ছে না, ওদিকে খরচ বেড়েই চলেছে। দুপুরে AC না চালালে ইলেক্ট্রিসিটি বিল কমে, বর্ষায় বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছ না কিনে পার্শে মাছ কিনলে খরচ কমে, মটন খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, মুখে বেসন লাগালে ফেসিয়াল করার দরকার হয় না, এইসব জানার ও মেনে চলার থেকে তো একটা চাকরি করা ভালো। কিন্তু বাড়ির বউ রোজগার করলে উনাদের আত্মাভিমানে লাগবে। এই বাড়িতে সবাই বোঝে যে টাকা দরকার, কিন্তু কেউ নতুন কাজের চেষ্টা করে না।
এদিকে আবার মেঘ করেছে, ছাদে কাপড় জামা শুকোতে দেওয়া আছে। সোহিনী বিষাদ বদনে ছাদে যায়।
অতসী বন্দোপাধ্যায়