14-10-2023, 02:58 PM
"কি ব্যাপার সোনা? এখনো তো পনেরো মিনিটও হয়নি! এরই মধ্যে ছাড়া পেয়ে গেলে তুমি? নাকি তোমার এই নতুন বরটার জন্য মন কেমন করছিলো তোমার! তাই বেরিয়ে এলে ঘর থেকে?" কথাগুলো বলে নন্দনার দিকে এগিয়ে গেলো রজত।
"তোমার বলা দ্বিতীয় কথাটা একদম ঠিক রজত। আজ তোমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে আমার। কিন্তু তোমার আগে আমি যদি অন্য কারোর শয্যাসঙ্গিনী হই, তাহলে তোমাকে ঠকানো হবে। তাছাড়া ওদের একটা কি গুরুত্বপূর্ণ ফোন এসে গেলো, তাই ওরা আমার কাছ থেকে একটু সময় চেয়ে নিলো। আমি বললাম, থাক .. আজ রাতে আমি শুধু আমার স্বামীকেই সব কিছু দেবো, তোমরা যা পাওয়ার পরে পাবে। বলো, ঠিক করিনি?" রজতের ব্লেজারের একটা বোতাম নিয়ে খেলতে খেলতে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"একদম ঠিক করেছো সোনা, একদম ঠিক করেছো। তুমি আমার জন্য এতটা ভাবো? এতো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। তাহলে আর দেরি কিসের? চলো পাশের রুমটাতে, আমরা আমাদের ফুলশয্যা শুরু করে দিই। তবে আমি কিন্তু গ্লাসে করে দুধ খাবো না, আমি অন্য জায়গা দিয়ে দুধ খাবো।" নন্দনার গালে নিজের গালটা ঘষতে ঘষতে অসভ্যের মতো অঙ্গভঙ্গি করে উক্তি করলো রজত।
"আমি জানি তো তুমি কি জিনিস, তুমি এত সহজে সবকিছু মেনে নাও নাকি? না মানে আমি বলতে চাইছি, তুমি আরও অনেক বেশি রোমান্টিক তো! তাই তোমার জন্য অন্য একটা বিশেষ ব্যবস্থা করেছি আমি। আচ্ছা, আমার মুখ থেকে যদি তোমাকে কিছু খাওয়াই, তাহলে তোমার আপত্তি নেই তো? মানে আমার এঁটো খেতে তোমার কোনো আপত্তি আছে?" রজতের গালে একটা চুম্বন এঁকে দিয়ে ন্যাকামি করে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"আপত্তি কি বলছো সোনা! এ তো আমার কাছে সৌভাগ্য, যে আমি তোমার মুখ থেকে কোনো কিছু খেতে পারবো। আমি যে আর কন্ট্রোল করতে পারছিনা নিজেকে, কি খাওয়াবে আমাকে? চলো না প্লিজ পাশের ঘরটাতে।" কিছুটা অসহিষ্ণু হয়েই মন্তব্য করলো রজত।
"আরে যাবো যাবো, তুমি এত তাড়া দিচ্ছ কেন বলো তো? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, তোমার হাতে খুব বেশি সময় আর নেই। একটু আগে ডাক্তার যেমন ওই কথাগুলো বলে আমার স্বামীর বুকের ভেতরটা জ্বলিয়ে দিলো, তুমি একটু জ্বালাবে না ওকে?" কথাগুলো রজতের উদ্দেশ্যে বলে রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ার দিকে তাকিয়ে নন্দনা বললো, "কই দে ওটা .."
নন্দনার কথা শেষ হওয়া মাত্রই দেখলাম ছায়া একগুচ্ছ কালো আঙুর নিয়ে এসে নন্দনার হাতে দিলো। ওখান থেকে একটা আঙুর ছিঁড়ে নিজের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে, তারপর সেটা দুই পাটি দাঁতের মাঝখানে চেপে ধরে রজতের মুখের সামনে নিয়ে এলো নন্দনা। "ওয়াও, হাও রোমান্টিক ইউ আর। তোমাকে আমি ভুল ভেবেছিলাম সোনা। তোমাকে যত দেখছি, ততই অবাক হচ্ছি।" এই বলে নন্দনার মুখের একদম কাছে নিজের মুখটা নিয়ে এলো রজত।
লক্ষ্য করলাম, সঙ্গে সঙ্গে নিজের দাঁতের পাটি দুটো ফাঁক করে দিয়ে জিভের উপর আঙুরটাকে নিয়ে, নিজের জিভটা রজতের মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ওই কালো আঙুরটা রজতের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে তৎক্ষণাৎ জিভটা ওর মুখের ভেতর থেকে বের করে আনলো নন্দনা। "আমার মুখের লালা দিয়ে এই মিষ্টি আঙুরটাকে আরও মিষ্টি করে দিয়েছি, তাই না? এবার কামড়ে কামড়ে খাও তো সোনা ওই কালো আঙুরটা যেভাবে আমার দুধের বোঁটাদুটো কামড়াও।" নন্দনার এই ভয়ঙ্কর অশ্লীল উক্তিতে ওর আজ্ঞা পালন করে সঙ্গে সঙ্গে আঙুরটা চেবাতে শুরু করে দিলো রজত।
"আচ্ছা ওরা দু'জন তোমার ব্রা আর প্যান্টিটা সমুদ্রের ধার থেকে আনতে গেছে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট হতে চললো। এখনো ওদের পাত্তা নেই কেনো বলো তো? জানো, একটু আগে ওদের ফোন করেছিলাম। দু'জনের মোবাইলই সুইচড অফ বলছে। এটা কি করে সম্ভব হতে পারে? তবে ওই দুটো মালকে বিশ্বাস নেই, হয়তো রাস্তায় কোনো ভালো রেন্ডি দেখতে পেয়ে ফোন বন্ধ করে চোদনবাজিতে মন দিয়েছে। হারামি দুটো ফিরুক, ওদেরকে আচ্ছা করে ঝাড় দেবো আজকে। আরেকটা ব্যাপারেও আমার ভীষণ অবাক লাগছে। ডাক্তার আর রবার্ট এতক্ষণ কি কথা বলছে ফোনে? তুমি বেরোনোর পর তো দরজাটা একটু ফাঁক করাই রয়েছে দেখছি। তাহলে ফোনে কথা বললে তো বাইরে আওয়াজ আসা উচিৎ , ওরা কি বাথরুমের মধ্যে ঢুকে কথা বলছে নাকি? পুরো বিষয়টাই আমার কিরকম যেন গোলমেলে মনে হচ্ছে। আমি নিজের চোখে একবার দেখে আসি, তা না হলে মনে শান্তি পাচ্ছিনা।" এই বলে এক পা এগোতে গিয়েই দুম করে মাটির উপর পড়ে গেলো রজত।
ওকে দেখে আমার মনে হলো, ওর হয়তো মাথাটা ঘুরে গিয়েছে। পড়ার সময় রজতের মাথাটা সোফার হাতলে ঠুকে গিয়েছিলো। দেখলাম কপালের পাশটা ফেটে গিয়ে ওখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। "আমার মাথার ভেতরটা এরকম ঝিমঝিম করছে কেনো? ওফফফ, চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই উঠতে পারছিনা। এ কি, রক্ত? সোনা দেখেছো, আমার মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। হিন্দি সিনেমায় যেরকম দেখি ভালোবাসার মানুষের রক্ত বেরোলে নিজের শাড়ির আঁচল ছিড়ে নায়িকারা সেখানে পট্টি বেঁধে দেয়। তুমি সেরকম কিছু করবে না সোনা? আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আঙুরটা খাওয়ার পর থেকেই আমার শরীরের ভেতর এইরকম হচ্ছে। সব কিছু বুঝতে পারছি, দেখতে পাচ্ছি, কথা বলতে পারছি, কিন্তু হাত-পায়ের জোর ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। আচ্ছা, তুমিও তো আঙুরটা খেয়েছিলে; তোমার সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না?" সোফার হাতল ধরে ওঠার চেষ্টা জারি রেখে কপালের ফেটে যাওয়ার স্থানে হাত বুলোতে বুলোতে নন্দনার উদ্দেশ্যে ব্যাকুলভাবে কথাগুলো বললো রজত।
"না গো, আমি মোটেও আঙুরটা খাইনি, মানে আমার দাঁতে কাটিনি। শুধু দাঁতের পাটি দিয়ে চেপে ধরেছিলাম ওটাকে। একবার যদি ভুল করেও দাঁত দিয়ে কামড়ে দিতাম ওটাকে, তাহলে তোমার মতোই অবস্থা হতো আমার। তাই দেখলে না, তোমার মুখে আঙুরটা দিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিভটা বের করে নিলাম। তার কারণ তুমি যদি সেই সময় আঙুরে একটা কামড় দিতে, আর সেখান থেকে যদি রস বেরোতো, তাহলে আমার দফারফা হয়ে যেত এতক্ষণে। তুমি অনেক শক্তিশালী বলে এখনো টিকে রয়েছো। আমি তো আর তোমার মতো অত স্ট্রং নই, ওই আঙুরের রস পেটে গেলে এতক্ষণে আমার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যেতো।" স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় রজতের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"মানে, এসব কি বলছো তুমি? কি ছিলো আঙুরের মধ্যে?" উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো রজত।
- "কিউরারি .."
- "ম..মানে ..ক..কি বলছো তুমি?"
"বাবা, তোমার সব বিষয়ে এত জ্ঞান! এত খবর রাখো তুমি! আর এইটুকু বুঝতে পারলে না? তোমাকে দেওয়া আঙুরটার মধ্যে কিউরারি বিষ ইনজেক্ট করা হয়েছিলো। তবে শুধু ওই আঙুরটার মধ্যে নয়, ছায়া আমাকে যে আঙুরের গোছাটা এনে দিয়েছিলো সবগুলোর মধ্যেই বিষ ছিলো, মানে আছে। আমি তো জানতাম তুমি সহজ মানুষ নও, তাই আমার হাত থেকে ভালো মানুষের মতো দুধ খেতে চাইবে না তুমি। সেজন্যই এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। হ্যাঁ তোমার মাথায় আমি আমার শাড়ি ছিঁড়ে পট্টি বেঁধে দিতেই পারতাম, কিন্তু দেবো না। ওটা দিলেও যা, না দিলেও তাই। কারণ রক্ত বন্ধ হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে তোমার মৃত্যুর কোনো যোগ থাকবে না তো! আর একটুখানি সময় যেতে দাও, তোমার রক্তের সঙ্গে বিষটা পুরোপুরি মিশে গেলেই আসল কষ্টটা টের পাবে তুমি। এখন কি রকম ফিল করছো তুমি? মানে, যন্ত্রণা কি আগের থেকে বেড়েছে, নাকি একই আছে?" মাটিতে বসে ছটফট করতে থাকা রজতের ঠিক সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে খুব স্বাভাবিকভাবে, অথচ দৃঢ়কন্ঠে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"কি নিষ্ঠুর তুমি! কত স্বাভাবিকভাবে এই সাংঘাতিক কথাগুলো বলছো! ইউসুফ আর হার্জিন্দার এখনো ফিরছে না কেনো, কি হলো ওদের? রবার্ট? প্রমোদ? তোমরা কোথায়? এই মেয়েটা মেরে ফেলছে আমায়, আমাকে বাঁচাও তোমরা। আহ্ , ও মাগো .. ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে আমার, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, হাত-পা গুলো কিরকম যেন শিথিল হয়ে আসছে। মাথাটা ক্রমশ ভারী লাগছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। দম বন্ধ হয়ে আসছে গো .. শ্বাসকষ্ট হচ্ছে আমার। একটু, জল দেবে আমাকে প্লিজ তোমরা। দয়া করো আমায়, একটু জল দাও।" চোখের সামনে দেখতে পেলাম, এই কথাগুলো বলতে বলতে বসা অবস্থা থেকে মাটিতে শুয়ে পড়ে কাটা ছাগলের মতো ছটফট করতে লাগলো রজত। চোখগুলো ক্রমশ বিস্ফোরিত হতে হতে কপালের উপর উঠে যাচ্ছে ওর। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে আরম্ভ করে দিলো।
"আমি নিষ্ঠুর? আর তোমরা? তোমরা কি? তোমাদের মতো চরিত্রহীন, লম্পট, নারীমাংস লোভী, নরকের কীটদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ভবিষ্যতে আমাদের মতো শয়ে শয়ে হাজার হাজার নন্দনা যাতে নট আউট থেকে যায় চিরকাল, সেজন্য তোমাদেরকে তো আউট করতেই হবে! তোমার বন্ধুরা কেউ আসবে না গো, তোমাকে বাঁচাতে। ইউসুফ আর হার্জিন্দার এতক্ষণে সমুদ্রের জলের স্রোতে ভাসতে ভাসতে কোথায় পৌঁছে গিয়েছে তার খবর কেউ জানে না। যদি কোনোদিন ওদের বডি পাওয়াও যায়, সেটা বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের লোকেরা বুঝে নেবে। এবার এই কথাটা আমি কেনো বললাম, এত বিশ্লেষণ তোমাকে এখন করতে পারবো না। কারণ তোমার হাতে বেশি সময়ও নেই, সব শোনার। নরকে গিয়ে ওদের কাছ থেকে জেনে নিও। আর রইলো তোমার বাকি দুই বন্ধু রবার্ট আর ওই ডাক্তার প্রমোদ। ওদের অবস্থা তোমার মতোই হয়েছে। মানে তুমি একটু পরে যেভাবে মারা যাবে, ওরা একটু আগে সেভাবেই মারা গেছে। শুধু তফাৎটা হলো ওদের শরীরে বিষটা দুধের মধ্যে দিয়ে ঢুকেছে, আর তোমারটা আঙুরের মধ্য দিয়ে। তবে একটা কথা এখন থেকে বলে দিচ্ছি, পরে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবে না। তোমাদের সৎকার-টৎকার করতে পারবো না বাপু। ওই দুটো যেরকম জলে ভেসে গেছে, তোমাদের এই তিনটে বডিকেও জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। তোমাদের মৃতদেহগুলোও যদি কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যায়, মাছেরা খুবলে খুবলে খেয়ে তোমাদের শরীরের যা অবস্থা করবে, তাতে মৃত্যুর কারণ অজানাই থেকে যাবে। কপাল ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আমার কাজটা আরো সহজ করে দিয়েছো তুমি। পুরো কঙ্কাল বানিয়ে ফেলবে গো তোমাদের তিনজনের শরীরটাকে মানুষখেকো মাছগুলো।" উচ্চকণ্ঠে হেসে কথাগুলো বলে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালো নন্দনা।
দেখলাম ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে দুই হাত পা ছড়িয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে ও। মুখ দিয়ে অবিরত গ্যাঁজলা বেরিয়ে চলেছে, নিষ্কলক চোখদুটো সিলিংয়ের দিকে চেয়ে রয়েছে। সম্ভবত মারা গেছে রজত।
"আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এখানে যা যা ঘটে চলেছে, এবং এই ঘটনাগুলোর সাক্ষী হিসেবে থেকে তোমরা যে ভীষণভাবে বিপর্যস্ত এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েছো সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি। তোমরা আমাকে কিছু প্রশ্ন করার আগে, তাই আমি কয়েকটা কথা বলছি, মন দিয়ে শুনে নাও। প্রথমে আমাকে বলো এখানে ওই পাঁচজনের সঙ্গে যেটা ঘটেছে সেটাতে কি তোমরা খুশি? কোনোরকম জ্ঞান দেওয়ার বা ভনিতা করার চেষ্টা করবে না। আমাদের হাতে সময় খুব কম, তাই 'হ্যাঁ' বা 'না' তে উত্তর দেবে।
সৈকত থেকে শুরু করে শান্তিরঞ্জন, ঝুমা থেকে শুরু করে আমি .. আমরা চারজনেই সমস্বরে "হ্যাঁ" বলে উঠলাম।
"এবার তোর বরকে ফোন করে ডাক .." ছায়ার দিকে তাকিয়ে বললো নন্দনা।
ছায়া নিজের ফোন থেকে কাউকে একটা ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম। একটা ছয় ফুটের কাছাকাছি লম্বা, বিশাল পেশীবহুল চেহারার অধিকারী, কুচকুচে কালো অল্পবয়সী এক যুবক এসে বাড়িতে ঢুকলো। ওকে দেখেই নন্দনা বলে উঠলো, "মুন্না তুমি একটা কাজ করো, তোমার বউয়ের কাছে যে ব্যাগটা আছে, ওই ব্যাগে দেখো গ্লোভস রাখা রয়েছে। ওগুলো দুই হাতে পড়ে নিয়ে তোমার সঙ্গে যেরকম কথা হয়েছিলো, ঠিক সেরকম ভাবেই তিনটে বডির ঠিকানা লাগিয়ে দিও। আর হ্যাঁ শোনো, দুটো কাঁচের গ্লাস আছে দেখবে, ওই দুটো কিন্তু বডির সঙ্গে ফেলে দিও। আর একটা আঙুরের গোছা রয়েছে, সেটাকেও ওদের সঙ্গে দিয়ে দিও। ছায়া তোমাকে সব দেখিয়ে দেবে। গাড়ি এনেছো তো সঙ্গে করে?"
"এই ছেলেটার সঙ্গে কাল রাতে সমুদ্র সৈকতে আমার দেখা হয়েছিলো। এ ছায়ার বর? কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে দু'জনের বয়সের প্রচুর ডিফারেন্স। মানে, ছায়া এর থেকে বয়সে অনেক বড়।" আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে কথাগুলো বললো শান্তিরঞ্জন।
"আজ্ঞে হ্যাঁ দিদি, গাড়ি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আপনারা তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বসুন, আমি আসছি। আপনাদের স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আমি আবার ফিরে আসবো এখানে। আমি আর ছায়া আছি তো, এদিকের পুরোটা সামলে নেবো। এমনিতে জায়গাটা জনশূন্য, তবে এখন কিছু করলে চলবে না, ধরা পড়ে যেতে পারি। কাজটা মাঝরাতে করতে হবে। রাত দশটায় ট্রেন, ওটা মিস করলে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবেন।" খুব স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলে ছায়ার দিকে ইশারা করে ওকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো ছেলেটা।
এখানে কি হচ্ছে? এই ছেলেটা আবার কোত্থেকে এলো? এদের সঙ্গে নন্দনার যোগাযোগটাই বা হলো কি করে? কিছুই মাথায় ঢুকলো না আমার। ধীরপায়ে নন্দনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ওকে স্পর্শ করতেও ভয় করছিলো আমার, এই রূপ তো আমার স্ত্রীর আমি আগে কখনো দেখিনি! মৃদুস্বরে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, "আমার না অনেক প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো কি এখন .."
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে নন্দনা বললো, "সাড়ে আটটা বাজে। এখান থেকে রূপনগর স্টেশনে গাড়িতে যেতে এক ঘন্টা লাগে শুনলাম। দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যে বেরোতে না পারলে আমাদের কপালে কিন্তু দুঃখ আছে।" তারপর হনহন করে ঘরের ভেতর ঢুকে গিয়ে সেখান থেকে ঘুমন্ত বাপ্পা আর সাগর দু'জনকেই কোলে করে নিয়ে বেরিয়ে এলো নন্দনা। "আমি তো এই দু'জনকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবো। এবার আমার সঙ্গে যে আসতে চাও তাকে পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে এসে আমার সঙ্গে বাইরে গাড়িতে এসে বসো আর যে আসতে চাও না, এখানে থেকে মরো। খেয়াল থাকে যেন এখানে কেউ নিজের কোনো জিনিস ফেলে যাবে না। আর কেউ যদি মনে করে থাকো এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের মুখ খুলবে, তাহলে কিন্তু সে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবে। কারণ ঘটনাগুলো ঘটার সময় তোমরা সকলে এখানে উপস্থিত ছিলে, তাই ধরে নেওয়া হবে তোমাদের সকলের সম্মতিতেই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে।" প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে কথাগুলো বলে বাপ্পা আর সাগরকে নিয়ে বাড়ি থেকে গটগট করে বেরিয়ে গেলো নন্দনা।
জিনিসপত্র বলতে সবার সবকিছুই নিজেদের সঙ্গে আনা ব্যাগের মধ্যে ছিলো, একমাত্র টুথব্রাশ আর টুথপেস্ট ছাড়া। ওগুলো বাথরুম থেকে বের করে নিয়ে যে যার ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলাম। তারপর বিনা বাক্যব্যয়ে, বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বাইরে অপেক্ষারত গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আমরা বসার সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারের সিটে এসে বসলো ছায়ার বর মুন্না। গাড়িতে যাওয়ার সময় দেখলাম ওই এলাকার প্রায় এক কিলোমিটারছর মধ্যে লোকজন তো দুরস্থান, কোনো ঘর বাড়িও নেই।
অতঃপর পৌনে দশটা নাগাদ রূপনগর স্টেশনে এসে পৌঁছলাম আমরা। আমাদের স্টেশনে পৌঁছে দিয়েই গাড়ি নিয়ে ফিরে গেলো মুন্না। আসার সময় লক্ষ্য না করলেও, গাড়িটা যখন আমাদের দিকে পিছন করে ঘুরে বেরিয়ে গেল তখন দেখলাম গাড়ির পেছনে লেখা রয়েছে 'রূপনগর বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প'।
দশটা বেজে পাঁচ মিনিট নাগাদ আমাদের ট্রেন এলো। গাড়িতে আসতে আসতেই বাপ্পার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো বাপ্পার, তার সঙ্গে সাগরেরও। "আমরা এত রাতে কেনো ফিরছি? আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে, পেচ্ছাপ করবো, জল খাবো .." ঘুম ভেঙেই এইসব বলতে শুরু করে দিয়েছিলো বাপ্পা। সেই সন্ধ্যেবেলা চায়ের সঙ্গে কয়েকটা চিকেন পকোড়া খাবার পর এখনো পর্যন্ত পেটে কিছুই পড়েনি আমার। যথেষ্ট খিদে পেয়েছিলো, তাই বাপ্পার কষ্টটাও বুঝতে পারলাম। কিন্তু জীবনের থেকে তো খিদের দাম বেশি নয় .. একবেলা না খেলে মানুষ মরেও যায় না। ট্রেন যখন লিলুয়া স্টেশনে থামলো, তখন রাত বারোটা। বাপ্পা আর সাগর তখন ঘুমিয়ে কাদা। আজ আমার ভায়রাভাইয়ের বাড়িতেই থেকে যেতে হবে আমাদের। মানে নন্দনাই সেটা চেয়েছে। এখন তো কর্ত্রীর ইচ্ছেতেই কর্ম! আগামীকাল সকালে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা।
"তোমার বলা দ্বিতীয় কথাটা একদম ঠিক রজত। আজ তোমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে আমার। কিন্তু তোমার আগে আমি যদি অন্য কারোর শয্যাসঙ্গিনী হই, তাহলে তোমাকে ঠকানো হবে। তাছাড়া ওদের একটা কি গুরুত্বপূর্ণ ফোন এসে গেলো, তাই ওরা আমার কাছ থেকে একটু সময় চেয়ে নিলো। আমি বললাম, থাক .. আজ রাতে আমি শুধু আমার স্বামীকেই সব কিছু দেবো, তোমরা যা পাওয়ার পরে পাবে। বলো, ঠিক করিনি?" রজতের ব্লেজারের একটা বোতাম নিয়ে খেলতে খেলতে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"একদম ঠিক করেছো সোনা, একদম ঠিক করেছো। তুমি আমার জন্য এতটা ভাবো? এতো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। তাহলে আর দেরি কিসের? চলো পাশের রুমটাতে, আমরা আমাদের ফুলশয্যা শুরু করে দিই। তবে আমি কিন্তু গ্লাসে করে দুধ খাবো না, আমি অন্য জায়গা দিয়ে দুধ খাবো।" নন্দনার গালে নিজের গালটা ঘষতে ঘষতে অসভ্যের মতো অঙ্গভঙ্গি করে উক্তি করলো রজত।
"আমি জানি তো তুমি কি জিনিস, তুমি এত সহজে সবকিছু মেনে নাও নাকি? না মানে আমি বলতে চাইছি, তুমি আরও অনেক বেশি রোমান্টিক তো! তাই তোমার জন্য অন্য একটা বিশেষ ব্যবস্থা করেছি আমি। আচ্ছা, আমার মুখ থেকে যদি তোমাকে কিছু খাওয়াই, তাহলে তোমার আপত্তি নেই তো? মানে আমার এঁটো খেতে তোমার কোনো আপত্তি আছে?" রজতের গালে একটা চুম্বন এঁকে দিয়ে ন্যাকামি করে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"আপত্তি কি বলছো সোনা! এ তো আমার কাছে সৌভাগ্য, যে আমি তোমার মুখ থেকে কোনো কিছু খেতে পারবো। আমি যে আর কন্ট্রোল করতে পারছিনা নিজেকে, কি খাওয়াবে আমাকে? চলো না প্লিজ পাশের ঘরটাতে।" কিছুটা অসহিষ্ণু হয়েই মন্তব্য করলো রজত।
"আরে যাবো যাবো, তুমি এত তাড়া দিচ্ছ কেন বলো তো? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, তোমার হাতে খুব বেশি সময় আর নেই। একটু আগে ডাক্তার যেমন ওই কথাগুলো বলে আমার স্বামীর বুকের ভেতরটা জ্বলিয়ে দিলো, তুমি একটু জ্বালাবে না ওকে?" কথাগুলো রজতের উদ্দেশ্যে বলে রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ার দিকে তাকিয়ে নন্দনা বললো, "কই দে ওটা .."
নন্দনার কথা শেষ হওয়া মাত্রই দেখলাম ছায়া একগুচ্ছ কালো আঙুর নিয়ে এসে নন্দনার হাতে দিলো। ওখান থেকে একটা আঙুর ছিঁড়ে নিজের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে, তারপর সেটা দুই পাটি দাঁতের মাঝখানে চেপে ধরে রজতের মুখের সামনে নিয়ে এলো নন্দনা। "ওয়াও, হাও রোমান্টিক ইউ আর। তোমাকে আমি ভুল ভেবেছিলাম সোনা। তোমাকে যত দেখছি, ততই অবাক হচ্ছি।" এই বলে নন্দনার মুখের একদম কাছে নিজের মুখটা নিয়ে এলো রজত।
লক্ষ্য করলাম, সঙ্গে সঙ্গে নিজের দাঁতের পাটি দুটো ফাঁক করে দিয়ে জিভের উপর আঙুরটাকে নিয়ে, নিজের জিভটা রজতের মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে ওই কালো আঙুরটা রজতের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে তৎক্ষণাৎ জিভটা ওর মুখের ভেতর থেকে বের করে আনলো নন্দনা। "আমার মুখের লালা দিয়ে এই মিষ্টি আঙুরটাকে আরও মিষ্টি করে দিয়েছি, তাই না? এবার কামড়ে কামড়ে খাও তো সোনা ওই কালো আঙুরটা যেভাবে আমার দুধের বোঁটাদুটো কামড়াও।" নন্দনার এই ভয়ঙ্কর অশ্লীল উক্তিতে ওর আজ্ঞা পালন করে সঙ্গে সঙ্গে আঙুরটা চেবাতে শুরু করে দিলো রজত।
"আচ্ছা ওরা দু'জন তোমার ব্রা আর প্যান্টিটা সমুদ্রের ধার থেকে আনতে গেছে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট হতে চললো। এখনো ওদের পাত্তা নেই কেনো বলো তো? জানো, একটু আগে ওদের ফোন করেছিলাম। দু'জনের মোবাইলই সুইচড অফ বলছে। এটা কি করে সম্ভব হতে পারে? তবে ওই দুটো মালকে বিশ্বাস নেই, হয়তো রাস্তায় কোনো ভালো রেন্ডি দেখতে পেয়ে ফোন বন্ধ করে চোদনবাজিতে মন দিয়েছে। হারামি দুটো ফিরুক, ওদেরকে আচ্ছা করে ঝাড় দেবো আজকে। আরেকটা ব্যাপারেও আমার ভীষণ অবাক লাগছে। ডাক্তার আর রবার্ট এতক্ষণ কি কথা বলছে ফোনে? তুমি বেরোনোর পর তো দরজাটা একটু ফাঁক করাই রয়েছে দেখছি। তাহলে ফোনে কথা বললে তো বাইরে আওয়াজ আসা উচিৎ , ওরা কি বাথরুমের মধ্যে ঢুকে কথা বলছে নাকি? পুরো বিষয়টাই আমার কিরকম যেন গোলমেলে মনে হচ্ছে। আমি নিজের চোখে একবার দেখে আসি, তা না হলে মনে শান্তি পাচ্ছিনা।" এই বলে এক পা এগোতে গিয়েই দুম করে মাটির উপর পড়ে গেলো রজত।
★★★★
ওকে দেখে আমার মনে হলো, ওর হয়তো মাথাটা ঘুরে গিয়েছে। পড়ার সময় রজতের মাথাটা সোফার হাতলে ঠুকে গিয়েছিলো। দেখলাম কপালের পাশটা ফেটে গিয়ে ওখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। "আমার মাথার ভেতরটা এরকম ঝিমঝিম করছে কেনো? ওফফফ, চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই উঠতে পারছিনা। এ কি, রক্ত? সোনা দেখেছো, আমার মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। হিন্দি সিনেমায় যেরকম দেখি ভালোবাসার মানুষের রক্ত বেরোলে নিজের শাড়ির আঁচল ছিড়ে নায়িকারা সেখানে পট্টি বেঁধে দেয়। তুমি সেরকম কিছু করবে না সোনা? আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে আঙুরটা খাওয়ার পর থেকেই আমার শরীরের ভেতর এইরকম হচ্ছে। সব কিছু বুঝতে পারছি, দেখতে পাচ্ছি, কথা বলতে পারছি, কিন্তু হাত-পায়ের জোর ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। আচ্ছা, তুমিও তো আঙুরটা খেয়েছিলে; তোমার সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না?" সোফার হাতল ধরে ওঠার চেষ্টা জারি রেখে কপালের ফেটে যাওয়ার স্থানে হাত বুলোতে বুলোতে নন্দনার উদ্দেশ্যে ব্যাকুলভাবে কথাগুলো বললো রজত।
"না গো, আমি মোটেও আঙুরটা খাইনি, মানে আমার দাঁতে কাটিনি। শুধু দাঁতের পাটি দিয়ে চেপে ধরেছিলাম ওটাকে। একবার যদি ভুল করেও দাঁত দিয়ে কামড়ে দিতাম ওটাকে, তাহলে তোমার মতোই অবস্থা হতো আমার। তাই দেখলে না, তোমার মুখে আঙুরটা দিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিভটা বের করে নিলাম। তার কারণ তুমি যদি সেই সময় আঙুরে একটা কামড় দিতে, আর সেখান থেকে যদি রস বেরোতো, তাহলে আমার দফারফা হয়ে যেত এতক্ষণে। তুমি অনেক শক্তিশালী বলে এখনো টিকে রয়েছো। আমি তো আর তোমার মতো অত স্ট্রং নই, ওই আঙুরের রস পেটে গেলে এতক্ষণে আমার ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যেতো।" স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় রজতের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"মানে, এসব কি বলছো তুমি? কি ছিলো আঙুরের মধ্যে?" উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো রজত।
- "কিউরারি .."
- "ম..মানে ..ক..কি বলছো তুমি?"
"বাবা, তোমার সব বিষয়ে এত জ্ঞান! এত খবর রাখো তুমি! আর এইটুকু বুঝতে পারলে না? তোমাকে দেওয়া আঙুরটার মধ্যে কিউরারি বিষ ইনজেক্ট করা হয়েছিলো। তবে শুধু ওই আঙুরটার মধ্যে নয়, ছায়া আমাকে যে আঙুরের গোছাটা এনে দিয়েছিলো সবগুলোর মধ্যেই বিষ ছিলো, মানে আছে। আমি তো জানতাম তুমি সহজ মানুষ নও, তাই আমার হাত থেকে ভালো মানুষের মতো দুধ খেতে চাইবে না তুমি। সেজন্যই এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। হ্যাঁ তোমার মাথায় আমি আমার শাড়ি ছিঁড়ে পট্টি বেঁধে দিতেই পারতাম, কিন্তু দেবো না। ওটা দিলেও যা, না দিলেও তাই। কারণ রক্ত বন্ধ হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে তোমার মৃত্যুর কোনো যোগ থাকবে না তো! আর একটুখানি সময় যেতে দাও, তোমার রক্তের সঙ্গে বিষটা পুরোপুরি মিশে গেলেই আসল কষ্টটা টের পাবে তুমি। এখন কি রকম ফিল করছো তুমি? মানে, যন্ত্রণা কি আগের থেকে বেড়েছে, নাকি একই আছে?" মাটিতে বসে ছটফট করতে থাকা রজতের ঠিক সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে খুব স্বাভাবিকভাবে, অথচ দৃঢ়কন্ঠে কথাগুলো বললো নন্দনা।
"কি নিষ্ঠুর তুমি! কত স্বাভাবিকভাবে এই সাংঘাতিক কথাগুলো বলছো! ইউসুফ আর হার্জিন্দার এখনো ফিরছে না কেনো, কি হলো ওদের? রবার্ট? প্রমোদ? তোমরা কোথায়? এই মেয়েটা মেরে ফেলছে আমায়, আমাকে বাঁচাও তোমরা। আহ্ , ও মাগো .. ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে আমার, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, হাত-পা গুলো কিরকম যেন শিথিল হয়ে আসছে। মাথাটা ক্রমশ ভারী লাগছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। দম বন্ধ হয়ে আসছে গো .. শ্বাসকষ্ট হচ্ছে আমার। একটু, জল দেবে আমাকে প্লিজ তোমরা। দয়া করো আমায়, একটু জল দাও।" চোখের সামনে দেখতে পেলাম, এই কথাগুলো বলতে বলতে বসা অবস্থা থেকে মাটিতে শুয়ে পড়ে কাটা ছাগলের মতো ছটফট করতে লাগলো রজত। চোখগুলো ক্রমশ বিস্ফোরিত হতে হতে কপালের উপর উঠে যাচ্ছে ওর। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে আরম্ভ করে দিলো।
"আমি নিষ্ঠুর? আর তোমরা? তোমরা কি? তোমাদের মতো চরিত্রহীন, লম্পট, নারীমাংস লোভী, নরকের কীটদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ভবিষ্যতে আমাদের মতো শয়ে শয়ে হাজার হাজার নন্দনা যাতে নট আউট থেকে যায় চিরকাল, সেজন্য তোমাদেরকে তো আউট করতেই হবে! তোমার বন্ধুরা কেউ আসবে না গো, তোমাকে বাঁচাতে। ইউসুফ আর হার্জিন্দার এতক্ষণে সমুদ্রের জলের স্রোতে ভাসতে ভাসতে কোথায় পৌঁছে গিয়েছে তার খবর কেউ জানে না। যদি কোনোদিন ওদের বডি পাওয়াও যায়, সেটা বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের লোকেরা বুঝে নেবে। এবার এই কথাটা আমি কেনো বললাম, এত বিশ্লেষণ তোমাকে এখন করতে পারবো না। কারণ তোমার হাতে বেশি সময়ও নেই, সব শোনার। নরকে গিয়ে ওদের কাছ থেকে জেনে নিও। আর রইলো তোমার বাকি দুই বন্ধু রবার্ট আর ওই ডাক্তার প্রমোদ। ওদের অবস্থা তোমার মতোই হয়েছে। মানে তুমি একটু পরে যেভাবে মারা যাবে, ওরা একটু আগে সেভাবেই মারা গেছে। শুধু তফাৎটা হলো ওদের শরীরে বিষটা দুধের মধ্যে দিয়ে ঢুকেছে, আর তোমারটা আঙুরের মধ্য দিয়ে। তবে একটা কথা এখন থেকে বলে দিচ্ছি, পরে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবে না। তোমাদের সৎকার-টৎকার করতে পারবো না বাপু। ওই দুটো যেরকম জলে ভেসে গেছে, তোমাদের এই তিনটে বডিকেও জলে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। তোমাদের মৃতদেহগুলোও যদি কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যায়, মাছেরা খুবলে খুবলে খেয়ে তোমাদের শরীরের যা অবস্থা করবে, তাতে মৃত্যুর কারণ অজানাই থেকে যাবে। কপাল ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে আমার কাজটা আরো সহজ করে দিয়েছো তুমি। পুরো কঙ্কাল বানিয়ে ফেলবে গো তোমাদের তিনজনের শরীরটাকে মানুষখেকো মাছগুলো।" উচ্চকণ্ঠে হেসে কথাগুলো বলে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালো নন্দনা।
দেখলাম ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে দুই হাত পা ছড়িয়ে মাটিতে পড়ে রয়েছে ও। মুখ দিয়ে অবিরত গ্যাঁজলা বেরিয়ে চলেছে, নিষ্কলক চোখদুটো সিলিংয়ের দিকে চেয়ে রয়েছে। সম্ভবত মারা গেছে রজত।
★★★★
"আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এখানে যা যা ঘটে চলেছে, এবং এই ঘটনাগুলোর সাক্ষী হিসেবে থেকে তোমরা যে ভীষণভাবে বিপর্যস্ত এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েছো সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি। তোমরা আমাকে কিছু প্রশ্ন করার আগে, তাই আমি কয়েকটা কথা বলছি, মন দিয়ে শুনে নাও। প্রথমে আমাকে বলো এখানে ওই পাঁচজনের সঙ্গে যেটা ঘটেছে সেটাতে কি তোমরা খুশি? কোনোরকম জ্ঞান দেওয়ার বা ভনিতা করার চেষ্টা করবে না। আমাদের হাতে সময় খুব কম, তাই 'হ্যাঁ' বা 'না' তে উত্তর দেবে।
সৈকত থেকে শুরু করে শান্তিরঞ্জন, ঝুমা থেকে শুরু করে আমি .. আমরা চারজনেই সমস্বরে "হ্যাঁ" বলে উঠলাম।
"এবার তোর বরকে ফোন করে ডাক .." ছায়ার দিকে তাকিয়ে বললো নন্দনা।
ছায়া নিজের ফোন থেকে কাউকে একটা ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম। একটা ছয় ফুটের কাছাকাছি লম্বা, বিশাল পেশীবহুল চেহারার অধিকারী, কুচকুচে কালো অল্পবয়সী এক যুবক এসে বাড়িতে ঢুকলো। ওকে দেখেই নন্দনা বলে উঠলো, "মুন্না তুমি একটা কাজ করো, তোমার বউয়ের কাছে যে ব্যাগটা আছে, ওই ব্যাগে দেখো গ্লোভস রাখা রয়েছে। ওগুলো দুই হাতে পড়ে নিয়ে তোমার সঙ্গে যেরকম কথা হয়েছিলো, ঠিক সেরকম ভাবেই তিনটে বডির ঠিকানা লাগিয়ে দিও। আর হ্যাঁ শোনো, দুটো কাঁচের গ্লাস আছে দেখবে, ওই দুটো কিন্তু বডির সঙ্গে ফেলে দিও। আর একটা আঙুরের গোছা রয়েছে, সেটাকেও ওদের সঙ্গে দিয়ে দিও। ছায়া তোমাকে সব দেখিয়ে দেবে। গাড়ি এনেছো তো সঙ্গে করে?"
"এই ছেলেটার সঙ্গে কাল রাতে সমুদ্র সৈকতে আমার দেখা হয়েছিলো। এ ছায়ার বর? কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে দু'জনের বয়সের প্রচুর ডিফারেন্স। মানে, ছায়া এর থেকে বয়সে অনেক বড়।" আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে কথাগুলো বললো শান্তিরঞ্জন।
"আজ্ঞে হ্যাঁ দিদি, গাড়ি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আপনারা তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বসুন, আমি আসছি। আপনাদের স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আমি আবার ফিরে আসবো এখানে। আমি আর ছায়া আছি তো, এদিকের পুরোটা সামলে নেবো। এমনিতে জায়গাটা জনশূন্য, তবে এখন কিছু করলে চলবে না, ধরা পড়ে যেতে পারি। কাজটা মাঝরাতে করতে হবে। রাত দশটায় ট্রেন, ওটা মিস করলে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবেন।" খুব স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলে ছায়ার দিকে ইশারা করে ওকে নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো ছেলেটা।
এখানে কি হচ্ছে? এই ছেলেটা আবার কোত্থেকে এলো? এদের সঙ্গে নন্দনার যোগাযোগটাই বা হলো কি করে? কিছুই মাথায় ঢুকলো না আমার। ধীরপায়ে নন্দনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ওকে স্পর্শ করতেও ভয় করছিলো আমার, এই রূপ তো আমার স্ত্রীর আমি আগে কখনো দেখিনি! মৃদুস্বরে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, "আমার না অনেক প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো কি এখন .."
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে নন্দনা বললো, "সাড়ে আটটা বাজে। এখান থেকে রূপনগর স্টেশনে গাড়িতে যেতে এক ঘন্টা লাগে শুনলাম। দশ থেকে পনেরো মিনিটের মধ্যে বেরোতে না পারলে আমাদের কপালে কিন্তু দুঃখ আছে।" তারপর হনহন করে ঘরের ভেতর ঢুকে গিয়ে সেখান থেকে ঘুমন্ত বাপ্পা আর সাগর দু'জনকেই কোলে করে নিয়ে বেরিয়ে এলো নন্দনা। "আমি তো এই দু'জনকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবো। এবার আমার সঙ্গে যে আসতে চাও তাকে পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে এসে আমার সঙ্গে বাইরে গাড়িতে এসে বসো আর যে আসতে চাও না, এখানে থেকে মরো। খেয়াল থাকে যেন এখানে কেউ নিজের কোনো জিনিস ফেলে যাবে না। আর কেউ যদি মনে করে থাকো এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের মুখ খুলবে, তাহলে কিন্তু সে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবে। কারণ ঘটনাগুলো ঘটার সময় তোমরা সকলে এখানে উপস্থিত ছিলে, তাই ধরে নেওয়া হবে তোমাদের সকলের সম্মতিতেই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে।" প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে কথাগুলো বলে বাপ্পা আর সাগরকে নিয়ে বাড়ি থেকে গটগট করে বেরিয়ে গেলো নন্দনা।
জিনিসপত্র বলতে সবার সবকিছুই নিজেদের সঙ্গে আনা ব্যাগের মধ্যে ছিলো, একমাত্র টুথব্রাশ আর টুথপেস্ট ছাড়া। ওগুলো বাথরুম থেকে বের করে নিয়ে যে যার ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলাম। তারপর বিনা বাক্যব্যয়ে, বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বাইরে অপেক্ষারত গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আমরা বসার সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারের সিটে এসে বসলো ছায়ার বর মুন্না। গাড়িতে যাওয়ার সময় দেখলাম ওই এলাকার প্রায় এক কিলোমিটারছর মধ্যে লোকজন তো দুরস্থান, কোনো ঘর বাড়িও নেই।
অতঃপর পৌনে দশটা নাগাদ রূপনগর স্টেশনে এসে পৌঁছলাম আমরা। আমাদের স্টেশনে পৌঁছে দিয়েই গাড়ি নিয়ে ফিরে গেলো মুন্না। আসার সময় লক্ষ্য না করলেও, গাড়িটা যখন আমাদের দিকে পিছন করে ঘুরে বেরিয়ে গেল তখন দেখলাম গাড়ির পেছনে লেখা রয়েছে 'রূপনগর বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প'।
দশটা বেজে পাঁচ মিনিট নাগাদ আমাদের ট্রেন এলো। গাড়িতে আসতে আসতেই বাপ্পার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো বাপ্পার, তার সঙ্গে সাগরেরও। "আমরা এত রাতে কেনো ফিরছি? আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে, পেচ্ছাপ করবো, জল খাবো .." ঘুম ভেঙেই এইসব বলতে শুরু করে দিয়েছিলো বাপ্পা। সেই সন্ধ্যেবেলা চায়ের সঙ্গে কয়েকটা চিকেন পকোড়া খাবার পর এখনো পর্যন্ত পেটে কিছুই পড়েনি আমার। যথেষ্ট খিদে পেয়েছিলো, তাই বাপ্পার কষ্টটাও বুঝতে পারলাম। কিন্তু জীবনের থেকে তো খিদের দাম বেশি নয় .. একবেলা না খেলে মানুষ মরেও যায় না। ট্রেন যখন লিলুয়া স্টেশনে থামলো, তখন রাত বারোটা। বাপ্পা আর সাগর তখন ঘুমিয়ে কাদা। আজ আমার ভায়রাভাইয়ের বাড়িতেই থেকে যেতে হবে আমাদের। মানে নন্দনাই সেটা চেয়েছে। এখন তো কর্ত্রীর ইচ্ছেতেই কর্ম! আগামীকাল সকালে আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~