Thread Rating:
  • 40 Vote(s) - 2.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance স্মৃতি সুন্দরী
#97
২.৪
পূজার কেনাকাটার পরের দিন রাতে ঘুমানোর আগে অন্ধকার ঘরে খাটের উপর দিব্যা বিক্রমকে জড়িয়ে ধরে আবদার করে বললো , “ আমার না খুব মায়ের সাথে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে । „

চার মাসের বেশি হলো দিব্যা এখন অন্তঃসত্ত্বা। বিক্রমকে জড়িয়ে ধরার কারনে বিক্রম দিব্যার অন্তঃসত্ত্বার প্রমাণ অনুভব করলো । কিন্তু দিব্যার এহেন লোক দেখানো আদিখ্যেতার কারণ বুঝতে পারলো না । তাই সে জিজ্ঞেস না করে পারলো না , “ হঠাৎ এরকম মনে হওয়ার কারণ ? „

দিব্যা বুঝতে পারলো তার স্বামীর সন্দেহের কারন । তার আর বিদ্যার সম্পর্ক যে স্বাভাবিক সুস্থ নয় তা যে কেউ লক্ষ্য করবে । তাই দিব্যা আসল কথাটাই পারলো , “ আসলে আমি চাই মা তীর্থঙ্কর কাকাকে বিয়ে করুক । নতুন সংসার করুক । তাই মাকে রাজি করানো দরকার । তাই ...

বিক্রম আর কিছু বললো না । বাঁধাও দিল না । সে বুঝতে পারছে দিব্যা চিরতরে তার মাকে নিজের থেকে দূরে সরাতে চাইছে । বিক্রমের মন বিদ্যার দ্বিতীয় বিয়েতে সায় দিতে রাজি নয় ‌। কথায় আছে ছোট পরিবার সুখী পরিবার। কিন্তু কথাটা যত ছোট পরিবার তত সুখী পরিবার নয় । বিক্রম এতদিনে বুঝতে পেরেছে একটা পরিবার তখনই সুখী যখন সেখানে বিক্রমের মত স্বামী , দিব্যার মত স্ত্রী ,  বিদ্যার মত দায়িত্বশীলা গুরুজন , আর এক দুই জন কলেজে পড়া শিশু কিংবা কিশোর থাকে । কিন্তু বিদ্যা বিয়ে করলে বিক্রমের এই পরিবার গঠন হবেনা । অসম্পূর্ণ থেকে যাবে ।

এত কিছু ভাবনার পর বিক্রমের অন্তরের এক পবিত্র সত্ত্বা বিক্রম কে ধিক্কার দিল । তার অন্তর বললো --- কেন নিজেকে মিথ্যা বলছিস ? কাল্পনিক ছোট সুখী পরিবারের মিথ্যা আশ্রয়ে নিজের মনের নোংরা ইচ্ছাটাকে কেন প্রতিস্থাপন করতে চাইছিস ? তুই তো চাসনা বিদ্যা বিয়ে করে তোর কাছ থেকে দূরে চলে যাক । দূরে চলে গেলে তো তুইতো আর তোর স্মৃতিসুন্দরীকে দেখতে পাবি না । এত বছর পর যাকে খুঁজে পেয়েছিস তাকে আর হারাতে চাসনা । নিজের চোখের সামনে রাখতে চাস । এটাই তোর ইচ্ছে।

এরপর এক সপ্তাহ কেটে গেছে বিক্রম এখন গেস্টরুমে একাই ঘুমায় । বিদ্যা এবং দিব্যা ঘুমায় রান্নাঘরের পাশের ঘরে । দিব্যা ছাদে ওঠেনি , বিদ্যা ছাদ থেকে নেমে এসেছে । সারাটাজীবন একটা সরু খাটে একা ঘুমিয়ে অভ্যাস বিক্রমের । কিন্তু গত চার মাসে দিব্যার সাথে সহবাস করে সেই অভ্যাসটা আর নেই । এখন কাউকে না জড়িয়ে ধরে ঘুমালে আর ভালো লাগে না বিক্রমের ।

দিব্যাকে জড়িয়ে ঘুমালে ঘুমটাও খুব শীঘ্রই চলে আসতো কিন্তু এখন পাশবালিশ জড়িয়ে ঘুমালেও ঘুম আসতে চায় না । দিব্যার নরম শরীরের অভাব এই কোলবালিশ মেটাতে পারে না । দিব্যার শরীরের এবং চুলের মিষ্টি মনমাতানো সুবাস নাকে আসতেই স্বপ্নের জগতে পাড়ি দিতে বিন্দুমাত্র সময় লাগতো না বিক্রমের । তাই সে বারবার এপাশ ওপাশ করছিল । সে দিব্যাকে জিজ্ঞাসা করেনি তার আর মায়ের কথপোকথন কতদূর এগিয়েছে ? বিদ্যা কি আদেও দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি হবে ? এসবের কিছুই বিক্রম জানেনা ।

বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে বিক্রম শবনমের কথা ভাবতে লাগলো । প্রায় দুই দিন হতে চললো শবনম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছে । শবনমের ঘরের পাশের বৌদি বিক্রমকে বলেছে --- গত কাল দুপুরে হঠাৎ প্রসববেদনা শুরু হওয়ায় কাশেম তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়েছে । সৌভাগ্যবশত কাশেম দুপুরে ভাত খেতে আসে । তেমনই সে গত কালও ভাত খেতে এসেছিল । তার অর্ধেক ভাত খাওয়া হয়েছে কি হয়নি তখন শবনমের প্রসববেদনা শুরু হলো । নিজের ট্যাক্সি করেই নিয়ে গেছিল হাসপাতালে।

কিন্তু সে তো গত কাল দুপুরের ঘটনা । এতক্ষনে তো চলে আসার কথা । কিন্তু এখনো কোন খবর পর্যন্ত পাওয়া যায়নি । শবনম ঠিক আছে কিনা ? শবনমের মেয়ে হয়েছে কি ছেলে হয়েছে ? কোন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই বিক্রমের । তাই তার মনটা বড় আনটান করছে ।

বিগত এক মাসে বিক্রমের মনে শবনম একটা আলাদা স্থান দখল করে নিয়েছে । তাই সে ঠিক মত ঘুমাতে পারছে না । বিক্রম মনে মনে ভাবলো , ‘ সবাই সুস্থ থাকলেই ভালো । কালকে একবার হাসপাতালে দেখা করতে গেলে ভালো হয় । কিন্তু কোন সম্পর্কে যাব ? পাড়াতুতো দাদা হিসাবে যাওয়াই যায় । কিন্তু সত্যি কি পাড়াতুতো বা পাতানো দাদা হিসাবে যাওয়া যায় ? ‚ এইসব ভাবতে ভাবতেই বিক্রম গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল ।

এখন বিক্রম রোজ সকালে উঠে প্রথমে বিদ্যার গানের রেওয়াজ শোনে । তারপর ব্রাশ করে বাজার করতে যায় । তারপর ব্রেকফাস্ট করে , বৃষ্টি না হলে দোকানের সামনের রাস্তায় জল ঝিটিয়ে দোকান খোলে । তারপর চায়ের দোকানে গিয়ে একটু খবরের কাগজে চোখ বোলায় । তেমনি আজকেও সে খবরের কাগজ পড়ে এসে বিদ্যার দোকানে বসলো । বিদ্যা নিজের সেলাইয়ের কাজ করছিল । সাড়ে নটার দিকে বিদ্যা বললো , “ শবনমকে একটু দেখে আসবে ? „

বিক্রম যখন দোকানে বসে তখন রাস্তার দিকে মুখ করে বসে । বিদ্যার দিকে মুখ করে থাকলে এই স্বপ্নপুরীর সুন্দরীকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে । সেলাইয়ের কাজ করার সময় বিদ্যা বেশিরভাগ সময় চোখে চশমা পড়ে থাকে । সেইসময় যদি একবার বিদ্যার চশমা পরিহিত চোখে চোখ পড়ে যায় তাহলে বিক্রমের  বুকে এক অদ্ভুত ভালোলাগার ঝড় সৃষ্টি হয় যা বিক্রম চায় না । তাই বিক্রম রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে কিংবা খবরের কাগজ পড়ে । এখন বিদ্যার কথাতে বিক্রম পিছন ঘুরে তাকালো । বিদ্যা বললো , “ আমার খুব যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে । কিন্তু দিব্যাকে একা ফেলে যেতে পারবো না । তুমি একবার দেখে আসবে !? „

বিক্রম ভাবলো ‘ হ্যাঁ এটাই তো স্বাভাবিক। শবনম যতোটা না বিক্রমের হৃদয়ে জুড়ে আছে তার থেকে অনেক বেশি স্থান বিদ্যার হৃদয় জুড়ে আছে । তাই শবনমের জন্য তার থেকেও বেশি বিদ্যার চিন্তা হওয়ার কথা । যা সে হচ্ছে । ‚

বিক্রম যেন এই রকম এক অনুমতিরই অপেক্ষা করছিল । সেও তো শবনমকে দেখতে যেতে চায় । এখন বিদ্যার অনুরোধ যেন তার ইচ্ছাকে সুপ্রিম কোর্টের সিলমোহর দিল। বিক্রম বললো , “ আমিও ভাবছিলাম একবার গেলে ভালো হয় । কিন্তু কোন সম্পর্কে যাব সেটাই ভাবছিলাম। „

এই প্রশ্নে বিদ্যা নিজেও গুম মেরে গেল । একটা ছোট চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার কাপড়ে কেঁচি চালাতে লাগলো । বিদ্যার মুখটা দেখে বিক্রমের বড্ড মায়া হলো । সে বললো , “ না যাই। এসব ভেবে লাভ নেই । যা হওয়ার হবে । „ বলে দোকানের পিছনের দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতর চলে গেল ।

বিক্রমের কথা শুনে বিদ্যা একটু শান্তির নিশ্বাস নিল ।

একটা ফুল হাতা জামা আর জিন্স প্যান্ট পড়ে বিক্রম রওনা দিল হাসপাতালের দিকে। ধর্মতলা থেকে একটা বাসে চেপে বসলো। খুব শীঘ্রই বাস হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়ালো। বিক্রম বাস থেকে নেমে হাসপাতালে ঢুকলো তারপর দুই তিন জন কর্মী এবং নার্সকে জিজ্ঞেস করার পর একটা হল ঘরের মত লম্বা ঘরে ঢুকলো । সেখানে সারি সারি পরপর বেড সাজানো । বিক্রম এক নার্সকে জিজ্ঞেস করার পর শবনমের বেডের সামনে দাঁড়াতেই বিক্রম দেখতে পেল শবনম অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে আছে । আর তার পাশে সদ্য জন্মানো সন্তান শুয়ে আছে । শবনমের সন্তান ঘুমাচ্ছে। কি সুন্দর ছোট্ট লালিমা মাখা মুখটা । বিক্রম মুখ দেখেই বুঝতে পারলো এটা মেয়ে । শবনমের মতোই দেখতে হয়েছে । গায়ের রঙটাও মায়ের মতো ।

বেডের পাশে একজনের উপস্থিতি অনুভব হতেই শবনম ফিরে তাকালো আর তাকিয়েই কেঁদে ফেললো ।

দুই চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রুধারা বইয়ে শবনম বললো , “ দাদা লোকটা আমায় একে ফেলে চলে গেল । আল আসেনি । আমাল মেয়ে হয়েছে বলে আমায় ঘলে ঢুকতে দেবে না বলেছে । তুমি না আসলে আমায় আব্বু কে ফোন কলতে হতো । „

বিক্রম শবনমের কথাতে সবকিছুই বুঝতে পারলো । কিন্তু হাসপাতালের ভিতরে এইসব কথা শুনতে বিক্রমের একদম ভালো লাগছিল না । শবনমের কান্নার জন্য ঘরের বাকি সদস্যারাও শবনমের দিকে তাকিয়ে দেখছিল । বিক্রম বললো , “ ঠিক আছে । এখন এসব থাক । তুই বাড়ি চল । „

হসপিটালের কাজ শেষ করে শবনমকে নিয়ে বেরিয়ে এল বিক্রম । বিক্রম কোলে শুয়ে আছে শবনমের মেয়ে । বিক্রম এই প্রথম কোন সদ্যজাত সন্তানকে কোলে নিল । কোলে নেওয়ার পর বুকটা পিতৃ হৃদয়ের ভালোবাসায় ভরে উঠলো । এ সন্তান তার নয় । কিন্তু খুব শীঘ্রই তার সন্তান আসবে । এখন যদি শবমনের সন্তানকে কোলে নিতেই বুকটা ভোরে ওঠে তাহলে দিব্যার প্রসবের পর তার নিজের সন্তানের মুখ দেখে কতোটা ভালোলাগবে তা বিক্রমের ভাবনার বাইরে ।

শবনম আস্তে আস্তে হাঁটছে। শবনমের অবস্থা দেখে হাসপাতালের বাইরে এসে বাস ধরার থেকে ট্যাক্সি ধরাটাকেই সমীচিন বলে মনে করলো বিক্রম ।

ট্যাক্সিতে উঠে শবনম সব বলতে শুরু করতেই শবনমের মেয়ে কেঁদে উঠলো । শবনম বিক্রমের পাশে বসেই আঁচলের তলায় নিয়ে তার মেয়েকে বুকের দুধ খাওয়াতে লাগলো । বিক্রম লজ্জায় সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো ।

বিক্রম সবকিছু শুনলো । গতপরশু রাতে শবনমের নর্মাল ডেলিভারি হয়েছিল । শবনমের স্বামী কাশেম তখন ওখানেই উপস্থিত ছিল । মেয়ে হয়েছে খবর শুনে কাশেমের মুখে হাসি ফোটেনি। তারপরেই সে শবনমকে একা ফেলে চলে গেছে । গতকালকেই শবনমকে ডিসচার্জ করে দেওয়ার কথা ছিল । কিন্তু বাড়ির লোক অনুপস্থিত বলে সেটা সম্ভব হয়নি । হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ও বুঝতে পেরেছিল ব্যাপারটা। তাদের কাছে এটা রোজকার ঘটনা । শবনম গতকাল সারাদিন এবং রাত কাশেমের জন্য অপেক্ষা করেছে । কেঁদে কেটে একসা হয়েছে কিন্তু কাশেম আসেনি । কাশেমকে যে ফোন করবে সেই ফোনটাও তো শবনমের কাছে নেই । তাই আজ সকালে যদি বিক্রম গিয়ে উপস্থিত না হতো তাহলে শবনমের বাপের বাড়ি থেকেই কাউকে ডাকতে হতো । সবকিছু শুনে বিক্রম পাথর হয়ে গেল । রাগে ফুঁসতে লাগলো । মানুষের অনেক ঘটনার মধ্যে দিয়ে তার অমানুষিকতার পরিচয় পেয়েছে এবং সাক্ষীও হয়েছে । আজ তার অভিজ্ঞতাতে আর একটা খারাপ নোংরা ঘটনার স্মৃতি জমা হলো ।

ট্যাক্সি করে তারা এসে থামলো বিদ্যার দোকানের সামনে । ট্যাক্সি থেকে বিক্রমকে নেমে আসতে দেখে বিদ্যা দোকানের বাইরে এসে দাঁড়ালো। বিদ্যা শবনমের কোলে থেকে তার মেয়েকে নিজের কোলে নিয়ে শবনমকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করলো । বিক্রম ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিতে ট্যাক্সিটা চলে গেল । বিদ্যা শবনমের মেয়েকে কোলে নিলে বললো , “ খুব সুন্দর দেখতে হয়েছে । একেবারে তোর মত । কি নাম রাখবি ভেবেছিস ? „

বিদ্যার কথাতে বিক্রম শবনম দুজনের মুখেই হাসি কিংবা খুশির কোন আভাস নেই । তার প্রশ্নের ও কোন উত্তর শবনম দিলনা । বিদ্যা জিজ্ঞেস করলো , “ কি হয়েছে ? „

তিন জন দোকানে উঠে এসে বসলো । তারপর বিক্রম বিদ্যাকে সব খুলে বললো । বিক্রমের মুখে কাশেমের অমানুষিকতার কথা শুনে বিদ্যার শরীর রাগে ঘৃণায় রি রি করে জ্বলতে লাগলো । তার মুখ ফুটে বেরিয়ে এলো , “ মানুষ এরকমও করতে পারে ? „

বিদ্যাকে সব কথা বলতে বলতে শবনম কাঁদছিল এখন চোখের জল মুছে বললো , “ আমি কি মেয়ে জন্ম দিয়ে কোন ভুল কলেছি দিদি ? „

শবনমের এই কথায় বিদ্যা বাকরুদ্ধ পাথর হয়ে বসে রইলো । সে কি বলবে কিছুই ভেবে পেল না । শবনম কাঁদতে কাঁদতে বললো , “ আমি এখন কোথায় যাব দিদি ? ও বলেছে ঘলে ঢুকবি না । ঢুকলে ঘল থেকে বাল কলে দেবে । „

বিক্রম বললো , “ আমি বোঝাবো না হয় । তুই এখন ঘরে চল । „

বিক্রমের কথাতে শবনম আস্বস্ত হলো । তিন জন কাঠগোলাপ গাছ পেড়িয়ে গলি দিয়ে ঢুকে শবনমের বাড়িতে এলো । শবনমকে বিদ্যা কোন রান্না কিংবা অন্য কাজবাজ করতে দিলনা । দুপুরের খাবার বিদ্যার বাড়ি থেকেই এল । বিদ্যা চলে গেলেও বিক্রম এক মুহুর্তও শবনমকে একা ফেলে কোথাও গেল না । সারাদিন শবনম এই ভয় পেল যে যদি কাশেম তাকে তাড়িয়ে দেয় তাহলে এই মেয়েকে নিয়ে সে কোথায় উঠবে ? বিক্রমের বুকে কোন ভয় নেই । সে খুন হতে দেখেছে । তার আবার কিসের ভয় ? সে এটাই ভাবতে লাগলো যে কাশেমকে কিভাবে বোঝাবে ?

বিকালে যখন কাশেম বাড়ি ফিরলো তখন বিক্রমের সাথে বিদ্যাও শবনমের বাড়িতেই ছিল । বিদ্যা আজ দোকান খুলবে না ভেবেই এখানে এসেছিল । কাশেম এসে শবনমকে দেখেই বললো , “ তুই আমার বাড়িতে ওকে নিয়ে ঢোকার সাহস পেলি কোথা থেকে ? তোকে বলেছিলাম না ! হয় ওকে ফেলে আসবি না হলে আসবি না । „

বিক্রম কাশেমকে থামিয়ে বলতে শুরু করলো , “ দেখো , শবনমকে আমি নিজের বোন হিসেবে দেখি । তাই ওর বা ওর মেয়ের কোন ক্ষতি হোক সেটা আমি চাই না । „

কাশেম তীব্র বিরক্ত হয়ে বললো , “ যখন নিজের বোন ভাবো তখন নিজের বাড়িতেই ওকে তুললে হয় । „

বিক্রম শান্ত স্বরে নিজের ধৈর্য্যচুতি না ঘটিয়ে বললো , “ হ্যাঁ। এটাই বলছি । তুমি ওকে তাড়িয়ে দিলে ও আমার বাড়িতে গিয়ে থাকবে । ওর কোন অসুবিধা হবে না । কিন্তু একটা মেয়ে তার বাবাকে হারাবে । অনাথের মত জীবনযাপন করবে । আর একজন অনাথের যে বেঁচে থাকতে কত কষ্ট সেটা আমি ছাড়া আর কে ভালো বলতে পারবে ? আবাসিক থেকে বার হয়ে একা একা কাজ করেছি রেধেছি খেয়েছি ঘুমিয়েছি । শরীর খারাপ হলে কেউ দেখার ছিল না । বেঁচে আছি কি মরে আছি সেটা দেখার কেউ ছিল না । ভালো আছি কি না সেটা জিজ্ঞাসা করার মত কেউ ছিল না ....

কাশেম বিরক্ত হয়ে বললো , “ থামুন থামুন , আপনার অতীত শোনার ইচ্ছা আমার নেই । ওকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যান । „

বিক্রমের ইচ্ছা করছিল লোকটাকে আচ্ছা করে ধোলাই দিই । কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো , “ দেখো তুমি ভাগ্যবান যে তোমার একজন রক্তের সম্পর্কের কেউ আছে । কয়েক মাসের মধ্যে আমারও এক সন্তান হবে । সে ছেলে হবে কি মেয়ে হবে সেটা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই । শুধু একটা কথা ভেবে খুব আনন্দ হয় যে আমার রক্তের সম্পর্কের একজন এই পৃথিবীতে জন্ম নেবে । আমি তাকে সমস্ত সুখ দেব । কোন কিছুর অভাব হতে দেবো না কখনো । তার সমস্ত সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের দায়িত্ব নেব আমি । „

বিক্রমের কথাগুলো শুনে বিদ্যা নিজের বুকে একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলো । এই কথা গুলো বিক্রমের মুখে সে আগেও শুনেছে । কিন্তু বারবার শুনতে চায়না । শোনা যায়না ।

বিক্রমের মুখে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনে কাশেম বিরক্ত হলেও , রেগে গেলেও শবনম কেঁদে ফেললো । আর বিদ্যার চোখ চিকচিক করে উঠলো । বিক্রম কাশেমের বিরক্তির তোয়াক্কা না করে বললো , “ দেখো তোমার সমস্যাটা হলো বড় হয়ে ও অপরের বাড়ি চলে যাবে । তাহলে ওকে পুষে কি লাভ ? ওর বিয়েতে যে খরচা হবে সেটা নিয়ে ভাবছো তুমি । তাইতো ? আমি এমন অনেক পরিবার দেখেছি যেখানে একটা মেয়েই তার বাবা মায়ের ভরসা । আর কোন ভাইবোন নেই তাই তাকেই পরিবারের খরচা চালাতে হয় । রোজ বাসের ধাক্কা গুঁতোগুঁতি সহ্য করে কাজ করতে যেতে হয় । তাকে আধপেটা খেয়ে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে দেখেছি আমি । তুমি তোমার মেয়েকে পড়াও , ভালোবাসা স্নেহ মমতা দিয়ে বড়ো করো । দেখবে একদিন এই মেয়েই তোমাদের দায়িত্ব নেবে । এবার তুমি বলো আমি কি শবনমকে আমার সাথে নিয়ে চলে যাব নাকি তুমি রাখবে নিজের মেয়েকে । „

কাশেম কিছু বললো না । কিন্তু বিক্রম কাশেমের এই নিঃশ্চুপতার সুযোগে মোক্ষম কথাটা বললো , “ আমি নিয়ে গেলে আমার কোন অসুবিধা হবে না । কিন্তু তুমি আল্লার দেওয়া উপহার কে লাথি মারবে । এটাই কি চাও তুমি ? „

এই কথা শুনে কাশেমের ভ্রুকুটি খুলে গেল । কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল । আর মাথাটা নিচু হয়ে গেল । সে কিছু বললো না । কাশেমের কিছু বলার দরকারও ছিল না বিক্রমের যা বোঝার সে বুঝে গেল । বিক্রম বুঝতে পারলো তার আগের কথা গুলোতে কাশেমের মন পরিবর্তন হয়নি । বরং শেষের কথাতে সে কিছুটা ভয় পেয়েছে । বিক্রম খাটে শুয়ে থাকা শবনমের উদ্দেশ্যে বললো , “ আমি আসছি । সাবধানে থাকিস । মাঝে মাঝে এসে দেখে যাব। „

শবনম কিছু বলতে পারল না । গলায় কিছু শক্ত একটা দলা পাকানো অনুভব করলো । শবনমের বাড়ি থেকে বার হয়ে বিদ্যা আর বিক্রম সরু গলি দিয়ে হাঁটতে লাগলো । বিক্রম আগে আগে আর বিদ্যা তার পিছনে । বিদ্যার বুকে এখনো সেই চিনচিনে ব্যাথাটা আছে । কিছুক্ষন আগে যখন বিক্রম কাশেমকে বোঝাচ্ছিল তখন বিক্রম বলেছিল -- তার একটা পরিবার আছে , একজন স্ত্রী আছে , খুব শীঘ্রই এক সন্তানের বাবা হবে সে । কিন্তু এই কথাগুলোয় বিদ্যার কথা বিক্রম একবারও বলেনি । বিদ্যা বিক্রমের ছোট পরিবারে অনুপস্থিত ছিল । তাহলে কি বিক্রম বিদ্যাকে নিজের পরিবারের অংশ বলে মনে করে না । নাকি তার মেয়ের মতো বিক্রমও চায় যে সে আবার বিয়ে করুক ।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বিদ্যার আর একটা কথা মনে হলো আমি কি তীর্থঙ্করের বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করবো ? নিজের মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বিদ্যা বললো , ‘ না না । এ কি ভাবছি আমি । এই বয়সে কোন ভাবেই আর সম্ভব না । আমি দিব্যার কাছেই থাকবো । উচ্ছিষ্ট হিসাবে রেখে দিলেও থাকবো কিন্তু বিয়ে আর সম্ভব না । „

পরের দিন সকালে বিক্রম একবার দেখা করতে গেল । বাড়ির ভিতর ঢোকার সময়েই শবনম , “ কে ? „ বলে ডাকলো

“ আমি । বিক্রম। „

“ ও দাদা । এসো । „

বিক্রম ঘরের ভিতরে ঢুকে খাটের শবনমের পাশে বসলো । বসতে বসতে বললো , “ কেমন আছিস ? „

“ আমি আমাল মেয়ে দুজনেই খুব ভালো আছি । জানো দাদা কালকে লাতে ও নিজে লান্না কলেছে । এতদিন সংসাল কলছি কিন্তু জানতামই না যে ও এত ভালো লান্না কলতে পালে । „ বলতে বলতে শবনমের চোখ দুটো জ্বলছিল । তার জ্বলন্ত দৃষ্টি বিক্রমের চোখ এড়ালো না । স্বামীকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করার গৌরব তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছে । আশ্চর্যের ব্যাপার হলো গত কাল সকালে হাসপাতালেই সে স্বামীর ব্যাবহারে কাঁদছিল আর আজ সেই স্বামীর রান্না করার গুন জানতে পেরে গর্ব করছে । নারী । ভারতীয় নারী । ভারতীয় নারীর কোন ধর্ম লাগে না । সে নিজেই একটা ধর্ম । তার ভালোবাসা মমতা মাতৃত্ব ত্যাগের কাছে বড় বড় সাধু সন্যাসী দুগ্ধগ্রহনকারী শিশু । আর সেই ভারতীয় নারীর সর্ব গুন শবনমের মধ্যে বিদ্যমান। এই জন্যেই তো এই মেয়েটাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছে বিক্রম এবং বিদ্যা।

“ কি নাম রাখলি তোর মেয়ের ? „

“ কাল লাতে দুজনে অনেক ভেবেছি জানো । ভেবে নুপুল নামটা লেখেছি । „

নামটা বিক্রমের খুব ভালো লাগলো কিন্তু শবনমকে আবার সেই পুরানো হাসিখুশি ইয়ার্কি মারা মেয়ে রুপে পেয়ে বিক্রম তার সাথে ইয়ার্কি মারার সুযোগ হাতছাড়া করলো না । সে ইয়ার্কি করে বললো , “ নুপুল নাকি নুপুর ? কোনটা ?

শবনম আবার সেই আগের মত কপট রাগ করে বললো , “ ধ্যাৎ । „

শবনম নিজের মেয়ের এত ভালো একটা নাম রেখেছে । কিছু দিন পর তাকেও তো রাখতে হবে । যদি মেয়ে হয় তাহলে কি নাম রাখবে আর ছেলে হলেই বা কোন নাম রাখলে ভালো হয় ? এতদিন তার আগত সন্তানের নামকরণ নিয়ে বিক্রম কিছুই ভাবেনি । কিন্তু এখন ভাবতে বাধ্য হলো ।

রোজ বিক্রম নুপুরকে নিয়ে খেলে । এই সুযোগে শবনম গোসল করে নেয় । রান্নাও করে নেয় । এদিকে বিক্রমের ও সময়টা ভালোই কেটে যায়। নুপুর বিক্রমের মুখ চিনে গেছে । বিক্রমের কোলে সে খুব শান্তি নিয়ে ঘুমায় । বিক্রম নুপুরের খেলার মধ্যেই পাড়ায় পূজার প্যান্ডেলের বাঁশ পোঁতা শুরু হলো । কয়েকদিন পর মহালয়া চলে এলো । তারপর পাড়ার প্যান্ডেলের মাইকে ঘনঘন গান বাজা শুরু হলো ।

তৃতীয়ার দিন সকালে বিক্রম নুপুরকে নিয়ে বিদ্যার দোকানে এলো । নুপুর ঘুমাচ্ছে। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তেইশ ঘন্টাই সে ঘুমায় । মানে খিদে পেলেই সে জেগে ওঠে বাকি পুরোটা সময় ঘুমায় । তেমনি এখনো ঘুমাচ্ছে। মাইকে একটা হিন্দি গান বাজছে। নেহা টক্করের গান । বিদ্যা চোখে মুখে তীব্র বিরক্তি ফুটিয়ে তুলে , গলার স্বরেও বিরক্তি ফুটিয়ে তুলে বললো , “ এগুলো আবার কোন গান হলো ? না আছে সুর , না আছে তাল , গানের কোন মানেও নেই । „

বিক্রম এই প্রথম বিদ্যার পছন্দ অপছন্দের কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেল , “ কার গান আপনার ভালো লাগে ? „

“ আমার ফেভারিট হলো লতা মঙ্গেশকর। তবে এখনকার শ্রেয়া ঘোষাল , ইমনের গানও ভালো লাগে । „
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 5 users Like Bichitro's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: স্মৃতি সুন্দরী - by Bichitro - 09-10-2023, 07:00 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)