04-10-2023, 12:31 PM
পর্ব-৮১
একদিন সবে নিজের কেবিনে ঢুকেছি ফোন বেজে উঠলো। ফোন ধরতে ওপাশ থেকে নিকিতা বলল - তোমাকে এখুনি একবার বড় সাহেব দেখা করতে বলেছেন। আমি তড়িঘড়ি কেবিন থেকে বেরিয়ে ওনার অফিসে গেলাম নিকিতা আমাকে দেখেই বললেন - শিগগির ভিতরে যাও তোমার জন্যই বসে আছেন। আমি ভিতরে ঢুকতে উনি বললেন - এসো দাস বসো তোমার সাথে কথা আছে। আমি - বলুন স্যার।
উনি যা বললেন তার অর্থ হচ্ছে আমাকে আজকেই কলকাতা যেতে হবে আর ওখানকার অফিসে কয়েকদিন থাকতে হবে বলে আমাকে বেশ কয়েকটা ফাইল দিলেন। খোদ কলকাতা RBI তে কিছু বেনিয়ম চলছে সে গুলোকে খুঁজে বের করতে হবে আর কারা এর পেছনে আছে জানতে হবে। আমাকে ওখানে গিয়ে গোয়েন্দা গিরি করতে হবে। অফিসিয়ালি আমাকে ডেপুটেশনে পাঠাচ্ছে।
সব শুনে বললাম - ঠিক আছে স্যার আমি তৈরী যাবার জন্য। শুনে বললেন - দেখো দাস তোমার থেকে বেশি ভরসার কোনো মানুষ আমি দেখছিনা তাই তোমাকেই ঠিক করেছি আর শোনো তোমার সাথে তোমার এসিস্ট্যান্টকেও নিয়ে যাও। আর আজকেই যেতে হবে আমি তোমার টিকিটও আমি বানাতে বলে দিয়েছি একটু পরেই সেটা তোমার কাছে পৌঁছে যাবে। জানিনা কাজ শেষ করতে তোমার কত দিন লাগবে তবে আমার বিশ্বাস তোমার মতো মানুষের কাছে আগামী ছ মাসের মধ্যেই কাজটা হয়ে যাবার কথা। শুনে আমি বললাম - আমি চেষ্টা করবো স্যার আর আমার ওপরে আপনার যে বিশ্বাস আছে সেটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করবো। শুনে উনি হেসে বললেন - সে বিশ্বাস আমার আছে আর তাইতো আমি তোমাকেই বেছেছি এই কাজটা পর তোমার একটা বড় প্রমোশন হবে সেটাও তুমি শুনে রাখো।
আমি আর কিছু না বলে ফাইল গুলো নিজেই নিয়ে বেরিয়ে এলাম। নিকিতাকে এখন কিছুই বলা যাবেনা কেননা এই কাজটা খুবই গোপনীয়।
গভর্নরের অফিস থেকে সোজা নিজের কেবিনে ফাইল গুলো ঠিকঠাক গুছিয়ে নিয়ে বিভাসদার কেবিনে গেলাম। ঢুকে দেখি সীতা বিভাসদার সামনে বসে কোনো নোট্ নিচ্ছে। আমি কোনো কথা না বলে একটা চেয়ারে বসলাম। নোট্ নিয়ে সীতা বেরিয়ে যেতে বিভাসদা বললেন - কি ভাই একদম সক্কাল সক্কাল বড় সাহেব কেন ডেকেছিলেন তোমাকে ?
আমি ওনাকে বললাম আমাকে ডেপুটেশনে কলকাতা অফিসে পাঠাচ্ছে এক বছরের জন্য সাথে নিতাকেও নিয়ে যেতে হবে। তবে আমার একটাই চিন্তা নিতাকে কোথায় রাখা যায়। বিভাসদার মুড্ অফ হয়ে গেলো বললেন - বড় সাহেবের মাথায় যে কখন কি আসে জানিনা আমার ডিপার্টমেন্টের কাজ বেশ দ্রুত এগোচ্ছিল কিন্তু তুমি না থাকলে আমি কি করে সামলাবো জানিনা। একটু থেমে জিজ্ঞেস করলেন কবে যেতে বলেছেন তোমাকে ?
আমি - আজকেই যেতে হবে এখুনি টিকিট আর ওর্ডার লেটার চলে আসবে আমার কাছে।
বিভাসদা বললেন - যাও ভাই তোমার কপাল খুলে গেলো তবে একটু যোগাযোগ রেখো এই দাদার সাথে।
আমি শুনে বললাম - আপনার সাথে সব সময় যোগাযোগ থাকবে আমার। আমার কথা শেষ হতেই দরজায় নক করে নীতা ঢুকলো একটা ফাইল নিয়ে আমাকে বলল - স্যার আপনার কেবিনে আপনাকে না দেখে বেয়ারা আমার কাছে দিয়ে গেলো আর এখুনি আপনাকে ফাইলটা দিতে বলল।
আমি ফাইল নিয়ে খুলে দেখি অর্ডার লেটার সাথে দুটো টিকিট একটা আমার আর একটা নীতার। দেখে এবার আমি নিতাকে বললাম - তুমি এখুনি বাড়ি চলে যাও আর খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে এয়ারপোর্টে চলে এসো। নীতা কিছু না বুঝে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি নীতার হাতে ওর ওর্ডার লেটার দিয়ে বললাম - এটা পড়ে দেখো তাহলেই তুমি বুঝতে পারবে। আমি আমার ওর্ডার লেটার বিভাসদাকে দিলাম। উনি সেটা নিয়ে পড়তে লাগলেন। পড়া শেষ করে বললেন - ভাই এখানে তো লেখা আছে তোমার আর নীতার জন্য একটা বাংলো বাড়ি ঠিক করেছে সেখানেই তোমাকে উঠতে হবে। আর মোটামুটি এক বছর তোমাকে ওখানেই থাকতে হবে তবে কোনো বিশেষ কেস এলে এখানে এসে সেটাকেও সল্ভ করতে হবে তোমাকে। এতে সেটাই লেখা আছে।
আমার মন খারাপ হয়ে গেলো বললাম - আমি বাড়িতে থাকতে পারবো না। বিভাসদা শুনে বললেন - অরে বাবা অতো চিন্তা করছো কেন তোমার যেখানে ইচ্ছে সেখানেই থাকতে পারো তবে মাঝে মাঝে ওই বাংলোতে এসে থাকলেই হবে। নিকিতা কেবিনে ঢুকেই বিভাসদাকে উইশ্ করে আমাকে বলল - কি শুনলাম তুমি আর নীতা কলকাতায় যাচ্ছ এক বছরের জন্য ? আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম - তুমি কথা থেকে জানলে ?
নিকিতা বলল - আমাকে বড় সাহেব নিজেই বলেছেন তাই তো এলাম তোমার কাছে। নীতা এবার বলল - আমি তাহলে বাড়ি যাচ্ছি গোছাতেও তো সময় লাগবে আমার। নিকিতা শুনে বলল - তুই অতো চিন্তা করিসনা আমি বাড়িতে বলে দিয়েছি মা তোর জামা-কাপড় সব গুছিয়ে রাখবে বলেছেন। বাকি আর যা যা জিনিস তোর নেবার আছে নিয়ে নিবি। একটা খাম নীতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল - আমার কাছে কিছু টাকা ছিল সেটাই তোকে দিলাম তোর হাত খরচের জন্য তাছাড়া সুমন স্যার তো তোর সাথেই থাকছে বাকিটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। নিকিতা কথাটা বলে আমার দিকে তাকাতে আমি বললাম - ওর জন্য এতো ভেবোনা তুমি আমার সাথেই তো যাচ্ছে আমি সব সামলে নেবো। নিকিতা আমার কাছে এসে বিভাসদাকে বলল - স্যার কিছু মনে করবেন না আমি অফিস ডেকোরাম ভাঙছি বলেই আমার হাত ধরে বলল তুমি আছো বলেই তো মা ও আমি নিশ্চিন্ত আমি জানি ওর কোনো ক্ষতি হতে তুমি দেবেনা। আমার বলার আগেই বিভাসদা বললেন - অরে বাবা তুমি এতো করে বলছো কেন ওকে তো আমরা চিনি ও ঠিক সামলে রাখবে তোমার বোনকে আর তাছাড়া ওর বাড়ির লোকেরা দেখবে ওকে মাথায় করে রাখবে। সুমনের বিয়েতে গিয়ে আমরা যে আদর অভ্যর্থনা পেয়েছি যা আমার শুশুর বাড়িতেও পাইনি কোনোদিন।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বিভাসদার কাছে গিয়ে ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই উনিও উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বললেন -খুব ভালো থেকো আর তোমার মিশন সাকসেফুল করে এসো। আমি জানি তুমি জয় করেই ফিরবে। আমার চোখটাও ভিজে উঠল জামার হাতা দিয়ে চোখ মুছে বললাম আমাকে আশীর্বাদ করুন যাতে আমি সাকসেস পাই। নিকিটাও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল বলল - খুব কাছের একজনকে দূরে যেতে দিতে হচ্ছে আমাকে জানিনা কি করে থাকবো। আমি ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম - একবার কলকাতা চলে এসো তাছাড়া আমাকেও আসতে হবে মাঝে মাঝে ওর্ডারে সেরকমই লেখা আছে।