02-10-2023, 08:58 PM
(৭)
নিজে একটা সিগারেট ধরিয়ে আমার দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো শান্তিরঞ্জন। তারপর আনমনা হয়ে বলতে শুরু করলো, "কোনো এক পড়ন্ত বিকেলের স্নিগ্ধ আলোয় এক তরুণী, আলতো আদরমাখা স্বরে কথা দিয়েছিলো আমাকে, তুলসীতলায় মাটির প্রদীপ জ্বেলে রোজ অপেক্ষা করবে আমার জন্য। শুধু সেইটুকু কথাকেই ধ্রুব সত্য জেনে পরম বিশ্বাসের সাথে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছি আমি এতদিন। এই পুঁজিটুকু সম্বল করে পাড়ি দিয়ে আজও এগিয়ে চলেছি এক উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের খোঁজে। কথা দিয়েছিলাম একসঙ্গে পথ চলার। আমি কথা রেখেছি। আমাদের বিবাহের বাইশটা বসন্ত পার করে একটানা হেঁটে চলেছি আমি। মাথা উঁচু করে হেঁটে চলেছি, বিগত যৌবনের বাসি ফুলের মালা যত্ন করে গলায় পরে। সমস্ত তিরস্কার, অবজ্ঞা, অবহেলার ডালা মাথায় নিয়ে সর্বদা মুখে এক স্বর্গীয় হাসি মাখিয়ে পথ হেঁটে চলেছি আমি। যেদিন খুব শীত পড়েছিলো, সেদিন একখানা গরম চাদর কেউ জড়িয়ে দেয়নি আমার উদোম শরীরে। তীরের ফলার মতো অসংখ্য তীব্র ঠান্ডার ঝলক ফালা ফালা করেছিলো আমার অসহায় মনকে। তবুও পথ চলা থামাইনি আমি। সংসারের সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করেও আমি কেবল এগিয়ে চলেছি এক অমোঘ টানে। কখনো কারুর প্রতি কোনো অভিযোগ বা প্রত্যাশা ছিলো না আমার। কারণ আমি মনে করেছিলাম, কলঙ্কের কালিমা লেপে দিয়েও আমার স্ত্রীর চরিত্রের শুভ্র উজ্জ্বলতা ঢাকতে পারবে না কেউ কখনো। কিন্তু আজ যা করলো বন্দনা, তাতে .." এইটুকু বলেই থেমে গেলো আমার ভায়রাভাই।
সিগারেটটা ধরিয়ে শান্তিরঞ্জনের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখের কোনায় একবিন্দু জল। ওর কথাগুলো শুনে আমার মনটাও ভারাক্রান্ত হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এখন এখানে দাঁড়িয়ে বেশিক্ষণ সময় নষ্ট করলে বিপদ আরও বাড়বে বৈ কমবে না। আমার অর্ধনগ্না স্ত্রীকে উঠিয়ে নিয়ে ভেতরে চলে গেছে ওই কামুক দূর্বৃত্তগুলো। আমাকে খুব তাড়াতাড়ি ওখানে পৌঁছতে হবে, একবার শেষ চেষ্টা করে দেখতে হবে, যদি অবশ্যম্ভাবী সর্বনাশের গোলকধাঁধা থেকে আমার স্ত্রীকে বের করে আনতে পারি!
"চিন্তা করো না, আর ইমোশনাল হয়ে গিয়ে কিছু ভুল সিদ্ধান্তও নিয়ে নিও না। এখানে যে দু'দিন আমরা আছি বা থাকবো, সেই দু'টো দিন যদি ভালোয় ভালোয় কেটে যায়, তাহলে তুলসীতলায় মাটির প্রদীপ জ্বেলে একদিন না একদিন নিশ্চয়ই অপেক্ষা করবে তোমার স্ত্রী তোমার জন্য। আর আমিও আমার স্ত্রীর ব্যাপারে আশাবাদী, এই সমস্ত ঝড়-ঝঞ্ঝা কাটিয়ে, আমরা একদিন কাছে আসবোই। কিন্তু এখানে এখন বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না, ভেতরে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা সামলাতে হবে তো!" শান্তিরঞ্জনের কাঁধে হাত রেখে, ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে কথাগুলো বললাম।
"গেলে তুমি যাও ভাই ভেতরে। আমি একটু সমুদ্রের ধার থেকে ঘুরে আসি। সন্ধ্যেবেলা ওখানে খুব সুন্দর ফুরফুরে বাতাস খেলা করে।" এই বলে সি-বীচের ধারে এগিয়ে গেলো আমার ভায়রাভাই। ওইদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাড়ির অভিমুকে রওনা দিলাম আমি। বাড়িটার ভেতরে ঢুকতে গিয়ে ভয় বুক কেঁপে উঠলো আমার। পর্তুগিজদের নিয়ে বলা প্রমোদের ওই গল্পটা বারবার মনে পড়ছিলো। জানিনা কথাগুলো সত্যি না মিথ্যে .. তবে মনুষ্যজাতি যে পশুদের থেকে অনেক বেশি নৃশংস হয়, সেটা আজ বুঝতে পারলাম। অনেক কথা মনের মধ্যে ঘুরছিলো। সেই দুপুর থেকে বাপ্পা ঘুমোচ্ছে। ওর এখন ঘুম ভেঙে গেলে, ওকে কি করে সামলাবো আমি .. এটা ভেবেই বেশি চিন্তা হচ্ছিলো।
ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে দেখলাম সাগরকে কোলে করে নিয়ে বসে টিভি দেখছে সৈকত। দ্রুত প্রায় ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "বাপ্পা কোথায়?" আমার দিকে অলস চোখে তাকিয়ে যে ঘরে এতক্ষন বাপ্পা শুয়েছিলো, সেইদিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে সৈকত বললো, "ওই ঘরে আছে সবার সঙ্গে .."
'সবার সঙ্গে মানে? কাদের সঙ্গে? নন্দনাই বা কোথায়?' মনে একরাশ আশঙ্কা নিয়ে ডাইনিংরুমের অপরপ্রান্তে যেখানে সোফাগুলো রাখা আছে, তার বাঁ'দিকে যে দুটো ঘর রয়েছে, তার দ্বিতীয়টির ভেতর থেকে বাপ্পার গলা শুনতে পেলাম। দ্রুতপায়ে ওইদিকে গিয়ে দরজায় নক করলাম আমি। "ইয়েস, কাম ইন .." ভেতর থেকে রবার্টের গম্ভীর গলা ভেসে এলো। দরজাটা ভেজানো ছিলো, জাস্ট হাতলটা ঘুরিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকলাম আমি।
★★★★
প্রায় তিনশো স্কয়্যার ফিটের বেডরুমটা দেখে আমার সাহেবদের আমলের বাংলো কোয়ার্টারের কথা মনে পড়ে গেলো। ঘরটিতে দুটি এসি চলছে আর তিনটি এলইডি টিউবলাইট। বিশাল বড় রুমটার দক্ষিণদিকে বড় একটা জানলা, যেটা বন্ধ রয়েছে, তার সামনে একটা কিং সাইজ ডবল বেডের খাট দেখতে পেলাম। বিছানার উপর পাতলা একটা ব্ল্যাঙ্কেট জড়ানো অবস্থায় একপাশে হার্জিন্দার আর একপাশে ইউসুফকে নিয়ে মাঝখানে শুয়ে রয়েছে আমার বড় শ্যালিকা। আমাকে দেখে পাঞ্জাবিটা একবার উঠে বসে তারপর আবার শুয়ে পড়লো বিছানাতে। সেই সময় ব্ল্যাঙ্কেটটা ফ্র্যাকশন অফ সেকেন্ডের জন্য সরে যাওয়াতে আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম হার্জিন্দারের পরনে শুধুমাত্র একটা জাঙিয়া, কিন্তু বন্দনার শরীরে একটাও সুতো নেই। সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে দু'জনের মাঝখানে শুয়ে আছে সে। ভাগ্যিস আমার সঙ্গে শান্তিরঞ্জন আসেনি! বেচারার খারাপ লাগতো এই দৃশ্যটা দেখে।
খাটটির অনতিদূরে আরেকটি ডবল বেডের খাট রয়েছে। দুটি খাটের মধ্যে দূরত্ব বড়জোর একহাত। ওই বিছানাটির উপর বসে রয়েছে প্রমোদ আর রবার্ট। দু'জনেই টপলেস হয়ে শুধুমাত্র শর্টস পড়ে আছে। কিন্তু একটু আগে যে বাপ্পার গলা শুনলাম! ও কোথায়? নন্দনাই বা কোথায়? আর রজত? ওকেও তো দেখছি না! "কি মজা কি মজা, ছোটা ভীম জিতে গেলো .." বাপ্পার গলা পেয়ে চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম আমার ডানপাশে, যেখান থেকে আওয়াজটা এলো।
আমার ডানদিকে অর্থাৎ খাটের বাঁ'দিকে কয়েক পা দূরে একটা বেশ বড় গদি আঁটা সোফা দেখতে পেলাম। সামনে দেয়ালে লাগানো একটা বিগ সাইজ এলইডি টিভি .. যেখানে কার্টুন চলছে। সোফার একদম লেফট সাইডে আমার দিকে পিছন করে বসে টিভিতে কার্টুন দেখছে বাপ্পা। তার পাশে সম্পূর্ণ খালি গায়ে সাদার উপর নীল ডোরাকাটা একটা আন্ডারপ্যান্ট পড়ে বসে রয়েছে রজত বণিক। কিন্তু আমার স্ত্রীকে কোথাও দেখতে পেলাম না। এমন সময় খুট করে দরজা খোলার একটা আওয়াজ হওয়াতে আমার বাঁ'দিকে ঘাট ঘুরিয়ে দেখলাম বাথরুমের দরজা খুলে বেরোলো নন্দনা।
ওর পরনে একটা সাদা রঙের বেডকভার জড়ানো। এই অবস্থায় আমার বউকে দেখে অবাক তো বটেই, তার সঙ্গে যারপরনাই আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম আমি এই ভেবে যে, ওই চাদরের নিচে আমার স্ত্রীর দেহে আদৌ কোনো বস্ত্র আছে কি না। আমার সঙ্গে চোখাচোখি হওয়াতেই চোখ সরিয়ে নিলো নন্দনা। এটা লজ্জায় না অভিমানে, ঠিক বুঝতে পারলাম না। কিন্তু আমার তো এখন অভিমান করলেও চলবে না আবার লজ্জা দেখালেও হবে না। আমাকে তো একটা শেষ চেষ্টা করতেই, হবে এখান থেকে আমার স্ত্রীকে বের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই নন্দনার দিকে এগোতে যাবো, তার আগেই প্রমোদ বলে উঠলো, "এই ঘরে ঢোকার পর ''একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি বলে সেই যে বাথরুমে ঢুকলে আর এতক্ষণে বেরোনোর সময় হল তোমার! তোমার চুল তো ভিজা দেখছি, তারমানে স্নানটান করে এলে একেবারে! যাক, এক বিষয় ভালোই হলো। রবার্ট কে তোমার কিন্তু একটা থ্যাঙ্কস বলা উচিৎ, ও যদি তোমাকে এই বেড সিটটা না দিতো তাহলে বাথরুম থেকে বের হতে কেমন করে? ওই দেখো, তোমার ছেলে ঘুম ভেঙ্গে উঠে টিভি দেখতে শুরু করে দিয়েছে।"
প্রমোদের কথায় আমার জিজ্ঞাস্য সব প্রশ্নেরই উত্তর পেয়ে গেলাম। তারমানে আমার বউকে ওরা যখন এই ঘরে এনেছিলো, তখনো বাপ্পা ঘুমোচ্ছিলো। আমার যেটা আশঙ্কা ছিলো, ওরা এই ঘরে নন্দনাকে আনার পর, ওর সঙ্গে খারাপ কিছু করবে; সেরকম কিছু বোধহয় এখনো ঘটেনি। তার কারণ, এখানে আসার পরেই নন্দনা ফ্রেশ হতে বাথরুমে ঢুকে গিয়েছিলো, আর এখন বেরোচ্ছে। কিছুটা নিশ্চিন্ত মনে সোফার দিকে এগিয়ে বাপ্পার কাঁধে হাত রাখলাম। ও রজতের সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো, বা বলা ভালো গল্প শুনছিলো। কাঁধে স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আবার রজতের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বাপ্পা বললো, "বলো না রজত আঙ্কেল, তারপর কি হলো?" লোকটার সঙ্গে আমার ছেলের এর মধ্যেই বেশ ভাব হয়ে গিয়েছে, সেটা বুঝতে পারলাম। কিন্তু তাই বলে আমার ছেলে এতক্ষণ পর আমাকে দেখে পাত্তাই দিলো না! মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে আবার নিজের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম আমি।
- "শুনতে চাও?"
- "হ্যাঁ, শুনতে চাই, তুমি বলো না তাড়াতাড়ি .. তোমার গল্পগুলো শুনতে শুনতে আমি তোমার ফ্যান হয়ে গেছি।"
- "তাই? তবে এটা কিন্তু গল্প নয়, একদম সত্যি ঘটনা। ঠিক আছে বলতে পারি, কিন্তু তার জন্য আমার একটা কন্ডিশন আছে। তা না হলে আমি কিন্তু গল্প বলবো না।
- "না না প্লিজ বলো, আমি তোমার সব কন্ডিশনে রাজি।"
- "তোমার মাম্মিকে এতক্ষণ পর দেখলে, কিন্তু একবারও ডাকলে না তো? এখানে এসে বসতে বলো তোমার মাম্মিকে! তবে তো গল্প শুনতে ভালো লাগবে তোমার! কি, ভুল বললাম কিছু আমি?"
- "আরে কি বোকা তুমি! ওটা আমার মাম্মি নয়, আমার মাম্মাম। হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলেছো। যদি ভয়ের গল্প হয় তাহলে তো মাম্মামকে আমার পাশে লাগবে। মাম্মাম ও মাম্মাম তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো গো? আর তোমার গায়ে চাদর জড়িয়ে রেখেছো কেনো? তোমার কি জ্বর এসেছে? এসো, এখানে এসে আমার পাশে বসো .."
বাপ্পা আর রজতের কথোপকথন শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, আমি নির্ঘাত 'ইনভিজিবল ম্যান' হয়ে গিয়েছি। তা না হলে, ওর মা'কে দেখে বাপ্পা কাছে ডাকলো, অথচ আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিলো? আমার ছেলে যে এতক্ষণ পর আমাকে দেখলো, সেটা নিয়েও তো এখানে উপস্থিত কেউ কিছু বললো না! এমনকি আমি এই ঘরে ঢোকার পর থেকে আমার সঙ্গে কথা বলা তো দুরস্থান, আমার দিকে তাকায়নি পর্যন্ত কেউ।
"হ্যাঁ সোনা, একটু জ্বর হয়েছে আমার। আমি এখানেই ঠিক আছি। তুমি গল্প শোনো না তোমার আঙ্কেলের কাছ থেকে।" কথাগুলো বলে বাথরুমের দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে রইলো নন্দনা।
"ছেলে ডাকছে আর মা তার কাছে আসছে না। এরকম নির্দয় মা আমি কোনোদিন দেখিনি। ছেলের পাশে না হোক, আমার পাশে এসে বসো চুপটি করে .." কথাগুলো বলে খালি গায়ে আন্ডারপ্যান্ট পরা অবস্থাতেই সোফা থেকে উঠে গিয়ে আমার বউয়ের হাতটা ধরে টানতে টানতে নিয়ে এসো সোফার নিজের পাশে বসালো রজত। এমতাবস্থায় অসাবধানতায় এক মুহূর্তের জন্য কোমরের কাছ থেকে বেড কভারটা সরে গিয়েছিলো। আমার স্ত্রীর কালো রঙের প্যান্টির এক ঝলক দেখতে পেলাম। তারমানে চাদরের নিচে শুধুমাত্র অন্তর্বাস পড়ে রয়েছে নন্দনা।
- "হ্যাঁ, তারপর যেটা বলছিলাম, মন দিয়ে শোনো। তোমাকে তো আগেই বলেছি আমাদের গ্রামের বাড়ির কথা। সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গেছিলাম আমি। খেয়েদেয়ে দুপুরবেলা শুয়ে একটা ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে ভাতঘুম দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ম্যাগাজিনটা পড়তে পড়তে চোখটা লেগে এসেছে, এমন সময় একটা মেয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখলাম জানালার বাইরে পনেরো-ষোলো বছরের একটা মেয়ে। আমার নাম ধরে জিজ্ঞেস করলো, 'রজত, আমার ছোট ভাইটাকে দেখছো? এইখানেই তো খেলছিলো।' আমি মেয়েটাকে এর আগে কোনোদিন দেখিনি। অথচ ও আমার নাম জানলো কি করে? হঠাৎ করে কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ার জন্য বিরক্ত হয়ে ওকে বললাম, 'না দেখিনি, এখানে তোমার ভাই আসবে কি করে? এখন যাও এখান থেকে।' তারপর আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আর এলো না। পুনরায় ম্যাগাজিনটা খুলে চোখ বোলাতে লাগলাম। হঠাৎ কেমন যেন একটা অস্বস্তি হতে লাগলো আমার ভিতরে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম জানালার দিকে, মেয়েটাকে দেখতে পেলাম না। তারপরই একটা কথা মনে পড়তেই আমার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। আমি তো দোতলায় আমার বেডরুমে শুয়ে রয়েছি, তাহলে মেয়েটা জানলা পর্যন্ত পৌছলো কি করে?'
"ওরে বাবারে, এটা তো ভয়ের গল্প। তারমানে, ওই মেয়েটা ঘোস্ট ছিলো, তাই তো আঙ্কেল? আমার খুব ভয় করছে, মাম্মামের কাছে যাবো।" বাপ্পার চোখমুখ দেখেই বুঝলাম মারাত্মক ভয় পেয়েছে ও। কথাগুলো বলে সোফা থেকে উঠে রজতকে টপকে ওর মায়ের কাছে আসতে যাবে, তার আগেই আমার ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের দুটো থাইয়ের উপর থপ করে বসিয়ে দিয়ে ওর গালে আর কপালে চকাস চকাস করে কয়েকটা চুমু খেয়ে রজত বললো, "তুমি এখন বড় হয়ে গেছো না বেটা? সব সময় ম্যা ম্যা করলে চলবে? এখন থেকে তো নিজেকে নিজেই সামলাতে হবে!"
হঠাৎ একটা জিনিস চোখে পড়াতে চমকে উঠলাম আমি। বাপ্পা যাতে পড়ে না যায় তার জন্য নিজের বাঁ'হাত দিয়ে ওর পিঠের পেছনে সাপোর্ট দিয়ে ধরে রেখেছিলো রজত, আর ডান হাতটা পাশে বসে থাকা আমার স্ত্রীর চাদরের ভেতর ঢুকিয়ে, উঠিয়ে এনেছিলো ওর বুকের কাছে। রজতের হাতের মুভমেন্ট দেখে পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, চাদরের ভেতর হাত ঢুকিয়ে ও নন্দনার মাইদুটো সবলে টিপে চলেছে। বাপ্পা ঠিক তার পাশে বসা রজতের কোলে বসে থাকার জন্য বেচারি মুখ দিয়ে চিৎকার করতে পারছে না, শুধু জোরে জোরে দীর্ঘঃশ্বাস ফেলছে।
"কিন্তু আমার তো খুব ভয় করছে। তাহলে আমি এখন কি করবো আঙ্কেল?" সরল মনে প্রশ্ন করলো বাপ্পা।
"তুমি? তুমি বরং এখন ড্রয়িংরুমে গিয়ে তোমার দাদা সৈকতের সঙ্গে বসে কার্টুন দেখো। না হলে তোমার ভাই সাগরের সঙ্গে খেলা করো। তোমার দাদা কিন্তু খুব সাহসী! ওর সঙ্গে তুমি যদি থাকো, তাহলে ঘোস্ট তোমার ধারেকাছেও আসতে পারবেনা। তারপর একটু রাত হলে তোমাকে ওই আন্টিটা খাওয়ার দিয়ে দেবে।" কথাগুলো বলার ফাঁকে চাদরের ভেতর ঢোকানো অবস্থায় থাকা রজতের হাত বুক থেকে নন্দনার পেটের উপর নেমে এলো।
"কে? ওই আগ্লি দেখতে আন্টিটা, যে দুপুরে লাঞ্চ দিয়েছিলো আমাদেরকে?" জিজ্ঞাসা করলো বাপ্পা।
"ছিঃ বেটা! এরকম বলতে নেই। ওই আন্টিটা শুনলে দুঃখ পাবে তো? সবাইকে কি আর তোমার মায়ের মতো সুন্দর দেখতে হয়? যাও তুমি এখন বাবার সঙ্গে পাশের ঘরে যাও। আর হ্যাঁ, হুট করে এই ঘরে আর ঢুকে আসবে না। তাহলে কিন্তু ওই জানালায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা যখন তখন চলে আসতে পারে!" বাপ্পার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে, আমার দিকে তাকিয়ে গুরুগম্ভীর গলায় রজত বললো, "এখানে হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখছো কি? যাও, নিজের ছেলেকে ড্রয়িংরুমে ওদের কাছে দিয়ে এসো। আটটা বাজতে চললো, কিচেনে গিয়ে এই ঘরে ডিনার পাঠিয়ে দিতে বলো। এখানে সাড়ে আটটার মধ্যে আমরা খেয়ে নিই। কিচেনে যে আছে সে জানে কতজন লোক আর কত কোয়ান্টিটির খাবার দিতে হবে এখানে। তাই তোমাকে পাকামি করে কিছু বলতে হবে না। আর হ্যাঁ, চাইলে নিজেরাও খেয়ে নিতে পারো।"
চাকর-বাকরের সঙ্গে যেভাবে কথা বলা হয়, আমার সঙ্গে ঠিক সেই ভঙ্গিতে কথা বললো রজত। কিন্তু এটা ভেবেই অনেকটা হাল্কা লাগছিলো, এ্যাট লাস্ট কেউ তো কথা বললো আমার সঙ্গে! তাছাড়া এই পরিবেশ থেকে আমি দ্রুত নিষ্ক্রমণ চাইছিলাম আমার ছেলের। তাই আর কথা না বাড়িয়ে, বাপ্পাকে রজতের কাছ থেকে নিয়ে কোলে তুলে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। ঘর থেকে বেরোনোর সময় দরজার পাশে থাকা দেওয়াল জুড়ে থাকা আয়নাতে চোখ চলে যাওয়াতে দেখতে পেলাম, রজত এক হেঁচকা টানে আমার বউয়ের গা থেকে চাদরটা খুলে দিলো।
★★★★
ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখলাম ততক্ষণে আমার ভায়রাভাই ফিরে এসেছে। বাপ্পাকে কোলে নিয়ে আমাকে ঘর থেকে বেরোতে দেখে সোফা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে এসে শান্তিরঞ্জন জিজ্ঞাসা করলো, "খবর কি ভেতরে? সব ঠিক আছে তো?"
"কিছুই ঠিক নেই, পাঁচটা শয়তানই ওই ঘরে রয়েছে, তার সঙ্গে তোমার বউ আর আমার বউ।" এই বলে বাপ্পাকে সাগর আর সৈকতের পাশে বসিয়ে দিয়ে এসে পুনরায় আমার ভায়রাভাইকে বললাম, "চলো আমরা খেয়ে নিই, এখানে নাকি রাত সাড়ে আটটার মধ্যে খেতে দিয়ে দেয়। আর ওদের ঘরেও খাবার পাঠিয়ে দিতে বলি।"
"কেনো? এতক্ষণ ধরে যে হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা বলে এত বাতেলা দিচ্ছিলে, সব পেছনে ঢুকে গেলো বুঝি ওদের ভয়ে? নাকি ষড়রিপুর প্রথম রিপুর প্রভাবে আগের বলা সব কথাগুলো ভুলে গেলে?" শান্তিরঞ্জনের বলা এই কথাগুলোয় প্রচন্ড রাগ হলো আমার। ওকে জবাব দিতে যাবো, তার আগেই ও হাত তুলে আমাকে থামিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো, "যেখানে রাগ দেখানোর সেখানে দেখাতে পারলে না, আমার উপর রাগ দেখিয়ে কি হবে? নাও চলো, রাতের খাওয়াটা সেরেই ফেলি। দুপুরে লাঞ্চ করিনি, এবার কিন্তু সত্যি সত্যিই খুব খিদে পেয়েছে আমার।"
ডিনারে রুটি, চিকেন কষা আর চিলি পনির হয়েছিলো। চিকেন কষাটা সত্যিই ভালো বানিয়েছিলো। কিন্তু আশঙ্কা এবং উত্তেজনার সংমিশ্রণে আমার মনের ভিতরটা যেভাবে তোলপাড় হচ্ছিলো, তাতে সব খাবারের স্বাদই একরকম লাগছিলো আমার। তাড়াতাড়ি করে খেয়ে উঠে ভায়রাভাইকে বললাম, "রাতে শোওয়ার অ্যারেঞ্জমেন্টটা কিরকম হবে? বাপ্পা কি তোমাদের ঘরে ঘুমাবে, নাকি ওই ঘরেই আবার দিয়ে আসবো ওকে? ওর মা ছাড়া তো বাপ্পা রাতে ঘুমোতে পারে না। নন্দনা এখন রাতে কোন ঘরে শোবে, সেটাই ভাবছি।"
"হয় তুমি বিশ্বন্যাকা, সবকিছু বুঝেও বুঝতে চাইছো না! আর তা না হলে এখানে আসার পর থেকে একটার পর একটা ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে তোমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। তোমার ছেলেকে নিয়ে যদি এখন আবার ওই ঘরে ঢোকো, তাহলে মেরে তোমার হাত-পা ভেঙে রেখে দেবে ওরা। এখানে তোমার ঘর আর আমার ঘর বলে কিছু নেই, এখানে সব ঘরই সবার। তোমার বউ আর আমার বউ, এই দু'জনকে নিয়ে যখন ওরা পাঁচজন ওই ঘরে ঢুকেছে, তখন ওই ঘর থেকে আজ রাতে আর কেউ বেরোবে না। বাপ্পার খাওয়া হয়ে গেলে ওকে আমি পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবো, চিন্তা নেই। তুমি এখন কি করবে সেটাই ভাবো।" একটু রাগত স্বরেই কথাগুলো বললো শান্তিরঞ্জন।
আমি আর ওখানে একমুহূর্ত দাঁড়ালাম না। বাপ্পাকে একটু আদর করে পুনরায় ওদের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালাম। তারপর নিজের মনকে শক্ত করে দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই যে দৃশ্য দেখলাম, তাতে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো। এই পাশের বিছানাটায় সম্পূর্ণ উলঙ্গিনী আমার বড় শ্যালিকাকে বিছানার এক সাইডে নিয়ে এসে মিশনারি পজিশনে ঠাপিয়ে যাচ্ছে হার্জিন্দার, আর মাটিতে দাঁড়ানো অবস্থায় ওর মুখে নিজের কাটা বাঁড়াটা গুঁজে দিয়েছে ইউসুফ। শান্তিরঞ্জনের বউয়ের মুখ দিয়ে "ওঁকক ওঁকক" করে শীৎকারের মতো আওয়াজ বের হচ্ছিলো। আমার কলেজ লাইফে দেখা পর্ন ছবিগুলোর সঙ্গে এই দৃশ্যের কোনো তফাৎ করতে পারলাম না।
আর ওই দিকের বিছানাটায় চোখ যেতেই চমকে উঠে কয়েক পা পিছিয়ে এলাম আমি। দেখলাম, বিছানার উপর ব্রা আর প্যান্টি পড়া অবস্থাতে হাত-পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে আমার স্ত্রী। ওর ডান দিকের পা'টা বিছানা থেকে তুলে, পায়ের বুড়ো আঙুলটা চুষে যাচ্ছে রজত। আর আমার বউয়ের গোলাপী রসালো সুস্বাদু ঠোঁটে নিজের মোটা মোটা ঠোঁটদুটো ডুবিয়ে দিয়ে ওর মুখের লালামিশ্রিত রস পান করছে রবার্ট। এন্ড লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট হারামি প্রমোদ নিজের দুটো হাত দিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে মর্দন করে যাচ্ছে নন্দনার ব্রা আবৃত স্তনজোড়া। আমার স্ত্রী ওদের নাগপাশের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় যতবার ওঠার প্রয়াস করছে, ততবার ওকে বিছানায় ঠেলে শুয়ে দিচ্ছে রবার্ট।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~