01-10-2023, 04:10 PM
৫০. ড্রাইভার - বাবান
বান্টি গেছে কলেজে। তাই ফাঁকা বাড়িতে বান্টির বাবার বুকে মাথা রেখে বান্টির মা সেদিন সুখ দুঃখের গপ্পো করছিলো। হটাৎ করে বান্টির মা বললো - এই জানো! আমার বাপের বাড়ির উল্টোদিকে যে বাড়িটা আছে ওই বাড়ির বড়ো ছেলের নাকি ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে। বেশিদিন বিয়ে হয়নি কিন্তু ওদের।
বান্টির বাবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বৌয়ের চুলে বিলি কেটে বললেন - এই জন্য গাড়ি চালানো শেখা উচিত। সে কেনো কি নাই কেনো।
স্ত্রী - জাব্বাবা! হচ্ছে কি কথা আর তুমি কি বলছো? এখানে গাড়ি আর ডিভোর্স এর কি যোগ?
তাপস বাবু- আছে আছে সরাসরি যোগ আছে। গাড়ি চালানোর হাত যত ভালো হবে ততো সে সেফলি আর স্মুথলি রাস্তায় মাইলের পর মাইল গাড়ি চালাতে পারবে। বিয়ের ক্ষেত্রেও তাই।
স্ত্রী - মানে? আরে কিসের সাথে কিসের তুলনা এসব
স্বামী - সঠিক তুলনা সুন্দরী। গাড়ি কেনার আগে যেটা কিনতে যাচ্চো সেটা একবার টেস্ট ড্রাইভ করে নিতে হয় সব ঠিকঠাক আছে, কমফার্টেবল কিনা সব চেক করে নিতে হয়। গাড়ি আর জীবন এক্কেবারে প্যারালাল গতিতে ছোটে যে। তাই জীবনের ক্ষেত্রেও ওটা প্রযোজ্য। বুঝলে কিছু?
স্ত্রী মাথা চুলকে তাকিয়ে রইলেন ছেলের বাপের দিকে। স্বামীর পেটে হাত বুলিয়ে বললেন - হ্যাগো? পেটে গুড়গুড় করছে নাকি গো? কিসব বলছো?
তাপস বাবু - বোকা মেয়ে... কিছুই বুঝলেনা গো জীবনের। আরে যদি গাড়ি ঠিক মাইলেজ না দেয়, গাড়ি যদি সহজে স্টার্টিং না নেয়, গিয়ার চেঞ্জ না করে আর সবচেয়ে বড়ো কথা.... গাড়ির যদি পিকআপ না থাকে..... তাহলেই সেই গাড়ি ইন্দা ভোগাম্মা। তাই হয়েছে তোমার ওই বাড়ির বউটার অবস্থা। আর তাই ওই বেকার গাড়ি থেকে মুক্তি চাই তার। এতে ভুল কিছু নেই। গাড়ি সার্ভিস ভালো দিলেই আর এইদিন দেখতে হতোনা।
স্ত্রী - ধ্যাৎ! কি তখন থেকে গাড়ি গাড়ি করেই চলেছো? ভুলভাল বোকেই চলেছে।
তাপস - আরে এই বান্টির বাপ যা বলে ঠিকই বলে। এই যে আমাদের মধ্যে এত্ত এত্ত প্রেম তার কারণ কি? গাড়ি!
স্ত্রী - আবার গাড়ি? আরে আমাদের গাড়ি কোথায়? কিসব বলছো কি?
তাপস - আরে বললাম না! আমি ভুল বলছিনা। এই বান্টির বাপ যদি নিজের লম্বা স্ক্রুডাইভার দিয়ে সব টাইট এন্ড ফিট না রাখতো তাহলে কি এতদিন আমাদের সংসার টিকত? ইঞ্জিনও দৌড়োতো না আর হর্ন দিয়ে রোজ রাতে প্যাপু আওয়াজও বেরোতো না। আর সার্ভিসিঙ্গে গন্ডগোল থাকলে আমাদের বান্টিরও আর ডেলিভারি হতোনা বুঝলে কিনা হেহে।
বান্টির মা বড়ো বড়ো চোখ করে স্বামীর দিকে চেয়েই রইলো। তা দেখে মুচকি হেসে তাপস বাবু বললেন - অমন করে চেয়ে থাকার কিছুই হয়নি ম্যাডাম। আমি একটাও কথা ভুল বলছিনা। আরে এটাই তো বাস্তব গো। দেখো ঘরের গাড়ি যদি গ্যারেজ হয়ে যায় তখন আর কিছুই করার থাকেনা। তখনি ইচ্ছে হয় আশেপাশের গাড়ির দিকে নজর দিতে।
স্ত্রী - হ্যাগো! সত্যি করে বলোনা? কোন গাড়ি ধাক্কা মেরেছে তোমায়? মাথায় চোট পাওনি তো?
তাপস - হুহুবাওয়া একটুও নয়, কোথাও ধাক্কা খাইনি আমি। বরং উল্টোটাই আমি করে থাকি। এই ধাক্কার ব্যাপারটাও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ গাড়ির ক্ষেত্রে। মানে কতটা জোরে ধাক্কা দিয়ে ঠেলবো সেটা মাথায় রাখতে হবে, আর বেশি উত্তেজিত হয়ে হেইয়ো মারি বলে এদিক ওদিক না দেখে ঠেলতে শুরু করলেও বিপদ। শেষে হয়তো গাড়ি লক্ষে পৌঁছানোর আগেই কোনো খাদে ঝপাং করে হেহেহেহে।
স্ত্রী - আমি পাগল হয়ে যাবো এবার।
তাপস - পাগল হয়ে গাড়ি চালানোর আবার মজাই আলাদা জানোতো? যদি হাইওয়ে পাও তখন তো ফুল স্পিডে চালাও হেহে। তোমার ওই বাপের বাড়ির পাশের বাড়ির বউটা ঐজন্যই তো কেটে পড়তে চাইছে। একবুক ফাঁকা রাস্তা নিয়ে বসে আছে কতদিন ধরে......অথচ গাড়ি আসার নামই নেই।
স্ত্রী - ধ্যাৎ! গাড়ি গাড়ি গাড়ি। এই ওঠোতো। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। খেতে দেবো।
বান্টি পিতা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে গান গাইতে গাইতে চলে গেলেন - এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলোতো।
- বাবান
(অনুপ্রেরণা - অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর কৌতুক )