Thread Rating:
  • 40 Vote(s) - 2.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance স্মৃতি সুন্দরী
#78
বেশ কয়েকদিন বিদ্যা ভাবছে পূজার আগে নতুন কাপড় কেনার কথা । কাপড় না কিনলে সেলাইয়ের কাজ করা যাবে না । মনীষা থাকলে এতদিন সে চলেও যেত কেনাকাটা করতে কিন্তু মনীষা নেই । তাই সে ভাবছে বিক্রম কে নিয়ে যাবে । কিন্তু কোন মুখে সে বিক্রমকে বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না । বিক্রম তাকে না বলবে না এটা বিদ্যা জানে । সারাদিন তো কি করবো কি করবো করতে করতে কাজের জন্য বাড়ির আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় । তাই সে এক পায়ে যেতে রাজি হয়ে যাবে । কিন্তু একটা কিন্তু আছে । তাই বিদ্যা এখনো বিক্রমকে কথাটা বলতে পারেনি ।

আজ সারাটা দুপুর বৃষ্টি হওয়ার পর এই বিকালে এখনো আকাশ মেঘলা । ছাদে নামার গ্রিলের পাশে দাঁড়িয়ে বিদ্যা আকাশের অবস্থা দেখছিল । মনে মনে ভাবলো ‘ এবারেও পূজাতে বৃষ্টি হবে । ‚

কি মনে হতে সে ভেজা ছাদে নগ্ন পায়ে গিয়ে নামলো । ছাদের কার্নিশে দুই হাত দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পরেই , বৃষ্টি হওয়ার পর হাওয়া লেগে গাছের পাতায় জমে থাকা জল যেভাবে ঝড়ে পড়ে ঠিক সেইভাবে কয়েক ফটো বৃষ্টির জল বিদ্যার মুখের উপর এসে পড়লো । সঙ্গে সঙ্গে কত পুরানো স্মৃতি এসে মনে ভিড় করতে লাগলো । সে বৃষ্টির জলে খুব ভিজতে ভালোবাসতো। তাই দিব্যার বাবাকে নিয়ে একসাথে এই ছাদে অনেকবার ভিজেছে। বৃষ্টির জলে দুজনে স্নান করেছে । কিন্তু দিব্যার বাবার একেবারেই বৃষ্টির জল সহ্য হতো না । একটু ভিজলেই সর্দি তারপর জ্বর । মেয়েটাও বাবার ধাৎ পেয়েছে । এইসব ভাবতে ভাবতেই সে ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে গঙ্গা থেকে ধেয়ে আসা মিষ্টি হাওয়া মুখে মাখতে লাগলো ।

আর বিক্রম এই বাড়িটাকে আপন ভেবে যেভাবে নিজের থেকে সব গুছিয়ে নিচ্ছে , পরিষ্কার করছে , সেটা বিদ্যাকে বারবার দিব্যার বাবার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। দিব্যার বাবাও একদন্ড চুপচাপ বসে থাকতো পারতো না । সবসময় কিছু না কিছু বাড়ির কাজ করতো । আজ সেই লোকটা নেই । বহুবছর ধরেই নেই । এত বছর যেন পরিবারটা অসম্পূর্ণ ছিল ।

দিব্যার বাবার মৃত্যুর ষোল সতেরো বছর পর বিদ্যার মনে হলো সে যেন একটা পরিবারের অংশ । এই পরিবারে বিক্রমের মত একজন দায়িত্বশীল পুরুষ সদস্য আছে , এবং এই পরিবারে দিব্যার মত অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে আছে । এই দুটো কারনেই বিদ্যার মনে হতে লাগলো পরিবারটা এখন সম্পূর্ণ। এই ভালোলাগার জন্যেই এক দমকা হাওয়ার মত তার অতীতের জীবনটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো ।

বিদ্যা রায় । বিয়ের আগে ছিল সেন । বিদ্যা সেন । কলকাতায় যারা ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীত নিয়ে চর্চা করে তারা সবাই হুগলির সেন পরিবারের কথা জানে। তিন পুরুষ ধরে এই পরিবার থেকে বেশ কয়েকজন কন্ঠশিল্পীর আবির্ভাব হয়েছে । বিদ্যার বাবা ছিল রাজ্যের বিখ্যাত ক্ল্যাসিকাল গীতিকার এবং সুরকার শ্রীবিষ্ণু সেন । শ্রীবিষ্ণু সেনের দুই ছেলে এক মেয়ে । হাজার চেষ্টা করেও ছেলে দুটোকে গানের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারেননি । তাই বিষ্ণু সেন একমাত্র মেয়েকেই ছোট থেকে গানের পাঠ দিতে শুরু করেন । একমাত্র মেয়েকে ছোট থেকেই নজরুলগীতি , রবীন্দ্র সংগীত , এমনকি তখনকার কিছু কিছু বাংলা হিন্দি সিনেমার গানও বিদ্যাকে দিয়ে রেওয়াজ করাতেন । হাতে চক ধরার আগে হারমোনিয়াম ধরেছিল বিদ্যা । একটু বয়স বাড়লে বাবার সাথে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেত। তারপর কলেজে পড়াশোনা শেষ করে কলকাতার এক কলেজে ভর্তি হওয়া । সেখানে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে ভর্তি হয়েছিল । ঠিক সেই সময়ে এক দমকা হাওয়ার মতো তার জীবনে বিক্রম এলো । একটা চিঠি বা প্রেমপত্র দিয়েছিল বিক্রম রায় ।  তারপর পালিয়ে বিয়ে করা । দুই বাড়ির কেউই মেনে নেয়নি এসম্পর্ক । প্রথম এক মাস ভাড়া বাড়িতেই ছিল তারা । পরে বিক্রমের মা অর্থাৎ তার শাশুড়ির পৈতৃক সম্পত্তি এখনকার এই ডালহৌসির বাড়িটা তারা পায় । তারপর দিব্যার জন্ম । দিব্যার বাবা এই কাপড়ের দোকান খোলে । সবকিছু ভালোই চলছিল । সুখেই চলছিল বিদ্যার সংসার। কিন্তু এই সুখের সংসার চিরস্থায়ী হয়নি । দিব্যার তখন পাঁচ কি ছয় বছর বয়স হঠাৎ একদিন বিক্রমের ক্যান্সার ধরা পড়লো । লাং ক্যাংসার । রক্ত বমির মাধ্যমে রোগটা ধরা পড়লো । দেখতে দেখতে সুস্থ শরীরের লোকটা রোগা হয়ে গেল । চোখ মুখ ঢুকে গেল । হাড় বেরিয়ে এলো । চিকিৎসার অনেক চেষ্টা করেছিল বিদ্যা। কিন্তু সব চেষ্টায় জল ঢেলে চলে গেল দিব্যার বাবা ।

দিব্যার বাবার মৃত্যুর পর বিদ্যা এই শাড়ি সেলাইয়ের দোকান করেই একা হাতে দিব্যাকে বড় করেছে । তাকে ভালো কলেজে পড়িয়েছে । ভালো টিউশনে পাঠিয়েছে । তার সমস্ত আবদার সে রাখার চেষ্টা করেছে । সেইজন্য বিদ্যা সমস্ত সুখ হাসি মুখে বিসর্জন দিয়েছে । এখানে উঠে আসার পরেই দোকান সূত্রেই মনীষার সাথে পরিচয় । দিব্যার বাবার মৃত্যুর পর মনীষা কোথা থেকে এক ক্লাসিক্যাল গানের রিয়েলিটি শোয়ের খোঁজ নিয়ে এসেছিল । রিয়েলিটি শোয়ের লোকরা বিদ্যাকে নেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল কিন্তু বিদ্যা মেয়ের মুখ চেয়ে রাজি হয়নি । না হলে বিদ্যার তখনকার পরিস্থিতি অর্থাৎ একজন বিধবা যার স্বামী ক্যান্সারে মারা গেছে । এক মেয়েকে নিয়ে থাকে । নিজে সেলাইয়ের কাজ করে এবং শাড়ির দোকান করে মেয়ের পড়াশোনার খরচা জোগায় । এবং তার ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করা । সবকিছুই সেই রিয়েলিটি শোয়ের trp বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল ।

নিজের অতীতের স্মৃতিচারণ হয়ে গেলে বিদ্যার বর্তমান পরিস্থিতি মনে পড়লো । আজ সকালে একবার তীর্থঙ্কর এসেছিল । বিয়ের ব্যাপারে কিছু না বললেও ওর আসার উদ্দেশ্য ওটাই ছিল । বিদ্যা মনে মনে বললো , ‘ না আর বিয়ে করবো না । অর্ধেক বয়স শেষ। যৌবন শেষ । এখন আর বিয়ে করার কোন মানেই হয়না । উপরন্তু কয়েক মাস পর বাড়িতে নতুন সদস্য আসবে । এখন তো আর নয়ই। দিব্যার বেবি হওয়ার পর যদি সে মুখ ফুটে বলে আমি তোমাদের সাথে থাকবো তাহলে বিক্রম মানা করতে পারবে না । করবে না নিশ্চয়ই।

কিন্তু এই গত দশ বার দিনে একটা জিনিষ সে লক্ষ্য করেছে । আর সেটা বারবার তার মনে খোঁচা দিচ্ছে। কথাটা হলো দিব্যা আর বিক্রমকে নিয়ে । তার মেয়ে জামাইয়ের সম্পর্ক যেন কেমন একটা । দুজনেই দুজনের সাথে তেমন কথা বলতে দেখা যায় না । এখানে আসার পরের দিন বিক্রম যখন সোনার বাংলা এনে দিয়েছিল তখন যেন দিব্যা ঠিক খুশি হয়নি । আর তাকে দেওয়া মোটা বালাটাও তার সরু বালা দিয়ে বদল করে নিয়েছিল । তখন থেকেই সে লক্ষ্য করেছে দুজন দুজনের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেনা ।

বিদ্যা যখন ছাদের কার্নিশে হাত দিয়ে নিজের অতীতের স্মৃতিচারণ , বর্তমান পরিস্থিতি এবং নিজের পরিবার নিয়ে চিন্তায় ব্যাস্ত তখন ছাদে নামার গ্রিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ছিল বিক্রম । এসেছিল দোকান খোলার জন্য বিদ্যা কে ডাকতে। কিন্তু বিদ্যাকে পিছন থেকে দেখার পরেই সে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। দুই হাত রেলিংয়ে দিয়ে দাঁড়ানোর জন্য বিদ্যার কোমর বেঁকে আছে । ভারী নিতম্ব সগর্বে উঁচু হয়ে সগর্বে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে । ঘাড়ের ঠিক নিচ থেকে এক শুকিয়ে যাওয়া নদী শুরু হয়েছে । যা ব্লাউজের ভিতর দিয়ে পিঠের মাঝ বরাবর গিয়ে কোমরের শাড়ির মধ্য দিয়ে সেই সুউচ্চ ভারী নিতম্বের মাঝে গিয়ে মিশেছে । এক দুই ফোঁটা জল যদি ঘাড়ে ফেলা যায় তাহলে ঠিক যেমন নদীর জল উৎস হতে মোহনায় গিয়ে মেশে তেমনি সেই জলের ফোঁটা ব্লাউজের ভিতর দিয়ে শিরদাঁড়া বরাবর গিয়ে নিতম্বের ফাঁকে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবে । এক নারীর পিঠ যে তার কাছে এতোটা আকর্ষনীয় হতে পারে সেটা বিক্রম বিদ্যাকে এইভাবে দেখার পর জানতে পারলো ।

বিদ্যার চুল বিনুনি করেই থাকে । কিন্তু এখন সে চুল খুলে রেখেছে । হয়তো খোঁপা করে বাঁধবে বলে । আর সেই খুলে রাখা কালো রেশমী চুল গঙ্গার হাওয়ায় উড়ছে । যেন খাঁচার পাখির মত বন্দী ছিল । এখন খাঁচা খুলে দেওয়ায় উড়ছে নিজের মন মত । বিদ্যার এই রূপেই তো পাগল । দিব্যাকে সে উলঙ্গ নগ্ন দেখেছে । কিন্তু দিব্যার নগ্ন শরীরের চেয়ে শাড়ী পরিহিতা বিদ্যার এই গৃহীনির রূপ যেন বিক্রমের কাছে আরো বেশি আকর্ষণীয়। মা মেয়ের মধ্যে তুলনা সে করতে চায়না । কিন্তু মাঝে মাঝে তার মনে হয় দিব্যার মধ্যে যা অনুপস্থিত তা এই মহিলার মধ্যে উপস্থিত। এমন কিছু যা একটা আছে যা দিব্যার নেই তাই সে অসম্পূর্ণ কিন্তু বিদ্যার তা আছে তাই সে সম্পূর্ণা। কিন্তু কি সেটা ?

বিক্রম সেখান থেকে চলে এলো । এসে রান্নাঘরের পাশে নিজের ঘরে ঢুকলো । দিব্যা সবে ভাতঘুম থেকে উঠে চোখ ডলছে। নিজের আগত সন্তানের মায়ের মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পরেও বিক্রম বুঝতে পারলো না দিব্যার মধ্যে কিসের অভাব ?

রাতের ডিনার খাওয়ার সময় বিদ্যা ইতস্তত করে বিক্রমকে বলেই ফেললো , “ দোকানের কাপড় আর বেশি নেই । না কিনলেই নয় । তুমি যাবে আমার সাথে ? „

“ হ্যাঁ অবশ্যই। সাহায্য করতে পারলে আমার ভালোই লাগবে । „

বিদ্যা আরো বললো , “ আসলে ভারী ব্যাগ চাগিয়ে আনতে একটু অসুবিধা হয় । আগে মনীষা আমার সাথে যেত। এখন তো আর ....

বিক্রমের বিদ্যার অসমাপ্ত কথার মানে বুঝতে অসুবিধা হলো না । মনীষা অর্থাৎ একসময়ের তার আবাসিকের শিক্ষিকা এবং তীর্থঙ্করের স্ত্রী । এখন তো আর বেঁচে নেই । তিন মাস আগে মারা গেছে । বিক্রম এটাও বুঝতে পারলো যে বিদ্যা তিন মাস ধরে দোকানের জন্য কাপড় কিনতে যাইনি। তাই দোকানটা এত খালি খালি লাগে ।

কিছুক্ষন পর বিদ্যা দিব্যাকে বললো , “ আমি সীমা কে আসতে বলেছি । এসে একবেলা থেকে যাবে । „

পরের দিন সকালে বড়বাজার যাওয়ার জন্য বিক্রম নিজের গাড়িটা স্টার্ট করার চেষ্টা করলো । হ্যাঁ যা ভেবেছে ঠিক তাই । এতদিন ইঞ্জিন বন্ধ ছিল বলে ব্যাটারি বশে গেছে । আগেও এরকম হয়েছে । তখন গাড়িটা প্রফুল্লদাকে দেখিয়েছিল । বলেছিল ব্যাটারি বদলালেই গাড়ি মাখনের মত চলবে । কিন্তু কিপ্টে বিক্রম ব্যাটারি কেনার জন্য টাকা খরচা করতে রাজি ছিল না । তাই অগত্যা গাড়ি থাকতেও অটো কিংবা বাসে ধাক্কাধাক্কি করে যেতে হবে ।

দুপুরে যথারীতি সবাই তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে এক ঘন্টা মত বিশ্রাম করে নিল । এর মধ্যে সীমা চলে এলো । বার হওয়ার আগে বিদ্যা সীমাকে বললো , “ কোন সমস্যা হলে ফোন করিস কিন্তু । „

বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিক্রম জিজ্ঞেস করলো , “ কিসে যাবেন ? „

“ অটোতেই যাই। এখান থেকে বড়বাজার অটো যায় । „

বিক্রম ভাবলো বড়বাজার এখান থেকে বেশি দূরে না । অটো যেতেই পারে । রুট থাকলেই হলো । দুটো গলি পার করে বিক্রম যেখান থেকে বাজার করে সেখান থেকেই বড়বাজার যাওয়ার অটো পাওয়া গেল । বড়বাজার পৌঁছে বিদ্যা এদোকান ওদোকান ঘুরে ঘুরে ব্লাউজ , শায়া , জামা , প্যান্টের কাপড় কিনলো । আর বেশ কিছু আটপৌরে সুতির শাড়িও কিনলো । আর বিক্রম সেগুলো বড় চটের ব্যাগে ভরে বিদ্যার পিছন পিছন ঘুরতে লাগলো । কিছুক্ষন পর বিক্রম যে দোকানে কাজ করতো সেই দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিক্রমের মনে হলো তার অতীতের কর্মস্থান বিদ্যাকে দেখানো উচিত। কিন্তু কেন এমন মনে হলো সেটা বিক্রম বুঝতে পারলো না । আগে তো কখনো এরকম অনুভুতি হয়নি । তাহলে আজ হঠাৎ এরকম অনুভুতি হওয়ার কারন কি ?

বিক্রম গলা ঝেড়ে নিয়ে বললো , “ আমি আগে এই দোকানে কাজ করতাম । „

বিদ্যা বিক্রমের ডান পাশে হেঁটে যাচ্ছিল । দোকানটাও ডানদিকেই। বিদ্যা দোকানটা দেখলো । পাইকারি চালের দোকান । দোকানের ভিতরে বড় বড় বস্তা রাখা আছে । বিক্রম এখানে কি কাজ করতো সেটা বিদ্যার বোধগম্য হলো না তাই সে জিজ্ঞেস করলো , “ এখানে কি কাজ করতে ? „

“ চালের বস্তা গাড়িতে তুলে দিতাম । „

বিদ্যা এই ছেলেটাকে যত জানছে তত অবাক হচ্ছে । এক সময় সে মোটবোঝাই এর কাজ করতো । এখন সে গ্যারাজে কাজ করে । আর একসময় মেয়ের মুখে বিক্রম গ্যারাজে কাজ করতো শুনেই সে এই সম্পর্কে রাজি হয়নি । কথাটা মনে পড়তেই বিদ্যার অনুশোচনা হলো ।

কিছুক্ষন পর একটা ফুচকার দোকানের সামনে দিয়ে যেতে যেতে বিদ্যা ভাবলো ‘ কতদিন খাওয়া হয়নি । শেষ কবে খেয়েছিলাম সেটাও মনে নেই ।  ‚

বিক্রম বিদ্যার চোখের চাউনি দেখেই তার মনের কথাটা হয়তো বুঝতে পারলো । সে জিজ্ঞেস করলো , “ খাবেন ? „

বিদ্যা মুখে কিছু না বললেও বিক্রম বুঝতে পারলো বিদ্যার ফুচকা খেতে কোন অসুবিধা নেই , “ আসুন । „

বিদ্যা বিক্রম দুজনেই ফুচকা খেল । বিদ্যার সাথে শপিং করাটা ভালোই লাগলো । কিন্তু ফেরার সময় এক বিচ্ছিরি নোংরা ঘটনা ঘটলো । যা বিদ্যার মনে বিক্রমের জন্য শ্রদ্ধা এবং সম্মান আরো বেড়ে গেল । ফেরার সময় কোন অটো ভাড়া পাওয়া গেল না । কেউ এত মালের সাথে যেতে রাজি নয় । এক অটোওয়ালা কে বিক্রম বললো , “ একটু বেশি দেব । চলুন না । „

অটোওয়ালা বিরক্ত হয়ে বললো , “ আরে মশাই বললাম তো যাব না । এই কিছুক্ষণ আগে এক পুলিশ আমাদের এক অটো ড্রাইভারকে চড় মেরেছে । তাই এখন এই লাইনের কারোর অটোই যাবে না । আপনারা বাস ধরুন । „

অগত্যা তাদের বাসই ধরতে হলো । আর বাসেই ঘটলো সেই ঘটনা । বাসে ওঠার আগে মোট চারটে ব্যাগের তিনটে ব্যাগ বিক্রম নিজের কাছে রাখলো । বিদ্যা দুটো চেয়েছিল কিন্তু বিক্রম তাকে একটাই ব্যাগ দিয়েছে । বিদ্যা বাসে উঠে একটা ব্যাগ নিয়ে একেবারে শেষের দিকে চলে গেল । আর বিক্রম তিনটে ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে পারলো না । তাই দরজার সামনের দিকেই রইলো ।

বেশ কিছুটা যাওয়ার পর বাসে আরো লোক উঠলো । অটো বন্ধই এই ভীড়ের কারন সেটা বিক্রম বুঝতে পারলো । বাসে এখন দাঁড়ানোরও জায়গা নেই । হঠাৎ পিছন থেকে বিক্রম এক মহিলার গলা পেল , “ আপনি একটু সড়ে দাঁড়ান । „

“ দেখতে পাচ্ছেন না কি অবস্থা। এই ভীড়ে আমাকে সড়ে দাঁড়াতে বলছেন । „

বিক্রম কথাটাকে তেমন আমল দিলনা । বাসে এরকম ধাক্কাধাক্কি প্রায়ই হয় । এক দুই মিনিট পরেই এবার বিক্রম স্পষ্ট শুনলো মহিলার কন্ঠস্বর। এবার সে চিনতেও পারলো এটা বিদ্যার গলা । বিদ্যা বলছে , “ লম্পট কোথাকার । তখন থেকে আপনাকে সড়ে দাঁড়াতে বলছি কথা কানে যাচ্ছে না আপনার । „

এবার বিক্রম পায়ের টোয়ের উপর ভর করে পিছনে তাকিয়ে দেখলো একটা বুড়ো মত লোক বিদ্যার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে । সে কি করছে সেটা বিক্রম বুঝতে দেরি হলো না । রাগে তার শরীর রিরি করে জ্বলতে লাগলো । দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কন্ডাকটার কে সে দেখতে পাচ্ছে । সে সঙ্গে সঙ্গে বললো , “ বাস থামান । থামান বলছি । „

তারপর যা হওয়ার তাই হলো । বাস মাঝ রাস্তায় থেমে গেল । বিক্রম তিনটে ব্যাগ ফেলে পিছনে গিয়ে লোকটাকে ধাক্কা দিতে দিতে বাসের বাইরে বার করে দিল , “ বেরোন আপনি । এইসব করতেই বাসে ওঠেন নাকি আপনারা । আপনাদের জন্যেই তো রাস্তায় চলা ফেরা করা দায় হয়ে উঠেছে । „ অন্য জায়গা হলে বিক্রম অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি দিত । কিন্তু এখানে নিজেকে সামলে নিল ।

লোকটা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই আর এক মহিলা বললো , “ আমিও দেখেছি লোকটার নোংরামি । তখন থেকে এর ওর গায়ে হাত দিচ্ছিল । „

লোকটাকে ধাক্কা মেরে বাসের বাইরে বার করে দিয়ে বিক্রম বললো , “ আপনার ভাগ্য ভালো আপনাকে আমি পুলিশে দিইনি । „

লোকটা মাথা নিচু করে রাস্তা পার করে একটা গলির ভিতর ঢুকে গেল । তারপর বাস আবার চলতে শুরু করলো । তারপর সারা রাস্তা এই ঘটনা নিয়েই চাপা গুঞ্জন চললো ।

বিক্রামের ডান হাতে দুটো আর বাম হাতে একটা , মোট তিনটে  বড়ো চটের ব্যাগ। আর বিদ্যার হাতে একটা চটের ব্যাগ । বিক্রমের ব্যাগ দুটোর তুলনায় বিদ্যার ব্যাগে কম কাপড় আছে তাই এটা তুলনায় হালকা । বিক্রম আগে আগে চলছে । আর বিদ্যা বিক্রমের পিছন পিছন । আর মাত্র একটা গলি বেঁকে গিয়ে কিছুটা গেলেই চায়ের দোকান পড়বে ।

বিদ্যা বিক্রমের পিঠ দেখছে তাই বিক্রমের মুখে ফুটে ওঠা রাগ সে দেখতে পাচ্ছে না । এ রাগ সেই বাসের লম্পট বুড়ো লোকটার উপর না । নিজের উপর । বিক্রম নিজের উপরেই রেগে আছে । যদি সে প্রফুল্লদারকথা মত গাড়ির ব্যাটারিটা বদলে নিতে তাহলে আর এইরকম ঘটনা ঘটতো না । গাড়ি স্টার্ট নিলে বাসে উঠতেই হতো না বিদ্যা আর বিক্রমকে । কালকেই গাড়ির ব্যাটারি বদল করবে সে মনে মনে ভেবে নিল ।

বিক্রম নিজের উপর রাখে ফুসলেও বিদ্যা অন্য কিছু ভাবছে । পথ চলতে চলতে সে বিক্রমের পিঠের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। চওড়া শক্তিশালী পিঠ , তার হাতে ভারী ব্যাগ থাকায় হাতের পেশী ফুলে আছে , হাতের পেশীর উপর ফুলে উঠা শিরা গুলোও এখন বিদ্যার চোখে দৃশ্যমান । জিন্স পড়ে থাকায় বিক্রমের পাছাও বিদ্যার কাছে গম্বুজের মতো মনে হতে লাগলো । আজ যা বাসে হয়েছে তাতে খুব একটা অস্বস্তি হচ্ছে না এমন নয় । খারাপ লাগছেই । তবে খারাপ লাগার অনুভূতির থেকেও বিক্রমের আচরণে সে অভিভূত। বিদ্যা তো বিক্রমকে বলেনি যে এক লম্পট পাষন্ড তার নোংরা মনস্কামনা চরিতার্থ করছে । বিক্রমকে সে সিনেমার হিরো ভাবছে না । এই কাজটা সকল পুরুষেরই কর্তব্য। বাসে তো আরো লোক ছিল কিন্তু তারা তো এগিয়ে আসেনি । কাপুরুষের দল সব । কিন্তু বিক্রম ব্যাতিক্রম। এরকম পুরুষই তো চাই জীবনে ।

আসলে বহুদিন পর । না , বহুদিন না । বহু বছর পর আজ বিকালটা বিদ্যার মনোরম কাটলো । বাসের ঘটনায় মনটা বিষিয়ে গেলেও বিক্রমের পুরুষশুলভ আচরণে মনটা এখন হালকা । বিক্রমের সাথে ফুচকা খাওয়া । বিক্রমের হাতে ব্যাগ দিয়ে নিজে পছন্দ করে শপিং করা । ঠিক যেমন দিব্যার বাবার সাথে দোকানের মাল কিনতে যেত তখনকার মত । তাই এই মানুষকে চোখভরে দেখতে ইচ্ছে করছে তার । আর তাই সে বিক্রমের পিঠের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে।

হঠাৎ বিদ্যার ঈর্ষা খুব হলো । এই পুরুষের উপর প্রথম তার অধিকার ছিল । দিব্যার না । বিক্রম তাকে গোলাপ দিয়েছিল । দিব্যাকে না । কথাটা মনে আসতেই মাথা নিচু করে আপন মনে বললো , ‘ না না এ আমি কি ভাবছি । নিজের মেয়েকে ঈর্ষা করছি । কেমন মা আমি ! ‚

বিক্রমের চওড়া পিঠের দিকে তাকিয়ে বিদ্যা নিজেকে একটা প্রশ্ন করলো , ‘ আমি কি সত্যিই এই ছেলেটাকে পছন্দ করি ? শুধু এর নাম দিব্যার বাবার নামের সাথে মিলে যায় । আর এগারো বছর আগে এই ছেলেটা আমাকে গোলাপ দিয়েছিল বলে কি আমি একে ভালোবাসি ? না কখনোই না । কিন্তু দিব্যার বাবাও তো শুধু একটা গোলাপ দিয়েছিল তারপর একটা প্রেমপত্র । সেই চিঠিতে দিব্যার বাবা নিজের মনের কথা বলেছিল বলে দিব্যার বাবাকে ভালোবেসে আমি দিব্যার বাবার সাথে পালিয়েছিলাম । ,

নিজের মনের সাথে প্রশ্ন উত্তর খেলতে খেলতে কখন সে বাড়ির সামনে চলে এসেছে সেটা বিদ্যা খেয়াল করেনি । বিক্রম লোহার গেট খুললে বিদ্যার চটক ভাঙলো । তারপর সে ভুলেও গেল এতক্ষন ধরে নিজের মনের সাথে চলা তর্কাতর্কি।

বিক্রম পরের দিন গিয়েই গাড়ির ব্যাটারি বদলে এসেছে । তারপর এক সপ্তাহ কেটে গেছে । সবকিছুই স্বাভাবিক । তিনজনের দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক ছন্দেই কাটছে । কিন্তু এই স্বাভাবিকের মধ্যেই কিছু অস্বাভাবিক জিনিস বিদ্যার চোখে ধরা দিয়েছে । তার মনে হচ্ছে বিক্রম আর তার মেয়ের মধ্যে সেই স্বামী স্ত্রীর রোমান্সটা যেন নেই । কখনো তাদের দুজনকে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে বিদ্যা দেখেনি । কিন্তু দেখাটাই তো স্বাভাবিক। একটা ছোট বাড়িতে একে অপরের অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখে ফেলাটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কিছুই বিদ্যা গত সতের আঠারো দিনে দেখেনি । কখনো দুজনকে হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি করতেও সে শোনেনি । এমনকি দিব্যার পেটে বিক্রম কান দিয়ে তার সন্তানের আওয়াজও শোনেনা । যা সব বাবাই করে থাকে । দিব্যার বাবা তো প্রতিদিন দুই তিনবার বিদ্যার পেটে কান পেতে দিব্যার নড়াচড়া শোনার চেষ্টা করতো ।

বিদ্যার চোখে যেমন বিক্রম আর দিব্যার রোমান্সহীন অস্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন ধরা দিয়েছে ঠিক বিক্রমের চোখেও মা মেয়ের অস্বাভাবিক সম্পর্ক ধরা দিয়েছে । দিব্যা কখনোই তার মায়ের সাথে সোজা মুখে বা মিষ্টি মুখে কথা বলে না । এমনকি বিদ্যাও দিব্যাকে বেশি ঘাঁটায় না। প্রয়োজন ছাড়া কেউই কারোর সাথে কথা বলে না । এমনকি বিদ্যা দিব্যাকে কোন কাজ করতেও বলে না । এটা কি প্রেগনেন্সির কারনে সাবধানতা বজায় রাখার জন্য নাকি সম্পর্কটাই এরকম সেটা বিক্রমের কাছে একটা ধাঁধা।

তবে মা মেয়ে যখন কথা বলে তখন বিক্রম দিব্যার মুখে রাগ লক্ষ্য করেছে । আর বিদ্যার মুখে কিছুটা অনুসূচনা বা অনুতপ্তের আভাস দেখেছে । তবে মায়ের জন্য মেয়ের এত কিসের রাগ সেটা বিক্রম বুঝতে পারেনি । দিব্যাকে একবার জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর সে পাইনি । আর বিদ্যাকে জিজ্ঞেস করা যায় না যে আপনার মেয়ে আপনার উপর রেগে থাকে কেন ? জিজ্ঞাসা করা গেলে সে অনেক আগেই জিজ্ঞেস করতো ।

এখন মাঝেমধ্যেই আবহাওয়া বদল হচ্ছে। সকালে তপ্ত রোদ তো বিকালে কুড়ি মিনিটের বৃষ্টি । আর বিকালে বৃষ্টি হওয়ার জন্য সন্ধ্যায় ভ্যাপসা গরম । ঠিক এইরকম ক্ষনিকের এক বৃষ্টিতে ভিজে দিব্যা বৃষ্টিতে ভিজে দিব্যা জ্বর বাঁধলো । বিদ্যা রেগে বললো , “ কি দরকার ছিল ভেজার । যখন জানিস তোর সহ্য হয়না । „

বিক্রম লক্ষ্য করলো এই প্রথম দিব্যা পাল্টা কিছু বললো না । কিন্তু অন্য সময় তো দিব্যা কিছু কথা শোনাতোই শোনাতো । রাতে বিদ্যা দিব্যার ঘরে শুয়ে রাত জেগে জলপট্টি করে দিল। তাই বিক্রম শুলো গেস্টরুমে।

বিদ্যার এই রাত জেগে মেয়ের সেবা করাটা বিক্রমকে কিছুটা হলেও বিদ্যার প্রতি টান বাড়ালো । দিব্যার বয়স কম এবং ডাকসাইটে সুন্দরী আর বিদ্যার এখন মধ্যবয়স্কা । রূপের দিক থেকে দিব্যা মায়ের থাকে এগিয়ে। কিন্তু একজন পুরুষের কাছে বিদ্যার মত গৃহীনি যে রাত জেগে একজন অসুস্থের সেবা করে , নিজের হাতে পরিবার টেনে নিয়ে যায় , ভালো রান্না করে খাওয়ায় । তাকেই তো বেশি গ্রহনযোগ্য মনে হবে । দিব্যা তো কখনো রান্না করে না । নিজের ঘর বাদে অন্য কিছু গোছায় না । কে খেলো কি খেলো না সেটা দেখে না । তাই এই শশুর বাড়িতে এসে বিদ্যার প্রতি টান দিন দিন যেন বাড়ছে বৈ কমছে না । বিক্রমের মনে হলো একটা পরিবারে শুধু স্বামী স্ত্রী যথেষ্ট নয় । বিদ্যার মত এক গুরুজন দায়িত্বশীল মহিলাও দরকার । তারপরেই সেটাকে পরিবার বলা যায় ।

বিদ্যার সাথে শপিং করতে খুব ভালো লেগেছিল বিক্রমের । বলা যায় বিক্রমের জীবনের সুন্দর এবং মনে রাখার মত একটা দিন । কিন্তু বিদ্যার সাথে শপিং করার সুযোগ আর একবার আসবে সেটা বিক্রম ভাবেনি । অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ। মহালয়া হতে আর ঠিক দশ দিন বাকি । সকাল বেলা শবনম এসে বললো , “ তোমলা পুজায় কেনাকাটা কলবে না ? কালকে ওই পাশেল বাসাল পায়েল খুব সুন্দল একটা শালী দেখাচ্ছিল। „

বিক্রম শাড়ি কে শালী বললো তাই বিক্রম আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না । ফিক করে হেসে ফেললো । শবনম মুখ ফুলিয়ে বললো , “ হেসে নাও দাদা । হেসে নাও । „

বিক্রম শবনমের রাগ দেখে বললো , “ আচ্ছা ঠিক আছে । তোকে এবার আমি একটা খুব সুন্দর জামদানী শাড়ী দেব । „

শবনমের চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠলো , “ সত্যি । „ এই চোখ লোভী চোখ নয় । খুশির চোখ ।

“ তিন সত্যি । কোন রঙের শাড়ি নিবি বল ? „

“ তোমাল যেটা পছন্দ হবে সেটাই এনো । „

যথারীতি তিনজন নিজেদের জন্য পূজার কেনাকাটা করতে বার হলো । বিকাল বিকাল তিন জন ক্যামাক স্ট্রিটের প্যান্টালুনসে চলে এলো । বিদ্যা একবার বলেছিল , “ নিউমার্কেট থেকেই তো কিনলে হয় । প্যান্টালুনসে তো সব কাপড়ের দাম বেশি। „

বিক্রম হেসে বললো , “ এটা আমার তরফ থেকে পূজার উপহার ভেবে নিন । পরের বছর থেকে আপনি যেখান থেকে বলবেন সেখান থেকেই কেনা হবে । „

পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে তারা ঘুরে ঘুরে শপিং করা শুরু করলো । দিব্যা নিজেই একটা সুন্দর চুড়িদার পছন্দ করার পর বিক্রম তাকে আর একটা অন্য রঙের কুর্তি দেখিয়ে বললো , “ এটা নাও । ভালো মানাবে তোমায় । „

দিব্যা বললো , “ আর নেব না । এই একটাই ঠিক আছে । „

মেয়ের কথা শুনে বিদ্যার বিস্ময়ের অন্ত রইলো না । দিব্যা বললো , “ এবছর তো আর পড়ে ঘুরতে পারবো না । তাই নিয়ে কি লাভ ? „

তারপর শবনমের জন্য বিক্রম একটা ভালো ময়ূরী রঙের জামদানি শাড়ি কিনলো । বিক্রম বিদ্যার জন্যেও দুটো শাড়ি পছন্দ করে দিল । কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনলো না । বিদ্যা মেয়ের উপর খুব রাগ হলো । স্বামীর জন্য পছন্দ করে জামা প্যান্ট কিনে দেওয়া তার বৌয়ের দায়িত্ব। কিন্তু দিব্যার সেদিকে তেমন একটা আগ্রহ নেই । কিন্তু মেয়েকে সবার সামনে কিছু বলাও যায় না । তাই বিদ্যা নিজে দুটো জিন্স আর দুটো জামা পছন্দ করে দিল ।

বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল । পরের দিন সকালে বিক্রম শবনমকে শাড়িটা দিল । শাড়িটা হাতে নিয়ে শবনমের চোখে মুখে ফুটে উঠলো খুশীর উচ্ছাস । সে বললো , “ এত খুব দামী শালি ! কত নিল ? „

“ দাম জেনে কি হবে তোর । পছন্দ হয়েছে কিনা বল ? „

শবনমের গলাটা ধরে এলো , “ খুব । „
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 5 users Like Bichitro's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: স্মৃতি সুন্দরী - by Bichitro - 28-09-2023, 10:46 PM



Users browsing this thread: