Thread Rating:
  • 49 Vote(s) - 3.24 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL মহাবীর্য্য ভাণ্ডার (নবকাহিনী শ্যামলবাবুর আখ্যান প্রকাশিত)
শ্যামলে শ্যামল তুমি নীলিমায় নীল
 
শ্রী মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা
[Image: images-5.jpg]

সেইবার সনাতনপুরে বিস্তর গোল উঠিল যখন শরৎ ঋষির আশ্রমে শ্যামলবাবুকে ভক্তবৃন্দের মধ্যে দেখা গেল। শ্যামলবাবুর ন্যয় বিষয়ী লোক সহসা ভোগসুখ ছাড়িয়া কীরূপে বানপ্রস্থে যাইবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত লহিলেন ইহা লইয়া মদনের চায়ের ঠেকে বহুবিধ আলোচনা হইতে লাগিল। কাহারও মতে, শ্যামলবাবুর মতিভ্রম হইয়াছে আবার কাহারও মতে শ্যামলবাবু নিশিরাতে স্বপ্নাদেশ পাইয়াছিলেন! কাহারও কাহারও ভাবনায় ইহাও ছিল যে হয়ত হুজুগ করিয়া কতিপয় দিবস আশ্রমে আনাগোনা করিতেছেন দিবস কয় অতিক্রান্ত হইলেই তিনি পুনরায় মুষিক হইয়া সংসারে স্থিত হইবেন! কিন্তু নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়া তিন মাস পরও যখন শ্যামলবাবুর বানপ্রস্থকাল কাটিবার সম্ভাবনা দেখা গেল না তখন সকলেই কষ্ট কষ্ট মনে শ্যামলবাবুর এই পরিবর্ত্তন মানিয়া লহিল। কিন্তু, ঠিক কী কারণে শ্যামলবাবুর এমন পদভ্রষ্ট হইল ইহা লইয়া জল্পনা শেষ হইল না তবে কেহই সঠিক কারণ জানিতে পারে নাই, তাহা জানিতেন শুধু নীলিমাদেবী, শ্যামলবাবুর ধর্ম্মপত্নী! একমাত্র নীলিমাদেবীই জানিতেন তাঁহার স্বামীর এহেন আচরণের পিছনে কোন চতুষ্টয় লুকাইয়া আছে, বলা বাহুল্য ইহার পিছনে নীলিমাদেবীর অবদান কম নহে!
বাল্যকাল হইতে নীলিমাদেবী জানিয়া আসিয়াছেন পতি যেমনই হোক সে পরমেশ্বরের সাক্ষাৎ রূপ! প্রয়োজনে জগদীশকে লহিয়া হেলাফেলা করা যাইলেও আপন স্বামীকে লহিয়া কিঞ্চিৎ পান হইতে চুন খসিবার জো নাই! তাহাতে পতি মদ্যপই হউক আর তাহার জুয়ার নেশাই থাকুক! তবে, নীলিমাদেবীর ভাগ্য সহায় ইহার কোনটাই শ্যামলবাবুর মধ্যে ছিল নাই, যদি কিছু ছিল তাহা ছিল কেবল বৌঠান প্রীতি! 'পরস্ত্রী' দেখিলেই শ্যামলবাবু কেমন জানি হইয়া যাইতেন, একগাল হাসিয়া 'বৌঠান!' বলিয়া সম্বোধন করিয়া সহজেই আলাপ জমাইয়া লইতেন। মাঝেমধ্যে নীলিমাদেবীর মনে হইত তিনি যদি শ্যামলবাবুর বউ না হইয়া বৌঠান হইতেন তবে বোধকরি স্বামীর মন তাঁহার প্রতি কিঞ্চিৎ বেশীই পড়িত! তবে, স্বামীর প্রতি কোনকালই তাঁহার ভক্তিশ্রদ্ধার অভাব ঘটে নাই। তাহার কারণ শ্যামলবাবু বড্ড পরোপকারী ছিলেন। নিত্য তিনি সেই বৌঠানদের বাটীতে কলাটা-মুলাটা লইয়া যাইতেন। উদার প্রতিবেশীর এক আদর্শ চরিত্র তাঁহার! যদিও তিনি কর্ণ ছিলেন না তবুও পড়শীদিগের মধ্যে দাতা বলিয়া খ্যাতি ছিল! দুঃখ ইহা যে এতদসত্ত্বেও নিন্দুকে কহিত, শ্যামলবাবুর এহেন উদারতা কেবল সুন্দরী পরস্ত্রীদিগের কারণেই! নইলে অবিবাহিত কিম্বা বিগতযৌবনাদের প্রতি তাঁহার দাতব্য কর্ত্তব্য সেইরূপ দেখিতে পাওয়া যায় না। তথাপি নীলিমাদেবী উহা কেবল গুজব ভাবিয়াছিলেন! "সামান্য বৌঠান প্রীতি আছে উনার! একটু হাসিয়া কথা কহে, এই যা!" এইসব ভাবিয়া চিন্তিয়া তিনি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়াছিলেন। অন্য কোন গূঢ় বা নিগূঢ় কিছু থাকিতে পারে ইহা তিনি দুঃস্বপ্নেও ভাবেন নাই। সুতরাং বলা চলে, মোটের উপর স্বামীপ্রীতি লহিয়া তিনি সুখেই সংসার করিতেছিলেন। কিন্তু সে সুখে বাধ সাধিল যখন ভূবন সামন্ত নিজের ধর্ম্মপত্নী মালিনীদেবীকে লহিয়া সনাতনপুরে আসিলেন এবং নীলিমা দেবীদের পাশের বাসাখানি ভাড়ায় লহিলেন।
মালিনীদেবীকে রূপসী কহিলে কম কহা হইবে। স্বর্গের অপ্সরাদের যেন জীবন্ত প্রতিমূর্তি মালিনীদেবী! শ্যামলবাবু সেই দিবসেই পড়শীর বাটীতে গিয়া তাঁহাদের সহিত ভারি ভাব জমাইয়া লহিলেন। তবে ভূবনবাবুর সহিত তাঁহার সখ্য তেমন জমিল না! সম্ভবতঃ ভূবন সামন্তের এমনধারা উদার পড়শী পছন্দ নহে। তাই দেখা যাইতে লাগিল শ্যামলবাবু ভূবনবাবুকে কেমন যেন এড়াইয়া চলিতে লাগিলেন; ভূবনবাবুর বাসায় তিনি নিত্ত্য যান ইহা সত্ত্য কিন্তু তাহা কেবল ভূবন বাবু নিজ বাটীতে অনুপস্থিত থাকিলে তবেই! 
সেইদিনও শ্যামলবাবু ভূবন সামন্তের বাসায় গিয়াছিলেন কিন্তু গোল বান্ধিল যখন তিনি ফিরিয়া আসিলেন। তাঁহার রূপ দেখিয়া নীলিমাদেবী চমকাইয়া উঠিলেন, শ্যামলবাবুর ফতুয়াখানি ছিঁড়িয়া গিয়াছে, বামচক্ষু ফুলিয়া গিয়াছে উপরন্তু কালশিটের দাগ! সারা মুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট! কেহ যেন শ্যামলবাবুকে 'প্রহারেণ ধনঞ্জয়!' প্রবাদের অর্থ বাস্তবের কষ্টিপাথরে যাচাই করাইয়া দিয়াছেন! স্বামীর এহেন দুর্দশা দেখিয়া নীলিমাদেবী ছুটিয়া আসিলেন এবং শীতল জল দ্বারা ব্যথার স্থান উপশমের কার্য্যে নিবৃত্ত হইলেন। অনতিক্ষণ পরে, একটী বাটিতে কীয়ৎ চুন ও হলুদ গরম করিয়া শ্যামলবাবুর হাড়ে মালিশ করিতে করিতে শুধাইলেন, "ওগো! তখন হইতে জিজ্ঞাসা করিতেছি, তোমারে এমনধারা কোন আটকুড়ার ব্যাটা পিটাইল শুনি?" শ্যামলবাবু যন্ত্রণাই কাতরাইতে কাতরাইতে কোনমতে কহিলেন, "আবার কে! ওই ভূবন হতভাগা! কোন বাড়া ভাতে আমি উহার ছাই দিতে গিয়াছিলাম কও দেখি গিন্নী!" নীলিমা দেবী বিস্মিত হইয়া শুধাইলেন, "অকারণে তোমারে এমন খড়ম-পেটা পিটিয়া দিল! আটকুড়ার ব্যাটার কি বোধগম‍্যি নাই নাকি!" শ্যামলবাবু নাক সিঁটকাইয়া কহিলেন, "তবে! মানিতেছি হতভাগার গায়ে জোর আছে, তাহা বলিয়া সে জোর আমার উপর ফলাইতে হইবে! আমি কী কুস্তীর আখড়ার বালিবস্তা যে যতজোর গায়ে আছে সকল দিয়া আমাকে পিটিয়া তক্তা বানাইয়া দিবে! কী দোষ আমার কও গিন্নী! আমি তো উপকারই করিতেছিলাম, বৌঠানের শাড়ি তুলিয়া দিতে গিয়াছিলাম তাহার জন্য আমারে এমন কুমড়া পটাশের ন্যয় পিষিয়া দিল! আহ্হঃ! কী যন্ত্রণা গিন্নী!" নীলিমা দেবী কিঞ্চিৎ অবাক হইলেন, "ওমা! ইহার জন্য গায়ে হাত তুলিতে হয়! শাড়িখানা ভূলুণ্ঠিত হইতে দিতে পারিতে, তুলিয়া দিবার কী প্রয়োজন ছিল! এইজন্য কহে, 'ভাল করিতে যাই গো মনে; মন্দ হয় কপালগুণে!' তোমার একদমই উচিৎ হয় নাই ঐ ছোটলোকদের বাটীতে যাওয়া! আহা! রে!" নীলিমাদেবী গরম চুন-হলুদের প্রলেপ শ্যামলবাবুর আহত গাত্রে লাগাইতে লাগাইতে স্বামীর সমব্যাথী হইয়া ভূবন সামন্তের চৌদ্দগুষ্টির ত্রি-ভূবন এক করিয়া দিতে লাগিলেন। 
শ্যামলবাবু কিঞ্চিৎকাল চুপ করিয়া, ধীর কণ্ঠে কহিলেন, "না মানে, শাড়িখানা যখন আমি তুলি তখন তাহা ঠিক ভূ-লুণ্ঠিত ছিল না!" নীলিমাদেবী বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া কহিলেন, "তবে! তারে মেলা ছিল বুঝি? কাচিয়া শুকাইবার পর!" 
শ্যামলবাবু ঘাড় নাড়িলেন, তাহার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, "নাহ! মাটিতেও পড়ে নাই আর তারেও শুকাইবার জন্য মেলা ছিল নাই! আমি যখন শাড়িখানা তুলিতে যাই, তখন মালিনী বৌঠান উহা পরিয়াই ছিল! প্রায় কোমর অবধি তুলিয়া দিয়াছিলাম কিন্তু তখনই কোনখান হইতে সহসা ভূবন ব্যাটা চলিয়া আসিল! উহার তো এখন দপ্তরে থাকিবার কথা, আসিবার কথা নহে!" 
শেষের কথাগুলি নীলিমাদেবী আদৌ শুনিতে পাইয়াছিলেন কীনা ইহা জানা নাই তবে এটুকু জানা গিয়াছিল যে, নীলিমা দেবী পালঙ্ক হইতে উঠিয়া গিয়া কামরার কপাটখানি বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। তাহার পর তিনি শ্যামলবাবুর সহিত কী করিয়াছিলেন ইহা সঠিক বুঝিতে পারা যায় না। তবে নিন্দুকে কহে, সেইদিন নাকি শ্যামলবাবু অনুভব করিয়াছিলেন, কেবল পতিই পরমেশ্বর হয় না, স্ত্রীও আদ্যাশক্তি হয়। এবং প্রয়োজনে নিজ পতিকে পরমেশ্বর হইতে মুহূর্তেই মহিষাসুর বানাইয়া বধ করিয়া দিবার ক্ষমতা ধরে। 


এই ঘটনার পর দিন সাতেক শ্যামলবাবু নিবারণ ডাক্তারের চেম্বারে ভর্ত্তি হইয়াছিলেন আর সুস্থ হইতেই তিনি শরৎ ঋষির আশ্রমে দীক্ষা লহেন। ইদানীং তাঁহাকে সনাতনপুরে সেইরূপ পরোপকার করিতে দেখা যায় না।



(সমাপ্ত)
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহাবীর্য্য ভাণ্ডার - by মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা - 24-09-2023, 01:55 PM



Users browsing this thread: 90 Guest(s)