21-09-2023, 08:59 PM
গেট দিয়ে বেরিয়ে আমাদের সামনে এসে গাঢ় নীল রঙের পিওরসিল্ক শাড়ি আর সাদা রঙের হাফস্লিভ ব্লাউজ পরিহিতা নন্দনার দিকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রবার্ট। একটা দমকা বাতাস এসে এক মুহূর্তের জন্য আমার বউয়ের শাড়ির আঁচলটা উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে আবার যথাস্থানে ফিরিয়ে দিলো। ফ্র্যাকশন অফ সেকেন্ডের জন্য ওর গভীর নাভিটা দৃশ্যমান হলো আমাদের সকলের সামনেই। আমার স্ত্রীর ঈশ্বর প্রদত্ত শারীরিক বিভঙ্গ বোধহয় ওর এই আপাত রুচিশীল পোশাকেও আড়াল করা সম্ভবপর হচ্ছিলো না। অপরূপ সুন্দরী, অতি ভারী প্রবৃদ্ধ বক্ষযুগলের ভারে সামনের দিকে ইষৎ ঝুঁকে যাওয়া গুরু নিতম্বিনী নন্দনার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলো না রবার্ট এবং তার দুই সঙ্গী প্রমোদ আর ওই পাঞ্জাবিটা।
তিনজনেই রংবেরঙের পাতলা সুতির কাপড়ের শর্টস আর ততোধিক পাতলা হাতকাটা ফতুয়া পড়ে রয়েছে। লক্ষ্য করলাম, ওদের তিনজনের দৃষ্টি অনুসরণ করে যথেষ্ট অপ্রস্তুতে পড়ে গেছে আমার স্ত্রী। বিষয়টাকে হাল্কা করে দেওয়ার জন্য গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনাদের ফ্যামিলি দেখছি না ওঁরা কি ভেতরে আছেন?"
"লো, কার লো বাত! তু কৌন? ম্যায় খামখা। তুমাকে ফটর ফটর করতে কে বলেছে এখানে?" পাশ থেকে বলে উঠলো হার্জিন্দার।
বরাবরই ভীষণ রাফ এন্ড টাফ এবং কটুভাষী এই হার্জিন্দার। ওর মনে যা, মুখেও তাই। সর্বোপরি আমার সঙ্গে ও সবসময় এইভাবেই কথা বলে। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টা দৃষ্টিকটু এবং অপমানজনক হয়ে উঠতে পারে, এটা মনে করে প্রমোদ বললো, "তুমি ফ্যামিলি বলতে বউ বাচ্চার কথা বলছো কি? আমার ফ্যামিলি তো পাঞ্জিমে, রবার্টেরও তাই। আর ওই বাঞ্চোতের পরিবার তো জলন্ধরে থাকে, সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো। এত শর্ট নোটিশে তো ওদের পক্ষে আসা সম্ভব নয়! আমাদের ফ্যামিলি তো তোমরাই .. এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি বলতে পারো। তবে এখানে আমাদের সঙ্গে আরও দু'টো পরিবার এসেছে। ওই ফ্যামিলিতে হাজব্যান্ড, ওয়াইফ, তাদের দুই ছেলে তো রয়েছেই; তার সঙ্গে এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি হিসেবে আরো দু'জন লোক এসেছে। যারা এখন মিলেমিশে একই পরিবারের লোক হয়ে গেছে। বিষয়টা বুঝতে পারলে না, তাইতো? একটু ওয়েট করো, ওরা সী-বিচে ঘুরতে গেছে, এক্ষুনি চলে আসবে। তবে তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করে রয়েছে, এইটুকু বলতে পারি।
"না না, তাই কখনো হয়? ওদের আসার কোনো ঠিক নেই। আমার নন্দনা আর বাপ্পাবাবু কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে? এতটা জার্নি করে এসেছে। ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আগে কিছু খেয়ে নিক। ওদের সঙ্গে পরে আলাপ করলেও চলবে।" আমার উপস্থিতি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আমার স্ত্রীকে "আমার নন্দনা" সম্বোধন করে আর তার সঙ্গে সান্তনা পুরস্কার হিসেবে আমার ছেলের নাম উল্লেখ করে কথাগুলো বললো রবার্ট।
প্রথমে প্রমোদ আর হার্জিন্দর, তারপর বাপ্পাকে কোলে তুলে নিয়ে নন্দনার ঠিক পাশে পাশে হাঁটছিলো রবার্ট। বুঝতে পারলাম আমার বউয়ের সান্নিধ্য এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়তে চায় না ও। অপমান সহ্য করেই ওদের পেছন পেছন দুটো ব্যাগ হাতে নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলাম আমি। একতলা বাড়িটার অন্দরমহল যথেষ্ট সুসজ্জিত। ঢুকেই একটা বড় হলঘর। যার একপ্রান্তে ছোট বড় মিলিয়ে অতিথিদের বসবার জন্য কয়েকটা গদি আঁটা সোফা রাখা আছে। অপরপ্রান্তে আটটা চেয়ারযুক্ত একটি প্রকাণ্ড ডাইনিং টেবিল। তার পেছনে কিচেন। রান্নাঘরের ডান দিকটায় পাশাপাশি দুটো ঘর, দুটোর দরজাই বর্তমানে বন্ধ আছে। শুনলাম, ওদের সঙ্গে আরও যে দুটো ফ্যামিলি এসেছে, এগুলো তাদের ঘর।
ডাইনিংরুমের অপরপ্রান্তে যেখানে সোফাগুলো রাখা আছে, তার বাঁ'দিকে আরও দুটো ঘর দেখতে পেলাম। যে দুটোর দরজা বর্তমানে খোলা রয়েছে। জানতে পারলাম ওই দুটি এই থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। "তাহলে আমরা থাকবো কোথায়?" প্রমোদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন করে উত্তর পেলাম, যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় ন'জন .." এই কথা শোনার পর, আমি আর বেশি ঘাঁটালাম না বিষয়টা নিয়ে।
ওদের তিনজনের ফ্যামিলির লোকজন কেউই আসেনি, এটা শুনে কিছুটা দমে গিয়েছিলো নন্দনা। বেডরুমেগুলোর সঙ্গে অ্যাটাচ বাথরুমে না গিয়ে হলঘরটির সঙ্গে যে কমন বাথরুমটা রয়েছে, সেটা থেকে বাপ্পাকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে এসে নন্দনা নিজে ঢুকে গেলো বাথরুমে। ততক্ষণে ডাইনিং টেবিলে খাবার সার্ভ করতে শুরু করে দিয়েছে অশোক বনের কোনো এক কদাকার রাক্ষসী। না মানে, যে মহিলাটি টেবিলে খাওয়ার পরিবেশন করছিলো, তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আমার এই উপমাটিই মনে পড়লো।
আমরা এখানে পৌঁছানোর পর আধঘন্টার উপর কেটে গিয়েছে .. ঘড়িতে এখন সোয়া বারোটা। টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলাম পমফ্রেট ফ্রাই, মটন বিরিয়ানি আর চিকেন কোর্মা সহযোগে লাঞ্চ পরিবেশন করা হয়েছে। আমার বউ বাথরুম থেকে বেরোনোর পর দেখলাম ও নিজের শাড়ি চেঞ্জ করেনি। সেন্টার টেবিলের উপর রাখা চশমাটা পড়ে নিয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে খেতে বসে গেলো।
"বৌমা অন্যদিনের তুলনায় আজ ভীষণ চুপচাপ মনে হচ্ছে। কি বলো রবার্ট?" আমার বউকে যেন বহুবছর ধরে চেনে এরকম একটা ভঙ্গি করে, ওর বন্ধু রবার্টের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললো প্রমোদ।
"আসলে এখানে আসার পর ও যেই শুনেছে আমাদের ফ্যামিলি থেকে কেউ আসেনি, তখন থেকেই মুড অফ হয়ে গেছে ওর। আসলে এতগুলো পুরুষের মাঝে ও কার সঙ্গে কথা বলবে, কিভাবে কাটাবে এই কয়েকটা দিন, সেটা ভেবেই মনমরা হয়ে গেছে আমার, মেরা মতলব আমাদের নন্দনা। কিন্তু ও নিজেও জানে না, ওর জন্য এখানে এমন একটা সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করে রেখেছি আমরা, যেটা দেখলে ওর মুড একদম চাঙ্গা হয়ে যাবে। কে বলতে পারে, খুশি হয়ে তখন হয়তো আমাদের প্রত্যেকের গালে একটা করে চুমু খেয়ে নেবে তোমার বৌমা!" উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে এইরূপ উক্তি করলো রবার্ট।
লক্ষ্য করলাম অসভ্য গোয়ানিজটার এরকম বেয়াড়া মন্তব্যে আমার বউয়ের মুখমণ্ডল রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু তখন থেকে ওরা যে সারপ্রাইজের কথা বলে চলেছে, সেটা আসলে কি? তা জানার জন্য মনটা বড়ই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলো আমার। দেখতে অশোক বনের কদাকার রাক্ষসীর মতো হলে কি হবে, রান্নার হাত দুর্দান্ত রাঁধুনীটির। চেটেপুটে দুপুরের খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবো, এমন সময় হলঘরে দু'জন পুরুষমানুষ প্রবেশ করলো।
ভীষণ ফর্সা, একমাথা ঘন কালো চুল বিশিষ্ট, টিকোলো নাকের, খুব স্টাইলিশভাবে ছোট ছোট করে ছাঁটা একমুখ দাড়ি, কটা চোখের, পেশীবহুল চেহারার জিন্সের শর্ট প্যান্ট আর কালো স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত অল্পবয়সী ছেলেটির চেহারা পুরো নায়কোচিত। তবে ছেলেটির কটা চোখদুটো ভীষণ ক্রূর, বেশিক্ষণ ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। ওর সঙ্গে যে মধ্যবয়স্ক লোকটি ঢুকলো, ওনার চেহারা অনেকটা পাশ্চাত্য সিনেমার মরুপ্রধান শুষ্ক অঞ্চলের বর্গী ঘোড়সওয়ারদের মতো। মধ্য চল্লিশের, রৌদ্রে পুড়ে গায়ের রঙ তামাটে হয়ে যাওয়া, লম্বা-চওড়া চেহারার অধিকারী, মাথার চুল ক্রমশ পাতলা হয়ে যাওয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকলেও গালের প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত নেমে আসা মোটা এবং লম্বা জুলফি, গজদন্তের অধিকারী, হাতের বেরিয়ে থাকা অংশ এবং কর্ণগহ্বরে চুলের আধিক্য দেখলে বোঝা যায় এই ব্যক্তির শরীর কেশ সর্বস্ব। সর্বক্ষণ অস্থির চোখদুটি আপাতদৃষ্টিতে আমুদে মনে হলেও ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত স্থির বাঁ'চোখের মণি অনেকটা হিংস্র হায়েনার মতো।
'এরা আবার কে? জুট সাপ্লায়ার? এরাই কি আমাদের জন্য সারপ্রাইজ? কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? এদের তো আমি চিনিইনা।' এই প্রশ্নগুলো মাথায় কিলবিল করছিলো, এমতাবস্থায় হলঘরে যে দু'জন, বলা ভালো আড়াইজন ঢুকলো, তারা আমার কাছে তো বটেই, এমনকি নন্দনা আর বাপ্পার কাছেও বিশেষ পরিচিত। ইনফ্যাক্ট আমার স্ত্রীর সুত্রেই তো ওদের সঙ্গে আমার আত্মীয়তা। সৈকত, তার পাশে ওর বাবা মানে আমার ভায়রাভাই শান্তিবাবুর কোলে ওদের ছোট ছেলে সাগরকে দেখে যারপরনাই অবাক হলাম আমি। এরা এখানে কি করছে?
কিন্তু এখনও চমকের অনেক বাকি ছিলো। "কি মজা, কি মজা, সৈকত দাদা আর পুচকুটার সঙ্গে বড়মাসিও এসেছে। তাহলে তো এবার খুব আনন্দ করবো আমরা!" এই বলে চেয়ার থেকে নেমে ছুটে গিয়ে আমার বউয়ের জ্যাঠতুতো দিদি বন্দনাকে জড়িয়ে ধরলো বাপ্পা। যে মহিলাকে জীবনে কোনোদিন শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু পড়তে দেখিনি, দেখলাম আমার সামনে একটা ডেনিম কালারের হটপ্যান্ট আর পাতলা ফিনফিনে সাদা রঙের একটা হাতা গোটানো ফুলস্লিভ শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বন্দনা।
আমার বউয়ের থেকে অনেকটাই স্বাস্থ্যবতী এবং বড়সড় চেহারা আমার বড় শ্যালিকার। বন্দনার সম্পূর্ণ ভেজা জামাকাপড় দেখে বুঝলাম, ও সমুদ্রে স্নান করে এসেছে। হটপ্যান্টের নিচে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস পড়েছে কিনা বুঝতে পারলাম না, তবে পাতলা শার্টের নিচে ব্রা না পড়ার জন্য আমার বড় শ্যালিকার ফুটবলের মতো বুকের দুটো থলথলে মাংসপিণ্ড এবং তার মাঝখানে বোঁটাদুটোর অস্তিত্ব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
"দিদিভাই .. তুমি এখানে, এভাবে?" এইরূপ উক্তি করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো নন্দনা। লক্ষ্য করলাম বিনা মেঘে বজ্রপাত হলে মুখমন্ডলের যেরকম অবস্থা হয়, আমার বউয়ের মুখেরও সেই অবস্থাই হয়েছে।
তিনজনেই রংবেরঙের পাতলা সুতির কাপড়ের শর্টস আর ততোধিক পাতলা হাতকাটা ফতুয়া পড়ে রয়েছে। লক্ষ্য করলাম, ওদের তিনজনের দৃষ্টি অনুসরণ করে যথেষ্ট অপ্রস্তুতে পড়ে গেছে আমার স্ত্রী। বিষয়টাকে হাল্কা করে দেওয়ার জন্য গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনাদের ফ্যামিলি দেখছি না ওঁরা কি ভেতরে আছেন?"
"লো, কার লো বাত! তু কৌন? ম্যায় খামখা। তুমাকে ফটর ফটর করতে কে বলেছে এখানে?" পাশ থেকে বলে উঠলো হার্জিন্দার।
বরাবরই ভীষণ রাফ এন্ড টাফ এবং কটুভাষী এই হার্জিন্দার। ওর মনে যা, মুখেও তাই। সর্বোপরি আমার সঙ্গে ও সবসময় এইভাবেই কথা বলে। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টা দৃষ্টিকটু এবং অপমানজনক হয়ে উঠতে পারে, এটা মনে করে প্রমোদ বললো, "তুমি ফ্যামিলি বলতে বউ বাচ্চার কথা বলছো কি? আমার ফ্যামিলি তো পাঞ্জিমে, রবার্টেরও তাই। আর ওই বাঞ্চোতের পরিবার তো জলন্ধরে থাকে, সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো। এত শর্ট নোটিশে তো ওদের পক্ষে আসা সম্ভব নয়! আমাদের ফ্যামিলি তো তোমরাই .. এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি বলতে পারো। তবে এখানে আমাদের সঙ্গে আরও দু'টো পরিবার এসেছে। ওই ফ্যামিলিতে হাজব্যান্ড, ওয়াইফ, তাদের দুই ছেলে তো রয়েছেই; তার সঙ্গে এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি হিসেবে আরো দু'জন লোক এসেছে। যারা এখন মিলেমিশে একই পরিবারের লোক হয়ে গেছে। বিষয়টা বুঝতে পারলে না, তাইতো? একটু ওয়েট করো, ওরা সী-বিচে ঘুরতে গেছে, এক্ষুনি চলে আসবে। তবে তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করে রয়েছে, এইটুকু বলতে পারি।
"না না, তাই কখনো হয়? ওদের আসার কোনো ঠিক নেই। আমার নন্দনা আর বাপ্পাবাবু কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে? এতটা জার্নি করে এসেছে। ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আগে কিছু খেয়ে নিক। ওদের সঙ্গে পরে আলাপ করলেও চলবে।" আমার উপস্থিতি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আমার স্ত্রীকে "আমার নন্দনা" সম্বোধন করে আর তার সঙ্গে সান্তনা পুরস্কার হিসেবে আমার ছেলের নাম উল্লেখ করে কথাগুলো বললো রবার্ট।
★★★★
প্রথমে প্রমোদ আর হার্জিন্দর, তারপর বাপ্পাকে কোলে তুলে নিয়ে নন্দনার ঠিক পাশে পাশে হাঁটছিলো রবার্ট। বুঝতে পারলাম আমার বউয়ের সান্নিধ্য এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়তে চায় না ও। অপমান সহ্য করেই ওদের পেছন পেছন দুটো ব্যাগ হাতে নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলাম আমি। একতলা বাড়িটার অন্দরমহল যথেষ্ট সুসজ্জিত। ঢুকেই একটা বড় হলঘর। যার একপ্রান্তে ছোট বড় মিলিয়ে অতিথিদের বসবার জন্য কয়েকটা গদি আঁটা সোফা রাখা আছে। অপরপ্রান্তে আটটা চেয়ারযুক্ত একটি প্রকাণ্ড ডাইনিং টেবিল। তার পেছনে কিচেন। রান্নাঘরের ডান দিকটায় পাশাপাশি দুটো ঘর, দুটোর দরজাই বর্তমানে বন্ধ আছে। শুনলাম, ওদের সঙ্গে আরও যে দুটো ফ্যামিলি এসেছে, এগুলো তাদের ঘর।
ডাইনিংরুমের অপরপ্রান্তে যেখানে সোফাগুলো রাখা আছে, তার বাঁ'দিকে আরও দুটো ঘর দেখতে পেলাম। যে দুটোর দরজা বর্তমানে খোলা রয়েছে। জানতে পারলাম ওই দুটি এই থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। "তাহলে আমরা থাকবো কোথায়?" প্রমোদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন করে উত্তর পেলাম, যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় ন'জন .." এই কথা শোনার পর, আমি আর বেশি ঘাঁটালাম না বিষয়টা নিয়ে।
ওদের তিনজনের ফ্যামিলির লোকজন কেউই আসেনি, এটা শুনে কিছুটা দমে গিয়েছিলো নন্দনা। বেডরুমেগুলোর সঙ্গে অ্যাটাচ বাথরুমে না গিয়ে হলঘরটির সঙ্গে যে কমন বাথরুমটা রয়েছে, সেটা থেকে বাপ্পাকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে এসে নন্দনা নিজে ঢুকে গেলো বাথরুমে। ততক্ষণে ডাইনিং টেবিলে খাবার সার্ভ করতে শুরু করে দিয়েছে অশোক বনের কোনো এক কদাকার রাক্ষসী। না মানে, যে মহিলাটি টেবিলে খাওয়ার পরিবেশন করছিলো, তার ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আমার এই উপমাটিই মনে পড়লো।
আমরা এখানে পৌঁছানোর পর আধঘন্টার উপর কেটে গিয়েছে .. ঘড়িতে এখন সোয়া বারোটা। টেবিলের কাছে গিয়ে দেখলাম পমফ্রেট ফ্রাই, মটন বিরিয়ানি আর চিকেন কোর্মা সহযোগে লাঞ্চ পরিবেশন করা হয়েছে। আমার বউ বাথরুম থেকে বেরোনোর পর দেখলাম ও নিজের শাড়ি চেঞ্জ করেনি। সেন্টার টেবিলের উপর রাখা চশমাটা পড়ে নিয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে খেতে বসে গেলো।
★★★★
"বৌমা অন্যদিনের তুলনায় আজ ভীষণ চুপচাপ মনে হচ্ছে। কি বলো রবার্ট?" আমার বউকে যেন বহুবছর ধরে চেনে এরকম একটা ভঙ্গি করে, ওর বন্ধু রবার্টের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললো প্রমোদ।
"আসলে এখানে আসার পর ও যেই শুনেছে আমাদের ফ্যামিলি থেকে কেউ আসেনি, তখন থেকেই মুড অফ হয়ে গেছে ওর। আসলে এতগুলো পুরুষের মাঝে ও কার সঙ্গে কথা বলবে, কিভাবে কাটাবে এই কয়েকটা দিন, সেটা ভেবেই মনমরা হয়ে গেছে আমার, মেরা মতলব আমাদের নন্দনা। কিন্তু ও নিজেও জানে না, ওর জন্য এখানে এমন একটা সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করে রেখেছি আমরা, যেটা দেখলে ওর মুড একদম চাঙ্গা হয়ে যাবে। কে বলতে পারে, খুশি হয়ে তখন হয়তো আমাদের প্রত্যেকের গালে একটা করে চুমু খেয়ে নেবে তোমার বৌমা!" উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে এইরূপ উক্তি করলো রবার্ট।
লক্ষ্য করলাম অসভ্য গোয়ানিজটার এরকম বেয়াড়া মন্তব্যে আমার বউয়ের মুখমণ্ডল রক্তিমবর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু তখন থেকে ওরা যে সারপ্রাইজের কথা বলে চলেছে, সেটা আসলে কি? তা জানার জন্য মনটা বড়ই ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলো আমার। দেখতে অশোক বনের কদাকার রাক্ষসীর মতো হলে কি হবে, রান্নার হাত দুর্দান্ত রাঁধুনীটির। চেটেপুটে দুপুরের খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবো, এমন সময় হলঘরে দু'জন পুরুষমানুষ প্রবেশ করলো।
ভীষণ ফর্সা, একমাথা ঘন কালো চুল বিশিষ্ট, টিকোলো নাকের, খুব স্টাইলিশভাবে ছোট ছোট করে ছাঁটা একমুখ দাড়ি, কটা চোখের, পেশীবহুল চেহারার জিন্সের শর্ট প্যান্ট আর কালো স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত অল্পবয়সী ছেলেটির চেহারা পুরো নায়কোচিত। তবে ছেলেটির কটা চোখদুটো ভীষণ ক্রূর, বেশিক্ষণ ওই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। ওর সঙ্গে যে মধ্যবয়স্ক লোকটি ঢুকলো, ওনার চেহারা অনেকটা পাশ্চাত্য সিনেমার মরুপ্রধান শুষ্ক অঞ্চলের বর্গী ঘোড়সওয়ারদের মতো। মধ্য চল্লিশের, রৌদ্রে পুড়ে গায়ের রঙ তামাটে হয়ে যাওয়া, লম্বা-চওড়া চেহারার অধিকারী, মাথার চুল ক্রমশ পাতলা হয়ে যাওয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকলেও গালের প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত নেমে আসা মোটা এবং লম্বা জুলফি, গজদন্তের অধিকারী, হাতের বেরিয়ে থাকা অংশ এবং কর্ণগহ্বরে চুলের আধিক্য দেখলে বোঝা যায় এই ব্যক্তির শরীর কেশ সর্বস্ব। সর্বক্ষণ অস্থির চোখদুটি আপাতদৃষ্টিতে আমুদে মনে হলেও ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত স্থির বাঁ'চোখের মণি অনেকটা হিংস্র হায়েনার মতো।
'এরা আবার কে? জুট সাপ্লায়ার? এরাই কি আমাদের জন্য সারপ্রাইজ? কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? এদের তো আমি চিনিইনা।' এই প্রশ্নগুলো মাথায় কিলবিল করছিলো, এমতাবস্থায় হলঘরে যে দু'জন, বলা ভালো আড়াইজন ঢুকলো, তারা আমার কাছে তো বটেই, এমনকি নন্দনা আর বাপ্পার কাছেও বিশেষ পরিচিত। ইনফ্যাক্ট আমার স্ত্রীর সুত্রেই তো ওদের সঙ্গে আমার আত্মীয়তা। সৈকত, তার পাশে ওর বাবা মানে আমার ভায়রাভাই শান্তিবাবুর কোলে ওদের ছোট ছেলে সাগরকে দেখে যারপরনাই অবাক হলাম আমি। এরা এখানে কি করছে?
কিন্তু এখনও চমকের অনেক বাকি ছিলো। "কি মজা, কি মজা, সৈকত দাদা আর পুচকুটার সঙ্গে বড়মাসিও এসেছে। তাহলে তো এবার খুব আনন্দ করবো আমরা!" এই বলে চেয়ার থেকে নেমে ছুটে গিয়ে আমার বউয়ের জ্যাঠতুতো দিদি বন্দনাকে জড়িয়ে ধরলো বাপ্পা। যে মহিলাকে জীবনে কোনোদিন শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু পড়তে দেখিনি, দেখলাম আমার সামনে একটা ডেনিম কালারের হটপ্যান্ট আর পাতলা ফিনফিনে সাদা রঙের একটা হাতা গোটানো ফুলস্লিভ শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বন্দনা।
আমার বউয়ের থেকে অনেকটাই স্বাস্থ্যবতী এবং বড়সড় চেহারা আমার বড় শ্যালিকার। বন্দনার সম্পূর্ণ ভেজা জামাকাপড় দেখে বুঝলাম, ও সমুদ্রে স্নান করে এসেছে। হটপ্যান্টের নিচে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস পড়েছে কিনা বুঝতে পারলাম না, তবে পাতলা শার্টের নিচে ব্রা না পড়ার জন্য আমার বড় শ্যালিকার ফুটবলের মতো বুকের দুটো থলথলে মাংসপিণ্ড এবং তার মাঝখানে বোঁটাদুটোর অস্তিত্ব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।
"দিদিভাই .. তুমি এখানে, এভাবে?" এইরূপ উক্তি করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো নন্দনা। লক্ষ্য করলাম বিনা মেঘে বজ্রপাত হলে মুখমন্ডলের যেরকম অবস্থা হয়, আমার বউয়ের মুখেরও সেই অবস্থাই হয়েছে।