21-09-2023, 08:57 PM
(৫)
কয়েক মুহূর্ত আগে স্লিভলেস ব্লাউজটার অপসারণের ফলে ঊর্ধ্বাঙ্গে শুধুমাত্র ব্রা পরিহিতা বিপুল-স্তনী নন্দনার বুকদুটোর অর্ধেকের বেশি উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। ব্রেসিয়ারের ভেতরে হাঁসফাঁস করতে থাকা ছত্রিশ সাইজের বুকদুটোর মাঝে অত্যন্ত গভীর স্তন বিভাজিকা বিপজ্জনকভাবে প্রকট হয়ে নিজেদের দিকে নির্লজ্জভাবে আহ্বান জানাচ্ছে। এমনকি ব্রায়ের সম্মুখভাগে স্তনবৃন্ত দুটি এখনো ঢাকা অবস্থায় থাকলেও, ব্রায়ের পাশ দিয়ে নন্দনার অত্যাধিক বড় আকারের অ্যারিওলার কিছু অংশ উঁকি দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
নন্দনার স্তন বিভাজিকায় মুখ গুঁজে দিয়ে মাতালের মতো ঘ্রানাস্বাদন করার পর প্রমোদ যখন ওখান থেকে মুখ তুললো, দেখলাম নন্দনার বুকের খাঁজ এবং উপরের অংশ গোয়ানিজটার লালায় ভেজা। "তুমি বগলে চুল রাখো দেখছি! মেয়েদের বগলের চুল আমার ভীষণ পছন্দের। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তোমার বগলে রেজারের ছোঁয়া পড়েনি কোনোদিন, কিন্তু ট্রিমার দিয়ে রোজ নিয়ম করে ছাঁটো তোমার বগলের চুলগুলো। কিই, ঠিক বললাম তো বৌমা?" নন্দনার হাতদুটো মাথার উপর উঠিয়ে নিজের বাঁ'হাতের মুষ্টিতে চেপে ধরে ওর খুব ছোট ছোট, পাতলা, কোঁকড়ানো চুলে ভরা ওর ফর্সা বগলের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাগুলো বলে আমার বউয়ের ডানদিকের বগলে নিজের মুখ গুঁজে দিলো হারামি গোয়ানিজটা।
দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে রাত এগারোটার দিকে এগিয়ে চলেছে। আর কতক্ষণ থাকবে লোকটা? বাড়িটাকে তো আর বেলেল্লাপনার প্রাণকেন্দ্র হতে দেওয়া যায় না! সর্বপরি ঘুমন্ত অবস্থায় থাকলেও আমার ছেলে এখানে উপস্থিত রয়েছে। এরপর আমি যদি প্রতিবাদ না করি, তাহলে নিজের বিবেক দংশনের কথা তো ছেড়েই দিলাম, আমার স্ত্রীর সামনে আমি কোনোদিন মাথা তুলে কথা বলতে পারবো না। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দ্রুতপায়ে বিছানার কাছে গিয়ে খালি গায়ে শুধুমাত্র জাঙিয়া পরিহিত প্রমোদের পিঠে হাত রেখে বললাম, "এটা কি করছেন স্যার? ট্রিটমেন্ট হয়নি এখনো? অনেক রাত হলো, এবার বোধহয় বাড়ি যাওয়া উচিত আপনার .."
আমার কথাগুলোর শেষ হওয়ার আগেই নন্দনার উপর থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো প্রমোদ, সেইসঙ্গে আমার বউয়ের হাতটা ধরে একটা হেঁচকা টান মেরে কিছুটা জোর করেই ওকেও মাটিতে ঠিক আমার সামনে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরলো গোয়ানিজটা। তারপর নন্দনার চোখের সামনে অবিন্যস্ত ভাবে চলে আসা চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো, "হ্যাঁ, এবার আমাকে যেতে হবে, তবে তোমার কথায় নয়। আমি আমার নিজের মর্জির মালিক। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে দিয়ে কেউ কোনো কাজ করাতে পারে না। তাছাড়া কাল তোমাদের ছেলের পরীক্ষা রয়েছে। বৌমারও তো একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।"
একটু আগে আমার স্ত্রীর রক্ষাকবচ হয়ে উঠতে গিয়ে আমার মধ্যে যেটুকু পুরুষত্ব জেগেছিলো, প্রমোদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে এবং ওর গুরুগম্ভীর গলার আওয়াজ শুনে ভয়ের চোটে সবকিছু আমার পায়ুছিদ্রের মধ্যে ঢুকে গেলো। আমতা আমতা করে বললাম, "আচ্ছা, আমাকে অফিস থেকে কবে টার্মিনেশন লেটারটা দেবে? চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কি এই কোয়ার্টারটা ছেড়ে দিতে হবে আমাদের?"
"তার আগে বলো তোমার ছেলের পরীক্ষা কবে শেষ হচ্ছে?" নন্দনার চুলগুলো ঘাড়ের উপর থেকে সরিয়ে ওখানে নিজের নাকটা ঘষতে ঘষতে কথাগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো প্রমোদ। লক্ষ্য করলাম আমার স্ত্রীর যুবতী শরীরের মোহ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি হারামিটা। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। একজন মধ্য তিরিশের সুন্দরী আকর্ষণীয়া স্বাস্থ্যবতী যুবতী শুধুমাত্র ব্রেসিয়ার আর প্যান্টি পড়ে সামনে দন্ডায়মান অবস্থায় থাকলে তার উল্টোদিকের পুরুষের শরীর আর মনের যে কিরকম অবস্থা হয়, সেটা নিজের ফিলিংস দিয়েই বুঝতে পারছি।
"কালকে তো হিস্ট্রি এক্সাম, তারপর একদিনের গ্যাপ দিয়ে জিওগ্রাফি, ওই দিনই পরীক্ষা শেষ।" মিনমিন করে উত্তর দিলাম।
"তার মানে এখনো তিনদিন .. ইট'স ওকে। তোমাকে কোম্পানি থেকে যেকোনো দিন স্যাক করতে পারে, এক্সাক্ট ডেটটা বলতে পারবো না। তবে কাল থেকে তোমার অফিসে যাওয়ার দরকার নেই, গেলেও অবশ্য ওরা তোমাকে ঢুকতে দেবে না। কিন্তু এই নিয়ে তো তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই! আমাদের নতুন বিজনেসে কাল থেকেই জয়েন করছো তুমি। একটু আগে একটা বিজনেস ট্যুরর কথা বললাম না! আমাদের ডেস্টিনেশন হচ্ছে রুপনগর। নাম তো অবশ্যই শুনেছো! আমি আগেও গিয়েছি ওখানে। নামের মতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপ যেন ঝরে ঝরে পড়ছে। ওখানে পাহাড় এবং সমুদ্র দুটোই আছে। অপূর্ব জায়গা, এখান থেকে সত্তর কিলোমিটার মতো হবে। গাড়িতে গেলে ঘন্টা তিনেকের মধ্যে পৌঁছে যাবো। আমরা তিনজন তো যাচ্ছিই উইথ আওয়ার ফ্যামিলি। আমাদের চতুর্থ পার্টনার হিসেবে তুমিও যাবে তোমার পরিবারকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে। আমাদের যাওয়ার প্ল্যান তো কালকেই ছিলো! কিন্তু যেহেতু তোমার ছেলের পরীক্ষা আরোও দু'দিন চলবে, তাই দু'দিন পরেই আমরা সবাই যাবো একসঙ্গে।" কথাগুলো বলে আমার স্ত্রীর গালে নিজের গালটা ঘষে নিয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ন্যাকামি করে প্রমোদ জিজ্ঞাসা করলো, "যাবে তো আমাদের সঙ্গে সোনা, মেরা মতলব বৌমা? দেখো আমরা সবাই কিন্তু আমাদের ফ্যামিলি নিয়ে যাচ্ছি। দিস ইজ নট অনলি বিজনেস ট্যুর, বাট অলসো আ ফ্যামিলি ট্যুর। আলাপ পরিচয় হয়ে যাবে সবার সঙ্গে তোমারও। আর পরীক্ষার পর তোমাদের ছেলেটারও একটা আউটিং হয়ে যাবে।"
হঠাৎ করে দেওয়া প্রমোদের এই প্রস্তাবে ভীষণরকম অবাক হয়ে গিয়ে কি করবো বা বলবো কিছু বুঝে উঠতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।নন্দনার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ওর অবস্থাও কতকটা আমারই মতো। আমি এরপর কি বলবো, তার জন্য ও অপেক্ষা করে রয়েছে। রুপনগরে এর আগে না গেলেও ওই জায়গার সম্বন্ধে আমি শুনেছি। ওটা প্রধানতঃ সমুদ্র উপকূলবর্তী একটা অঞ্চল। ওখানে জুট সম্পর্কিত বিজনেস ট্যুর কিভাবে সম্ভব সেটা আমার বোধগম্য হলো না। তার সঙ্গে এটাও বুঝতে পারলাম না, ব্যবসা সংক্রান্ত কারণে যদি ওখানে যাওয়া হয়, তাহলে সেখানে ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার কি প্রয়োজন! অবশ্য অফিস ট্যুর বা বিজনেস ট্যুরে এর আগে কোনোদিন কেউ তাদের পরিবার নিয়ে যায়নি, একথা বললে ভুল বলা হবে। কিন্তু হার্জিন্দারের পরিবার তো ওদের গ্রামে থাকে, জীবনেও তাদের দেখেছি বলে মনে পরে না। অন্যদিকে রবার্ট আর প্রমোদের ফ্যামিলির আদৌ কোনো অস্তিত্ব আছে কি না .. এই বিষয়ে আমার কোনো ধারণাই নেই। যে খটকাগুলো আমার মনে এতক্ষণ ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিলো, সেটা সামনে প্রকাশ করে দিতেই পারতাম; কিন্তু এত কিছুর পরেও আমার অন্তরাত্মা আমাকে এই কথাগুলো বলার অনুমতি দিলো না। "ঠিক আছে, সবার ফ্যামিলি যখন যাচ্ছে তখন আমরাও যাবো। তাছাড়া এটা যখন একটা বিজনেস ট্যুর, তখন তো যেতেই হবে।" শুকনো গলায় এইটুকুই শুধু বলতে পারলাম।
আমার উক্তি শুনে নন্দনা যতটা অবাক হলো এবং অপ্রস্তুতে পড়ে গেলো, ততটাই উৎফুল্ল হয়ে উঠলো প্রমোদ। ওর মুখে একটা যুদ্ধ জয়ের হাসি দেখতে পেলাম। আমার থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর নন্দনাকে আর বেশি উত্তক্ত করলো না গোয়ানিজটা। যাওয়ার আগে শুধুমাত্র ঊর্ধ্বাঙ্গের এবং নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস পড়া অবস্থায় ওকে নিজের চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে আপাদমস্তক মেপে নিয়ে সোয়া এগারোটা নাগাদ আমাদের বাড়ি থেকে বিদায় নিলো প্রমোদ।
★★★★
রাতে আমি আলাদাই শুয়েছিলাম। নাহ্ , এটা নন্দনার উপর রাগ বা অভিমান থেকে নয়। আসলে আজ সন্ধ্যে থেকে যা যা ঘটে গেলো, তার জন্য পরোক্ষভাবে যে আমি নিজেও দায়ী, সেটা বারবার মনে হচ্ছিলো। তাই অপরাধবোধের কারণেই হয়তো আমার স্ত্রীর সঙ্গে এক বিছানায় শুতে পারলাম না আমি। অন্যদিন হলে কি হতো জানিনা; তবে একটা ব্যাপার দেখে অবাক লাগলো, নন্দনাও আমাকে একবারও অনুরোধ করলো না এই ঘরে থাকার জন্য।
চারপাশে শুধু জলরাশি, মাঝে একটা অতি ক্ষুদ্র দ্বীপে বসে রয়েছি আমি। হঠাৎ নন্দনাকে দেখতে পেলাম, ওর সঙ্গে আরও কিছু মহিলা। অদ্ভুতভাবে শাড়ি পড়েছে নন্দনা। শাড়ির একটা দিক কোমরের সঙ্গে এমনভাবে উঠিয়ে বাঁধা রয়েছে যে, ওর একটা উরুর ওপর থেকে সম্পূর্ণভাবে শাড়িটা সরে গিয়েছে। আমার পাশে একজন দাঁড়িয়ে ছিলো। মুখটা পরিষ্কার করে দেখতে না পেলেও চেহারাটা অনেকটা প্রোমোদের মতো। ওকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, এখানকার মহিলারা নাকি ওইভাবেই শাড়ি পড়ে। হয়তো নন্দনা আমাদেরকে দেখতেই পায়েনি। কিংবা হয়তো ইচ্ছে করেই ..
ওর মসৃণ, তৈলাক্ত ঊরুর রঙটা অনেকটা সোনালী গমের উপর সূর্যের আলো পড়লে যেরকম লাগে, আমার সেইরকম মনে হলো। দেখলাম নন্দনার মাথার একরাশ ঘন চুল পিঠের ওপর ঢাল হয়ে নেমে এসেছে। এ কি, ব্লাউজ কই ওর? তবে কি এলো গায়ে ঘুরতে বেরিয়েছে ওর বান্ধবীদের সঙ্গে?
আশেপাশের মেয়েগুলি অন্তর্হিত হতে শুরু করলো ধীরে ধীরে। হঠাৎ দেখলাম পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়েছে আমার নন্দনা। প্রমোদের মতো চেহারার লোকটা আমাকে অতিক্রম করে এগিয়ে গেলো ওই পাথরের নারী মূর্তির দিকে। সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া মূর্তিটির পাশে দাঁড়িয়ে কোনো ভনিতা ছাড়াই তার হাতদুটো রাখলো ওর স্তনে, তারপর সেই মূর্তির ওষ্ঠের হাসিটুকু তুলে নেবার জন্য সেখানে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো মোটা বেঁটে লোকটা।
মনে হলো জিয়ন কাঠির ছোঁয়া পেয়ে পাথরের মূর্তি আবার প্রাণ ফিরে পেলো। জীবন্ত হয়ে উঠলো আমার নন্দনা। সেই কাজল নয়না, গুরু নিতম্বিনী, পৃথুল স্তনী আকর্ষণীয়া নারী যেন ইশারায় ডাকলো আমাকে। বড় বড় পা ফেলে আমি হেঁটে চলেছি আমার নন্দনার দিকে। এক পা, দু পা, তিন পা, চার পা .. কিন্তু কিছুতেই পৌঁছতে পারছি না যে ওর কাছে! ও আমার থেকে দূরে চলে যায়নি, ও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে আমার দিকে চেয়ে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি যেন একটা বৃত্তের মধ্যেই দৌড়ে চলেছি। ঘুমটা ভেঙে গেলো। বিছানায় ধড়মড় করে উঠে বসে দেখলাম ঘড়িতে তখন ভোর পাঁচটা। আর ঘুমাতে পারলাম না, উঠে বাথরুমে গেলাম।
★★★★
বাপ্পার জিওগ্রাফি পরীক্ষা, অর্থাৎ শেষ পরীক্ষার দিন সকালে জেনারেল ম্যানেজার মনিশ ভার্গব নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়ে আমাকে টার্মিনেশন লেটার ধরিয়ে দিলেন। তার সঙ্গে এটাও জানালেন, আমার পাওনা-গন্ডা অর্থাৎ পিএফ আর গ্র্যাচুইটির টাকাটা ক্লিয়ার হতে সাত থেকে দশদিন সময় লেগে যাবে। ততদিন আমরা কোয়ার্টারে থাকতে পারি, তারপর কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে হবে।
ওনার চেম্বারে সেই সময় রবার্ট ডিসুজা উপস্থিত ছিলো। ভার্গবের আমাকে করা এই উক্তিতে রবার্ট অত্যন্ত রাগত স্বরে এবং তাচ্ছিল্য সহকারে উনাকে বললো, "একজন স্টাফ, যে বহু বছর ধরে এই কোম্পানিকে সার্ভিস দিয়ে গেছে, তার সঙ্গে এই আপনার কথা বলার ধরন? চিরন্তন কি ওই পিএফ আর গ্রাচুইটির টাকার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে? ওই টাকায় ও পেচ্ছাপ করে। আপনি নিশ্চয়ই শুনেছেন আমরা জুট এক্সপোর্ট ইমপোর্টের একটা নতুন বিজনেস খুলেছি। এই নতুন ব্যবসায় চিরন্তন আমাদের পার্টনার। কালকেই আমরা একটা বিজনেস ট্যুরে বাইরে যাচ্ছি। ফিরে এসেই ও কোয়ার্টার ছেড়ে দেবে।" তারপর আমার দিকে তাকিয়ে, "চলো এখান থেকে .." এইটুকু বলে আমার হাত ধরে ভার্গবের চেম্বার থেকে বের করে নিয়ে এলো। রবার্টের এই ধরনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং কথাবার্তায় মনটা সত্যিই ভালো হয়ে গেলো আমার। এতদিনে তাহলে সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সান্নিধ্যে আসতে পারলাম আমি!
রাতের দিকে আমার মোবাইলে প্রমোদের একটা মেসেজ এলো, "কথা ছিলো, আমরা একসঙ্গেই আসবো রূপনগরে। কিন্তু নতুন ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে আজকেই চলে আসতে হলো আমাদের। একটু আগেই পৌঁছলাম আমরা। একজন জুট সাপ্লায়ারের সঙ্গে মিটিংয়ে রয়েছি, তাই ফোন করতে পারলাম না। তোমাদের কোয়ার্টারের সামনে কাল ঠিক সকাল আটটা নাগাদ একটা কালো রঙের স্করপিও গাড়ি পৌঁছে যাবে। ওটা করে চলে এসো তোমরা তিনজন। গাড়ি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেবে তোমাদের। দু'রাত্রি স্টে করবো এখানে।"
'আগে থেকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে আজকেই রূপনগর পৌছে গেলো ওরা তিনজন! ইনফ্যাক্ট আজ সকালেও তো রবার্টের সঙ্গে দেখা হলো আমার, কত কথা হলো, অথচ তখনও তো ও আমাকে কিছুই বললো না! ওরা কি ওখানে একা গেছে? নাকি সত্যি সত্যিই ওদের পরিবারও গেছে ওদের সঙ্গে? শুধুই কি ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ, নাকি অন্য কোনো কারণে আগেভাগে পৌঁছে গেলো ওরা ওখানে?' এই সমস্ত প্রশ্ন আমার মাথায় কিলবিল করতে থাকলেও, হয়তো মনের মধ্যে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে চাওয়া কোনো এক অজানা আশঙ্কায় বা বলা ভালো শিহরণে এতক্ষণ ধরে ভাবতে থাকা একটা কথাও বলতে পারলাম না আমার স্ত্রীকে।
"কাল সকালে আমাদের যাওয়া ফাইনাল, আটটার সময় গাড়ি আসবে বলছে। দু-রাত্রি থাকার কথা ওখানে, সেই হিসেবে জামাকাপড় নিও। বেশি লাগেজ বাড়ানোর দরকার নেই।" শুধু এইটুকু বললাম নন্দনাকে। এর আগে যখনই আমরা বাইরে কোথাও বেড়াতে গিয়েছি, নন্দনা নিজে হাতে আমার জামাকাপড় গুছিয়ে ব্যাগে ভরে দিয়েছে। কিন্তু এবার একটা ছোট ট্রলিব্যাগ দেখিয়ে আমাকে ও বললো, "এই ব্যাগে নিজের জামাকাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ভরে নিও।" আমার স্ত্রীর মুখে কথাগুলো শুনে ভাবলাম আমরা একসঙ্গে থাকলেও দু'জনেই নিজেদের চারপাশে একটা আলাদা বৃত্ত তৈরি করে নিয়েছি। ওইদিন রাতে দেখা স্বপ্নটার মতো যে বৃত্তের মধ্যে অবিরাম দৌড়ে যাওয়া যায়, কিন্তু সেই বৃত্ত অতিক্রম করে পরস্পরের কাছে পৌঁছানো যায় না।
নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ মিনিট আগেই গাড়ি পৌছে গেলো আমাদের বাড়ির সামনে। ড্রাইভারের সিটে দেখলাম একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি বসে রয়েছে। লোকটাকে আগে কখনো এই এলাকায় দেখিনি। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, ও এখানকার লোক নয়, রূপনগর থেকে গাড়ি নিয়ে এখানে এসেছে। তারমানে কখন রওনা হয়েছে ওখান থেকে? ভোররাতে! ব্যাপারটা ভীষণই অদ্ভুত লাগলো আমার। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের দিনই ঘুরতে যাওয়ার প্রোগ্রাম, তাও আবার বাই কার। এরকম সুযোগ বাপ্পার জীবনে আগে কখনো আসেনি, তাই সব থেকে বেশি আনন্দ বোধহয় ওরই হচ্ছিলো। গাড়ি দেখেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গাড়িতে উঠে বসলো বাপ্পা। আমিও ছেলের পেছন পেছন হাতে দুটো ট্রলিব্যাগ নিয়ে বের হলাম। ছোট ব্যাগটায় শুধু আমার জামাকাপড় রয়েছে, আর বড়টায় নন্দনা আর বাপ্পা দু'জনের জামাকাপড় রয়েছে। কাল রাতে একবার কৌতুহলবশত উঁকি মেরে দেখেছিলাম, আমার বউ বেড়াতে যাওয়ার জন্য কি কি জামাকাপড় নিলো! ভেবেছিলাম সমুদ্রের ধারে যাচ্ছে, হয়তো একটা সালোয়ার কামিজ নিশ্চয়ই নেবে; কিন্তু গোটা তিনেক শাড়ি আর রাতে পড়ার জন্য দু'টো নাইটি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না।
আমরা বাপ-বেটা গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছিলাম নন্দনার জন্য। 'আমার দেখা ওই অদ্ভুত স্বপ্নটায় ও যে স্টাইলে শাড়ি পড়েছিলো, ওইভাবে শাড়ি পড়ে আসবে না তো আমার বউটা!' এই কথাটা যে আমার অবচেতন মনে একবারের জন্যেও আসেনি, এটা বললে মিথ্যে বলা হবে। অতঃপর নন্দনা যখন বাড়ি থেকে বেরোলো, দেখলাম গাঢ় নীল রঙের একটা পিওরসিল্ক শাড়ি আর সাদা রঙের একটা হাফস্লিভ ব্লাউজ পড়েছে। আমার স্ত্রীর এই রুচিশীল পোশাকে মনে কিছুটা বল পেলাম। তবে পিওরসিল্ক শাড়িটা ও না পড়লেই পারতো, আরামদায়ক হলেও জোরে হাওয়া দিলে সিল্কের শাড়ি গায়ে সামলে রাখা ভীষণ মুশকিল হয়ে পড়ে, এটা আমি জানি।
সকাল আটটা পাঁচ নাগাদ রওনা দিলাম আমরা। আমি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছিলাম, বাপ্পা আর নন্দনা পেছনের সিটে বসেছিলো। আমাদের কারখানার উঁচু পাঁচিল, গঞ্জের বাজার, রেল স্টেশন অতিক্রম করে শহরের কোলাহল পিছনে ফেলে এগিয়ে চললো আমাদের গাড়ি। প্রায় দু'ঘণ্টা ধরে একনাগারে গাড়ি চলছে। কিলোমিটার হিসেবে বলতে পারবো না, তবে অনেকটাই পথ অতিক্রম করে ফেলেছি আমরা। বেলা যত বাড়তে লাগলো, রোদের তেজ ততই প্রখর হতে শুরু করলো। এসি গাড়ির বন্ধ জানলার কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখলাম, আমরা চাঁদডোবায় এসে পৌঁছেছি। পানের ক্ষেত দিয়ে ঘেরা রূপনগরে প্রবেশ করার আগের ছোট্ট গ্রাম চাঁদডোবা।
চারপাশে পাহাড়তলির অরণ্য এবং বেশ ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলের মাথায় ঢেউয়ের মতাে চলে গেছে একটার পর একটা পাহাড়। চাঁদডোবা অতিক্রম করে আমাদের গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কিছুটা পরেই আমার চোখে পড়লো একটি ঝুলন্ত সেতু। যার নিচ দিয়ে কোনো নাম না জানা খরস্রোতা নদীকে বয়ে যেতে দেখলাম। এই অপরূপ দৃশ্য দেখে ভাবলাম, আমাদের এই প্রকৃতি হলো একটি বই, আর যাদের ভ্রমণ করার সুযোগ হয় না, তারা কেবল এই বইয়ের একটি পৃষ্ঠায় নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।
রুপনগরে প্রবেশ করার পর, তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম আমি। জায়গার নামকরণ সত্যিই সার্থক। আমাদের জেলা থেকে আনুমানিক সত্তর কিলোমিটারের মধ্যে এত সুন্দর একটা জায়গা থাকা সত্ত্বেও এখানে যে আগে কেনো আসিনি, সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছিলাম। মাঝারি উচ্চতার সবুজে ঘেরা পাহাড়। যার পাদদেশ থেকে শুরু হয়েছে রাশি রাশি জলকণার অবিরত প্রবাহ। আবার কোথাও যেন সেই সমুদ্রের নীল জলরাশি পাহাড়কে অতিক্রম করে আকাশের নীলের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে একাধিক রঙ ও বর্ণের সবুজ বন এবং গাছপালা, যা আকাশ ছুঁয়ে যায় নিমিষে, সেই পাহাড় থেকে কলকলে শব্দে ও ছন্দে নেমে আসে পাহাড়ি ঝর্ণা অনবরত আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ছুটে চলে নদী থেকে সাগরে। এ যেন পাহাড়, সমুদ্র আর অরণ্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
অবশেষে আমরা প্রবেশ করলাম রূপনগরের সমুদ্র সৈকতে। বিচ এলাকা দিয়ে ফুল স্পিডে যখন আমাদের গাড়ি ছুটছিলো, দেখলাম একদিকে যেমন রয়েছে সমুদ্রের বিপুল অশান্ত জলরাশি, অন্যদিকে পাহাড়ের গা বেয়ে নেমেছে জোড়া ঝরনা, যেনো জমজ ভাইবোন। আমি শুনেছিলাম এটা একটা টুরিস্ট স্পট। কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশে অবিন্যস্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দু-একটা একতলা বাড়ি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না।
অতঃপর একটা পানের বরজ আর নারকোল গাছের বাগান পেরিয়ে আমাদের গাড়ি বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘেরা একটা একতলা বাড়ির সামনে থামলো। তবে এটাকে বাড়ি না বলে একটা বিশাল বড় চৌকো বাক্স বলা যুক্তিযুক্ত। জায়গাটা প্রায় জনমানব শূন্য। আশেপাশে কোথাও কোনো জনবসতি চোখে পরলো না আমার। "লিজিয়ে সাহাব, আপ লোগো কা ডেস্টিনেশন আ গ্যায়া .." রাস্তায় একটাও কথা না বলা প্রৌঢ় ড্রাইভারটির এই উক্তিতে গাড়ি থেকে একে একে আমরা তিনজন নামলাম। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেলা সাড়ে এগারোটা। তারমানে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার জার্নি হলো আমাদের।
"ওয়েলকাম টু রূপনগর .." ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম বাউন্ডারি ওয়ালের সঙ্গে লাগানো লোহার গেটটা খুলে বেরিয়ে আসছে রবার্ট। তার পেছন পেছন প্রমোদ আর হার্জিন্দার।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~