10-06-2019, 07:30 PM
বহুক্ষন পরে ও বললো ‘ও পুরো বাবার মতন দেখতে, কি করে সম্ভব?’
‘আমিও ওই ভুল করেছিলাম। ও আমাকে তোর বাবার সাথে কাটানো সেই সময়ে নিয়ে গেছিলো। আর ভুল করে বসেছিলাম। সেই সুযোগে...। তুই তো পরেছিস আমার লেখা... আমি নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম।’
রিয়া দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো।
‘আদালত নয়, তুইই আমার আপনজন, তুইই ঠিক করবি আমি দোষী না নির্দোষ।’
রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে বুকে টেনে নিলাম।
এখন রাহুলকে ওর উচিত শাস্তি পেতে হবে। ওর পিছনে অনুরাধা আছে। ওদের মুখোশ টেনে খুলে দিতে না পারলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবো না। আর এই কাজে তোকে সাহাজ্য করতে হবে আমাকে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই একে একে সুবলা বিজেন্দ্র এসে পৌছুলো আমার বাড়িতে।
রিয়া রাহুলকে ফোন করলো স্পিকার অন করে।
-তুমি কোথায়? উত্তেজিত হয়ে রাহুলকে জিজ্ঞেস করলো রিয়া।
-আমি বাড়িতে।
-তাহলে তুমি বাড়িতেই থাকো। আমি যে এখানে একা আছি সে ব্যাপারে তোমার কোন খেয়াল নেই।
-কেন কি হয়েছে।
-তুমি জানোনা? তোমাকে যে সেদিন বললাম সুবলাকে ওর আত্মিয় এসে নিয়ে গেছে।
-তাতে কি হয়েছে?
-ওটা আত্মিয় না। সুবলা এখন ফোন করে হুমকি দিয়েছে, তোমাকে আর আমাকে ফাঁসাবে, পুলিশে গিয়ে নাকি তোমার নামে বলবে।
-ওঃ ছারো তো। পুলিশ কিছু করবেনা।
-ওখান থেকে বলা সহজ। তুমি কি মিনিস্টার না নেতা যে তোমাকে পুলিশ কিছু করবেনা।
-শোন তোমার আর আমার ব্যাপারটা নিয়ে কয়েকটা ছেলে আমাকে খুব নোংরা নোংরা কথা বলছে ফোনে। বলছে তুমি নাকি বলেছো যে তোমার অবর্তমানে আমার দেখভাল করতে, মানে কিভাবে তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো। তুমি চলে আসো প্লিজ।
-আসলে আমার মার খুব শরীর খারাপ।
-তাহলে তুমি ওখানেই থাকো, তোমার যা মালপত্র আছে সেটা ওখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-আরে রাগ কোরোনা। আমি কি করি বলো তো? এদিকে মায়ের শরীর খারাপ এদিকে তুমি......।
-তাতে কি হয়েছে, আমিও মাকে ছাড়া আছি। আমি পারলে তুমি পারবেনা। তুমি এক কাজ করো তোমার মাকেই নিয়ে চলে আসো। এখানে না হয় চিকিৎসা করাবে। তুমি যদি এখন না আসো তাহলে আর আসার দরকার নেই। আমাকে তো চেনো। নিজের মাকে এককথায় যে ভুলে যেতে পারে...।
নিজের ঘরে একটু যেন সাহস লাগছে। দরজা জানালা বন্ধ করে রেখেছি। যাতে বাইরের কেউ আমাদের দেখতে না পায়। হরিশ সুবলার সাথে নিচের ঘরেই আছে, বিজেন্দ্র চুপ করে একটা ঘরে বসে আছে। মোবাইল সুইচ অফ করা। এর মধ্যে অনুরাধার লোকেরা দুএকবার আমার খোঁজ নিয়ে নিয়েছে। বিজেন্দ্র ওদের বলে চলেছে যে আমি একদম সেফ জায়গায় রয়েছি, কেউ খুঁজে বের করতে পারবেনা।
পরের দিন রাতের দিকে রাহুল এসে পৌছালো। আমরা সুবলার ঘরে অপেক্ষা করছি, সঙ্গে আশিষ সাহা আর দুজন কন্সটেবলও রয়েছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর মুখ দিয়ে সব কথা বেরিয়ে এলো। এ বাড়ি প্রোমোটিং করার বরাত ওকে দিয়ে সেখান থেকে কোটি খানেক ও নিজের ইলেকশান ফান্ডে সরাতে চাইছিলো অনুরাধা। সেটা রাহুল পেত যদি আমি ওকে স্বেচ্ছায় করতে দিতাম। সেটা না হওয়াতে রিয়াকে ব্যবহার করে ও।
বনগাঁতে ওর বাড়ি। মা বেচে আছে, বাবা ওর জন্মের পরপরই ওর মাকে ছেরে চলে যায়। ওর মা আমার থেকে সামান্য বয়স্ক হবে। হেলথ সেন্টারে কাজ করে।
অনেক মেয়ের সাথেই ও নিজের ভালোমানুষির ছলাকলা দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। তাদের বিয়ে করার নাম করে ফুঁসলে ফাঁদে ফেলে চালান করে দিতো মেয়ে পাচারকারিদের হাতে। সেই থেকেই অনুরাধার এই চক্রের সাথে ওর যোগ। বেশিদিন ও এক জায়গায় থাকেনা। কেউ বুঝে ওঠার আগেই সে মেয়ে নিয়ে কেটে পরে। কিন্তু এখানে প্ল্যানটা অন্যরকম ছিলো। মেয়ের থেকেও আসন্ন নির্বাচনে কাঁচা টাকা তুলে দেওয়া অনুরাধার হাতে। যাতে করে গুন্ডাদের টাকা দিয়ে হাত করা যেত। কিন্তু রাহুল বুঝতে পারছিলো বিয়ে করলে ও ফেঁসে যেতে পারে তাই পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছিলো। অনুরাধা চাইছিলো যে ও রিয়াকে বিয়ে করে বাড়ির দলিল হাতিয়ে নিক, সেইজন্যে আমাকে তুলিয়ে দিয়েছিলো যাতে আমি পথের কাঁটা হতে না পারি।
মুর্শিদাবাদে এক বড়লোক ঘরের মেয়েকে এই জ্বালে ফাঁসাতে গিয়ে মুশকিলে পরে যায়। মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়, আর পালাতে রাজি হয় না। শেষে বাধ্য হয়ে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করতে হয়, মেয়েটির প্রভাবশালি বাড়ির লোকের প্রভাবে। কিন্তু ওর ওপরে চাপ আসতে থাকে সাপ্লাইয়ের জন্যে। ও সেই জন্যেই ওই বাড়ির বড়ছেলের বৌকে কৌশলে ফাঁসায়। তার সাথে ঘর করবে বলে বনগাঁ নিয়ে গিয়ে তোলে। সেখানে ওই বোউটি বুঝে যায় ওর মতলব, সে পালিয়ে যায়। কিন্তু লজ্জায় মুর্শিদাবাদে ফিরতে পারেনা। তারপর থেকেই ওই মহিলা পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছে। ওরা খবর পেয়েছিলো, রাঁচিতে কোন একটা বাড়িতে বৌটা পরিচারিকা হিসেবে কাজ করছে। সেই জন্যে শিকার ধরতে রাঁচি পোউছে যায় রাহুল।
তাছাড়া ও নিজের পিতৃ পরিচয় জানেনা। ওর মা কোনদিন বলেনি। বলেছে কলকাতার এই এলাকায় ওর মায়ের শ্বশুর বাড়ি, নিজের বাবার সাথেও বোঝাপড়ার দরকার ছিলো বলে ও এই এলাকায় এসে ওঠে। অনুরাধা প্রথম থেকেই জানতো যে ও এখানে আন্ডারগ্রাউণ্ড আছে। অনুরাধা ওকে কথা দিয়েছিলো খোঁজখবর নিয়ে জানাবে ওর বাবার বাড়ি আদৌ এখানে কি না। পরে ওকে জানিয়েছিলো যে এখানে সেরকম কেউ নেই।
রাহুলের মা বাবার গল্প শুনে আমার মনে কু ডাকছে। সাথে বুক কাঁপছে। পার্থ ব্যবসার কাজে মাঝে মাঝে বাইরে যেতো। কিন্তু সেগুলো রাজ্যের বাইরে। বনগাঁতে গেছিলো শুনিনি। তাহলে কি পার্থ আমার অজান্তে অন্য কোন মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিলো। রাহুল কি পার্থরই সন্তান। একই রকম দেখতে, এই চিন্তাটা আমাকে অন্যমনস্ক করে তুলছে। রাহুল আরো অনেক কিছু বলে চলেছে সেগুলো আর কানে ঢুকছে না। তাহলে কি ও নিজের সৎ মা আর বোনের সাথে......?
দু দুজন রাজসাক্ষি। রাহুলও নিজের সাজা কম হওয়ার লোভে রাজসাক্ষী হবে বলে সইসাবুদ করে দিয়েছে। বিজেন্দ্রও। আমার খুব খারাপ লাগছে বিজেন্দ্রর জন্যে। আশিষ বাবু কথা দিয়েছেন যে বিজেন্দ্রর ব্যাপারটা উনি আলাদা করে দেখবেন। ওকে ছোট খাট কেস দিয়ে কম শাস্তির ধারাতে কেস দেবেন। এমনিও পুরো ঘটনায় ওর সেরকম ভাগ নেই।
অনুরাধাকে আর ধরা গেলো না। পুলিশ পৌছানোর আগেই ও খবর পেয়ে গিয়ে ও নিজেই আত্মহত্যা করেছে। আর একটা ডায়েরিতে পাতার পর পাতা লিখে রেখে গেছে। যেটা ও রোজ লিখতো।
না এখানেই সব শেষ না। অমিতকে আমাদের বলা ঠিকানা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে, আর পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। ওর মোবাইল থেকেই জুলি বলে মেয়েটার নাম্বার বের করে ওকেও অমিতের বিরুদ্ধে সাক্ষি বানিয়েছে। আমাদের নিয়ে রাতের মধ্যেই পুলিশ লালবাজারে পৌছালো।
পুলিশ কমিশনার নিজে আমাদের বক্তব্য শুনলো। রিয়াকে আগে থেকেই চিনতো উনি, তাই সহমর্মিতার সাথেই আমাদের বয়ান নথিভুক্ত হোলো।
এর মধ্যেও কিছু বাকি রয়ে গেছে। সেটা হোলো। অনুরাধার স্বামিই আসল চক্রি। অনুরাধাকে সামনে রেখে এসব কিছুর পিছনে ও লুকিয়ে ছিলো। এমন কি অমিত রায়ের সাথে হাত মিলিয়ে বিরোধি দলে যোগ দেওয়ার প্ল্যান করে রেখেছিলো, ছোটখাট কোন মন্ত্রিত্ব পেলেই চলে যেত, আসল ব্যাবসা তো ছিলোই। নাড়ি মাংসের। ধরা পরে গেলে অনুরাধাকেই সামনে আসতে হোত, আবার নির্বাচনি বৈতরনি পার হতেও অনুরাধারই বদনাম ওকে সাহাজ্য করতো। অনুরাধাকে ও বাধ্য করে অমিতের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে অমিতের প্রভাবে ওর নির্বাচনি টিকিট পাকা করতে। অনুরাধাও অমিতকে হাঁতে রাখতে চাইছিলো, যাতে হেড়ে গেলেও ওর ওপর বিরোধি দলের আক্রমনের ঝড় না আসে এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলো না। কারন সব কুকর্মেই ওর নাম জড়িয়ে ছিলো। টাকার দরকার ছিলো আসলে অনুরাধার স্বামির।
আশিষ বাবুর দৌলতে রাহুলের পিতৃপরিচয়ও পাওয়া গেলো। পার্থরই দাদার সন্তান। এবং দুজনই জানতো সেটা রাহুল সেটা নিজের মুখে না বললেও। বাপ ছেলের ধান্দা ছিলো এই বাড়ির থেকে মোটা টাকা কামিয়ে নেওয়া, অনুরাধার সব কালো টাকা এই শর্মাই হ্যান্ডেল করতো, অনুরাধাকে তলে তলে শেষ করে দিচ্ছিলো পার্থর এই দাদা। অনুরাধার স্বামির সাথে হাত মিলিয়েছিলো, দলের গোপন খবর অমিতের কাছে পোউছে দিচ্ছিলো ওরা। এমনকি দলের থেকে বহু ছেলেকে ভাঙ্গিয়ে বিরোধি দলে নাম লেখাতে উস্কে দিয়েছিলো এই স্বপন।
রাহুল আর স্বপনের কম করে সাত আট বছর জেল হবে, আশিষ বাবুর ঘরে একান্তে সেটা জানতে পারলাম। বিজেন্দ্র জামিনে ছাড়া পেয়ে যাবে সামনের শুনানিতেই ওর সব বয়ান আদালতে নথিভুক্ত হয়ে গেছে। পুলিশ আর ওর জামিনের বিরোধিতা করবেনা। তার জন্যে সেই দুপুরে আশিষ সাহাকে খুশি করতে হয়েছে। হ্যাঁ এদিন দারোগা সাহেব মনে হয় কোন ওষূধ খেয়েছিলো। মিনিট পনেরো টিকে ছিলো। সফল হয়ে সেদিন খুব খুশি হয়েছিলো বলেই ফেললো সেদিন যে খুব লজ্জা পেয়েছিলো। এ জিনিসটা গোপনই রেখে দিলাম। কাউকেই আর জানালাম না। বিজেন্দ্র বা রিয়াকে আর জানাতে চাই না।
এরপর সবথেকে গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার যেটা সেটা নিয়ে রিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। সেটা হোলো সেদিন মন্দিরের চাতালে বিজেন্দ্রর পুরো বির্য্যটা আমি ভিতরে নিয়েছি। আমি জানি একটা শিশু কিছু ভালোবাসা ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে, নাহলে আবার সেই কালো অন্ধকারের জীবনে ফিরে যাবে ও সাথে ওর দলবল। ও কথা দিয়েছিলো এরপর থেকে ও এসব কাজ করবেনা।
রিয়াকে এ কথা বলতেই ও থমকে গেলো।
অনেক আলাপ, আলোচনা, বিরোধিতা, যুক্তি তর্কের পরে সিদ্ধান্ত হোলো যে রিয়া আর আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে, কিন্তু সন্তানের জন্ম দেওয়া হবে অপরিচিত এক জায়গায়, যেখানে আমাদের কেউ চেনেনা। বিজেন্দ্রকে ও কোনদিন ওর বাবার স্থান দিতে না পারলেও অসন্মান করবেনা। সমাজের চোখেও আমার আর বিজেন্দ্রর কোন ঘোষিত সম্পর্ক থাকবেনা। যা থাকবে কেবল মাত্র এই বাড়ির সিমানার মধ্যে।
আমিও বাস্তবটা বুঝি অবিবাহিতা মেয়ের মা হয়ে, বিধবা হয়ে সন্তানের জন্ম দিলে সমাজ তা ভালো চোখে নেবেনা। বিজেন্দ্রও আমাদের কথা মেনে নিলো। তিনমাস কলকাতায় থেকে বিজেন্দ্রর সাথে চলে গেলাম কাটিহারে। এই তিনমাসে জমানো টাকা খরচ করে নিচের তলাটা একটা রেস্তোরাঁ বানালাম। সাত মাস পরে এসে এটা চালু করবো। বিজেন্দ্রর দলের ছেলেরা ওখানে একটা ফেব্রিকেশান কোম্পানিতে লেবারের কাজ পেয়ে গেলো। অল্প পয়সায় হলেও আমাদের সুখে দিন কেটে যাচ্ছিলো। নতুন করে যেন প্রেম ফিরে এলো আমার জীবনে। যতদিন সম্ভব হোলো ফিরে পাওয়া প্রেম উজার করে দিলাম শরীর মন দিয়ে। সারে ছ মাসের মাথায় আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক এক ছেলে জন্মালো। সারে তিন কেজি ওজন। ফর্সাও হয়েছে। মাথা ভর্তি চুল। পুরো রিয়ার ভাই। বিজেন্দ্রর নতুন জীবন।
ওকে নিয়ে আমরা কলকাতায় ফিরে এলাম। ভয় পাচ্ছিলাম রিয়া না আবার বেঁকে বসে। কিন্তু হোলো উলটো। বাচ্চাটাকে দেখে ও সব ভুলে গেলো। নিজেই ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে শুরু করলো।
‘তোকে যেই জন্ম দিক, তোর মা হবো আমি, ছোটবেলায় তোর মাকে আমি কত বলেছি আমার একটা ভাই চাই। এতদিনে সেটা পুরন করলো। ’
তাই হোলো। ওর দু বছর বয়েসে রিয়া ওকে দত্তক নিয়ে নেবে বলেছে। আমরাও আপত্তি করিনি। মা বাবার অফিসিয়াল নাম তো থাকতে হবে। এরপর কলেজে ভর্তির ব্যাপার চলে আসবে তখন তো মা বাবাকে যেতে হবে। বাইরে সবাই জানে, এটা বিজেন্দ্রর ছেলে, বৌ জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে। থাক না লুকানো। সব ব্যাপার সবাইকে জানতে হবে নাকি।
খাওয়ানো আমাদের পারিবারিক ব্যাবসা এখন। আমি আর সুবলা রাধুনি, সঙ্গে আরো দুজন পুরুষ সহকারি। নতুন রেস্তোরাঁতে সন্ধ্যে বেলা এত ভির হয় যে সামলানো মুস্কিল। এখন আর হোম ডেলিভারি নেই, চালু হয়েছে পার্শেল ডেলিভারি, এমনিতে চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া তো আছেই। সব মিলিয়ে কুড়িজন কাজ করে এখানে। বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছি। বিজেন্দ্র ঘরের পুরুষ মানুষের সব দায়িত্বই পালন করে। রিয়া বেরিয়ে যাওয়ার পরে রিক কে ওই বেশি দেখাশোনা করে। আমি কিচেনে সব জোগান করে ফ্রী হলে আমার হাতে দিয়ে ও সাপ্লাই দেখা থেকে শুরু করে অর্ডার দেওয়া। পার্টি অর্ডার নেওয়া আর তার ডেলিভারি করা সব করে। রিয়া সময় সুযোগে বিজেন্দ্রর সাথে হিসেব পত্র দেখে। বিজেন্দ্রকে ভদ্র সভ্য ভাবে কথা বলা, আদব কায়দা শেখানো চলছে পাশে পাশেই।
THE END
‘আমিও ওই ভুল করেছিলাম। ও আমাকে তোর বাবার সাথে কাটানো সেই সময়ে নিয়ে গেছিলো। আর ভুল করে বসেছিলাম। সেই সুযোগে...। তুই তো পরেছিস আমার লেখা... আমি নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম।’
রিয়া দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো।
‘আদালত নয়, তুইই আমার আপনজন, তুইই ঠিক করবি আমি দোষী না নির্দোষ।’
রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে বুকে টেনে নিলাম।
এখন রাহুলকে ওর উচিত শাস্তি পেতে হবে। ওর পিছনে অনুরাধা আছে। ওদের মুখোশ টেনে খুলে দিতে না পারলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবো না। আর এই কাজে তোকে সাহাজ্য করতে হবে আমাকে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই একে একে সুবলা বিজেন্দ্র এসে পৌছুলো আমার বাড়িতে।
রিয়া রাহুলকে ফোন করলো স্পিকার অন করে।
-তুমি কোথায়? উত্তেজিত হয়ে রাহুলকে জিজ্ঞেস করলো রিয়া।
-আমি বাড়িতে।
-তাহলে তুমি বাড়িতেই থাকো। আমি যে এখানে একা আছি সে ব্যাপারে তোমার কোন খেয়াল নেই।
-কেন কি হয়েছে।
-তুমি জানোনা? তোমাকে যে সেদিন বললাম সুবলাকে ওর আত্মিয় এসে নিয়ে গেছে।
-তাতে কি হয়েছে?
-ওটা আত্মিয় না। সুবলা এখন ফোন করে হুমকি দিয়েছে, তোমাকে আর আমাকে ফাঁসাবে, পুলিশে গিয়ে নাকি তোমার নামে বলবে।
-ওঃ ছারো তো। পুলিশ কিছু করবেনা।
-ওখান থেকে বলা সহজ। তুমি কি মিনিস্টার না নেতা যে তোমাকে পুলিশ কিছু করবেনা।
-শোন তোমার আর আমার ব্যাপারটা নিয়ে কয়েকটা ছেলে আমাকে খুব নোংরা নোংরা কথা বলছে ফোনে। বলছে তুমি নাকি বলেছো যে তোমার অবর্তমানে আমার দেখভাল করতে, মানে কিভাবে তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো। তুমি চলে আসো প্লিজ।
-আসলে আমার মার খুব শরীর খারাপ।
-তাহলে তুমি ওখানেই থাকো, তোমার যা মালপত্র আছে সেটা ওখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-আরে রাগ কোরোনা। আমি কি করি বলো তো? এদিকে মায়ের শরীর খারাপ এদিকে তুমি......।
-তাতে কি হয়েছে, আমিও মাকে ছাড়া আছি। আমি পারলে তুমি পারবেনা। তুমি এক কাজ করো তোমার মাকেই নিয়ে চলে আসো। এখানে না হয় চিকিৎসা করাবে। তুমি যদি এখন না আসো তাহলে আর আসার দরকার নেই। আমাকে তো চেনো। নিজের মাকে এককথায় যে ভুলে যেতে পারে...।
নিজের ঘরে একটু যেন সাহস লাগছে। দরজা জানালা বন্ধ করে রেখেছি। যাতে বাইরের কেউ আমাদের দেখতে না পায়। হরিশ সুবলার সাথে নিচের ঘরেই আছে, বিজেন্দ্র চুপ করে একটা ঘরে বসে আছে। মোবাইল সুইচ অফ করা। এর মধ্যে অনুরাধার লোকেরা দুএকবার আমার খোঁজ নিয়ে নিয়েছে। বিজেন্দ্র ওদের বলে চলেছে যে আমি একদম সেফ জায়গায় রয়েছি, কেউ খুঁজে বের করতে পারবেনা।
পরের দিন রাতের দিকে রাহুল এসে পৌছালো। আমরা সুবলার ঘরে অপেক্ষা করছি, সঙ্গে আশিষ সাহা আর দুজন কন্সটেবলও রয়েছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর মুখ দিয়ে সব কথা বেরিয়ে এলো। এ বাড়ি প্রোমোটিং করার বরাত ওকে দিয়ে সেখান থেকে কোটি খানেক ও নিজের ইলেকশান ফান্ডে সরাতে চাইছিলো অনুরাধা। সেটা রাহুল পেত যদি আমি ওকে স্বেচ্ছায় করতে দিতাম। সেটা না হওয়াতে রিয়াকে ব্যবহার করে ও।
বনগাঁতে ওর বাড়ি। মা বেচে আছে, বাবা ওর জন্মের পরপরই ওর মাকে ছেরে চলে যায়। ওর মা আমার থেকে সামান্য বয়স্ক হবে। হেলথ সেন্টারে কাজ করে।
অনেক মেয়ের সাথেই ও নিজের ভালোমানুষির ছলাকলা দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। তাদের বিয়ে করার নাম করে ফুঁসলে ফাঁদে ফেলে চালান করে দিতো মেয়ে পাচারকারিদের হাতে। সেই থেকেই অনুরাধার এই চক্রের সাথে ওর যোগ। বেশিদিন ও এক জায়গায় থাকেনা। কেউ বুঝে ওঠার আগেই সে মেয়ে নিয়ে কেটে পরে। কিন্তু এখানে প্ল্যানটা অন্যরকম ছিলো। মেয়ের থেকেও আসন্ন নির্বাচনে কাঁচা টাকা তুলে দেওয়া অনুরাধার হাতে। যাতে করে গুন্ডাদের টাকা দিয়ে হাত করা যেত। কিন্তু রাহুল বুঝতে পারছিলো বিয়ে করলে ও ফেঁসে যেতে পারে তাই পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছিলো। অনুরাধা চাইছিলো যে ও রিয়াকে বিয়ে করে বাড়ির দলিল হাতিয়ে নিক, সেইজন্যে আমাকে তুলিয়ে দিয়েছিলো যাতে আমি পথের কাঁটা হতে না পারি।
মুর্শিদাবাদে এক বড়লোক ঘরের মেয়েকে এই জ্বালে ফাঁসাতে গিয়ে মুশকিলে পরে যায়। মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়, আর পালাতে রাজি হয় না। শেষে বাধ্য হয়ে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করতে হয়, মেয়েটির প্রভাবশালি বাড়ির লোকের প্রভাবে। কিন্তু ওর ওপরে চাপ আসতে থাকে সাপ্লাইয়ের জন্যে। ও সেই জন্যেই ওই বাড়ির বড়ছেলের বৌকে কৌশলে ফাঁসায়। তার সাথে ঘর করবে বলে বনগাঁ নিয়ে গিয়ে তোলে। সেখানে ওই বোউটি বুঝে যায় ওর মতলব, সে পালিয়ে যায়। কিন্তু লজ্জায় মুর্শিদাবাদে ফিরতে পারেনা। তারপর থেকেই ওই মহিলা পালিয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছে। ওরা খবর পেয়েছিলো, রাঁচিতে কোন একটা বাড়িতে বৌটা পরিচারিকা হিসেবে কাজ করছে। সেই জন্যে শিকার ধরতে রাঁচি পোউছে যায় রাহুল।
তাছাড়া ও নিজের পিতৃ পরিচয় জানেনা। ওর মা কোনদিন বলেনি। বলেছে কলকাতার এই এলাকায় ওর মায়ের শ্বশুর বাড়ি, নিজের বাবার সাথেও বোঝাপড়ার দরকার ছিলো বলে ও এই এলাকায় এসে ওঠে। অনুরাধা প্রথম থেকেই জানতো যে ও এখানে আন্ডারগ্রাউণ্ড আছে। অনুরাধা ওকে কথা দিয়েছিলো খোঁজখবর নিয়ে জানাবে ওর বাবার বাড়ি আদৌ এখানে কি না। পরে ওকে জানিয়েছিলো যে এখানে সেরকম কেউ নেই।
রাহুলের মা বাবার গল্প শুনে আমার মনে কু ডাকছে। সাথে বুক কাঁপছে। পার্থ ব্যবসার কাজে মাঝে মাঝে বাইরে যেতো। কিন্তু সেগুলো রাজ্যের বাইরে। বনগাঁতে গেছিলো শুনিনি। তাহলে কি পার্থ আমার অজান্তে অন্য কোন মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিলো। রাহুল কি পার্থরই সন্তান। একই রকম দেখতে, এই চিন্তাটা আমাকে অন্যমনস্ক করে তুলছে। রাহুল আরো অনেক কিছু বলে চলেছে সেগুলো আর কানে ঢুকছে না। তাহলে কি ও নিজের সৎ মা আর বোনের সাথে......?
দু দুজন রাজসাক্ষি। রাহুলও নিজের সাজা কম হওয়ার লোভে রাজসাক্ষী হবে বলে সইসাবুদ করে দিয়েছে। বিজেন্দ্রও। আমার খুব খারাপ লাগছে বিজেন্দ্রর জন্যে। আশিষ বাবু কথা দিয়েছেন যে বিজেন্দ্রর ব্যাপারটা উনি আলাদা করে দেখবেন। ওকে ছোট খাট কেস দিয়ে কম শাস্তির ধারাতে কেস দেবেন। এমনিও পুরো ঘটনায় ওর সেরকম ভাগ নেই।
অনুরাধাকে আর ধরা গেলো না। পুলিশ পৌছানোর আগেই ও খবর পেয়ে গিয়ে ও নিজেই আত্মহত্যা করেছে। আর একটা ডায়েরিতে পাতার পর পাতা লিখে রেখে গেছে। যেটা ও রোজ লিখতো।
না এখানেই সব শেষ না। অমিতকে আমাদের বলা ঠিকানা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে, আর পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। ওর মোবাইল থেকেই জুলি বলে মেয়েটার নাম্বার বের করে ওকেও অমিতের বিরুদ্ধে সাক্ষি বানিয়েছে। আমাদের নিয়ে রাতের মধ্যেই পুলিশ লালবাজারে পৌছালো।
পুলিশ কমিশনার নিজে আমাদের বক্তব্য শুনলো। রিয়াকে আগে থেকেই চিনতো উনি, তাই সহমর্মিতার সাথেই আমাদের বয়ান নথিভুক্ত হোলো।
এর মধ্যেও কিছু বাকি রয়ে গেছে। সেটা হোলো। অনুরাধার স্বামিই আসল চক্রি। অনুরাধাকে সামনে রেখে এসব কিছুর পিছনে ও লুকিয়ে ছিলো। এমন কি অমিত রায়ের সাথে হাত মিলিয়ে বিরোধি দলে যোগ দেওয়ার প্ল্যান করে রেখেছিলো, ছোটখাট কোন মন্ত্রিত্ব পেলেই চলে যেত, আসল ব্যাবসা তো ছিলোই। নাড়ি মাংসের। ধরা পরে গেলে অনুরাধাকেই সামনে আসতে হোত, আবার নির্বাচনি বৈতরনি পার হতেও অনুরাধারই বদনাম ওকে সাহাজ্য করতো। অনুরাধাকে ও বাধ্য করে অমিতের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে অমিতের প্রভাবে ওর নির্বাচনি টিকিট পাকা করতে। অনুরাধাও অমিতকে হাঁতে রাখতে চাইছিলো, যাতে হেড়ে গেলেও ওর ওপর বিরোধি দলের আক্রমনের ঝড় না আসে এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলো না। কারন সব কুকর্মেই ওর নাম জড়িয়ে ছিলো। টাকার দরকার ছিলো আসলে অনুরাধার স্বামির।
আশিষ বাবুর দৌলতে রাহুলের পিতৃপরিচয়ও পাওয়া গেলো। পার্থরই দাদার সন্তান। এবং দুজনই জানতো সেটা রাহুল সেটা নিজের মুখে না বললেও। বাপ ছেলের ধান্দা ছিলো এই বাড়ির থেকে মোটা টাকা কামিয়ে নেওয়া, অনুরাধার সব কালো টাকা এই শর্মাই হ্যান্ডেল করতো, অনুরাধাকে তলে তলে শেষ করে দিচ্ছিলো পার্থর এই দাদা। অনুরাধার স্বামির সাথে হাত মিলিয়েছিলো, দলের গোপন খবর অমিতের কাছে পোউছে দিচ্ছিলো ওরা। এমনকি দলের থেকে বহু ছেলেকে ভাঙ্গিয়ে বিরোধি দলে নাম লেখাতে উস্কে দিয়েছিলো এই স্বপন।
রাহুল আর স্বপনের কম করে সাত আট বছর জেল হবে, আশিষ বাবুর ঘরে একান্তে সেটা জানতে পারলাম। বিজেন্দ্র জামিনে ছাড়া পেয়ে যাবে সামনের শুনানিতেই ওর সব বয়ান আদালতে নথিভুক্ত হয়ে গেছে। পুলিশ আর ওর জামিনের বিরোধিতা করবেনা। তার জন্যে সেই দুপুরে আশিষ সাহাকে খুশি করতে হয়েছে। হ্যাঁ এদিন দারোগা সাহেব মনে হয় কোন ওষূধ খেয়েছিলো। মিনিট পনেরো টিকে ছিলো। সফল হয়ে সেদিন খুব খুশি হয়েছিলো বলেই ফেললো সেদিন যে খুব লজ্জা পেয়েছিলো। এ জিনিসটা গোপনই রেখে দিলাম। কাউকেই আর জানালাম না। বিজেন্দ্র বা রিয়াকে আর জানাতে চাই না।
এরপর সবথেকে গুরুত্বপুর্ন ব্যাপার যেটা সেটা নিয়ে রিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। সেটা হোলো সেদিন মন্দিরের চাতালে বিজেন্দ্রর পুরো বির্য্যটা আমি ভিতরে নিয়েছি। আমি জানি একটা শিশু কিছু ভালোবাসা ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে, নাহলে আবার সেই কালো অন্ধকারের জীবনে ফিরে যাবে ও সাথে ওর দলবল। ও কথা দিয়েছিলো এরপর থেকে ও এসব কাজ করবেনা।
রিয়াকে এ কথা বলতেই ও থমকে গেলো।
অনেক আলাপ, আলোচনা, বিরোধিতা, যুক্তি তর্কের পরে সিদ্ধান্ত হোলো যে রিয়া আর আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকবে, কিন্তু সন্তানের জন্ম দেওয়া হবে অপরিচিত এক জায়গায়, যেখানে আমাদের কেউ চেনেনা। বিজেন্দ্রকে ও কোনদিন ওর বাবার স্থান দিতে না পারলেও অসন্মান করবেনা। সমাজের চোখেও আমার আর বিজেন্দ্রর কোন ঘোষিত সম্পর্ক থাকবেনা। যা থাকবে কেবল মাত্র এই বাড়ির সিমানার মধ্যে।
আমিও বাস্তবটা বুঝি অবিবাহিতা মেয়ের মা হয়ে, বিধবা হয়ে সন্তানের জন্ম দিলে সমাজ তা ভালো চোখে নেবেনা। বিজেন্দ্রও আমাদের কথা মেনে নিলো। তিনমাস কলকাতায় থেকে বিজেন্দ্রর সাথে চলে গেলাম কাটিহারে। এই তিনমাসে জমানো টাকা খরচ করে নিচের তলাটা একটা রেস্তোরাঁ বানালাম। সাত মাস পরে এসে এটা চালু করবো। বিজেন্দ্রর দলের ছেলেরা ওখানে একটা ফেব্রিকেশান কোম্পানিতে লেবারের কাজ পেয়ে গেলো। অল্প পয়সায় হলেও আমাদের সুখে দিন কেটে যাচ্ছিলো। নতুন করে যেন প্রেম ফিরে এলো আমার জীবনে। যতদিন সম্ভব হোলো ফিরে পাওয়া প্রেম উজার করে দিলাম শরীর মন দিয়ে। সারে ছ মাসের মাথায় আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক এক ছেলে জন্মালো। সারে তিন কেজি ওজন। ফর্সাও হয়েছে। মাথা ভর্তি চুল। পুরো রিয়ার ভাই। বিজেন্দ্রর নতুন জীবন।
ওকে নিয়ে আমরা কলকাতায় ফিরে এলাম। ভয় পাচ্ছিলাম রিয়া না আবার বেঁকে বসে। কিন্তু হোলো উলটো। বাচ্চাটাকে দেখে ও সব ভুলে গেলো। নিজেই ওকে কোলে নিয়ে আদর করতে শুরু করলো।
‘তোকে যেই জন্ম দিক, তোর মা হবো আমি, ছোটবেলায় তোর মাকে আমি কত বলেছি আমার একটা ভাই চাই। এতদিনে সেটা পুরন করলো। ’
তাই হোলো। ওর দু বছর বয়েসে রিয়া ওকে দত্তক নিয়ে নেবে বলেছে। আমরাও আপত্তি করিনি। মা বাবার অফিসিয়াল নাম তো থাকতে হবে। এরপর কলেজে ভর্তির ব্যাপার চলে আসবে তখন তো মা বাবাকে যেতে হবে। বাইরে সবাই জানে, এটা বিজেন্দ্রর ছেলে, বৌ জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে। থাক না লুকানো। সব ব্যাপার সবাইকে জানতে হবে নাকি।
খাওয়ানো আমাদের পারিবারিক ব্যাবসা এখন। আমি আর সুবলা রাধুনি, সঙ্গে আরো দুজন পুরুষ সহকারি। নতুন রেস্তোরাঁতে সন্ধ্যে বেলা এত ভির হয় যে সামলানো মুস্কিল। এখন আর হোম ডেলিভারি নেই, চালু হয়েছে পার্শেল ডেলিভারি, এমনিতে চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া তো আছেই। সব মিলিয়ে কুড়িজন কাজ করে এখানে। বেশ ফুলে ফেঁপে উঠেছি। বিজেন্দ্র ঘরের পুরুষ মানুষের সব দায়িত্বই পালন করে। রিয়া বেরিয়ে যাওয়ার পরে রিক কে ওই বেশি দেখাশোনা করে। আমি কিচেনে সব জোগান করে ফ্রী হলে আমার হাতে দিয়ে ও সাপ্লাই দেখা থেকে শুরু করে অর্ডার দেওয়া। পার্টি অর্ডার নেওয়া আর তার ডেলিভারি করা সব করে। রিয়া সময় সুযোগে বিজেন্দ্রর সাথে হিসেব পত্র দেখে। বিজেন্দ্রকে ভদ্র সভ্য ভাবে কথা বলা, আদব কায়দা শেখানো চলছে পাশে পাশেই।
THE END