10-06-2019, 07:30 PM
অনেক কষ্টে এক ডাক্তার ম্যানেজ করে ওকে এক সস্তার নার্শিং হোমে ভর্তি করানো হয়েছে, হাসপাতালে পুলিশ বা রাহুলের উপদ্রবের ভয় আছে। উত্তর কলকাতার এক নার্সিং হোমে ভর্তি সুবলা। অনাহার আর পুষ্টির অভাব। কেউ জানেনা কি ভাবে হয়েছে। রাগ উঠে যাচ্ছে রিয়ার ওপরে। এরকম অমানুষ ও কি করে হোলো। আমি না হয় খারাপ, কিন্তু ওতো ছোটবেলা থেকে সুবলার কোলেই বেশি মানুষ হয়েছে। ভাবতে পারছিনা আমি।
বিজেন্দ্রকে রিয়ার সাথে ঝগড়া করে সুবলাকে নিয়ে আসতে হয়েছে। পরিচয় দিয়েছিলো সুবলার আত্মিয় হিসেবে। সুবলার কিছু বলার ক্ষমতা ছিলো না। অনাহারে ওর কথা বলার মতন শক্তি ছিলো না। বিজেন্দ্র জানে সুবলার কাছে অনেক খবর আছে, তাই বিজেন্দ্র ওকে এখানে নিয়ে আসবে বলেই গেছিলো, সেখানে গিয়ে এই অবস্থা দেখে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বাধ্য হয়, আর কয়েকদিন এরকম থাকলে হয়তো ও ঘরেই মরে পরে থাকতো।
ছেলেটা যে আমার জন্যে এইটুকু করলো তাতেই আমার কৃতজ্ঞতায় গলা বুজে আসছে।
আমি রাস্তায় বেরোতে পারছিনা। অনুরাধার অর্ডার যে আরো কিছুদিন যেন আমাকে গায়েব করে রাখা হয়। আমাকে নিয়ে কি করতে হবে সেটা পরে বলবে। কি উদ্দেশ্য ওদের আমি বুঝতে পারছিনা। রাহুল কি ভাবে অনুরাধার সাথে জড়িত তাও বুঝতে পারছিনা। এরকম ভাবে অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পরছি, তাতে ভাবছি যে শেষ পর্যন্ত্য বেঁচে থাকবো তো?
আমাকে মেরে না ফেলে তুলে আনতে কেন বললো? মেরে ফেললে তো ওদের ঝামেলা মিটে যেত। রাহুলও রিয়াকে নির্ঝঞ্ঝাটে বিয়ে করতে পারতো। কেন কেন কেন? মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে। রান্না ঘর ছেড়ে যেই বেরোলাম আর কোথায় এসে পরলাম। জেল পর্যন্ত খাটলাম।
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি রিয়া কেন এরকম করছে। রক্তের সম্পর্কের কেউ কি এরকম করতে পারে?
রাহুল আর অনুরাধা কি ভাবে জড়িত তা আমাকে জানতেই হবে। বিজেন্দ্রর মতন ছেলের পক্ষে ওকে শেষ করে দেওয়া কোন ব্যাপার না। ও নিজেও আমাকে বারবার বলছে তাই। কিন্তু তাতে কি সব শেষ হয়ে যাবে। রহস্যের গোড়াটা না জানলে কি করে সেটা উতখাত হবে। সেটা একমাত্র জানে রাহুল, কিছুটা সুবলা, আর সম্পুর্নটা অনুরাধা। কিন্তু অনুরাধার মুখ থেকে এগুলো কি করে জানবো। রাহুল এখন কোথায় গেছে?
অনুরাধা পর্যন্ত্য পৌছাবো কি করে?
নার্সিং হোমে সুবলাকে দুপুরে খাওয়ার দিয়ে বিজেন্দ্র ফিরলো ওর সেই সঙ্গিকে নিয়ে। ওর নাম পল্টু। এই প্রথম জানতে পারলাম বিজেন্দ্র আসলে বিহারি। এই ঘরেই ওর জন্ম। বাবা জুটমিলের শ্রমিক ছিলো।
আমারও সন্দেহ হয়েছিলো নামটা শুনে, যাক তাতে আর কি যায় আসে। এত বাঙালি শ্ত্রুর থেকে এরকম বিহারি বন্ধু পাওয়া মানে ভাগ্যের ব্যাপার।
বুঝলাম পল্টু আমার দুঃখের কথা জানে। তিনজনে মিলে আমার সমস্যা সমাধানের জন্যে নানাদিক সমস্যাটাকে কাটাছেড়া করতে শুরু করলো।
যা বুঝতে পারলাম এই দুজন ছাড়াও আরো অনেকে আছে অনুরাধার পকেটে, যারা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দুষ্কর্ম গুলো করে। বিজেন্দ্র একটা বড় গ্যাং চালায়, যার খরচপাতি সব অনুরাধা দেয়।
‘রাহুলকে আগে আটকাতে হবে। এই বিয়ের পিছনে দিদির কিছু উদ্দেশ্য আছে নিশ্চয়।’ পল্টু প্রায় নিজের মনেই বলে উঠলো।
সঙ্গে সঙ্গে বিজেন্দ্র বলে উঠলো ‘মালটাকে তুলে এনে যদি গায়েব করে দি? তাহলে বৌদির চিন্তা কিছুদিনের জন্যে কমবে।’
ওর মুখে বৌদি ডাক শুনে আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখে লাজুক কিন্তু দুষ্টূ একটা হাসি।
‘সেটাই করতে হবে। এছাড়া উপায় নেই। তাছাড়া আমাদের যে চার পাঁচ জন আছে তাদের ছড়িয়ে দিতে হবে দিদির খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যে।’
আমার জন্যে এরা এত কিছু করছে দেখে চোখে জল চলে আসছে আমার। নিজের লোক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যেখানে সেখানে কি বলে যে এদের ঋণ শোধ করবো জানিনা। যার কেউ নেই তার ভগবান আছে।
আমি বিজেন্দ্রকে বলেছি যে সুবলার সেই সঙ্গির খোঁজ করতে, যে আমাদের বাড়িতে মাল ডেলিভারি করতো। বিজেন্দ্রর সব সময় নার্সিং হোমে যাওয়া ঠিক না। বেশি বেগ পেতে হয়নি। নিয়মমতন খাওয়ার আর ওষুধ পরাতে সুবলা দুএকদিনের মধ্যেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আমার কথা শুনে চোখের জল ফেলেছে। নার্সিং হোম থেকে এখানে আসতে চায়।
রাহুলের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। বাড়িতে এখনো আসেনি। বিজেন্দ্রর দল সারাদিন নজর রাখছে আমার বাড়ির ওপরে। ওদের নেটওয়ার্ক পুলিশের থেকেও সাঙ্ঘাতিক। অনুরাধা রোজই বিজেন্দ্রকে ফোন করে আমার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়।
চারদিনের মাথায় সুবলাকে নার্সিং হোম থেকে ছেরে দিলো। সমস্যা হোলো ও ওর ভালোবাসার লোকের সাথে থাকতে পারবেনা যতক্ষন না পর্যন্ত ছেলেটা নতুন ঠিকানা পাচ্ছে। ওখানে থাকলে রাহুল আর অনুরাধা আবার ওকে বিপদে ফেলতে পারে।
অগত্যা আপাততঃ রাতে বিজেন্দ্রর ঘরেই সুবলার থাকার ব্যাবস্থা হোলো।
আমাকে দেখে সুবলা হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো।
-তুমি বেঁচে আছো আমি ভাবতে পারছিলাম না। আবার তোমাকে দেখতে পাবো এমনটা স্বপ্নেও ভাবিনি। কি জিনিস কে যে বাড়িতে ঠাই দিয়েছো, এখন দেখো তোমার নিজের বাড়িতেই তোমার ঠাঁই নেই।
আমি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। সেই আশঙ্কা তো আমারও ছিলো। কাজের লোক আর মালকিন সেই সম্পর্কটা অনেকদিন আগেই আবছা হয়ে গেছিলো। আজকে এই বিপদের মুখে পরে সেটা পুরোপুরি মুছে গেলো। আমি ওর সঙ্গিকে আর ওকে চা করে দিলাম। সুবলা আপত্তি করছিলো কিন্তু আমি তাও নিজেই ওদের চা করে দিলাম।
এ কয়দিন বিজেন্দ্র ঘরে নেই রাতের বেলা। রাতের বেলাতেই নাকি সবার সাথে দেখা সাক্ষাত হয়, রাতেই ওদের কাজ। অন্ধকার জগতের লোকেদের যা হয়। একটা জিনিস এই কদিনে বুঝলাম, যে এরা স্বাভাবিক ভেতো বাঙ্গালির মতন নয়। বিহারি বলে বলছি না। ওর দলে অনেক বাঙালি ছেলেও আছে। এরা স্বাভাবিক জীবন পছন্দ করেনা। এরা চায় রোমাঞ্চ, এডভেঞ্চার। কারন খারাপ ভালো যাই হোক না কেন। আমার এই ব্যাপারটার উদ্দেশ্য মহৎ, তাই আরো যান বেশি করে ঝাপিয়ে পরেছে। অধিক উত্তেজনার ফলে ভুলভাল খবরও আসছে। বিজেন্দ্রকে দেখলাম খুব পরিনত, ঠান্ডা মাথার ছেলে। কোন বাছাই করবে সেই সিদ্ধান্ত ও নিজেই নিচ্ছে।
আপাতত রাহুলকে ফাঁদে ফেলাই ওদের উদ্দেশ্য।
রাহুলকে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায় সেই নিয়েই আমরা ভাবতে ব্যস্ত এখন।
সুবলা একটু ধাতস্থ হতে ওর মুখ থেকে সমস্ত কথা শুনলাম।
সেদিন রাতে সুবলার খাবারে রাহুল কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলো, আশা করা যায় যে সেই একই জিনিস যেটা ও খাবার ডেলিভারির সময় মিশিয়েছিলো। বিছানায় শুয়েই ওর গা গুলিয়ে ওঠে, বমি করার পরেও শরীরে অস্বস্তি যায় না। সেই সময় ও শুনতে পায় রাহুল সিড়িতে দাঁড়িয়ে কার সাথে ফোনে কথা বলছে। অতি কষ্টে কান পেতে শুনে ও বুঝতে পারে যে রাহুল রিয়াকে আমার সন্মন্ধে, আমার চরিত্র, সুবলার চরিত্র নিয়ে নানান কথা বলছে। আরো বলছে ওর ঘরে এলে সব বুঝিয়ে বলতে পারবে।
সুবলা সেই সময় বেরিয়ে আসে, রাহুল ওকে মাথায় মেরে ফেলে দেয়, রিয়াও ঘর থেকে বেরিয়ে আসে একই সময়ে। রাহুল ওকে বলে রিয়া সব জেনে যাবে বলে সুবলা ওকে আটকাতে চাইছিলো ধস্তাধস্তিতে পরে গিয়ে মাথায় লেগেছে। কোন এক লোকের সাথে তোমার ভালো রিলেশান আছে, ওর বিপদ হতে পারে বলে রাহুল রিয়াকে প্রায় পায়ে ধরে উপরে নিয়ে যায়। রিয়াকে বলে যে এখন বলতে না পারলে হয়তো কাল সকালে ও বেচে নাও থাকতে পারে।
আমিও আর লুকালাম না, রাহুলের সাথে আমার যা যা হয়েছে সব বললাম সুবলাকে।
সেদিনের পর থেকে রিয়ার ঘরেই রাহুল থাকছে। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ থাকায় ও বুঝতে পারেনা কি হচ্ছে। কিন্তু যে কেউ আন্দাজ করতে পারবে, এক বিছানায় প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে কি করতে পারে।
রাহুলের অনুপস্থিতিতে সুবলা একদিন রিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু সুবলাকে মুখের ওপ্র বেশ্যা বলে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো রিয়া। বাড়ি থেকে চলেযাওয়ার জন্যেও চাপ দিচ্ছিলো।
ও বারবার করে বলছিলো, আমি ওর মা না। জন্ম দিলেই মা হয়ে যায় না। রাহুল যদি খারাপ হয় তো আমিই ওকে খারাপ করেছি। আমার লেখা কাগজও ও পরেছে।
আমার খেয়াল পরলো অনুরাধার সাথে দেখে করার আগে আমি আত্মহত্যা করবো বলে হিসেবের খাতায় এসব লিখেছিলাম। আমি নিশ্চিত রিয়া সেগুলো দেখেছে।
আমি ভাবছি সেটা যদি দেখেই থাকে তো রিয়া কি করে ওকে শরীর দিলো, যে কিনা ওর মায়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। ওর শিক্ষা কি ওকে আটকালো না? একটা মানুষ যখন আত্মহত্যা করবে বলে কিছু লেখে তখন তো সে সব সত্যিই লিখবে। সেটা পরার পরে ও কি করে করলো? শরীর দেওয়াতে কি কোন ভুমিকা লাগেনা? গেলাম শুয়ে পড়লাম। তাহলে আমি কেন খারাপ হোলাম, কেন এই পরিনতি আমার। নিজের বাড়ি ছেড়ে বস্তির এক ঘরে শুয়ে আছি।
সুবলার নতুন সঙ্গির নাম হরিশ, আগেই ওকে চিনতাম, লালার ডোকানে কাজ করে মানে করতো। এখন নতুন কিছুর সন্ধানে আছে। এই বস্তিতে বিহাড়ি বেশি বলে এখানেই ঝোপরি জোগার করতে চাইছে। আমি কাউকে চিনিনা এখানে, অগত্যা বিজেন্দ্রর জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। তারও দেখা পাচ্ছিনা সেই ভাবে কয়েকদিন। বস্তি হলে কি হবে এখানে দেখছি সবাই বেশ মিলে মিশে থাকে। সকাল বেলা হলেই বাচ্চাগুলো খেলাধুলোয় মেতে ওঠে। এমন কি ওদের বল এসে দুমদাম দরজায়ও লাগে। আমাদের পাড়ায় হলে খেলাই বন্ধ করে দিতো। এখানে সেসব নেই। এরা নিজেদের পেটের জোগান দিতে গিয়েই দিন শেষ করে ফেলে, ওসবে আর কি যায় আসে। সন্ধ্যে হলে শিব মন্দিরের চাতালে বসে ঢোল কর্তাল নিয়ে ভোজপুরি গানের ফোয়ারা ছোটে। ভালোই লাগে সেই সরল গানের সুরগুলো। কিছু কিছু কথা বুঝতেও পারি। বেশির ভাগই ভগবান নিয়ে হিন্দি গানের সুরে তোলা গান। বিজেন্দ্র বলছিলো দোলের সময় আর শিবরাত্রিতে এখানে মহোতসব হয়। ভাং আর গান দুইই সয়ান তালে চলে সকাল থেকে সারারাত।
মানুষগুলো কত সরল সিধাসাদা। দিন আনে দিন খায়। শহর জিবনের জটিলতা এদের ছুতে পারেনি। এখন তো কলকারখানা বন্ধ, তাই বেশির ভাগই বড়বাজার বা হাওড়া শিয়ালদহ স্টেশানে মুটে গিরি করে। কারো চায়ের দোকান, কারো লিট্টির দোকান এই নিয়েই এরা আছে।
কিন্তু বিশালাকার শক্তিশালি চেহারাগুলোও বিজেন্দ্রকে খুব সন্মান করে। তাই ওর ঘরের ওপর সবসময় কারু না কারু পাহাড়াদারি আছে, কারন ওরা জানেনা, কোন প্রশ্নও করেনি।
সুবলা আর হরিশ এই ঘরে থাকবে এইটুকু শুধু জানে ওরা। আমরা তিনজনেই যে বিপদে আছি, কি ধরনের বিপদ সেটার আন্দাজ ওদের নেই।
অনুরাধা এখনো জানে যে যে আমি বিজেন্দ্রর খপ্পরে বন্দি, কোথায় সেটা জানেনা।
রাতের খাবারের পরে আমি সুবলাকে বললাম আমার সাথেই বিছানায় শুতে কিন্তু ও কিছুতেই রাজি হোলো না। হরিশ চলে গেলো শিব মন্দিরে ঘুমাবে বলে, আমি তাও বলে দিলাম ঠান্ডা লাগলে ঘরের মধ্যেই শুতে। মেঝেতে আলাদা আলাদা চাদর পেতে নিলেই হবে। সেও ভাড়ি লাজুক। যার সাথে নির্দ্বিধায় যৌনকর্ম করেছে, তার সাথে এক মেঝেতে শুতে লজ্জা পাচ্ছে, কারন আমি আছি। এরা অশিক্ষিত হলেও এদের বিবেক আছে। আমাদের মতন পালিশ করা কথা বলতে পারেনা কিন্তু বেয়াদপিও করেনা।
পরের দিন সকালে বিজেন্দ্র ফিরে এলো, মুখ গোমড়া। সুবলা সবার জন্যে চা করতে গেছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম “কি হয়েছে” আশঙ্কায় আমার বুক কাঁপছে। এত খারাপ জিনিস শুনেও ওর মুখ গোমরা হতে দেখিনি, চিন্তিত দেখিনি, তাহলে কি রাহুল আর রিয়া রেজিস্ট্রি করে ফেলেছে?
‘অমিত আর অনুরাধাকে একসাথে দেখা গেছে।’ ও প্রায় নিজের মনেই বলে উঠলো।
আমি চমকে উঠলাম।
চা ঠান্ডা হয়ে জল হয়ে গেলো, কিন্তু গলা শুকিয়ে গেছে আমার, এবার কি?
না এখানে থাকলে এবার সবার প্রান নিয়ে শংশয় হবে। আর বসে থাকা যাবেনা। কিছু করতেই হবে।
বহুদিনের পরে শহরের আলো দেখলাম, সবাইকেই কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। কোন যায়গাটা আমার পক্ষে নিরাপদ আমি নিজে জানিনা। সেইভাবে আমি কোনদিনই বাসে ট্রামে চরে যাতায়াত করিনি। আশেপাশের লোক সেটা হয়তো বুঝতে পারছে।
গঙ্গার ধারে বাস থেকে নেমে গিয়ে একটা বুথ থেকে ফোন লাগালাম।
‘কে?’
‘আমি শম্পা বলছি?’
‘শম্পা!! তুমি কোথায়?’
‘আমি অনেক বড় বিপদে পরেছি, তুমি সাহায্য না করলে প্রান দেওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকবেনা’
‘এরকম বলছো কেন? তুমি তো কোথায় গায়েব হয়ে গেলে আমি বুঝতেই পারছিনা? এখন কোথায় আছো তুমি?’
‘আমি বেশিক্ষন এখানে থাকতে পারবো না। তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো।’
‘আধঘন্টা ম্যানেজ করো আমি চলে আসছি।’
আমি ফোনটা কেটে আরেকটা ফোন করলাম। আর আধঘন্টার মধ্যে যা করার করতে হবে।
আধঘন্টার মধ্যে অমিত গাড়ি নিয়ে সেখানে হাজির।
‘কি ব্যাপার তোমার, এরকম স্বপ্ন দেখিয়ে হাড়িয়ে গেলে যে, আমি তো কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না?’
‘বলছি বলছি। আগে আমাকে একটু জলের ব্যাবস্থা করে দাও, গলা শুকিয়ে গেছে। খুব কষ্টে এখানে পৌছেছি।’
‘আর ভয় নেই তোমার? আমি এসে গেছি, কেউ কিছু করতে পারবেনা দাঁড়াও জল নিয়ে আসছি। গাড়িতে রাখা আছে কালকের, কিন্তু ফ্রেশ জল।’
‘যা হোক একটু গলা ভিজাতে পারলেই হবে।’ আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম। উত্তেজনায় আমি আমার নিজের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি।
গাড়ির থেকে জলটা বের করে নিজের গলায় খানিকটা জল ঢেলে নিলো অমিত। ঘুরে আমার দিকে আসতে শুরু করলো। দশ পা দূরে হবে। মুহুর্তের মধ্যে বিজেন্দ্র আর কয়েকটা ছেলে সেখানে উপস্থিত।
কয়েক মুহুর্তের জন্যে দুজন দুজনকে দেখলো। কারো চোখের পলক পরছে। বিজেন্দ্রর চোখমুখ অস্বাভাবিক শান্ত। চোয়াল শক্ত করে রয়েছে। অমিত যে ওকে চেনে সেটা বুঝতে পারছি, ওর চোখে জিজ্ঞাসা, আমার দিকে তাকাচ্ছে, বোঝার চেষ্টা করছে আমিই ওদের ডেকছি কিনা অথবা আমাকে ফলো করে ওরা এখানে পৌচেছে।
যোধপুর পার্কের খানদানি বড়লোক ব্যাবসায়ি, বিরোধি রাজনিতির অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান লোকটার চরিত্র আগেই আন্দাজ করেছিলাম কিন্তু এরকম হতে পারে ভাবিনি।
না ও রাহুল সন্মন্ধে কিছু জানেনা। কারন যে পরিমানে মার পরলো তারপরে সাধারন ঘরের কারোর পেটে কথা বেচে থাকার নয়।
পুলিশের মার সন্মন্ধে শুনেছিলাম, এই প্রথম এরকম মার দেখলাম।
বড়বাজারের একটা পরিতক্ত্য ভগ্নপ্রায় বাড়িতে ওকে আটকে রাখা হয়েছে।
একজন ভিডিও করছে, একজন মারছে আর একজন জেরা করছে।
‘তুই শালা, টিভিতে মুখ দেখিয়ে, পেপারে ছবি বের করে নিজেকে বড় হনু ভাবছিস নাকি রে?’ প্রথম প্রশ্নই ছিলো এরকম।
আমার দিকে তাকিয়ে অমিত বললো ‘তুমি এসব করছো কেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। এরা কারা?’
বিজেন্দ্র হুঙ্কার দিলো ‘কেন আমাকে চেনা যাচ্ছেনা?’
আমি বিজেন্দ্রকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ও তো সমাজের চোখে সমাজ বিরোধি, ওকে তুমি কিভাবে চেনো?’
অমিত চুপ করে রইলো। ও ভালোই বুঝতে পেরেছে যে ও ধরা পরে গেছে। সেদিন দুপুরে একটা ফোন এসেছিলো ও, তারাতারি করে কেটে দেয় ও। আমার কেমন যেন মনে হয়েছিলো সেটা অনুরাধার নাম্বার, শেষ কয়েকটা নাম্বার চোখে পরেছিলো, তখন সেই ভাবে গুরুত্ব দিইনি। যখন শুনলাম ও আর অনুরাধা এক হোটেল থেকে বেরোচ্ছে, বুঝতেই পারলাম, আমার আর ওর ব্যাপারটা অনুরাধা প্রথম থেকেই জানে। আমার মন বলছে ও অনুরাধার মেয়েছেলে সঙ্ক্রান্ত ব্যাপার সমান সমান জানে। রনিতাকে মোহরা বানাতে রিয়াকে যেচেই সাহাজ্য করছিলো ও যাতে ওরা কি করছে কোনদিকে যাচ্ছে, কাকে ধরছে সেগুলো ওদের নজরে থাকে। রনিতার মৃত্যুটা ছিলো সময়ের অপেক্ষা। রাজনৈতিক কাউকে ফাঁসাতে হলে কোনকিছুর জন্যে অপেক্ষা করতে হয়না। অমিতের যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে প্রথমেই সেটা করে দিতে পারতো। অনুরাধার মতন একজন শাসক দলের নেত্রির নাম জড়িয়ে গেলে এমনিতেই ঝড় বয়ে যেতো রাজ্য রাজনিতিতে। রিয়াকে অমিত পুরো খেলিয়েছে। আমাকেও ব্যাবহার করেছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ও যখন বুঝতে পারলো যে আর কোন উপায় নেই বাঁচার তখন নিজের মুখেই স্বিকার করলো।
ব্যাবসার পসার বাড়াতে শহর কোলকাতা আর বড় বড় শহরের বড় বড় রিয়েল এস্টেট এজেন্সিদের হাতে রাখতে হোত ওকে। ওর তৈরি ফ্ল্যাট কমপ্লেক্স এগুলো বিক্রি করানোর জন্যে, প্রোমোট করার জন্যে ওকে এদের সন্তুষ্ট রাখতে হোতো। এদের বসেরা বিভিন্ন জায়গায় মেয়েছেলে চেয়ে পাঠাতো। প্রথম প্রথম কলকাতার বিভিন্ন এসকর্ট এজেন্সি থেকে মেয়ে নিতো। তারপর ও বুঝতে পারে এই ব্যবসা বিনা পুঁজিতে বিড়াট ব্যবসা। একবার কিছু খদ্দের তৈরি হয়ে গেলে নিয়মিত মোটা ইনকাম। অন্য কাউকে কমিশান দিতে যাবে কেন? বেশি কাঠখর পোরানোর ও ব্যাপার নেই। শুধু চাহিদা আর যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা। আর মেয়ে পাওয়া তো আজকাল কোন ব্যাপারই নয়। আজকালকার মেয়েরা বুঝে গেছে অর্থের কত জোর। আর শিক্ষিত মেয়ে বা অশিক্ষিত মেয়ে এটাও বুঝে গেছে, ফুলসজ্জার রাতে বরকে কুমারিত্ব উপহার দিয়ে কোন লাভ নেই, তার কারন সেই পুরুষটাও কুমার এমন কোন গ্যারান্টি নেই। তাই দুপা ছড়িয়ে যদি লোভনিয় উপার্জন হয় তাহলে ক্ষতি কি?
নিজের মুখেই অমিত জানালো যে এক একটা ডিল দশ বারো হাজার থেকে কুরি লাখ টাকা পর্যন্ত ও করেছে। বেশির ভাগ সিনেমার লোকজন লাখের ঘরে খেলে।
এই কারনেই ও অনুরাধার সাথে হাত মিলিয়েছিলো যাতে দুজন দুজনকে দরকারে মেয়েছেলে সাপ্লাই করতে পারে। দুজন মিলিয়ে এদের যৌনকর্মি প্রায় ষাট জন।
রনিতাকে অমিতই ফাঁসিয়ে এই লাইনে আনে। ওদের কলেজ ফেস্টে কিছু ছেলে রনিতার সাথে বন্ধুত্ব করে। ধিরে ধিরে ওদের মধ্যেই একজন ওকে প্রেম নিবেদন করে। সেই প্রেম একদিন শরীর পর্যন্ত্য পৌছায়, আর সেই অন্তরঙ্গ মুহুর্তগুলো লুকিয়ে উঠে যায় ক্যামেরায়। এর পর যা হয়, প্রেমিক তার মুখোস খুলে দাঁত নখ বের করে, আর বার বার ওকে বিক্রি করতে শুরু করে। তারপর কচি নাড়ি মাংসের পদোন্নতি হয়, নিজেকে রনিতার সাথে না জড়িয়ে ওকে অনুরাধার প্রোডাক্ট হয়ে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয়। এরকম আদানপ্রদান এদের মধ্যে স্বাভাবিক, যেমন মাল ফুরিয়ে গেলে পাশের দোকান থেকে কেউ এনে দেয়। এদের কোন অফিস নেই, খাতায় কলমে কিছু নেই, তবুও বিড়াট নেটওয়ার্ক। মেয়েরা মেয়েদের পয়সা পেয়ে যাচ্ছে, মালিক মালিকের পয়সা। পুলিশ আর রাজনৈতিক নেতারা তো এই প্রসাদ পেয়েই খুশি।
বিজেন্দ্রকে রিয়ার সাথে ঝগড়া করে সুবলাকে নিয়ে আসতে হয়েছে। পরিচয় দিয়েছিলো সুবলার আত্মিয় হিসেবে। সুবলার কিছু বলার ক্ষমতা ছিলো না। অনাহারে ওর কথা বলার মতন শক্তি ছিলো না। বিজেন্দ্র জানে সুবলার কাছে অনেক খবর আছে, তাই বিজেন্দ্র ওকে এখানে নিয়ে আসবে বলেই গেছিলো, সেখানে গিয়ে এই অবস্থা দেখে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বাধ্য হয়, আর কয়েকদিন এরকম থাকলে হয়তো ও ঘরেই মরে পরে থাকতো।
ছেলেটা যে আমার জন্যে এইটুকু করলো তাতেই আমার কৃতজ্ঞতায় গলা বুজে আসছে।
আমি রাস্তায় বেরোতে পারছিনা। অনুরাধার অর্ডার যে আরো কিছুদিন যেন আমাকে গায়েব করে রাখা হয়। আমাকে নিয়ে কি করতে হবে সেটা পরে বলবে। কি উদ্দেশ্য ওদের আমি বুঝতে পারছিনা। রাহুল কি ভাবে অনুরাধার সাথে জড়িত তাও বুঝতে পারছিনা। এরকম ভাবে অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পরছি, তাতে ভাবছি যে শেষ পর্যন্ত্য বেঁচে থাকবো তো?
আমাকে মেরে না ফেলে তুলে আনতে কেন বললো? মেরে ফেললে তো ওদের ঝামেলা মিটে যেত। রাহুলও রিয়াকে নির্ঝঞ্ঝাটে বিয়ে করতে পারতো। কেন কেন কেন? মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে। রান্না ঘর ছেড়ে যেই বেরোলাম আর কোথায় এসে পরলাম। জেল পর্যন্ত খাটলাম।
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি রিয়া কেন এরকম করছে। রক্তের সম্পর্কের কেউ কি এরকম করতে পারে?
রাহুল আর অনুরাধা কি ভাবে জড়িত তা আমাকে জানতেই হবে। বিজেন্দ্রর মতন ছেলের পক্ষে ওকে শেষ করে দেওয়া কোন ব্যাপার না। ও নিজেও আমাকে বারবার বলছে তাই। কিন্তু তাতে কি সব শেষ হয়ে যাবে। রহস্যের গোড়াটা না জানলে কি করে সেটা উতখাত হবে। সেটা একমাত্র জানে রাহুল, কিছুটা সুবলা, আর সম্পুর্নটা অনুরাধা। কিন্তু অনুরাধার মুখ থেকে এগুলো কি করে জানবো। রাহুল এখন কোথায় গেছে?
অনুরাধা পর্যন্ত্য পৌছাবো কি করে?
নার্সিং হোমে সুবলাকে দুপুরে খাওয়ার দিয়ে বিজেন্দ্র ফিরলো ওর সেই সঙ্গিকে নিয়ে। ওর নাম পল্টু। এই প্রথম জানতে পারলাম বিজেন্দ্র আসলে বিহারি। এই ঘরেই ওর জন্ম। বাবা জুটমিলের শ্রমিক ছিলো।
আমারও সন্দেহ হয়েছিলো নামটা শুনে, যাক তাতে আর কি যায় আসে। এত বাঙালি শ্ত্রুর থেকে এরকম বিহারি বন্ধু পাওয়া মানে ভাগ্যের ব্যাপার।
বুঝলাম পল্টু আমার দুঃখের কথা জানে। তিনজনে মিলে আমার সমস্যা সমাধানের জন্যে নানাদিক সমস্যাটাকে কাটাছেড়া করতে শুরু করলো।
যা বুঝতে পারলাম এই দুজন ছাড়াও আরো অনেকে আছে অনুরাধার পকেটে, যারা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দুষ্কর্ম গুলো করে। বিজেন্দ্র একটা বড় গ্যাং চালায়, যার খরচপাতি সব অনুরাধা দেয়।
‘রাহুলকে আগে আটকাতে হবে। এই বিয়ের পিছনে দিদির কিছু উদ্দেশ্য আছে নিশ্চয়।’ পল্টু প্রায় নিজের মনেই বলে উঠলো।
সঙ্গে সঙ্গে বিজেন্দ্র বলে উঠলো ‘মালটাকে তুলে এনে যদি গায়েব করে দি? তাহলে বৌদির চিন্তা কিছুদিনের জন্যে কমবে।’
ওর মুখে বৌদি ডাক শুনে আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখে লাজুক কিন্তু দুষ্টূ একটা হাসি।
‘সেটাই করতে হবে। এছাড়া উপায় নেই। তাছাড়া আমাদের যে চার পাঁচ জন আছে তাদের ছড়িয়ে দিতে হবে দিদির খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যে।’
আমার জন্যে এরা এত কিছু করছে দেখে চোখে জল চলে আসছে আমার। নিজের লোক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে যেখানে সেখানে কি বলে যে এদের ঋণ শোধ করবো জানিনা। যার কেউ নেই তার ভগবান আছে।
আমি বিজেন্দ্রকে বলেছি যে সুবলার সেই সঙ্গির খোঁজ করতে, যে আমাদের বাড়িতে মাল ডেলিভারি করতো। বিজেন্দ্রর সব সময় নার্সিং হোমে যাওয়া ঠিক না। বেশি বেগ পেতে হয়নি। নিয়মমতন খাওয়ার আর ওষুধ পরাতে সুবলা দুএকদিনের মধ্যেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আমার কথা শুনে চোখের জল ফেলেছে। নার্সিং হোম থেকে এখানে আসতে চায়।
রাহুলের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। বাড়িতে এখনো আসেনি। বিজেন্দ্রর দল সারাদিন নজর রাখছে আমার বাড়ির ওপরে। ওদের নেটওয়ার্ক পুলিশের থেকেও সাঙ্ঘাতিক। অনুরাধা রোজই বিজেন্দ্রকে ফোন করে আমার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়।
চারদিনের মাথায় সুবলাকে নার্সিং হোম থেকে ছেরে দিলো। সমস্যা হোলো ও ওর ভালোবাসার লোকের সাথে থাকতে পারবেনা যতক্ষন না পর্যন্ত ছেলেটা নতুন ঠিকানা পাচ্ছে। ওখানে থাকলে রাহুল আর অনুরাধা আবার ওকে বিপদে ফেলতে পারে।
অগত্যা আপাততঃ রাতে বিজেন্দ্রর ঘরেই সুবলার থাকার ব্যাবস্থা হোলো।
আমাকে দেখে সুবলা হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো।
-তুমি বেঁচে আছো আমি ভাবতে পারছিলাম না। আবার তোমাকে দেখতে পাবো এমনটা স্বপ্নেও ভাবিনি। কি জিনিস কে যে বাড়িতে ঠাই দিয়েছো, এখন দেখো তোমার নিজের বাড়িতেই তোমার ঠাঁই নেই।
আমি ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। সেই আশঙ্কা তো আমারও ছিলো। কাজের লোক আর মালকিন সেই সম্পর্কটা অনেকদিন আগেই আবছা হয়ে গেছিলো। আজকে এই বিপদের মুখে পরে সেটা পুরোপুরি মুছে গেলো। আমি ওর সঙ্গিকে আর ওকে চা করে দিলাম। সুবলা আপত্তি করছিলো কিন্তু আমি তাও নিজেই ওদের চা করে দিলাম।
এ কয়দিন বিজেন্দ্র ঘরে নেই রাতের বেলা। রাতের বেলাতেই নাকি সবার সাথে দেখা সাক্ষাত হয়, রাতেই ওদের কাজ। অন্ধকার জগতের লোকেদের যা হয়। একটা জিনিস এই কদিনে বুঝলাম, যে এরা স্বাভাবিক ভেতো বাঙ্গালির মতন নয়। বিহারি বলে বলছি না। ওর দলে অনেক বাঙালি ছেলেও আছে। এরা স্বাভাবিক জীবন পছন্দ করেনা। এরা চায় রোমাঞ্চ, এডভেঞ্চার। কারন খারাপ ভালো যাই হোক না কেন। আমার এই ব্যাপারটার উদ্দেশ্য মহৎ, তাই আরো যান বেশি করে ঝাপিয়ে পরেছে। অধিক উত্তেজনার ফলে ভুলভাল খবরও আসছে। বিজেন্দ্রকে দেখলাম খুব পরিনত, ঠান্ডা মাথার ছেলে। কোন বাছাই করবে সেই সিদ্ধান্ত ও নিজেই নিচ্ছে।
আপাতত রাহুলকে ফাঁদে ফেলাই ওদের উদ্দেশ্য।
রাহুলকে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায় সেই নিয়েই আমরা ভাবতে ব্যস্ত এখন।
সুবলা একটু ধাতস্থ হতে ওর মুখ থেকে সমস্ত কথা শুনলাম।
সেদিন রাতে সুবলার খাবারে রাহুল কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলো, আশা করা যায় যে সেই একই জিনিস যেটা ও খাবার ডেলিভারির সময় মিশিয়েছিলো। বিছানায় শুয়েই ওর গা গুলিয়ে ওঠে, বমি করার পরেও শরীরে অস্বস্তি যায় না। সেই সময় ও শুনতে পায় রাহুল সিড়িতে দাঁড়িয়ে কার সাথে ফোনে কথা বলছে। অতি কষ্টে কান পেতে শুনে ও বুঝতে পারে যে রাহুল রিয়াকে আমার সন্মন্ধে, আমার চরিত্র, সুবলার চরিত্র নিয়ে নানান কথা বলছে। আরো বলছে ওর ঘরে এলে সব বুঝিয়ে বলতে পারবে।
সুবলা সেই সময় বেরিয়ে আসে, রাহুল ওকে মাথায় মেরে ফেলে দেয়, রিয়াও ঘর থেকে বেরিয়ে আসে একই সময়ে। রাহুল ওকে বলে রিয়া সব জেনে যাবে বলে সুবলা ওকে আটকাতে চাইছিলো ধস্তাধস্তিতে পরে গিয়ে মাথায় লেগেছে। কোন এক লোকের সাথে তোমার ভালো রিলেশান আছে, ওর বিপদ হতে পারে বলে রাহুল রিয়াকে প্রায় পায়ে ধরে উপরে নিয়ে যায়। রিয়াকে বলে যে এখন বলতে না পারলে হয়তো কাল সকালে ও বেচে নাও থাকতে পারে।
আমিও আর লুকালাম না, রাহুলের সাথে আমার যা যা হয়েছে সব বললাম সুবলাকে।
সেদিনের পর থেকে রিয়ার ঘরেই রাহুল থাকছে। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ থাকায় ও বুঝতে পারেনা কি হচ্ছে। কিন্তু যে কেউ আন্দাজ করতে পারবে, এক বিছানায় প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ে কি করতে পারে।
রাহুলের অনুপস্থিতিতে সুবলা একদিন রিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু সুবলাকে মুখের ওপ্র বেশ্যা বলে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো রিয়া। বাড়ি থেকে চলেযাওয়ার জন্যেও চাপ দিচ্ছিলো।
ও বারবার করে বলছিলো, আমি ওর মা না। জন্ম দিলেই মা হয়ে যায় না। রাহুল যদি খারাপ হয় তো আমিই ওকে খারাপ করেছি। আমার লেখা কাগজও ও পরেছে।
আমার খেয়াল পরলো অনুরাধার সাথে দেখে করার আগে আমি আত্মহত্যা করবো বলে হিসেবের খাতায় এসব লিখেছিলাম। আমি নিশ্চিত রিয়া সেগুলো দেখেছে।
আমি ভাবছি সেটা যদি দেখেই থাকে তো রিয়া কি করে ওকে শরীর দিলো, যে কিনা ওর মায়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। ওর শিক্ষা কি ওকে আটকালো না? একটা মানুষ যখন আত্মহত্যা করবে বলে কিছু লেখে তখন তো সে সব সত্যিই লিখবে। সেটা পরার পরে ও কি করে করলো? শরীর দেওয়াতে কি কোন ভুমিকা লাগেনা? গেলাম শুয়ে পড়লাম। তাহলে আমি কেন খারাপ হোলাম, কেন এই পরিনতি আমার। নিজের বাড়ি ছেড়ে বস্তির এক ঘরে শুয়ে আছি।
সুবলার নতুন সঙ্গির নাম হরিশ, আগেই ওকে চিনতাম, লালার ডোকানে কাজ করে মানে করতো। এখন নতুন কিছুর সন্ধানে আছে। এই বস্তিতে বিহাড়ি বেশি বলে এখানেই ঝোপরি জোগার করতে চাইছে। আমি কাউকে চিনিনা এখানে, অগত্যা বিজেন্দ্রর জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। তারও দেখা পাচ্ছিনা সেই ভাবে কয়েকদিন। বস্তি হলে কি হবে এখানে দেখছি সবাই বেশ মিলে মিশে থাকে। সকাল বেলা হলেই বাচ্চাগুলো খেলাধুলোয় মেতে ওঠে। এমন কি ওদের বল এসে দুমদাম দরজায়ও লাগে। আমাদের পাড়ায় হলে খেলাই বন্ধ করে দিতো। এখানে সেসব নেই। এরা নিজেদের পেটের জোগান দিতে গিয়েই দিন শেষ করে ফেলে, ওসবে আর কি যায় আসে। সন্ধ্যে হলে শিব মন্দিরের চাতালে বসে ঢোল কর্তাল নিয়ে ভোজপুরি গানের ফোয়ারা ছোটে। ভালোই লাগে সেই সরল গানের সুরগুলো। কিছু কিছু কথা বুঝতেও পারি। বেশির ভাগই ভগবান নিয়ে হিন্দি গানের সুরে তোলা গান। বিজেন্দ্র বলছিলো দোলের সময় আর শিবরাত্রিতে এখানে মহোতসব হয়। ভাং আর গান দুইই সয়ান তালে চলে সকাল থেকে সারারাত।
মানুষগুলো কত সরল সিধাসাদা। দিন আনে দিন খায়। শহর জিবনের জটিলতা এদের ছুতে পারেনি। এখন তো কলকারখানা বন্ধ, তাই বেশির ভাগই বড়বাজার বা হাওড়া শিয়ালদহ স্টেশানে মুটে গিরি করে। কারো চায়ের দোকান, কারো লিট্টির দোকান এই নিয়েই এরা আছে।
কিন্তু বিশালাকার শক্তিশালি চেহারাগুলোও বিজেন্দ্রকে খুব সন্মান করে। তাই ওর ঘরের ওপর সবসময় কারু না কারু পাহাড়াদারি আছে, কারন ওরা জানেনা, কোন প্রশ্নও করেনি।
সুবলা আর হরিশ এই ঘরে থাকবে এইটুকু শুধু জানে ওরা। আমরা তিনজনেই যে বিপদে আছি, কি ধরনের বিপদ সেটার আন্দাজ ওদের নেই।
অনুরাধা এখনো জানে যে যে আমি বিজেন্দ্রর খপ্পরে বন্দি, কোথায় সেটা জানেনা।
রাতের খাবারের পরে আমি সুবলাকে বললাম আমার সাথেই বিছানায় শুতে কিন্তু ও কিছুতেই রাজি হোলো না। হরিশ চলে গেলো শিব মন্দিরে ঘুমাবে বলে, আমি তাও বলে দিলাম ঠান্ডা লাগলে ঘরের মধ্যেই শুতে। মেঝেতে আলাদা আলাদা চাদর পেতে নিলেই হবে। সেও ভাড়ি লাজুক। যার সাথে নির্দ্বিধায় যৌনকর্ম করেছে, তার সাথে এক মেঝেতে শুতে লজ্জা পাচ্ছে, কারন আমি আছি। এরা অশিক্ষিত হলেও এদের বিবেক আছে। আমাদের মতন পালিশ করা কথা বলতে পারেনা কিন্তু বেয়াদপিও করেনা।
পরের দিন সকালে বিজেন্দ্র ফিরে এলো, মুখ গোমড়া। সুবলা সবার জন্যে চা করতে গেছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম “কি হয়েছে” আশঙ্কায় আমার বুক কাঁপছে। এত খারাপ জিনিস শুনেও ওর মুখ গোমরা হতে দেখিনি, চিন্তিত দেখিনি, তাহলে কি রাহুল আর রিয়া রেজিস্ট্রি করে ফেলেছে?
‘অমিত আর অনুরাধাকে একসাথে দেখা গেছে।’ ও প্রায় নিজের মনেই বলে উঠলো।
আমি চমকে উঠলাম।
চা ঠান্ডা হয়ে জল হয়ে গেলো, কিন্তু গলা শুকিয়ে গেছে আমার, এবার কি?
না এখানে থাকলে এবার সবার প্রান নিয়ে শংশয় হবে। আর বসে থাকা যাবেনা। কিছু করতেই হবে।
বহুদিনের পরে শহরের আলো দেখলাম, সবাইকেই কেমন যেন সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। কোন যায়গাটা আমার পক্ষে নিরাপদ আমি নিজে জানিনা। সেইভাবে আমি কোনদিনই বাসে ট্রামে চরে যাতায়াত করিনি। আশেপাশের লোক সেটা হয়তো বুঝতে পারছে।
গঙ্গার ধারে বাস থেকে নেমে গিয়ে একটা বুথ থেকে ফোন লাগালাম।
‘কে?’
‘আমি শম্পা বলছি?’
‘শম্পা!! তুমি কোথায়?’
‘আমি অনেক বড় বিপদে পরেছি, তুমি সাহায্য না করলে প্রান দেওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকবেনা’
‘এরকম বলছো কেন? তুমি তো কোথায় গায়েব হয়ে গেলে আমি বুঝতেই পারছিনা? এখন কোথায় আছো তুমি?’
‘আমি বেশিক্ষন এখানে থাকতে পারবো না। তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো।’
‘আধঘন্টা ম্যানেজ করো আমি চলে আসছি।’
আমি ফোনটা কেটে আরেকটা ফোন করলাম। আর আধঘন্টার মধ্যে যা করার করতে হবে।
আধঘন্টার মধ্যে অমিত গাড়ি নিয়ে সেখানে হাজির।
‘কি ব্যাপার তোমার, এরকম স্বপ্ন দেখিয়ে হাড়িয়ে গেলে যে, আমি তো কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না?’
‘বলছি বলছি। আগে আমাকে একটু জলের ব্যাবস্থা করে দাও, গলা শুকিয়ে গেছে। খুব কষ্টে এখানে পৌছেছি।’
‘আর ভয় নেই তোমার? আমি এসে গেছি, কেউ কিছু করতে পারবেনা দাঁড়াও জল নিয়ে আসছি। গাড়িতে রাখা আছে কালকের, কিন্তু ফ্রেশ জল।’
‘যা হোক একটু গলা ভিজাতে পারলেই হবে।’ আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম। উত্তেজনায় আমি আমার নিজের হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি।
গাড়ির থেকে জলটা বের করে নিজের গলায় খানিকটা জল ঢেলে নিলো অমিত। ঘুরে আমার দিকে আসতে শুরু করলো। দশ পা দূরে হবে। মুহুর্তের মধ্যে বিজেন্দ্র আর কয়েকটা ছেলে সেখানে উপস্থিত।
কয়েক মুহুর্তের জন্যে দুজন দুজনকে দেখলো। কারো চোখের পলক পরছে। বিজেন্দ্রর চোখমুখ অস্বাভাবিক শান্ত। চোয়াল শক্ত করে রয়েছে। অমিত যে ওকে চেনে সেটা বুঝতে পারছি, ওর চোখে জিজ্ঞাসা, আমার দিকে তাকাচ্ছে, বোঝার চেষ্টা করছে আমিই ওদের ডেকছি কিনা অথবা আমাকে ফলো করে ওরা এখানে পৌচেছে।
যোধপুর পার্কের খানদানি বড়লোক ব্যাবসায়ি, বিরোধি রাজনিতির অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান লোকটার চরিত্র আগেই আন্দাজ করেছিলাম কিন্তু এরকম হতে পারে ভাবিনি।
না ও রাহুল সন্মন্ধে কিছু জানেনা। কারন যে পরিমানে মার পরলো তারপরে সাধারন ঘরের কারোর পেটে কথা বেচে থাকার নয়।
পুলিশের মার সন্মন্ধে শুনেছিলাম, এই প্রথম এরকম মার দেখলাম।
বড়বাজারের একটা পরিতক্ত্য ভগ্নপ্রায় বাড়িতে ওকে আটকে রাখা হয়েছে।
একজন ভিডিও করছে, একজন মারছে আর একজন জেরা করছে।
‘তুই শালা, টিভিতে মুখ দেখিয়ে, পেপারে ছবি বের করে নিজেকে বড় হনু ভাবছিস নাকি রে?’ প্রথম প্রশ্নই ছিলো এরকম।
আমার দিকে তাকিয়ে অমিত বললো ‘তুমি এসব করছো কেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। এরা কারা?’
বিজেন্দ্র হুঙ্কার দিলো ‘কেন আমাকে চেনা যাচ্ছেনা?’
আমি বিজেন্দ্রকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ও তো সমাজের চোখে সমাজ বিরোধি, ওকে তুমি কিভাবে চেনো?’
অমিত চুপ করে রইলো। ও ভালোই বুঝতে পেরেছে যে ও ধরা পরে গেছে। সেদিন দুপুরে একটা ফোন এসেছিলো ও, তারাতারি করে কেটে দেয় ও। আমার কেমন যেন মনে হয়েছিলো সেটা অনুরাধার নাম্বার, শেষ কয়েকটা নাম্বার চোখে পরেছিলো, তখন সেই ভাবে গুরুত্ব দিইনি। যখন শুনলাম ও আর অনুরাধা এক হোটেল থেকে বেরোচ্ছে, বুঝতেই পারলাম, আমার আর ওর ব্যাপারটা অনুরাধা প্রথম থেকেই জানে। আমার মন বলছে ও অনুরাধার মেয়েছেলে সঙ্ক্রান্ত ব্যাপার সমান সমান জানে। রনিতাকে মোহরা বানাতে রিয়াকে যেচেই সাহাজ্য করছিলো ও যাতে ওরা কি করছে কোনদিকে যাচ্ছে, কাকে ধরছে সেগুলো ওদের নজরে থাকে। রনিতার মৃত্যুটা ছিলো সময়ের অপেক্ষা। রাজনৈতিক কাউকে ফাঁসাতে হলে কোনকিছুর জন্যে অপেক্ষা করতে হয়না। অমিতের যদি সৎ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে প্রথমেই সেটা করে দিতে পারতো। অনুরাধার মতন একজন শাসক দলের নেত্রির নাম জড়িয়ে গেলে এমনিতেই ঝড় বয়ে যেতো রাজ্য রাজনিতিতে। রিয়াকে অমিত পুরো খেলিয়েছে। আমাকেও ব্যাবহার করেছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ও যখন বুঝতে পারলো যে আর কোন উপায় নেই বাঁচার তখন নিজের মুখেই স্বিকার করলো।
ব্যাবসার পসার বাড়াতে শহর কোলকাতা আর বড় বড় শহরের বড় বড় রিয়েল এস্টেট এজেন্সিদের হাতে রাখতে হোত ওকে। ওর তৈরি ফ্ল্যাট কমপ্লেক্স এগুলো বিক্রি করানোর জন্যে, প্রোমোট করার জন্যে ওকে এদের সন্তুষ্ট রাখতে হোতো। এদের বসেরা বিভিন্ন জায়গায় মেয়েছেলে চেয়ে পাঠাতো। প্রথম প্রথম কলকাতার বিভিন্ন এসকর্ট এজেন্সি থেকে মেয়ে নিতো। তারপর ও বুঝতে পারে এই ব্যবসা বিনা পুঁজিতে বিড়াট ব্যবসা। একবার কিছু খদ্দের তৈরি হয়ে গেলে নিয়মিত মোটা ইনকাম। অন্য কাউকে কমিশান দিতে যাবে কেন? বেশি কাঠখর পোরানোর ও ব্যাপার নেই। শুধু চাহিদা আর যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা। আর মেয়ে পাওয়া তো আজকাল কোন ব্যাপারই নয়। আজকালকার মেয়েরা বুঝে গেছে অর্থের কত জোর। আর শিক্ষিত মেয়ে বা অশিক্ষিত মেয়ে এটাও বুঝে গেছে, ফুলসজ্জার রাতে বরকে কুমারিত্ব উপহার দিয়ে কোন লাভ নেই, তার কারন সেই পুরুষটাও কুমার এমন কোন গ্যারান্টি নেই। তাই দুপা ছড়িয়ে যদি লোভনিয় উপার্জন হয় তাহলে ক্ষতি কি?
নিজের মুখেই অমিত জানালো যে এক একটা ডিল দশ বারো হাজার থেকে কুরি লাখ টাকা পর্যন্ত ও করেছে। বেশির ভাগ সিনেমার লোকজন লাখের ঘরে খেলে।
এই কারনেই ও অনুরাধার সাথে হাত মিলিয়েছিলো যাতে দুজন দুজনকে দরকারে মেয়েছেলে সাপ্লাই করতে পারে। দুজন মিলিয়ে এদের যৌনকর্মি প্রায় ষাট জন।
রনিতাকে অমিতই ফাঁসিয়ে এই লাইনে আনে। ওদের কলেজ ফেস্টে কিছু ছেলে রনিতার সাথে বন্ধুত্ব করে। ধিরে ধিরে ওদের মধ্যেই একজন ওকে প্রেম নিবেদন করে। সেই প্রেম একদিন শরীর পর্যন্ত্য পৌছায়, আর সেই অন্তরঙ্গ মুহুর্তগুলো লুকিয়ে উঠে যায় ক্যামেরায়। এর পর যা হয়, প্রেমিক তার মুখোস খুলে দাঁত নখ বের করে, আর বার বার ওকে বিক্রি করতে শুরু করে। তারপর কচি নাড়ি মাংসের পদোন্নতি হয়, নিজেকে রনিতার সাথে না জড়িয়ে ওকে অনুরাধার প্রোডাক্ট হয়ে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয়। এরকম আদানপ্রদান এদের মধ্যে স্বাভাবিক, যেমন মাল ফুরিয়ে গেলে পাশের দোকান থেকে কেউ এনে দেয়। এদের কোন অফিস নেই, খাতায় কলমে কিছু নেই, তবুও বিড়াট নেটওয়ার্ক। মেয়েরা মেয়েদের পয়সা পেয়ে যাচ্ছে, মালিক মালিকের পয়সা। পুলিশ আর রাজনৈতিক নেতারা তো এই প্রসাদ পেয়েই খুশি।