10-06-2019, 07:25 PM
সব সেরে উঠতে উঠতে রাত প্রায় সারে বারোটা বেজে গেলো। রাহুল দশটা নাগাদ ঘরে চলে গেছে, রিয়াও নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। সুবলাও গভির ঘুমে আচ্ছন্ন। আমিই পাহাড়াদারের মতন জেগে রয়েছি। ঘরের সব চেক করার পরে নিচে নামতে হয়, গেটের তালা দেওয়া আছে কিনা দেখতে, তারপর বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখতে হয় ড্রেনের দিকের দরজাটা দেওয়া কিনা। দিনের বেলা সময় হয়না, এদিকে আসার, তাই ঘুমের আগে টর্চ নিয়ে ওদিকে ঘুরে আসি। এইদিকের ড্রেনটা মাঝে মাঝে বেগ দেয়। এর কিছুটা অংশ কাঁচা রয়েছে। আমার ছিমছাম বাড়ির কলঙ্ক বলা চলে। মাঝে মাঝে ইদুড় মাটি খুরে ড্রেনের মুখ জ্যাম করে দেয়। তাই নিয়মিত এদিকটা দেখতে হয়। এবার সময় করে ড্রেনটা পাকা করতে হবে।
এই নিচে দুটো বাথরুম আছে পাশাপাশি। একটা কল আছে। বাড়িতে মিস্ত্রিরা কাজ করলে এই বাথরুম পায়খানা ব্যবহার করে। সুবলা বাড়ীর ভিতরের একতলার একটা বাথরুম পায়খানা ব্যবহার করে। একতলাতেই ও থাকে। আমি ওকে বলেছিলাম, ওর বরকে এখানে এনে রাখতে, আমি পয়সা দিতাম নাহয়, একটা রিকশা কেনার জন্যে। রাতের বেলা একটা পুরুষ মানুষ থাকার দরকার অনুভব করি অনেকদিন থেকে। কিন্তু সুবলাই ওর বরের নেশাভাং করা নিয়ে এমন সব কথা বলেছে যে আমি আর সাহস পাইনি।
সব দেখে উপরে উঠে বাথরুমে চলে গেলাম, গাহাতপা ধুয়ে পোষাক চেঞ্জ করবো বলে। আশ্বিন মাস পরে গেলে কি হবে, এখনো মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে আর না হলে ভ্যাপশা গরম হচ্ছে। সারাগা মনে হচ্ছে চ্যাটচ্যাট করছে। আমি আবার এই ব্যাপারে খুব পিটপিটে, নোংরা গা হাতপা আমার কেমন ঘেন্না লাগে।
পরনের শাড়ী শায়া খুলে উলঙ্গ হয়ে নিজেকে দেখতে শুরু করলাম। আমি জানি এই বয়েসেও আমার রুপ আমার যৌবন দেখে অনেক যুবতি মেয়েই ঈর্ষা করবে। মুচকি হাসি নিজের মনে। “চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কি হবে” গানটা মনে পরে গেলো। রুপ, যৌবনের প্রসংশা না পেলে রুপ দিয়ে কি হবে।
ঈষোদষ্ণ জলের ধারায় সারাদিনের ক্লান্তি মুছে ফেলতে চাইছি, সাথে মনের গ্লানি। ভগবানকে ডাকছি, সুন্দর সুস্থ ঘুম দিতে। জীবনে অনেক পেয়েছি, হয়তো যোগ্যতার থেকে বেশী, কিন্তু শারীরিক এই অপ্রাপ্তি ধিরে ধিরে রোগের মতন আমার ঘুমে থাবা বসাচ্ছে। সেটা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু কিছু করতে পারছিনা। মন যে মানেনা।
ক্যাবিনেট থেকে একটা তোয়ালে নিয়ে গা মুছে নিলাম। একটা নাইটি টেনে নিলাম পরবো বলে। প্রসাধনের জিনিসগুলো অজত্নে বছরের পর বছর ক্যাবিনেটের ভিতর রয়ে গেছে। আমি বাথরুমেই মেকাপ করতাম। বিশাল আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখতে পেতাম বলে। নিচু হয়ে বসে আইলাইনার, লিপ্সটিকগুলো বের করে নিলাম। একসময় শপিং কমপ্লেক্স থেকে প্রতি মাসে এই জিনিসগুলো কিনে আনতাম। প্রয়োজনের থেকে বেশিই থাকতো। পার্থর ইচ্ছে ছিলো আমি সাজাগোজা করি। আধুনিক নাড়িদের সাথে পাল্লা দি। শাড়ির রঙের সাথে রঙ মিলিয়ে, লিপ্সটিক, নেইল পালিশ, সাথে একই রঙের জুতো। সত্যি পাল্লা দিতামও। সবাই তাকিয়ে দেখতো আমি সেজেগুজে বেরোলে।
হাতে নিয়ে ভাবছি, একদিন এগুলো কত প্রিয় ছিলো। আর অজত্নে ম্যাড়ম্যাড় করছে। কি নেই এতে, দেশি বিদেশি সব ব্র্যান্ড এতে রয়েছে।
গাঢ় গোলাপি রঙের একটা লিপ্সটিক পার্থর খুব পছন্দ ছিলো। সেটা লাগালেই পার্থ একবার অন্তত সেটা নষ্ট করতো, চুমু খেয়ে। বলতো, তোমার মতনই মিষ্টি লিপ্সটিকটা।
প্যাঁচ ঘুরিয়ে বের করতেই নাকে সেই মিষ্টি গন্ধটা এসে লাগলো। চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছে। স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মতন হাত নিখুত ভাবে ঠোঁট একে দিলো সেটা দিয়ে। এক ঝটকায় আটপৌরে বিধবার থেকে লাস্যময়ি নাড়িতে পরিনত হয়ে গেলাম। ঠোঁটে দামি লিপ্সটিকের দৌলতে কামনার আবেদন। ড্রাইয়ার দিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে সেগুলো ব্রাশ দিয়ে ভালো করে আঁচড়ে নিলাম।
একে একে আইলাইনার, ব্লাশ লাগিয়ে হাত যখন থামলো, নিজেকে চিনতে অসুবিধে হচ্ছে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, স্বয়ং কামনার দেবি। আজকের মেয়েদের চ্যালেঞ্জ ছুরে দিয়ে লাস্যময়ি ভঙ্গিতে অনায়াসে ক্যাটওয়াকের প্রতিযোগিতায় নামতে পারে এই শম্পা। পুরুষদের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে এই আমি, অতি সংযমি পুরুষও টলে যেতে বাধ্য আমার এই রুপ দেখে।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। নিজের মনেই হেসে দিলাম। কি করছি আমি? কেন? কেন আবার এই প্রতিযোগিতার কথা ভাবছি, কার সাথে?
সব মুছে দিয়ে আবার আটপৌরে শম্পা হয়ে ঘরে এসে শুলাম। বিগত সব ঘটনা মনের মধ্যে চিন্তার স্রোত তুলছে। আমি নিজেই সেই ঢেউগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছি। প্রচন্ড এক লড়াই করতে হচ্ছে নিজেকে নিজের সাথে, কিছুতেই রাহুলকে আমি আমার মনের ওপর নিয়ন্ত্রন করতে দেবো না। এটা অন্যায়।
প্রচন্ড লড়াই করে কিছুক্ষন চেষ্টা করে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মনের মধ্যে এক যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। আমি পেরেছি।
সুবলাকে চা করতে বলে আমি টেবিলে বসলাম। ভিতরে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করছে। টিভি চালিয়ে চ্যানেলের পর চ্যানেল চেঞ্জ করছি, রিয়া এখন বাথরুমে, একটু পরে রাহুলও চলে আসবে। একসাথেই চা খাবো। অন্যদিন আমি নিজে চা নিয়ে আসি। আজকে সুবলাকে বলেছি ওরা আসলে ওদের সাথে একসাথেই দিতে আমার চা।
দুজনে প্রায় একসাথেই এসে পরলো। দুজনে দুজনের মতন কথা বলে চলেছে। আমি মাঝে মাঝে অদের দিকে দেখছি আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের আমেজ নিচ্ছি। খেয়াল করলাম যে ওরা কথা বলছেনা। রিয়ার দিকে তাকাতে দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসি চাপার চেষ্টা করছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। কি ব্যাপার বোঝার চেষ্টা করছি। রাহুলও কেমন বোকার মতন আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আর রিয়ার দিকে দেখছে, ওর চোখে দেখছি রিয়াকে সাবধান করে দেওয়ার ইঙ্গিত। কি হোলো? এরকম করছে কেন? আমাকে এরকম অনুসন্ধিৎসু দেখে রিয়া হাসিতে ফেটে পরলো। আমি বোকার মতন ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ওর হাসির প্রভাবে আমারও মুখে বোকা হাসি।
‘কি হয়েছে রে?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম।
রিয়া কোনরকমে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে পারলো “মা তুমি মেকাপ করেছো? হঠাত? সব লেগে আছে তো, তুমি কি ডেলিভারি করতে গিয়ে মেকাপ করো নাকি?”
আমি কোনরকমে বলতে পারলাম ‘এই কালকে দেখছিলাম জিনিস গুলো ঠিক আছে কিনা তাই...।’
রিয়া প্রায় অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। বসে থাকবো? না উঠে চলে যাবো? তারপর ঠিক করলাম যে চায়েই মনোযোগ দি। নিজেকে খুব ছোট লাগছে। রাহুলের মুখে কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না, সেও মনে মনে হাসছে কিনা বোঝার উপায় নেই।
ওরা চলে যাওয়ার পরে বাথরুমে গিয়ে ভালো করে দেখলাম, যে মেকাপের ছাপ রয়ে গেছে, ঠোঁটে, চোখে। এই বয়েসে এরকম লজ্জায় পরবো ভাবতে পারিনি, তাও বাইরের একটা ছেলের সামনে। রিয়া ওকে এতটাই আপন ভাবছে যে নিজের মাকেও ওর সামনে ছোট করতে বাঁধলো না। ভাবতে চোখে জল চলে এলো।
রাস্তায় একটা গন্ডোগোলের আওয়াজ পাচ্ছি। বারান্দা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম বাড়ির নিচেই কয়েকটা ছেলে মিলে একটা ছেলেকে মারছে। যত না মারছে তার থেকে বেশি চিৎকার চেচামেচি করছে। একটু খেয়াল করে দেখলাম, মার খাচ্ছে ছেলেটাকে অনুরাধার ঘরে দেখেছি। এরা কারা যে অনুরাধার লোককে মারছে। এতো প্রলয়ের সৃষ্টি হবে। যারা মারছে তাদের মুখ হয়তো দেখেছি আশেপাশে, কিন্তু খেয়াল করতে পারছিনা।
রিয়া পাশে এসে দাড়িয়েছে। সামনের দিকে ঝুকে দেখছে, আর বেশ উচু সুরেই গজর গজর করছে ‘এগুলো সারা দিনরাত এই করে চলেছে, এমন একটা পাড়ায় থাকি কেউ কিছু বলেনা, এই জন্যেই ছিঁচকে চোর থেকে এগুলো হয় বড় গুণ্ডা হচ্ছে নাহয় রাজনিতিতে নেমে প্রোমোটারি করছে।’
আমার মনটা বিরক্তিতে ভরে উঠলো আমি না চাইতেও বলে ফেললাম ‘তুই সব ব্যাপারে এত স্পর্শকাতর কেন রে? এসব কথা ছেলেগুলো শুনে নিলে? কেউ ওদের ঘাঁটায় না তুই হয়েছিস একেবারে বিপ্লবি। দুঃখের ভাত সুখে খাবি সেটা সয়না, তাইনা?’ আমি যেন কিছুক্ষন আগের অপমানের ক্ষোভ উগরে দিলাম ওর ওপরে।
এই প্রথম রিয়া আমার ওপর ঝাঁজিয়ে উঠলো ‘এই ভাবে ভাতই জুটবে, ইজ্জত জুটবে না। একদিন এই ছেলেগুলোই আমার হাত ধরে টান দেবে, তখনও তুমি বলবে চুপ করে থাকতে, সত্যি বলছি বাপি থাকলে মনে হয় এই কথা বলতো না আমাকে বরঞ্চ উৎসাহ দিতো।’
‘তুই কি করে জানিস যে তোর বাপি তোকে উৎসাহ দিতো?’
‘যে মানুষ সারা জীবন স্ট্রাগল করেছে, সে অন্যায় দেখে লড়বেনা এটা হয়? আজ তারই তো অবদানে তোমার আর আমার জীবন চলছে, যতটুকু সন্মান রয়েছে তারই জন্যে।’
‘মানে? এই যে আমি উদায়াস্ত পরিশ্রম করছি সেটার কোন অবদান নেই?তুই হাওয়া খেয়ে বড় হয়ে গেলি?’
‘মা তুমি যা পরিশ্রম করছো, সেই তুলনায় কি পাচ্ছ? সারাদিন ধরে দেওয়াল ঠেলছো, যে দেওয়াল সারাজীবনেও সরবেনা। এটা কি কোন সন্মানের কাজ? লোকে তোমাকে রাধুনি বলে, শুনতে ভালো লাগে?’
‘রাধুনিদের কি সন্মান নেই? আর কে বলছে? আমি তো কোন অসন্মান দেখতে পাইনা এর মধ্যে। তোর সন্মান ঠুনকো হতে পারে। যে বলে সে বলুক, আমার তাতে কি? আমি তো স্বামির অবর্তমানে কোন খারাপ কাজ করছিনা উপার্জনের জন্যে।’
‘মুখের ওপর কে বলবে তোমাকে? পিছনে সবাই তাই বলে। তুমি শুনতে চাওনা না পাওনা সেটা তোমার সমস্যা।’
‘আমি যেটা পারি সেটা করে উপার্জন করছি, সংসারে নিত্য জোগান দিয়ে চলেছি, কে কি বললো আমার তাতে কিছু আসে যায়না। তোর যদি সন্মানে লাগে তাহলে আমার কি করার আছে, এত চিন্তা করে তো কিছু করতে পারবো না।কাউকে বলিস না যে আমি তোর মা, তাহলেই তো হোলো।’
‘তুমি এসব ইমোশানাল কথা ছাড়ো। তোমাকে পথ দেখিয়ে দিলেও তুমি গ্রহন করবেনা। সব ব্যবসাকেই পেশাদারি মোড়কে মোরা যায়, কিন্তু তুমি তোমার পথ ছেরে কারো পথ ধরে হাটবেনা, এমন গোঁ তোমার। ধিক ধিক করে তেল ফুরানো প্রদিপের মতন ব্যবসা করে যাচ্ছো। ভালো উপদেশ তুমি নেবেনা? এমন তোমার ইগো।’
‘আমার ইগো দেখলি তুই? আর থাকবে নাই বা কেন? দিনরাত খেটে এই উপার্জন করছি, যাতে সংসারে সাচ্ছন্দ থাকে। নিজের হাতে তৈরি করেছি এই ব্যাবসা, কেন আমি তোদের কথায় নাচবো? কোথা কে উড়ে এসে জুড়ে বসলো, এটা ওটা আইডিয়া দিলো আর হয়ে গেলো? তার কথায় আমি চলবো? এতোই সহজ যদি সব কিছু হোতো তাহলে নিজের অবস্থা এরকম কেন?’
রিয়া চুপ করে গেলো। আমার মুখের দিকে থমথমে মুখ তাকিয়ে রইলো। তারপর ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো। আমি মাথা গরম করে খেয়াল করিনি যে রাহুল আমাদের কথা শুনছিল। ওকে দেখে আমার সম্বিত ফিরলো। যাঃ এটা আমি কি করলাম?
সাত তাড়াতাড়ি কলেজের ব্যাগ গুছিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে রিয়া বেরিয়ে গেলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘ভাত খাবিনা?’ ও উত্তর না দিয়ে আমাকে পাশ কাটিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এই বয়েসে নিজেকে সংযত করা উচিত ছিলো। সকালের অপমানের বদলা এরকম ঝগড়া করে নেবো ভাবতে পারিনি। বাড়িতেও বোনের সাথে ঝগড়া হলে এরকমই চলতো, যতক্ষন না মা এসে নাক গলাতো। তারপর দুই বোন কেঁদেকেটে দুপাশে সরে থাকতাম। দুদিন পরে আবার যেই কে সেই। রিয়াও কি সব ভুলে যাবে? খুব কষ্ট হচ্ছে। আজ পর্যন্ত ওর সাথে কোন ব্যাপারেই গলা চড়িয়ে কথা বলতে হয়নি। রাগ স্তিমিত হয়ে অনুতাপ আচ্ছন্ন করেছে মনকে। চোখের বাঁধ মানলো না। চোখ উপচে জলের ধারা নেমে আসছে আমার গাল দিয়ে। ঝাপসা চোখে যেন দেখতে পাচ্ছি, আমাদের মিমি হাতে বারবি ডল নিয়ে গুটি গুটি পায়ে আমার দিকে দৌড়ে আসছে। সারাদিন পাকাবুড়ির মতন নানা কথা, রাত হলে মনে হোত কি যেন থেমে গেছে। আমি আর পার্থ দুজনে ওর দুপাশে পাশ ফিরে শুয়ে অবাক হয়ে দেখতাম আমাদের এই সুন্দর সৃষ্টিকে। বলতাম এই সেদিন হোলো আর দেখো এর মধ্যে কি কথা শুরু হয়ে গেছে। ও এত বড় হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি। মায়ের কাছে কি সন্তানরা কখনো বড় হয়। ওকে দোষ দিই না। আমিই বুড়ি হয়ে কচি সাজতে চাইছিলাম। ওতো হাসবেই।
রাহুল চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে চায়ের টেবিলে। আমি ওর দিকে পিছন ফিরে বাড়ান্দায় দাড়িয়ে আছি। যাদের নিয়ে গণ্ডোগোল সেই ছেলেগুলো এখনো নিচে হইচই করছে। মা হয়ে এরকম রুক্ষ না হলেই পারতাম। রাগ কমে গিয়ে একটা হতাশা আমাকে গ্রাস করছে।
‘ম্যাডাম’ রাহুলের ডাকে সম্বিত ফিরলো।
আমি চোখের জল মুছে ওর দিকে ঘুরে দাড়ালাম।
‘একটা কথা ছিলো?’ আমি কিছু আশঙ্কা করছিলাম সেই মতনই ও বললো ‘এই মাসটা এখানে থাকি তারপর আমি চলে যাবো? আসলে চট করে তো বাড়ি ভাড়া পাবো না...।’
প্রস্তুত থাকলেও প্রচণ্ড লজ্জায় পরে গেলাম কি বলবো বুঝতে পারছিনা তবুও যেটুকু বলতে পারলাম ‘তুমি এসব কথা গায়ে মেখোনা। রাগের মাথায় কি যে বলেছি...আমি তোমাকে কেন ওকেও দুঃখ দেওয়ার জন্যে কিছু বলিনি...।’
‘না আমি গায়ে মাখিনি। আমি সেরকম ছেলে না। কিন্তু আমার জন্যে আপনাদের মধ্যে অশান্তি হলে আমি মেনে নিতে পারবোনা।’
‘প্লিজ তুমি এই ভাবে বোলো না, রাগের মাথায় কি ভাবছি আর কি বলছি না বলছি, আসলে মেয়েটা এত মাথা গরম যে ওকে বলে বোঝানো যায়না। ছেলেগুলো কেমন তুমি হয়তো জানোনা। আজকাল পেপারে টিভিতে সব তো দেখছি। কেউ কারো জন্যে নয়। কিছু ক্ষতি হয়ে গেলে তো যার যাবে সে বুঝবে। ওকে সাবধান করতেই কথার পিঠে কথায়, নিজেকে সামলাতে পারিনি, আমি এই সংসারের জন্যে উদায়স্ত খেটে যাচ্ছি, তারপর এসব শুনতে হলে...তুমি তো দেখছো... ইস্* মেয়েটা খেয়েও গেলো না...... এই প্রথম ...।’
‘রিয়া ভিষন অন্যায় করেছে। ও আপনার এই সংগ্রাম দেখতে পারছে না। হয়তো কেউ ওকে কিছু বলেছে, সেটা ওর মনে গেথে আছে। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে ও মন থেকে এসব বলেনি, আপনাকে ছোট করতে ও চায়নি। সময় মতন কথা বলে আপনারা মিটিয়ে ফেলতে পারবেন এই ব্যাপারটা।’
‘খুব খারাপ লাগছে, এই প্রথম ওর সাথে আমার এরকম হোলো, এই প্রথম ও কিছু না খেয়ে বেরিয়ে গেলো।’ আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম। সোফার মধ্যে বসে দুহাতে মুখ ঢেকে নিলাম। যেন অপিরিচিত কারো সামনে কাঁদতে লজ্জা হয়। কান্নার দমকে আমার শরীর ফুলে ফুলে উঠছে।
‘আসলে আমিও হয়তো একটা কারন’ বহুদুর থেকে রাহুলের গলা আমার কানে ভেসে এলো যেন।
আমার মন খুব খারাপ লাগছে। সেই ফুটফুটে মেয়েটা এত বড় হয়ে গেছে, ওর মানসন্মান আছে এসব আমি এতদিন ভাবিই নি।
এমনিতে আমি মনে মনে ভিষন একা, তার ওপর রিয়ার যা জেদ, এরপর থেকে হয়তো ও আমার সাথে আর কথা বলবে না। এক ছাদের তলায় দুটো প্রান বেচে থাকবো একে অন্যের ওপর বিদ্বেষ নিয়ে এটা ভাবতেই মনে হোলো এই বেচে থাকার কি মানে। মুখ দিয়েও বেরিয়ে এলো ‘হায় ভগবান এরপর আমি কিভাবে বাঁচবো?’ একা থাকলে হয়তো নিজের মনে লড়াই করতাম, নিজেকে তৈরি করতাম মা হয়েও রিয়ার কাছে ভুল স্বিকার করে নেওয়ার জন্যে। কিন্তু রাহুলের উপস্থিতিতে আমার মন আরো দুর্বল হয়ে পরছে। কেন যেন মনে হচ্ছে রাহুলের কথা তুলে ওকে আরো বেশি অপমান করেছি। সেই রাহুল সেটা অগ্রাহ্য করে আমাকে স্বান্তনা দিচ্ছে, সেটা ভেবে আরো বেশি করে দুর্বল হয়ে পরছি।
রাহুল আমার পিঠের ওপর একটা হাত দিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে, যেটা আমার কাছে ডুবন্ত মানুষের কাছে খরকূটোর মতন।
‘সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।’
জানিনা কেন যেন সব এলোমেলো হয়ে গেলো। আমি ওকে আকড়ে ধরলাম জিজ্ঞেস করলাম ‘সত্যি বলছো তুমি? রিয়া আমাকে ক্ষমা করে দেবে? তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেবে?’ আমি আকুল নয়নে ওর কাছে ভিক্ষা চাইলাম যেন । বলতে চাইলাম তুমি চলে গেলে রিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক চিরতরে শত্রুতায় পরিনত হবে।
আমি ব্যাকুল হয়ে বললাম ‘তুমি ওকে বুঝিয়ে বলবে বলো!’
ও আমার থুতনি ধরে মুখটা ওপর দিকে তুলে ধরলো, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আমার চোখের জলের ধারা মুছে দিয়ে ‘আমি তো আছি চিন্তা করছেন কেন? অন্ততঃ এই মাসটা তো আছি।’
মাথার মধ্যে সব গুলিয়ে গেলো মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো ‘কে তুমি? পার্থ? এতদিন কোথায় চলে গেছিলে আমাকে ফেলে?’
মনে পরে গেলো সেই রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্থর কাছে চলে যাওয়া ‘এইভাবে আমি বাঁচতে পারবোনা পার্থ, তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই, অন্য কাউকে আমি আমার স্বামির স্থান দিতে পারবোনা।’ আকুল হয়ে আমাকে গ্রহন করতে বলেছিলাম। পার্থ হেসে আমার থুতনি ধরে মুখটা ওপর দিকে তুলে ধরলো, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আমার চোখের জলের ধারা মুছে দিয়ে ‘আমি তো আছি চিন্তা করছো কেন?’
মুহুর্তের মধ্যে সব ঝাপসা হয়ে গেলো। ভিতরের আবেগ কখন প্রলয়ে পরিবর্তিত হয়েছিলো সেই খেয়াল আর আমার ছিলো না। ঝড় থামতে খেয়াল করলাম রাহুল আমার নগ্ন দেহের পাশে আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে শুয়ে আছে মেঝেতে লুটিয়ে আছে আমার শাড়ী, শায়া, ব্লাউজ, রাহুলের শরীর থেকে পরিতক্ত্য পোষাক। শরীরে কামতৃপ্তি আর ক্লান্তির আবেশ। পাছার তলার চাদর ভিজে আমার যোনিদ্বার থেকে নির্গত রাহুলের পুরুষবীজ আর আমার নাড়িরসের মিশ্রনে।শরীর সুখের মাঝেই মন জেগে উঠলো। এ আমি কি করলাম? আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম। চারিদিকের নিষ্পাপ রোদ যেন বলছে আমি অন্ধকারের জীব। শুনেছিলাম যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়। এই ভরন্ত বেলায় আমি সামাজিকতা ছেড়ে, দৈনন্দিন জীবনের ছন্দ হাড়িয়ে কামলীলায় মত্ত হোলাম কি করে? এই রোদ তো আমার প্রিয় রোদ, এই রোদের সাথে মিশে আছে আমার জীবনের কত স্মৃতি। শিউলি ফুলের গন্ধ, পুজো প্যান্ডেলের গন্ধ, নতুন জামার গন্ধ, পার্থর হাত ধরার অনুভুতি, এর সাথে আজ যোগ হোলো এই কলঙ্ক। আমি নিজে কলঙ্ক এঁকে দিলাম আমার প্রিয় রোদের গায়ে। একে ধোকা দিলাম।
শেষ পর্যন্ত আমি এই পথেই হাটলাম। রাহুল?? আমার মেয়ের পছন্দের মানুষটাকে আমি এই ভাবে ব্যাবহার করলাম? রাহুল ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে। মাথা বোঁ বোঁ করছে? দরজা এরকম হাট করে খোলা। সুবলা? কতক্ষন এইভাবে ছিলাম? মনে পরলো সুবলা দেশে গেছে টাকা দিতে। রাহুলের একটা হাত আমার গায়ের ওপরে। কি করবো এই ভাবে থাকবো, ওর জেগে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো ঘূমের ভান করে, যাতে পরবর্তি কালে এটা দুজনেরই মনে হয় যে দুর্ঘটনা। রাহুল জেগে উঠে নিজেই বুঝতে পারবে, আর নিজেও লজ্জিত হবে। সময়ের সাথে সাথে হয়তো এই ঘটনা মানিয়ে নেবো দুজনেই এক অবাঞ্ছিত ঘটনা ভেবে। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় বারোটা বাজে, কতক্ষন? রিয়া তো আজ তাড়াতাড়িই বেরিয়ে গেলো। এতক্ষন? বেলা বারোটা আর আমি নিজের মেয়ের বয়েসি এক ছেলের পাশে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছি? হে ভগবান আমাকে তুলে নাও। অবিন্যস্ত বিছানা, পাছার তলায় ভেজা ভাব, নিরাবরন শরীরে পরপুরুষের ছোয়া, আমাকে অস্থির করে তুলেছে।
আজ সুবলাও নেই। আমার শরীরের স্পন্দনে রাহুল জেগে উঠলো। চোখ খুলে আমাকে দেখে হাল্কা হেসে বললো ‘ঘুমিয়ে পরেছিলাম, সরি’ আমিও উঠে বসলাম। অবশিষ্ট চাদরের অংশ দিয়ে গা ঢাকার একটা ব্যার্থ প্রয়াস করলাম। মুখে অন্যায় বোধ, অনিশ্চিতের আহবানে মনে শংশয়।
হাটূ দুটো তুলে বসেছি, দুহাত দিয়ে পাঁক দিয়ে হাটু দুটো ধরেছি আর মধ্যে মুখ গুজে রয়েছি সাথে স্তনদুটো লুকানোর চেষ্টা করছি। এখন আমি ওর মুখোমুখি কিভাবে হবো?
আমার খালি পিঠে ও হাত বুলাচ্ছে। এতে আমার নগ্নতা যেন আরো প্রকট হয়ে উঠছে। গায়ের ওপর ওর নিশ্বাসের ছোয়া পাচ্ছি, ও কাছিয়ে আসছে। আমার কানের লতিতে প্রেমিকসুলভ হাল্কা একটা কামড় দিয়ে ফিসফিস করে ফুল্লসজ্জার রাতে প্রথম মিলনের শেষে নতুন বোউকে জিজ্ঞেস করার মতন করে জিজ্ঞেস করলো
‘খুব ব্যাথা লাগছিলো, তাই না?’
আমি কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছিলাম না। হ্যাঁ বলবো নাকি না বলবো।
এটা ভালোই বুঝতে পারছি যে ও ভেবেছে আমার শরীরের প্রচুর খিদে, বিধবা হওয়ার দরুন আমি প্রকাশ্যে দেহের বিভঙ্গে পুরুষ মোহিত করতে অনিচ্ছুক, কিন্তু শরীরের ব্যাপারে আমার ছুতমার্গ নেই। এটাও ও নিশ্চয় ভাবছে যে ওকে আমার বরাবরই পছন্দ ছিলো তাই সুযোগ পেতেই সুযোগের সদব্যাবহার করেছি।
দোষটা ওর না, আমিই প্ররোচনা দিয়েছি ওকে। আমি মুহুর্তের জন্যে পার্থ ভেবে বসেছিলাম ওকে, নিজেই নিজের দেহের দরজা খুলে দিয়েছিলাম। ও ঢুকেছিলো আমার সন্মতিতেই। এখন আমি অনুতপ্ত এখন আমার কি করা উচিত। এই মুহুর্তে ওর হাত আমার উদোম শরীরে যেভাবে আকিবুকি কাটছে তাতে বুঝতে পারছি, পরনের কাপরের মতন সম্পর্কের দুরত্ব আর সন্মানটাও ভুলুন্ঠিত।আমার ব্যক্তিত্বের, আমার গাম্ভির্যের পাচিলটা আমি নিজের হাতে চুর চুর করে ভেঙ্গে দিয়েছি, সেই জন্যে ও আমাকে ওর প্রেয়সির মতন দেখছে। কি বলব ওকে আমার ভুল স্বিকার করে নেবো? অনেকক্ষন চুপচাপ বসে আছি একই ভাবে। সঠিক বাক্য চয়ন করছি মনে মনে। কিন্তু পারছিনা। রাহুল আমার পিঠের ওপর মাথা রেখে আমার পিঠে চুমু খাচ্ছে, ঘারের চুল সরিয়ে সেখানেও চুমু খাচ্ছে। ওর ভেজা চুমুগুলোতেই বোঝা যাচ্ছে ও আবার জাগছে, আমি বুঝতে পারছি। ওকে যে করে হোক আটকাতে হবে।
‘তুমি সামনের মাসে চলে যাও রাহুল’ এটা বলতে একদম চাইনি কিন্তু মুখ দিয়ে এটাই বেরিয়ে গেলো।
আমি ওর প্রতিক্রিয়ার জন্যে অপেক্ষা করছি। এমন কিছু বলুক যাতে আমি আমার অবস্থান ওকে খুলে বলতে পারি। অতি ধিরে, রাহুল আমার শরীর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো। সারা পৃথিবী যেন নিরবতা পালন করছে। বাইরে একটা কাকও নেই যে ডাকবে।
দুর্বল গলায় আমাকে বললো ‘এত কাছের করে নিলে আর মুহুর্তে দূর করে দিলে?’
‘আমি ভুল করেছি? এটা আমার পাপ বলো অন্যায় বলো, অপরাধ বলো তাই হয়েছে। আমি কোন একজনের সাথে তোমাকে গুলিয়ে ফেলেছিলাম, ক্ষনিকের এই ভুল আর শোধরানোর কোন উপায় নেই। তবু এর থেকে আমাদের দুজনকেই বিরত থাকতে হবে। আমি সব ভুলে গেছিলাম। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। দয়া করে এই ব্যাপারটা ভুলে যাও?’
রাহুল আর আপনিতে ফিরে গেলো না, ‘তুমি ভুল করেছো, ভুল হতেই পারে, মানুষমাত্রই ভুল হয়। কিন্তু আমি তো জেনেবুঝে এগিয়েছি, আমি তো তোমাকে অন্য কেউ ভাবিনি? আমি মুহুর্তের জন্যে ভুলিনি তুমি রিয়ার মা, আমি মুহুর্তের জন্যে ভুলিনি তুমি স্বামিহারা, মুহুর্তের জন্যে আমি ভুলিনি তোমার একটা সামাজিক সন্মান আছে। দায়িত্ব নিয়ে এগিয়েছি। জীবনে এই প্রথমবার, এইভাবে আমি কোন নাড়ির শরীর স্পর্শ করলাম, সেটা ভুলে যেতে বলছো? তুমি হলে পারতে? আমার যায়গায় তুমি হলে কি করতে?’
আমি কন উত্তর দিতে পারলাম না। মাথা গুজে রয়েছি হাটুর মাঝে। চোখ ভিজে গেছে। ভাবছি ওকে বলতে না দিলেই ভালো হোতো। এখন ওকে দূরে সরিয়ে দেবো কিভাবে।
রাহুল কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলতে শুরু করলো ‘তুমি আমাকে পার্থ বলে ডাকছিলে, আমি কিছু মনে করিনি, আমি জানি পার্থ রিয়ার বাবার নাম। আমি ভুল ভাঙ্গিয়ে দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো এই ভুলটা তুমি করতে না, কিন্তু সেটা একটা মুহুর্ত ছিলো তোমার, তুমি তোমার পরম আপনজনকে কাছে টেনে নিচ্ছো, সেই সুখ, সেই তৃপ্তি, সেই কামনার লালিমায় উদ্ভাসিত তোমাকে বাধা দিলে আমারই অন্যায় হোতো। আমি বাধা দিই নি। আমি পার্থর ভুমিকা নিয়েছি, দুজন প্রেমিক প্রেমিকার মিলনে আমি রাহুল হয়ে উঠিনি এক মুহুর্তের জন্যে। আমি জানি রোজ রোজ তুমি আমাকে পার্থ ভাববেনা, হয়তো আর কখনোই ভাববেনা। কিন্তু এসব কিছুর মধ্যে একটু আমিও তো আছি। আমি জানি এটাকে সমাজে অবৈধ সম্পর্ক বলা হয়। আমি সেসব কেয়ার করিনা। আমি জানি আমাদের এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নেই, আছে অনিশ্চয়তা। তবু আমি ভাবছিলাম সুদুর কোন ভবিষ্যতে ও যদি তুমি আবার পার্থকে চাও, আমি প্রস্তুত থাকবো। কিন্তু তুমি আমাকে দূর করে দিচ্ছো।মানুষ তো বাড়ির কুকুরের সাথেও এরকম করেনা।’
‘এই ভাবে ভেবোনা। ভুল হয়েছে তুমিও জানো আমিও জানি। এই ভুল আবার করলে আগুন জ্বলে যাবে। তাছারা রিয়া আর তুমি...।’
‘তুমি রিয়ার মন পরে দেখোনি। আমি এই অল্পদিনেই দেখেছি। ও আমাকে বন্ধুর নজরেই দেখে। ওর মনের মানুষ আমি না, যেটা তোমার ভুল ধারনা। যাইহোক রিয়া আর আমার প্রসঙ্গ উঠলো বলে আমি পরিস্কার করে দিলাম তোমাকে। আজকে এটা ঘটলো তাই হয়তো তুমি জানতে পারলে। আর ঠিক আছে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাবো। একটা কথা বলি, যা পেলাম সেটা আমার কাছে মিষ্টি একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে, কখনোই সেটা প্রকাশ্যে আসবে না। এই ঘরের বাইরে আর কেউ কোনদিন এই ঘটনা জানতে পারবেনা। কারোর অধিকারই নেই এটা জানার। তবে আরো একটা কথা বলি, জানিনা তুমি কি ভাবে নেবে তোমার ব্যাপার, কিন্তু আমি অসহায়। এরপর থেকে ভুল না করলে এরকম ঘটনা আমার জীবনে ঘটবেনা। ভবিষ্যতে আমার জিবনেও কোন না কোন নাড়ি আসবে, আমি তাকে আমার ম্যাডাম ভেবে ভুল করলেই সে আমার সবকিছু পাবে। চেষ্টা করবো এই স্মৃতির সাথে যাতে আমি বেইমানি না করি।
রাহুল উঠে চলে গেলো। ঘরের মধ্যে ওর কথাগুলো ঘুরে বেরাচ্ছে। ক্লান্ত আমি নিজের উলঙ্গ শরীরটা টেনে বিছানা থেকে নামালাম। পায়ের মাঝের ভিষন চ্যাটচ্যাট করছে, থাই দিয়ে হাল্কা হাল্কা গড়িয়ে নামছে শরীরের ভিতরের রসগুলো। সাথে গুদের ভিতর একটা যন্ত্রনা হচ্ছে। মেয়ে হয়ে জন্মেছি, তাই জানি এ ব্যাথা মিলনের অনভ্যাসের ব্যাথা। মুহুর্তের মধ্যে মনে হোলো আমি এখনও সন্তান জন্ম দিতে পারি, কিছু হয়ে গেলে? মাথাটা ঘুরে গেলো মুহুর্তের জন্যে। চেয়ার ধরে নিজেকে সামলে নিলাম। ধপাস করে সোফায় বসে পরলাম।
নাঃ মাথা ঠাণ্ডা করতে হবে। ফোনের ডায়েরি নিয়ে একের পর এক ফোন করে গেলাম সব বাড়িতে। আজকে ছুটি নিতেই হবে। আজ আমি রান্না করতে পারবো না।
সারাদিন নিজের ঘোরে রইলাম। ছিলাম কূঁয়োতে, সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচতে গিয়ে পরলাম সমুদ্রে, অথচ সাঁতার ভালো জানিনা। এরপর আরো কি অপেক্ষা করছে আমি জানিনা। এখন নিজের কাছ থেকে নিজে পালিয়ে বাচতে চাইছি। মন যে অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন তুলছে। নিয়তির হাতে নিজেকে ছেরে দিয়েছি। ভেবে রেখেছি সন্তানসম্ভবা হলে কি করতে হবে। না আত্মহত্যা না, তাহলে পুলিশ শরীর কাটাছেড়া করলে বেরিয়ে পরবে সেই ঘটনা। রিয়ার ওপর এর চাপ পরবে। ও পারবেনা মায়ের এই কলঙ্ক বইতে। গর্ভপাত করাবো। দূরে কোথাও গিয়ে। শুনেছি অল্পদিনের হলে কোন সমস্যা হয়না ওষুধে গলে যায়।
সারাদিনই চোখের জল ফেলে গেলাম। রিয়া ফেরার সময় হয়েছে। দুপুরে কিছু রান্না করিনি। রাহুলও না খেয়েই রয়েছে হয়তো। সে দরকার হলে ও বাইরে খেয়ে নিয়েছে। আমার খিদে আর খাওয়ার ইচ্ছে দুটোই ছিলোনা।
রিয়ার সাথে ঝগড়া না করলে আজ এই দিন সৃষ্টি হোতো না। সুবলা থাকলেও এই ঘটনা ঘটতো না।
কলিং বেল বাজলো। আমার মনে একসাথে আশা আর আকাঙ্খা। হয়তো সারাদিন বাইরে থেকে ওর মনও নরম হয়েছে। আবার ভয় হচ্ছে মেয়ের জেদের কথা ভেবে।
সেই থমথমে মুখেই ও ঢুকলো। আমি মাথা নিচু করে নিলাম। পাশ কাটিয়ে চলে গেলো ভিতরে। আমি দরজা বন্ধ করে ভিতরে আসতে আসতেই ও বাথরুমে ঢুকে পরলো। কথা বলার সুযোগই দিলো না।
কি করবো আমি ওর পা ধরে ক্ষমা চাইবো? ও যা ভাবছে আমি তো তার থেকেও বড় অপরাধ করেছি। এই পরিবারের অভিভাবক হয়েও যা করেছি, সেটার কোন ক্ষমা হয়না। সরাসরি না হলেও ওকেও তো অসন্মান করা হোলো এতে। কি করে আমি এরকম করলাম সেটাই বুঝে উঠতে পারছিনা। সেইসময়কার ঘটমান কিছুই মনে পরছেনা আমার, এতটাই ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এটা কি আমার কোন মানসিক রোগ? হিস্টিরিয়া যাকে বলে।
চেয়ারে বসে ভাবছি, আর রিয়া এসে ভিতরে ঢুকলো। তারপর আবার বেরিয়ে গেলো। আবার এসে ঘরে ঢুকলো। ‘আজকে রান্না করোনি?’
‘করতে পারিনি শরীর খারাপ লাগছিলো?’
‘সেতো চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে’ আমার অভিভাবকের সুরে কথাগুলো ছুরে দিলো ও। তারপর আবার বললো ‘হোম ডেলিভারির কি করলে? সবাইকে জানিয়েছো?’
‘হ্যাঁ’ আমি সংক্ষেপে উত্তর দিলাম। বুঝতে পারছি ও এগিয়ে আসছে সম্পর্কটা সহজ করার জন্যে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘তুই খেয়েছিস?’
রিয়া চুপ করে রইলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাথা নিচু করে আছে। ‘কিরে খাসনি?’ আমি ওর এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইলাম। মেয়েটা আমার খুব সুন্দর। ছোট্টবেলা থেকে পুতুল পুতুল। কিন্তু এত মাথা গরম। কে ওর বর হবে কে জানে। সে যদি রাগি হয় তো...। থাক অশুভ চিন্তা আর করবো না।
‘তুমিও তো না খেয়ে আছো’
‘আমি তো ঘরে বসে আছি, তুই সারাদিন না খেয়ে আছিস, যদি মাথা টাথা ঘুরে যেতো তাহলে?’
রিয়া এগিয়ে এসে আমার গলা জরিয়ে ধরলো ‘আই আম সরি মা’ আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও আমার গলায় মুখ গুজে দিলো, নোনতা জলে কাঁধ ভিজে যাচ্ছে। নিজেকে খুব ছোট লাগছে ভয়ও লাগছে, ও যদি টের পেয়ে যায়, আমার শরীরে কি এখনো দুপুরের গন্ধ আছে?
দুজন দুজন কে আকড়ে ধরলাম। জানিতো যে আমরা ছাড়া আমাদের কেউ নেই। রক্তের সম্পর্ক যতই খারাপ হোক না কেন প্রয়োজনে ঠিক কথা বলে। অন্য কোন সম্পর্কে এই জোর থাকেনা। কেমন কয়েকটা কথাতেই সব বরফ গলে জল হয়ে গেলো।
এই নিচে দুটো বাথরুম আছে পাশাপাশি। একটা কল আছে। বাড়িতে মিস্ত্রিরা কাজ করলে এই বাথরুম পায়খানা ব্যবহার করে। সুবলা বাড়ীর ভিতরের একতলার একটা বাথরুম পায়খানা ব্যবহার করে। একতলাতেই ও থাকে। আমি ওকে বলেছিলাম, ওর বরকে এখানে এনে রাখতে, আমি পয়সা দিতাম নাহয়, একটা রিকশা কেনার জন্যে। রাতের বেলা একটা পুরুষ মানুষ থাকার দরকার অনুভব করি অনেকদিন থেকে। কিন্তু সুবলাই ওর বরের নেশাভাং করা নিয়ে এমন সব কথা বলেছে যে আমি আর সাহস পাইনি।
সব দেখে উপরে উঠে বাথরুমে চলে গেলাম, গাহাতপা ধুয়ে পোষাক চেঞ্জ করবো বলে। আশ্বিন মাস পরে গেলে কি হবে, এখনো মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে আর না হলে ভ্যাপশা গরম হচ্ছে। সারাগা মনে হচ্ছে চ্যাটচ্যাট করছে। আমি আবার এই ব্যাপারে খুব পিটপিটে, নোংরা গা হাতপা আমার কেমন ঘেন্না লাগে।
পরনের শাড়ী শায়া খুলে উলঙ্গ হয়ে নিজেকে দেখতে শুরু করলাম। আমি জানি এই বয়েসেও আমার রুপ আমার যৌবন দেখে অনেক যুবতি মেয়েই ঈর্ষা করবে। মুচকি হাসি নিজের মনে। “চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কি হবে” গানটা মনে পরে গেলো। রুপ, যৌবনের প্রসংশা না পেলে রুপ দিয়ে কি হবে।
ঈষোদষ্ণ জলের ধারায় সারাদিনের ক্লান্তি মুছে ফেলতে চাইছি, সাথে মনের গ্লানি। ভগবানকে ডাকছি, সুন্দর সুস্থ ঘুম দিতে। জীবনে অনেক পেয়েছি, হয়তো যোগ্যতার থেকে বেশী, কিন্তু শারীরিক এই অপ্রাপ্তি ধিরে ধিরে রোগের মতন আমার ঘুমে থাবা বসাচ্ছে। সেটা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু কিছু করতে পারছিনা। মন যে মানেনা।
ক্যাবিনেট থেকে একটা তোয়ালে নিয়ে গা মুছে নিলাম। একটা নাইটি টেনে নিলাম পরবো বলে। প্রসাধনের জিনিসগুলো অজত্নে বছরের পর বছর ক্যাবিনেটের ভিতর রয়ে গেছে। আমি বাথরুমেই মেকাপ করতাম। বিশাল আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখতে পেতাম বলে। নিচু হয়ে বসে আইলাইনার, লিপ্সটিকগুলো বের করে নিলাম। একসময় শপিং কমপ্লেক্স থেকে প্রতি মাসে এই জিনিসগুলো কিনে আনতাম। প্রয়োজনের থেকে বেশিই থাকতো। পার্থর ইচ্ছে ছিলো আমি সাজাগোজা করি। আধুনিক নাড়িদের সাথে পাল্লা দি। শাড়ির রঙের সাথে রঙ মিলিয়ে, লিপ্সটিক, নেইল পালিশ, সাথে একই রঙের জুতো। সত্যি পাল্লা দিতামও। সবাই তাকিয়ে দেখতো আমি সেজেগুজে বেরোলে।
হাতে নিয়ে ভাবছি, একদিন এগুলো কত প্রিয় ছিলো। আর অজত্নে ম্যাড়ম্যাড় করছে। কি নেই এতে, দেশি বিদেশি সব ব্র্যান্ড এতে রয়েছে।
গাঢ় গোলাপি রঙের একটা লিপ্সটিক পার্থর খুব পছন্দ ছিলো। সেটা লাগালেই পার্থ একবার অন্তত সেটা নষ্ট করতো, চুমু খেয়ে। বলতো, তোমার মতনই মিষ্টি লিপ্সটিকটা।
প্যাঁচ ঘুরিয়ে বের করতেই নাকে সেই মিষ্টি গন্ধটা এসে লাগলো। চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছে। স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মতন হাত নিখুত ভাবে ঠোঁট একে দিলো সেটা দিয়ে। এক ঝটকায় আটপৌরে বিধবার থেকে লাস্যময়ি নাড়িতে পরিনত হয়ে গেলাম। ঠোঁটে দামি লিপ্সটিকের দৌলতে কামনার আবেদন। ড্রাইয়ার দিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে সেগুলো ব্রাশ দিয়ে ভালো করে আঁচড়ে নিলাম।
একে একে আইলাইনার, ব্লাশ লাগিয়ে হাত যখন থামলো, নিজেকে চিনতে অসুবিধে হচ্ছে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, স্বয়ং কামনার দেবি। আজকের মেয়েদের চ্যালেঞ্জ ছুরে দিয়ে লাস্যময়ি ভঙ্গিতে অনায়াসে ক্যাটওয়াকের প্রতিযোগিতায় নামতে পারে এই শম্পা। পুরুষদের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে এই আমি, অতি সংযমি পুরুষও টলে যেতে বাধ্য আমার এই রুপ দেখে।
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। নিজের মনেই হেসে দিলাম। কি করছি আমি? কেন? কেন আবার এই প্রতিযোগিতার কথা ভাবছি, কার সাথে?
সব মুছে দিয়ে আবার আটপৌরে শম্পা হয়ে ঘরে এসে শুলাম। বিগত সব ঘটনা মনের মধ্যে চিন্তার স্রোত তুলছে। আমি নিজেই সেই ঢেউগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছি। প্রচন্ড এক লড়াই করতে হচ্ছে নিজেকে নিজের সাথে, কিছুতেই রাহুলকে আমি আমার মনের ওপর নিয়ন্ত্রন করতে দেবো না। এটা অন্যায়।
প্রচন্ড লড়াই করে কিছুক্ষন চেষ্টা করে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মনের মধ্যে এক যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। আমি পেরেছি।
সুবলাকে চা করতে বলে আমি টেবিলে বসলাম। ভিতরে একটা আত্মবিশ্বাস কাজ করছে। টিভি চালিয়ে চ্যানেলের পর চ্যানেল চেঞ্জ করছি, রিয়া এখন বাথরুমে, একটু পরে রাহুলও চলে আসবে। একসাথেই চা খাবো। অন্যদিন আমি নিজে চা নিয়ে আসি। আজকে সুবলাকে বলেছি ওরা আসলে ওদের সাথে একসাথেই দিতে আমার চা।
দুজনে প্রায় একসাথেই এসে পরলো। দুজনে দুজনের মতন কথা বলে চলেছে। আমি মাঝে মাঝে অদের দিকে দেখছি আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের আমেজ নিচ্ছি। খেয়াল করলাম যে ওরা কথা বলছেনা। রিয়ার দিকে তাকাতে দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসি চাপার চেষ্টা করছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। কি ব্যাপার বোঝার চেষ্টা করছি। রাহুলও কেমন বোকার মতন আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আর রিয়ার দিকে দেখছে, ওর চোখে দেখছি রিয়াকে সাবধান করে দেওয়ার ইঙ্গিত। কি হোলো? এরকম করছে কেন? আমাকে এরকম অনুসন্ধিৎসু দেখে রিয়া হাসিতে ফেটে পরলো। আমি বোকার মতন ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ওর হাসির প্রভাবে আমারও মুখে বোকা হাসি।
‘কি হয়েছে রে?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম।
রিয়া কোনরকমে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে পারলো “মা তুমি মেকাপ করেছো? হঠাত? সব লেগে আছে তো, তুমি কি ডেলিভারি করতে গিয়ে মেকাপ করো নাকি?”
আমি কোনরকমে বলতে পারলাম ‘এই কালকে দেখছিলাম জিনিস গুলো ঠিক আছে কিনা তাই...।’
রিয়া প্রায় অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। বসে থাকবো? না উঠে চলে যাবো? তারপর ঠিক করলাম যে চায়েই মনোযোগ দি। নিজেকে খুব ছোট লাগছে। রাহুলের মুখে কোন প্রতিক্রিয়া দেখলাম না, সেও মনে মনে হাসছে কিনা বোঝার উপায় নেই।
ওরা চলে যাওয়ার পরে বাথরুমে গিয়ে ভালো করে দেখলাম, যে মেকাপের ছাপ রয়ে গেছে, ঠোঁটে, চোখে। এই বয়েসে এরকম লজ্জায় পরবো ভাবতে পারিনি, তাও বাইরের একটা ছেলের সামনে। রিয়া ওকে এতটাই আপন ভাবছে যে নিজের মাকেও ওর সামনে ছোট করতে বাঁধলো না। ভাবতে চোখে জল চলে এলো।
রাস্তায় একটা গন্ডোগোলের আওয়াজ পাচ্ছি। বারান্দা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম বাড়ির নিচেই কয়েকটা ছেলে মিলে একটা ছেলেকে মারছে। যত না মারছে তার থেকে বেশি চিৎকার চেচামেচি করছে। একটু খেয়াল করে দেখলাম, মার খাচ্ছে ছেলেটাকে অনুরাধার ঘরে দেখেছি। এরা কারা যে অনুরাধার লোককে মারছে। এতো প্রলয়ের সৃষ্টি হবে। যারা মারছে তাদের মুখ হয়তো দেখেছি আশেপাশে, কিন্তু খেয়াল করতে পারছিনা।
রিয়া পাশে এসে দাড়িয়েছে। সামনের দিকে ঝুকে দেখছে, আর বেশ উচু সুরেই গজর গজর করছে ‘এগুলো সারা দিনরাত এই করে চলেছে, এমন একটা পাড়ায় থাকি কেউ কিছু বলেনা, এই জন্যেই ছিঁচকে চোর থেকে এগুলো হয় বড় গুণ্ডা হচ্ছে নাহয় রাজনিতিতে নেমে প্রোমোটারি করছে।’
আমার মনটা বিরক্তিতে ভরে উঠলো আমি না চাইতেও বলে ফেললাম ‘তুই সব ব্যাপারে এত স্পর্শকাতর কেন রে? এসব কথা ছেলেগুলো শুনে নিলে? কেউ ওদের ঘাঁটায় না তুই হয়েছিস একেবারে বিপ্লবি। দুঃখের ভাত সুখে খাবি সেটা সয়না, তাইনা?’ আমি যেন কিছুক্ষন আগের অপমানের ক্ষোভ উগরে দিলাম ওর ওপরে।
এই প্রথম রিয়া আমার ওপর ঝাঁজিয়ে উঠলো ‘এই ভাবে ভাতই জুটবে, ইজ্জত জুটবে না। একদিন এই ছেলেগুলোই আমার হাত ধরে টান দেবে, তখনও তুমি বলবে চুপ করে থাকতে, সত্যি বলছি বাপি থাকলে মনে হয় এই কথা বলতো না আমাকে বরঞ্চ উৎসাহ দিতো।’
‘তুই কি করে জানিস যে তোর বাপি তোকে উৎসাহ দিতো?’
‘যে মানুষ সারা জীবন স্ট্রাগল করেছে, সে অন্যায় দেখে লড়বেনা এটা হয়? আজ তারই তো অবদানে তোমার আর আমার জীবন চলছে, যতটুকু সন্মান রয়েছে তারই জন্যে।’
‘মানে? এই যে আমি উদায়াস্ত পরিশ্রম করছি সেটার কোন অবদান নেই?তুই হাওয়া খেয়ে বড় হয়ে গেলি?’
‘মা তুমি যা পরিশ্রম করছো, সেই তুলনায় কি পাচ্ছ? সারাদিন ধরে দেওয়াল ঠেলছো, যে দেওয়াল সারাজীবনেও সরবেনা। এটা কি কোন সন্মানের কাজ? লোকে তোমাকে রাধুনি বলে, শুনতে ভালো লাগে?’
‘রাধুনিদের কি সন্মান নেই? আর কে বলছে? আমি তো কোন অসন্মান দেখতে পাইনা এর মধ্যে। তোর সন্মান ঠুনকো হতে পারে। যে বলে সে বলুক, আমার তাতে কি? আমি তো স্বামির অবর্তমানে কোন খারাপ কাজ করছিনা উপার্জনের জন্যে।’
‘মুখের ওপর কে বলবে তোমাকে? পিছনে সবাই তাই বলে। তুমি শুনতে চাওনা না পাওনা সেটা তোমার সমস্যা।’
‘আমি যেটা পারি সেটা করে উপার্জন করছি, সংসারে নিত্য জোগান দিয়ে চলেছি, কে কি বললো আমার তাতে কিছু আসে যায়না। তোর যদি সন্মানে লাগে তাহলে আমার কি করার আছে, এত চিন্তা করে তো কিছু করতে পারবো না।কাউকে বলিস না যে আমি তোর মা, তাহলেই তো হোলো।’
‘তুমি এসব ইমোশানাল কথা ছাড়ো। তোমাকে পথ দেখিয়ে দিলেও তুমি গ্রহন করবেনা। সব ব্যবসাকেই পেশাদারি মোড়কে মোরা যায়, কিন্তু তুমি তোমার পথ ছেরে কারো পথ ধরে হাটবেনা, এমন গোঁ তোমার। ধিক ধিক করে তেল ফুরানো প্রদিপের মতন ব্যবসা করে যাচ্ছো। ভালো উপদেশ তুমি নেবেনা? এমন তোমার ইগো।’
‘আমার ইগো দেখলি তুই? আর থাকবে নাই বা কেন? দিনরাত খেটে এই উপার্জন করছি, যাতে সংসারে সাচ্ছন্দ থাকে। নিজের হাতে তৈরি করেছি এই ব্যাবসা, কেন আমি তোদের কথায় নাচবো? কোথা কে উড়ে এসে জুড়ে বসলো, এটা ওটা আইডিয়া দিলো আর হয়ে গেলো? তার কথায় আমি চলবো? এতোই সহজ যদি সব কিছু হোতো তাহলে নিজের অবস্থা এরকম কেন?’
রিয়া চুপ করে গেলো। আমার মুখের দিকে থমথমে মুখ তাকিয়ে রইলো। তারপর ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো। আমি মাথা গরম করে খেয়াল করিনি যে রাহুল আমাদের কথা শুনছিল। ওকে দেখে আমার সম্বিত ফিরলো। যাঃ এটা আমি কি করলাম?
সাত তাড়াতাড়ি কলেজের ব্যাগ গুছিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে রিয়া বেরিয়ে গেলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘ভাত খাবিনা?’ ও উত্তর না দিয়ে আমাকে পাশ কাটিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো। আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এই বয়েসে নিজেকে সংযত করা উচিত ছিলো। সকালের অপমানের বদলা এরকম ঝগড়া করে নেবো ভাবতে পারিনি। বাড়িতেও বোনের সাথে ঝগড়া হলে এরকমই চলতো, যতক্ষন না মা এসে নাক গলাতো। তারপর দুই বোন কেঁদেকেটে দুপাশে সরে থাকতাম। দুদিন পরে আবার যেই কে সেই। রিয়াও কি সব ভুলে যাবে? খুব কষ্ট হচ্ছে। আজ পর্যন্ত ওর সাথে কোন ব্যাপারেই গলা চড়িয়ে কথা বলতে হয়নি। রাগ স্তিমিত হয়ে অনুতাপ আচ্ছন্ন করেছে মনকে। চোখের বাঁধ মানলো না। চোখ উপচে জলের ধারা নেমে আসছে আমার গাল দিয়ে। ঝাপসা চোখে যেন দেখতে পাচ্ছি, আমাদের মিমি হাতে বারবি ডল নিয়ে গুটি গুটি পায়ে আমার দিকে দৌড়ে আসছে। সারাদিন পাকাবুড়ির মতন নানা কথা, রাত হলে মনে হোত কি যেন থেমে গেছে। আমি আর পার্থ দুজনে ওর দুপাশে পাশ ফিরে শুয়ে অবাক হয়ে দেখতাম আমাদের এই সুন্দর সৃষ্টিকে। বলতাম এই সেদিন হোলো আর দেখো এর মধ্যে কি কথা শুরু হয়ে গেছে। ও এত বড় হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি। মায়ের কাছে কি সন্তানরা কখনো বড় হয়। ওকে দোষ দিই না। আমিই বুড়ি হয়ে কচি সাজতে চাইছিলাম। ওতো হাসবেই।
রাহুল চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে চায়ের টেবিলে। আমি ওর দিকে পিছন ফিরে বাড়ান্দায় দাড়িয়ে আছি। যাদের নিয়ে গণ্ডোগোল সেই ছেলেগুলো এখনো নিচে হইচই করছে। মা হয়ে এরকম রুক্ষ না হলেই পারতাম। রাগ কমে গিয়ে একটা হতাশা আমাকে গ্রাস করছে।
‘ম্যাডাম’ রাহুলের ডাকে সম্বিত ফিরলো।
আমি চোখের জল মুছে ওর দিকে ঘুরে দাড়ালাম।
‘একটা কথা ছিলো?’ আমি কিছু আশঙ্কা করছিলাম সেই মতনই ও বললো ‘এই মাসটা এখানে থাকি তারপর আমি চলে যাবো? আসলে চট করে তো বাড়ি ভাড়া পাবো না...।’
প্রস্তুত থাকলেও প্রচণ্ড লজ্জায় পরে গেলাম কি বলবো বুঝতে পারছিনা তবুও যেটুকু বলতে পারলাম ‘তুমি এসব কথা গায়ে মেখোনা। রাগের মাথায় কি যে বলেছি...আমি তোমাকে কেন ওকেও দুঃখ দেওয়ার জন্যে কিছু বলিনি...।’
‘না আমি গায়ে মাখিনি। আমি সেরকম ছেলে না। কিন্তু আমার জন্যে আপনাদের মধ্যে অশান্তি হলে আমি মেনে নিতে পারবোনা।’
‘প্লিজ তুমি এই ভাবে বোলো না, রাগের মাথায় কি ভাবছি আর কি বলছি না বলছি, আসলে মেয়েটা এত মাথা গরম যে ওকে বলে বোঝানো যায়না। ছেলেগুলো কেমন তুমি হয়তো জানোনা। আজকাল পেপারে টিভিতে সব তো দেখছি। কেউ কারো জন্যে নয়। কিছু ক্ষতি হয়ে গেলে তো যার যাবে সে বুঝবে। ওকে সাবধান করতেই কথার পিঠে কথায়, নিজেকে সামলাতে পারিনি, আমি এই সংসারের জন্যে উদায়স্ত খেটে যাচ্ছি, তারপর এসব শুনতে হলে...তুমি তো দেখছো... ইস্* মেয়েটা খেয়েও গেলো না...... এই প্রথম ...।’
‘রিয়া ভিষন অন্যায় করেছে। ও আপনার এই সংগ্রাম দেখতে পারছে না। হয়তো কেউ ওকে কিছু বলেছে, সেটা ওর মনে গেথে আছে। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে ও মন থেকে এসব বলেনি, আপনাকে ছোট করতে ও চায়নি। সময় মতন কথা বলে আপনারা মিটিয়ে ফেলতে পারবেন এই ব্যাপারটা।’
‘খুব খারাপ লাগছে, এই প্রথম ওর সাথে আমার এরকম হোলো, এই প্রথম ও কিছু না খেয়ে বেরিয়ে গেলো।’ আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম। সোফার মধ্যে বসে দুহাতে মুখ ঢেকে নিলাম। যেন অপিরিচিত কারো সামনে কাঁদতে লজ্জা হয়। কান্নার দমকে আমার শরীর ফুলে ফুলে উঠছে।
‘আসলে আমিও হয়তো একটা কারন’ বহুদুর থেকে রাহুলের গলা আমার কানে ভেসে এলো যেন।
আমার মন খুব খারাপ লাগছে। সেই ফুটফুটে মেয়েটা এত বড় হয়ে গেছে, ওর মানসন্মান আছে এসব আমি এতদিন ভাবিই নি।
এমনিতে আমি মনে মনে ভিষন একা, তার ওপর রিয়ার যা জেদ, এরপর থেকে হয়তো ও আমার সাথে আর কথা বলবে না। এক ছাদের তলায় দুটো প্রান বেচে থাকবো একে অন্যের ওপর বিদ্বেষ নিয়ে এটা ভাবতেই মনে হোলো এই বেচে থাকার কি মানে। মুখ দিয়েও বেরিয়ে এলো ‘হায় ভগবান এরপর আমি কিভাবে বাঁচবো?’ একা থাকলে হয়তো নিজের মনে লড়াই করতাম, নিজেকে তৈরি করতাম মা হয়েও রিয়ার কাছে ভুল স্বিকার করে নেওয়ার জন্যে। কিন্তু রাহুলের উপস্থিতিতে আমার মন আরো দুর্বল হয়ে পরছে। কেন যেন মনে হচ্ছে রাহুলের কথা তুলে ওকে আরো বেশি অপমান করেছি। সেই রাহুল সেটা অগ্রাহ্য করে আমাকে স্বান্তনা দিচ্ছে, সেটা ভেবে আরো বেশি করে দুর্বল হয়ে পরছি।
রাহুল আমার পিঠের ওপর একটা হাত দিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে, যেটা আমার কাছে ডুবন্ত মানুষের কাছে খরকূটোর মতন।
‘সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।’
জানিনা কেন যেন সব এলোমেলো হয়ে গেলো। আমি ওকে আকড়ে ধরলাম জিজ্ঞেস করলাম ‘সত্যি বলছো তুমি? রিয়া আমাকে ক্ষমা করে দেবে? তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেবে?’ আমি আকুল নয়নে ওর কাছে ভিক্ষা চাইলাম যেন । বলতে চাইলাম তুমি চলে গেলে রিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক চিরতরে শত্রুতায় পরিনত হবে।
আমি ব্যাকুল হয়ে বললাম ‘তুমি ওকে বুঝিয়ে বলবে বলো!’
ও আমার থুতনি ধরে মুখটা ওপর দিকে তুলে ধরলো, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আমার চোখের জলের ধারা মুছে দিয়ে ‘আমি তো আছি চিন্তা করছেন কেন? অন্ততঃ এই মাসটা তো আছি।’
মাথার মধ্যে সব গুলিয়ে গেলো মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো ‘কে তুমি? পার্থ? এতদিন কোথায় চলে গেছিলে আমাকে ফেলে?’
মনে পরে গেলো সেই রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্থর কাছে চলে যাওয়া ‘এইভাবে আমি বাঁচতে পারবোনা পার্থ, তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই, অন্য কাউকে আমি আমার স্বামির স্থান দিতে পারবোনা।’ আকুল হয়ে আমাকে গ্রহন করতে বলেছিলাম। পার্থ হেসে আমার থুতনি ধরে মুখটা ওপর দিকে তুলে ধরলো, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আমার চোখের জলের ধারা মুছে দিয়ে ‘আমি তো আছি চিন্তা করছো কেন?’
মুহুর্তের মধ্যে সব ঝাপসা হয়ে গেলো। ভিতরের আবেগ কখন প্রলয়ে পরিবর্তিত হয়েছিলো সেই খেয়াল আর আমার ছিলো না। ঝড় থামতে খেয়াল করলাম রাহুল আমার নগ্ন দেহের পাশে আবেশে আচ্ছন্ন হয়ে শুয়ে আছে মেঝেতে লুটিয়ে আছে আমার শাড়ী, শায়া, ব্লাউজ, রাহুলের শরীর থেকে পরিতক্ত্য পোষাক। শরীরে কামতৃপ্তি আর ক্লান্তির আবেশ। পাছার তলার চাদর ভিজে আমার যোনিদ্বার থেকে নির্গত রাহুলের পুরুষবীজ আর আমার নাড়িরসের মিশ্রনে।শরীর সুখের মাঝেই মন জেগে উঠলো। এ আমি কি করলাম? আতঙ্কিত হয়ে উঠলাম। চারিদিকের নিষ্পাপ রোদ যেন বলছে আমি অন্ধকারের জীব। শুনেছিলাম যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়। এই ভরন্ত বেলায় আমি সামাজিকতা ছেড়ে, দৈনন্দিন জীবনের ছন্দ হাড়িয়ে কামলীলায় মত্ত হোলাম কি করে? এই রোদ তো আমার প্রিয় রোদ, এই রোদের সাথে মিশে আছে আমার জীবনের কত স্মৃতি। শিউলি ফুলের গন্ধ, পুজো প্যান্ডেলের গন্ধ, নতুন জামার গন্ধ, পার্থর হাত ধরার অনুভুতি, এর সাথে আজ যোগ হোলো এই কলঙ্ক। আমি নিজে কলঙ্ক এঁকে দিলাম আমার প্রিয় রোদের গায়ে। একে ধোকা দিলাম।
শেষ পর্যন্ত আমি এই পথেই হাটলাম। রাহুল?? আমার মেয়ের পছন্দের মানুষটাকে আমি এই ভাবে ব্যাবহার করলাম? রাহুল ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে। মাথা বোঁ বোঁ করছে? দরজা এরকম হাট করে খোলা। সুবলা? কতক্ষন এইভাবে ছিলাম? মনে পরলো সুবলা দেশে গেছে টাকা দিতে। রাহুলের একটা হাত আমার গায়ের ওপরে। কি করবো এই ভাবে থাকবো, ওর জেগে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো ঘূমের ভান করে, যাতে পরবর্তি কালে এটা দুজনেরই মনে হয় যে দুর্ঘটনা। রাহুল জেগে উঠে নিজেই বুঝতে পারবে, আর নিজেও লজ্জিত হবে। সময়ের সাথে সাথে হয়তো এই ঘটনা মানিয়ে নেবো দুজনেই এক অবাঞ্ছিত ঘটনা ভেবে। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় বারোটা বাজে, কতক্ষন? রিয়া তো আজ তাড়াতাড়িই বেরিয়ে গেলো। এতক্ষন? বেলা বারোটা আর আমি নিজের মেয়ের বয়েসি এক ছেলের পাশে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছি? হে ভগবান আমাকে তুলে নাও। অবিন্যস্ত বিছানা, পাছার তলায় ভেজা ভাব, নিরাবরন শরীরে পরপুরুষের ছোয়া, আমাকে অস্থির করে তুলেছে।
আজ সুবলাও নেই। আমার শরীরের স্পন্দনে রাহুল জেগে উঠলো। চোখ খুলে আমাকে দেখে হাল্কা হেসে বললো ‘ঘুমিয়ে পরেছিলাম, সরি’ আমিও উঠে বসলাম। অবশিষ্ট চাদরের অংশ দিয়ে গা ঢাকার একটা ব্যার্থ প্রয়াস করলাম। মুখে অন্যায় বোধ, অনিশ্চিতের আহবানে মনে শংশয়।
হাটূ দুটো তুলে বসেছি, দুহাত দিয়ে পাঁক দিয়ে হাটু দুটো ধরেছি আর মধ্যে মুখ গুজে রয়েছি সাথে স্তনদুটো লুকানোর চেষ্টা করছি। এখন আমি ওর মুখোমুখি কিভাবে হবো?
আমার খালি পিঠে ও হাত বুলাচ্ছে। এতে আমার নগ্নতা যেন আরো প্রকট হয়ে উঠছে। গায়ের ওপর ওর নিশ্বাসের ছোয়া পাচ্ছি, ও কাছিয়ে আসছে। আমার কানের লতিতে প্রেমিকসুলভ হাল্কা একটা কামড় দিয়ে ফিসফিস করে ফুল্লসজ্জার রাতে প্রথম মিলনের শেষে নতুন বোউকে জিজ্ঞেস করার মতন করে জিজ্ঞেস করলো
‘খুব ব্যাথা লাগছিলো, তাই না?’
আমি কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছিলাম না। হ্যাঁ বলবো নাকি না বলবো।
এটা ভালোই বুঝতে পারছি যে ও ভেবেছে আমার শরীরের প্রচুর খিদে, বিধবা হওয়ার দরুন আমি প্রকাশ্যে দেহের বিভঙ্গে পুরুষ মোহিত করতে অনিচ্ছুক, কিন্তু শরীরের ব্যাপারে আমার ছুতমার্গ নেই। এটাও ও নিশ্চয় ভাবছে যে ওকে আমার বরাবরই পছন্দ ছিলো তাই সুযোগ পেতেই সুযোগের সদব্যাবহার করেছি।
দোষটা ওর না, আমিই প্ররোচনা দিয়েছি ওকে। আমি মুহুর্তের জন্যে পার্থ ভেবে বসেছিলাম ওকে, নিজেই নিজের দেহের দরজা খুলে দিয়েছিলাম। ও ঢুকেছিলো আমার সন্মতিতেই। এখন আমি অনুতপ্ত এখন আমার কি করা উচিত। এই মুহুর্তে ওর হাত আমার উদোম শরীরে যেভাবে আকিবুকি কাটছে তাতে বুঝতে পারছি, পরনের কাপরের মতন সম্পর্কের দুরত্ব আর সন্মানটাও ভুলুন্ঠিত।আমার ব্যক্তিত্বের, আমার গাম্ভির্যের পাচিলটা আমি নিজের হাতে চুর চুর করে ভেঙ্গে দিয়েছি, সেই জন্যে ও আমাকে ওর প্রেয়সির মতন দেখছে। কি বলব ওকে আমার ভুল স্বিকার করে নেবো? অনেকক্ষন চুপচাপ বসে আছি একই ভাবে। সঠিক বাক্য চয়ন করছি মনে মনে। কিন্তু পারছিনা। রাহুল আমার পিঠের ওপর মাথা রেখে আমার পিঠে চুমু খাচ্ছে, ঘারের চুল সরিয়ে সেখানেও চুমু খাচ্ছে। ওর ভেজা চুমুগুলোতেই বোঝা যাচ্ছে ও আবার জাগছে, আমি বুঝতে পারছি। ওকে যে করে হোক আটকাতে হবে।
‘তুমি সামনের মাসে চলে যাও রাহুল’ এটা বলতে একদম চাইনি কিন্তু মুখ দিয়ে এটাই বেরিয়ে গেলো।
আমি ওর প্রতিক্রিয়ার জন্যে অপেক্ষা করছি। এমন কিছু বলুক যাতে আমি আমার অবস্থান ওকে খুলে বলতে পারি। অতি ধিরে, রাহুল আমার শরীর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো। সারা পৃথিবী যেন নিরবতা পালন করছে। বাইরে একটা কাকও নেই যে ডাকবে।
দুর্বল গলায় আমাকে বললো ‘এত কাছের করে নিলে আর মুহুর্তে দূর করে দিলে?’
‘আমি ভুল করেছি? এটা আমার পাপ বলো অন্যায় বলো, অপরাধ বলো তাই হয়েছে। আমি কোন একজনের সাথে তোমাকে গুলিয়ে ফেলেছিলাম, ক্ষনিকের এই ভুল আর শোধরানোর কোন উপায় নেই। তবু এর থেকে আমাদের দুজনকেই বিরত থাকতে হবে। আমি সব ভুলে গেছিলাম। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। দয়া করে এই ব্যাপারটা ভুলে যাও?’
রাহুল আর আপনিতে ফিরে গেলো না, ‘তুমি ভুল করেছো, ভুল হতেই পারে, মানুষমাত্রই ভুল হয়। কিন্তু আমি তো জেনেবুঝে এগিয়েছি, আমি তো তোমাকে অন্য কেউ ভাবিনি? আমি মুহুর্তের জন্যে ভুলিনি তুমি রিয়ার মা, আমি মুহুর্তের জন্যে ভুলিনি তুমি স্বামিহারা, মুহুর্তের জন্যে আমি ভুলিনি তোমার একটা সামাজিক সন্মান আছে। দায়িত্ব নিয়ে এগিয়েছি। জীবনে এই প্রথমবার, এইভাবে আমি কোন নাড়ির শরীর স্পর্শ করলাম, সেটা ভুলে যেতে বলছো? তুমি হলে পারতে? আমার যায়গায় তুমি হলে কি করতে?’
আমি কন উত্তর দিতে পারলাম না। মাথা গুজে রয়েছি হাটুর মাঝে। চোখ ভিজে গেছে। ভাবছি ওকে বলতে না দিলেই ভালো হোতো। এখন ওকে দূরে সরিয়ে দেবো কিভাবে।
রাহুল কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলতে শুরু করলো ‘তুমি আমাকে পার্থ বলে ডাকছিলে, আমি কিছু মনে করিনি, আমি জানি পার্থ রিয়ার বাবার নাম। আমি ভুল ভাঙ্গিয়ে দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো এই ভুলটা তুমি করতে না, কিন্তু সেটা একটা মুহুর্ত ছিলো তোমার, তুমি তোমার পরম আপনজনকে কাছে টেনে নিচ্ছো, সেই সুখ, সেই তৃপ্তি, সেই কামনার লালিমায় উদ্ভাসিত তোমাকে বাধা দিলে আমারই অন্যায় হোতো। আমি বাধা দিই নি। আমি পার্থর ভুমিকা নিয়েছি, দুজন প্রেমিক প্রেমিকার মিলনে আমি রাহুল হয়ে উঠিনি এক মুহুর্তের জন্যে। আমি জানি রোজ রোজ তুমি আমাকে পার্থ ভাববেনা, হয়তো আর কখনোই ভাববেনা। কিন্তু এসব কিছুর মধ্যে একটু আমিও তো আছি। আমি জানি এটাকে সমাজে অবৈধ সম্পর্ক বলা হয়। আমি সেসব কেয়ার করিনা। আমি জানি আমাদের এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যত নেই, আছে অনিশ্চয়তা। তবু আমি ভাবছিলাম সুদুর কোন ভবিষ্যতে ও যদি তুমি আবার পার্থকে চাও, আমি প্রস্তুত থাকবো। কিন্তু তুমি আমাকে দূর করে দিচ্ছো।মানুষ তো বাড়ির কুকুরের সাথেও এরকম করেনা।’
‘এই ভাবে ভেবোনা। ভুল হয়েছে তুমিও জানো আমিও জানি। এই ভুল আবার করলে আগুন জ্বলে যাবে। তাছারা রিয়া আর তুমি...।’
‘তুমি রিয়ার মন পরে দেখোনি। আমি এই অল্পদিনেই দেখেছি। ও আমাকে বন্ধুর নজরেই দেখে। ওর মনের মানুষ আমি না, যেটা তোমার ভুল ধারনা। যাইহোক রিয়া আর আমার প্রসঙ্গ উঠলো বলে আমি পরিস্কার করে দিলাম তোমাকে। আজকে এটা ঘটলো তাই হয়তো তুমি জানতে পারলে। আর ঠিক আছে আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাবো। একটা কথা বলি, যা পেলাম সেটা আমার কাছে মিষ্টি একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে, কখনোই সেটা প্রকাশ্যে আসবে না। এই ঘরের বাইরে আর কেউ কোনদিন এই ঘটনা জানতে পারবেনা। কারোর অধিকারই নেই এটা জানার। তবে আরো একটা কথা বলি, জানিনা তুমি কি ভাবে নেবে তোমার ব্যাপার, কিন্তু আমি অসহায়। এরপর থেকে ভুল না করলে এরকম ঘটনা আমার জীবনে ঘটবেনা। ভবিষ্যতে আমার জিবনেও কোন না কোন নাড়ি আসবে, আমি তাকে আমার ম্যাডাম ভেবে ভুল করলেই সে আমার সবকিছু পাবে। চেষ্টা করবো এই স্মৃতির সাথে যাতে আমি বেইমানি না করি।
রাহুল উঠে চলে গেলো। ঘরের মধ্যে ওর কথাগুলো ঘুরে বেরাচ্ছে। ক্লান্ত আমি নিজের উলঙ্গ শরীরটা টেনে বিছানা থেকে নামালাম। পায়ের মাঝের ভিষন চ্যাটচ্যাট করছে, থাই দিয়ে হাল্কা হাল্কা গড়িয়ে নামছে শরীরের ভিতরের রসগুলো। সাথে গুদের ভিতর একটা যন্ত্রনা হচ্ছে। মেয়ে হয়ে জন্মেছি, তাই জানি এ ব্যাথা মিলনের অনভ্যাসের ব্যাথা। মুহুর্তের মধ্যে মনে হোলো আমি এখনও সন্তান জন্ম দিতে পারি, কিছু হয়ে গেলে? মাথাটা ঘুরে গেলো মুহুর্তের জন্যে। চেয়ার ধরে নিজেকে সামলে নিলাম। ধপাস করে সোফায় বসে পরলাম।
নাঃ মাথা ঠাণ্ডা করতে হবে। ফোনের ডায়েরি নিয়ে একের পর এক ফোন করে গেলাম সব বাড়িতে। আজকে ছুটি নিতেই হবে। আজ আমি রান্না করতে পারবো না।
সারাদিন নিজের ঘোরে রইলাম। ছিলাম কূঁয়োতে, সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচতে গিয়ে পরলাম সমুদ্রে, অথচ সাঁতার ভালো জানিনা। এরপর আরো কি অপেক্ষা করছে আমি জানিনা। এখন নিজের কাছ থেকে নিজে পালিয়ে বাচতে চাইছি। মন যে অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন তুলছে। নিয়তির হাতে নিজেকে ছেরে দিয়েছি। ভেবে রেখেছি সন্তানসম্ভবা হলে কি করতে হবে। না আত্মহত্যা না, তাহলে পুলিশ শরীর কাটাছেড়া করলে বেরিয়ে পরবে সেই ঘটনা। রিয়ার ওপর এর চাপ পরবে। ও পারবেনা মায়ের এই কলঙ্ক বইতে। গর্ভপাত করাবো। দূরে কোথাও গিয়ে। শুনেছি অল্পদিনের হলে কোন সমস্যা হয়না ওষুধে গলে যায়।
সারাদিনই চোখের জল ফেলে গেলাম। রিয়া ফেরার সময় হয়েছে। দুপুরে কিছু রান্না করিনি। রাহুলও না খেয়েই রয়েছে হয়তো। সে দরকার হলে ও বাইরে খেয়ে নিয়েছে। আমার খিদে আর খাওয়ার ইচ্ছে দুটোই ছিলোনা।
রিয়ার সাথে ঝগড়া না করলে আজ এই দিন সৃষ্টি হোতো না। সুবলা থাকলেও এই ঘটনা ঘটতো না।
কলিং বেল বাজলো। আমার মনে একসাথে আশা আর আকাঙ্খা। হয়তো সারাদিন বাইরে থেকে ওর মনও নরম হয়েছে। আবার ভয় হচ্ছে মেয়ের জেদের কথা ভেবে।
সেই থমথমে মুখেই ও ঢুকলো। আমি মাথা নিচু করে নিলাম। পাশ কাটিয়ে চলে গেলো ভিতরে। আমি দরজা বন্ধ করে ভিতরে আসতে আসতেই ও বাথরুমে ঢুকে পরলো। কথা বলার সুযোগই দিলো না।
কি করবো আমি ওর পা ধরে ক্ষমা চাইবো? ও যা ভাবছে আমি তো তার থেকেও বড় অপরাধ করেছি। এই পরিবারের অভিভাবক হয়েও যা করেছি, সেটার কোন ক্ষমা হয়না। সরাসরি না হলেও ওকেও তো অসন্মান করা হোলো এতে। কি করে আমি এরকম করলাম সেটাই বুঝে উঠতে পারছিনা। সেইসময়কার ঘটমান কিছুই মনে পরছেনা আমার, এতটাই ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এটা কি আমার কোন মানসিক রোগ? হিস্টিরিয়া যাকে বলে।
চেয়ারে বসে ভাবছি, আর রিয়া এসে ভিতরে ঢুকলো। তারপর আবার বেরিয়ে গেলো। আবার এসে ঘরে ঢুকলো। ‘আজকে রান্না করোনি?’
‘করতে পারিনি শরীর খারাপ লাগছিলো?’
‘সেতো চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে’ আমার অভিভাবকের সুরে কথাগুলো ছুরে দিলো ও। তারপর আবার বললো ‘হোম ডেলিভারির কি করলে? সবাইকে জানিয়েছো?’
‘হ্যাঁ’ আমি সংক্ষেপে উত্তর দিলাম। বুঝতে পারছি ও এগিয়ে আসছে সম্পর্কটা সহজ করার জন্যে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘তুই খেয়েছিস?’
রিয়া চুপ করে রইলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাথা নিচু করে আছে। ‘কিরে খাসনি?’ আমি ওর এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইলাম। মেয়েটা আমার খুব সুন্দর। ছোট্টবেলা থেকে পুতুল পুতুল। কিন্তু এত মাথা গরম। কে ওর বর হবে কে জানে। সে যদি রাগি হয় তো...। থাক অশুভ চিন্তা আর করবো না।
‘তুমিও তো না খেয়ে আছো’
‘আমি তো ঘরে বসে আছি, তুই সারাদিন না খেয়ে আছিস, যদি মাথা টাথা ঘুরে যেতো তাহলে?’
রিয়া এগিয়ে এসে আমার গলা জরিয়ে ধরলো ‘আই আম সরি মা’ আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও আমার গলায় মুখ গুজে দিলো, নোনতা জলে কাঁধ ভিজে যাচ্ছে। নিজেকে খুব ছোট লাগছে ভয়ও লাগছে, ও যদি টের পেয়ে যায়, আমার শরীরে কি এখনো দুপুরের গন্ধ আছে?
দুজন দুজন কে আকড়ে ধরলাম। জানিতো যে আমরা ছাড়া আমাদের কেউ নেই। রক্তের সম্পর্ক যতই খারাপ হোক না কেন প্রয়োজনে ঠিক কথা বলে। অন্য কোন সম্পর্কে এই জোর থাকেনা। কেমন কয়েকটা কথাতেই সব বরফ গলে জল হয়ে গেলো।