10-06-2019, 07:24 PM
একটু আগেই পুরানো পাড়ার স্মৃতিতে মন আচ্ছন্ন হয়েছিলো। বিষাদের মধ্যেও ভালো লাগছিলো, নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম। তার পরের মুহুর্তেই সেই অশ্লীল মিলন দৃশ্য মনের মধ্যে ঝিলিক মারছে। শরীর অশান্ত করছে। আমি চলেছি এক অসুস্থ পারিবারিক বন্ধুকে দেখতে, আর পায়ের মাঝখানে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো এই ভাবে চলতে থাকলে।
অমিয়দার বাড়িতে গিয়ে অমিয়দাকে দেখে একদম ভালো লাগলো। মুখে যন্ত্রনা লুকানোর হাসি। অপরিছন্ন একটা স্যাঁতস্যাতে ঘর, বিছানার চাদরে চিমটী কাটলে মনে হয় ময়লা উঠবে। ঘরে পোড়া বিড়ি আর সিগেরেটের উৎকট গন্ধ। জীবনে মেয়েমানুষ না থাকলে পুরুষেরা যেন নরক যাপন করে।
আরে দূর গ্যাস ফর্ম করে মাথা ঘুরে গেছিলো এই বলে হাল্কা করতে চাইছে ব্যাপারটা। ওর ভাইয়ের বৌ আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে। খুব কথা শোনাতে ইচ্ছে করছে। ভাসুর ব্যবসার ভাগ নিলে চাকর বাকর রেখে নিজের যত্ন করাতে পারতো, সেখানে তোদের তো দায়িত্ব উনাকে দেখা। বুঝলাম বাউণ্ডুলে, কিন্তু ঘরের এরকম অবস্থা কেন? ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে সেখানে অসুস্থ লোকও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। রোদ ঝর বৃষ্টী যাকে থামাতে পারেনা সে বাছানায় পরে রয়েছে মানে তো ভালোই কিছু বেধেছে। মুখে না বললেও আমার হাবভাবে সে বুঝে গেলো। সে তার সাফাইয়ে বললো, ‘ছেলেমেয়ে সামলে উনাকে কি দেখবো, উনি তো আর বাচ্চা ছেলে না যে সব বলে বলে করাতে হবে? আর মুখ ফুটে না বললে আমরা তো আর অন্তর্যামি নোই যে সব বুঝে নেবো। দেখি বিকেলে চৌধুরি মেডিকেলে নাম লিখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে আসবো।’
বুঝলাম এদের সব দায়সারা ব্যাপার। আমি তাও উপযাচক হয়ে বললাম ‘দাদা, আমি ঘর পোড়া গরু। তাই অল্পে ভয় পাই, ভালো কোন ডাক্তার দেখিয়ে নিন। দরকার হলে আমি খোঁজ এনে দেবো।’ ওর ভাইয়ের বৌয়ের দিকে ঘুরে বললাম ‘তুমি কিছু মনে কোরোনা প্লিজ, আমি নাক গলাতে চাইনা। তবু আসিম ডাক্তারের তো সেরকম সুনাম নেই, তারওপর বুকের ব্যাথা, ভালো করে দেখিয়ে নিলে ভালো হয়’
‘হ্যাঁ ওর ভাই ও তো বলছিলো যাদবপুরের হসপিটালের আউটডোরে ভালো ভালো ডাক্তার আছে...’
দেরি হয়ে গেছে, বাড়িতে এসে ঝটপট কাজ সারতে সারতে সারাদিনের প্ল্যানিং সেরে নিলাম। একবার ছাদে যেতে হবে, কাঁচা জামাকাপর আজ বারান্দায় মেললে আর শোকাবে না। আজকে সাবধানেই ছাদে গেলাম। অনেক কাজের চাপ আছে। আবার যেন বিপত্তি না ঘটে।
রাহুল কোথাও যাওয়ার কথা। সুতরাং নিশ্চিন্তেই ছাদে গেলাম। নিজের মনকে শক্ত করছি, এভাবে দুর্বল হওয়ার কোন মানে হয়না। শরীরের ক্ষিদে স্বাভাবিক, কিন্তু ভাদ্র মাসের কুকুর হয়ে ঘুরে বেরানোর কোন মানে হয় না।
কি ব্যাপার রাহুলের ঘরে কি ফ্যান চলছে? এই হচ্ছে। পুরুষমানুষ, সাংসারিক কোন দিকে মন নেই। একটু রাগই হোলো। বাপু আলো পাখা এগুলো বন্ধ করে যেতে পারিস না?
কাপরগুলো মেলে দিতে দিতে ভাবলাম, নিচে গিয়ে মেইন সুইচ অফ করে দেবো।ওর ঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কিছু একটাতে চোখ আটকে গেলো। ফ্যানের হাওয়ায় ওড়া পরদার ফাঁক দিয়ে একটা বিড়াট সাইজের পেইন্টিং দেখা যাচ্ছে। আমি স্থির হয়ে চোখ রাখলাম, নিজের মনের ভুল কিনা সেটা বুঝে নেওয়ার জন্যে।
গলা শুকিয়ে গেলো আমার। পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি। এক উলঙ্গ নাড়ির চিত্র। প্রমান সাইজের সেই পেন্টিং, আসল মানব দেহের আকার। বাচ্চা ছেলেও দেখলে বুঝতে পারবে শায়িত সেই রমনি আর কেউ না, সেটা আমি। একটা কাপর দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ফ্যানের হাওয়ায় সেই কাপড়ের একদিক খসে পরে পেইন্টিংটা কে ছবিতে শায়িত আমার মতনই উলঙ্গ করে দিয়েছে। মিশ্র প্রতিকৃয়া হচ্ছে মনে। ভাবছি এত বড় সাহস? আবার ভাবছি নগ্ন হলেও খুব সুন্দর এঁকেছে তো, কিন্তু আমাকে উলঙ্গ এঁকেছে কেন। ওও কি আমাকে মনে মনে এইভাবে কামনা করে? সেইজন্যেই কি আমার সাথে ওর যা বাক্যালাপ সেগুলো শুধুমাত্র আমার সাথেই, রিয়ার সামনে সেইগুলোর রেশটুকুও ধরা পরেনা? ও কেন আমাকে এইভাবে কামনা করে, সাধারন ভাবে তো কেউ আমার চালচলন পোষাক আশাক দেখে সেটা করবেনা। কারন আমি খুব সাধারন ভাবে থাকি। নিজের যৌন আবেদন আমি অতি সাধারন ঘরোয়া কাপরচোপর দিয়ে লুকিয়ে রাখি। মনে মনে আমি যাই ভাবিনা কেন সেগুলোর তো কোন বহিঃপ্রকাশ করিনা। তাহলে ও কেন আমার এইরকম ছবি আঁকলো। আমার খোলা চুল সামনে এসে পরে একটা স্তন ঢাকা, একটা উন্মুক্ত, পাশ ফিরে শুয়ে আছি আমি মেলে রাখা একটা হাতের ওপর মাথার ভর দিয়ে, মুখে এক বিষন্নতা, চোখে চরম উদাসিনতা। ভাড়ি একটা জঙ্ঘা আরেকটার ওপোর চেপে রয়েছে তার জন্যে যৌনাঙ্গ ঢাকা পরে গেছে। কিন্তু নাভির তলা থেকে পেটের একটা ভাজের সমান্তরালরেখায় শুরু হয়ে যৌনকেশগুলো দুপায়ের মাঝে গিয়ে লুকিয়ে ত্রিভুজাকৃতি ধারন করেছে। পায়ের কাছে একটা শাড়ি লুটিয়ে আছে যেটা দেখে আমার সেইদিন রাতে পড়া শাড়ীটাই মনে হয়। বিসদৃশ্যের মধ্যে রয়েছে, কোমোরে আর পায়ে দুটো অলঙ্কার, যেদুটো আমার যৌনতাকে আরো প্রকট করে তুলেছে। যদিও আসল আমি কোনদিনই কোমোরে বিছা বা পায়ে নুপুর পরিনি।
ছেলেটা কি চাইছে? ও কি আমাকে শারীরিক ভাবে কামনা করে? নাকি এটা সত্যিই শিল্পির মনের প্রতিচ্ছবি। শুনেছি চিত্রশিল্পিরা নাড়িদের নগ্নতাকে অবলম্বন করে অনেক কিছু বলতে পারে। ওদের পছন্দের বিষয় এটা। ছবিতে আমার উদাস ভাব কি বোঝাতে চাইছে? কালকে রাতের স্বপ্নে বলা সেই কথাগুলো কি এইরকমই নয় কি, সেই খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসার কথাগুলো? খাঁচা মানে কি আমার এই বৈধব্য? কিন্তু সেটা তো স্বপ্ন, তাও ভোরের দিকের নয় যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে মেনে নিতাম। কি হতে চলেছে। আমার কি করনিয়? ওর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবো নাকি অবজ্ঞা করে স্বাভাবিক থাকবো।
সারাদিন মাথার মধ্যে এই চিন্তা চলেছে। নিচের মেইন সুইচ আর অফ করিনি। তাহলে ও বুঝে যাবে যে আমি ফ্যান চলছে সেটা দেখে ফেলেছি, তার সাথে ছবিটাও। সেটা ওর মনে কৌতুহল বা আগ্রহের সৃষ্টি করতে পারে।
চেষ্টা করছি স্বাভাবিক থাকার। সেতা মাঝে মাঝে অতি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। এত কথা আমি বলিনা যা আজ সুবলার সাথে বলছি। ভয় লাগছে ও যদি ছাদে গিয়ে দেখে ফেলে। ওকে ব্যাস্ত রাখা, নজরে রাখাটাও একটা কাজ হয়ে দাড়ালো। মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত লাগছে। রাহুলের এই কাণ্ডজ্ঞাণহীণ কাজের জন্যে।
ভিষন অস্বস্তি হচ্ছে। নিজেরই এরকম একটা ছবি দেখে, সেটাও কেউ যত্ন করে সময় নিয়ে এঁকেছে ভেবে।মাঝে মাঝে ভাবছি, কোন অধিকারে ও এটা করলো, আমিতো পথচলতি কারো ফটোও তার অনুমতি ছাড়া তুলতে পারিনা। কিন্তু মনের কোন গভিরে সামান্য হলে ঢেউ তুলছে অবৈধ এক কামেচ্ছা। নিজের বিবেচনা দিয়ে অনুভব করতে পারছি যে সেটা সমাজ অনুমোদিত না, সেটা অশ্লীল। তাই প্রানপনে চেপে রাখার চেষ্টা করছি, যাতে সেই ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে না দেয়, সেই ঢেউ নিজে ভেসে না ওঠে, এক বিধবার আচরনের মাধ্যমে। নিজেই নিজের মনে মনে ভাবছি, যদি সমাজ না থাকতো, যদি রিয়া না থাকতো, যদি এমন হোতো, কেউ কোনদিন জানতে পারবেনা এক অল্পবয়েসি ছোকরার সাথে আমি সম্ভোগে লিপ্ত, যদি এমন হোত যে এই আমিই এমন একটা যায়গায় আছি সেখানে দ্বিতীয় প্রান একমাত্র রাহুল, তাহলে কি মনে এত সঙ্কোচ এতো দ্বন্ধ থাকতো? তাহলে কি আমি এগোতাম? উত্তর খুঁজে পাচ্ছিনা। আসলে আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা আমি কি চাই।
রিয়ার ফিরতে আজ রাত হবে। সপ্তাহের এইদিনটা ওর কলেজের পরেও প্রফেশরের কাছে যেতে হয়। ওরা তিন বন্ধু একসাথে পরে। রাহুল ইতিমধ্যে ফিরে এসেছে। আজকে ওকে নিয়ে আমার ডেলিভারির যায়গা দেখিয়ে দেওয়ার কথা। এরপর থেকে ও ডেলিভারি করবে। সেটাই চুক্তি হয়েছে।
ফ্যানটা মাথার ওপর বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। সাথে আমারও মাথা ঘুরছে। ওই ছেলেটার সাথে বেরোবো ভেবে। মনের জোর পাচ্ছিনা। স্বাভাবিক থাকতে পারবো কিনা সেই আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিনা। হয় রাগে ফেটে পরবো নাহলে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে, একসাথে কিছুক্ষন থাকলে। স্বাভাবিক থাকবো কি করে? কথা বললেই তো ছবিটার প্রসঙ্গ উঠবে। তাহলে?
নাহঃ সুবলাকে পাঠিয়ে দেবো। ও নিশ্চয় না করবেনা। আর আমি পেশাগত ভাবে দুজনেরই মালকিন, সামান্য দৃঢ়তা দেখাতে পারলে আজকের দিনটা অন্ততঃ সময় পাওয়া যাবে। তবে ছেলেটা যে এগিয়ে খেলছে সেটা নিঃসন্দেহ। তবে ও কি ইচ্ছে করে ফ্যান চালিয়ে গেছিলো? তা কি করে? আমিতো ছাদে যাইনা সাধারনত।
সাতটা নাগাদ রাহুল ফিরেছে সেতা বোঝা গেলো। ওপরে কিছু সরানোর আওয়াজ হোলো। আমার বুকের ভিতর কেমন যেন ধুকপুক করছে। প্রচন্ড ভাবে চেষটা করছি, নিজের চিন্তা নিয়ন্ত্রন করতে। কিন্তু শরীরের ফাটলটা অন্য কথা বলছে। একটা অন্য পদ্ধতির কথাও মাথায় আসছে, সেটাও অবান্তর চিন্তা,কিন্তু অসম্ভব নয়। যদি অন্য কোন পুরুষের সাথে নিজেকে কল্পনা করি। পার্থর সাথে শারীরিক ভাবে আমি অন্ত্যন্ত সুখি ছিলাম। কোনদিন অভিযোগ করতে পারিনি, বরঞ্চ ওর অভিযোগ করার অনেক কারন থাকতো। কিন্তু এই কদিন তো পার্থ আর আসছেনা আমার মনে। আমার এমনই পদস্খলন হয়েছে। আমি সত্যি খুব খারাপ হয়ে গেছি। ওপরে ওপরে ভালো তো সবাই বলে, নিজের কাছে নিজে পরিস্কার থাকতে না পারলে আর কি।
কিন্তু আমি পারছি কই। যাদবপুরে যে ফ্ল্যাটে থাকতাম, তার মালকিন ছিলো এক ডিভোর্সি মহিলা, ওই ফ্ল্যাটেই একটা বিশাল ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন। সেটাও বিচ্ছেদের ক্ষতিপুরন হিসেবে পেয়েছেন। ছেলে দক্ষিন চব্বিশ পরগনার কোন এক ইন্টারন্যাশানাল বোর্ডিং কলেজে পরে। সেখানেই থাকে। পার্থর মুখে শুনেছিলাম উনি নাকি নিজের দেওরের ছেলের সাথে সেক্স করেন। সেই ছেলের বয়েস কলেজ পরার মতনই। সবাই দেখে ছেলেটা ওনার ফ্ল্যাটে আসে। উনি কে কি ভাবলো সেটা পাত্তাই দেন না। এমনি মিষ্টভাষী, তারওপর সুন্দরি, চল্লিশোর্ধ হলেও চর্চিত শরীর আর ত্বক দেখলে মনে হয়না ৩৫ পেরিয়েছেন। আমিও বহুবার ছেলেটাকে আসতে দেখেছি উনার ফ্ল্যাটে। পার্থর ওই কথা শুনে আমি তর্ক জুড়েছিলাম যে কে দেখেছে উনাকে ঐ ছেলেটার সাথে সেক্স করতে? কেউ না। তাহলে লকে এরকম রটায় কেন? কালকে আমার ঘরেও যদি আমার ছেলের বন্ধু কেউ আসে তাহলে আমাকে নিয়েও এই আলোচনা হবে? উত্তরে পার্থ বলেছিলো, কানাঘুষা শোনা যায়, তারপর পার্থ নিজের চোখে ছেলেটাকে ওষুধের দোকান থেকে কণ্ডোম কিনতে দেখেছে। আমি সেই যুক্তি মানতে পারিনি, বলেছিলাম ‘ওর মেয়েবন্ধুর সাথেও তো হতে পারে, হয়তো সেই জন্যেই কিনেছে’ পার্থর সন্দেহ হয়েছিলো ও খেয়াল করেছিলো যে ছেলেটা তারপরেই আমাদের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলো। আমার মন মানেনি। এসব পর্ন ছবিতে দেখা যায় বলে মানতে চাইনি যে সত্যি জীবনে এরকম ঘটতে পারে। মধ্যবিত্ত কৌতুহলেই পার্থ খেয়াল করেছিলো যে একদিন ছেলেটা যখন বেরিয়ে যাচ্ছে তখন ওই মহিলা দরজায় এসে দারিয়েছিলো, ঘরের ভিতর থেকে ভুরভুর করে মদ আর সিগেরেটের গন্ধ বেরোচ্ছে। মহিলাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে উনিও ড্রিঙ্ক করেছেন আর এলোমেলো চুল, মুখের ওপর ঘামের প্রভাব আর ম্লান হয়ে যাওয়া মেকাপ একমাত্র সেক্স করলেই সম্ভব হতে পারে। ওকে দেখে স্বাভাবিক কথা বলছিলো, ও নিচে নেমে যেতেই গলার আওয়াজ নিচু হয়ে যায় ওদের, কিছু ফিস্ফিস করে বলে নিচ্ছিলো ওরা। এতেই বোঝা যায় ওদের সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। আমি তাও মানতে চাইনি। তবে মাঝে মাঝেই পার্থ ওই কথা তুলতো আর ছি ছি করতো। মাঝে মাঝে আমাকে রাগানোর জন্যে বলতো ‘ফ্ল্যাটের লোকেদের মধ্যেই তো বেছে নিতে পারতো।’
ভাবছি উনি যদি সত্যিই এরকম এক অসম সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন তাহলে কি উনি নিজের কাছে পরিষ্কার? যা করছেন সেটার সামাজিক বিক্রিয়ার দহনও সহ্য করার ক্ষমতা আছে কি? নাকি উনি কামনার আগুন নেভানোর জন্য এই অস্বাভাবিক সম্পর্ক অবলম্বন করার দরুন মনে মনে দগ্ধে মরছেন শুধু অভ্যেসের বশে অংশগ্রহন করছেন? বাইরের এই খোলামেলা মিশুকে আবরন দিয়ে মনের ক্ষত ঢেকে রেখেছেন। এই বুক ফুলিয়ে চলা, সমালোচকদের আওয়াজ স্তিমিত করার কৌশল। কিন্তু এমনও তো হতে পারে উনি নিরুপায়, বাধ্য হয়ে এই খেলায় মেতেছেন, ছেলেটাই হয়তো ছলেবলে উনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে, উনাকে এই পাপের আগুনে ঠেলে দিয়েছে। হতেই পারে। প্রশ্ন জাগে মনে, আগুন কোনদিকে আগে লেগেছিলো? ছেলেটা আগে পা বাড়িয়েছিলো না ওই মহিলা? নাকি দুর্ঘটনার মতন ঘটে গেছিলো; তারপর নিজেদের শরীরের তাগিদে সেটা নিয়ম হয়ে গেছে। উনি কি বুঝতে পারছেন না এর পরিনতি কি হবে? একদিন জীবন চক্রের নিয়ম অনুযায়ি উনি আর কিছু দিতে পারবেন না ছেলেটাকে তখন কি হবে? তখন কি ছেলেটা ওর জন্যে সময় দেবে? কঠীন প্রশ্ন। এর উত্তর অভিজ্ঞতা ছাড়া হতে পারেনা। কোন কেতাবি বিদ্যে এর উত্তর দিতে পারবেনা।
যদি আমিও এইরকম একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পরি তাহলে সেটা কতদিন গোপন থাকবে। চারিদিকে কি এরকম ফিসফিস হবেনা? সেই ফিসফিস কি রিয়ার কানেও আসবেনা?
এতই যেখানে বিপদ তাহলে আমি ভাবছি কেন এই পথে। হতাশ লাগছে আমার, শুধু মাত্র ছেলেটা পার্থর মতন দেখতে বলে আমি এত সাতপাঁচ ভাবছি। সত্যিই কি ভাবছি? কাল রাতের স্বপ্ন তো তাই বলছে। আমি জানি ওকে দেখার পর থেকে আমার শরীরে একটা অন্যরকম বিক্রিয়া চলছে। ঘুমিয়ে থাকা যৌনাঙ্গগুলো বিদ্রোহ করছে। পার্থ চলে যাওয়ার পরে এই প্রথম আমি স্বমেহন করলাম, এই প্রথম আমি যৌন সম্পর্কিত স্বপ্ন দেখলাম। কিন্তু আমার সচেতন মনে আমি ওর সাথে সম্ভোগে লিপ্ত; সেই কথা ভাবিনি। কিন্তু এটাও অস্বিকার করতে পারবো না মাঝে মাঝে অতল মনের গহ্বর থেকে সেটা বুদবুদির মতন উঠে আসতে চায় কিন্তু মনে তার প্রভাব পরার আগেই সেটা ফেটে যায়। অবাক হয়ে যাচ্ছি যে আমি তো কোনদিন এরকম শরীর কেন্দ্রিক ছিলাম না। কামনার আগুন আমার মধ্যেও জ্বলতো, কিন্তু সেটা মৃদু দৃষ্টিনন্দন স্নিগ্ধ আলোর ছটা দিতো, কখনোই সেই আগুনে চারপাশ ছারখার করার মতন তেজ থাকতোনা। সেই আগুনের একজনই প্রভু ছিলো। তার প্রভাবেই সেটা জ্বলতো, তার পরশেই সেটা নিভতো। পার্থ বলতো “ভগবান তোমাকে অনেক সময় আর ধৈর্য্য নিয়ে তিলে তিলে গড়েছে, তুমি একসাথে অনেককিছুর সঠিক মিক্সচার, রুপ, যৌবন, স্বাস্থ্য, কাম সব কিছু একদম সঠিক মাপে রয়েছে তোমার মধ্যে। তুমি একদিক দিয়ে ম্যাডোনার মতন উচ্ছ্বল যৌবনা একদিকে তুমি কালিদাসের লেখা শকুন্তলার মতন ধিরস্থির। কখনো তুমি উগ্র লাস্যময়ি শয্যাসঙ্গিনী, কখনো তুমি নতুন প্রেমিকা, কখনো তুমি নববধুর মতন লাজুক।” তারপর আমাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্যে বলতো “শুধু তোমার নামটাই যা একটু মফস্বল ঘেঁষা”।
সেই পার্থকেই যদি আমি ওর মধ্যে দেখতে পেলাম তাহলে আমার ওর জন্যে প্রেম না জেগে শরীর কেন জাগছে?
যদি পার্থর মতন আদল না থাকতো ছেলেটার তাহলে কি এত ভাবতাম? নাকি আমিও আমার প্রাক্তন বাড়িওয়ালির মতন শরীরের মধ্যে ঘুম পাড়িয়ে রাখা আগ্নেয়গিরিটার লাভা নির্গত করার মাধ্যম খুজছি? যদি বা খুজি, সেটা ওর মাধ্যম দিয়েই কেন? কেউ যদি আমাকে জবাব দিতে পারতো। সাইকোলজিস্টরা শুনেছি এই ব্যাপারে সাহাজ্য করতে পারে। কিন্তু আমার তো সেরকম জানাশোনা নেই। এ ধরনের পেশাদাররা সাধারন হাস্পাতাল বা নার্সিং হোমে বসে বলে আমার মনে হয়না। আর রিয়াকে গোপন করে কিভাবেই বা আমি এতটা সময় বের করবো। আমার দিনজাপন তো নিয়মের মধ্যে বাঁধা পরে গেছে, একদিন সেই নিয়ম ভাঙ্গতে গেলে তো অনেক কিছু ওলোটপালোট হয়ে যাবে। কি অজুহাত দেবো, দৈনন্দিন জীবন থেকে এইটুকু সময় বের করার জন্যে? তাছারা হোমডেলিভারির ব্যাপারটাও তো এমন যে কোন ছুটিছাটা নেই। সপ্তাহের প্রথম দু একদিন বাদ দিলে বাকি দিনগুলো তো প্রচন্ড চাপ থাকে, সেই জন্যেই তো আরো বেশি করে রাহুলকে এর মধ্যে নিযুক্ত করা। তারপর রিয়ার কাছে তো আমার কিছু গোপন থাকেনা। ওকে কি বলবো, কেন আমি মনস্ত্বাত্তিকের সাহায্য চাইছি? ওতো আমাকে একা ছারবে না। তাহলে?
তাহলে কি ওর কথা না ভেবে অন্য কারোর, হয়তো সিনেমার কোন নায়কের কথা যদি চিন্তা করি। ছোটবেলায় এরকম কিছু বই পরেছি, দুঃখ ভুলতে আরো বড় দুঃখের দরকার হয়, কাউকে ভুলতে অন্য কারোর কথা মনে আনা দরকার, খারাপ সময়ে ভালোকিছুর স্মৃতি মনে আনো।
দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজে, ঢেউয়ের মতন আছড়ে পড়া এই চিন্তাতে ছেদ পরলো। বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেলো। য়ামি জানি এটা সুবলা না বা রিয়া না। এটা রাহুল। কারন ও বেল বাজায় না, দরজা নক করে। বাকি দুজন সবসময় বেল বাজায়।
দরজা খুলে সঙ্কোচে পরে গেলাম। রাহুলের হাতে ছাদে মেলা কাপর চোপর গুলো।
হাল্কা হেসে বললো ‘বুঝতেই পেরেছি যে ভুলে গেছেন, এত রাতে আবার ছাদে উঠবেন কেন, আমি তো আসতামই। তাই নিয়ে এলাম। লজ্জায় মাটিতে মিশে যাই প্রায়। ওর মধ্যে আমার শাড়ী, নাইটি, শায়া, এবং মেলবোনা মেলবোনা করেও দুটো ব্লাউজ মেলেছিলাম। সাথে রিয়ার পরনের নাইটিও রয়েছে। ইস। কি যাচ্ছেতাই ব্যাপার।
এখানেই শেষ না, এরপর যা হোলো সেটাতে প্রায় বলতে হোলো “হে ধরণি দ্বিধা হও”। সসব্যাস্ত ওর হাত থেকে কাপরগুলো নিতে গিয়ে ওর ঘড়ির দম দেওয়ার অংশে আমার একটা ব্লাউজের উঠে থাকা সুতো আটকে গেলো। সে আবার যেমন তেমন করে নয়, আমাকেও হাত লাগাতে হোলো সেটা ছাড়িয়ে নিতে।
লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারছিনা, তবু কোনরকমে বললাম ‘সুবলাকে বলেছিলাম তুলে নিতে, এত ঢিলে যে কি বলবো...।’ বাধ্য হয়ে, নিজের লজ্জা ঢাকতে, মিথ্যে কথা বললাম। এরকম বেমালুম ভুলে গেলাম শুকনো কাপড় তুলতে তার জন্যে কি লজ্জাতেই না পড়তে হোলো।
কোনরকমে পরিচয় পর্বটা মিটিয়ে ফিরে এলাম দুজনে। সারারাস্তা চুপ করেই রইলাম। রাহুলও। আজকে একসাথে অনেক ক্যারিয়ার রিক্সাই তুলেছি, আর আমরা হেটে হেটে গেছি। এতে পাশে বসার লজ্জাটা এড়ানো গেলো। আর সময় লাগলেও একেবারে সব কাজ সেরে ফেলা গেলো।
যখন ফিরলাম তখন রিয়া ফিরে এসেছে। ওকে দেখে আমি যেন হাতের চাঁদ পেলাম। এতক্ষন রাহুলের সাথে থাকতে খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো, বিশেষ করে আজকের ঘটনাপ্রবাহের পরে।
আমাদের দেখে রিয়া হই হই করে উঠলো। যেন বাচ্চা মেয়ে। ইদানিং ওর মধ্যে এটা দেখা যাচ্ছে, সেটা রাহুলকে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার জন্যেই।
আমি ওদের পাশ কাটিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলাম। সুবলা বসে বসে ঝিমোচ্ছে, আমাকে দেখে ঘুম কাটানোর প্রবল চেষ্টা করছে বুঝতে পারলাম। আমি ওকে সবার জন্যে চা করতে বললাম। বুঝলাম এতে খুসিই হোলো। ওর নিজেরও চা খাওয়ার অভ্যেস আছে।
বাথরুমে গিয়ে বাইরের কাপড়চোপড় চেঞ্জ করে নিলাম। ভিতর থেকে রিয়ার গলা ভেসে আসছে। আয়নার সামনে কিছুক্ষন দাড়ালাম। যেন প্রতিবিম্বটার মধ্যে বয়েসের রেখা খুজতে চাইছি। রিয়া আর আমাকে পাশাপাশি দাড় করালে তফাত কি হবে। নিরপেক্ষ ভাবে দেখতে গেলে, সেরকম কিছুই না, শুধু বয়েসের সাথে বেড়ে যাওয়া ব্যক্তিত্ব, সামান্য একস্তর চর্বি আর বিউটি পার্লারে না যাওয়া।
অতি সংবেদনশীল বিবেক যেন বলে উঠলো ‘এবার কি মেয়ের সাথে প্রতিযোগিতা?’ লজ্জা লজ্জা। দ্রুত বেরিয়ে এলাম।
ওরা কথা বলছে, আমি টিভি চালিয়ে সেদিকে মন দেওয়ার চেষ্টা করছি, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছি। রিয়া প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হইহই করছে মনে হয়, নাহয় আজ ও সাউথ সিটি মলে গিয়ে কয়েকটা ড্রেস কিনেছে পুজোর জন্যে, কিন্তু এত দেখানোর কি আছে? আর সবসময় তো আমাকেই দেখায় আগে। ভাবছি আর টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে যে মনের হিংসেতে ভিতর থেকে ধোয়া বেরোচ্ছে। আমি নিজের মনেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। মন টিভির দিকে নেই, রিয়া আর রাহুলের কথার দিকেও না। মন ভেবে চলেছে, সেই ছবিটির কথা।
এরই মাঝে রিয়া আমাকে ডেকে জানালো যে এরপর থেকে আর দোকানে যেতে হবেনা, রাহুল গিয়ে দোকানে কথা বলে এসেছে, ও গিয়ে লিস্ট দিয়ে আসবে আর দোকানের লোক এসে মাল দিয়ে যাবে। পনেরদিন পরে পেমেন্ট দিলে হবে, তাও মাল ঠিকঠাক থাকলে।
বুঝলাম ছেলে ভালোই দরদস্তুর করেছে। অসুবিধে না হলেও আমার ইচ্ছে ছিলো যে কিছুদিন যদি বাকি পাওয়া যেত। সেটা ঘটে যাওয়ায়, মনটা ভালোই লাগছে।
আমার কেমন যেন লাগে রাতের বেলা যখন রিয়া আর রাহুল একসাথেই খেতে বসে। কেমন যেন মনে হয় মেয়ে আর মেয়ের জামাই বসে খাচ্ছে, সেটা ভাবতে চাইলেই মন যেন কেমন বিদ্রোহ করে। আমি জানিনা, আমি এটা মেনে নিয়েও কেন কিন্তু কিন্তু করি, ভাবি রাহুলের ওপর অধিকার আমার আগে। বুঝিনা, ওরা আমার সন্মতি নিচ্ছেনা বলে, বা আমাকে অভিভাবকের মর্যাদা দিচ্ছেনা বলে কি এটা হচ্ছে? সত্যি আমি নিজেই নিজের মন পরতে পারছিনা। আর এটাই আমার অস্বস্তির বড় কারন। আমি নিজে জানিনা আমি নিজে কি চাই। যদি সেই উত্তরটা পেতাম, তাহলে হয়তো আমার এই চঞ্চলতা থাকতো না।
অমিয়দার বাড়িতে গিয়ে অমিয়দাকে দেখে একদম ভালো লাগলো। মুখে যন্ত্রনা লুকানোর হাসি। অপরিছন্ন একটা স্যাঁতস্যাতে ঘর, বিছানার চাদরে চিমটী কাটলে মনে হয় ময়লা উঠবে। ঘরে পোড়া বিড়ি আর সিগেরেটের উৎকট গন্ধ। জীবনে মেয়েমানুষ না থাকলে পুরুষেরা যেন নরক যাপন করে।
আরে দূর গ্যাস ফর্ম করে মাথা ঘুরে গেছিলো এই বলে হাল্কা করতে চাইছে ব্যাপারটা। ওর ভাইয়ের বৌ আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে। খুব কথা শোনাতে ইচ্ছে করছে। ভাসুর ব্যবসার ভাগ নিলে চাকর বাকর রেখে নিজের যত্ন করাতে পারতো, সেখানে তোদের তো দায়িত্ব উনাকে দেখা। বুঝলাম বাউণ্ডুলে, কিন্তু ঘরের এরকম অবস্থা কেন? ঘর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে সেখানে অসুস্থ লোকও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। রোদ ঝর বৃষ্টী যাকে থামাতে পারেনা সে বাছানায় পরে রয়েছে মানে তো ভালোই কিছু বেধেছে। মুখে না বললেও আমার হাবভাবে সে বুঝে গেলো। সে তার সাফাইয়ে বললো, ‘ছেলেমেয়ে সামলে উনাকে কি দেখবো, উনি তো আর বাচ্চা ছেলে না যে সব বলে বলে করাতে হবে? আর মুখ ফুটে না বললে আমরা তো আর অন্তর্যামি নোই যে সব বুঝে নেবো। দেখি বিকেলে চৌধুরি মেডিকেলে নাম লিখিয়ে দেখিয়ে নিয়ে আসবো।’
বুঝলাম এদের সব দায়সারা ব্যাপার। আমি তাও উপযাচক হয়ে বললাম ‘দাদা, আমি ঘর পোড়া গরু। তাই অল্পে ভয় পাই, ভালো কোন ডাক্তার দেখিয়ে নিন। দরকার হলে আমি খোঁজ এনে দেবো।’ ওর ভাইয়ের বৌয়ের দিকে ঘুরে বললাম ‘তুমি কিছু মনে কোরোনা প্লিজ, আমি নাক গলাতে চাইনা। তবু আসিম ডাক্তারের তো সেরকম সুনাম নেই, তারওপর বুকের ব্যাথা, ভালো করে দেখিয়ে নিলে ভালো হয়’
‘হ্যাঁ ওর ভাই ও তো বলছিলো যাদবপুরের হসপিটালের আউটডোরে ভালো ভালো ডাক্তার আছে...’
দেরি হয়ে গেছে, বাড়িতে এসে ঝটপট কাজ সারতে সারতে সারাদিনের প্ল্যানিং সেরে নিলাম। একবার ছাদে যেতে হবে, কাঁচা জামাকাপর আজ বারান্দায় মেললে আর শোকাবে না। আজকে সাবধানেই ছাদে গেলাম। অনেক কাজের চাপ আছে। আবার যেন বিপত্তি না ঘটে।
রাহুল কোথাও যাওয়ার কথা। সুতরাং নিশ্চিন্তেই ছাদে গেলাম। নিজের মনকে শক্ত করছি, এভাবে দুর্বল হওয়ার কোন মানে হয়না। শরীরের ক্ষিদে স্বাভাবিক, কিন্তু ভাদ্র মাসের কুকুর হয়ে ঘুরে বেরানোর কোন মানে হয় না।
কি ব্যাপার রাহুলের ঘরে কি ফ্যান চলছে? এই হচ্ছে। পুরুষমানুষ, সাংসারিক কোন দিকে মন নেই। একটু রাগই হোলো। বাপু আলো পাখা এগুলো বন্ধ করে যেতে পারিস না?
কাপরগুলো মেলে দিতে দিতে ভাবলাম, নিচে গিয়ে মেইন সুইচ অফ করে দেবো।ওর ঘরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কিছু একটাতে চোখ আটকে গেলো। ফ্যানের হাওয়ায় ওড়া পরদার ফাঁক দিয়ে একটা বিড়াট সাইজের পেইন্টিং দেখা যাচ্ছে। আমি স্থির হয়ে চোখ রাখলাম, নিজের মনের ভুল কিনা সেটা বুঝে নেওয়ার জন্যে।
গলা শুকিয়ে গেলো আমার। পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি। এক উলঙ্গ নাড়ির চিত্র। প্রমান সাইজের সেই পেন্টিং, আসল মানব দেহের আকার। বাচ্চা ছেলেও দেখলে বুঝতে পারবে শায়িত সেই রমনি আর কেউ না, সেটা আমি। একটা কাপর দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ফ্যানের হাওয়ায় সেই কাপড়ের একদিক খসে পরে পেইন্টিংটা কে ছবিতে শায়িত আমার মতনই উলঙ্গ করে দিয়েছে। মিশ্র প্রতিকৃয়া হচ্ছে মনে। ভাবছি এত বড় সাহস? আবার ভাবছি নগ্ন হলেও খুব সুন্দর এঁকেছে তো, কিন্তু আমাকে উলঙ্গ এঁকেছে কেন। ওও কি আমাকে মনে মনে এইভাবে কামনা করে? সেইজন্যেই কি আমার সাথে ওর যা বাক্যালাপ সেগুলো শুধুমাত্র আমার সাথেই, রিয়ার সামনে সেইগুলোর রেশটুকুও ধরা পরেনা? ও কেন আমাকে এইভাবে কামনা করে, সাধারন ভাবে তো কেউ আমার চালচলন পোষাক আশাক দেখে সেটা করবেনা। কারন আমি খুব সাধারন ভাবে থাকি। নিজের যৌন আবেদন আমি অতি সাধারন ঘরোয়া কাপরচোপর দিয়ে লুকিয়ে রাখি। মনে মনে আমি যাই ভাবিনা কেন সেগুলোর তো কোন বহিঃপ্রকাশ করিনা। তাহলে ও কেন আমার এইরকম ছবি আঁকলো। আমার খোলা চুল সামনে এসে পরে একটা স্তন ঢাকা, একটা উন্মুক্ত, পাশ ফিরে শুয়ে আছি আমি মেলে রাখা একটা হাতের ওপর মাথার ভর দিয়ে, মুখে এক বিষন্নতা, চোখে চরম উদাসিনতা। ভাড়ি একটা জঙ্ঘা আরেকটার ওপোর চেপে রয়েছে তার জন্যে যৌনাঙ্গ ঢাকা পরে গেছে। কিন্তু নাভির তলা থেকে পেটের একটা ভাজের সমান্তরালরেখায় শুরু হয়ে যৌনকেশগুলো দুপায়ের মাঝে গিয়ে লুকিয়ে ত্রিভুজাকৃতি ধারন করেছে। পায়ের কাছে একটা শাড়ি লুটিয়ে আছে যেটা দেখে আমার সেইদিন রাতে পড়া শাড়ীটাই মনে হয়। বিসদৃশ্যের মধ্যে রয়েছে, কোমোরে আর পায়ে দুটো অলঙ্কার, যেদুটো আমার যৌনতাকে আরো প্রকট করে তুলেছে। যদিও আসল আমি কোনদিনই কোমোরে বিছা বা পায়ে নুপুর পরিনি।
ছেলেটা কি চাইছে? ও কি আমাকে শারীরিক ভাবে কামনা করে? নাকি এটা সত্যিই শিল্পির মনের প্রতিচ্ছবি। শুনেছি চিত্রশিল্পিরা নাড়িদের নগ্নতাকে অবলম্বন করে অনেক কিছু বলতে পারে। ওদের পছন্দের বিষয় এটা। ছবিতে আমার উদাস ভাব কি বোঝাতে চাইছে? কালকে রাতের স্বপ্নে বলা সেই কথাগুলো কি এইরকমই নয় কি, সেই খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসার কথাগুলো? খাঁচা মানে কি আমার এই বৈধব্য? কিন্তু সেটা তো স্বপ্ন, তাও ভোরের দিকের নয় যে কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে মেনে নিতাম। কি হতে চলেছে। আমার কি করনিয়? ওর সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবো নাকি অবজ্ঞা করে স্বাভাবিক থাকবো।
সারাদিন মাথার মধ্যে এই চিন্তা চলেছে। নিচের মেইন সুইচ আর অফ করিনি। তাহলে ও বুঝে যাবে যে আমি ফ্যান চলছে সেটা দেখে ফেলেছি, তার সাথে ছবিটাও। সেটা ওর মনে কৌতুহল বা আগ্রহের সৃষ্টি করতে পারে।
চেষ্টা করছি স্বাভাবিক থাকার। সেতা মাঝে মাঝে অতি স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। এত কথা আমি বলিনা যা আজ সুবলার সাথে বলছি। ভয় লাগছে ও যদি ছাদে গিয়ে দেখে ফেলে। ওকে ব্যাস্ত রাখা, নজরে রাখাটাও একটা কাজ হয়ে দাড়ালো। মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত লাগছে। রাহুলের এই কাণ্ডজ্ঞাণহীণ কাজের জন্যে।
ভিষন অস্বস্তি হচ্ছে। নিজেরই এরকম একটা ছবি দেখে, সেটাও কেউ যত্ন করে সময় নিয়ে এঁকেছে ভেবে।মাঝে মাঝে ভাবছি, কোন অধিকারে ও এটা করলো, আমিতো পথচলতি কারো ফটোও তার অনুমতি ছাড়া তুলতে পারিনা। কিন্তু মনের কোন গভিরে সামান্য হলে ঢেউ তুলছে অবৈধ এক কামেচ্ছা। নিজের বিবেচনা দিয়ে অনুভব করতে পারছি যে সেটা সমাজ অনুমোদিত না, সেটা অশ্লীল। তাই প্রানপনে চেপে রাখার চেষ্টা করছি, যাতে সেই ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে না দেয়, সেই ঢেউ নিজে ভেসে না ওঠে, এক বিধবার আচরনের মাধ্যমে। নিজেই নিজের মনে মনে ভাবছি, যদি সমাজ না থাকতো, যদি রিয়া না থাকতো, যদি এমন হোতো, কেউ কোনদিন জানতে পারবেনা এক অল্পবয়েসি ছোকরার সাথে আমি সম্ভোগে লিপ্ত, যদি এমন হোত যে এই আমিই এমন একটা যায়গায় আছি সেখানে দ্বিতীয় প্রান একমাত্র রাহুল, তাহলে কি মনে এত সঙ্কোচ এতো দ্বন্ধ থাকতো? তাহলে কি আমি এগোতাম? উত্তর খুঁজে পাচ্ছিনা। আসলে আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা আমি কি চাই।
রিয়ার ফিরতে আজ রাত হবে। সপ্তাহের এইদিনটা ওর কলেজের পরেও প্রফেশরের কাছে যেতে হয়। ওরা তিন বন্ধু একসাথে পরে। রাহুল ইতিমধ্যে ফিরে এসেছে। আজকে ওকে নিয়ে আমার ডেলিভারির যায়গা দেখিয়ে দেওয়ার কথা। এরপর থেকে ও ডেলিভারি করবে। সেটাই চুক্তি হয়েছে।
ফ্যানটা মাথার ওপর বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। সাথে আমারও মাথা ঘুরছে। ওই ছেলেটার সাথে বেরোবো ভেবে। মনের জোর পাচ্ছিনা। স্বাভাবিক থাকতে পারবো কিনা সেই আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিনা। হয় রাগে ফেটে পরবো নাহলে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে, একসাথে কিছুক্ষন থাকলে। স্বাভাবিক থাকবো কি করে? কথা বললেই তো ছবিটার প্রসঙ্গ উঠবে। তাহলে?
নাহঃ সুবলাকে পাঠিয়ে দেবো। ও নিশ্চয় না করবেনা। আর আমি পেশাগত ভাবে দুজনেরই মালকিন, সামান্য দৃঢ়তা দেখাতে পারলে আজকের দিনটা অন্ততঃ সময় পাওয়া যাবে। তবে ছেলেটা যে এগিয়ে খেলছে সেটা নিঃসন্দেহ। তবে ও কি ইচ্ছে করে ফ্যান চালিয়ে গেছিলো? তা কি করে? আমিতো ছাদে যাইনা সাধারনত।
সাতটা নাগাদ রাহুল ফিরেছে সেতা বোঝা গেলো। ওপরে কিছু সরানোর আওয়াজ হোলো। আমার বুকের ভিতর কেমন যেন ধুকপুক করছে। প্রচন্ড ভাবে চেষটা করছি, নিজের চিন্তা নিয়ন্ত্রন করতে। কিন্তু শরীরের ফাটলটা অন্য কথা বলছে। একটা অন্য পদ্ধতির কথাও মাথায় আসছে, সেটাও অবান্তর চিন্তা,কিন্তু অসম্ভব নয়। যদি অন্য কোন পুরুষের সাথে নিজেকে কল্পনা করি। পার্থর সাথে শারীরিক ভাবে আমি অন্ত্যন্ত সুখি ছিলাম। কোনদিন অভিযোগ করতে পারিনি, বরঞ্চ ওর অভিযোগ করার অনেক কারন থাকতো। কিন্তু এই কদিন তো পার্থ আর আসছেনা আমার মনে। আমার এমনই পদস্খলন হয়েছে। আমি সত্যি খুব খারাপ হয়ে গেছি। ওপরে ওপরে ভালো তো সবাই বলে, নিজের কাছে নিজে পরিস্কার থাকতে না পারলে আর কি।
কিন্তু আমি পারছি কই। যাদবপুরে যে ফ্ল্যাটে থাকতাম, তার মালকিন ছিলো এক ডিভোর্সি মহিলা, ওই ফ্ল্যাটেই একটা বিশাল ফ্ল্যাট নিয়ে থাকেন। সেটাও বিচ্ছেদের ক্ষতিপুরন হিসেবে পেয়েছেন। ছেলে দক্ষিন চব্বিশ পরগনার কোন এক ইন্টারন্যাশানাল বোর্ডিং কলেজে পরে। সেখানেই থাকে। পার্থর মুখে শুনেছিলাম উনি নাকি নিজের দেওরের ছেলের সাথে সেক্স করেন। সেই ছেলের বয়েস কলেজ পরার মতনই। সবাই দেখে ছেলেটা ওনার ফ্ল্যাটে আসে। উনি কে কি ভাবলো সেটা পাত্তাই দেন না। এমনি মিষ্টভাষী, তারওপর সুন্দরি, চল্লিশোর্ধ হলেও চর্চিত শরীর আর ত্বক দেখলে মনে হয়না ৩৫ পেরিয়েছেন। আমিও বহুবার ছেলেটাকে আসতে দেখেছি উনার ফ্ল্যাটে। পার্থর ওই কথা শুনে আমি তর্ক জুড়েছিলাম যে কে দেখেছে উনাকে ঐ ছেলেটার সাথে সেক্স করতে? কেউ না। তাহলে লকে এরকম রটায় কেন? কালকে আমার ঘরেও যদি আমার ছেলের বন্ধু কেউ আসে তাহলে আমাকে নিয়েও এই আলোচনা হবে? উত্তরে পার্থ বলেছিলো, কানাঘুষা শোনা যায়, তারপর পার্থ নিজের চোখে ছেলেটাকে ওষুধের দোকান থেকে কণ্ডোম কিনতে দেখেছে। আমি সেই যুক্তি মানতে পারিনি, বলেছিলাম ‘ওর মেয়েবন্ধুর সাথেও তো হতে পারে, হয়তো সেই জন্যেই কিনেছে’ পার্থর সন্দেহ হয়েছিলো ও খেয়াল করেছিলো যে ছেলেটা তারপরেই আমাদের ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলো। আমার মন মানেনি। এসব পর্ন ছবিতে দেখা যায় বলে মানতে চাইনি যে সত্যি জীবনে এরকম ঘটতে পারে। মধ্যবিত্ত কৌতুহলেই পার্থ খেয়াল করেছিলো যে একদিন ছেলেটা যখন বেরিয়ে যাচ্ছে তখন ওই মহিলা দরজায় এসে দারিয়েছিলো, ঘরের ভিতর থেকে ভুরভুর করে মদ আর সিগেরেটের গন্ধ বেরোচ্ছে। মহিলাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে উনিও ড্রিঙ্ক করেছেন আর এলোমেলো চুল, মুখের ওপর ঘামের প্রভাব আর ম্লান হয়ে যাওয়া মেকাপ একমাত্র সেক্স করলেই সম্ভব হতে পারে। ওকে দেখে স্বাভাবিক কথা বলছিলো, ও নিচে নেমে যেতেই গলার আওয়াজ নিচু হয়ে যায় ওদের, কিছু ফিস্ফিস করে বলে নিচ্ছিলো ওরা। এতেই বোঝা যায় ওদের সম্পর্ক স্বাভাবিক নয়। আমি তাও মানতে চাইনি। তবে মাঝে মাঝেই পার্থ ওই কথা তুলতো আর ছি ছি করতো। মাঝে মাঝে আমাকে রাগানোর জন্যে বলতো ‘ফ্ল্যাটের লোকেদের মধ্যেই তো বেছে নিতে পারতো।’
ভাবছি উনি যদি সত্যিই এরকম এক অসম সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন তাহলে কি উনি নিজের কাছে পরিষ্কার? যা করছেন সেটার সামাজিক বিক্রিয়ার দহনও সহ্য করার ক্ষমতা আছে কি? নাকি উনি কামনার আগুন নেভানোর জন্য এই অস্বাভাবিক সম্পর্ক অবলম্বন করার দরুন মনে মনে দগ্ধে মরছেন শুধু অভ্যেসের বশে অংশগ্রহন করছেন? বাইরের এই খোলামেলা মিশুকে আবরন দিয়ে মনের ক্ষত ঢেকে রেখেছেন। এই বুক ফুলিয়ে চলা, সমালোচকদের আওয়াজ স্তিমিত করার কৌশল। কিন্তু এমনও তো হতে পারে উনি নিরুপায়, বাধ্য হয়ে এই খেলায় মেতেছেন, ছেলেটাই হয়তো ছলেবলে উনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে, উনাকে এই পাপের আগুনে ঠেলে দিয়েছে। হতেই পারে। প্রশ্ন জাগে মনে, আগুন কোনদিকে আগে লেগেছিলো? ছেলেটা আগে পা বাড়িয়েছিলো না ওই মহিলা? নাকি দুর্ঘটনার মতন ঘটে গেছিলো; তারপর নিজেদের শরীরের তাগিদে সেটা নিয়ম হয়ে গেছে। উনি কি বুঝতে পারছেন না এর পরিনতি কি হবে? একদিন জীবন চক্রের নিয়ম অনুযায়ি উনি আর কিছু দিতে পারবেন না ছেলেটাকে তখন কি হবে? তখন কি ছেলেটা ওর জন্যে সময় দেবে? কঠীন প্রশ্ন। এর উত্তর অভিজ্ঞতা ছাড়া হতে পারেনা। কোন কেতাবি বিদ্যে এর উত্তর দিতে পারবেনা।
যদি আমিও এইরকম একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পরি তাহলে সেটা কতদিন গোপন থাকবে। চারিদিকে কি এরকম ফিসফিস হবেনা? সেই ফিসফিস কি রিয়ার কানেও আসবেনা?
এতই যেখানে বিপদ তাহলে আমি ভাবছি কেন এই পথে। হতাশ লাগছে আমার, শুধু মাত্র ছেলেটা পার্থর মতন দেখতে বলে আমি এত সাতপাঁচ ভাবছি। সত্যিই কি ভাবছি? কাল রাতের স্বপ্ন তো তাই বলছে। আমি জানি ওকে দেখার পর থেকে আমার শরীরে একটা অন্যরকম বিক্রিয়া চলছে। ঘুমিয়ে থাকা যৌনাঙ্গগুলো বিদ্রোহ করছে। পার্থ চলে যাওয়ার পরে এই প্রথম আমি স্বমেহন করলাম, এই প্রথম আমি যৌন সম্পর্কিত স্বপ্ন দেখলাম। কিন্তু আমার সচেতন মনে আমি ওর সাথে সম্ভোগে লিপ্ত; সেই কথা ভাবিনি। কিন্তু এটাও অস্বিকার করতে পারবো না মাঝে মাঝে অতল মনের গহ্বর থেকে সেটা বুদবুদির মতন উঠে আসতে চায় কিন্তু মনে তার প্রভাব পরার আগেই সেটা ফেটে যায়। অবাক হয়ে যাচ্ছি যে আমি তো কোনদিন এরকম শরীর কেন্দ্রিক ছিলাম না। কামনার আগুন আমার মধ্যেও জ্বলতো, কিন্তু সেটা মৃদু দৃষ্টিনন্দন স্নিগ্ধ আলোর ছটা দিতো, কখনোই সেই আগুনে চারপাশ ছারখার করার মতন তেজ থাকতোনা। সেই আগুনের একজনই প্রভু ছিলো। তার প্রভাবেই সেটা জ্বলতো, তার পরশেই সেটা নিভতো। পার্থ বলতো “ভগবান তোমাকে অনেক সময় আর ধৈর্য্য নিয়ে তিলে তিলে গড়েছে, তুমি একসাথে অনেককিছুর সঠিক মিক্সচার, রুপ, যৌবন, স্বাস্থ্য, কাম সব কিছু একদম সঠিক মাপে রয়েছে তোমার মধ্যে। তুমি একদিক দিয়ে ম্যাডোনার মতন উচ্ছ্বল যৌবনা একদিকে তুমি কালিদাসের লেখা শকুন্তলার মতন ধিরস্থির। কখনো তুমি উগ্র লাস্যময়ি শয্যাসঙ্গিনী, কখনো তুমি নতুন প্রেমিকা, কখনো তুমি নববধুর মতন লাজুক।” তারপর আমাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্যে বলতো “শুধু তোমার নামটাই যা একটু মফস্বল ঘেঁষা”।
সেই পার্থকেই যদি আমি ওর মধ্যে দেখতে পেলাম তাহলে আমার ওর জন্যে প্রেম না জেগে শরীর কেন জাগছে?
যদি পার্থর মতন আদল না থাকতো ছেলেটার তাহলে কি এত ভাবতাম? নাকি আমিও আমার প্রাক্তন বাড়িওয়ালির মতন শরীরের মধ্যে ঘুম পাড়িয়ে রাখা আগ্নেয়গিরিটার লাভা নির্গত করার মাধ্যম খুজছি? যদি বা খুজি, সেটা ওর মাধ্যম দিয়েই কেন? কেউ যদি আমাকে জবাব দিতে পারতো। সাইকোলজিস্টরা শুনেছি এই ব্যাপারে সাহাজ্য করতে পারে। কিন্তু আমার তো সেরকম জানাশোনা নেই। এ ধরনের পেশাদাররা সাধারন হাস্পাতাল বা নার্সিং হোমে বসে বলে আমার মনে হয়না। আর রিয়াকে গোপন করে কিভাবেই বা আমি এতটা সময় বের করবো। আমার দিনজাপন তো নিয়মের মধ্যে বাঁধা পরে গেছে, একদিন সেই নিয়ম ভাঙ্গতে গেলে তো অনেক কিছু ওলোটপালোট হয়ে যাবে। কি অজুহাত দেবো, দৈনন্দিন জীবন থেকে এইটুকু সময় বের করার জন্যে? তাছারা হোমডেলিভারির ব্যাপারটাও তো এমন যে কোন ছুটিছাটা নেই। সপ্তাহের প্রথম দু একদিন বাদ দিলে বাকি দিনগুলো তো প্রচন্ড চাপ থাকে, সেই জন্যেই তো আরো বেশি করে রাহুলকে এর মধ্যে নিযুক্ত করা। তারপর রিয়ার কাছে তো আমার কিছু গোপন থাকেনা। ওকে কি বলবো, কেন আমি মনস্ত্বাত্তিকের সাহায্য চাইছি? ওতো আমাকে একা ছারবে না। তাহলে?
তাহলে কি ওর কথা না ভেবে অন্য কারোর, হয়তো সিনেমার কোন নায়কের কথা যদি চিন্তা করি। ছোটবেলায় এরকম কিছু বই পরেছি, দুঃখ ভুলতে আরো বড় দুঃখের দরকার হয়, কাউকে ভুলতে অন্য কারোর কথা মনে আনা দরকার, খারাপ সময়ে ভালোকিছুর স্মৃতি মনে আনো।
দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজে, ঢেউয়ের মতন আছড়ে পড়া এই চিন্তাতে ছেদ পরলো। বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গেলো। য়ামি জানি এটা সুবলা না বা রিয়া না। এটা রাহুল। কারন ও বেল বাজায় না, দরজা নক করে। বাকি দুজন সবসময় বেল বাজায়।
দরজা খুলে সঙ্কোচে পরে গেলাম। রাহুলের হাতে ছাদে মেলা কাপর চোপর গুলো।
হাল্কা হেসে বললো ‘বুঝতেই পেরেছি যে ভুলে গেছেন, এত রাতে আবার ছাদে উঠবেন কেন, আমি তো আসতামই। তাই নিয়ে এলাম। লজ্জায় মাটিতে মিশে যাই প্রায়। ওর মধ্যে আমার শাড়ী, নাইটি, শায়া, এবং মেলবোনা মেলবোনা করেও দুটো ব্লাউজ মেলেছিলাম। সাথে রিয়ার পরনের নাইটিও রয়েছে। ইস। কি যাচ্ছেতাই ব্যাপার।
এখানেই শেষ না, এরপর যা হোলো সেটাতে প্রায় বলতে হোলো “হে ধরণি দ্বিধা হও”। সসব্যাস্ত ওর হাত থেকে কাপরগুলো নিতে গিয়ে ওর ঘড়ির দম দেওয়ার অংশে আমার একটা ব্লাউজের উঠে থাকা সুতো আটকে গেলো। সে আবার যেমন তেমন করে নয়, আমাকেও হাত লাগাতে হোলো সেটা ছাড়িয়ে নিতে।
লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারছিনা, তবু কোনরকমে বললাম ‘সুবলাকে বলেছিলাম তুলে নিতে, এত ঢিলে যে কি বলবো...।’ বাধ্য হয়ে, নিজের লজ্জা ঢাকতে, মিথ্যে কথা বললাম। এরকম বেমালুম ভুলে গেলাম শুকনো কাপড় তুলতে তার জন্যে কি লজ্জাতেই না পড়তে হোলো।
কোনরকমে পরিচয় পর্বটা মিটিয়ে ফিরে এলাম দুজনে। সারারাস্তা চুপ করেই রইলাম। রাহুলও। আজকে একসাথে অনেক ক্যারিয়ার রিক্সাই তুলেছি, আর আমরা হেটে হেটে গেছি। এতে পাশে বসার লজ্জাটা এড়ানো গেলো। আর সময় লাগলেও একেবারে সব কাজ সেরে ফেলা গেলো।
যখন ফিরলাম তখন রিয়া ফিরে এসেছে। ওকে দেখে আমি যেন হাতের চাঁদ পেলাম। এতক্ষন রাহুলের সাথে থাকতে খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো, বিশেষ করে আজকের ঘটনাপ্রবাহের পরে।
আমাদের দেখে রিয়া হই হই করে উঠলো। যেন বাচ্চা মেয়ে। ইদানিং ওর মধ্যে এটা দেখা যাচ্ছে, সেটা রাহুলকে দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার জন্যেই।
আমি ওদের পাশ কাটিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলাম। সুবলা বসে বসে ঝিমোচ্ছে, আমাকে দেখে ঘুম কাটানোর প্রবল চেষ্টা করছে বুঝতে পারলাম। আমি ওকে সবার জন্যে চা করতে বললাম। বুঝলাম এতে খুসিই হোলো। ওর নিজেরও চা খাওয়ার অভ্যেস আছে।
বাথরুমে গিয়ে বাইরের কাপড়চোপড় চেঞ্জ করে নিলাম। ভিতর থেকে রিয়ার গলা ভেসে আসছে। আয়নার সামনে কিছুক্ষন দাড়ালাম। যেন প্রতিবিম্বটার মধ্যে বয়েসের রেখা খুজতে চাইছি। রিয়া আর আমাকে পাশাপাশি দাড় করালে তফাত কি হবে। নিরপেক্ষ ভাবে দেখতে গেলে, সেরকম কিছুই না, শুধু বয়েসের সাথে বেড়ে যাওয়া ব্যক্তিত্ব, সামান্য একস্তর চর্বি আর বিউটি পার্লারে না যাওয়া।
অতি সংবেদনশীল বিবেক যেন বলে উঠলো ‘এবার কি মেয়ের সাথে প্রতিযোগিতা?’ লজ্জা লজ্জা। দ্রুত বেরিয়ে এলাম।
ওরা কথা বলছে, আমি টিভি চালিয়ে সেদিকে মন দেওয়ার চেষ্টা করছি, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছি। রিয়া প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হইহই করছে মনে হয়, নাহয় আজ ও সাউথ সিটি মলে গিয়ে কয়েকটা ড্রেস কিনেছে পুজোর জন্যে, কিন্তু এত দেখানোর কি আছে? আর সবসময় তো আমাকেই দেখায় আগে। ভাবছি আর টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে যে মনের হিংসেতে ভিতর থেকে ধোয়া বেরোচ্ছে। আমি নিজের মনেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। মন টিভির দিকে নেই, রিয়া আর রাহুলের কথার দিকেও না। মন ভেবে চলেছে, সেই ছবিটির কথা।
এরই মাঝে রিয়া আমাকে ডেকে জানালো যে এরপর থেকে আর দোকানে যেতে হবেনা, রাহুল গিয়ে দোকানে কথা বলে এসেছে, ও গিয়ে লিস্ট দিয়ে আসবে আর দোকানের লোক এসে মাল দিয়ে যাবে। পনেরদিন পরে পেমেন্ট দিলে হবে, তাও মাল ঠিকঠাক থাকলে।
বুঝলাম ছেলে ভালোই দরদস্তুর করেছে। অসুবিধে না হলেও আমার ইচ্ছে ছিলো যে কিছুদিন যদি বাকি পাওয়া যেত। সেটা ঘটে যাওয়ায়, মনটা ভালোই লাগছে।
আমার কেমন যেন লাগে রাতের বেলা যখন রিয়া আর রাহুল একসাথেই খেতে বসে। কেমন যেন মনে হয় মেয়ে আর মেয়ের জামাই বসে খাচ্ছে, সেটা ভাবতে চাইলেই মন যেন কেমন বিদ্রোহ করে। আমি জানিনা, আমি এটা মেনে নিয়েও কেন কিন্তু কিন্তু করি, ভাবি রাহুলের ওপর অধিকার আমার আগে। বুঝিনা, ওরা আমার সন্মতি নিচ্ছেনা বলে, বা আমাকে অভিভাবকের মর্যাদা দিচ্ছেনা বলে কি এটা হচ্ছে? সত্যি আমি নিজেই নিজের মন পরতে পারছিনা। আর এটাই আমার অস্বস্তির বড় কারন। আমি নিজে জানিনা আমি নিজে কি চাই। যদি সেই উত্তরটা পেতাম, তাহলে হয়তো আমার এই চঞ্চলতা থাকতো না।