10-06-2019, 07:23 PM
মন্ত্রমুগ্ধের মতন সুরের উৎসের দিকে ধেয়ে গেলাম। কেন? জানিনা। আমি কেন এরকম বিচলিত হচ্ছি। সকালবেলাও রিয়ার খুসি মুখ দেখে মনের মধ্যে কেমন যেন একটা হচ্ছিলো। মনের অনেক গভিরে একটা অদ্ভুত আন্দোলন হচ্ছিলো। নিজেই নিজেকে ধমক দিয়ে সেটা দাবিয়ে দি। নিজেকেই বলেছি, কি হচ্ছেটা কি? একটা ছেলের বয়েসি ছেলেকে নিয়ে এরকম বিচলিত কেন? রিয়া যদি ওকে চায়, তাহলে অন্যায় কোথায়? সেটা তো স্বাভাবিক। শুধু মুখের আদল পার্থর মতন বলেই কি এইভাবে ভাবতে হবে? পৃথিবীতে কি একই রকম দেখতে দুজন থাকতে পারেনা। আর আমি না হয় ভাবলাম, সে কি এরকম ভাববে। হিসেব মতন তো আমি তার মাতৃস্থানিয়। অযথা সে আমাকে নিয়ে ভাবতে যাবে কেন? আর আমার প্রভাবই বা কি করে তার মনে রোপন হবে।
ছাদের কাছে এসে খেয়াল পরলো যে আমি শোয়ার ঘরে আর নেই। চারিপাশ আলোতে ঝলমল করছে। খেয়াল পরলো আজ রাতটা এই লাইটটা জ্বলবে। মায়াবি একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ঘড়ি দেখেছিলাম রাত প্রায় তিনটে বাজে। চারিদিকের বাড়িগুলিতে শুধু রাতবাতির আবছা আলো দেখা যাচ্ছে। এই পৃথিবীর সমস্ত জীবজগৎ ঘুমের কোলে ঢলে পরেছে। জেগে আছি আমি আর রাহুল।
কেন এলাম? জানিনা। এর উত্তর খুজতে মন চাইছেনা। ভালো মন্দের হিসেব করতে ইচ্ছে করছেনা। শুধু ইচ্ছে করছে ওকে জিজ্ঞেস করি, কেন এরকম সুর বাজাচ্ছো। কি কষ্ট তোমার? তুমিও কি আমার মতনই একা এই পৃথিবীতে।
ধির পায়ে ছাদের কার্নিশের ধারে এসে দাড়ালাম। চাঁদের আলোতে পুজোর লাইটিঙের খাঁচাটার ছায়া পরে অর্ধেক ছাদ ঢেকে গেছে।
আমি কার্নিশের ধারে সিমেন্টের বেদিতে বসলাম, রেলিঙ্গের ওপর কনুই রেখে মাথাটা হাতের ওপর রাখলাম। বহুদিন পরে এইভাবে ছাদে বসেছি। পার্থ থাকতে কতবার বলতাম চলো ছাদে গিয়ে বসি, রাতের বেলায় ও হিসেব নিকেশ করতো বলে সেই সখ আর পুর্ন হয়নি কোনোদিনই। মাঝে মাঝে একা এসে বসতাম এইভাবে আর নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
আজও সেই ভাবে বসে আছি। বেহালার সুরটা কখন থেমে গেছে খেয়াল করিনি।
‘ঘুমাননি?’
প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলাম। রাহুল কখন আমার পিছনে এসে দারিয়েছে।
আমি ইতস্ততঃ উত্তর দিলাম ‘ন না মানে, ঘুম ভেঙ্গে গেছিলো তারপর আর আসছেনা দেখে ঊপরে এলাম, ভাবলাম যদি ছাদের হাওয়ায় আবার ঘুম আসে। তুমি এত রাত অব্দি জেগে থাকো?’
‘আমার এত রাতেই ঘুমোনোর অভ্যেস।’
‘আবার সকালে উঠে যে হাঁটতে বেরোও?”
‘অভ্যাস হয়ে গেছে। অসুবিধে হয়না।’
‘ঠিক আছে আর দেরি কোরোনা, এবার শুয়ে পরো?’
‘আপনি?’
‘আমি একটু বসে চলে যাবো।’ ওকে বুঝতে দিতে চাইলাম না যে ওর বেহালা বাজানো শুনেই আমি এসেছি।
‘আমার তাড়া নেই, আপনার অসুবিধে না হলে আমি থাকতে পারি’
কেন বললো এমন? মনে মনেই ভাবতে ভাবতে ওকে বললাম ‘বেহালা বাজানো কোথায় শিখেছো?’
‘কেউ শেখায় নি, এমনি ছোটবেলা থেকে চেষ্টা করতে করতে এইটুকু পারি। যা করি সেটা নিজের থেকেই শিখেছি।’
‘বাহঃ অসাধারন। কাউকে এত সুন্দর বাজাতে আমি শুনিনি। তাও বিনা তালিমে।’
‘এই যে বললেন, এটাই আমার শক্তি। এটাই প্রেরনা দেয় যে আরো ভালো করে বাজাই।’
‘যে শুনবে সেই বলবে। শুধু আমি কেন?’
‘ম্যাডাম একটা কথা বলবো?’
আমি মনে মনে অবাক হোলাম এত রাতে একটা কথা কি হতে পারে? রিয়ার ব্যাপারে কি? তাও বললাম ‘হ্যাঁ বলো’
‘আপনাকে দেখে আমার বউদির কথা মনে পরে।’
‘বউদি? কোথায় বহরমপুরে থাকেন?’
‘নাহ্* এখন আর নেই?’
‘বুঝলাম না?’
আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে কিছু বলতে গিয়ে ওর গলা বুজে এলো নিজেকে সামলাতে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
কয়েক মুহুর্তে ও স্বাভাবিক হয়ে ম্লান হেঁসে বললো ‘উনি আর এই পৃথিবীতে নেই?’
‘সেকি? কি হয়েছিলো?’
‘ক্যান্সার’
‘আহারে! কত বয়েস হয়েছিলো?’
‘কত হবে আপনার ই মতন হবে।’ উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলো ‘খাচায় বাঁধা পাখি ছিলেন উনি, উড়তে চাইতেন কিন্তু পা তো দাঁরে বাধা ছিলো সোনার শিকল দিয়ে।’ বলতে বলতে ওর গলা বুজে এলো।
আমি চুপ করে রইলাম।
‘আপনাকে দেখেও আমার তাই মনে হয়, এত শোরগোলের মধ্যেও আপনি খুব একা, সেও ছিলো। বন্ধু ছিলাম একমাত্র আমি। সে ছিলো আমার কাজলা দিদি। চাঁদ উঠলে সেই কাজলা দিদি আমাকে আজও কাঁদায়’
আমি বরাবরের নরম মনের। কি জানি ওর কথাগুলো আমাকে কেমন নাড়িয়ে দিলো। আমার সামনে বসে এক পুরুষ মানুষ, স্মৃতির তাড়নায়, অশ্রুসজল, এই প্রথম দেখছি। এতদিন দেখেছি, পুরুষজাতি সিংহের মতন। ভাবলেশহীন, সবার উর্দ্ধে, গতানুগতিক জীবনজাপনের অনেক উর্ধে। সেন্টিমেন্ট, স্মৃতির তাড়না, মন খারাপ করা, এগূলো এদের জিবনের শব্দকোষে অনুপস্থিত। চোখের সামনে সেই পুরুষ সিংহের ধ্বজাধারি এক প্রতিনিধিকে মানসিক জাতনায় দুর্বল দেখে আমারও চোখের কোন চিকচিক করে উঠলো যেন। তবুও নিজেকে সংযত করলাম। ওর ব্যাক্তিগত ব্যাপারে আমি কিই বা বলতে পারি, শুধু পাশে বসে শোনা ছাড়া।
কয়েক মিনিট চুপচাপ, তারপর রাহুল নিজেকে সামলে নিলো। আমি অপেক্ষা করে ছিলাম।
‘জানেন ম্যাডাম, প্রথম দিন আপনাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিলো এতো আমার কাজলা দিদি, আর ভাগ্য দেখুন, আপনার আশ্রয়েই এসে রয়েছি। জানেন আপনি রান্না করেন, আমার দেখে মনে হয় যেন আমার বউদি রান্না করছে। সেই একই গন্ধ, সেই ঝাঁজ, আমার চোখে জল চলে আসে। আমাদের বাড়ির পুরুষেরা ব্যাবসা বানিজ্য নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো, তাদের যোগান দেওয়া ছিলো অন্দরমহলের মেয়েদের কাজ। বৌদি একাহাতে সামলাতো। জ্ঞ্যান হওয়ার পর থেকে মাকে দেখে আসছি, মাথার যন্ত্রনায় সজ্জাশায়ি, অনেক দামি ডাক্তারও সেই রোগ ধরতে পারেনি, একবার মাথা যন্ত্রনা ধরলে সেটা তিন চার দিন থাকতো। ওষূধ একটাই ঘুম। আমাকেও ঠিক মতন নজর দিতে পারতো না। আমি অন্দরমহলে থেকে থেকে, পোষা পাখি, কুকুর, এদের সঙ্গি করে বড় হয়ে উঠছিলাম। বাবা কাকা দাদা, এরা ভালো চোখে দেখছিলো না আমার এই মায়াদয়া, নরম সরম ব্যাপারগুলো। আমাকে হস্টেলে পাঠাবার বন্দোবস্ত করেই ফেলেছিলো। রুখে দাড়িয়েছিলো আমার কাজলাদিদি। শেষে তার জেদের কাছে সবাই পরাজিত হয়। আমার যত্নআত্তিতে যাতে খামতি না পরে, যাতে আমার ভালোবাসার ভাগিদার কেউ না থাকে, আমি যাতে ভবিষ্যতে ওকে দোষ না দিতে পারি, সেই জন্যে নিজেও সন্তান ধারন করেনি। বড় হওয়ার পরে এসব জানতে পারি। আমার সাথে সব শেয়ার করতো। কিন্তু ভগবান আমাদের এই সম্পর্ককে ভালো চোখে দেখলো না। এমন অস্ত্র প্রয়োগ করলো যে ধিরে ধিরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলো। আমিই ওর মুখে আগুন দিয়েছিলাম। জানিনা কি নাম দেবো সেই সম্পর্কের, তবুও একাধারে সে আমার, মা, প্রেয়সি, বান্ধবি, গুরু, সব ছিলো।
অনেক্ষন পরে আমি মুখ খুললাম ‘যে যাওয়ার সে যাবেই। তার প্রভাব তো থাকবেই। মনও খারাপ করবে। এই দেখো আমারও তো প্রায় দশ বছর হোলো সেই ভাবে কথা বলারই লোক নেই। রিয়ার সাথে বন্ধুত্ব কম, অভিভাবকত্ব বেশি। এখন ও বড় হয়েছে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে, আমি আরো একা হয়ে পরছি। তা বলে জীবন তো থেমে থাকবেনা। তোমাকেও এগিয়ে যেতে হবে, জিবনের লক্ষ্য স্থির করে। আমার স্বামি বলতেন, তুমি যদি পাঁচ ফুট উচুতে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করো তাহলে তিন ফুট পারবে, কিন্তু লাফাতে শিখে যাবে, তাই জিবনের লক্ষ্য স্থির করো। জীবন খুব কঠিন, পরম আত্মিয়র মৃত্যুতেও আমাদের শোক ছাপিয়ে খিদে পায়, ঘুম পায়। রক্তে মাংসে গড়া মানুষ আমরা, থেমে থাকতে পারবো না, সন্মান আর সামাজিকতা বজায় রাখতে আমাদের প্রতিদিন লড়তে হয়।’
‘আমি আর আপনি একই নৌকার যাত্রি, ভেসে চলেছি, কিন্তু যানিনা কোথায় কুল।’
‘এই বয়েসে এত হতাশ হোয়োনা। জীবন এতটাও খারাপ না, শুধু ভগবানের কাছে প্রার্থনা করো, যাতে তুমি জিততে পারো।’
‘সেই চেষ্টায় করছি। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। বেদনাময় স্মৃততির সেই যায়গা থেকে চলে এসেছি। সেখানে থাকবো কি করে, প্রতিপদে তার অস্তিত্ব জ্বলজ্বল করছে, অথচ সেই নেই। মেনে নিতে পারছিলাম না, সবার সাথে বিদ্রোহ করে মৃত্যুসজ্জায় সায়িত মাকে ছেরে চলে এসেছি। ভাবছিলাম সব নতুন করে শুরু করবো। কিন্তু, স্মৃতি বড়ই আঁঠালো জিনিস। এ ছেরে জেতে চায় না।
‘চলো আর রাত কোরোনা, এবার শুয়ে পরো, তোমার কন অসুবিধে হলে আমাকে নিঃসঙ্কোচে জানিয়ো। তোমার বোউদির জায়গা না নিতে পারি, কিছুটা তো তোমার কষ্ট লাঘব হবে। আর কাল থেকে আমাদের সাথেই চা খেয়ো সকাল বেলা। ভয় নেই পয়সা লাগবেনা।’
রাহুল মুচকি হাসলো সন্মতির লক্ষ্যন হিসেবে। ‘আপনার নিজস্ব সময়ে আমি থাবা বসিয়ে দিলাম, সরি। আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনার শরীর খারাপ লাগছে হয়তো।’
আমি বোকার মতন বলে ফেলতে গেছিলাম ‘আসলে তুমি বেহালা বাজাচ্ছিলে...’
রাহুল অসহায়ের মতন মুখ করে বললো ‘ওহো আমি বুঝতে পারিনি যে এত রাতে এই জন্যে ডীস্টার্ব হবে, কাল থেকে দরজা জানলা বন্ধ করে বাজাবো’।
‘না না বিরক্ত কেন হবো, বরঞ্চ ভালোই লাগছিলো। ভাবছিলাম, এত করুন সুর কি করে বাজাও তুমি’ আর রাখঢাক করতে পারলাম না।
‘যানিনা কোথা থেকে আসে। কিন্তু মন থেকে উঠে আসে, কোথাও শুনিনি। আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমার খুব ভালো লাগছে। এটা আমার বিড়াট প্রাপ্তি। আর সময় নষ্ট করবো না আপনার, সকালেও অনেক কাজ আছে আপনার। শুভরাত্রি।’
আমি রেলিঙ্গে হাতের চাপ দিয়ে উঠতে যাবো হঠাত এক ঝটকাতে ছিটকে পরে যাচ্ছিলাম। মাথা ঘুরে গিয়ে চোখ বুজে আসছে। রাহুল শক্ত হাতে আমাকে ধরে নিয়েছে।
কতক্ষন জানিনা, চোখ খুললাম রাহুলের ঘরে। বুঝলাম মাথার চুলগুলো ভেজা। আমি সচকিত উঠে বসতে গেলাম। রাহুল আমার দুকাঁধ চেপে ধরলো। ‘তাড়াহুরো করবেন না’ উঠে দাড়াতে গেলে আবার পরে যেতে পারেন।’ ওর মুখে একটা আমাকে আস্বস্ত করার মতন একটা হাসি, যেন বলতে চাইছে, কোন ব্যাপার নয়।
তারপর মুখে বিরক্তি ভরে বললো ‘ ইলেকট্রিকের কাজ করেছে, পুরোনো টেপ দিয়ে। সেটারই একটা খুলে পরে গেছে যেটা আপনি হাত দিয়ে ধরে ফেলেছিলেন। এরা কাজ করে কোন ছিরিছাদ নেই। কাল সকালে আমি নিজে সব টেপগুলো চেঞ্জ করে দেবো। এটূকু বিদ্যে আছে, ওদের হয়তো নেই, তাই এরকম কাণ্ডজ্ঞ্যানহীন কাজ করতে পারে।’
আমি উঠে বসলাম বললাম ‘এখন ঠিক আছি। আমি যাই, রিয়া উঠে আমাকে দেখতে না পেলে চিন্তা করবে।’ খেয়াল করলাম যে আমার মাথায় জল দেওয়া হয়েছিলো, সেই জলে ওর বালিশ ভিজে গেছে।
আমি বললাম ‘তোমার বিছানা তো ভিজে গেছে চাদর আছে?’
আপনি চিন্তা করবেন না। আমার এক্সট্রা চাদর আছে। আর পুরো বিছানা তো ভেজেনি। আর আমার ঘরের এমন হাল, যে আপনাকে কিছুক্ষন রেস্ট নিতে বলবো তার উপায় নেই।’
‘তুমি দাঁড়াও আমি একটা বালিশ নিয়ে আসছি, এই ভেজা বালিশে শুলে ঠান্ডা লেগে যাবে’
রাহুল হা হা করে উঠলো ‘ আরে এই শরীর নিয়ে আবার ওঠা নামা করবেন কেন? থাক না? আমার অভ্যেস আছে।’
আমি উঠে দাড়ালাম মাথাটা একটু একটু ঘুরছে, কিন্তু মুখে বললাম না। লজ্জা লাগছে এরকম কাউকে বিব্রত করতে।
‘আপনি ঠিক আছেন তো?’
‘একদম’
কেমন যেন কোমোরের কাছটা ভেজা ভেজা লাগছে শরীরে একটা কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। তবুও বললাম, আমি চলে যেতে পারবো, ধন্যবাদ তুমি না থাকলে’
‘ম্যাডাম আমি নিচে দিয়ে আসবো?’
‘না তুমি অনেক করলে? এবার ঘুমোতে যাও। আমার আর কোন সমস্যা নেই’
ঘরে এসে প্রথমেই ভেজা শাড়ি আর ব্লাউজ চেঞ্জ করা দরকার ভেবে, কাঠের আলমারি থেকে একটা শাড়ী আর ব্লাউজ টেনে নিলাম। লজ্জা লাগছে বেশ। রাতের বেলা ব্রা পরা ছিলো না।
শরীরে এখনো অদ্ভুত একটা অস্বস্তি হচ্ছে। কেন হচ্ছে। বুঝতে পারছিনা। দুপায়ের মাঝখানে বেশ ভিজে ভিজে লাগছে। কেন?
বহুদিন পরে পুরুষের ছোয়া পেয়ে। আমি না ভাবছিলাম এসব চিন্তা করবো না। রিয়া যার ওপর দুর্বল তাকে নিয়ে আমি ভাবছি। ছিঃ।
কোনরকমে শাড়ি বদলে বিনা ব্লাউজে শুয়ে পরলাম। চুলের জল এসে স্তনগুলো ভিজে গেছে। কিন্তু তাতে এরকম শক্ত হয়ে আছে কেন? কেন আমার শরীরের মধ্যে একটা যৌনতৃপ্তির অনুভুতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আমার শরীর কোন পুরুষদণ্ড মন্থন করেছে। পায়ের মাঝে ভেজা চ্যাটচ্যাটে ভাবটা যেন তার সাক্ষি। শাড়ি চেঞ্জ করার সময়ও খেয়াল করলাম, গুদের চুল চ্যাটচ্যাট করছে। তাহলে কি রাহুল? তা হয় নাকি? ঘুমন্ত কাউকে কি করা যায়? আর করেছে ভাবছিই বা কেন।
ধিরে ধিরে একটা অদ্ভুত ক্লান্তি আর একটা সুখানুভুতি শরীর মন ঘিরে ধরলো, ঘুমের কোলে ঢলে পরতে গিয়ে চমকে উঠে বসলাম। খুব খুব আবছা ভাবে মনে পরছে, রাহুলের মুখটা আমার মুখের ওপর ঝুঁকে রয়েছে। ঠোঁট নেমে আসছে ঠোঁটের ওপর। সত্যি কি তাই হয়েছিলো, না আমার মনের কোন গভিরে লুকিয়ে থাকা এক সুপ্ত বাসনা এই চিন্তাটাকে আমার অবচেতন মনে উস্কে দিয়েছে। ধরমর করে উঠে বসলাম। সত্যি কি হয়েছিলো বোঝার চেষ্টা করছি। রাহুল কি আমার সংজ্ঞাহীনতার সুজোগ নিয়ে আমাকে ভোগ করেছে? না বহুদিন পরে পুরুষমানুষের শরীরের সংস্পর্শে এসে আমার শরীর অকারনে জেগেছে। তাহলে সেই ঠোটে ঠোটের ব্যাপারটা? মুখে ভিতর মনে হচ্ছে সত্যি কোন বহিরাগত পদার্থের স্বাদ।
কিছুক্ষন চিন্তা করে নিজেই হেসে ফেললাম ‘আরে আর্টিফিসিয়াল রেস্পিরাশান বলে একটা জিনিস আছে। হয়তো ...। নাহলে আবার কি? এর মধ্যে এসব সম্ভব নাকি? আমার প্রান বাঁচালো আর আমিই...।
মনের মধ্যে কেমন একটা ভালো লাগার আবেশ কাজ করছে। কেন? এর উত্তর নিজেই জানিনা। কেন প্রশ্রয় দিচ্ছি এই ভালোলাগা সেটাও যানিনা। তবু মন বলছে, কত আর বয়েস তোর, একটু স্বার্থপর হয়ে যদি নিজের অকারন ভালো লাগাকে প্রশ্র্য় দিস্* তাতে কি এমন ক্ষতি। এতে তো কারো ক্ষতি হচ্ছেনা। নিজের মধ্যেই সিমাবদ্ধ রয়েছে। ভালো লাগাটা কি আমি নিজে জানিনা। রাহুলের সরলতা? ওর মনের গভিরতার ছোঁয়া পাওয়া? না বহুদিন পরে কোন পুরুষ আমার এই অপ্রয়োজনিয় শরীরটাকে শুশ্রুষা করলো সেই জন্যে। মনের ব্যাপারটা প্রশ্রয় দিতে সাহস পাচ্ছিনা। রিয়ার অধিকারে হাত বাড়ানো হয়ে যাবে। মা হয়ে একই পুরুষে লুব্ধ হওয়া নক্কারজনক। তাই সেই চিন্তাকে ঝাটা হাতে তাড়ালাম। পরে রইলো শারিরিক ব্যাপারটা। ভাবছি হোক না দুর্ঘটনাবশতঃ, কিন্তু দিনের শেষে সেও তো পুরুষ মানুষ। নিজের কল্পনাতেই না হয় ধিরে ধিরে ওকে প্রশ্রয় দেবো, খুলে দেবো এতদিনের বন্ধ করে রাখা এই নাড়িশরিরের দরজা। সেখানে তো আমার পাত্র বাছাইয়ের স্বাধিনতা আছে। আর পার্থর স্মৃতি? কেমন যেন ফিঁকে লাগছে। সে ছিলো। এ আছে। পার্থর ছিলোনা এই অকপট মন খুলে কথা বলার মতন সময় আর ধৈর্য্য। সমাজে বঞ্চিত হয়ে নিজের জায়গা করে নেওয়ার তাগিদে, মনের সেই কোমোল দরজা বন্ধ হয়ে গেছিলো সদ্য কৈশোর পেরোনো যুবকের। বিয়ের আগে নিজের দুঃখ কষ্ট যাও বা ভাগ করে নিতো, বিয়ের পরে লড়াই লড়াই আর লড়াই। রাজাবাজারের বস্তি থেকে যাদবপুরের ভাড়া ফ্ল্যাট, তারপর দৌর দৌর দৌর আর এই গড়িয়ার বাড়ি, চাপা পরে গেছিলো সেই পার্কে বা গঙ্গার পারে বসে কাধে মাথা রেখে, দৃষ্টি বহুদুরে ভাসিয়ে দিয়ে মনের কথা উগরে দেওয়ার সেই দিনগুলো।
নিয়ম করে ভোর হোলো। হয়তো ঘন্টা খানেক ঘুমিয়েছিলাম। নিচে কোলাপ্সিবল গেট টানার আওয়াজ আর রাস্তায় রিয়ার গলা শুনে বুঝলাম, ও সারাদিনের জন্যে নিজের মনের খোঁড়াক জোগার করতে বেরিয়ে পরেছে। রাহুলও সঙ্গেই আছে। একটু বিব্রত লাগলো। কাল রাতের কথা জানলে রিয়া কি না করে বসে। এখনি হয়তো ডাক্তার নিয়ে হাজির হবে।
চটপট উঠে স্নান করে নিলাম। মনের ভ্রম দ্বিগুন হয়ে ফিরে আসছে হাল্কা গরম জলের ঝর্নায়। নিজেকে ভিষন ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। শাওয়ারের জলে ভিজতে থাকা নগ্ন শরীরটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছি, এখনো অহঙ্কার করার মতনই সম্পদ আছে আমার। পুরুষ মানুষের কাম উস্কে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্টরও বেশি।
অলঙ্কারহীন আবরনহীন ৫ফুট ৫ ইঞ্ছির এই শরীরটার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম। কেন এরকম করছি আমার কাছে উত্তর নেই। শুধু নিজের ভালো লাগার জন্যে, নিজের সামাজিক অবস্থান ভুলে সামান্য স্বার্থপর হচ্ছি। এতে কার কি বলার আছে। এটা তো সত্যযুগ না, যে কেউ আমার ভিতরে কি হচ্ছে দৈববলে পরে ফেলবে।
রিয়ার আচরনে সেরকম কিছু ঠাহর করতে পারলাম না। রাহুল কি তাহলে বলেনি রিয়াকে রাতের কথা। নিশ্চয় বলেনি। স্বাভাবিক ভাবে বলার কথা। কিছু হয়তো ভেবে বলেনি। সিরিয়াস কিছু হলে নিশ্চয় বলতো। ও চিন্তা করবে ভেবেই হয়তো বলেনি। তিনজনে মিলে চা খেতে খেতে রিয়া আমাকে দেখিয়েই রাহুলের একটা ইন্টারভিউ মতন নিয়ে নিলো। বুঝলাম ইচ্ছে করেই আমার সামনে এই কথাগুলো বলছে যাতে আমি পরে ওকে দোষ না দি।
কাল রাতের পরে ছেলেটার ওপর কেমন একটা দুর্বলতা জন্মেছে, সেটা হাজার চেষ্টা করেও অস্বিকার করতে পারছিনা। শুধু বুঝতে পারছিনা সেটা কি ধরনের দুর্বলতা। রিয়ার সাথে ওকে দেখে আমার বেশ লাগছে। রিয়ার এই আগ বাড়িয়ে ওকে আমার এই হোম ডেলিভারিতে যুক্ত করার প্ল্যানে আমি ওর ভবিষ্যতই যেন দেখতে পাচ্ছি।
ছেলেটার চোখদুটো যেন হরিনের মতন সরল টানা টানা। গালে একদিনের পাতলা দাড়ি ওর ফর্সা রঙটাকে আরো ফুটিয়ে তুলেছে। লম্বাটে মুখ টিকালো নাক, সব মিলিয়ে এক দেবশিশুর আদল। মনে হয় যেন যিশুখৃষ্ঠ।
গাটা সিরসির করে উঠলো। হঠাত যেন চোখের সামনে ঝল্কে উঠলো, ওর গোলাপি ঠোঁটদুটো আমার স্ফিত ঠোঁটে নেমে এলো। মুহুর্তের মধ্যে শরীর বিদ্রোহ করতে শুরু করলো, মাথার সমস্ত কোষগুলো দপদপ করতে শুরু করলো, রক্ত প্রবল বেগে আমার ধমনি দিয়ে বইতে শুরু করলো।
মনে হচ্ছিলো নিজেকে নিজে থাপ্পর মারি। মেয়ে যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে, তাকে নিয়ে কুচিন্তা করছি। এ কেমন মা আমি। ছিঃ।
মনে হচ্ছে আমার অস্বস্তি যেন ওরা দেখে ফেলছে, আসলের মনের ভাব তো মুখেই প্রথম পরে। কামেচ্ছা জাগলে মানুষের নাকের পাটা ফুলে যায়। তাই চট করে ঘর থেকে উঠে গিয়ে সুবলাকে তারা দিতে শুরু করলাম। স্বাভাবিক হতে কিছুক্ষন সময় নিলাম।
অনেক কিছু ঠিক হোলো। আজ বা কাল থেকে রাহুল আমাদের হোম ডেলিভারির ম্যানেজার। ভাড়ার বদলে এই ব্যাবস্থা। সাথে আমাদের সাথেই ওর খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা, সাথে চা টিফিন সব কিছু। শুধু ও মুখ কাচুমাচু করে আবদার করলো কয়েকবার বেশি চা খাওয়ার। আমি সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। আমিও প্রায়ই চা খাই।
একটা জিনিস আমাকে ভাবাচ্ছে, ও কেন রিয়াকে কাল রাতের কথাগুলো বললো না। রিয়া চিন্তা করবে বলে? না যা ঘটার ঘটে গেছে, আর ঘেটে কি হবে এই ভেবে? নাকি আমার সন্দেহগুলো অমুলক নয়, যা ভাবছি যে, মনের অবচেতনে দেখেছি সেটা সত্যিই ঘটেছিলো।
কাজের চাপে আর ভাবার সু্যোগ পেলাম না। ভাবলাম আজ রাতে শোয়ার পরে এটা নিয়ে ভাববো। অন্ততঃ কিছুটা সময় তো কেটে যাবে।
সন্ধ্যেবেলা রাহুল এলো। রিয়াও ফিরে এসেছে বাড়িতে। তিনজনে মিলে ঠীক করলাম ওকে এখন কি কি দায়িত্ব নিতে হবে। যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে, বাজার সামাল দেওয়া। এর মধ্যে এর পর থেকে আমি আর থাকবোনা। রাহুলই করবে আর সপ্তাহে সপ্তাহে আমার সাথে হিসেব নিয়ে বসবে। পেমেন্ট কালেকশানও আর ডেলিভারিও ওর দায়িত্ব। ডেলিভারিটা আমি ওকে দিতে চাইছিলাম না। বড় ঘরের ছেলে এরকম কাজ করছে বলে সব সুজোগ নেবো তা কি হয়? ও আমার মনোভাব বুঝে নিজে জেচে সেই দায়িত্ব নিলো। বললো আপনি এখন থেকে শুধু অন্দরমহল দেখুন, নিশ্চিন্তে আমাকে ছেরে দিন বাইরের কাজগুলো।
ছেলেটা খুব স্মার্ট সেটা কয়েকটা ব্যাপারেই বুঝতে পারলাম। প্রথমেই আমাকে বললো যে সপ্তাহের মেনুগুলো ঠিক করে নিলে বাজার করার সুবিধে হয়। আমি আজ পর্যন্ত এরকম চিন্তা করিনি, সকালে উঠে যা মনে হোতো তাই রান্না করতাম। এমনও হোতো বাজারে গিয়ে সেটা না পেয়ে প্ল্যান চেঞ্জ করতাম। এইভাবে সপ্তাহের মেনু ঠিক করে নিলে সত্যি বাজারের সুবিধে, রোজ রোজ কাউকে বলতে হয়না যে কি হবে আজ। তার ওপর বুঝেশুনে বাজার করা যায়, যাতে অপচয় কম হয়।
এরপর ও যেটা বললো সেটাও আমি কোনদিন ভাবিনি, সম্ভাব্য কাস্টোমারের লিসট। কে রোজ নেয়, কারা কারা শনি রবিবার শুধু নেয়, কারা কারা মাঝে সাঝে নেয় সেসব। যুক্তি যেটা দিলো সেটা হোলো, প্রতিদিন কয় প্লেট রান্না হবে সেটা জানা থাকলে এক্সট্রা বাজার করার দরকার পরবেনা। অপচয় কমবে, সাথে খরচ। কেউ শেষ মুহুর্তে কিছু অতিরিক্ত চাইলে, সেটা স্টকের ওপর নির্ভর করে হ্যাঁ বলতে, রোজ পাঁচজন অতিরিক্ত হবে ভেবে রান্না করলে, আদপে পাঁচটা প্লেট লসই হবে। আর লাভ বাড়ানোর জন্যে সাপ্লাইয়ারদের সাথে কথা বলে দর কমাতে হবে, রোজ যেখান থেকে এত এত বাজার হবে তারা বাজারচলতি দাম নিলে কি করে হবে। কমাতেই হবে, এরপরও দরকার হলে ওরা ঘরে এসে মাল দিয়ে যাবে তারপর পেমেণ্ট নেবে, সেটাও সপ্তাহে একবার। রাহুল নিজে দায়িত্ব নিয়ে এসব করবে।
বুঝলাম ব্যাবসায়ি বাড়ির রক্ত কথা বলছে। আমিও ব্যাবসায়ির ই বিধবা, কিন্তু এইভাবে ব্যাবসা ব্যাপারটা ভাবিনি। ভাবতাম লোকের দয়ায় চলছি। লোকেরও যে আমাকে দরকার এতদিন পরেও বুঝতে পারিনি। কাজের ব্যাপারে যে ও কত সিরিয়াস সেটা বুঝতেই পারা যাচ্ছে। মন বলছে, এই ছেলে আগামি দিনে সব কিছুর ম্যানেজার হয়ে দাঁড়াবে। আপত্তি নেই। মেয়েটা তো সঠিক হাতে যাবে। এই ব্যাবসা ঠিক মতন চললে, চাকরি বাকরির সত্যি দরকার হয় না। শুধু বাজার বাড়াতে হবে। গুনগত মান তো আমার হাতে। সেখানে আমি নো কম্প্রোমাইজ। মনের মতন রান্না না হলে আজও সেগুলোর স্থান ড্রেনে হয়।
সব সেরে উঠতে এগারো টা বেজে গেলো। পাড়া নিঝুম হয়ে আসছে। আশেপাশের দুএকটা বাড়িতে হাল্কা টিভি চলার মতন আলো নরাচরা করছে। রিয়ার ঘর বাইরে থেকে বন্ধ। এই সময় ও বন্ধু বান্ধবের সাথে কিছুক্ষন গল্প করে। তারপর ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু লাইট নেভানো দেখে মনে হয় ঘুমিয়েই পরেছে। একটু ঘুমকাতুরে মেয়ে আমার। ওর কিছু কিছু ব্যাপার আমাকে অবাক করে। বয়েসের তুলনায় বেশিই ম্যাচুওরড মনে হয় ওকে। ঠিক যেন আমার অভিভাবক। কিন্তু ছেলেমানুষি যখন করে তখন সেটার পাঁচ বছরের শিশুকেও হার মানায়। কিন্তু সেটাও পার্থ চলে যাওয়ার পরে দুর্লভ দৃশ্য। বাবাকে খুব ভালোবাসতো। মেয়ে মাত্রই বাবাকে বেশি ভালোবাসে। পার্থর শেষ শয্যার পাশে ওকে দেখেছি অদ্ভুত রকম কঠিন। বরঞ্চ আমি প্রচণ্ড ভেঙ্গে পরেছিলাম। ঐ বয়েসেও ও সব দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করেছিলো, সাথে আমার খেয়াল রাখা। কোন্দিন খামতি হয়নি। ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে সব কিছুর দিকে ওর খেয়াল, এমন কি আমার ঋতুশ্রাবের সময় ব্যাবহারের প্যাড আছে কিনা সেটাও খেয়াল রাখতো। নিজের পড়াশুনো, কোচিন, বড় হওয়ার পরে দু একটা টিউশানি করা ছাড়া, অন্য কোনদিকেই মন দিতে পারেনি। ওর অনেক বান্ধবি আমাদের বাড়ি এসেছে। তাদের গল্পও শুনেছি ওর মুখে বা ঘরে হাটাচলার মাঝেই কানে যা এসেছে। সবারই মনের মানুষ বেছে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু মেয়ের মধ্যে আমি কোনদিন সেই লক্ষন পাইনি। প্রেমে পরলে মানুষের যে পরিবর্তন হয় সেটা লুকানো যায়না। আর আমার মেয়ে লুকানোর মেয়ে না। সোজাসাপ্টা ব্যাপারই ও পছন্দ করে। অবাক হোতাম, ভেবে চারপাশে এত প্রেমপরিনয় ঘটে চলেছে, ওর কি কাউকে মনে ধরছে না। কেন? ও কি রকম পুরুষ খুজছে। সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। হয়তো রাহুলের মধ্যে ও ওর সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। তাই মনটা ভালো লাগছে ওর ভালো লাগা দেখে। প্রেমে পরলে মানুষ লুকাতে পারেনা। রিয়ার হাবভাবও তাই বলছে। গান শুনছে। সারাক্ষন মুখে হাসি লেগে আছে। এটা ওটা ভুলে যাচ্ছে। এগুলো তো প্রেমেরই লক্ষন। কিন্তু দুজনেই রাজি তো? রাহুল আগে থেকে কাউকে মন দিয়ে রাখেনি তো। তাহলে মেয়েটার স্বপ্নভঙ্গ হবে। নিজের চোখে সেটা আমি দেখতে পারবোনা। ওরা কি এই ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছে? সময় করে জিজ্ঞেস করতে হবে রিয়াকে।
শুয়ে শুয়ে ভগবানকে বলছি আর বিচলিত কোরোনা আমার মন। তুমি তো আমাকে যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছো, এরপর এরকম প্রলোভন দেখিয়ো না। এটা অন্যায় হচ্ছে। আমারই প্রায় মেয়ের বয়েসি একটা ছেলেকে নিয়ে মনের মধ্যে সুপ্ত কাম আবার জেগে উঠছে, যেই ছেলেটাকে আমারই মেয়ে মন দিতে চলেছে, তাকে নিয়ে চিন্তা করা তো ধর্মেই সইবেনা। এতো ঘোর পাঁপ। এই পাঁপ আমাকে দিয়ে করিয়ো না। দয়া করো হে ভগবান।
ভগবানকে ছোটবেলা থেকেই ভরসা করি। আজও আমার বিশ্বাস অটুট যে তিনি আছেন। তিনি যা করেন তা মঙ্গলের জন্যেই করেন। এই জগতের সমস্ত কর্মকাণ্ড তার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত, আমরা তো তার মাধ্যম মাত্র।
সেই ভরসাতে দুচোখ বুজলাম। আজকে আর কোনকিছুই আমাকে বিছানা থেকে নড়াতে পারবেনা।
ছাদের কাছে এসে খেয়াল পরলো যে আমি শোয়ার ঘরে আর নেই। চারিপাশ আলোতে ঝলমল করছে। খেয়াল পরলো আজ রাতটা এই লাইটটা জ্বলবে। মায়াবি একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ঘড়ি দেখেছিলাম রাত প্রায় তিনটে বাজে। চারিদিকের বাড়িগুলিতে শুধু রাতবাতির আবছা আলো দেখা যাচ্ছে। এই পৃথিবীর সমস্ত জীবজগৎ ঘুমের কোলে ঢলে পরেছে। জেগে আছি আমি আর রাহুল।
কেন এলাম? জানিনা। এর উত্তর খুজতে মন চাইছেনা। ভালো মন্দের হিসেব করতে ইচ্ছে করছেনা। শুধু ইচ্ছে করছে ওকে জিজ্ঞেস করি, কেন এরকম সুর বাজাচ্ছো। কি কষ্ট তোমার? তুমিও কি আমার মতনই একা এই পৃথিবীতে।
ধির পায়ে ছাদের কার্নিশের ধারে এসে দাড়ালাম। চাঁদের আলোতে পুজোর লাইটিঙের খাঁচাটার ছায়া পরে অর্ধেক ছাদ ঢেকে গেছে।
আমি কার্নিশের ধারে সিমেন্টের বেদিতে বসলাম, রেলিঙ্গের ওপর কনুই রেখে মাথাটা হাতের ওপর রাখলাম। বহুদিন পরে এইভাবে ছাদে বসেছি। পার্থ থাকতে কতবার বলতাম চলো ছাদে গিয়ে বসি, রাতের বেলায় ও হিসেব নিকেশ করতো বলে সেই সখ আর পুর্ন হয়নি কোনোদিনই। মাঝে মাঝে একা এসে বসতাম এইভাবে আর নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
আজও সেই ভাবে বসে আছি। বেহালার সুরটা কখন থেমে গেছে খেয়াল করিনি।
‘ঘুমাননি?’
প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলাম। রাহুল কখন আমার পিছনে এসে দারিয়েছে।
আমি ইতস্ততঃ উত্তর দিলাম ‘ন না মানে, ঘুম ভেঙ্গে গেছিলো তারপর আর আসছেনা দেখে ঊপরে এলাম, ভাবলাম যদি ছাদের হাওয়ায় আবার ঘুম আসে। তুমি এত রাত অব্দি জেগে থাকো?’
‘আমার এত রাতেই ঘুমোনোর অভ্যেস।’
‘আবার সকালে উঠে যে হাঁটতে বেরোও?”
‘অভ্যাস হয়ে গেছে। অসুবিধে হয়না।’
‘ঠিক আছে আর দেরি কোরোনা, এবার শুয়ে পরো?’
‘আপনি?’
‘আমি একটু বসে চলে যাবো।’ ওকে বুঝতে দিতে চাইলাম না যে ওর বেহালা বাজানো শুনেই আমি এসেছি।
‘আমার তাড়া নেই, আপনার অসুবিধে না হলে আমি থাকতে পারি’
কেন বললো এমন? মনে মনেই ভাবতে ভাবতে ওকে বললাম ‘বেহালা বাজানো কোথায় শিখেছো?’
‘কেউ শেখায় নি, এমনি ছোটবেলা থেকে চেষ্টা করতে করতে এইটুকু পারি। যা করি সেটা নিজের থেকেই শিখেছি।’
‘বাহঃ অসাধারন। কাউকে এত সুন্দর বাজাতে আমি শুনিনি। তাও বিনা তালিমে।’
‘এই যে বললেন, এটাই আমার শক্তি। এটাই প্রেরনা দেয় যে আরো ভালো করে বাজাই।’
‘যে শুনবে সেই বলবে। শুধু আমি কেন?’
‘ম্যাডাম একটা কথা বলবো?’
আমি মনে মনে অবাক হোলাম এত রাতে একটা কথা কি হতে পারে? রিয়ার ব্যাপারে কি? তাও বললাম ‘হ্যাঁ বলো’
‘আপনাকে দেখে আমার বউদির কথা মনে পরে।’
‘বউদি? কোথায় বহরমপুরে থাকেন?’
‘নাহ্* এখন আর নেই?’
‘বুঝলাম না?’
আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে কিছু বলতে গিয়ে ওর গলা বুজে এলো নিজেকে সামলাতে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
কয়েক মুহুর্তে ও স্বাভাবিক হয়ে ম্লান হেঁসে বললো ‘উনি আর এই পৃথিবীতে নেই?’
‘সেকি? কি হয়েছিলো?’
‘ক্যান্সার’
‘আহারে! কত বয়েস হয়েছিলো?’
‘কত হবে আপনার ই মতন হবে।’ উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলো ‘খাচায় বাঁধা পাখি ছিলেন উনি, উড়তে চাইতেন কিন্তু পা তো দাঁরে বাধা ছিলো সোনার শিকল দিয়ে।’ বলতে বলতে ওর গলা বুজে এলো।
আমি চুপ করে রইলাম।
‘আপনাকে দেখেও আমার তাই মনে হয়, এত শোরগোলের মধ্যেও আপনি খুব একা, সেও ছিলো। বন্ধু ছিলাম একমাত্র আমি। সে ছিলো আমার কাজলা দিদি। চাঁদ উঠলে সেই কাজলা দিদি আমাকে আজও কাঁদায়’
আমি বরাবরের নরম মনের। কি জানি ওর কথাগুলো আমাকে কেমন নাড়িয়ে দিলো। আমার সামনে বসে এক পুরুষ মানুষ, স্মৃতির তাড়নায়, অশ্রুসজল, এই প্রথম দেখছি। এতদিন দেখেছি, পুরুষজাতি সিংহের মতন। ভাবলেশহীন, সবার উর্দ্ধে, গতানুগতিক জীবনজাপনের অনেক উর্ধে। সেন্টিমেন্ট, স্মৃতির তাড়না, মন খারাপ করা, এগূলো এদের জিবনের শব্দকোষে অনুপস্থিত। চোখের সামনে সেই পুরুষ সিংহের ধ্বজাধারি এক প্রতিনিধিকে মানসিক জাতনায় দুর্বল দেখে আমারও চোখের কোন চিকচিক করে উঠলো যেন। তবুও নিজেকে সংযত করলাম। ওর ব্যাক্তিগত ব্যাপারে আমি কিই বা বলতে পারি, শুধু পাশে বসে শোনা ছাড়া।
কয়েক মিনিট চুপচাপ, তারপর রাহুল নিজেকে সামলে নিলো। আমি অপেক্ষা করে ছিলাম।
‘জানেন ম্যাডাম, প্রথম দিন আপনাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিলো এতো আমার কাজলা দিদি, আর ভাগ্য দেখুন, আপনার আশ্রয়েই এসে রয়েছি। জানেন আপনি রান্না করেন, আমার দেখে মনে হয় যেন আমার বউদি রান্না করছে। সেই একই গন্ধ, সেই ঝাঁজ, আমার চোখে জল চলে আসে। আমাদের বাড়ির পুরুষেরা ব্যাবসা বানিজ্য নিয়ে ব্যাস্ত থাকতো, তাদের যোগান দেওয়া ছিলো অন্দরমহলের মেয়েদের কাজ। বৌদি একাহাতে সামলাতো। জ্ঞ্যান হওয়ার পর থেকে মাকে দেখে আসছি, মাথার যন্ত্রনায় সজ্জাশায়ি, অনেক দামি ডাক্তারও সেই রোগ ধরতে পারেনি, একবার মাথা যন্ত্রনা ধরলে সেটা তিন চার দিন থাকতো। ওষূধ একটাই ঘুম। আমাকেও ঠিক মতন নজর দিতে পারতো না। আমি অন্দরমহলে থেকে থেকে, পোষা পাখি, কুকুর, এদের সঙ্গি করে বড় হয়ে উঠছিলাম। বাবা কাকা দাদা, এরা ভালো চোখে দেখছিলো না আমার এই মায়াদয়া, নরম সরম ব্যাপারগুলো। আমাকে হস্টেলে পাঠাবার বন্দোবস্ত করেই ফেলেছিলো। রুখে দাড়িয়েছিলো আমার কাজলাদিদি। শেষে তার জেদের কাছে সবাই পরাজিত হয়। আমার যত্নআত্তিতে যাতে খামতি না পরে, যাতে আমার ভালোবাসার ভাগিদার কেউ না থাকে, আমি যাতে ভবিষ্যতে ওকে দোষ না দিতে পারি, সেই জন্যে নিজেও সন্তান ধারন করেনি। বড় হওয়ার পরে এসব জানতে পারি। আমার সাথে সব শেয়ার করতো। কিন্তু ভগবান আমাদের এই সম্পর্ককে ভালো চোখে দেখলো না। এমন অস্ত্র প্রয়োগ করলো যে ধিরে ধিরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলো। আমিই ওর মুখে আগুন দিয়েছিলাম। জানিনা কি নাম দেবো সেই সম্পর্কের, তবুও একাধারে সে আমার, মা, প্রেয়সি, বান্ধবি, গুরু, সব ছিলো।
অনেক্ষন পরে আমি মুখ খুললাম ‘যে যাওয়ার সে যাবেই। তার প্রভাব তো থাকবেই। মনও খারাপ করবে। এই দেখো আমারও তো প্রায় দশ বছর হোলো সেই ভাবে কথা বলারই লোক নেই। রিয়ার সাথে বন্ধুত্ব কম, অভিভাবকত্ব বেশি। এখন ও বড় হয়েছে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে, আমি আরো একা হয়ে পরছি। তা বলে জীবন তো থেমে থাকবেনা। তোমাকেও এগিয়ে যেতে হবে, জিবনের লক্ষ্য স্থির করে। আমার স্বামি বলতেন, তুমি যদি পাঁচ ফুট উচুতে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করো তাহলে তিন ফুট পারবে, কিন্তু লাফাতে শিখে যাবে, তাই জিবনের লক্ষ্য স্থির করো। জীবন খুব কঠিন, পরম আত্মিয়র মৃত্যুতেও আমাদের শোক ছাপিয়ে খিদে পায়, ঘুম পায়। রক্তে মাংসে গড়া মানুষ আমরা, থেমে থাকতে পারবো না, সন্মান আর সামাজিকতা বজায় রাখতে আমাদের প্রতিদিন লড়তে হয়।’
‘আমি আর আপনি একই নৌকার যাত্রি, ভেসে চলেছি, কিন্তু যানিনা কোথায় কুল।’
‘এই বয়েসে এত হতাশ হোয়োনা। জীবন এতটাও খারাপ না, শুধু ভগবানের কাছে প্রার্থনা করো, যাতে তুমি জিততে পারো।’
‘সেই চেষ্টায় করছি। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত। বেদনাময় স্মৃততির সেই যায়গা থেকে চলে এসেছি। সেখানে থাকবো কি করে, প্রতিপদে তার অস্তিত্ব জ্বলজ্বল করছে, অথচ সেই নেই। মেনে নিতে পারছিলাম না, সবার সাথে বিদ্রোহ করে মৃত্যুসজ্জায় সায়িত মাকে ছেরে চলে এসেছি। ভাবছিলাম সব নতুন করে শুরু করবো। কিন্তু, স্মৃতি বড়ই আঁঠালো জিনিস। এ ছেরে জেতে চায় না।
‘চলো আর রাত কোরোনা, এবার শুয়ে পরো, তোমার কন অসুবিধে হলে আমাকে নিঃসঙ্কোচে জানিয়ো। তোমার বোউদির জায়গা না নিতে পারি, কিছুটা তো তোমার কষ্ট লাঘব হবে। আর কাল থেকে আমাদের সাথেই চা খেয়ো সকাল বেলা। ভয় নেই পয়সা লাগবেনা।’
রাহুল মুচকি হাসলো সন্মতির লক্ষ্যন হিসেবে। ‘আপনার নিজস্ব সময়ে আমি থাবা বসিয়ে দিলাম, সরি। আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনার শরীর খারাপ লাগছে হয়তো।’
আমি বোকার মতন বলে ফেলতে গেছিলাম ‘আসলে তুমি বেহালা বাজাচ্ছিলে...’
রাহুল অসহায়ের মতন মুখ করে বললো ‘ওহো আমি বুঝতে পারিনি যে এত রাতে এই জন্যে ডীস্টার্ব হবে, কাল থেকে দরজা জানলা বন্ধ করে বাজাবো’।
‘না না বিরক্ত কেন হবো, বরঞ্চ ভালোই লাগছিলো। ভাবছিলাম, এত করুন সুর কি করে বাজাও তুমি’ আর রাখঢাক করতে পারলাম না।
‘যানিনা কোথা থেকে আসে। কিন্তু মন থেকে উঠে আসে, কোথাও শুনিনি। আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমার খুব ভালো লাগছে। এটা আমার বিড়াট প্রাপ্তি। আর সময় নষ্ট করবো না আপনার, সকালেও অনেক কাজ আছে আপনার। শুভরাত্রি।’
আমি রেলিঙ্গে হাতের চাপ দিয়ে উঠতে যাবো হঠাত এক ঝটকাতে ছিটকে পরে যাচ্ছিলাম। মাথা ঘুরে গিয়ে চোখ বুজে আসছে। রাহুল শক্ত হাতে আমাকে ধরে নিয়েছে।
কতক্ষন জানিনা, চোখ খুললাম রাহুলের ঘরে। বুঝলাম মাথার চুলগুলো ভেজা। আমি সচকিত উঠে বসতে গেলাম। রাহুল আমার দুকাঁধ চেপে ধরলো। ‘তাড়াহুরো করবেন না’ উঠে দাড়াতে গেলে আবার পরে যেতে পারেন।’ ওর মুখে একটা আমাকে আস্বস্ত করার মতন একটা হাসি, যেন বলতে চাইছে, কোন ব্যাপার নয়।
তারপর মুখে বিরক্তি ভরে বললো ‘ ইলেকট্রিকের কাজ করেছে, পুরোনো টেপ দিয়ে। সেটারই একটা খুলে পরে গেছে যেটা আপনি হাত দিয়ে ধরে ফেলেছিলেন। এরা কাজ করে কোন ছিরিছাদ নেই। কাল সকালে আমি নিজে সব টেপগুলো চেঞ্জ করে দেবো। এটূকু বিদ্যে আছে, ওদের হয়তো নেই, তাই এরকম কাণ্ডজ্ঞ্যানহীন কাজ করতে পারে।’
আমি উঠে বসলাম বললাম ‘এখন ঠিক আছি। আমি যাই, রিয়া উঠে আমাকে দেখতে না পেলে চিন্তা করবে।’ খেয়াল করলাম যে আমার মাথায় জল দেওয়া হয়েছিলো, সেই জলে ওর বালিশ ভিজে গেছে।
আমি বললাম ‘তোমার বিছানা তো ভিজে গেছে চাদর আছে?’
আপনি চিন্তা করবেন না। আমার এক্সট্রা চাদর আছে। আর পুরো বিছানা তো ভেজেনি। আর আমার ঘরের এমন হাল, যে আপনাকে কিছুক্ষন রেস্ট নিতে বলবো তার উপায় নেই।’
‘তুমি দাঁড়াও আমি একটা বালিশ নিয়ে আসছি, এই ভেজা বালিশে শুলে ঠান্ডা লেগে যাবে’
রাহুল হা হা করে উঠলো ‘ আরে এই শরীর নিয়ে আবার ওঠা নামা করবেন কেন? থাক না? আমার অভ্যেস আছে।’
আমি উঠে দাড়ালাম মাথাটা একটু একটু ঘুরছে, কিন্তু মুখে বললাম না। লজ্জা লাগছে এরকম কাউকে বিব্রত করতে।
‘আপনি ঠিক আছেন তো?’
‘একদম’
কেমন যেন কোমোরের কাছটা ভেজা ভেজা লাগছে শরীরে একটা কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। তবুও বললাম, আমি চলে যেতে পারবো, ধন্যবাদ তুমি না থাকলে’
‘ম্যাডাম আমি নিচে দিয়ে আসবো?’
‘না তুমি অনেক করলে? এবার ঘুমোতে যাও। আমার আর কোন সমস্যা নেই’
ঘরে এসে প্রথমেই ভেজা শাড়ি আর ব্লাউজ চেঞ্জ করা দরকার ভেবে, কাঠের আলমারি থেকে একটা শাড়ী আর ব্লাউজ টেনে নিলাম। লজ্জা লাগছে বেশ। রাতের বেলা ব্রা পরা ছিলো না।
শরীরে এখনো অদ্ভুত একটা অস্বস্তি হচ্ছে। কেন হচ্ছে। বুঝতে পারছিনা। দুপায়ের মাঝখানে বেশ ভিজে ভিজে লাগছে। কেন?
বহুদিন পরে পুরুষের ছোয়া পেয়ে। আমি না ভাবছিলাম এসব চিন্তা করবো না। রিয়া যার ওপর দুর্বল তাকে নিয়ে আমি ভাবছি। ছিঃ।
কোনরকমে শাড়ি বদলে বিনা ব্লাউজে শুয়ে পরলাম। চুলের জল এসে স্তনগুলো ভিজে গেছে। কিন্তু তাতে এরকম শক্ত হয়ে আছে কেন? কেন আমার শরীরের মধ্যে একটা যৌনতৃপ্তির অনুভুতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আমার শরীর কোন পুরুষদণ্ড মন্থন করেছে। পায়ের মাঝে ভেজা চ্যাটচ্যাটে ভাবটা যেন তার সাক্ষি। শাড়ি চেঞ্জ করার সময়ও খেয়াল করলাম, গুদের চুল চ্যাটচ্যাট করছে। তাহলে কি রাহুল? তা হয় নাকি? ঘুমন্ত কাউকে কি করা যায়? আর করেছে ভাবছিই বা কেন।
ধিরে ধিরে একটা অদ্ভুত ক্লান্তি আর একটা সুখানুভুতি শরীর মন ঘিরে ধরলো, ঘুমের কোলে ঢলে পরতে গিয়ে চমকে উঠে বসলাম। খুব খুব আবছা ভাবে মনে পরছে, রাহুলের মুখটা আমার মুখের ওপর ঝুঁকে রয়েছে। ঠোঁট নেমে আসছে ঠোঁটের ওপর। সত্যি কি তাই হয়েছিলো, না আমার মনের কোন গভিরে লুকিয়ে থাকা এক সুপ্ত বাসনা এই চিন্তাটাকে আমার অবচেতন মনে উস্কে দিয়েছে। ধরমর করে উঠে বসলাম। সত্যি কি হয়েছিলো বোঝার চেষ্টা করছি। রাহুল কি আমার সংজ্ঞাহীনতার সুজোগ নিয়ে আমাকে ভোগ করেছে? না বহুদিন পরে পুরুষমানুষের শরীরের সংস্পর্শে এসে আমার শরীর অকারনে জেগেছে। তাহলে সেই ঠোটে ঠোটের ব্যাপারটা? মুখে ভিতর মনে হচ্ছে সত্যি কোন বহিরাগত পদার্থের স্বাদ।
কিছুক্ষন চিন্তা করে নিজেই হেসে ফেললাম ‘আরে আর্টিফিসিয়াল রেস্পিরাশান বলে একটা জিনিস আছে। হয়তো ...। নাহলে আবার কি? এর মধ্যে এসব সম্ভব নাকি? আমার প্রান বাঁচালো আর আমিই...।
মনের মধ্যে কেমন একটা ভালো লাগার আবেশ কাজ করছে। কেন? এর উত্তর নিজেই জানিনা। কেন প্রশ্রয় দিচ্ছি এই ভালোলাগা সেটাও যানিনা। তবু মন বলছে, কত আর বয়েস তোর, একটু স্বার্থপর হয়ে যদি নিজের অকারন ভালো লাগাকে প্রশ্র্য় দিস্* তাতে কি এমন ক্ষতি। এতে তো কারো ক্ষতি হচ্ছেনা। নিজের মধ্যেই সিমাবদ্ধ রয়েছে। ভালো লাগাটা কি আমি নিজে জানিনা। রাহুলের সরলতা? ওর মনের গভিরতার ছোঁয়া পাওয়া? না বহুদিন পরে কোন পুরুষ আমার এই অপ্রয়োজনিয় শরীরটাকে শুশ্রুষা করলো সেই জন্যে। মনের ব্যাপারটা প্রশ্রয় দিতে সাহস পাচ্ছিনা। রিয়ার অধিকারে হাত বাড়ানো হয়ে যাবে। মা হয়ে একই পুরুষে লুব্ধ হওয়া নক্কারজনক। তাই সেই চিন্তাকে ঝাটা হাতে তাড়ালাম। পরে রইলো শারিরিক ব্যাপারটা। ভাবছি হোক না দুর্ঘটনাবশতঃ, কিন্তু দিনের শেষে সেও তো পুরুষ মানুষ। নিজের কল্পনাতেই না হয় ধিরে ধিরে ওকে প্রশ্রয় দেবো, খুলে দেবো এতদিনের বন্ধ করে রাখা এই নাড়িশরিরের দরজা। সেখানে তো আমার পাত্র বাছাইয়ের স্বাধিনতা আছে। আর পার্থর স্মৃতি? কেমন যেন ফিঁকে লাগছে। সে ছিলো। এ আছে। পার্থর ছিলোনা এই অকপট মন খুলে কথা বলার মতন সময় আর ধৈর্য্য। সমাজে বঞ্চিত হয়ে নিজের জায়গা করে নেওয়ার তাগিদে, মনের সেই কোমোল দরজা বন্ধ হয়ে গেছিলো সদ্য কৈশোর পেরোনো যুবকের। বিয়ের আগে নিজের দুঃখ কষ্ট যাও বা ভাগ করে নিতো, বিয়ের পরে লড়াই লড়াই আর লড়াই। রাজাবাজারের বস্তি থেকে যাদবপুরের ভাড়া ফ্ল্যাট, তারপর দৌর দৌর দৌর আর এই গড়িয়ার বাড়ি, চাপা পরে গেছিলো সেই পার্কে বা গঙ্গার পারে বসে কাধে মাথা রেখে, দৃষ্টি বহুদুরে ভাসিয়ে দিয়ে মনের কথা উগরে দেওয়ার সেই দিনগুলো।
নিয়ম করে ভোর হোলো। হয়তো ঘন্টা খানেক ঘুমিয়েছিলাম। নিচে কোলাপ্সিবল গেট টানার আওয়াজ আর রাস্তায় রিয়ার গলা শুনে বুঝলাম, ও সারাদিনের জন্যে নিজের মনের খোঁড়াক জোগার করতে বেরিয়ে পরেছে। রাহুলও সঙ্গেই আছে। একটু বিব্রত লাগলো। কাল রাতের কথা জানলে রিয়া কি না করে বসে। এখনি হয়তো ডাক্তার নিয়ে হাজির হবে।
চটপট উঠে স্নান করে নিলাম। মনের ভ্রম দ্বিগুন হয়ে ফিরে আসছে হাল্কা গরম জলের ঝর্নায়। নিজেকে ভিষন ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। শাওয়ারের জলে ভিজতে থাকা নগ্ন শরীরটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছি, এখনো অহঙ্কার করার মতনই সম্পদ আছে আমার। পুরুষ মানুষের কাম উস্কে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্টরও বেশি।
অলঙ্কারহীন আবরনহীন ৫ফুট ৫ ইঞ্ছির এই শরীরটার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলাম। কেন এরকম করছি আমার কাছে উত্তর নেই। শুধু নিজের ভালো লাগার জন্যে, নিজের সামাজিক অবস্থান ভুলে সামান্য স্বার্থপর হচ্ছি। এতে কার কি বলার আছে। এটা তো সত্যযুগ না, যে কেউ আমার ভিতরে কি হচ্ছে দৈববলে পরে ফেলবে।
রিয়ার আচরনে সেরকম কিছু ঠাহর করতে পারলাম না। রাহুল কি তাহলে বলেনি রিয়াকে রাতের কথা। নিশ্চয় বলেনি। স্বাভাবিক ভাবে বলার কথা। কিছু হয়তো ভেবে বলেনি। সিরিয়াস কিছু হলে নিশ্চয় বলতো। ও চিন্তা করবে ভেবেই হয়তো বলেনি। তিনজনে মিলে চা খেতে খেতে রিয়া আমাকে দেখিয়েই রাহুলের একটা ইন্টারভিউ মতন নিয়ে নিলো। বুঝলাম ইচ্ছে করেই আমার সামনে এই কথাগুলো বলছে যাতে আমি পরে ওকে দোষ না দি।
কাল রাতের পরে ছেলেটার ওপর কেমন একটা দুর্বলতা জন্মেছে, সেটা হাজার চেষ্টা করেও অস্বিকার করতে পারছিনা। শুধু বুঝতে পারছিনা সেটা কি ধরনের দুর্বলতা। রিয়ার সাথে ওকে দেখে আমার বেশ লাগছে। রিয়ার এই আগ বাড়িয়ে ওকে আমার এই হোম ডেলিভারিতে যুক্ত করার প্ল্যানে আমি ওর ভবিষ্যতই যেন দেখতে পাচ্ছি।
ছেলেটার চোখদুটো যেন হরিনের মতন সরল টানা টানা। গালে একদিনের পাতলা দাড়ি ওর ফর্সা রঙটাকে আরো ফুটিয়ে তুলেছে। লম্বাটে মুখ টিকালো নাক, সব মিলিয়ে এক দেবশিশুর আদল। মনে হয় যেন যিশুখৃষ্ঠ।
গাটা সিরসির করে উঠলো। হঠাত যেন চোখের সামনে ঝল্কে উঠলো, ওর গোলাপি ঠোঁটদুটো আমার স্ফিত ঠোঁটে নেমে এলো। মুহুর্তের মধ্যে শরীর বিদ্রোহ করতে শুরু করলো, মাথার সমস্ত কোষগুলো দপদপ করতে শুরু করলো, রক্ত প্রবল বেগে আমার ধমনি দিয়ে বইতে শুরু করলো।
মনে হচ্ছিলো নিজেকে নিজে থাপ্পর মারি। মেয়ে যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে, তাকে নিয়ে কুচিন্তা করছি। এ কেমন মা আমি। ছিঃ।
মনে হচ্ছে আমার অস্বস্তি যেন ওরা দেখে ফেলছে, আসলের মনের ভাব তো মুখেই প্রথম পরে। কামেচ্ছা জাগলে মানুষের নাকের পাটা ফুলে যায়। তাই চট করে ঘর থেকে উঠে গিয়ে সুবলাকে তারা দিতে শুরু করলাম। স্বাভাবিক হতে কিছুক্ষন সময় নিলাম।
অনেক কিছু ঠিক হোলো। আজ বা কাল থেকে রাহুল আমাদের হোম ডেলিভারির ম্যানেজার। ভাড়ার বদলে এই ব্যাবস্থা। সাথে আমাদের সাথেই ওর খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা, সাথে চা টিফিন সব কিছু। শুধু ও মুখ কাচুমাচু করে আবদার করলো কয়েকবার বেশি চা খাওয়ার। আমি সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। আমিও প্রায়ই চা খাই।
একটা জিনিস আমাকে ভাবাচ্ছে, ও কেন রিয়াকে কাল রাতের কথাগুলো বললো না। রিয়া চিন্তা করবে বলে? না যা ঘটার ঘটে গেছে, আর ঘেটে কি হবে এই ভেবে? নাকি আমার সন্দেহগুলো অমুলক নয়, যা ভাবছি যে, মনের অবচেতনে দেখেছি সেটা সত্যিই ঘটেছিলো।
কাজের চাপে আর ভাবার সু্যোগ পেলাম না। ভাবলাম আজ রাতে শোয়ার পরে এটা নিয়ে ভাববো। অন্ততঃ কিছুটা সময় তো কেটে যাবে।
সন্ধ্যেবেলা রাহুল এলো। রিয়াও ফিরে এসেছে বাড়িতে। তিনজনে মিলে ঠীক করলাম ওকে এখন কি কি দায়িত্ব নিতে হবে। যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে, বাজার সামাল দেওয়া। এর মধ্যে এর পর থেকে আমি আর থাকবোনা। রাহুলই করবে আর সপ্তাহে সপ্তাহে আমার সাথে হিসেব নিয়ে বসবে। পেমেন্ট কালেকশানও আর ডেলিভারিও ওর দায়িত্ব। ডেলিভারিটা আমি ওকে দিতে চাইছিলাম না। বড় ঘরের ছেলে এরকম কাজ করছে বলে সব সুজোগ নেবো তা কি হয়? ও আমার মনোভাব বুঝে নিজে জেচে সেই দায়িত্ব নিলো। বললো আপনি এখন থেকে শুধু অন্দরমহল দেখুন, নিশ্চিন্তে আমাকে ছেরে দিন বাইরের কাজগুলো।
ছেলেটা খুব স্মার্ট সেটা কয়েকটা ব্যাপারেই বুঝতে পারলাম। প্রথমেই আমাকে বললো যে সপ্তাহের মেনুগুলো ঠিক করে নিলে বাজার করার সুবিধে হয়। আমি আজ পর্যন্ত এরকম চিন্তা করিনি, সকালে উঠে যা মনে হোতো তাই রান্না করতাম। এমনও হোতো বাজারে গিয়ে সেটা না পেয়ে প্ল্যান চেঞ্জ করতাম। এইভাবে সপ্তাহের মেনু ঠিক করে নিলে সত্যি বাজারের সুবিধে, রোজ রোজ কাউকে বলতে হয়না যে কি হবে আজ। তার ওপর বুঝেশুনে বাজার করা যায়, যাতে অপচয় কম হয়।
এরপর ও যেটা বললো সেটাও আমি কোনদিন ভাবিনি, সম্ভাব্য কাস্টোমারের লিসট। কে রোজ নেয়, কারা কারা শনি রবিবার শুধু নেয়, কারা কারা মাঝে সাঝে নেয় সেসব। যুক্তি যেটা দিলো সেটা হোলো, প্রতিদিন কয় প্লেট রান্না হবে সেটা জানা থাকলে এক্সট্রা বাজার করার দরকার পরবেনা। অপচয় কমবে, সাথে খরচ। কেউ শেষ মুহুর্তে কিছু অতিরিক্ত চাইলে, সেটা স্টকের ওপর নির্ভর করে হ্যাঁ বলতে, রোজ পাঁচজন অতিরিক্ত হবে ভেবে রান্না করলে, আদপে পাঁচটা প্লেট লসই হবে। আর লাভ বাড়ানোর জন্যে সাপ্লাইয়ারদের সাথে কথা বলে দর কমাতে হবে, রোজ যেখান থেকে এত এত বাজার হবে তারা বাজারচলতি দাম নিলে কি করে হবে। কমাতেই হবে, এরপরও দরকার হলে ওরা ঘরে এসে মাল দিয়ে যাবে তারপর পেমেণ্ট নেবে, সেটাও সপ্তাহে একবার। রাহুল নিজে দায়িত্ব নিয়ে এসব করবে।
বুঝলাম ব্যাবসায়ি বাড়ির রক্ত কথা বলছে। আমিও ব্যাবসায়ির ই বিধবা, কিন্তু এইভাবে ব্যাবসা ব্যাপারটা ভাবিনি। ভাবতাম লোকের দয়ায় চলছি। লোকেরও যে আমাকে দরকার এতদিন পরেও বুঝতে পারিনি। কাজের ব্যাপারে যে ও কত সিরিয়াস সেটা বুঝতেই পারা যাচ্ছে। মন বলছে, এই ছেলে আগামি দিনে সব কিছুর ম্যানেজার হয়ে দাঁড়াবে। আপত্তি নেই। মেয়েটা তো সঠিক হাতে যাবে। এই ব্যাবসা ঠিক মতন চললে, চাকরি বাকরির সত্যি দরকার হয় না। শুধু বাজার বাড়াতে হবে। গুনগত মান তো আমার হাতে। সেখানে আমি নো কম্প্রোমাইজ। মনের মতন রান্না না হলে আজও সেগুলোর স্থান ড্রেনে হয়।
সব সেরে উঠতে এগারো টা বেজে গেলো। পাড়া নিঝুম হয়ে আসছে। আশেপাশের দুএকটা বাড়িতে হাল্কা টিভি চলার মতন আলো নরাচরা করছে। রিয়ার ঘর বাইরে থেকে বন্ধ। এই সময় ও বন্ধু বান্ধবের সাথে কিছুক্ষন গল্প করে। তারপর ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু লাইট নেভানো দেখে মনে হয় ঘুমিয়েই পরেছে। একটু ঘুমকাতুরে মেয়ে আমার। ওর কিছু কিছু ব্যাপার আমাকে অবাক করে। বয়েসের তুলনায় বেশিই ম্যাচুওরড মনে হয় ওকে। ঠিক যেন আমার অভিভাবক। কিন্তু ছেলেমানুষি যখন করে তখন সেটার পাঁচ বছরের শিশুকেও হার মানায়। কিন্তু সেটাও পার্থ চলে যাওয়ার পরে দুর্লভ দৃশ্য। বাবাকে খুব ভালোবাসতো। মেয়ে মাত্রই বাবাকে বেশি ভালোবাসে। পার্থর শেষ শয্যার পাশে ওকে দেখেছি অদ্ভুত রকম কঠিন। বরঞ্চ আমি প্রচণ্ড ভেঙ্গে পরেছিলাম। ঐ বয়েসেও ও সব দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করেছিলো, সাথে আমার খেয়াল রাখা। কোন্দিন খামতি হয়নি। ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে সব কিছুর দিকে ওর খেয়াল, এমন কি আমার ঋতুশ্রাবের সময় ব্যাবহারের প্যাড আছে কিনা সেটাও খেয়াল রাখতো। নিজের পড়াশুনো, কোচিন, বড় হওয়ার পরে দু একটা টিউশানি করা ছাড়া, অন্য কোনদিকেই মন দিতে পারেনি। ওর অনেক বান্ধবি আমাদের বাড়ি এসেছে। তাদের গল্পও শুনেছি ওর মুখে বা ঘরে হাটাচলার মাঝেই কানে যা এসেছে। সবারই মনের মানুষ বেছে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু মেয়ের মধ্যে আমি কোনদিন সেই লক্ষন পাইনি। প্রেমে পরলে মানুষের যে পরিবর্তন হয় সেটা লুকানো যায়না। আর আমার মেয়ে লুকানোর মেয়ে না। সোজাসাপ্টা ব্যাপারই ও পছন্দ করে। অবাক হোতাম, ভেবে চারপাশে এত প্রেমপরিনয় ঘটে চলেছে, ওর কি কাউকে মনে ধরছে না। কেন? ও কি রকম পুরুষ খুজছে। সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারিনি। হয়তো রাহুলের মধ্যে ও ওর সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছে। তাই মনটা ভালো লাগছে ওর ভালো লাগা দেখে। প্রেমে পরলে মানুষ লুকাতে পারেনা। রিয়ার হাবভাবও তাই বলছে। গান শুনছে। সারাক্ষন মুখে হাসি লেগে আছে। এটা ওটা ভুলে যাচ্ছে। এগুলো তো প্রেমেরই লক্ষন। কিন্তু দুজনেই রাজি তো? রাহুল আগে থেকে কাউকে মন দিয়ে রাখেনি তো। তাহলে মেয়েটার স্বপ্নভঙ্গ হবে। নিজের চোখে সেটা আমি দেখতে পারবোনা। ওরা কি এই ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছে? সময় করে জিজ্ঞেস করতে হবে রিয়াকে।
শুয়ে শুয়ে ভগবানকে বলছি আর বিচলিত কোরোনা আমার মন। তুমি তো আমাকে যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছো, এরপর এরকম প্রলোভন দেখিয়ো না। এটা অন্যায় হচ্ছে। আমারই প্রায় মেয়ের বয়েসি একটা ছেলেকে নিয়ে মনের মধ্যে সুপ্ত কাম আবার জেগে উঠছে, যেই ছেলেটাকে আমারই মেয়ে মন দিতে চলেছে, তাকে নিয়ে চিন্তা করা তো ধর্মেই সইবেনা। এতো ঘোর পাঁপ। এই পাঁপ আমাকে দিয়ে করিয়ো না। দয়া করো হে ভগবান।
ভগবানকে ছোটবেলা থেকেই ভরসা করি। আজও আমার বিশ্বাস অটুট যে তিনি আছেন। তিনি যা করেন তা মঙ্গলের জন্যেই করেন। এই জগতের সমস্ত কর্মকাণ্ড তার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত, আমরা তো তার মাধ্যম মাত্র।
সেই ভরসাতে দুচোখ বুজলাম। আজকে আর কোনকিছুই আমাকে বিছানা থেকে নড়াতে পারবেনা।