10-06-2019, 04:52 PM
সেদিন বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর আমি একফোঁটা পড়ায় মন দিতে পারিনি। যে ফ্যান্টাসিগুলো নিজেরই মনের আঙিনায় বেড়ে উঠেছিল সেগুলো কেমন যেন ম্রিয়মান হয়ে ওঠে। তমালকে হয়ত বার দশেক বার বিভিন্ন গল্প কল্পনার আকারে বলেছি। প্রতিবারই প্রধান পুরুষ চরিত্রের ভুমিকায় থাকত তমাল। এবং অবশ্যই আমার কল্পনায় নারী চরিত্র হত আমার নিজের মা। অদ্ভুত একটা পাপবোধ কিন্তু তার সাথে নিষিদ্ধ এক যৌনতা; আমি ক্রমশ এক সর্বনাশা নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ছিলাম।
সেদিন ঋত্বিকদার কথায় নতুন কয়েকটা শব্দের সাথে পরিচিত হলাম। এতদিন গল্পগুলো ছিল মূলত ৩ চরিত্রের। আমার মা ও তমাল এবং লুকিয়ে লুকিয়ে আমার সব দেখা। ঋত্বিকদা আমায় এক নতুন ফ্যান্টাসির সন্ধান দেয়। আমার আগের ফ্যান্টাসিগুলো কেমন একঘেয়ে লাগতে শুরু করে। সেইদিন থেকে কয়েকটা দিন আমার মনের ওপর দিয়ে একটা কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়।
আমার শিলিগুড়ির কলেজে রেজাল্ট খারাপ হওয়ার জন্য বাবা কোন মতেই দায়ী নয়, তবুও মায়ের বাবাকে দায়ী করা। ঝগড়া করে মায়ের কল্যাণীতে চলে আসা। বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে দাদুর থেকে বাড়ি কেনা। নিজের বাপের বাড়ির পাশেই স্থিতু হওয়া। আমি জানতাম এর কোনটাই বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী হয়নি। তাও কেন বাবা এইসবই মেনে নিল। বাবার অক্ষমতাটা ঠিক কোন জায়গায়? বারবার করে এই প্রশ্নগুলো আমায় নাড়া দিত। ঋত্বিকদার গল্পটা আমার মনে মোট তিনটে নতুন শব্দর জন্ম দেয়। ‘কাকোল্ড, হট ওয়াইফ ও বুল বা আলফা মেল’।
টানা তিনদিন রেনি সিজিন হওয়ায় আমি কলেজ যায়নি। একা ঘরে দরজা বন্ধ করে বহু চেষ্টা করেছি নিজের কল্পনার বৃক্ষটাকে জাগিয়ে তুলতে কিন্তু পারিনি। হয়ত আমার ফ্যান্টাসির অভিমুখটাই পালটে গেছিল।
ঋত্বিকদার সাথে দেখা হওয়ার ৩ দিন পরের কথা। এই তিনদিন অনর্গল বৃষ্টি হওয়ার কারনে কলেজে যাওয়া হয়নি। সেদিন আবার রোদ বেরিয়েছিল। জানতাম একাকীত্ব থেকে আবার একটু মুক্তি পাওয়া যাবে। সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলেজে। কলেজ মাঠের কাছাকাছি আসার পরই দেখি পেছন থেকে কেউ একটা ‘অরুপ’ বলে ডাকল। পেছন ঘুরে দেখি তমাল। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম।
‘চল আজকে তোকে একটা দারুন জায়গায় নিয়ে যাবো’।
মাঝে ৩ দিন কলেজে যায়নি। সত্যি বলতে কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে আমারও ছিলনা। তাই ওকে জিজ্ঞেস করলাম
‘আরে খুব ভালো হয়েছে তোর সাথে দেখা হয়ে গেলো। আমারও কলেজে যেতে ইচ্ছে করছে না’।
‘চল আমার সাথে’। কোথায় যাচ্ছি, কতদুর কিছুই জানালো না। বাধ্য হয়ে আমিও ওর সাথে সাইকেল চালিয়ে চলতে আরম্ভ করলাম।
বুদ্ধপার্ক পেরিয়ে সেন্ট্রাল পার্ক আর তারপর ঘোষপাড়া। এই দিকটা আমার খুব একটা চেনা নয়। অনেকদিন আগে একবার তমালকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওর বাড়ি কোথায়। তখন বলেছিল ঘোষপাড়া। মনে খটকা লাগলো, ওকি আমাকে ওর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
আরও ২-৩ মিনিট পর পৌছালাম অট্টালিকার মতন বড় একটা বাড়িতে।
‘অরুপ এটাই আমার বাড়ি, আজ বাবাও বাড়িতে থাকবে। তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো’।
আমার বেশ ভালো লাগছিলো, যতই হোক বেস্ট ফ্রেন্ড এর বাড়ি বলে কথা। দেখলাম ব্যাগের ভেতর থেকে চাবি বার করে দরজাটা খুলল। বুঝলাম এই অট্টালিকার মতন বাড়িতে শুধুই দুটি ব্যক্তি থাকে, তমাল ও ওর বাবা। আমি একদৃষ্টিতে চারপাশ দেখছিলাম। সেই বয়সেও এটা বুঝতে শিখেছিলাম যে বাড়িতে একটা মেয়ে না থাকলে সংসারটা প্রচণ্ড অগোছালো হয়ে যায়। এটাও জানতাম তমালের মা ছোটবেলায় মারা গেছে, তাও ঘরদোর এতো পরিপাটি করে কিকরে সাজানো তা বুঝতে পারছিলাম না।
‘কিরে এভাবে কি দেখছিস?’
কি বলব তমালের প্রশ্নের উত্তরে বুঝলাম না। এটা তো বলা যায়না তোর মা নেই তাও কিকরে এতো পরিপাটি করে সব সাজানো।
হয়ত তমালের মধ্যে অন্যের মনকে পড়ে নেওয়ার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।
‘এটাই ভাবছিস তো। আমার মা ছোটবেলায় মারা গেছে তাও কিকরে এরকম সব সাজানো গোছানো? আমার বাবা আমায় কোনোদিন মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি’।
আমি কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলাম। এটা হয়ত কাউকে বলার অপেক্ষা রাখেনা বাবা ও মা এইদুজন ই মানুষের জীবনের সবচেয়ে আপন। এদের কাউকে হারালে মানুষের জীবন সত্যিই অসম্পূর্ণ হয়ে যায়।
‘তুই তো আসলে আমার বাবাকে দেখিস নি তাই!’
তমালকে কখনো সেভাবে আবেগপ্রবণ হতে দেখিনি। ও সবসময় অন্যকে হাসিয়ে মাতিয়ে রাখত। এই প্রথম আমি দেখলাম তমালের চোখটা ছলছল করছে। আসলে প্রতিটা মানুষেরই কিছুনা কিছু দুর্বল স্থান থাকে। তমাল প্রকাশ না করলেও আমি জানতাম, ওর মায়ের মৃত্যুটাই ওর জীবনের সবচেয়ে দুর্বল স্থান। আমি কিছুই বললাম না।
‘আমার বাবা একাই একশ। বলতে পারিস এক কথায় শিব ঠাকুর। ঘর গোছানো থেকে রান্না করা, বাবা নিজের সাধ্য মতন প্রতিটা কাজ করে। বাবা আপ্রান চেষ্টা করে গেছে যাতে আমি কখনো মায়ের অভাবটা বুঝতে না পারি, কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগে বাবার জন্য...’
তমাল দেখলাম বেশ কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে গেলো। আমি ছিলাম নির্বাক, কিই বা বলতাম।
‘আমি মন প্রান থেকে চাই, বাবার সাথে কোন মহিলার সম্পর্ক হোক। বাবার শরীরেরও একটা ক্ষিদে রয়েছে। শুধু আমার জন্য বাবা, মা মারা যাওয়ার পর কোন নারীসঙ্গর চেষ্টাও করেনি। এটা যে ঠিক কত বড় ত্যাগ তা তুই বুঝবি না’।
আমরা যে কতক্ষন এভাবে কথা বলেছি তা খেয়াল ও নেই। হথাত কলিং বেলের শব্দে দুজনের ই হুঁশ ফিরল।
তমালই এগিয়ে গেলো দরজাটা খুলতে। আমি কিছুটা পাথরের মতন একি জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। জীবন আমাদের প্রত্যেকেরই মধ্যে একজন দার্শনিকের জন্ম দেয়। আমার ক্লাস নাইনের সহপাঠী তমালের থেকে সেদিন আমি জীবনের মূলমন্ত্রটা শিখেছিলাম, তা হোল আত্মত্যাগ। আজও যখন ভাবি অবাক লাগে, ওই অপরিনত বয়সে কিকরে তমাল নিজের বাবার শরীরের ক্ষিদের কথা বুঝতে পেরেছিল। সেদিন সত্যিই তমালকে নিজের থেকে অঙ্কে বেশী পরিনত মনে হয়েছিল।
আপন মনে হাজারো কথা ভেবে চলেছিলাম, আসলে হয়ত আমিও তমালের মতন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। হুঁশ ফেরে কাকুর কথায়।
‘তুমিই বুঝি অরুপ। তমালের থেকে যে কত গল্প শুনেছি তোমার নামে। হ্যাঁ রে তমাল, ওকে একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নে, এভাবে থাকলে তো কোন মেয়েই পাত্তা দেবেনা’।
ভাবতেও পারিনি প্রথম দর্শনে বন্ধুর বাবা এভাবে কথা বলতে পারে। বেশ কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেছিলাম। আমার সঙ্কোচ আরও বাড়িয়ে ভেসে এলো একটা গা হিম করা হাঁসি।
‘একি রে তমাল তোর বন্ধু তো প্রচুর লাজুক রে। আচ্ছা নাও তোমার সাথে পরিচয়টা সেরেই ফেলি। (হাতটা সামনের দিকে বাড়িয়ে) হ্যালো আমি রবি, রবিলাল দে। পেশায় বিজনেসম্যান’।
আমিও হেঁসে হাতটা মিলিয়ে নিলাম। কি যে বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বাবার বয়সী একজন মানুষ যে এতটা জলি হতে পারে তা ভ্রুনাক্ষরেও ভাবতে পারিনি।
‘আচ্ছা, তোমরা বস, আমি অমলেট বানিয়ে আনছি’।
বলতে যাচ্ছিলাম ‘না ছেড়ে দিন কাকু’, কিন্তু পারলাম না। ব্যক্তিত্ব সত্যিই ভয়ানক এক জিনিষ, মন্ত্রের মতন অন্য মানুষকে বশ করে দেয়। রবি কাকুর ব্যক্তিত্ব আমায় ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
‘কি রে বাবাকে কেমন লাগলো’।
আমার মুখ দিয়ে একটাই শব্দ বেরিয়েছিল, ‘দারুন’। শব্দটা হয়ত খুব ছোট, কিন্তু অন্তর থেকে অদ্ভুত একটা অনুভুতি প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। আঁকাবাঁকা গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে জীবনটা এগিয়ে চলেছিল, আর প্রতিটা খাতে পরিচয় হচ্ছিল নতুন নতুন কয়েকটা চরিত্রের সাথে। তেমনই একটা চরিত্র হোল রবিকাকু।
সেদিন বাড়ি ফেরার পর অনেককিছু আকাশ কুসুম ভেবেছিলাম। বারবার রবিকাকু আর বাবার তুলনা করে ফেলছিলাম। কেন ঠিক জানিনা। হয়ত ঋত্বিকদার ওই গল্পটা আমার মস্তিস্কে বাসা বেঁধেছিল। নিজেরই অজান্তে বিশ্বাস হয়ে গেছিল রবিকাকু একজন আলফা মেল। বিশ্বাস বলব না, বলব ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়ার দূরদর্শিতা।
দুপুরবেলা টেলিফোনটা বেজে উঠল। মা বোধ হয় মামাবাড়িতে গেছিল। তাই আমিই ফোনটা রিসিভ করলাম।
‘কিরে কি করছিস?’
তমালের গলা। সাধারনত ও বাড়ির নাম্বারটায় ফোন করেনা। নিশ্চয়ই কোন দরকার আছে তাই করেছে। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এলো ওর কথা।
‘আরে বাবার সাথে একটু বেরবো সন্ধ্যে বেলা। ফিরে এসে আর পড়তে পারবো না। মনে আছে তো তোর?’
তমাল ঠিক কি মনে রাখার কথা বলছে ভাবতে পারলাম না।
‘আরে ধুর এর মধ্যেই ভুলে গেলি। কাল গোপাল স্যার ক্লাস টেস্ট নেবে। পড়ে আসিস রে ভাই। কিচ্ছু পড়িনি আমি। কাল তোর দেখে লিখবো’।
তমালের কথায় মনে পড়ল ক্লাস টেস্ট এর কথা। গোপাল স্যার আমাদের কলেজের সবচেয়ে রাগী স্যার। ক্লাস টেস্টে কম পেলে আস্ত রাখবেনা। ভয়ে ভয়ে পড়তে বসে গেলাম।
পড়ে যখন উঠি দেখি সন্ধ্যে নেমেছে। খুব ক্ষিদে পাচ্ছিল। মা কি ফেরেনি? মাকে খোঁজার জন্যই বিছানা থেকে নেমে বাইরে যাবো। এমন সময় বাইরের ঘর থেকে চুড়ির ঠুং ঠ্যাং শব্দ ভেসে এলো। ততদিনে আমার মস্তিস্কে যৌনতার পোকাগুলো বেশ ভালো করেই বাসা করে ফেলেছে। আমি জানি সন্ধ্যে বেলা মা একবার গা ধুতে যায়। আমার ঘরটা তখনও অন্ধকার ছিল। শরীরটা উত্তেজনায় কাঁপছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম আমার শরীর ঠিক কি চায়। কিন্তু মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না কারন যতই হোক সে আমার জন্মদাত্রী মা। না নিষিদ্ধ যৌনতার আবেশে আমি বোধ হয় সম্পূর্ণ ভাবে আবিষ্ট হয়ে গেছিলাম। পারলাম না নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে। দরজার সামনে মুখটা বাড়িয়ে আর বাকি শরীরটা লুকিয়ে দাঁড়ালাম।
মুহূর্তের মধ্যে লিঙ্গটা শক্ত হয়ে উঠল। এর আগে সত্যিই মাকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখিনি। মায়ের গায়ে ছিল শুধুই পাতলা লাল রঙের একটা সাড়ি। দুহাতের ফাঁক দিয়ে বিশাল দুটো স্তন ক্রমশ বাইরের দিকে বেঁকে বেরিয়ে এসেছে। শরীরের নড়াচড়া, আর চুড়ির ঠুং ঠ্যাং শব্দের সাথে পাল্লা দিয়ে দুধের কালো দুটো বোঁটাও বাইরে বেরিয়ে আসছে। কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছিলাম না। হাতটা প্যান্টের ওপর দিয়েই লিঙ্গের ওপর চলে যাচ্ছিল। কিন্তু অন্তর থেকে কেউ একজন ক্রমাগত বলে চলেছে, ‘অরুপ বিশাল পাপ করছিস, ও তোর মা’।
জোর করে নিজেকে আবার ঘরের মধ্যে টেনে নিয়ে গেলাম। সারা শরীরে একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছিল। প্রায় ৪-৫ দিন হবে হস্তমৈথুন করিনি। দৈনন্দিন অভ্যাসকে এতো সহজে পাল্টানো যায়না। আসলে ঋত্বিকদার গল্পটা আমার নিজের কল্পনাগুলোকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। কিছুতেই আগের মতন ভাবতে পারছিলাম না। চোখদুটো বুজে নিলাম। হয়ত মনেমনেই বিড়বিড় করছিলাম ‘আমি আবার কল্পনা করতে চাই, যেভাবে হোক চাই’। শরীরকে দুলিয়ে মনকে মাতিয়ে ভেসে এলো এক স্বপ্ন।
বাবা এক সপ্তাহের ছুটিতে বাড়ি এসেছে। এতদিন পর বাবাকে দেখে আমার আনন্দের ইয়ত্তা নেই। কিন্তু অদ্ভুতভাবেই মাকে কেমন মনমরা লাগছিলো। বারবার মনে হচ্ছিল মা কি চায়না বাবা আমাদের সাথে থাকুক। আমি বিছানায় বসে পড়ছিলাম। পাশের ঘর থেকে বাবা মার কথা ভেসে এলো।
‘সুমি বহুদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। চল কয়েকটা দিন কোথাও ঘুরে আসি’।
দেখলাম মা সেভাবে কোন উচ্চবাচ্চ করল না।
বাবা আবার বলল ‘কি হোল সুমি, তোমার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে না?’
আমার মায়ের নাম সুমিতা, বাবা আদর করে সুমি বলে ডাকে। এতক্ষন পরে মা উত্তর দিলো।
‘কে কে যাবে?’
মায়ের প্রশ্নটা আমার অদ্ভুত লাগলো। এ আবার কেমন কথা। বাবা, মা ও ছেলে ঘুরতে যাবে। হয়ত বাবার আরও বেশী আশ্চর্য লেগেছে। আমি জানতাম বাবা প্রচণ্ড বিনয়ী হয়ে উত্তরটা দেবে।
‘কেন সুমি আমি কি আরও কাউকে বলব? এখানে তো আমি সেভাবে কাউকে চিনিইনা’।
‘থাক, কাউকে বলতে হবেনা’।
মায়ের গলায় যেন কত বছরের আক্ষেপ ঝড়ে পড়ল।
‘চল যাওয়া যাক’।
হথাত দেখলাম জানলার পাশে কিছুটা মহাকাশযানের মতন দেখতে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো। প্রচণ্ড আওয়াজে আমি আর বাবা দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম। কিছুটা ভয়ে আর কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বাবাই জিজ্ঞেস করল
‘এটা কি সুমি?’
খিলখিল করে হেঁসে মা উত্তর দিলো ‘এটা স্বপ্নের দেশে যাওয়ার গাড়ি। সাত সমুদ্র পাড় করে আমরা চলে যাবো স্বপ্নের দেশে। চলচল এক্ষুনি বেরনো যাক’।
মায়ের পেছন পেছন আমি আর বাবাও চলতে লাগলাম। গাড়িটার সামনে যেতেই নিজের থেকে দরজাটা খুলে গেলো। প্রথমে মা তারপর বাবা আর সবার শেষে আমি উঠলাম। দেখলাম মা প্রায় দৌড়ে সামনের দিকে চলে গেলো। সামনে এক অতি সুদর্শন পুরুষ বসে।
‘এটা কে সুমি?’
প্রচণ্ড জোরে হেঁসে উঠল মা।
‘আরে এটাই তো আলফা মেল’।
দেখলাম বাবা প্রচণ্ড হাফাচ্ছে। মা ক্রমশ নিজের শরীরটা আলফা মেলের ওপর এলিয়ে দিলো। বাবা প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠল
‘এটা তুমি কি করলে সুমি। তুমি জানো না আলফা মেলের সাথে লড়াই করলে আমি হেরে যাবো’
সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এলো মায়ের উত্তর, ‘আমি সেটাই চাই, তোমাদের দুজনের লড়াই হোক, যে জিতবে আমি তার। আমার গর্ভে আবার একটা সন্তান আসবে। তবে সেটা তোমার না আলফা মেলের তা তোমাদের লড়াইয়ের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে’।
এইসব বলতে বলতে হথাত সেই সুদর্শন পুরুষটা বাবার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। বাবা প্রায় মিনিট পাঁচেক আপ্রান চেষ্টা করে গেলো কিন্তু পারলো না। আমি বসে ছিলাম একদম জগদ্দল পাথরের মতন। কারন আমি তো জানতাম আলফা মেলের সাথে কাকোল্ড কখনো লড়তে পারেনা। একটা শক্ত দড়ি দিয়ে আলফা মেল বাবাকে শক্ত করে বেঁধে দিলো। তারপর একটা সাদা রুমাল জোর করে বাবার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো।
মায়ের দিকে একবার তাকালাম। মায়ের দুচোখ ভরে শুধুই আনন্দ। এক পা এক পা করে আলফা মেল সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বাবা মাটির ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে, আর মা ক্রমশ নিজেকে আলফা মেলের হাতে সঁপে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
‘ক্রিং ক্রিং’ করে প্রচণ্ড কর্কশ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। বুঝতে পারলাম আমি ঘুমাচ্ছিলাম, স্বপ্ন দেখছিলাম। এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই আলফা মেলের আগ্রাসন আর বাবার দুর্বলতা। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার কিছুতেই সেই সুপুরুষটার মুখটা স্পষ্টভাবে মনে করতে পারছি না। ক্রমশ ম্রিয়মান হয়ে উঠছে। ফোনটা বাজতে বাজতে থেমে যায়। আমি তখন নিজেকে শান্ত করতেই ব্যস্ত। লিঙ্গটা প্যান্টের ওপর ভয়ঙ্কর রকম আস্ফালন শুরু করেছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। না মা হয়ত স্নান করে নিয়ে আবার মামাবাড়িতেই চলে গেছে কারন বাইরের তারে মায়ের সাড়ি সায়া গুলো মেলা আছে। আবার ফোনটা বাজতে শুরু করল। এবার বহুকষ্টে গিয়ে রিসিভ করলাম।
‘কিরে কতবার ফোন করছি। কোথায় ছিলি তুই?’
বুঝলাম তমালের ফোন। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ বল রে’
‘আরে পাবলিক বুথ থেকে ফোন করছি। আজ বাবার সাথে বুদ্ধপার্ক এর দিকেই ঘুরতে আসবো। ভাবছিলাম বাবাকে নিয়ে তোদের বাড়িটা একবার ঘুরে যাই’।
আমার মনটা সম্পূর্ণ পালটে গেলো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠলাম ‘আরে হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই চলে আয়’।
তমাল ফোনটা রেখে দিলো। বারবার করে ভাবতে লাগলাম সেই মহাকাশযান, কিছুটা লাল রঙের আলফা মেল, আমাদের আকাশে উড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এবার সত্যিই হাঁসি পেয়ে গেলো। জীবনে বহুবার স্বপ্ন দেখেছি। ভূতের স্বপ্ন, সাপের স্বপ্ন আরও কতকি। কিন্তু এতো অদ্ভুতুড়ে আর আজগুবি স্বপ্ন কখনো দেখিনি। হথাত মনে পড়ে গেলো আগের দিন কলেজের সেকেন্ড পিরিয়ডের কথা।
স্যার আসেননি বলে হেড স্যার ৫ মিনিটের জন্য ক্লাসে আসেন ও তারপর রাশভারী গলায় বলেন
‘তোমাদের স্যার আজ কলেজে আসেননি। তোমাদের মধ্যে যেকোনো একজন এখানে এসে গল্প বলবে আর বাকিরা শুনবে। সামান্য কোন আওয়াজ হলে সবাইকে বাইরে নিল ডাউন করিয়ে দেবো’।
হেড স্যার চলে যান আর আমাদের ই এক বন্ধু অনিমেষ উঠে গল্প বলতে শুরু করে। ওর গল্পটা ছিল কল্পবিজ্ঞান এর। একদিন একটা লোক দেখতে পায় ওদের বাগানে একটা মহাকাশযান। তার ভেতরে সব লাল রঙের মানুষ। ওদের শরীর আমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শক্তিশালী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই লোকটা ওর ছেলে আর বউকে নিয়ে সেই মহাকাশযান আকাশে রওনা দেয়। এই ছিল গল্পের মূল বিষয়।
গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। তাহলে কি সারাদিনে যে জিনিষগুলো আমার ভালো লাগে সেগুলোই গল্প আকারে ফিরে আসে? মাকে নিয়ে যে নোংরা গল্প গুলো বানাই তাও কি আসলে এরকম ই কিছু। আমার মাথায় হাজারো প্রশ্ন কিলবিল করতে শুরু করল।
রবিকাকু আর তমাল বাড়িতে আসছে। রবিকাকুর চরিত্রটা আমায় ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তাহলে কি আজ এমন কিছু ঘটবে যা আমার কল্পনায় ঘুরে ফিরে আসবে? এতদিন কল্পনা নিজের থেকে আসত আর আজ আমি কল্পনা করার জন্য বাস্তবকে আঁকড়ে রইলাম।
মনের মধ্যে একটাই কথা ঘুরঘুর করছিল, ‘রবিকাকু আর মাকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে। তবেই আমার নতুন এক কল্পনার জন্ম হবে’। জানতাম যা করছি যা ভাবছি তা সবই পাপ, কিন্তু আমি এক নিষিদ্ধ নেশায় আশক্ত হয়ে পড়েছিলাম। যার থেকে মুক্তি পাওয়া এতো সহজ ছিলনা।
সেদিন ঋত্বিকদার কথায় নতুন কয়েকটা শব্দের সাথে পরিচিত হলাম। এতদিন গল্পগুলো ছিল মূলত ৩ চরিত্রের। আমার মা ও তমাল এবং লুকিয়ে লুকিয়ে আমার সব দেখা। ঋত্বিকদা আমায় এক নতুন ফ্যান্টাসির সন্ধান দেয়। আমার আগের ফ্যান্টাসিগুলো কেমন একঘেয়ে লাগতে শুরু করে। সেইদিন থেকে কয়েকটা দিন আমার মনের ওপর দিয়ে একটা কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়।
আমার শিলিগুড়ির কলেজে রেজাল্ট খারাপ হওয়ার জন্য বাবা কোন মতেই দায়ী নয়, তবুও মায়ের বাবাকে দায়ী করা। ঝগড়া করে মায়ের কল্যাণীতে চলে আসা। বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে দাদুর থেকে বাড়ি কেনা। নিজের বাপের বাড়ির পাশেই স্থিতু হওয়া। আমি জানতাম এর কোনটাই বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী হয়নি। তাও কেন বাবা এইসবই মেনে নিল। বাবার অক্ষমতাটা ঠিক কোন জায়গায়? বারবার করে এই প্রশ্নগুলো আমায় নাড়া দিত। ঋত্বিকদার গল্পটা আমার মনে মোট তিনটে নতুন শব্দর জন্ম দেয়। ‘কাকোল্ড, হট ওয়াইফ ও বুল বা আলফা মেল’।
টানা তিনদিন রেনি সিজিন হওয়ায় আমি কলেজ যায়নি। একা ঘরে দরজা বন্ধ করে বহু চেষ্টা করেছি নিজের কল্পনার বৃক্ষটাকে জাগিয়ে তুলতে কিন্তু পারিনি। হয়ত আমার ফ্যান্টাসির অভিমুখটাই পালটে গেছিল।
ঋত্বিকদার সাথে দেখা হওয়ার ৩ দিন পরের কথা। এই তিনদিন অনর্গল বৃষ্টি হওয়ার কারনে কলেজে যাওয়া হয়নি। সেদিন আবার রোদ বেরিয়েছিল। জানতাম একাকীত্ব থেকে আবার একটু মুক্তি পাওয়া যাবে। সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলেজে। কলেজ মাঠের কাছাকাছি আসার পরই দেখি পেছন থেকে কেউ একটা ‘অরুপ’ বলে ডাকল। পেছন ঘুরে দেখি তমাল। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম।
‘চল আজকে তোকে একটা দারুন জায়গায় নিয়ে যাবো’।
মাঝে ৩ দিন কলেজে যায়নি। সত্যি বলতে কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে আমারও ছিলনা। তাই ওকে জিজ্ঞেস করলাম
‘আরে খুব ভালো হয়েছে তোর সাথে দেখা হয়ে গেলো। আমারও কলেজে যেতে ইচ্ছে করছে না’।
‘চল আমার সাথে’। কোথায় যাচ্ছি, কতদুর কিছুই জানালো না। বাধ্য হয়ে আমিও ওর সাথে সাইকেল চালিয়ে চলতে আরম্ভ করলাম।
বুদ্ধপার্ক পেরিয়ে সেন্ট্রাল পার্ক আর তারপর ঘোষপাড়া। এই দিকটা আমার খুব একটা চেনা নয়। অনেকদিন আগে একবার তমালকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ওর বাড়ি কোথায়। তখন বলেছিল ঘোষপাড়া। মনে খটকা লাগলো, ওকি আমাকে ওর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
আরও ২-৩ মিনিট পর পৌছালাম অট্টালিকার মতন বড় একটা বাড়িতে।
‘অরুপ এটাই আমার বাড়ি, আজ বাবাও বাড়িতে থাকবে। তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো’।
আমার বেশ ভালো লাগছিলো, যতই হোক বেস্ট ফ্রেন্ড এর বাড়ি বলে কথা। দেখলাম ব্যাগের ভেতর থেকে চাবি বার করে দরজাটা খুলল। বুঝলাম এই অট্টালিকার মতন বাড়িতে শুধুই দুটি ব্যক্তি থাকে, তমাল ও ওর বাবা। আমি একদৃষ্টিতে চারপাশ দেখছিলাম। সেই বয়সেও এটা বুঝতে শিখেছিলাম যে বাড়িতে একটা মেয়ে না থাকলে সংসারটা প্রচণ্ড অগোছালো হয়ে যায়। এটাও জানতাম তমালের মা ছোটবেলায় মারা গেছে, তাও ঘরদোর এতো পরিপাটি করে কিকরে সাজানো তা বুঝতে পারছিলাম না।
‘কিরে এভাবে কি দেখছিস?’
কি বলব তমালের প্রশ্নের উত্তরে বুঝলাম না। এটা তো বলা যায়না তোর মা নেই তাও কিকরে এতো পরিপাটি করে সব সাজানো।
হয়ত তমালের মধ্যে অন্যের মনকে পড়ে নেওয়ার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে।
‘এটাই ভাবছিস তো। আমার মা ছোটবেলায় মারা গেছে তাও কিকরে এরকম সব সাজানো গোছানো? আমার বাবা আমায় কোনোদিন মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি’।
আমি কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলাম। এটা হয়ত কাউকে বলার অপেক্ষা রাখেনা বাবা ও মা এইদুজন ই মানুষের জীবনের সবচেয়ে আপন। এদের কাউকে হারালে মানুষের জীবন সত্যিই অসম্পূর্ণ হয়ে যায়।
‘তুই তো আসলে আমার বাবাকে দেখিস নি তাই!’
তমালকে কখনো সেভাবে আবেগপ্রবণ হতে দেখিনি। ও সবসময় অন্যকে হাসিয়ে মাতিয়ে রাখত। এই প্রথম আমি দেখলাম তমালের চোখটা ছলছল করছে। আসলে প্রতিটা মানুষেরই কিছুনা কিছু দুর্বল স্থান থাকে। তমাল প্রকাশ না করলেও আমি জানতাম, ওর মায়ের মৃত্যুটাই ওর জীবনের সবচেয়ে দুর্বল স্থান। আমি কিছুই বললাম না।
‘আমার বাবা একাই একশ। বলতে পারিস এক কথায় শিব ঠাকুর। ঘর গোছানো থেকে রান্না করা, বাবা নিজের সাধ্য মতন প্রতিটা কাজ করে। বাবা আপ্রান চেষ্টা করে গেছে যাতে আমি কখনো মায়ের অভাবটা বুঝতে না পারি, কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগে বাবার জন্য...’
তমাল দেখলাম বেশ কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে গেলো। আমি ছিলাম নির্বাক, কিই বা বলতাম।
‘আমি মন প্রান থেকে চাই, বাবার সাথে কোন মহিলার সম্পর্ক হোক। বাবার শরীরেরও একটা ক্ষিদে রয়েছে। শুধু আমার জন্য বাবা, মা মারা যাওয়ার পর কোন নারীসঙ্গর চেষ্টাও করেনি। এটা যে ঠিক কত বড় ত্যাগ তা তুই বুঝবি না’।
আমরা যে কতক্ষন এভাবে কথা বলেছি তা খেয়াল ও নেই। হথাত কলিং বেলের শব্দে দুজনের ই হুঁশ ফিরল।
তমালই এগিয়ে গেলো দরজাটা খুলতে। আমি কিছুটা পাথরের মতন একি জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। জীবন আমাদের প্রত্যেকেরই মধ্যে একজন দার্শনিকের জন্ম দেয়। আমার ক্লাস নাইনের সহপাঠী তমালের থেকে সেদিন আমি জীবনের মূলমন্ত্রটা শিখেছিলাম, তা হোল আত্মত্যাগ। আজও যখন ভাবি অবাক লাগে, ওই অপরিনত বয়সে কিকরে তমাল নিজের বাবার শরীরের ক্ষিদের কথা বুঝতে পেরেছিল। সেদিন সত্যিই তমালকে নিজের থেকে অঙ্কে বেশী পরিনত মনে হয়েছিল।
আপন মনে হাজারো কথা ভেবে চলেছিলাম, আসলে হয়ত আমিও তমালের মতন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। হুঁশ ফেরে কাকুর কথায়।
‘তুমিই বুঝি অরুপ। তমালের থেকে যে কত গল্প শুনেছি তোমার নামে। হ্যাঁ রে তমাল, ওকে একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নে, এভাবে থাকলে তো কোন মেয়েই পাত্তা দেবেনা’।
ভাবতেও পারিনি প্রথম দর্শনে বন্ধুর বাবা এভাবে কথা বলতে পারে। বেশ কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেছিলাম। আমার সঙ্কোচ আরও বাড়িয়ে ভেসে এলো একটা গা হিম করা হাঁসি।
‘একি রে তমাল তোর বন্ধু তো প্রচুর লাজুক রে। আচ্ছা নাও তোমার সাথে পরিচয়টা সেরেই ফেলি। (হাতটা সামনের দিকে বাড়িয়ে) হ্যালো আমি রবি, রবিলাল দে। পেশায় বিজনেসম্যান’।
আমিও হেঁসে হাতটা মিলিয়ে নিলাম। কি যে বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বাবার বয়সী একজন মানুষ যে এতটা জলি হতে পারে তা ভ্রুনাক্ষরেও ভাবতে পারিনি।
‘আচ্ছা, তোমরা বস, আমি অমলেট বানিয়ে আনছি’।
বলতে যাচ্ছিলাম ‘না ছেড়ে দিন কাকু’, কিন্তু পারলাম না। ব্যক্তিত্ব সত্যিই ভয়ানক এক জিনিষ, মন্ত্রের মতন অন্য মানুষকে বশ করে দেয়। রবি কাকুর ব্যক্তিত্ব আমায় ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
‘কি রে বাবাকে কেমন লাগলো’।
আমার মুখ দিয়ে একটাই শব্দ বেরিয়েছিল, ‘দারুন’। শব্দটা হয়ত খুব ছোট, কিন্তু অন্তর থেকে অদ্ভুত একটা অনুভুতি প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। আঁকাবাঁকা গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে জীবনটা এগিয়ে চলেছিল, আর প্রতিটা খাতে পরিচয় হচ্ছিল নতুন নতুন কয়েকটা চরিত্রের সাথে। তেমনই একটা চরিত্র হোল রবিকাকু।
সেদিন বাড়ি ফেরার পর অনেককিছু আকাশ কুসুম ভেবেছিলাম। বারবার রবিকাকু আর বাবার তুলনা করে ফেলছিলাম। কেন ঠিক জানিনা। হয়ত ঋত্বিকদার ওই গল্পটা আমার মস্তিস্কে বাসা বেঁধেছিল। নিজেরই অজান্তে বিশ্বাস হয়ে গেছিল রবিকাকু একজন আলফা মেল। বিশ্বাস বলব না, বলব ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়ার দূরদর্শিতা।
দুপুরবেলা টেলিফোনটা বেজে উঠল। মা বোধ হয় মামাবাড়িতে গেছিল। তাই আমিই ফোনটা রিসিভ করলাম।
‘কিরে কি করছিস?’
তমালের গলা। সাধারনত ও বাড়ির নাম্বারটায় ফোন করেনা। নিশ্চয়ই কোন দরকার আছে তাই করেছে। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এলো ওর কথা।
‘আরে বাবার সাথে একটু বেরবো সন্ধ্যে বেলা। ফিরে এসে আর পড়তে পারবো না। মনে আছে তো তোর?’
তমাল ঠিক কি মনে রাখার কথা বলছে ভাবতে পারলাম না।
‘আরে ধুর এর মধ্যেই ভুলে গেলি। কাল গোপাল স্যার ক্লাস টেস্ট নেবে। পড়ে আসিস রে ভাই। কিচ্ছু পড়িনি আমি। কাল তোর দেখে লিখবো’।
তমালের কথায় মনে পড়ল ক্লাস টেস্ট এর কথা। গোপাল স্যার আমাদের কলেজের সবচেয়ে রাগী স্যার। ক্লাস টেস্টে কম পেলে আস্ত রাখবেনা। ভয়ে ভয়ে পড়তে বসে গেলাম।
পড়ে যখন উঠি দেখি সন্ধ্যে নেমেছে। খুব ক্ষিদে পাচ্ছিল। মা কি ফেরেনি? মাকে খোঁজার জন্যই বিছানা থেকে নেমে বাইরে যাবো। এমন সময় বাইরের ঘর থেকে চুড়ির ঠুং ঠ্যাং শব্দ ভেসে এলো। ততদিনে আমার মস্তিস্কে যৌনতার পোকাগুলো বেশ ভালো করেই বাসা করে ফেলেছে। আমি জানি সন্ধ্যে বেলা মা একবার গা ধুতে যায়। আমার ঘরটা তখনও অন্ধকার ছিল। শরীরটা উত্তেজনায় কাঁপছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম আমার শরীর ঠিক কি চায়। কিন্তু মন কিছুতেই সায় দিচ্ছিল না কারন যতই হোক সে আমার জন্মদাত্রী মা। না নিষিদ্ধ যৌনতার আবেশে আমি বোধ হয় সম্পূর্ণ ভাবে আবিষ্ট হয়ে গেছিলাম। পারলাম না নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে। দরজার সামনে মুখটা বাড়িয়ে আর বাকি শরীরটা লুকিয়ে দাঁড়ালাম।
মুহূর্তের মধ্যে লিঙ্গটা শক্ত হয়ে উঠল। এর আগে সত্যিই মাকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখিনি। মায়ের গায়ে ছিল শুধুই পাতলা লাল রঙের একটা সাড়ি। দুহাতের ফাঁক দিয়ে বিশাল দুটো স্তন ক্রমশ বাইরের দিকে বেঁকে বেরিয়ে এসেছে। শরীরের নড়াচড়া, আর চুড়ির ঠুং ঠ্যাং শব্দের সাথে পাল্লা দিয়ে দুধের কালো দুটো বোঁটাও বাইরে বেরিয়ে আসছে। কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছিলাম না। হাতটা প্যান্টের ওপর দিয়েই লিঙ্গের ওপর চলে যাচ্ছিল। কিন্তু অন্তর থেকে কেউ একজন ক্রমাগত বলে চলেছে, ‘অরুপ বিশাল পাপ করছিস, ও তোর মা’।
জোর করে নিজেকে আবার ঘরের মধ্যে টেনে নিয়ে গেলাম। সারা শরীরে একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা হচ্ছিল। প্রায় ৪-৫ দিন হবে হস্তমৈথুন করিনি। দৈনন্দিন অভ্যাসকে এতো সহজে পাল্টানো যায়না। আসলে ঋত্বিকদার গল্পটা আমার নিজের কল্পনাগুলোকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। কিছুতেই আগের মতন ভাবতে পারছিলাম না। চোখদুটো বুজে নিলাম। হয়ত মনেমনেই বিড়বিড় করছিলাম ‘আমি আবার কল্পনা করতে চাই, যেভাবে হোক চাই’। শরীরকে দুলিয়ে মনকে মাতিয়ে ভেসে এলো এক স্বপ্ন।
বাবা এক সপ্তাহের ছুটিতে বাড়ি এসেছে। এতদিন পর বাবাকে দেখে আমার আনন্দের ইয়ত্তা নেই। কিন্তু অদ্ভুতভাবেই মাকে কেমন মনমরা লাগছিলো। বারবার মনে হচ্ছিল মা কি চায়না বাবা আমাদের সাথে থাকুক। আমি বিছানায় বসে পড়ছিলাম। পাশের ঘর থেকে বাবা মার কথা ভেসে এলো।
‘সুমি বহুদিন কোথাও যাওয়া হয়নি। চল কয়েকটা দিন কোথাও ঘুরে আসি’।
দেখলাম মা সেভাবে কোন উচ্চবাচ্চ করল না।
বাবা আবার বলল ‘কি হোল সুমি, তোমার ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে না?’
আমার মায়ের নাম সুমিতা, বাবা আদর করে সুমি বলে ডাকে। এতক্ষন পরে মা উত্তর দিলো।
‘কে কে যাবে?’
মায়ের প্রশ্নটা আমার অদ্ভুত লাগলো। এ আবার কেমন কথা। বাবা, মা ও ছেলে ঘুরতে যাবে। হয়ত বাবার আরও বেশী আশ্চর্য লেগেছে। আমি জানতাম বাবা প্রচণ্ড বিনয়ী হয়ে উত্তরটা দেবে।
‘কেন সুমি আমি কি আরও কাউকে বলব? এখানে তো আমি সেভাবে কাউকে চিনিইনা’।
‘থাক, কাউকে বলতে হবেনা’।
মায়ের গলায় যেন কত বছরের আক্ষেপ ঝড়ে পড়ল।
‘চল যাওয়া যাক’।
হথাত দেখলাম জানলার পাশে কিছুটা মহাকাশযানের মতন দেখতে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো। প্রচণ্ড আওয়াজে আমি আর বাবা দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম। কিছুটা ভয়ে আর কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বাবাই জিজ্ঞেস করল
‘এটা কি সুমি?’
খিলখিল করে হেঁসে মা উত্তর দিলো ‘এটা স্বপ্নের দেশে যাওয়ার গাড়ি। সাত সমুদ্র পাড় করে আমরা চলে যাবো স্বপ্নের দেশে। চলচল এক্ষুনি বেরনো যাক’।
মায়ের পেছন পেছন আমি আর বাবাও চলতে লাগলাম। গাড়িটার সামনে যেতেই নিজের থেকে দরজাটা খুলে গেলো। প্রথমে মা তারপর বাবা আর সবার শেষে আমি উঠলাম। দেখলাম মা প্রায় দৌড়ে সামনের দিকে চলে গেলো। সামনে এক অতি সুদর্শন পুরুষ বসে।
‘এটা কে সুমি?’
প্রচণ্ড জোরে হেঁসে উঠল মা।
‘আরে এটাই তো আলফা মেল’।
দেখলাম বাবা প্রচণ্ড হাফাচ্ছে। মা ক্রমশ নিজের শরীরটা আলফা মেলের ওপর এলিয়ে দিলো। বাবা প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠল
‘এটা তুমি কি করলে সুমি। তুমি জানো না আলফা মেলের সাথে লড়াই করলে আমি হেরে যাবো’
সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এলো মায়ের উত্তর, ‘আমি সেটাই চাই, তোমাদের দুজনের লড়াই হোক, যে জিতবে আমি তার। আমার গর্ভে আবার একটা সন্তান আসবে। তবে সেটা তোমার না আলফা মেলের তা তোমাদের লড়াইয়ের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে’।
এইসব বলতে বলতে হথাত সেই সুদর্শন পুরুষটা বাবার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। বাবা প্রায় মিনিট পাঁচেক আপ্রান চেষ্টা করে গেলো কিন্তু পারলো না। আমি বসে ছিলাম একদম জগদ্দল পাথরের মতন। কারন আমি তো জানতাম আলফা মেলের সাথে কাকোল্ড কখনো লড়তে পারেনা। একটা শক্ত দড়ি দিয়ে আলফা মেল বাবাকে শক্ত করে বেঁধে দিলো। তারপর একটা সাদা রুমাল জোর করে বাবার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো।
মায়ের দিকে একবার তাকালাম। মায়ের দুচোখ ভরে শুধুই আনন্দ। এক পা এক পা করে আলফা মেল সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বাবা মাটির ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে, আর মা ক্রমশ নিজেকে আলফা মেলের হাতে সঁপে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
‘ক্রিং ক্রিং’ করে প্রচণ্ড কর্কশ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। বুঝতে পারলাম আমি ঘুমাচ্ছিলাম, স্বপ্ন দেখছিলাম। এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই আলফা মেলের আগ্রাসন আর বাবার দুর্বলতা। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার কিছুতেই সেই সুপুরুষটার মুখটা স্পষ্টভাবে মনে করতে পারছি না। ক্রমশ ম্রিয়মান হয়ে উঠছে। ফোনটা বাজতে বাজতে থেমে যায়। আমি তখন নিজেকে শান্ত করতেই ব্যস্ত। লিঙ্গটা প্যান্টের ওপর ভয়ঙ্কর রকম আস্ফালন শুরু করেছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। না মা হয়ত স্নান করে নিয়ে আবার মামাবাড়িতেই চলে গেছে কারন বাইরের তারে মায়ের সাড়ি সায়া গুলো মেলা আছে। আবার ফোনটা বাজতে শুরু করল। এবার বহুকষ্টে গিয়ে রিসিভ করলাম।
‘কিরে কতবার ফোন করছি। কোথায় ছিলি তুই?’
বুঝলাম তমালের ফোন। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ বল রে’
‘আরে পাবলিক বুথ থেকে ফোন করছি। আজ বাবার সাথে বুদ্ধপার্ক এর দিকেই ঘুরতে আসবো। ভাবছিলাম বাবাকে নিয়ে তোদের বাড়িটা একবার ঘুরে যাই’।
আমার মনটা সম্পূর্ণ পালটে গেলো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠলাম ‘আরে হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই চলে আয়’।
তমাল ফোনটা রেখে দিলো। বারবার করে ভাবতে লাগলাম সেই মহাকাশযান, কিছুটা লাল রঙের আলফা মেল, আমাদের আকাশে উড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এবার সত্যিই হাঁসি পেয়ে গেলো। জীবনে বহুবার স্বপ্ন দেখেছি। ভূতের স্বপ্ন, সাপের স্বপ্ন আরও কতকি। কিন্তু এতো অদ্ভুতুড়ে আর আজগুবি স্বপ্ন কখনো দেখিনি। হথাত মনে পড়ে গেলো আগের দিন কলেজের সেকেন্ড পিরিয়ডের কথা।
স্যার আসেননি বলে হেড স্যার ৫ মিনিটের জন্য ক্লাসে আসেন ও তারপর রাশভারী গলায় বলেন
‘তোমাদের স্যার আজ কলেজে আসেননি। তোমাদের মধ্যে যেকোনো একজন এখানে এসে গল্প বলবে আর বাকিরা শুনবে। সামান্য কোন আওয়াজ হলে সবাইকে বাইরে নিল ডাউন করিয়ে দেবো’।
হেড স্যার চলে যান আর আমাদের ই এক বন্ধু অনিমেষ উঠে গল্প বলতে শুরু করে। ওর গল্পটা ছিল কল্পবিজ্ঞান এর। একদিন একটা লোক দেখতে পায় ওদের বাগানে একটা মহাকাশযান। তার ভেতরে সব লাল রঙের মানুষ। ওদের শরীর আমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শক্তিশালী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই লোকটা ওর ছেলে আর বউকে নিয়ে সেই মহাকাশযান আকাশে রওনা দেয়। এই ছিল গল্পের মূল বিষয়।
গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। তাহলে কি সারাদিনে যে জিনিষগুলো আমার ভালো লাগে সেগুলোই গল্প আকারে ফিরে আসে? মাকে নিয়ে যে নোংরা গল্প গুলো বানাই তাও কি আসলে এরকম ই কিছু। আমার মাথায় হাজারো প্রশ্ন কিলবিল করতে শুরু করল।
রবিকাকু আর তমাল বাড়িতে আসছে। রবিকাকুর চরিত্রটা আমায় ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তাহলে কি আজ এমন কিছু ঘটবে যা আমার কল্পনায় ঘুরে ফিরে আসবে? এতদিন কল্পনা নিজের থেকে আসত আর আজ আমি কল্পনা করার জন্য বাস্তবকে আঁকড়ে রইলাম।
মনের মধ্যে একটাই কথা ঘুরঘুর করছিল, ‘রবিকাকু আর মাকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে। তবেই আমার নতুন এক কল্পনার জন্ম হবে’। জানতাম যা করছি যা ভাবছি তা সবই পাপ, কিন্তু আমি এক নিষিদ্ধ নেশায় আশক্ত হয়ে পড়েছিলাম। যার থেকে মুক্তি পাওয়া এতো সহজ ছিলনা।