11-09-2023, 09:23 PM
বলা নেই কওয়া নেই .. আগের থেকে কোনো টিজার দেওয়া নেই .. কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করা নেই .. হঠাৎ করেই যদি আপডেট এসে যায়, সেটাকেই বোধহয় চমক বলে। আর এইরকম চমক দিতে এবং পেতে দুটোই ভালো লাগে। কিই, তাই তো পাঠকবন্ধুরা? নতুন পর্ব নিয়ে চলে এসেছি।
সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ হন্তদন্ত হয়ে কমার্শিয়াল ম্যানেজার রবার্ট ডিসুজার ঘরে ঢুকলো চিরন্তন। "স্যার, আমি এসে গেছি, এয়ারপোর্ট থেকে ডাইরেক্ট এলাম এখানেই। যে পেপারটা আপনাকে সাবমিট করার ছিলো সেটা কি এখানে দেবো, নাকি কোয়ালিটি কন্ট্রোলের মিস্টার দাসের কাছে দিয়ে আসবো? আচ্ছা আমাকে কি এখনই যেতে হবে, যেখানে যাওয়ার কথা ছিলো?" কথাগুলো বলে প্যান্টের পকেট থেকে একটা সাদা রঙের খাম বের করে এগিয়ে দিলো চিরন্তন।
চেম্বারে তখন রবার্টের সামনে ব্যাচিং ডিপার্টমেন্টের মিস্টার পারেখ বসেছিলো। তাকে চোখের ইশারায় চেম্বারের বাইরে যেতে বলে, সামনে রাখা ল্যান্ডফোন থেকে ইন্টারকমে ফোন করে রবার্ট বললো, "ডক্টর গঞ্জালভেসকে পাঠিয়ে দিন।" তারপর চিরন্তনের দিকে তাকিয়ে উক্তি করলো, "আরে, এত ছটফট করেছো কেনো গান্ডু? দেখতে পেলে পারেখের সঙ্গে আমি কথা বলছিলাম, তার সামনেই খামটা বের করলে তুমি? ও যদি জানতে চাইতো এটা কিসের পেপার, তখন কি জবাব দিতে তুমি? কনফিডেনশিয়াল বলেও তো একটা ব্যাপার আছে, নাকি! দাও দেখি খামটা আমাকে। প্রমোদকে খবর পাঠিয়েছি, ও আসুক, তারপর তোমার যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে যাবে। এই দু'দিনে চোখমুখ তো একদম বসে গেছে তোমার! চিন্তা নেই, আমরা তোমাকে বাঁচিয়ে নেবো। এখন চেয়ারে বসে বিশ্রাম করো। চাইলে পাশের সোফাটাতেও বসতে পারো আরাম করে।"
চিরন্তনের দেওয়া পেপারগুলোয় চোখ বোলাচ্ছিলো রবার্ট। এরমধ্যেই চেম্বারে ঢুকলো ডঃ প্রমোদ। "আরে, এই ঘাওড়া তো দেখছি শুকিয়ে একেবারে আমচুর হয়ে গেছে! ওকে একটু জল-টল কিছু দাও .." নন্দনার স্বামীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে রবার্টের সামনের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো প্রমোদ।
এমনিতে এই দুই ব্যক্তিকে সে বরাবরই এড়িয়ে চলে। সেটা সম্মানার্থেও হতে পারে, আবার ভয় পেয়েও হতে পারে। কিন্তু এর আগে যখনই ওদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, তারা কেউ খারাপ ভাষা ব্যবহার করেনি তার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আজ চিরন্তন লক্ষ্য করলো এরা দুজনেই কথা বলার সময় তাকে উদ্দেশ্য করে স্ল্যাং ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করেছে। এটা ওভার ফ্রেন্ডলি দেখানোর জন্য, নাকি ওভার পাওয়ার করার জন্য, সেটা বোধগম্য হলো না তার। "আপনি রেবতী ম্যাডামকে ইনফর্ম করে দিয়েছেন তো স্যার? তাহলে এবার উঠি আমি?" রবার্টের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে উঠতে গেলো চিরন্তন।
"কেনো, তোমার কি হাগা পেয়েছে? নাকি বউয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে বাড়িতে ফিরেই? এত তাড়াহুড়ো কিসের তোমার?" খেঁকিয়ে উঠে কথাগুলো বললো রবার্ট।
"ছিঃ ছিঃ এসব কি বলছেন? এতদিন পর বাড়িতে ফিরছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ওরকম বস্তিবাড়ির মতো সম্পর্ক নেই। আমরা দু'জনে যথেষ্ট সফিস্টিকেটেড।" মৃদু প্রতিবাদ করে উঠে বললো চিরন্তন।
"বস্তি বাড়ি, হ্যাঁ? সফিস্টিকেটেড? হোহোহোহো .." অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো প্রমোদ। তারপর হাসি সামলে চিরন্তনের উদ্দেশ্যে বললো, "তুমি একটা আস্ত বোকাচোদা। তোমাকে কে বলেছে চাঁদু, শুধুমাত্র বস্তিতে থাকা লোকজন উদ্দাম সেক্স করে? আর তোমাদের মতো সো কল্ড ভদ্রবাড়ির লোকজন সফিস্টিকেটেড হয়? স্ত্রীর সঙ্গে তোমার এই 'ডোন্ট টাচ মাই বডি' মনোভাব বজায় রাখার জন্য তোমার বউটা তো যার তার ঘাড়ে উঠে পড়ছে!"
"হোয়াট রাবিশ, এসব কি বলছেন স্যার আপনি?" উত্তেজিত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো চিরন্তন।
"বসো হে বিপ্লবী, বসে পড়ো চেয়ারে। বেশি এক্সাইটেড হয়েও না। এই পেপারগুলো মালিকের কাছে পাঠিয়ে দিলে, তোমাকে সত্যি সত্যি রাস্তার ধারে রাবিশ পরিস্কার করতে হবে। তখন 'হোয়াট রাবিশ' বলা পেছনে ঢুকে যাবে। প্রমোদ এমনি এমনি কথাটা বলেনি তোমাকে। তোমার সেই তান্ত্রিক দাদা এসেছিলো তো তোমাদের বাড়ি! খবর রাখো কিছু?" রবার্টের কথাগুলো শুনে ধপ করে চেয়ারের উপর বসে পরলো চিরন্তন। তারপর গলার স্বর অনেকটা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "কে বলেছে আপনাদেরকে এই কথা?"
"শোনো গান্ডুর কথা! কে আবার বলবে? তোমার বউ নিজেই বলেছে। তারপর ক্যাম্পাসের মেইন গেটে যে সিকিউরিটি গার্ড থাকে, তার কাছে খবর নিয়ে জানতে পারলাম ভোর চারটের সময় বেরিয়ে গেছে তোমার সেই দাদা। অত ভোরে কে কার বাড়ি থেকে বেরোয় বাওয়া? জরুর কুছ কান্ড করকে গিয়া হ্যায় কুরুমচোদ!" উক্তি করলো রবার্ট।
"কি বলছেন কি স্যার? আমি তো ভাবতেই পারছি না। কই নন্দনা তো আমায় কিছু জানায়নি?" কথাগুলো বলে দু'হাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে ফেললো চিরন্তন।
"আরে, এতে ভেঙে পড়ার কি হলো? তুমি শালা সখিচোদা টাইপের মাল দেখছি। আমরা তো নিজে চোখে কিছু দেখিনি, আমাদের ধারণার কথাটা জানাচ্ছি শুধু তোমাকে। তবে ব্যাপারটা প্র্যাকটিক্যালি ভাবা দরকার। তোমার বউয়ের কাছ থেকেই শুনেছি .. যে লোকটা তুমি থাকলে রাত্রিবাস তো দূরের কথা, বাড়িতেই এন্ট্রি পায় না, তোমার অবর্তমানে সেই লোকটা তোমার বাড়িতে রাত কাটিয়ে গেলো! আবার ভোর চারটের সময় বেরিয়ে গেলো? বিষয়টা একটু গোলমেলে মনে হচ্ছে না তোমার কাছে? দেখো, তোমার বউ কিন্তু আমাকে দিয়ে প্রমিস করিয়ে নিয়েছে, যেন আমি তোমাকে না বলি তোমার দাদার আসার ব্যাপারটা। যেহেতু আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী, তাই তোমাকে বললাম কথাটা। এখন তুমি যদি বাড়িতে গিয়ে কথাটা বলো, তাহলে আমি বেইমান হয়ে যাবো তোমার বউয়ের চোখে। তোমার এত বড় উপকার করার পর, আই মিন তোমার চাকরিটা আর জেলযাত্রা বাঁচিয়ে দেওয়ার পর তুমি নিশ্চয়ই এটা চাইবে না যে আমি ছোট হই তোমার বউয়ের কাছে? তাছাড়া তোমার বউ যখন বিষয়টা তোমাকে জানাতে চায়নি, তখন তুমি বাড়িতে গিয়ে ওকে কথাটা জিজ্ঞেস করলে, ও কি তোমাকে ঠিকঠাক বলবে পুরোটা? তুমি নিজেই একবার ভেবে দেখো না কথাটা! তুমি তো পুরুষমানুষ। তোমার তো যেচে অপমানিত হতে যাওয়ার দরকার নেই। নিজের সম্মান সবসময় বজায় রাখতে জানতে হয়। তোমাকে কিছু বলতে হবে না, বাড়িতে গিয়ে তুমি শুধু লক্ষ্য করবে তোমার বউয়ের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ তোমার প্রতি আগের থেকে চেঞ্জ হয়েছে কি হয়নি। যদি দেখো চেঞ্জ হয়নি, তাহলে বুঝবে সব কিছুই ঠিক আছে। আমি তো তোমার আসার ব্যাপারে ওকে কিছুই বলিনি। তোমাকে এতদিন পর বাড়ি ফিরতে দেখে, ওর যদি কোনো রিএ্যাকশন না হয়, তাহলে বুঝবে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। আমি কি বলতে চাইছি সেটা বুঝতে পারছো কি?" চিরন্তনের পাশে চেয়ারটা টেনে নিয়ে গিয়ে তার একদম গা ঘেঁসে বসে কথাগুলো বললো ডক্টর প্রমোদ।
"হ্যাঁ স্যার বুঝতে পারছি। এবং তার সঙ্গে এটাও বুঝতে পারছি, আপনারা আমার কত বড় ওয়েল-উইশার! আমার চাকরি বাঁচানোর এবং পুলিশি ঝামেলাগুলো মিটিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি আমার ঘরের অশান্তিটাও মেটানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কি জানেন তো স্যার .. আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে, দুর্ঘটনা বোধহয় যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। আমি ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করবো না, ও নিজে থেকে বলার হলে বলবে। তবে একটা কথা আমিও বলে দিচ্ছি .. বিয়ে যখন করেছি, সন্তানের বাবা যখন হয়েছি, তখন বউ এবং বাচ্চার দায়িত্ব চিরকাল আমি বহন করবো। কিন্তু ওকে, মানে নন্দনাকে আগলানোর চেষ্টা আমি আর করবো না, ও যা খুশি তাই করুক।" দু'হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকা অবস্থাতেই কথাগুলো বললো চিরন্তন।
তাদের ছোঁড়া তীরটা যে একদম ঠিক জায়গায় গিয়ে বিঁধেছে, সেটা বুঝতে পেরে 'দিল গার্ডেন গার্ডেন' হয়ে গেলো দু'জনের। তবুও বিষয়টাকে আরও সরলীকরণ করে বোঝার জন্য এবং চিরন্তনকে আরো একটু বাজিয়ে দেখার জন্য প্রমোদ জিজ্ঞাসা করলো, "আগলানোর চেষ্টা করবে না মানে?"
- "ওকে যেমন আগে থেকে অনেক বিষয়ে সাবধান করে দিতাম 'এটা করবে না' বা 'এটা করা উচিৎ নয়' এগুলো বলে, সেগুলো কিছুই আর করবো না এবার থেকে। ও যখন আমাকে কিছুই জানাতে চায় না, তখন ও নিজের বোধবুদ্ধি দিয়ে যা করার তাই করুক।"
- "বুঝলাম, আচ্ছা তুমি তোমার ওই তান্ত্রিক দাদার তোমাদের বাড়িতে আসাটা পছন্দ করতে না কেন?"
- "লোকটা ভালো নয়, তাই .."
- "কেনো? চোর চিটিংবাজ নাকি?"
- "না না তা নয়, দাদার প্রচুর টাকা। আমাদের বাড়িতে যখনই এসেছে, অনেক উপহার নিয়ে এসেছে। কিন্তু লোকটার নজর ভালো নয়। নন্দনার দিকে ও কু'নজর দিতো, আমি সেটা লক্ষ্য করেছি।"
- "তাই? মানে গায়ে-টায়ে হাত দিয়েছিলো নাকি কোনোদিন তোমার বউয়ের?"
- "গায়ে হাত দেয়নি, তবে দু'বার দুটো জিনিস লক্ষ্য করেছি আমি। নন্দনা বরাবরই জামাকাপড় পড়ার ব্যাপারে ভীষণ কেয়ারলেস। তখন বাপ্পা খুবই ছোট, চার মাস বয়স হবে। সেইসময় একদিন দাদা এলো আমাদের বাড়িতে। আমরা খাচ্ছিলাম, নন্দনা আমাদের খেতে দিচ্ছিলো। তখন হঠাৎ বাপ্পা খুব জোরে কেঁদে উঠলো। আমরা কেউ কিছু বুঝতে না পারলেও, দাদা বললো 'বৌমা, ওর মনে হয় খিদে পেয়েছে, ওকে আগে খাইয়ে এসো। তারপর আমাদের খেতে দিও ..' দাদার কথা শুনে পাশের ঘরে চলে গেলো আমার স্ত্রী। হঠাৎ 'ওহ, এখানে বড্ড গরম লাগছে, আমি ওই দিকটায় গিয়ে বসি ..' এই বলে খাবার থালা নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে আমার ঠিক উল্টো দিকে গিয়ে বসলো দাদা। যেখান থেকে শোওয়ার ঘরের বিছানাটা পরিষ্কার দেখা যায়। আমি দেখলাম, খাবার ফেলে ওই দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে দাদা। ওই ভাবেই পাঁচ মিনিট কেটে গেলো। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো আমার শরীরে, 'রান্নাঘরে কোনো একটা দরকারে যাচ্ছি' এরকম একটা ভান করে দাদার পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে ভালো করে লক্ষ্য করলাম নন্দনা বিছানার উপর সাইড করে বসে বাপ্পাকে কোলে নিয়ে ব্রেস্টফিডিং করাচ্ছে। ব্লাউজের সমস্ত হুকগুলো খোলা, ব্রা'টা উপর দিকে ওঠানো। নিপলটা বাপ্পার মুখে ঢোকানো থাকলেও ডানদিকের ব্রেস্টটা পুরোটাই বেরিয়ে রয়েছে। ওইদিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে দাদা। লোকটা এত বড় নির্লজ্জ এবং বেহায়া, আমাকে দেখতে পেয়ে একটুও লজ্জা না পেয়ে মুচকি হেসে বললো 'বৌমাকে বলবি যতদিন বুকে দুধ থাকে, ততদিন যেন বাচ্চাকে বুকের দুধ দেয়। মায়ের দুধ সন্তানের জন্য ঈশ্বরের দান ..' এরপর একদিন আমি আর দাদা ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছি। তখন বাপ্পা অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। নন্দনা স্নানে ঢুকেছে কিছুক্ষণ আগে। সেইসময় ল্যান্ডলাইনে আমার একটা ফোন এলো, ফোনটা ধরতে উঠে গেলাম। ঠিক ওই মুহূর্তে নন্দনা বাথরুমের দরজা খুলে বাপ্পাকে বললো, 'শোওয়ার ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যা তো!' জেনারেল ম্যানেজার ফোন করেছিলো। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফোন, তাই ফোনটা ছাড়তেও পারছিলাম না। স্পষ্ট শুনতে পেলাম বাপ্পাকে আটকে দিয়ে দাদা বললো 'তুই এখানে বসে খেলা কর' আমি আটকে দিয়ে আসছি তোদের শোওয়ার ঘরের দরজা। ওইটুকু বাচ্চা আর কিই বা বুঝবে? সেও চুপ করে বসে রইলো। দেখলাম দাদা খাওয়ার ঘর পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। এর মিনিটখানেক পর আমার স্ত্রীর গলার আওয়াজ পেলাম, তখন দেখলাম দাদা হাসতে হাসতে আবার ড্রয়িংরুমে চলে এলো। নন্দনা বাথরুম থেকে স্নান করে বেরোনোর সময় গায়ে শুধুমাত্র একটা গামছা জড়িয়ে বের হয়। তারপর ঘরে এসে জামাকাপড় চেঞ্জ করে। তারমানে দরজা বন্ধ করতে যাওয়ার অছিলায় দাদা নন্দনাকে গামছা পরা অবস্থায় দেখে নিয়েছিলো সেদিন। তাই হয়তো লজ্জা পেয়ে নন্দনা চিৎকার করে উঠেছিলো। সেইজন্য আমাদের বাড়িতে ওই লোকটার আসা একদম পছন্দ করি না আমি।"
কথাগুলো শুনে রবার্ট এবং প্রমোদ দুজনেরই প্যান্টের ভেতর ধোন বাবাজি অলরেডি লাফালাফি করতে শুরু করে দিয়েছিলো। হাত দিয়ে নিজের পুরুষাঙ্গটা অ্যাডজাস্ট করে নিয়ে রবার্ট জিজ্ঞাসা করলো, "যখন ঘটনাগুলো ঘটেছিলো, তখন তুমি তোমার দাদাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করোনি? এটা হলো আমার প্রথম প্রশ্ন। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, চোখের সামনে নিজের বউকে অন্য লোক চোখ দিয়ে গিলছে, এটা দেখে তোমার ভেতরে কিরকম ফিলিংস হয়েছিলো?"
- "দেখুন দাদার ওরকম ভয়ঙ্কর দশাসই চেহারা এবং পার্সোনালিটি দেখে দাদাকে আমি ছোটবেলা থেকেই ভয় পাই। তাই দাদার মুখের উপর কথা বলার সাহস যুগিয়ে উঠতে পারিনি। তাছাড়া ওই সিচুয়েশনে আমি নিজেই কিরকম যেন একটা কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয় বুঝতে পারছিলাম না। আর ফিলিংস বলতে .. প্রথমে ভেতর ভেতর অসম্ভব রাগ হলেও, কে যেন আমাকে ভেতর থেকে জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করছিলো। এই কথাগুলো আপনাদের বিশ্বাস করে বললাম। আপনারা আর কাউকে বলবেন না যেনো!"
"না না, কাউকে কিচ্ছু বলবো না আমরা। শোনো, আজ সন্ধ্যেবেলা তোমাদের বাড়িতে আমি যাবো তোমার সাবমিট করা এই পেপারগুলোর রিসিভ কপিটা নিয়ে। ওখানে তোমার একটা সিগনেচার লাগবে। রবার্টও যেতো আমার সঙ্গে, কিন্তু ওর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে যাওয়াতে, ও যেতে পারবে না। এখন তুমি তাড়াতাড়ি 'সুর এবং ছন্দম' কলেজের সামনে চলে যাও। ওখানে তোমার জন্য রেবতী ম্যাডাম অপেক্ষা করছে। চিন্তা নেই, এই রোদে তোমাকে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়াবো না। অফিসের গাড়ি যাবে তোমার সঙ্গে। লাগেজগুলো গাড়িতে রেখে তারপর ম্যাডামকে আমার নিউ ক্লিনিকটায় পৌঁছে দিয়ে তারপর বাড়ি চলে যেও।" প্রমোদের কথাগুলো শোনার পর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো চিরন্তন।
"কি বুঝলে গুরু?" চিরন্তন বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রমোদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো রবার্ট।
"যে স্বামী নিজের স্ত্রীকে পরপুরুষের হাত থেকে রক্ষা করতে ভয় পায়। যে স্বামী ওইরকম একটা ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে, বাউন্সব্যাক করার বদলে কনফিউজড হয়ে যায়। তার স্ত্রীর প্রতি অন্য পুরুষের কু'নজর আছে এটা জেনেও, যে স্বামীর অন্তরাত্মা তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয় .. সেই স্বামীকে কি বলে বন্ধু?" হাসতে হাসতে বললো প্রমোদ।
- "বলবো না, তুমি আগে .."
- "না না, তুমি আগে .."
- "তুমি বলো .."
- "না না, তুমি .. প্লিজ .."
"এখানে সপ্তপদীর ওই গানটার রিমেক হচ্ছে নাকি ল্যাওড়া? হাহাহাহা .. আমরা কেউই কিছু বলবো না। যা করার কাজে করবো, সেটা দেখে যে যা বোঝার বুঝে নেবে। আজকে রাত্তিরে দারুন কিছু একটা মিস করতে চলেছি, সেটা এখন থেকেই বুঝতে পারছি। এই কোম্পানিতে আমাদের আর বেশিদিন নেই। নিজেদের ভবিষ্যৎটাও তো সিকিওর করতে হবে! তাই সেই ব্যবস্থাটাই পাকাপাকিভাবে করতে যাচ্ছি আজ রাতে। যাইহোক, তুমি ফিরে আসার পর তোমার থেকে পুরো আপডেট শুনে নেবো। এখন হার্জিনদারকে ফোন করতে হবে। ওদের ছবিগুলো তুলতে না পারলে প্ল্যানটাই ভেস্তে যাবে আমাদের।" প্রথমে উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠে, তারপর গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে উক্তি করলো রবার্ট।
"আমি ফোন করে দিচ্ছি, ডোন্ট ওরি। তবে মাথামোটা হার্জিনদার বেশি উত্তেজিত হয়ে গিয়ে ওদের সামনে চলে না যায়, সেটা নিয়েই একটু চিন্তায় আছি। বেচারা রেবতী .. নির্ঝঞ্ঝাট, নিষ্কলঙ্ক, সাদাসিধা মহিলাটা জানতেই পারলো না, ওকে নিয়ে কত বড় খেলা খেলে ফেললাম আমরা।" কথাগুলো বলে ফোনটা হাতে নিলো প্রমোদ।
এর মিনিট পনেরো পর গঞ্জ বাজারের দক্ষিণ দিকটায় যেখানে 'সুর এবং ছন্দম' কলেজটা রয়েছে, সেখান থেকে রেবতী ম্যাডামকে গাড়িতে তুললো চিরন্তন। এরপর ডক্টর প্রমোদের নতুন ক্লিনিকের সামনে গিয়ে নামিয়ে দিয়ে, নিজেও গাড়ি থেকে নেমে ওনাকে ক্লিনিকে ঢুকিয়ে দিয়ে তারপর গাড়ি করে বেরিয়ে গেলো সে।
গানের দিদিমণিকে গাড়িতে তোলার আগের মুহূর্তেটা এবং গাড়ি থেকে নামার পর তার সঙ্গে ক্লিনিকে ঢোকার মুহূর্তটাকে কেউ যে আড়াল থেকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখছে, এটা বুঝতেও পারলো না হতভাগ্য চিরন্তন।
মালতী কাজ করে বেরিয়ে যাওয়ার পর স্নান করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো নন্দনা। ঠিক সেই সময় মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো তার। ডাক্তারবাবু ফোন করেছে। কয়েক মুহূর্ত ইতস্ততঃ কলটা রিসিভ করলো নন্দনা।
- "হ্যা..হ্যালো?"
- "কথা শুরুর আগে তোমার এই হোঁচট খাওয়ার ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে। যাইহোক, কি করছিলে?"
- "স্না..স্নানে যাচ্ছিলাম .."
- "আবার হোঁচট, হাহাহাহা .. চিরন্তন ফিরেছে নাকি?"
- "না, ও কি সত্যিই আজকে আসবে নাকি?"
- "বোঝো কান্ড! তাহলে কালকে অত রাত পর্যন্ত তোমাকে যে কথাগুলো বললাম, সেগুলো কি মিথ্যে বলেছি বলে তোমার মনে হয়? আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢুকে যাবে। তোমার হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটা ছবি পাঠাচ্ছি দেখে নাও, তারপর আবার তোমাকে কল করছি।
ফোনটা কেটে যাওয়ার পর তার হোয়াটসঅ্যাপে পরপর পাঁচটা ছবি ঢুকলো। ছবিগুলো অটোমেটিক্যালি গ্যালারিতে সেভ হয়ে যাওয়ার পর নন্দনা দেখলো পাঁচটা ছবির মধ্যে প্রথম দুটো কোনো ফটোগ্রাফ থেকে নেওয়া হয়েছে, আর পরের তিনটে লাইভ তোলা হয়েছে। ফটোগ্রাফ দুটিতে একজন সাদা শাড়ি পরা মহিলার সঙ্গে তার স্বামীকে হেসে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে। আর পরের তিনটি ছবির প্রথমটিতে সেই মহিলাকেই একবার রাস্তায় দেখা যাচ্ছে তার স্বামীর সঙ্গে, পরের দুটিতে একটা ক্লিনিকে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে দু'জনকে একসঙ্গে।
(৩)
সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ হন্তদন্ত হয়ে কমার্শিয়াল ম্যানেজার রবার্ট ডিসুজার ঘরে ঢুকলো চিরন্তন। "স্যার, আমি এসে গেছি, এয়ারপোর্ট থেকে ডাইরেক্ট এলাম এখানেই। যে পেপারটা আপনাকে সাবমিট করার ছিলো সেটা কি এখানে দেবো, নাকি কোয়ালিটি কন্ট্রোলের মিস্টার দাসের কাছে দিয়ে আসবো? আচ্ছা আমাকে কি এখনই যেতে হবে, যেখানে যাওয়ার কথা ছিলো?" কথাগুলো বলে প্যান্টের পকেট থেকে একটা সাদা রঙের খাম বের করে এগিয়ে দিলো চিরন্তন।
চেম্বারে তখন রবার্টের সামনে ব্যাচিং ডিপার্টমেন্টের মিস্টার পারেখ বসেছিলো। তাকে চোখের ইশারায় চেম্বারের বাইরে যেতে বলে, সামনে রাখা ল্যান্ডফোন থেকে ইন্টারকমে ফোন করে রবার্ট বললো, "ডক্টর গঞ্জালভেসকে পাঠিয়ে দিন।" তারপর চিরন্তনের দিকে তাকিয়ে উক্তি করলো, "আরে, এত ছটফট করেছো কেনো গান্ডু? দেখতে পেলে পারেখের সঙ্গে আমি কথা বলছিলাম, তার সামনেই খামটা বের করলে তুমি? ও যদি জানতে চাইতো এটা কিসের পেপার, তখন কি জবাব দিতে তুমি? কনফিডেনশিয়াল বলেও তো একটা ব্যাপার আছে, নাকি! দাও দেখি খামটা আমাকে। প্রমোদকে খবর পাঠিয়েছি, ও আসুক, তারপর তোমার যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে যাবে। এই দু'দিনে চোখমুখ তো একদম বসে গেছে তোমার! চিন্তা নেই, আমরা তোমাকে বাঁচিয়ে নেবো। এখন চেয়ারে বসে বিশ্রাম করো। চাইলে পাশের সোফাটাতেও বসতে পারো আরাম করে।"
চিরন্তনের দেওয়া পেপারগুলোয় চোখ বোলাচ্ছিলো রবার্ট। এরমধ্যেই চেম্বারে ঢুকলো ডঃ প্রমোদ। "আরে, এই ঘাওড়া তো দেখছি শুকিয়ে একেবারে আমচুর হয়ে গেছে! ওকে একটু জল-টল কিছু দাও .." নন্দনার স্বামীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে রবার্টের সামনের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো প্রমোদ।
এমনিতে এই দুই ব্যক্তিকে সে বরাবরই এড়িয়ে চলে। সেটা সম্মানার্থেও হতে পারে, আবার ভয় পেয়েও হতে পারে। কিন্তু এর আগে যখনই ওদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, তারা কেউ খারাপ ভাষা ব্যবহার করেনি তার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আজ চিরন্তন লক্ষ্য করলো এরা দুজনেই কথা বলার সময় তাকে উদ্দেশ্য করে স্ল্যাং ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করেছে। এটা ওভার ফ্রেন্ডলি দেখানোর জন্য, নাকি ওভার পাওয়ার করার জন্য, সেটা বোধগম্য হলো না তার। "আপনি রেবতী ম্যাডামকে ইনফর্ম করে দিয়েছেন তো স্যার? তাহলে এবার উঠি আমি?" রবার্টের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে উঠতে গেলো চিরন্তন।
"কেনো, তোমার কি হাগা পেয়েছে? নাকি বউয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে বাড়িতে ফিরেই? এত তাড়াহুড়ো কিসের তোমার?" খেঁকিয়ে উঠে কথাগুলো বললো রবার্ট।
"ছিঃ ছিঃ এসব কি বলছেন? এতদিন পর বাড়িতে ফিরছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ওরকম বস্তিবাড়ির মতো সম্পর্ক নেই। আমরা দু'জনে যথেষ্ট সফিস্টিকেটেড।" মৃদু প্রতিবাদ করে উঠে বললো চিরন্তন।
"বস্তি বাড়ি, হ্যাঁ? সফিস্টিকেটেড? হোহোহোহো .." অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো প্রমোদ। তারপর হাসি সামলে চিরন্তনের উদ্দেশ্যে বললো, "তুমি একটা আস্ত বোকাচোদা। তোমাকে কে বলেছে চাঁদু, শুধুমাত্র বস্তিতে থাকা লোকজন উদ্দাম সেক্স করে? আর তোমাদের মতো সো কল্ড ভদ্রবাড়ির লোকজন সফিস্টিকেটেড হয়? স্ত্রীর সঙ্গে তোমার এই 'ডোন্ট টাচ মাই বডি' মনোভাব বজায় রাখার জন্য তোমার বউটা তো যার তার ঘাড়ে উঠে পড়ছে!"
"হোয়াট রাবিশ, এসব কি বলছেন স্যার আপনি?" উত্তেজিত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো চিরন্তন।
"বসো হে বিপ্লবী, বসে পড়ো চেয়ারে। বেশি এক্সাইটেড হয়েও না। এই পেপারগুলো মালিকের কাছে পাঠিয়ে দিলে, তোমাকে সত্যি সত্যি রাস্তার ধারে রাবিশ পরিস্কার করতে হবে। তখন 'হোয়াট রাবিশ' বলা পেছনে ঢুকে যাবে। প্রমোদ এমনি এমনি কথাটা বলেনি তোমাকে। তোমার সেই তান্ত্রিক দাদা এসেছিলো তো তোমাদের বাড়ি! খবর রাখো কিছু?" রবার্টের কথাগুলো শুনে ধপ করে চেয়ারের উপর বসে পরলো চিরন্তন। তারপর গলার স্বর অনেকটা নামিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "কে বলেছে আপনাদেরকে এই কথা?"
"শোনো গান্ডুর কথা! কে আবার বলবে? তোমার বউ নিজেই বলেছে। তারপর ক্যাম্পাসের মেইন গেটে যে সিকিউরিটি গার্ড থাকে, তার কাছে খবর নিয়ে জানতে পারলাম ভোর চারটের সময় বেরিয়ে গেছে তোমার সেই দাদা। অত ভোরে কে কার বাড়ি থেকে বেরোয় বাওয়া? জরুর কুছ কান্ড করকে গিয়া হ্যায় কুরুমচোদ!" উক্তি করলো রবার্ট।
"কি বলছেন কি স্যার? আমি তো ভাবতেই পারছি না। কই নন্দনা তো আমায় কিছু জানায়নি?" কথাগুলো বলে দু'হাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে ফেললো চিরন্তন।
"আরে, এতে ভেঙে পড়ার কি হলো? তুমি শালা সখিচোদা টাইপের মাল দেখছি। আমরা তো নিজে চোখে কিছু দেখিনি, আমাদের ধারণার কথাটা জানাচ্ছি শুধু তোমাকে। তবে ব্যাপারটা প্র্যাকটিক্যালি ভাবা দরকার। তোমার বউয়ের কাছ থেকেই শুনেছি .. যে লোকটা তুমি থাকলে রাত্রিবাস তো দূরের কথা, বাড়িতেই এন্ট্রি পায় না, তোমার অবর্তমানে সেই লোকটা তোমার বাড়িতে রাত কাটিয়ে গেলো! আবার ভোর চারটের সময় বেরিয়ে গেলো? বিষয়টা একটু গোলমেলে মনে হচ্ছে না তোমার কাছে? দেখো, তোমার বউ কিন্তু আমাকে দিয়ে প্রমিস করিয়ে নিয়েছে, যেন আমি তোমাকে না বলি তোমার দাদার আসার ব্যাপারটা। যেহেতু আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী, তাই তোমাকে বললাম কথাটা। এখন তুমি যদি বাড়িতে গিয়ে কথাটা বলো, তাহলে আমি বেইমান হয়ে যাবো তোমার বউয়ের চোখে। তোমার এত বড় উপকার করার পর, আই মিন তোমার চাকরিটা আর জেলযাত্রা বাঁচিয়ে দেওয়ার পর তুমি নিশ্চয়ই এটা চাইবে না যে আমি ছোট হই তোমার বউয়ের কাছে? তাছাড়া তোমার বউ যখন বিষয়টা তোমাকে জানাতে চায়নি, তখন তুমি বাড়িতে গিয়ে ওকে কথাটা জিজ্ঞেস করলে, ও কি তোমাকে ঠিকঠাক বলবে পুরোটা? তুমি নিজেই একবার ভেবে দেখো না কথাটা! তুমি তো পুরুষমানুষ। তোমার তো যেচে অপমানিত হতে যাওয়ার দরকার নেই। নিজের সম্মান সবসময় বজায় রাখতে জানতে হয়। তোমাকে কিছু বলতে হবে না, বাড়িতে গিয়ে তুমি শুধু লক্ষ্য করবে তোমার বউয়ের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ তোমার প্রতি আগের থেকে চেঞ্জ হয়েছে কি হয়নি। যদি দেখো চেঞ্জ হয়নি, তাহলে বুঝবে সব কিছুই ঠিক আছে। আমি তো তোমার আসার ব্যাপারে ওকে কিছুই বলিনি। তোমাকে এতদিন পর বাড়ি ফিরতে দেখে, ওর যদি কোনো রিএ্যাকশন না হয়, তাহলে বুঝবে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। আমি কি বলতে চাইছি সেটা বুঝতে পারছো কি?" চিরন্তনের পাশে চেয়ারটা টেনে নিয়ে গিয়ে তার একদম গা ঘেঁসে বসে কথাগুলো বললো ডক্টর প্রমোদ।
"হ্যাঁ স্যার বুঝতে পারছি। এবং তার সঙ্গে এটাও বুঝতে পারছি, আপনারা আমার কত বড় ওয়েল-উইশার! আমার চাকরি বাঁচানোর এবং পুলিশি ঝামেলাগুলো মিটিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি আমার ঘরের অশান্তিটাও মেটানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কি জানেন তো স্যার .. আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে, দুর্ঘটনা বোধহয় যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। আমি ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করবো না, ও নিজে থেকে বলার হলে বলবে। তবে একটা কথা আমিও বলে দিচ্ছি .. বিয়ে যখন করেছি, সন্তানের বাবা যখন হয়েছি, তখন বউ এবং বাচ্চার দায়িত্ব চিরকাল আমি বহন করবো। কিন্তু ওকে, মানে নন্দনাকে আগলানোর চেষ্টা আমি আর করবো না, ও যা খুশি তাই করুক।" দু'হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢাকা অবস্থাতেই কথাগুলো বললো চিরন্তন।
তাদের ছোঁড়া তীরটা যে একদম ঠিক জায়গায় গিয়ে বিঁধেছে, সেটা বুঝতে পেরে 'দিল গার্ডেন গার্ডেন' হয়ে গেলো দু'জনের। তবুও বিষয়টাকে আরও সরলীকরণ করে বোঝার জন্য এবং চিরন্তনকে আরো একটু বাজিয়ে দেখার জন্য প্রমোদ জিজ্ঞাসা করলো, "আগলানোর চেষ্টা করবে না মানে?"
- "ওকে যেমন আগে থেকে অনেক বিষয়ে সাবধান করে দিতাম 'এটা করবে না' বা 'এটা করা উচিৎ নয়' এগুলো বলে, সেগুলো কিছুই আর করবো না এবার থেকে। ও যখন আমাকে কিছুই জানাতে চায় না, তখন ও নিজের বোধবুদ্ধি দিয়ে যা করার তাই করুক।"
- "বুঝলাম, আচ্ছা তুমি তোমার ওই তান্ত্রিক দাদার তোমাদের বাড়িতে আসাটা পছন্দ করতে না কেন?"
- "লোকটা ভালো নয়, তাই .."
- "কেনো? চোর চিটিংবাজ নাকি?"
- "না না তা নয়, দাদার প্রচুর টাকা। আমাদের বাড়িতে যখনই এসেছে, অনেক উপহার নিয়ে এসেছে। কিন্তু লোকটার নজর ভালো নয়। নন্দনার দিকে ও কু'নজর দিতো, আমি সেটা লক্ষ্য করেছি।"
- "তাই? মানে গায়ে-টায়ে হাত দিয়েছিলো নাকি কোনোদিন তোমার বউয়ের?"
- "গায়ে হাত দেয়নি, তবে দু'বার দুটো জিনিস লক্ষ্য করেছি আমি। নন্দনা বরাবরই জামাকাপড় পড়ার ব্যাপারে ভীষণ কেয়ারলেস। তখন বাপ্পা খুবই ছোট, চার মাস বয়স হবে। সেইসময় একদিন দাদা এলো আমাদের বাড়িতে। আমরা খাচ্ছিলাম, নন্দনা আমাদের খেতে দিচ্ছিলো। তখন হঠাৎ বাপ্পা খুব জোরে কেঁদে উঠলো। আমরা কেউ কিছু বুঝতে না পারলেও, দাদা বললো 'বৌমা, ওর মনে হয় খিদে পেয়েছে, ওকে আগে খাইয়ে এসো। তারপর আমাদের খেতে দিও ..' দাদার কথা শুনে পাশের ঘরে চলে গেলো আমার স্ত্রী। হঠাৎ 'ওহ, এখানে বড্ড গরম লাগছে, আমি ওই দিকটায় গিয়ে বসি ..' এই বলে খাবার থালা নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে আমার ঠিক উল্টো দিকে গিয়ে বসলো দাদা। যেখান থেকে শোওয়ার ঘরের বিছানাটা পরিষ্কার দেখা যায়। আমি দেখলাম, খাবার ফেলে ওই দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে দাদা। ওই ভাবেই পাঁচ মিনিট কেটে গেলো। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিলো আমার শরীরে, 'রান্নাঘরে কোনো একটা দরকারে যাচ্ছি' এরকম একটা ভান করে দাদার পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে ভালো করে লক্ষ্য করলাম নন্দনা বিছানার উপর সাইড করে বসে বাপ্পাকে কোলে নিয়ে ব্রেস্টফিডিং করাচ্ছে। ব্লাউজের সমস্ত হুকগুলো খোলা, ব্রা'টা উপর দিকে ওঠানো। নিপলটা বাপ্পার মুখে ঢোকানো থাকলেও ডানদিকের ব্রেস্টটা পুরোটাই বেরিয়ে রয়েছে। ওইদিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে দাদা। লোকটা এত বড় নির্লজ্জ এবং বেহায়া, আমাকে দেখতে পেয়ে একটুও লজ্জা না পেয়ে মুচকি হেসে বললো 'বৌমাকে বলবি যতদিন বুকে দুধ থাকে, ততদিন যেন বাচ্চাকে বুকের দুধ দেয়। মায়ের দুধ সন্তানের জন্য ঈশ্বরের দান ..' এরপর একদিন আমি আর দাদা ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছি। তখন বাপ্পা অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। নন্দনা স্নানে ঢুকেছে কিছুক্ষণ আগে। সেইসময় ল্যান্ডলাইনে আমার একটা ফোন এলো, ফোনটা ধরতে উঠে গেলাম। ঠিক ওই মুহূর্তে নন্দনা বাথরুমের দরজা খুলে বাপ্পাকে বললো, 'শোওয়ার ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে যা তো!' জেনারেল ম্যানেজার ফোন করেছিলো। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফোন, তাই ফোনটা ছাড়তেও পারছিলাম না। স্পষ্ট শুনতে পেলাম বাপ্পাকে আটকে দিয়ে দাদা বললো 'তুই এখানে বসে খেলা কর' আমি আটকে দিয়ে আসছি তোদের শোওয়ার ঘরের দরজা। ওইটুকু বাচ্চা আর কিই বা বুঝবে? সেও চুপ করে বসে রইলো। দেখলাম দাদা খাওয়ার ঘর পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। এর মিনিটখানেক পর আমার স্ত্রীর গলার আওয়াজ পেলাম, তখন দেখলাম দাদা হাসতে হাসতে আবার ড্রয়িংরুমে চলে এলো। নন্দনা বাথরুম থেকে স্নান করে বেরোনোর সময় গায়ে শুধুমাত্র একটা গামছা জড়িয়ে বের হয়। তারপর ঘরে এসে জামাকাপড় চেঞ্জ করে। তারমানে দরজা বন্ধ করতে যাওয়ার অছিলায় দাদা নন্দনাকে গামছা পরা অবস্থায় দেখে নিয়েছিলো সেদিন। তাই হয়তো লজ্জা পেয়ে নন্দনা চিৎকার করে উঠেছিলো। সেইজন্য আমাদের বাড়িতে ওই লোকটার আসা একদম পছন্দ করি না আমি।"
কথাগুলো শুনে রবার্ট এবং প্রমোদ দুজনেরই প্যান্টের ভেতর ধোন বাবাজি অলরেডি লাফালাফি করতে শুরু করে দিয়েছিলো। হাত দিয়ে নিজের পুরুষাঙ্গটা অ্যাডজাস্ট করে নিয়ে রবার্ট জিজ্ঞাসা করলো, "যখন ঘটনাগুলো ঘটেছিলো, তখন তুমি তোমার দাদাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করোনি? এটা হলো আমার প্রথম প্রশ্ন। আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, চোখের সামনে নিজের বউকে অন্য লোক চোখ দিয়ে গিলছে, এটা দেখে তোমার ভেতরে কিরকম ফিলিংস হয়েছিলো?"
- "দেখুন দাদার ওরকম ভয়ঙ্কর দশাসই চেহারা এবং পার্সোনালিটি দেখে দাদাকে আমি ছোটবেলা থেকেই ভয় পাই। তাই দাদার মুখের উপর কথা বলার সাহস যুগিয়ে উঠতে পারিনি। তাছাড়া ওই সিচুয়েশনে আমি নিজেই কিরকম যেন একটা কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয় বুঝতে পারছিলাম না। আর ফিলিংস বলতে .. প্রথমে ভেতর ভেতর অসম্ভব রাগ হলেও, কে যেন আমাকে ভেতর থেকে জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করছিলো। এই কথাগুলো আপনাদের বিশ্বাস করে বললাম। আপনারা আর কাউকে বলবেন না যেনো!"
"না না, কাউকে কিচ্ছু বলবো না আমরা। শোনো, আজ সন্ধ্যেবেলা তোমাদের বাড়িতে আমি যাবো তোমার সাবমিট করা এই পেপারগুলোর রিসিভ কপিটা নিয়ে। ওখানে তোমার একটা সিগনেচার লাগবে। রবার্টও যেতো আমার সঙ্গে, কিন্তু ওর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে যাওয়াতে, ও যেতে পারবে না। এখন তুমি তাড়াতাড়ি 'সুর এবং ছন্দম' কলেজের সামনে চলে যাও। ওখানে তোমার জন্য রেবতী ম্যাডাম অপেক্ষা করছে। চিন্তা নেই, এই রোদে তোমাকে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চড়াবো না। অফিসের গাড়ি যাবে তোমার সঙ্গে। লাগেজগুলো গাড়িতে রেখে তারপর ম্যাডামকে আমার নিউ ক্লিনিকটায় পৌঁছে দিয়ে তারপর বাড়ি চলে যেও।" প্রমোদের কথাগুলো শোনার পর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো চিরন্তন।
★★★★
"কি বুঝলে গুরু?" চিরন্তন বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রমোদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো রবার্ট।
"যে স্বামী নিজের স্ত্রীকে পরপুরুষের হাত থেকে রক্ষা করতে ভয় পায়। যে স্বামী ওইরকম একটা ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে, বাউন্সব্যাক করার বদলে কনফিউজড হয়ে যায়। তার স্ত্রীর প্রতি অন্য পুরুষের কু'নজর আছে এটা জেনেও, যে স্বামীর অন্তরাত্মা তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয় .. সেই স্বামীকে কি বলে বন্ধু?" হাসতে হাসতে বললো প্রমোদ।
- "বলবো না, তুমি আগে .."
- "না না, তুমি আগে .."
- "তুমি বলো .."
- "না না, তুমি .. প্লিজ .."
"এখানে সপ্তপদীর ওই গানটার রিমেক হচ্ছে নাকি ল্যাওড়া? হাহাহাহা .. আমরা কেউই কিছু বলবো না। যা করার কাজে করবো, সেটা দেখে যে যা বোঝার বুঝে নেবে। আজকে রাত্তিরে দারুন কিছু একটা মিস করতে চলেছি, সেটা এখন থেকেই বুঝতে পারছি। এই কোম্পানিতে আমাদের আর বেশিদিন নেই। নিজেদের ভবিষ্যৎটাও তো সিকিওর করতে হবে! তাই সেই ব্যবস্থাটাই পাকাপাকিভাবে করতে যাচ্ছি আজ রাতে। যাইহোক, তুমি ফিরে আসার পর তোমার থেকে পুরো আপডেট শুনে নেবো। এখন হার্জিনদারকে ফোন করতে হবে। ওদের ছবিগুলো তুলতে না পারলে প্ল্যানটাই ভেস্তে যাবে আমাদের।" প্রথমে উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠে, তারপর গলার স্বর কিছুটা নামিয়ে উক্তি করলো রবার্ট।
"আমি ফোন করে দিচ্ছি, ডোন্ট ওরি। তবে মাথামোটা হার্জিনদার বেশি উত্তেজিত হয়ে গিয়ে ওদের সামনে চলে না যায়, সেটা নিয়েই একটু চিন্তায় আছি। বেচারা রেবতী .. নির্ঝঞ্ঝাট, নিষ্কলঙ্ক, সাদাসিধা মহিলাটা জানতেই পারলো না, ওকে নিয়ে কত বড় খেলা খেলে ফেললাম আমরা।" কথাগুলো বলে ফোনটা হাতে নিলো প্রমোদ।
এর মিনিট পনেরো পর গঞ্জ বাজারের দক্ষিণ দিকটায় যেখানে 'সুর এবং ছন্দম' কলেজটা রয়েছে, সেখান থেকে রেবতী ম্যাডামকে গাড়িতে তুললো চিরন্তন। এরপর ডক্টর প্রমোদের নতুন ক্লিনিকের সামনে গিয়ে নামিয়ে দিয়ে, নিজেও গাড়ি থেকে নেমে ওনাকে ক্লিনিকে ঢুকিয়ে দিয়ে তারপর গাড়ি করে বেরিয়ে গেলো সে।
গানের দিদিমণিকে গাড়িতে তোলার আগের মুহূর্তেটা এবং গাড়ি থেকে নামার পর তার সঙ্গে ক্লিনিকে ঢোকার মুহূর্তটাকে কেউ যে আড়াল থেকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখছে, এটা বুঝতেও পারলো না হতভাগ্য চিরন্তন।
★★★★
মালতী কাজ করে বেরিয়ে যাওয়ার পর স্নান করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো নন্দনা। ঠিক সেই সময় মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো তার। ডাক্তারবাবু ফোন করেছে। কয়েক মুহূর্ত ইতস্ততঃ কলটা রিসিভ করলো নন্দনা।
- "হ্যা..হ্যালো?"
- "কথা শুরুর আগে তোমার এই হোঁচট খাওয়ার ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লাগে। যাইহোক, কি করছিলে?"
- "স্না..স্নানে যাচ্ছিলাম .."
- "আবার হোঁচট, হাহাহাহা .. চিরন্তন ফিরেছে নাকি?"
- "না, ও কি সত্যিই আজকে আসবে নাকি?"
- "বোঝো কান্ড! তাহলে কালকে অত রাত পর্যন্ত তোমাকে যে কথাগুলো বললাম, সেগুলো কি মিথ্যে বলেছি বলে তোমার মনে হয়? আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢুকে যাবে। তোমার হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটা ছবি পাঠাচ্ছি দেখে নাও, তারপর আবার তোমাকে কল করছি।
ফোনটা কেটে যাওয়ার পর তার হোয়াটসঅ্যাপে পরপর পাঁচটা ছবি ঢুকলো। ছবিগুলো অটোমেটিক্যালি গ্যালারিতে সেভ হয়ে যাওয়ার পর নন্দনা দেখলো পাঁচটা ছবির মধ্যে প্রথম দুটো কোনো ফটোগ্রাফ থেকে নেওয়া হয়েছে, আর পরের তিনটে লাইভ তোলা হয়েছে। ফটোগ্রাফ দুটিতে একজন সাদা শাড়ি পরা মহিলার সঙ্গে তার স্বামীকে হেসে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে। আর পরের তিনটি ছবির প্রথমটিতে সেই মহিলাকেই একবার রাস্তায় দেখা যাচ্ছে তার স্বামীর সঙ্গে, পরের দুটিতে একটা ক্লিনিকে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে দু'জনকে একসঙ্গে।
~ পরবর্তী আপডেট কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে ~